অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৬
আপনার বিশ্বস্ততা বজায় রাখুন!
“প্রাণ থাকিতে আমি আপন বিশ্বস্ততা ত্যাগ করিব না।”—ইয়োব ২৭:৫.
গান সংখ্যা ২৯ নীতিনিষ্ঠার পথে চলা
সারাংশa
১. কীভাবে এই অনুচ্ছেদে উল্লেখিত তিন জন যিহোবার সাক্ষি যিহোবার পক্ষ নিয়েছে?
কল্পনা করুন, পরবর্তী তিনটে দৃশ্যে যিহোবার সাক্ষিরা রয়েছে। (১) অল্পবয়সি একটি মেয়ের স্কুলে এক দিন শিক্ষক ক্লাসের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে একটা ছুটির দিন উদ্যাপন করতে বলেন। সেই মেয়েটি জানে যে, সেই ছুটির দিন উদ্যাপন করা ঈশ্বরকে খুশি করবে না আর তাই সে সম্মানের সঙ্গে সেটাতে অংশ নেওয়া প্রত্যাখ্যান করে। (২) লাজুক স্বভাবের একটি অল্পবয়সি ছেলে ঘরে ঘরে প্রচার করছে। সে বুঝতে পারে, পরের বাড়িতে তার স্কুলের এমন একজন সহপাঠী থাকে, যে আগে যিহোবার সাক্ষিদের বিষয়ে ঠাট্টা করেছিল। তারপরও, সেই অল্পবয়সি ছেলে সেই বাড়িতে যায় এবং দরজায় কড়া নাড়ে। (৩) পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগানোর জন্য একজন ব্যক্তি কঠোর পরিশ্রম করছেন আর এক দিন তার বস তাকে অসৎ বা বেআইনি কোনো কিছু করতে বলেন। যদিও তিনি তার চাকরি হারাতে পারতেন, তা সত্ত্বেও তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, তাকে সৎ থাকতে হবে এবং আইনের বাধ্য হতে হবে কারণ ঈশ্বর তাঁর দাসদের কাছ থেকে সেটাই আশা করেন।—রোমীয় ১৩:১-৪; ইব্রীয় ১৩:১৮.
২. আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব এবং কেন?
২ আপনি এই তিন জন ব্যক্তির মধ্যে কোন গুনটা লক্ষ করেছেন? আপনি হয়তো একাধিক গুণ লক্ষ করেছেন যেমন, সাহস ও সততা। কিন্তু, তারা সবাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-গুণটা প্রদর্শন করেছে, সেটা হল বিশ্বস্ততা। সেই তিন জনের মধ্যে প্রত্যেকেই যিহোবার প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছে। তারা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের মানের বিষয়ে আপোশ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিশ্বস্ততা তাদের সেই কাজ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। যিহোবা নিশ্চিতভাবেই তাদের প্রত্যেককে এই গুণ প্রদর্শন করতে দেখে গর্বিত হবেন। আমরাও সেই ব্যক্তিদের মতো আমাদের স্বর্গস্থ পিতাকে গর্বিত করতে চাই। তাই আসুন, আমরা তিনটে প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করি: বিশ্বস্ততা কী? বিশ্বস্ততা কেন প্রয়োজন? আর কীভাবে আমরা এই কঠিন সময়ে বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারি?
বিশ্বস্ততা কী?
৩. (ক) বিশ্বস্ততা কী? (খ) কোন উদাহরণগুলো আমাদের বিশ্বস্ততার অর্থ বোঝার জন্য সাহায্য করতে পারে?
