লূক লিখিত সুসমাচার
১৮ পরে যিশু তাঁর শিষ্যদের সবসময় প্রার্থনা করার এবং হাল ছেড়ে না দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর জন্য একটা দৃষ্টান্ত দিলেন, ২ বললেন: “কোনো এক নগরে একজন বিচারক ছিল, যে ঈশ্বরকে ভয় করত না আর মানুষকেও গ্রাহ্য করত না। ৩ সেই নগরে একজন বিধবাও ছিল, যে বার বার তার কাছে গিয়ে বলত, ‘আমার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমার ন্যায়বিচার করুন।’ ৪ সেই বিচারক কিছুদিন পর্যন্ত কিছুই করল না, কিন্তু পরে সে মনে মনে বলল, ‘যদিও আমি ঈশ্বরকে ভয় করি না কিংবা মানুষকেও গ্রাহ্য করি না, ৫ তবুও এই বিধবা আমাকে বার বার জ্বালাতন করছে বলে আমি তার প্রতি ন্যায়বিচার করব, যাতে সে বার বার এসে আমার জীবনকে অতিষ্ঠ করে না তোলে।’” ৬ এরপর প্রভু বললেন: “শুনেছ, ওই বিচারক অধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও কী বলল? ৭ তা হলে ঈশ্বর কি তাঁর সেই মনোনীত লোকদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন না, যারা দিন-রাত তাঁর কাছে রোদন করে? ঈশ্বর তা করবেন, যদিও তিনি তা করতে দেরি করছেন বলে মনে হয়, কারণ তিনি তাদের প্রতি ধৈর্যশীল। ৮ আমি তোমাদের বলছি, তিনি শীঘ্র তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করবেন। কিন্তু, মনুষ্যপুত্র* যখন আসবেন, তখন তিনি কি পৃথিবীতে এই বিশ্বাস* দেখতে পাবেন?”
৯ নিজেদের ধার্মিক বলে মনে করত এবং অন্যদের তুচ্ছ করত, এমন কয়েক জনকে তিনি এই দৃষ্টান্ত বললেন: ১০ “দু-জন ব্যক্তি প্রার্থনা করার জন্য মন্দিরে গেল। একজন হল ফরীশী আর অন্যজন হল কর আদায়কারী। ১১ ফরীশী দাঁড়িয়ে মনে মনে এই প্রার্থনা করতে লাগল, ‘হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ দিই, কারণ আমি অন্যদের মতো নই; দস্যু, অধার্মিক, ব্যভিচারী* কিংবা এই কর আদায়কারীর মতোও নই। ১২ আমি সপ্তাহে দু-বার উপবাস করি; আমার আয়ের দশমাংশ* দিই।’ ১৩ কিন্তু কর আদায়কারী, যে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, স্বর্গের দিকে চোখ তুলে তাকানোরও সাহস পেল না, বরং বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বলতে লাগল, ‘হে ঈশ্বর, আমার প্রতি, এই পাপীর প্রতি করুণা করো।’ ১৪ আমি তোমাদের বলছি, এই ব্যক্তি সেই ফরীশীর চেয়েও বেশি ধার্মিক বলে গণ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেল। কারণ যে-কেউ নিজেকে উচ্চীকৃত করে, তাকে নত করা হবে কিন্তু যে-কেউ নিজেকে নত করে, তাকে উচ্চীকৃত করা হবে।”
১৫ পরে লোকেরা তাঁর কাছে ছোটো বাচ্চাদের নিয়ে আসতে লাগল, যাতে তিনি তাদের উপর হাত রাখেন, কিন্তু তা দেখে শিষ্যেরা লোকদের ধমক দিতে লাগলেন। ১৬ কিন্তু, যিশু ছোটো বাচ্চাদের তাঁর কাছে ডাকলেন আর বললেন: “ছোটো ছেলে-মেয়েদের আমার কাছে আসতে দাও, বাধা দিয়ো না, কারণ ঈশ্বরের রাজ্য এদের মতো লোকদেরই জন্য। ১৭ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কেউ যদি একটা ছোটো বাচ্চার মতো করে ঈশ্বরের রাজ্যকে গ্রহণ না করে, তা হলে সে কোনোভাবেই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না।”
