দ্বিতীয় বিবরণ
১১ “তুমি তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে ভালোবাসবে এবং সবসময় তাঁর প্রতি তোমার কর্তব্য পালন করবে আর তাঁর নিয়ম, বিচার সংক্রান্ত রায় এবং আজ্ঞাগুলো সবসময় পালন করবে। ২ তোমরা জান যে, আজ আমি তোমাদের সন্তানদের সঙ্গে নয় কিন্তু তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি কারণ তারা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া শাসন, তাঁর মহত্ত্ব এবং তিনি তাঁর শক্তিশালী হস্ত বিস্তার করে যে-সমস্ত কাজ করেছেন, সেগুলো দেখেনি কিংবা সেগুলো সম্বন্ধে জানেও না। ৩ তোমাদের ঈশ্বর মিশরে যে-সমস্ত চিহ্ন দেখিয়েছিলেন এবং অলৌকিক কাজ করেছিলেন, সেগুলো তোমাদের সন্তানেরা দেখেনি। এ ছাড়া, তারা এও দেখেনি যে, তিনি রাজা ফরৌণ এবং তার পুরো দেশের প্রতি কী করেছিলেন ৪ এবং তারা যখন তোমাদের পিছু ধাওয়া করছিল, তখন তিনি মিশরের সৈন্যদের প্রতি এবং ফরৌণের ঘোড়া ও যুদ্ধরথগুলোর প্রতি কী করেছিলেন আর কীভাবে যিহোবা তাদের লোহিত সাগরে ডুবিয়ে চিরকালের জন্য বিনষ্ট করেছিলেন।* ৫ তোমাদের সন্তানেরা এও দেখেনি যে, তোমরা যখন প্রান্তরে ছিলে, সেই সময় থেকে শুরু করে এখানে পৌঁছানো পর্যন্ত ঈশ্বর তোমাদের জন্য* কী কী করেছেন ৬ আর তিনি রূবেণ বংশের ইলীয়াবের ছেলে দাথন ও অবীরামের প্রতি কী করেছিলেন আর কীভাবে সমস্ত ইজরায়েলীয়দের চোখের সামনে ভূমি দু-ভাগ হয়ে গিয়ে তাদের দু-জনকে এবং তাদের পরিবার, তাঁবু ও সেইসঙ্গে তাদের সমস্ত কিছু গিলে ফেলেছিল। ৭ যিহোবার এই সমস্ত মহৎ কাজ তোমরা নিজের চোখে দেখেছ।
৮ “আজ আমি তোমাকে যে-সমস্ত আজ্ঞা দিচ্ছি, তোমরা সেই সমস্ত আজ্ঞা পালন করবে। এমনটা করলে তোমরা শক্তিশালী হতে পারবে আর জর্ডন পার হয়ে সেই দেশে যেতে এবং সেটা দখল করতে পারবে। ৯ আর তোমরা সেই দেশে দীর্ঘসময় বেঁচে থাকতে পারবে, যেখানে দুধ ও মধু বয়ে যায়, যেটার বিষয়ে যিহোবা তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দিব্য করে বলেছিলেন যে, তিনি তাদের এবং তাদের বংশকে সেই দেশ দেবেন।
১০ “তুমি যে-দেশ দখল করতে চলেছ, সেটা মিশরের মতো নয়, যেখান থেকে তোমরা বের হয়ে এসেছ। মিশরে তোমাকে খেতে বীজ বোনার পর খুব পরিশ্রম করে জল সেচন করতে হত, ঠিক যেমন সবজির বাগানে জল সেচন করা হয়। ১১ কিন্তু, তোমরা ওপারে যে-দেশে যেতে চলেছ, সেখানে প্রচুর পর্বত ও উপত্যকা রয়েছে আর সেখানকার ভূমি আকাশ থেকে পড়া বৃষ্টির জল পায়। ১২ তোমার ঈশ্বর যিহোবা নিজে সেই ভূমির যত্ন নেন। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবসময় তোমার ঈশ্বর যিহোবার দৃষ্টি সেটার উপর থাকে।
১৩ “আজ আমি তোমাদের যে-সমস্ত আজ্ঞা দিচ্ছি, তোমরা যদি সেগুলো খুব ভালোভাবে পালন কর এবং তোমাদের ঈশ্বর যিহোবাকে ভালোবাস আর সমস্ত হৃদয় এবং সমস্ত প্রাণ দিয়ে তাঁর সেবা কর, ১৪ তা হলে ঈশ্বর তোমাদের দেশের ভূমির জন্য ঠিক সময়ে বৃষ্টি দেবেন। শরৎকাল ও বসন্তকালের বৃষ্টি ঠিক সময়েই হবে আর এর ফলে তুমি সবসময় ফসল, নতুন দ্রাক্ষারস* ও তেল পাবে। ১৫ তিনি তোমার পশুপালের জন্য মাঠে প্রচুর ঘাস দেবেন। তোমাদেরও খাবারের অভাব হবে না আর তোমরা পরিতৃপ্ত থাকবে। ১৬ কিন্তু, তোমরা সাবধান থেকো যেন তোমাদের হৃদয় ভ্রান্ত হয়ে না পড়ে, যার ফলে তোমরা অন্য দেবতাদের উপাসনা করতে এবং তাদের সামনে মাথা নত করতে শুরু করবে। ১৭ তোমরা যদি এমনটা কর, তা হলে যিহোবার ক্রোধের আগুন তোমাদের বিরুদ্ধে জ্বলে উঠবে আর তিনি আকাশের দরজাগুলো বন্ধ করে দেবেন, যাতে বৃষ্টি না হয়। তোমাদের জমিতে ফসল ফলবে না আর তোমরা দ্রুত সেই উত্তম দেশ থেকে বিনষ্ট হয়ে যাবে, যেটা যিহোবা তোমাদের দিতে চলেছেন।