৩ ঈশ্বরের দাসেরা কীভাবে বিশ্বস্ততা দেখায়? তারা যিহোবার প্রতি সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে অটল প্রেম দেখানোর মাধ্যমে বিশ্বস্ততা দেখায়। আর এর ফলে তারা সবসময় এমন কাজগুলো করে, যেগুলো তাঁকে খুশি করে। বাইবেলে যেভাবে বিশ্বস্ততা শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। “বিশ্বস্ততা”-র জন্য বাইবেলে ব্যবহৃত শব্দের একটা মৌলিক অর্থ হল: সম্পূর্ণ বা নিখুঁত। উদাহরণ স্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা যিহোবার উদ্দেশে পশু বলি উৎসর্গ করত এবং ব্যবস্থা অনুযায়ী সেই পশুগুলোকে নির্দোষ বা নিখুঁত হতে হতো।b (লেবীয়. ২২:২১, ২২) ঈশ্বরের লোকেদের কোনো খোঁড়া, বধির অথবা অন্ধ পশু উৎসর্গ করার অনুমতি ছিল না; আর তারা কোনো অসুস্থ পশুও উৎসর্গ করতে পারত না। যিহোবার কাছে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যেন সেই পশু সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হয়। (মালাখি ১:৬-৯) আমরা এটা বুঝতে পারি যে, কেন যিহোবা নিখুঁত অবস্থা বা সম্পূর্ণতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেন। আমরা যখন কোনো কিছু কিনি, হতে পারে কোনো ফল, বই অথবা কোনো সরঞ্জাম, তখন আমরা চাই না যে, সেটাতে কোনো খুঁত থাকুক অথবা সেটার কোনো অংশ অসম্পূর্ণ থাকুক। আমরা এমন কিছু কিনতে চাই, যেটা সম্পূর্ণ বা নিখুঁত। যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম ও আনুগত্যের বিষয়টা যখন আসে, তখন যিহোবা একইরকম বোধ করেন। সেটাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হতে হবে।
৪. (ক) কেন একজন অসিদ্ধ মানুষ বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারেন? (খ) গীতসংহিতা ১০৩:১২-১৪ পদ অনুযায়ী যিহোবা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করেন?
৪ বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য আমাদের কি সিদ্ধ হতে হবে? আমরা হয়তো মনে করতে পারি, আমরা তো অনেক ভুল করি, তা হলে আমরা কীভাবে বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারব। কিন্তু লক্ষ করুন, বিশ্বস্ততা বজায় রাখার অর্থ এই নয় যে, আমাদের সিদ্ধ হতে হবে। এর দুটো কারণ বিবেচনা করুন। প্রথমত, যিহোবা আমাদের ভুলগুলোর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন না। তাঁর বাক্য আমাদের বলে: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীত. ১৩০:৩) তিনি জানেন যে, আমরা অসিদ্ধ, পাপী মানুষ আর তিনি আমাদের উদারভাবে ক্ষমা করেন। (গীত. ৮৬:৫) দ্বিতীয়ত, যিহোবা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে জানেন এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আশা করেন না। (পড়ুন, গীতসংহিতা ১০৩:১২-১৪.) তা হলে, কোন অর্থে আমরা তাঁর দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হতে পারি?
৫. কীভাবে প্রেম যিহোবার দাসদের জন্য বিশ্বস্ত থাকার চাবিকাঠি?
