শমূয়েলের দ্বিতীয় পুস্তক
২৩ দায়ূদের বলা শেষ কথাগুলো এই:
“এই কথাগুলো যিশয়ের ছেলে দায়ূদের,
সেই ব্যক্তির কথা, যাকে উচ্চে ওঠানো হয়েছে,
যে যাকোবের ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তি
এবং ইজরায়েলের মধুর গায়ক।*
২ যিহোবার পবিত্র শক্তি আমার মাধ্যমে কথা বলল,
আমার জিভে তাঁর কথা ছিল।
৩ ইজরায়েলের ঈশ্বর, ইজরায়েলের শৈল আমাকে বললেন:
‘যিনি মানুষের উপর রাজত্ব করেন, তিনি যখন ধার্মিক হন
এবং ঈশ্বরকে ভয় করে রাজত্ব করেন,
৪ তখন তার রাজত্ব সকালের আলোর মতো হয়,
যখন পরিষ্কার আকাশে সূর্য ঝলমল করে।
তার রাজত্ব বৃষ্টির পর বের হওয়া রোদের মতো হয়,
যেটার ফলে মাটিতে কচি কচি ঘাস জন্মায়।’
৫ আমার পরিবার কি ঈশ্বরের চোখে এইরকমই নয়?
তিনি আমার সঙ্গে এক চিরকালীন চুক্তি করেছেন,
যেটা সব দিক বিবেচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং যেটা কখনো ভাঙা হবে না।
এই চুক্তি পুরোপুরিভাবে আমার পরিত্রাণ নিয়ে আসবে এবং আমাকে সমস্ত আনন্দ দেবে।
এই কারণেই কি তিনি আমার পরিবারকে বৃদ্ধি দেন না?
৬ কিন্তু, সমস্ত অপদার্থ লোককে কাঁটাঝোপের মতো ফেলে দেওয়া হবে
কারণ সেগুলো হাতে তোলা যায় না।
৭ সেগুলো তোলার জন্য লোহার অস্ত্রশস্ত্র এবং বর্শা প্রয়োজন,
সেগুলোকে সেগুলোর জায়গাতেই আগুনে পুরোপুরিভাবে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত।”
৮ দায়ূদের বীরযোদ্ধাদের নাম এই: তখমোনীয় যোশেব-বশেবৎ, যিনি সেই তিন জনের মধ্যে প্রধান ছিলেন। একবার তিনি তার বর্শা দিয়ে ৮০০ জনেরও বেশি শত্রুকে মেরে ফেলেছিলেন। ৯ পরের বীরযোদ্ধা ছিলেন ইলিয়াসর, যিনি দোদোর ছেলে এবং অহোহীর নাতি। একবার পলেষ্টীয়েরা যখন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এল, তখন দায়ূদের সেই তিন জন বীরযোদ্ধা তার সঙ্গে ছিল আর তারা পলেষ্টীয়দের টিটকারি দিল। ইলিয়াসর তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। যুদ্ধের সময় ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা পালিয়ে গেল। ১০ কিন্তু, ইলিয়াসর যুদ্ধক্ষেত্রেই থাকলেন। তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের হত্যা করলেন, যতক্ষণ না তার হাত ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তার হাত ক্লান্ত হয়ে পড়া সত্ত্বেও তিনি তলোয়ার ছাড়লেন না। সেই দিন যিহোবা ইজরায়েলীয়দের এক বিরাট জয়* এনে দিলেন। তারপর, যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের জিনিসপত্র লুট করার জন্য ইজরায়েলীয় সৈন্যেরা ইলিয়াসরের কাছে ফিরে এল।
১১ পরের বীরযোদ্ধা ছিলেন শম্ম। তিনি হরারীয় আগির ছেলে। একবার পলেষ্টীয়েরা ইজরায়েলীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লিহীতে একত্রিত হল, যেখানে মুসুর ডালের একটা খেত ছিল। লোকেরা পলেষ্টীয়দের দেখে পালিয়ে গেল। ১২ কিন্তু, শম্ম খেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেটা রক্ষা করলেন আর পলেষ্টীয়দের হত্যা করতে থাকলেন। তাই, যিহোবা ইজরায়েলীয়দের এক বিরাট জয়* এনে দিলেন।