১৮ “আজ আমি তোমাদের যে-সমস্ত আজ্ঞা দিচ্ছি, সেগুলো তোমরা তোমাদের হৃদয়ে রাখবে এবং তোমাদের জীবনে সেগুলো কাজে লাগাবে আর সেগুলো স্মরণে রাখার জন্য হাতে বেঁধে রাখবে এবং মাথার পট্টির মতো কপালে* বেঁধে রাখবে। ১৯ আর তোমরা এইসমস্ত বিষয় তোমাদের সন্তানদের শেখাবে আর ঘরে বসার সময়, রাস্তায় চলার সময়, শোয়ার সময় এবং ওঠার সময় এইসমস্ত বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করবে। ২০ তুমি এগুলোকে তোমার ঘরের দরজার দুই চৌকাঠে এবং নগরের দরজাগুলোতে লিখে রাখবে, ২১ যাতে তোমরা এবং তোমাদের সন্তানেরা, তোমরা সবাই সেই দেশে দীর্ঘসময় বেঁচে থাকতে পার, যেটা দেওয়ার বিষয়ে যিহোবা তোমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দিব্য করেছিলেন আর পৃথিবীর উপর যতদিন আকাশ থাকবে, ততদিন তোমরা এবং তোমাদের সন্তানেরা, তোমরা সবাই বেঁচে থাকতে পার।
২২ “আজ আমি তোমাদের আজ্ঞা দিচ্ছি যেন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবাকে ভালোবাস, তাঁর দেখানো সমস্ত পথে চল এবং তাঁকে আঁকড়ে ধরে রাখ। তোমরা যদি এই আজ্ঞা ভালোভাবে পালন কর এবং সেই অনুযায়ী চল, ২৩ তা হলে যিহোবা তোমাদের সামনে থেকে সমস্ত জাতিকে তাড়িয়ে দেবেন আর তোমরা সেই দেশ থেকে এমন সমস্ত জাতিকে বের করে দেবে, যাদের শক্তি ও জনসংখ্যা তোমাদের চেয়ে বেশি। ২৪ তোমরা যে-স্থানেই পা রাখবে, সেটা তোমাদের হয়ে যাবে। তোমাদের সীমানা প্রান্তর থেকে শুরু করে লেবানন পর্যন্ত এবং ইউফ্রেটিস নদী থেকে শুরু করে পশ্চিম সাগর* পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ২৫ কেউই তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখাবে না। তোমরা সেই দেশে যেখানে যেখানে পা রাখবে, তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা সেখানে সেখানে লোকদের মধ্যে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে দেবেন যে, তারা তোমাদের ভয় পাবে, ঠিক যেমনটা তিনি তোমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন।
২৬ “দেখো, আজ আমি তোমাদের এটা বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছি, তোমরা আশীর্বাদ চাও, না কি অভিশাপ চাও। ২৭ তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার আজ্ঞাগুলো পালন কর, যেগুলো আজ আমি তোমাদের দিচ্ছি, তা হলে তোমরা আশীর্বাদ পাবে। ২৮ কিন্তু, তোমরা যদি তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার আজ্ঞাগুলো পালন না কর এবং আজ আমি তোমাদের যে-পথে চলার বিষয়ে আজ্ঞা দিচ্ছি, সেই পথ ত্যাগ কর আর সেই দেবতাদের অনুসরণ করতে শুরু কর, যাদের তোমরা আগে জানতে না, তা হলে তোমাদের উপর অভিশাপ নেমে আসবে।
২৯ “তোমার ঈশ্বর যিহোবা যখন তোমাকে সেই দেশে নিয়ে যাবেন, যেটা তুমি দখল করতে চলেছ, তখন তুমি গরিষীম পর্বতে লোকদের আশীর্বাদ করবে এবং এবল পর্বতে লোকদের অভিশাপ দেবে। ৩০ তোমরা যেমনটা জান, এই দুটো পর্বত জর্ডনের ওপারে পশ্চিমে,* অরাবায় বসবাসরত কনানীয়দের দেশে গিল্গলের সামনে এবং মোরির বড়ো বড়ো গাছের পাশে অবস্থিত। ৩১ এবার তোমরা জর্ডন পার হবে আর সেই দেশ দখল করে নেবে, যেটা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা তোমাদের দিতে চলেছেন। যখন তোমরা সেটা দখল করে নেবে এবং সেখানে বাস করতে শুরু করবে, ৩২ তখন খেয়াল রেখো, আজ আমি তোমাদের যে-সমস্ত নিয়মকানুন এবং বিচার সংক্রান্ত রায় দিচ্ছি, সেগুলো যেন তোমরা পালন কর।