৫ যিহোবার দাসদের জন্য বিশ্বস্ত থাকার চাবিকাঠি হচ্ছে প্রেম। ঈশ্বরের প্রতি আমাদের প্রেম এবং আমাদের স্বর্গীয় পিতা হিসেবে তাঁর প্রতি আমাদের আনুগত্য যেন অবশ্যই সম্পূর্ণ বা নিখুঁত হয়। যদি আমাদের মধ্যে এইরকম প্রেম বজায় থাকে আর তা এমনকী পরীক্ষার সময়েও, তা হলে আমরা দেখাব যে, আমরা বিশ্বস্ত। (১ বংশা. ২৮:৯; মথি ২২:৩৭) শুরুতে বলা সেই তিন জন সাক্ষির বিষয়ে আবারও বিবেচনা করুন। কেন তারা সেই পদক্ষেপ নিয়েছিল? সেই অল্পবয়সি মেয়েটি কি স্কুলে মজা করাকে ঘৃণা করে অথবা সেই অল্পবয়সি ছেলেটি কি প্রচারে গিয়ে লজ্জার মুখে পড়তে চেয়েছিল কিংবা সেই ব্যক্তি যার পরিবার ছিল, তিনি তার চাকরি হারাতে চেয়েছিলেন? অবশ্যই না। এর পরিবর্তে, তারা যিহোবার মান সম্বন্ধে জানত এবং তাদের স্বর্গীয় পিতা কোন বিষয়ে খুশি হন, সেই বিষয়ে তারা তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছিল। যিহোবার প্রতি ভালোবাসা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে তাঁর ইচ্ছাকে প্রথমে রাখতে অনুপ্রাণিত করেছিল। এভাবে তারা তাদের বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছিল।
বিশ্বস্ততা কেন প্রয়োজন?
৬. (ক) বিশ্বস্ততা কেন প্রয়োজন? (খ) কীভাবে আদম ও হবা বিশ্বস্ততা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন?
৬ কেন আমাদের সবারই বিশ্বস্ততার প্রয়োজন রয়েছে? কারণ শয়তান যিহোবার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছে এবং সে আপনার বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলেছে। এদন উদ্যানে সেই বিদ্রোহী স্বর্গদূত নিজেকে শয়তানে বা ‘বিপক্ষে’ পরিণত করেছিল। সে যিহোবাকে মন্দ, স্বার্থপর ও অসৎ শাসক বলার মাধ্যমে অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। দুঃখের বিষয় হল আদম ও হবা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মাধ্যমে শয়তানের পক্ষ নিয়েছিলেন। (আদি. ৩:১-৬) এদনে জীবনযাপন করার ফলে তাদের কাছে যিহোবার প্রতি তাদের ভালোবাসাকে গভীর করার অগণিত সুযোগ ছিল। কিন্তু, শয়তান যখন প্রশ্ন তুলেছিল, তখন তাদের প্রেম সম্পূর্ণ ও নিখুঁত ছিল না। আরেকটা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল: কোনো মানুষ কি যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর প্রতি অনুগত থাকবে? অন্যভাবে বললে, মানুষের কি বিশ্বস্ততা দেখানোর সামর্থ্য রয়েছে? এই প্রশ্নটা ইয়োবের ক্ষেত্রে উত্থাপিত হয়েছিল।
৭. ইয়োব ১:৮-১১ পদ যেমন প্রকাশ করে, যিহোবা ইয়োবের বিশ্বস্ততার বিষয়ে কেমন অনুভব করেছিলেন এবং শয়তান কেমন অনুভব করে?
৭ ইয়োব এমন এক সময়ে বাস করতেন, যখন ইস্রায়েলীয়রা মিশরে ছিল। তার বিশ্বস্ততা অদ্বিতীয় ছিল। আমাদের মতোই তিনি অসিদ্ধ ছিলেন। তিনি ভুল করেছিলেন। তা সত্ত্বেও, যিহোবা ইয়োবকে তার বিশ্বস্ততার জন্য ভালোবাসতেন। এইরকম মনে হয় যে, শয়তান ইতিমধ্যেই মানুষের বিশ্বস্ততা নিয়ে যিহোবার কাছে প্রশ্ন তুলেছিল। তাই, যিহোবা ইয়োবের উপর শয়তানের মনোযোগকে আকর্ষণ করিয়েছিলেন। ইয়োবের জীবনধারা শয়তানকে একজন মিথ্যাবাদী হিসেবে প্রকাশ করে দিয়েছিল! শয়তান দাবি করেছিল যেন যিহোবা তাকে ইয়োবের বিশ্বস্ততা পরীক্ষা করার অনুমতি দেন। তাঁর বন্ধু ইয়োবের উপর যিহোবার আস্থা ছিল এবং তিনি শয়তানকে তাকে পরীক্ষা করার অনুমতি দিয়েছিলেন।—পড়ুন, ইয়োব ১:৮-১১.