১৮ আর একজন শাসক এই বলে তাঁকে প্রশ্ন করল: “হে মঙ্গলময় গুরু, অনন্তজীবন পেতে চাইলে আমাকে কী করতে হবে?” ১৯ যিশু তাকে বললেন: “আমাকে কেন মঙ্গলময় বলছ? ঈশ্বর ছাড়া আর কেউই মঙ্গলময় নয়। ২০ তুমি তো আজ্ঞাগুলো জান: ‘ব্যভিচার* কোরো না, খুন কোরো না, চুরি কোরো না, মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ো না এবং তোমার বাবা ও মাকে সমাদর কোরো।’” ২১ তখন সে বলল: “আমি ছোটোবেলা থেকেই এইসমস্ত কিছু পালন করে আসছি।” ২২ এই কথা শুনে যিশু তাকে বললেন, “এখনও তোমার মধ্যে একটা বিষয়ের অভাব রয়েছে: তোমার যা-কিছু আছে, সেগুলো বিক্রি করো এবং সেই টাকা দরিদ্রদের দিয়ে দাও। তা হলে তুমি স্বর্গে ধন লাভ করবে; এরপর এসো, আমার অনুসারী হও।” ২৩ এই কথা শুনে সে অত্যন্ত দুঃখিত হল, কারণ সে অনেক ধনী ছিল।
২৪ যিশু তার দিকে তাকিয়ে বললেন: “ধনীদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কতই-না কঠিন! ২৫ সত্যিই, একজন ধনী ব্যক্তির পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে বরং উটের পক্ষে সুইয়ের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করা আরও সহজ।” ২৬ যারা এই কথা শুনল, তারা বলল: “তবে কার পক্ষেই-বা রক্ষা পাওয়া সম্ভব?” ২৭ তিনি বললেন: “মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব, ঈশ্বরের পক্ষে তা সম্ভব।” ২৮ কিন্তু, পিতর তাঁকে বললেন: “দেখুন! আমরা আমাদের সমস্ত কিছু ত্যাগ করে আপনার অনুসারী হয়েছি।” ২৯ তিনি তাদের বললেন: “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে-কেউ ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য কি বাড়ি, কি স্ত্রী, কি ভাই, কি বাবা-মা, কি সন্তান ত্যাগ করে, ৩০ সে এখনই, এই বর্তমান যুগে এগুলোর চেয়ে আরও বেশি পাবে আর সেইসঙ্গে আসন্ন বিধিব্যবস্থায়* অনন্তজীবন লাভ করবে।”
৩১ পরে তিনি সেই ১২ জনকে* একপাশে ডেকে নিয়ে তাদের বললেন: “দেখো! আমরা জেরুসালেমে যাচ্ছি আর মনুষ্যপুত্রের বিষয়ে ভাববাদীদের দ্বারা লিখিত সমস্ত বিষয় পরিপূর্ণ হবে। ৩২ উদাহরণ স্বরূপ, তাঁকে ন-যিহুদি লোকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তাঁকে উপহাস করা হবে, তাঁকে মারধর করা হবে এবং তাঁর মুখে থুতু দেওয়া হবে। ৩৩ আর তাঁকে চাবুক মারার পর তারা তাঁকে হত্যা করবে কিন্তু তৃতীয় দিনে তিনি উঠবেন।” ৩৪ তবে, তারা তাঁর এইসমস্ত কথা বুঝতে পারলেন না, কারণ এই কথাগুলোর অর্থ তাদের কাছে গুপ্ত রাখা হয়েছিল।
৩৫ পরে যিশু যিরীহোর কাছাকাছি এলেন আর একজন অন্ধ ব্যক্তি পথের পাশে বসে ভিক্ষা করছিল। ৩৬ যেহেতু সে অনেক লোকের যাওয়ার শব্দ শুনতে পেল, তাই কী হচ্ছে, তা সে জিজ্ঞেস করতে লাগল। ৩৭ লোকেরা তাকে বলল: “নাসরতীয় যিশু এই পথ দিয়ে যাচ্ছেন!” ৩৮ তখন সে চিৎকার করে বলতে লাগল: “হে যিশু, দায়ূদসন্তান, আমার প্রতি করুণা করুন!” ৩৯ এতে যারা যিশুর আগে আগে যাচ্ছিল, তারা তাকে ধমক দিতে লাগল, তাকে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও জোরে চিৎকার করে বলতে লাগল: “হে দায়ূদসন্তান, আমার প্রতি করুণা করুন!” ৪০ তখন যিশু থামলেন এবং সেই লোকটিকে তাঁর কাছে নিয়ে আসার আদেশ দিলেন। লোকটি কাছে আসার পর যিশু তাকে জিজ্ঞেস করলেন: ৪১ “তুমি কী চাও, আমি তোমার জন্য কী করব?” সে বলল: “প্রভু, আমি যেন দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাই।” ৪২ তাই, যিশু তাকে বললেন: “তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসুক; তোমার বিশ্বাস তোমাকে সুস্থ করেছে।” ৪৩ আর সে সঙ্গেসঙ্গে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে করতে তাঁর পিছন পিছন যেতে লাগল। তা দেখে অন্য সকলেও ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল।