যোহন লিখিত সুসমাচার
১০ “আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, যে-কেউ দরজা দিয়ে মেষের খোঁয়াড়ে প্রবেশ না করে, বরং প্রাচীর বেয়ে ওঠে, সে চোর ও দস্যু। ২ কিন্তু, যে-কেউ দরজা দিয়ে প্রবেশ করে, সে-ই মেষদের পালক। ৩ দ্বাররক্ষক তাকেই দরজা খুলে দেয় আর মেষেরা তার রবে মনোযোগ দেয়। সে তার মেষদের নাম ধরে ডাকে এবং তাদের খোঁয়াড়ের বাইরে নিয়ে যায়। ৪ সে যখন তার সমস্ত মেষ বাইরে নিয়ে যায়, তখন সে তাদের আগে আগে যায় আর মেষেরা তাকে অনুসরণ করে কারণ তারা তার রব চেনে। ৫ তারা কোনোভাবেই অপরিচিত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে না, বরং তার কাছ থেকে পালিয়ে যায়, কারণ তারা সেই অপরিচিত ব্যক্তির রব চেনে না।” ৬ যিশু তাদের এই দৃষ্টান্তটা বললেন, কিন্তু তিনি তাদের কী বলছিলেন, তা তারা বুঝতে পারল না।
৭ তাই, যিশু আবার বললেন: “আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, আমিই মেষদের জন্য যাওয়ার দরজা। ৮ আমার আগে এসে যারা নিজেদের প্রকৃত মেষপালক বলে দাবি করেছিল, তারা সবাই চোর ও দস্যু; তবে মেষেরা তাদের রবে সাড়া দেয়নি। ৯ আমিই দরজা; যে-কেউ আমার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, সে রক্ষা পাবে আর সে প্রবেশ করবে এবং বাইরে যাবে এবং চারণভূমি পাবে। ১০ চোর কেবল চুরি, হত্যা ও ধ্বংস করার জন্য আসে। কিন্তু আমি এসেছি, যেন তারা জীবন পায় এবং তা পূর্ণরূপে লাভ করে। ১১ আমিই উত্তম মেষপালক; উত্তম মেষপালক মেষদের জন্য নিজের জীবন দান করে। ১২ একজন বেতনভোগী, যে মেষপালক নয় এবং মেষগুলো যার নিজের নয়, যখন কোনো নেকড়ে আসতে দেখে, তখন সে মেষদের রেখে পালিয়ে যায়—আর নেকড়ে তাদের ধরে নিয়ে যায় এবং মেষের পালকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে— ১৩ কারণ সে বেতনভোগী এবং মেষদের জন্য চিন্তা করে না। ১৪ আমিই উত্তম মেষপালক। আমি আমার মেষদের জানি এবং আমার মেষেরাও আমাকে জানে, ১৫ যেমনটা পিতা আমাকে জানেন এবং আমি পিতাকে জানি; আর মেষদের জন্য আমি আমার নিজের জীবন দান করি।
১৬ “আর আমার আরও মেষ আছে, যেগুলো এই খোঁয়াড়ের নয়; সেগুলোকেও আমার পরিচালনা দিতে হবে এবং তারা আমার রবে মনোযোগ দেবে আর তখন একটা পাল এবং এক জন মেষপালক থাকবে। ১৭ পিতা আমাকে এইজন্য ভালোবাসেন যে, আমি নিজের জীবন দান করি, যাতে আমি পুনরায় তা পেতে পারি। ১৮ কেউ আমার কাছ থেকে তা কেড়ে নেয় না, কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছায় তা দান করি। তা দান করার অধিকার আমার রয়েছে আর তা পুনরায় পাওয়ার অধিকারও আমার রয়েছে। এই আদেশ আমি আমার পিতার কাছ থেকে পেয়েছি।”
১৯ এইসমস্ত কথার জন্য যিহুদিদের মধ্যে আবার মতভেদ দেখা দিল। ২০ তাদের মধ্যে অনেকে বলল: “ওকে মন্দ স্বর্গদূতে পেয়েছে, ও পাগল হয়ে গিয়েছে। কেন ওর কথা শুনছ?” ২১ আবার অন্যেরা বলল: “মন্দ স্বর্গদূতে পাওয়া কোনো ব্যক্তি তো এইরকম কথা বলতে পারে না। মন্দ স্বর্গদূত কি অন্ধ ব্যক্তিদের চোখ খুলে দিতে পারে?”