৮. কীভাবে শয়তান ইয়োবকে আক্রমণ করেছিল?
৮ শয়তান একজন নিষ্ঠুর ব্যক্তি ও সেইসঙ্গে সে একজন খুনি। সে ইয়োবের সব কিছু কেড়ে নিয়েছিল, তার দাসদের হত্যা করেছিল আর তার সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। সে ইয়োবের পরিবারের উপর আক্রমণ করেছিল এবং তার ১০ জন প্রিয় সন্তানকে হত্যা করেছিল। এরপর, সে ইয়োবকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করেছিল। সে ইয়োবের মাথা থেকে পা পর্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক স্পোটকের বা ফোঁড়ার দ্বারা তাকে অসুস্থ করে তুলেছিল। ইয়োবের স্ত্রীও শোকের কারণে বিক্ষিপ্ত ও ভারগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিলেন; তিনি ইয়োবকে হাল ছেড়ে দিতে, ঈশ্বরকে অভিশাপ দিতে এবং মরে যেতে বলেছিলেন। ইয়োব নিজেও চেয়েছিলেন যেন তিনি মারা যান কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি নিজের বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। এরপর শয়তান এক ভিন্ন পদ্ধতিতে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল। সে ইয়োবের তিন জন বন্ধুকে ব্যবহার করেছিল। এই বন্ধুরা বেশ কয়েক দিন ধরে ইয়োবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কিন্তু তারা ইয়োবকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা প্রদান করেননি। এর বিপরীতে, তারা নিষ্ঠুরভাবে তার সমালোচনা করেছিলেন। তারা দাবি করেছিলেন যে, তার সমস্যার পিছনে ঈশ্বরের হাত রয়েছে আর ঈশ্বর তার বিশ্বস্ততাকে কোনো গুরুত্বই দেন না। তারা এমনকী এও বলেছিলেন যে, ইয়োব একজন দুষ্ট ব্যক্তি আর তাই তার প্রতি এগুলো ঘটছে।—ইয়োব ১:১৩-২২; ২:৭-১১; ১৫:৪, ৫; ২২:৩-৬; ২৫:৪-৬.
৯. ইয়োব পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার সত্ত্বেও কী করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?
৯ কীভাবে ইয়োব এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি সিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি রেগে গিয়ে তার মিথ্যা সান্ত্বনাকারীদের তিরস্কার করেছিলেন এবং তিনি এমন কিছু বলেছিলেন, যেগুলোকে তিনি পরবর্তী সময়ে বিচার-বিবেচনাহীন বলে স্বীকার করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের চেয়ে নিজের ধার্মিকতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। (ইয়োব ৬:৩; ১৩:৪, ৫; ৩২:২; ৩৪:৫) তবে, ইয়োব এমনকী সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও যিহোবা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি সেই বন্ধুদের মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে ধার্ম্মিক বলি, এমন যেন না হয়; প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“বিশ্বস্ততা,” NW] ত্যাগ করিব না।” (ইয়োব ২৭:৫) এই কথাগুলো প্রমাণ করে যে, ইয়োব তার বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন, তা যা-ই ঘটুক না কেন। ইয়োব নতিস্বীকার করা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন; আমরাও একই বিষয় করতে পারি।
১০. শয়তান ইয়োবের বিষয়ে যে-প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল, সেটার সঙ্গে আপনি কীভাবে জড়িত?
