রাজাবলির দ্বিতীয় খণ্ড
১৯ সেই কথা শোনার সঙ্গেসঙ্গে রাজা হিষ্কিয় তার পোশাক ছিঁড়লেন এবং চট পরে যিহোবার গৃহে গেলেন। ২ তখন তিনি রাজপরিবারের* অধ্যক্ষ ইলীয়াকীম, শিব্ন, যিনি সচিব ছিলেন এবং যাজকদের প্রাচীনদের আমোসের ছেলে ভাববাদী যিশাইয়ের কাছে পাঠালেন। তারা সবাই চট পরে তার কাছে গেলেন। ৩ তারা তাকে বললেন: “হিষ্কিয় এই কথা বলেন, ‘আজকের দিন দুর্দশা, নিন্দা ও অপমানের দিন। আমাদের অবস্থা এমন মহিলার মতো হয়ে গিয়েছে, যার সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে, কিন্তু তার সন্তান জন্ম দেওয়ার শক্তি নেই। ৪ তাই, আপনি এই দেশে অবশিষ্ট লোকদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করুন। হয়তো আপনার ঈশ্বর যিহোবা রব্শাকির সমস্ত কথার প্রতি মনোযোগ দেবেন, যাকে তার প্রভু, অশূরের রাজা জীবন্ত ঈশ্বরকে টিটকারি দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিল আর আপনার ঈশ্বর যিহোবা যে-সমস্ত কথার প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন, সেগুলোর জন্য তার কাছ থেকে হিসাব নেবেন।’”
৫ যখন রাজা হিষ্কিয়ের সেবকেরা যিশাইয়কে এই বার্তা শোনালেন, ৬ তখন যিশাইয় তাদের বললেন: “তোমরা গিয়ে তোমাদের প্রভুকে বলো, ‘যিহোবা এই কথা বলেন: “অশূরের রাজার পরিচারকেরা আমাকে নিন্দা করে যে-সমস্ত কথা বলেছে, সেগুলোর জন্য তুমি ভয় পেয়ো না। ৭ আমি তার মাথায় একটা চিন্তা ঢোকাব আর সে একটা খবর শুনে নিজের দেশে ফিরে যাবে। তারপর, আমি তার দেশেই তলোয়ারের আঘাতে তার মৃত্যু ঘটাব।”’”
৮ রব্শাকি যখন জানতে পারলেন, অশূরের রাজা লাখীশ থেকে তার সেনাবাহিনী নিয়ে চলে গিয়েছেন, তখন রব্শাকি তার রাজার কাছে ফিরে গেলেন আর দেখলেন, রাজা লিব্নার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। ৯ অশূরের রাজা জানতে পারলেন যে, ইথিওপিয়ার রাজা তির্হকঃ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন। তাই, তিনি আবারও তার বার্তাবাহকদের হিষ্কিয়ের কাছে পাঠিয়ে বললেন: ১০ “তোমরা গিয়ে যিহূদার রাজা হিষ্কিয়কে বলো, ‘তুমি তোমার ঈশ্বরের কথার উপর আস্থা রেখো না। তিনি তোমাদের এই বলে বোকা বানাচ্ছেন: “জেরুসালেমকে অশূরের রাজার হাতে সমর্পণ করা হবে না।” ১১ তুমি ভালোভাবেই জান, অশূরের রাজারা অন্যান্য সমস্ত দেশের প্রতি কী করেছেন, কীভাবে তাদের পুরোপুরিভাবে বিনষ্ট করেছেন। তাহলে, তুমি কীভাবে ভাবলে যে, তুমি একা বেঁচে যাবে? ১২ আমার পূর্বপুরুষেরা যে-জাতিগুলোকে ধ্বংস করেছিলেন, তাদের দেবতারা কি তাদের জাতিকে উদ্ধার করতে পেরেছিল? গোষণ, হারণ ও রেৎসফ আজ কোথায়? তলঃসরে এদনের যে-লোকেরা থাকত, তারা কোথায়? ১৩ হমাতের রাজা, অর্পদের রাজা এবং সফর্বয়িম, হেনা ও ইব্বা নগরের রাজারা কোথায়?’”
