বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড
১৮ যিহোশাফট প্রচুর ধনসম্পদ ও মহিমা লাভ করলেন, কিন্তু তিনি আহাবের পরিবারের একজনের সঙ্গে নিজের পরিবারের একজনের বিয়ে দিলেন। ২ তাই, কয়েক বছর পর যিহোশাফট আহাবের সঙ্গে দেখা করার জন্য শমরিয়ায় গেলেন। আহাব তার জন্য এবং তার সঙ্গে আসা লোকদের জন্য অনেক মেষ, গরু ও ষাঁড় বলি দিলেন। আর আহাব জোরালোভাবে যিহোশাফটকে বললেন, যেন যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দের উপর আক্রমণ করেন। ৩ তারপর, ইজরায়েলের রাজা আহাব যিহূদার রাজা যিহোশাফটকে বললেন: “আপনি কি আমার সঙ্গে রামোৎ-গিলিয়দে যুদ্ধ করতে যাবেন?” যিহোশাফট তাকে বললেন: “আমরা দু-জনে তো এক, আমার লোক তো আপনারই লোক। আমরা অবশ্যই যুদ্ধে আপনাকে সাহায্য করব।”
৪ কিন্তু, যিহোশাফট ইজরায়েলের রাজাকে বললেন: “আসুন, আমরা প্রথমে এই বিষয়ে যিহোবার কাছে নির্দেশনা চাই।” ৫ তাই, ইজরায়েলের রাজা ভাববাদীদের একত্রিত করলেন। তাদের সংখ্যা ছিল ৪০০। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন: “আমরা কি রামোৎ-গিলিয়দের উপর আক্রমণ করতে যাব, না কি যাব না?” তারা বলল: “আপনি গিয়ে আক্রমণ করুন। সত্য ঈশ্বর সেটাকে আপনার হাতে সমর্পণ করবেন।”
৬ তখন যিহোশাফট বললেন: “এখানে কি যিহোবার কোনো ভাববাদী নেই? আসুন, আমরা তার মাধ্যমেও নির্দেশনা চাই।” ৭ তখন ইজরায়েলের রাজা যিহোশাফটকে বললেন: “আরেকজন রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা যিহোবার কাছে নির্দেশনা চাইতে পারি, কিন্তু আমি ওকে ঘৃণা করি। ও আমার বিষয়ে কখনো ভালো ভবিষ্যদ্বাণী করে না, সবসময় খারাপ ভবিষ্যদ্বাণীই করে। ও যিম্লের ছেলে মীখায়।” কিন্তু, যিহোশাফট বললেন: “রাজার এইরকম কথা বলা উচিত নয়।”
৮ তখন ইজরায়েলের রাজা তার একজন রাজকর্মচারীকে ডেকে বললেন: “এক্ষুনি যিম্লের ছেলে মীখায়কে নিয়ে এসো।” ৯ ইজরায়েলের রাজা আহাব এবং যিহূদার রাজা যিহোশাফট শমরিয়া নগরের দরজার কাছে একটা শস্য মাড়াই করার জায়গায় রাজকীয় পোশাক পরে নিজের নিজের সিংহাসনে বসে ছিলেন। তাদের সামনে সমস্ত ভাববাদী ভবিষ্যদ্বাণী করছিল। ১০ তখন কনানার ছেলে সিদিকিয় নিজের জন্য লোহার দুটো শিং বানাল আর বলল: “যিহোবা এই কথা বলেন, ‘আপনি এগুলো দিয়ে সিরিয়ার লোকদের ততক্ষণ পর্যন্ত গুঁতোবেন,* যতক্ষণ না তারা একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।’” ১১ অন্য ভাববাদীরাও একই ভবিষ্যদ্বাণী করছিল। তারা বলছিল: “আপনি গিয়ে রামোৎ-গিলিয়দের উপর আক্রমণ করুন। আপনি নিশ্চিতভাবেই সফল হবেন। যিহোবা সেটাকে আপনার হাতে সমর্পণ করবেন।”
১২ যে-বার্তাবাহক মীখায়কে ডাকতে গেল, সে তাকে বলল: “দেখুন! সমস্ত ভাববাদী রাজাকে ভালো কথা বলছে। তাই, আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনিও তাদের মতো ভালো কিছু বলবেন।” ১৩ কিন্তু, মীখায় বললেন: “জীবন্ত ঈশ্বর যিহোবার নামে দিব্য করে বলছি, আমার ঈশ্বর আমাকে যা বলবেন, আমি তা-ই বলব।” ১৪ পরে, মীখায় রাজার কাছে এলেন আর রাজা তাকে জিজ্ঞেস করলেন: “মীখায়, তুমি কী বল? আমরা কি রামোৎ-গিলিয়দের উপর আক্রমণ করতে যাব, না কি যাব না?” তিনি সঙ্গেসঙ্গে উত্তর দিলেন: “আপনি গিয়ে রামোৎ-গিলিয়দের উপর আক্রমণ করুন, আপনি নিশ্চিতভাবেই সফল হবেন। আপনাদের হাতে তাদের সমর্পণ করা হবে।” ১৫ রাজা তাকে বললেন: “আমি কত বার তোমাকে দিয়ে শপথ করাব, যেন তুমি যিহোবার নামে আমাকে কেবল সত্যি কথা বল?” ১৬ তখন মীখায় বললেন: “আমি দেখছি, সমস্ত ইজরায়েলীয় পালকবিহীন মেষপালের মতো পর্বতের উপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যিহোবা বলছেন: ‘এদের কোনো প্রভু নেই। প্রত্যেকে যেন শান্তিতে নিজের বাড়ি ফিরে যায়।’”
১৭ তখন ইজরায়েলের রাজা যিহোশাফটকে বললেন: “দেখলেন তো, আমি বলেছিলাম না, ‘ও কখনো আমার বিষয়ে ভালো ভবিষ্যদ্বাণী করবে না, কেবল খারাপ ভবিষ্যদ্বাণীই করবে’?”