১০ শয়তান আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ করে থাকে। শয়তান ইয়োবের বিষয়ে যে-প্রশ্ন তুলেছিল, সেটার সঙ্গে আপনি কীভাবে জড়িত? অন্যভাবে বললে, সে বলে আপনি আসলে যিহোবা ঈশ্বরকে ভালোবাসেন না আর তাই আপনি নিজেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর সেবা করা বন্ধ করে দেবেন অর্থাৎ আপনি আপনার বিশ্বস্ততা বজায় রাখবেন না! (ইয়োব ২:৪, ৫; প্রকা. ১২:১০) এটা জেনে আপনি কেমন অনুভব করেন? আপনি কষ্ট পান, তাই না? তবে, এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করুন: আপনার উপর যিহোবার এতটা আস্থা রয়েছে যে, তিনি আপনাকে এক বিশেষ সুযোগ দিয়েছেন। যিহোবা শয়তানকে আপনার বিশ্বস্ততা পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি দিয়েছেন। প্রভু যিহোবার এই বিষয়ে আস্থা রয়েছে যে, আপনি আপনার বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারবেন এবং শয়তানকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করার বিষয়ে তাঁকে সাহায্য করবেন। আর তিনি আপনাকে এই বিষয়ে সাহায্য করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। (ইব্রীয় ১৩:৬) এটা কতই-না বিশেষ এক সুযোগ যে, নিখিলবিশ্বের শাসক আমাদের উপর আস্থা রেখেছেন! আপনি কি লক্ষ করতে পারছেন, কেন বিশ্বস্ততা এতটা গুরুত্বপূর্ণ? এটা আমাদের শয়তানের মিথ্যাগুলোকে ভুল বলে প্রমাণ করার এবং আমাদের পিতার সুনামকে বৃদ্ধি করার আর সেইসঙ্গে তাঁর শাসন করার পদ্ধতিকে সমর্থন করার সুযোগ করে দেয়। কীভাবে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ গুণটা গড়ে তুলতে পারি?
কীভাবে আমরা বর্তমানে আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি?
১১. ইয়োবের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১১ শয়তান এই “শেষ কালে” ঈশ্বরের লোকেদের উপর তার আক্রমণকে বৃদ্ধি করেছে। (২ তীম. ৩:১) এই অন্ধকারময় সময়ে কীভাবে আমরা আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য নিজেদের শক্তিশালী করতে পারি? আবারও আমরা ইয়োবের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। পরীক্ষা আসার অনেক আগেই ইয়োব বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে সুনাম গড়ে তুলেছিলেন। আমরা আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য নিজেদের শক্তিশালী করার বিষয়ে ইয়োবের কাছ থেকে তিনটে শিক্ষা লাভ করতে পারি। আসুন, আমরা সেগুলো বিবেচনা করি।
১২. (ক) ইয়োব ২৬:৭, ৮, ১৪ পদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে ইয়োব যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় ও সম্মান গড়ে তুলেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা আমাদের হৃদয় ঈশ্বরের প্রতি সশ্রদ্ধ ভয়ে পূর্ণ করতে পারি?
১২ ইয়োব যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় গড়ে তোলার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসাকে শক্তিশালী করেছিলেন। ইয়োব যিহোবার চমৎকার সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। (পড়ুন, ইয়োব ২৬:৭, ৮, ১৪.) তিনি যখন পৃথিবী, আকাশ, মেঘ ও বজ্রপাত নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তখন তিনি একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন, যিহোবার সমস্ত সৃষ্টি সম্বন্ধে অনেক কিছুই তিনি জানেন না। এ ছাড়া, তিনি যিহোবার অভিব্যক্তিগুলোকে মূল্যবান হিসেবে দেখেছিলেন। ঈশ্বরের বাক্যের বিষয়ে ইয়োব বলেছিলেন, “আমি . . . তাঁহার মুখের বাক্য সঞ্চয় করিয়াছি।” (ইয়োব ২৩:১২) যিহোবার প্রতি ইয়োবের সশ্রদ্ধ ভয় ও সম্মান তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি তার পিতাকে ভালোবাসতেন এবং তাঁকে খুশি করতে চেয়েছিলেন। এর ফলে, বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে ইয়োবের সংকল্প আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। আমাদেরও ইয়োবের মতো একই কাজ করতে হবে। ইয়োবের সময়ের তুলনায় বর্তমানে আমরা যিহোবার চমৎকার সৃষ্টি সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু জানি। আর যিহোবা যে সত্যিই রয়েছেন, সেটা জানতে সাহায্য করার জন্য আমাদের কাছে সম্পূর্ণ বাইবেল রয়েছে। আমরা যা-কিছু শিখি, সেগুলো আমাদের হৃদয় সশ্রদ্ধ ভয়ে পূর্ণ করার জন্য সাহায্য করতে পারে। যিহোবার প্রতি সশ্রদ্ধ ভয় ও সম্মান আমাদের তাঁকে ভালোবাসতে ও তাঁর বাধ্য হতে অনুপ্রাণিত করে এবং আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে গভীর করে তোলে।—ইয়োব ২৮:২৮.
