যোহন লিখিত সুসমাচার
১ শুরুতে* বাক্য* ছিলেন এবং বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন এবং বাক্য একজন ঈশ্বর* ছিলেন। ২ ইনি শুরু থেকে ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন। ৩ সমস্ত কিছু তাঁর মাধ্যমে অস্তিত্বে এসেছিল, তাঁকে ছাড়া কোনো কিছুই অস্তিত্বে আসেনি।
৪ তাঁর মাধ্যমেই জীবন অস্তিত্বে এসেছিল এবং সেই জীবনই ছিল মানুষের জন্য আলো। ৫ আর সেই আলো অন্ধকারে জ্যোতি ছড়াচ্ছে, কিন্তু অন্ধকার সেই আলোকে পরাজিত করতে পারেনি।
৬ আর একজন ব্যক্তি এসেছিলেন, যাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানো হয়েছিল; তার নাম ছিল যোহন। ৭ এই ব্যক্তি সাক্ষি হিসেবে এসেছিলেন, যেন সেই আলোর বিষয়ে সাক্ষ্য দেন আর সমস্ত ধরনের লোক যেন তার সাক্ষ্যে বিশ্বাস করে। ৮ তিনি সেই আলো ছিলেন না, কিন্তু তিনি সেই আলোর বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এসেছিলেন।
৯ সেই প্রকৃত আলো, যা সমস্ত ধরনের লোকের জন্য আলো দেয়, এই জগতে আসতে যাচ্ছিল। ১০ তিনি* এই জগতে ছিলেন আর এই জগৎ তাঁর মাধ্যমে অস্তিত্বে এসেছিল, অথচ জগৎ তাঁকে চিনতে পারেনি। ১১ তিনি নিজ এলাকায় এসেছিলেন, অথচ তাঁর নিজ লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করেনি। ১২ কিন্তু, যারা তাঁকে গ্রহণ করেছিল, তাদের সবাইকে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হওয়ার অধিকার দিয়েছিলেন, কারণ তারা তাঁর নামে বিশ্বাস করে চলেছিল। ১৩ আর তারা মানুষের কাছ* থেকে কিংবা মানুষের* ইচ্ছা অনুসারে জন্ম নেয়নি, বরং ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে জন্ম নিয়েছিল।
১৪ সেই বাক্য মানুষ হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন এবং আমাদের মাঝে বাস করেছিলেন আর আমরা তাঁর মহিমা দেখেছিলাম, যে-মহিমা কেবল পিতার কাছ থেকে আসা একজাত পুত্রেরই থাকে; আর তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহে* ও সত্যে পূর্ণ ছিলেন। ১৫ (যোহন তাঁর বিষয়েই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, হ্যাঁ, তিনি উচ্চস্বরে বলেছিলেন: “ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর সম্বন্ধে আমি বলেছিলাম, ‘যিনি আমার পরে আসছেন, তিনি আমার চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন, কারণ তিনি আমার অনেক আগে থেকেই অস্তিত্বে আছেন।’”) ১৬ যেহেতু তিনি মহাদয়ায় পূর্ণ ছিলেন, তাই আমরা ক্রমাগত মহাদয়া লাভ করেছিলাম। ১৭ কারণ ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে ব্যবস্থা প্রদান করেছিলেন কিন্তু তিনি যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে আমাদের প্রতি তাঁর মহাদয়া দেখিয়েছিলেন এবং আমাদের সত্য প্রদান করেছিলেন। ১৮ কোনো মানুষ কখনো ঈশ্বরকে দেখেনি; কেবল একজাত পুত্র, যিনি ঈশ্বরের মতো* এবং যিনি পিতার পাশে* আছেন, তিনিই তাঁকে প্রকাশ করেছেন।
১৯ যিহুদিরা যখন জেরুসালেম থেকে যাজকদের ও লেবীয়দের যোহনের কাছে এই কথা জিজ্ঞেস করার জন্য পাঠিয়েছিল: “আপনি কে?” ২০ তখন তিনি উত্তর দিতে অস্বীকার করেননি, বরং সরাসরি উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি খ্রিস্ট নই।” ২১ তখন তারা তাকে জিজ্ঞেস করেছিল: “তাহলে, কে? আপনি কি এলিয়?” তিনি বলেছিলেন: “না, আমি এলিয় নই।” “আপনি কি সেই ভাববাদী?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “না!” ২২ এতে তারা তাকে বলেছিল: “আপনি তাহলে কে? আমাদের বলুন, যাতে যারা আমাদের পাঠিয়েছে, তাদের আমরা উত্তর দিতে পারি। আপনি নিজের বিষয়ে কী বলেন?” ২৩ তিনি বলেছিলেন: “আমি সেই ব্যক্তি, যে প্রান্তরে উচ্চস্বরে ঘোষণা করছে, ‘যিহোবার* পথ পরিষ্কার করো,’ ঠিক যেমনটা ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন।” ২৪ সেই ব্যক্তিদের ফরীশীরা* পাঠিয়েছিল। ২৫ তারা তাকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল: “আপনি যদি খ্রিস্ট কিংবা এলিয় অথবা সেই ভাববাদী না হন, তা হলে আপনি কেন বাপ্তিস্ম দিচ্ছেন?” ২৬ যোহন তাদের উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি। তোমাদের মাঝে একজন আছেন, যাঁকে তোমরা জান না। ২৭ তিনি আমার পরে আসছেন, আমি তাঁর জুতোর ফিতে খোলারও যোগ্য নই।” ২৮ এইসমস্ত ঘটনা জর্ডন নদীর ওপারে বৈথনিয়াতে ঘটেছিল, যেখানে যোহন বাপ্তিস্ম দিচ্ছিলেন।