১৪ হিষ্কিয় বার্তাবাহকদের হাত থেকে সেই চিঠিগুলো নিলেন এবং সেগুলো পড়লেন। তারপর, তিনি যিহোবার গৃহে গেলেন আর যিহোবার সামনে সেগুলো* বিছিয়ে রাখলেন। ১৫ এরপর, হিষ্কিয় এই বলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেন: “হে ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবা, তুমি, যে করূবদের উপরে* সিংহাসনে বসে থাক, তুমিই পৃথিবীর সমস্ত রাজ্যের একমাত্র সত্য ঈশ্বর। তুমিই আকাশ ও পৃথিবী তৈরি করেছ। ১৬ হে যিহোবা, কান পেতে শোনো! হে যিহোবা, চোখ মেলে দেখো! সন্হেরীব জীবন্ত ঈশ্বরকে টিটকারি দেওয়ার জন্য যে-সমস্ত কথা লিখেছে, সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দাও। ১৭ হে যিহোবা, এটা সত্য যে, অশূরের রাজারা অনেক জাতি এবং তাদের এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে আর ১৮ তাদের দেবতাদের আগুনে ছুড়ে ফেলেছে। তারা সেই দেবতাদের ধ্বংস করতে পেরেছে কারণ তারা দেবতা ছিল না বরং মানুষের হাতের কাজ ছিল, পাথর ও কাঠ ছিল। ১৯ এখন হে আমাদের ঈশ্বর যিহোবা, দয়া করে তার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো, যাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানতে পারে যে, যিহোবা তুমিই একমাত্র ঈশ্বর।”
২০ তখন আমোসের ছেলে যিশাইয় হিষ্কিয়ের কাছে এই বার্তা পাঠালেন: “ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবা এই কথা বলেন, ‘তুমি অশূরের রাজা সন্হেরীবের বিষয়ে আমার কাছে যে-প্রার্থনা করেছ, আমি তা শুনেছি। ২১ যিহোবা সন্হেরীবের বিরুদ্ধে এই কথা বলেছেন:
“সিয়োনের কুমারী মেয়ে তোমাকে তুচ্ছ বলে মনে করে, তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা করে।
জেরুসালেমের মেয়ে মাথা নাড়িয়ে তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।
২২ তুমি কি আদৌ জান, তুমি কাকে টিটকারি দিয়েছ? কার নিন্দা করেছ?
কার বিরুদ্ধে গলার জোর দেখিয়েছ
এবং উদ্ধত দৃষ্টিতে তাকিয়েছ?
ইজরায়েলের পবিত্র ঈশ্বরের বিরুদ্ধে!
২৩ তুমি বার্তাবাহকদের মাধ্যমে এই বলে যিহোবাকে টিটকারি দিয়েছ,
‘আমি আমার অসংখ্য যুদ্ধরথ নিয়ে আসব,
পর্বতের চূড়ায় উঠব,
লেবাননের দূরদূরান্তে গিয়ে পৌঁছোব।
আমি সেটার বড়ো বড়ো দেবদারু গাছ, সুন্দর সুন্দর জুনিপার গাছ* কেটে দেব।
আমি সেটার প্রান্তে অবস্থিত বাসস্থানে, সেটার সবচেয়ে ঘন জঙ্গলে প্রবেশ করব।
২৪ আমি বিদেশের মাটিতে কুয়ো খুঁড়ব, সেখানকার জল খাব।
আমি আমার পায়ের পাতা দিয়ে মিশরের সমস্ত নদী* শুকিয়ে দেব।’
২৫ তুমি কি শোননি, অনেক আগেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম?
