বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড
২৬ তারপর, যিহূদার সমস্ত লোক অমৎসিয়ের ছেলে উষিয়কে তার জায়গায় রাজা করল। সেই সময় উষিয়ের বয়স ছিল ১৬ বছর। ২ রাজার* মৃত্যুর* পর তিনি আবারও এলৎকে যিহূদার অধীনে আনলেন এবং সেটা পুনর্নির্মাণ করলেন। ৩ উষিয় যখন রাজা হলেন, তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর আর তিনি জেরুসালেম থেকে ৫২ বছর ধরে রাজত্ব করলেন। তার মায়ের নাম ছিল যিখলিয়া, যিনি জেরুসালেমের বাসিন্দা ছিলেন। ৪ উষিয় তার বাবা অমৎসিয়ের মতোই যিহোবার দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা করতে থাকলেন। ৫ সখরিয়ের সময়ে তিনি ঈশ্বরের অনুসন্ধান করতে থাকলেন। সখরিয়ই তাকে সত্য ঈশ্বরকে ভয় করতে শিখিয়েছিলেন। যতদিন উষিয় সত্য ঈশ্বর যিহোবার অনুসন্ধান করলেন, ততদিন ঈশ্বর তাকে সমৃদ্ধিশালী করলেন।
৬ তিনি পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন আর গাৎ, যব্নি ও অস্দোদ নগরের প্রাচীরগুলো ভেঙে সেই নগরগুলোতে ঢুকে পড়লেন এবং সেগুলো দখল করে নিলেন। তারপর, তিনি অস্দোদের এলাকায় এবং পলেষ্টীয়দের এলাকায় নগর নির্মাণ করলেন। ৭ সত্য ঈশ্বর তাকে পলেষ্টীয়দের, গূরবালে বসবাসরত আরবীয়দের এবং মিয়ূনীয়দের উপর জয় লাভ করার জন্য সাহায্য করতে থাকলেন। ৮ অম্মোনীয়েরা উষিয়কে কর দিতে লাগল। তার খ্যাতি মিশর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল কারণ তিনি খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠলেন। ৯ এ ছাড়া, উষিয় জেরুসালেমে কোণের দ্বারের পাশে, উপত্যকাদ্বারের পাশে এবং প্রাচীর দাঁড় করিয়ে রাখার স্তম্ভের পাশে দৃঢ় দুর্গ নির্মাণ করলেন। ১০ তিনি প্রান্তরেও দুর্গ নির্মাণ করলেন এবং অনেক কুয়ো* খুঁড়লেন* (কারণ তার কাছে অনেক পশুপাল ছিল)। তিনি শফেলায়* ও সমভূমিতেও* তা করলেন। পর্বতে ও কর্মিলে তার চাষী এবং আঙুর খেতের কর্মী ছিল কারণ তিনি চাষবাস করতে ভালোবাসতেন।
১১ উষিয়ের এক শক্তিশালী সেনাবাহিনীও ছিল, যারা অস্ত্র বহন করত। তাদের বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয়েছিল আর তারা সেভাবেই যুদ্ধে যেত। রাজার সচিব যিয়ীয়েল এবং আধিকারিক মাসেয় তাদের সংখ্যা গুনেছিলেন এবং নাম লিখেছিলেন। তারা দু-জনে রাজার একজন অধ্যক্ষ হনানিয়ের অধীনে কাজ করতেন। ১২ রাজার বীরযোদ্ধাদের সেনাপতিরা বাবার বংশের প্রধান ব্যক্তি ছিল আর তাদের মোট সংখ্যা ছিল ২,৬০০। ১৩ তাদের অধীনে ৩,০৭,৫০০ জন সশস্ত্র সৈন্য ছিল, যারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকত। এই সেনাবাহিনী রাজার হয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত আর এরা খুবই শক্তিশালী ছিল। ১৪ উষিয় তার পুরো সেনাবাহিনীকে ঢাল, বর্শা, শিরস্ত্রাণ,* বর্ম,* তির-ধনুক এবং ফিঙার পাথর দিলেন। ১৫ শুধু তা-ই নয়, তিনি জেরুসালেমে দক্ষ কারিগরদের দিয়ে যুদ্ধের যন্ত্রও তৈরি করালেন। এই যন্ত্রগুলো দুর্গ এবং নগরের প্রাচীরের কোণাগুলোর উপর রাখা হয়েছিল আর এগুলো দিয়ে তির এবং বড়ো বড়ো পাথর ছোড়া হত। উষিয়ের খ্যাতি দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়ল কারণ তিনি অনেক সাহায্য লাভ করলেন এবং খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠলেন।
১৬ কিন্তু, শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে তার মন অহংকারে ভরে গেল আর এই কারণেই তার সর্বনাশ হল। তিনি ধূপবেদির উপর ধূপ জ্বালানোর জন্য যিহোবার মন্দিরে ঢুকে পড়লেন আর এভাবে তিনি তার ঈশ্বর যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়লেন। ১৭ তিনি ভিতরে যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে যাজক অসরিয় এবং যিহোবার আরও ৮০ জন সাহসী যাজক তার পিছন পিছন গেলেন। ১৮ তারা রাজা উষিয়কে বাধা দিয়ে বললেন: “উষিয়, যিহোবার উদ্দেশে ধূপ জ্বালানোর অধিকার আপনার নেই! এই অধিকার কেবল যাজকদের কারণ তারা হারোণের বংশধর আর তাদের পবিত্র করা হয়েছে। আপনি পবিত্র স্থান থেকে বের হয়ে যান কারণ আপনি অবিশ্বস্ত হয়ে পড়েছেন। এই কাজের জন্য আপনি যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে কোনো গৌরব লাভ করবেন না।”
১৯ কিন্তু উষিয়, যার হাতে একটা ধূপদানি ছিল, যাজকদের উপর প্রচণ্ড রেগে গেলেন। তিনি রেগে গিয়ে যাজকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, এমন সময়ে তার কপালে কুষ্ঠ রোগ দেখা দিল। এই সমস্ত কিছু যিহোবার গৃহে ধূপবেদির পাশে যাজকদের সামনে ঘটল। ২০ প্রধান যাজক অসরিয় এবং বাকি সমস্ত যাজক দেখলেন যে, তার কপালে কুষ্ঠ রোগ হয়েছে! তারা তাকে সঙ্গেসঙ্গে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলেন আর তিনি নিজেও তাড়াতাড়ি বাইরে যেতে লাগলেন কারণ যিহোবা তাকে কুষ্ঠ রোগী করে দিয়েছিলেন।
২১ রাজা উষিয় মৃত্যু পর্যন্ত কুষ্ঠ রোগী হয়ে থাকলেন। তিনি একটা আলাদা বাড়িতে থাকতে লাগলেন কারণ তার আর যিহোবার গৃহে প্রবেশ করার অনুমতি ছিল না। তার ছেলে যোথম রাজপ্রাসাদের দেখাশোনা করলেন এবং দেশের লোকদের বিচার করলেন।
২২ উষিয়ের জীবনের বাকি কাহিনি অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো ইতিহাস আমোসের ছেলে ভাববাদী যিশাইয় লিখেছিলেন। ২৩ তারপর, উষিয় মারা গেলেন* আর তাকে তার পূর্বপুরুষদের কবরের কাছে কবর দেওয়া হল, তবে রাজাদের একটা জমিতে* কবর দেওয়া হল কারণ তারা বলল: “তিনি কুষ্ঠ রোগী।” তার জায়গায় তার ছেলে যোথম রাজা হলেন।