২২ সেইসময় জেরুসালেমে মন্দিরের উৎসর্গীকরণ উৎসব চলছিল। তখন শীত কাল ২৩ আর যিশু মন্দিরে দু-দিকে স্তম্ভবিশিষ্ট শলোমনের বারান্দাতে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। ২৪ তখন যিহুদিরা তাঁকে ঘিরে ধরল এবং তাঁকে বলতে লাগল: “তুমি আর কত দিন আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে? তুমি যদি খ্রিস্ট হয়ে থাক, তা হলে আমাদের তা স্পষ্ট করে বলো।” ২৫ যিশু তাদের বললেন: “আমি তোমাদের বলেছি, কিন্তু তোমরা বিশ্বাস করনি। আমি আমার পিতার নামে যে-কাজগুলো করছি, সেগুলোই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়। ২৬ কিন্তু তোমরা বিশ্বাস কর না, কারণ তোমরা আমার মেষ নও। ২৭ আমার মেষ আমার রবে মনোযোগ দেয় এবং আমি তাদের জানি আর তারা আমাকে অনুসরণ করে। ২৮ আমি তাদের অনন্তজীবন দিই এবং তারা কখনোই ধ্বংস হবে না আর কেউ আমার হাত থেকে তাদের কেড়ে নেবে না। ২৯ আমার পিতা আমাকে যা দিয়েছেন, তা অন্য সমস্ত কিছুর চেয়ে মূল্যবান আর কেউই তা আমার পিতার হাত থেকে কেড়ে নিতে পারে না। ৩০ আমি ও পিতা, আমরা একতাবদ্ধ।”*
৩১ তখন যিহুদিরা আবার তাঁকে মারার জন্য পাথর তুলে নিল। ৩২ যিশু তাদের বললেন: “পিতার আদেশ অনুযায়ী আমি তোমাদের কত উত্তম উত্তম কাজ করে দেখিয়েছি। সেগুলোর মধ্যে কোনটার জন্য তোমরা আমাকে পাথর মারতে চাইছ?” ৩৩ যিহুদিরা তাঁকে উত্তর দিল: “তোমার কোনো উত্তম কাজের জন্য নয়, বরং তুমি ঈশ্বরনিন্দা করেছ বলে আমরা তোমাকে পাথর মারতে চাইছি; কারণ তুমি মানুষ হয়েও নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করছ।” ৩৪ যিশু তাদের বললেন: “তোমাদের ব্যবস্থায় কি এটা লেখা নেই, ‘ঈশ্বর বলেছেন: “তোমরা ঈশ্বর”’?* ৩৫ আমরা জানি, শাস্ত্র ব্যর্থ হতে পারে না। ঈশ্বরের বাক্যে যাদের নিন্দা করা হয়েছে, তাদের যদি তিনি ‘ঈশ্বর’ বলে থাকেন, ৩৬ তা হলে পিতা যাঁকে পবিত্রীকৃত করেছেন এবং এই জগতে পাঠিয়েছেন, সেই আমি যখন বললাম, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র,’ তখন কীভাবে তোমরা এই কথা বলতে পার যে, ‘তুমি ঈশ্বরনিন্দা করছ’? ৩৭ আমি যদি আমার পিতার কাজগুলো না করি, তা হলে আমাকে বিশ্বাস কোরো না। ৩৮ কিন্তু, আমি যদি সেগুলো করি, তা হলে আমাকে বিশ্বাস না করলেও, অন্তত সেই কাজগুলোকে বিশ্বাস করো, যেন তোমরা জানতে পার এবং আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পার যে, পিতা আমার সঙ্গে একতাবদ্ধ আর আমিও পিতার সঙ্গে একতাবদ্ধ।” ৩৯ তখন তারা আবারও তাঁকে ধরার চেষ্টা করল, কিন্তু তিনি তাদের নাগালের বাইরে চলে গেলেন।
৪০ পরে তিনি আবার জর্ডনের অন্য পারে সেই জায়গায় গেলেন, যেখানে যোহন প্রথমে বাপ্তিস্ম দিতেন এবং তিনি সেখানে থাকলেন। ৪১ আর অনেক লোক তাঁর কাছে এল এবং তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল: “যোহন কোনো অলৌকিক কাজ করেননি ঠিকই, কিন্তু এই ব্যক্তির বিষয়ে তিনি যা যা বলেছিলেন, সেগুলো সবই সত্য ছিল।” ৪২ আর সেখানে অনেকে তাঁর উপর বিশ্বাস করল।