আমি অনেক দিন আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নিয়েছি।
এবার আমি এটা পরিপূর্ণ করব।
তুমি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নগরগুলোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে।
২৬ সেগুলোর বাসিন্দারা অসহায় হয়ে পড়বে,
তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়বে, তাদের লজ্জিত করা হবে।
তারা মাঠের শাকসবজি ও সবুজ ঘাসের মতোই দুর্বল হয়ে যাবে,
পূর্ব দিকের বাতাসে ঝলসানো ছাদের ঘাসের মতো হয়ে যাবে।
২৭ কিন্তু, আমি ভালোভাবেই জানি, তুমি কখন বস, কখন বাইরে যাও এবং কখন ভিতরে আস
আর এও জানি, কখন তুমি আমার উপর রেগে যাও।
২৮ কারণ আমার বিরুদ্ধে তোমার রাগ ও গর্জন আমার কানে এসে পৌঁছেছে।
আমি তোমার নাকে আংটা এবং তোমার মুখে লাগাম লাগাব
আর তুমি যে-পথে এসেছ, সেই পথেই তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব।”
২৯ “‘এগুলো যে অবশ্যই ঘটবে, সেটার জন্য আমি তোমাকে* এই চিহ্ন দিচ্ছি: এই বছর তোমরা সেই শস্য খাবে, যেটা নিজে থেকে উৎপন্ন হবে।* পরের বছর তোমরা সেই শস্য খাবে, যেটা আগের বছরের শস্য থেকে উৎপন্ন হবে। আর তৃতীয় বছরে তোমরা বীজ বুনবে এবং শস্য কাটবে আর আঙুর গাছ লাগাবে এবং সেগুলোর ফল খাবে। ৩০ যিহূদার পরিবারের যে-লোকেরা রক্ষা পাবে, তারা গাছের মতোই শিকড় বিস্তার করবে এবং ফল উৎপন্ন করবে। ৩১ কারণ অবশিষ্ট লোকেরা জেরুসালেম থেকে বের হবে, হ্যাঁ, যারা রক্ষা পাবে, তারা সিয়োন পর্বত থেকে বের হবে। স্বর্গীয় বাহিনীর শাসক যিহোবা নিজের উদ্যোগের কারণে এমনটা অবশ্যই করবেন।
৩২ “‘তাই, অশূরের রাজার বিষয়ে যিহোবা এই কথা বলেন:
“সে এই নগরে আসবে না,
এখানে একটা তিরও ছুড়বে না,
ঢাল নিয়ে এটা আক্রমণ করবে না
কিংবা এটা আক্রমণ করার জন্য ঢালু ঢিবিও তৈরি করবে না।
৩৩ সে যে-পথে এসেছে, সেই পথেই ফিরে যাবে।
সে এই নগরে আসবে না,” যিহোবা এই কথা বলেন।
৩৪ “আমি নিজের নামের জন্য এবং আমার দাস দায়ূদের জন্য
এই নগরকে রক্ষা করব, এটাকে উদ্ধার করব।”’”
৩৫ সেই রাতেই যিহোবার স্বর্গদূত অশূরীয়দের শিবিরে এলেন আর তাদের ১,৮৫,০০০ জন লোককে মেরে ফেললেন। লোকেরা যখন সকাল সকাল উঠল, তখন তারা দেখল, চারিদিকে মৃতদেহ পড়ে রয়েছে। ৩৬ তখন অশূরের রাজা সন্হেরীব সেখান থেকে চলে গেলেন আর নীনবীতে ফিরে গিয়ে সেখানেই থাকলেন। ৩৭ একদিন তিনি যখন তার দেবতা নিষ্রোকের মন্দিরে নত হচ্ছিলেন, তখন তার নিজের ছেলে অদ্রম্মেলক ও শরেৎসর তলোয়ার দিয়ে তাকে মেরে ফেলল। তারপর, তারা অরারট দেশে পালিয়ে গেল। সন্হেরীবের জায়গায় তার ছেলে এসর-হদ্দোন রাজা হলেন।