১৩-১৪. (ক) ইয়োব ৩১:১ পদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে ইয়োব বাধ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা ইয়োবের উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?
১৩ ইয়োব সমস্ত কিছুতে বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন আর এটা তাকে তার বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। ইয়োব জানতেন, তিনি যদি বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে চান, তা হলে তাকে যিহোবার বাধ্য হতে হবে। সত্যি বলতে কী, বাধ্যতা দেখিয়ে করা প্রত্যেকটা কাজ বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করে। ইয়োব তার দৈনন্দিন জীবনে ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। (পড়ুন, ইয়োব ৩১:১.) একজন বিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি জানতেন যে, তার স্ত্রী নয় এমন মহিলার প্রতি রোমান্টিক আগ্রহ দেখানো উচিত নয়। বর্তমানে, আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে যৌন প্রলোভন চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। ইয়োবের মতো আমরাও কি আমাদের বিবাহসাথি নয় এমন কোনো ব্যক্তির প্রতি অনুপযুক্ত আগ্রহ দেখানো প্রত্যাখ্যান করব? এ ছাড়া, আমরা কি যেকোনো ধরনের অশ্লীল ছবি অথবা পর্নোগ্রাফিক ছবি দেখাকে প্রত্যাখ্যান করব? (মথি ৫:২৮) আমরা যদি প্রতিদিন এই ধরনের ইন্দ্রিয়দমন প্রদর্শন করি, তা হলে আমরা আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে নিজেদের শক্তিশালী করব।
১৪ এ ছাড়া, ইয়োব বস্তুগত বিষয়গুলোকে দেখার ক্ষেত্রেও যিহোবার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন। ইয়োব এটা উপলব্ধি করেছিলেন, তিনি যদি ধনসম্পদের উপর তার আস্থা রাখেন, তা হলে তিনি এক গুরুতর ভুল করে ফেলবেন এবং তাকে শাস্তি পেতে হবে। (ইয়োব ৩১:২৪, ২৫, ২৮) বর্তমানে, আমরা বস্তুবাদিতায় পরিপূর্ণ এক জগতে বাস করছি। আমরা যদি বাইবেলের পরামর্শ অনুযায়ী টাকাপয়সা ও সম্পদের বিষয়ে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলি, তা হলে আমরা আমাদের বিশ্বস্ততা বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করব।—হিতো. ৩০:৮, ৯; মথি ৬:১৯-২১.