১৩ দায়ূদের সেনাবাহিনীর ৩০ জন প্রধানের মধ্য থেকে তিন জন পুরুষ ফসল কাটার সময় অদুল্লমের গুহায় গেলেন, যেখানে দায়ূদ ছিলেন। পলেষ্টীয়দের একটা সৈন্যদল রফায়ীম উপত্যকায়* শিবির স্থাপন করে ছিল। ১৪ সেই সময় দায়ূদ একটা সুরক্ষিত জায়গায় ছিলেন আর পলেষ্টীয়দের একটা সৈন্যদল বেথলেহেমে ছিল। ১৫ তখন দায়ূদ বললেন: “হায়, বেথলেহেম নগরের দরজার কাছে যে-কুয়োটা রয়েছে, আমি যদি সেই কুয়োর জল খেতে পারতাম!” ১৬ তখন সেই তিন জন বীরযোদ্ধা পলেষ্টীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে তাদের শিবিরে ঢুকলেন আর বেথলেহেম নগরের দরজার কাছে যে-কুয়োটা ছিল, সেটার জল তুলে দায়ূদের কাছে নিয়ে এলেন। কিন্তু, দায়ূদ সেই জল খেতে চাইলেন না। তিনি যিহোবার সামনে সেটা ঢেলে দিলেন। ১৭ তিনি বললেন: “হে যিহোবা, আমি এই জল খাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারি না! কীভাবে আমি এই লোকদের রক্ত খেতে পারি, যারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছিল?” এইজন্য দায়ূদ সেই জল খেতে চাইলেন না। তার তিন জন বীরযোদ্ধা এই কাজগুলো করেছিলেন।
১৮ অবীশয়, যিনি যোয়াবের ভাই এবং সরূয়ার ছেলে ছিলেন, তিনি আরও তিন জন যোদ্ধার মধ্যে প্রধান ছিলেন। তিনি তার বর্শা দিয়ে ৩০০ জনেরও বেশি শত্রুকে হত্যা করেছিলেন। তিনিও সেই তিন জন যোদ্ধার মতোই বিখ্যাত ছিলেন। ১৯ যদিও তিনি সেই তিন জন যোদ্ধার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দক্ষ ছিলেন এবং তাদের প্রধান ছিলেন, তবুও তিনি সেই প্রথম তিন জন বীরযোদ্ধার সমান ছিলেন না।
২০ যিহোয়াদার ছেলে বনায়ও একজন সাহসী সৈন্য* ছিলেন। তিনি কব্সেলে অনেক বীরত্বের কাজ করেছিলেন। তিনি মোয়াবের বাসিন্দা অরীয়েলের দু-জন ছেলেকে হত্যা করেছিলেন আর একদিন যখন তুষারপাত হচ্ছিল, তখন তিনি একটা গর্তে নেমে একটা সিংহকে মেরে ফেলেছিলেন। ২১ তিনি একজন মিশরীয় ব্যক্তিকেও হত্যা করেছিলেন, যে অস্বাভাবিক লম্বা-চওড়া ছিল। সেই মিশরীয়ের হাতে একটা বর্শা ছিল কিন্তু বনায়ের হাতে কেবল একটা দণ্ড ছিল। বনায় সেই মিশরীয়ের বর্শা ছিনিয়ে নিয়ে সেটা দিয়েই তাকে হত্যা করলেন। ২২ যিহোয়াদার ছেলে বনায় এই কাজগুলো করেছিলেন। তিনি সেই তিন জন বীরযোদ্ধার মতো বিখ্যাত ছিলেন। ২৩ যদিও তিনি সেই ৩০ জন যোদ্ধার চেয়ে বেশি দক্ষ ছিলেন, তবুও তিনি সেই তিন জন বীরযোদ্ধার সমান ছিলেন না। কিন্তু, দায়ূদ বনায়কেই তার দেহরক্ষীদের উপর নিযুক্ত করেছিলেন।
২৪ এই লোকেরা দায়ূদের ৩০ জন বীরযোদ্ধার মধ্যে ছিল: যোয়াবের ভাই অসাহেল, বেথলেহেমের বাসিন্দা দোদোর ছেলে ইল্হানন, ২৫ হরোদীয় শম্ম, হরোদীয় ইলীকা, ২৬ পল্টীয় হেলস, তকোয়ীয় ইক্কেশের ছেলে ঈরা, ২৭ অনাথোতীয় অবীয়েষর, হূশাতীয় মবুন্নয়, ২৮ অহোহীয় সল্মোন, নটোফাতীয় মহরয়, ২৯ নটোফাতীয় বানার ছেলে হেলব, বিন্যামীন বংশের গিবিয়ার বাসিন্দা রীবয়ের ছেলে ইত্তয়, ৩০ পিরিয়াথোনীয় বনায়, গাশের উপত্যকার* বাসিন্দা হিদ্দয়, ৩১ অর্বতীয় অবি-অলবোন, বরহূমীয় অস্মাবৎ, ৩২ শাল্বোনীয় ইলিয়হবা, যাশেনের ছেলেরা, যোনাথন, ৩৩ হরারীয় শম্ম, হরারীয় সাররের ছেলে অহীয়াম, ৩৪ একজন মাখাথীয়ের ছেলে অহস্বয়ের ছেলে ইলীফেলট, গীলোনীয় অহীথোফলের ছেলে ইলিয়াম, ৩৫ কর্মিলীয় হিষ্রয়, অর্বীয় পারয়, ৩৬ সোবার বাসিন্দা নাথনের ছেলে যিগাল, গাদীয় বানি, ৩৭ অম্মোনীয় সেলক, বেরোতীয় নহরয়, যে সরূয়ার ছেলে যোয়াবের অস্ত্রবহনকারী সৈন্য ছিল, ৩৮ যিত্রীয় ঈরা, যিত্রীয় গারেব ৩৯ এবং হিত্তীয় ঊরিয়—মোট ৩৭ জন।