২৯ পরের দিন যোহন যিশুকে তার কাছে আসতে দেখে বললেন: “ওই দেখো, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপ বয়ে নিয়ে যান! ৩০ ইনিই সেই ব্যক্তি, যাঁর সম্বন্ধে আমি বলেছিলাম: ‘আমার পরে এক ব্যক্তি আসছেন, যিনি আমার চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন, কারণ তিনি আমার অনেক আগে থেকেই অস্তিত্বে আছেন।’ ৩১ এমনকী আমিও তাঁকে জানতাম না, কিন্তু আমি এই কারণেই জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি, যাতে তিনি ইজরায়েলের কাছে প্রকাশিত হন।” ৩২ এ ছাড়া, যোহন এই সাক্ষ্যও দিলেন: “আমি দেখলাম, পবিত্র শক্তি আকাশ থেকে কপোতের* আকারে নেমে এল এবং সেই পবিত্র শক্তি তাঁর উপর রইল। ৩৩ এমনকী আমিও তাঁকে জানতাম না, কিন্তু যিনি আমাকে জলে বাপ্তিস্ম দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন, তিনি আমাকে বলেছেন: ‘যাঁর উপর তুমি পবিত্র শক্তিকে নেমে আসতে এবং অবস্থিতি করতে দেখবে, তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি পবিত্র শক্তিতে বাপ্তিস্ম দেন।’ ৩৪ আমি তা দেখেছি আর আমি সাক্ষ্য দিয়েছি যে, ইনিই ঈশ্বরের পুত্র।”
৩৫ পরের দিন যোহন আবার সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর তার সঙ্গে তার দু-জন শিষ্যও ছিলেন। ৩৬ আর যিশুকে যেতে দেখে তিনি বললেন: “ওই দেখো, ঈশ্বরের মেষশাবক!” ৩৭ সেই দু-জন শিষ্য যখন তাকে এই কথা বলতে শুনলেন, তখন তারা যিশুর পিছন পিছন গেলেন। ৩৮ যিশু ঘুরে তাদের তাঁর পিছন পিছন আসতে দেখে, তাদের বললেন: “তোমরা কী চাও?” তারা তাঁকে বললেন: “রব্বি (অনুবাদ করলে যার অর্থ, “গুরু”), আপনি কোথায় থাকেন?” ৩৯ তিনি তাদের বললেন: “এসো, দেখবে।” তখন তারা গিয়ে তিনি যেখানে থাকেন, সেই জায়গা দেখলেন আর সেই দিন তারা তাঁর সঙ্গে থাকলেন; তখন প্রায় দশম ঘণ্টা।* ৪০ যে-দুই জন শিষ্য যোহনের কথা শুনে যিশুর পিছন পিছন গেলেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন আন্দ্রিয়। তিনি শিমোন পিতরের ভাই। ৪১ তিনি প্রথমে তার ভাই শিমোনকে দেখতে পান আর তাকে বলেন: “আমরা মশীহের (অনুবাদ করলে যার অর্থ, “খ্রিস্ট”) দেখা পেয়েছি।” ৪২ পরে তিনি শিমোনকে যিশুর কাছে নিয়ে গেলেন। যিশু তার দিকে তাকিয়ে বললেন: “তুমি, যোহনের ছেলে শিমোন; তোমাকে কৈফা বলা হবে” (অনুবাদ করলে যার অর্থ, “পিতর”)।*
৪৩ পরের দিন যিশু গালীলে যেতে চাইলেন। তিনি ফিলিপকে দেখতে পেলেন এবং তাকে বললেন: “আমার অনুসারী হও।” ৪৪ ফিলিপ বৈৎসৈদা নগরের লোক ছিলেন। আন্দ্রিয় ও পিতরও সেই একই নগরের লোক ছিলেন। ৪৫ ফিলিপ নথনেলকে দেখতে পেলেন এবং তাকে বললেন: “আমরা সেই ব্যক্তির দেখা পেয়েছি, যাঁর সম্বন্ধে মোশির ব্যবস্থায় এবং ভাববাদীদের গ্রন্থে বলা আছে: তিনি নাসরতের যিশু, যোষেফের ছেলে।” ৪৬ কিন্তু, নথনেল তাকে বললেন: “নাসরৎ থেকে কি ভালো কিছু আসতে পারে?” ফিলিপ তাকে বললেন: “এসো, তুমি নিজেই দেখবে।” ৪৭ যিশু নথনেলকে তাঁর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে তার সম্বন্ধে বললেন: “ওই দেখো, একজন প্রকৃত ইজরায়েলীয়, যার মধ্যে কোনো ছলনা নেই।” ৪৮ নথনেল তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: “আপনি কীভাবে আমার সম্বন্ধে জানলেন?” যিশু উত্তর দিলেন: “ফিলিপ তোমাকে ডাকার আগে, তুমি যখন ডুমুর গাছের নীচে ছিলে, তখন আমি তোমাকে দেখেছি।” ৪৯ নথনেল বললেন: “রব্বি, আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, ইজরায়েলের রাজা।” ৫০ যিশু তাকে বললেন: “আমি তোমাকে ডুমুর গাছের নীচে দেখেছি, এই কথা বললাম বলেই কি তুমি বিশ্বাস করলে? তুমি এর চেয়েও মহৎ মহৎ বিষয় দেখবে।” ৫১ এরপর তিনি বললেন: “আমি তোমাদের সত্যি সত্যি বলছি, তোমরা স্বর্গ খুলে যেতে এবং ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের মনুষ্যপুত্রের* কাছে নেমে আসতে এবং উপরে উঠে যেতে দেখবে।”