১৮ তারপর, মীখায় বললেন: “তাই, এখন যিহোবার বার্তা শুনুন: আমি দেখলাম, যিহোবা নিজের সিংহাসনে বসে আছেন আর তাঁর ডান দিকে এবং বাঁ-দিকে স্বর্গের পুরো সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৯ পরে, যিহোবা বললেন, ‘কে ইজরায়েলের রাজা আহাবকে বোকা বানাবে, যাতে সে রামোৎ-গিলিয়দে যায় আর সেখানে মারা পড়ে?’ তখন সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে একেক জন একেক কথা বললেন। ২০ পরে, একজন স্বর্গদূত যিহোবার সামনে এসে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘আমি আহাবকে বোকা বানাব।’ যিহোবা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কীভাবে এমনটা করবে?’ ২১ তিনি বললেন, ‘আমি গিয়ে তার সমস্ত ভাববাদীকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলাব।’ ঈশ্বর বললেন, ‘তুমি তাকে বোকা বানাতে পারবে। তুমি নিশ্চিতভাবেই সফল হবে। যাও, তুমি যেমনটা বলেছ, তেমনটাই করো।’ ২২ এইজন্য যিহোবা আপনার এই ভাববাদীদের দিয়ে মিথ্যা কথা বলিয়েছেন। কিন্তু, যিহোবা ঘোষণা করেছেন যে, আপনার উপর বিপর্যয় আসবে।”
২৩ তখন কনানার ছেলে সিদিকিয় মীখায়ার কাছে গেল আর তার গালে চড় মেরে বলল: “কবে থেকে যিহোবার স্বর্গদূত আমাকে ছেড়ে তোর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছেন?” ২৪ মীখায় বললেন: “যে-দিন তুমি পালিয়ে সবচেয়ে ভিতরের ঘরে গিয়ে লুকোবে, সেই দিন তুমি এই প্রশ্নের উত্তর পাবে।” ২৫ তখন ইজরায়েলের রাজা আদেশ দিলেন: “মীখায়কে এখান থেকে নিয়ে যাও। একে নগরের অধ্যক্ষ আমোন এবং রাজার ছেলে যোয়াশের হাতে তুলে দাও। ২৬ তাদের বলো, ‘রাজা আদেশ দিয়েছেন: “একে কারাগারে আটকে রাখো আর আমি নিরাপদে ফিরে না আসা পর্যন্ত একে যেন খুবই সামান্য রুটি ও জল দেওয়া হয়।”’” ২৭ কিন্তু, মীখায় বললেন: “আপনি যদি সত্যিই নিরাপদে ফিরে আসেন, তা হলে সেটার মানে হবে, যিহোবা আমার মাধ্যমে কথা বলেননি।” তারপর, তিনি বললেন: “লোকেরা, তোমরা সবাই এই বিষয়টা মনে রেখো।”
২৮ এরপর, ইজরায়েলের রাজা আহাব এবং যিহূদার রাজা যিহোশাফট রামোৎ-গিলিয়দে গেলেন। ২৯ ইজরায়েলের রাজা যিহোশাফটকে বললেন: “আমি ছদ্মবেশে যুদ্ধে যাব, কিন্তু আপনি নিজের রাজকীয় পোশাক পরে থাকবেন।” তাই, ইজরায়েলের রাজা ছদ্মবেশ ধারণ করলেন আর তারা দু-জনে যুদ্ধে গেলেন। ৩০ ওদিকে সিরিয়ার রাজা রথে চড়ে যুদ্ধ করে এমন সেনাবাহিনীর সেনাপতিদের আদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা সাধারণ সৈন্য কিংবা উচ্চপদস্থ আধিকারিক,* কারো বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করবে না, কেবল ইজরায়েলের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।” ৩১ সেই সেনাপতিরা যিহোশাফটকে দেখামাত্র ভাবলেন: “ইনিই ইজরায়েলের রাজা।” তাই, তারা সবাই যিহোশাফটকে আক্রমণ করতে শুরু করলেন আর তিনি সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে লাগলেন। যিহোবা তাকে সাহায্য করলেন আর সঙ্গেসঙ্গে শত্রুদের তার কাছ থেকে দূরে নিয়ে গেলেন। ৩২ যেই-না সেই সেনাপতিরা বুঝতে পারলেন যে, তিনি ইজরায়েলের রাজা নন, অমনি তারা তার পিছু ধাওয়া করা বন্ধ করে দিলেন।
৩৩ তখন একজন সৈন্য এমনিই একটা তির ছুড়ল আর সেটা গিয়ে ইজরায়েলের রাজার বর্মের* পাতগুলোর মাঝে ঢুকে গেল। তাই, রাজা তার রথচালককে বললেন: “রথ ঘুরিয়ে আমাকে যুদ্ধক্ষেত্র* থেকে বাইরে নিয়ে চলো। আমি প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি।” ৩৪ সারাদিন ধরে তুমুল যুদ্ধ চলল আর ইজরায়েলের রাজাকে সিরিয়ার লোকদের সামনে রথের উপর বিকেল পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রাখতে হল আর সূর্যাস্তের সময় তিনি মারা গেলেন।