১৫. (ক) কোন পুরস্কারের আশা ইয়োবকে তার বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল? (খ) যিহোবা যে-আশা প্রদান করেন, সেটা স্মরণে রাখা কেন আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৫ ইয়োব ঈশ্বরের কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করার আশার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে নিজের বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বর তার ‘সিদ্ধতার [‘বিশ্বস্ততার’, NW]’ বিষয়ে অবশ্যই চিন্তা করেন। (ইয়োব ৩১:৬) পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও ইয়োব এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তাকে পরিশেষে পুরস্কৃত করবেন। তার এই আস্থাই নিশ্চিতভাবে তাকে বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। যদিও ইয়োব একজন অসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন, তারপরও যিহোবা তার বিশ্বস্ততার বিষয়ে এতটাই আনন্দিত ছিলেন যে, তাকে প্রচুররূপে পুরস্কৃত করেছিলেন! (ইয়োব ৪২:১২-১৭; যাকোব ৫:১১) আর ইয়োবের জন্য আরও উত্তম পুরস্কার অপেক্ষা করে আছে। আপনার কি এই বিষয়ে এক দৃঢ় আশা রয়েছে, যিহোবা আপনার বিশ্বস্ততাকে পুরস্কৃত করবেন? আমাদের ঈশ্বর যিহোবার কোনো পরিবর্তন নেই। (মালাখি ৩:৬) আমরা যদি এটা স্মরণে রাখি যে, তিনি আমাদের বিশ্বস্ততাকে মূল্যবান বলে মনে করেন, তা হলে আমরা এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাকে আমাদের হৃদয়ে জীবন্ত রাখতে পারব।—১ থিষল. ৫:৮, ৯.
১৬. আমাদের কোন বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?
১৬ আপনার বিশ্বস্ততা পরিত্যাগ না করার বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন! কখনো কখনো আপনার হয়তো মনে হতে পারে, আপনার চারপাশে কেউই বিশ্বস্ততা বজায় রাখছে না কিন্তু আপনি কখনোই একা নন। আপনি বিশ্বব্যাপী সেই লক্ষ লক্ষ বিশ্বস্ততা রক্ষাকারী ব্যক্তিদের দলে যুক্ত হবেন। এ ছাড়া, আপনি সেই বিশ্বস্ত নারী-পুরুষদের দলে যুক্ত হবেন, যারা অতীতে নিজেদের বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন আর তা এমনকী মৃত্যুর হুমকি থাকা সত্ত্বেও। (ইব্রীয় ১১:৩৬-৩৮; ১২:১) আমরা সবাই যেন ইয়োবের এই কথা অনুযায়ী জীবনযাপন করার বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ হই: “আমি আপন বিশ্বস্ততা ত্যাগ করিব না।” আর আমাদের বিশ্বস্ততা যেন অনন্তকাল ধরে যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে!
গান সংখ্যা ১৮ ঈশ্বরের অনুগত প্রেম
a বিশ্বস্ততা কী? কেন যিহোবা তাঁর দাসদের বিশ্বস্ততাকে মূল্যবান হিসেবে দেখে থাকেন? কেন আমাদের প্রত্যেকের জন্য বিশ্বস্ততা গুরুত্বপূর্ণ? এই প্রবন্ধ আমাদের বাইবেল থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, এই প্রবন্ধ আমাদের স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করবে যে, কীভাবে আমরা প্রতিদিন বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য নিজেদের শক্তিশালী করতে পারি। আর তা করা আমাদের জন্য প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসবে।
b কোনো পশুর ক্ষেত্রে যে-ইব্রীয় শব্দকে “নির্দোষ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত “বিশ্বস্ততা” শব্দের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
c ছবি সম্বন্ধে: আমরা কমবয়সি ইয়োবকে দেখতে পাচ্ছি, যিনি তার কয়েক জন সন্তানকে যিহোবার চমৎকার সৃষ্টি সম্বন্ধে শিক্ষা দিচ্ছেন।
d ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই তার সহকর্মীদের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখাকে প্রত্যাখ্যান করছেন।
e ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই একটা বড়ো ও দামি টেলিভিশন কেনার চাপকে প্রতিরোধ করছেন, যেটা কেনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য কোনোটাই তার নেই।
f ছবি সম্বন্ধে: একজন ভাই পরমদেশের আশা নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক ধ্যান করার জন্য সময় করে নিয়েছেন।