দ্বিতীয় বিবরণ
৯ “হে ইজরায়েল শোনো, আজ তোমরা জর্ডন পার হয়ে এমন একটা দেশ দখল করতে চলেছ, যে-দেশের জাতিগুলো তোমার চেয়ে আরও বিশাল ও শক্তিশালী এবং যেখানে বড়ো বড়ো নগর রয়েছে, যেগুলোর প্রাচীর আকাশ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে ২ এবং যেখানকার অনাকীয়েরা খুবই লম্বা-চওড়া ও শক্তিশালী, যাদের বিষয়ে তুমি জান এবং যাদের বিষয়ে এমনটা শুনেছ যে, ‘কারাই-বা অনাকীয়দের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে?’ ৩ তাই, আজ তুমি এই বিষয়টা জেনে রাখো যে, তোমার ঈশ্বর যিহোবা তোমার আগে আগে ওপারে যাবেন। তোমার ঈশ্বর গ্রাসকারী আগুনের মতো আর তিনি তাদের ধ্বংস করে দেবেন। তিনি তোমার চোখের সামনেই তাদের পরাজিত করবেন আর তুমি দ্রুত তাদের তাড়িয়ে দিয়ে* বিনষ্ট করবে, ঠিক যেমনটা যিহোবা তোমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন।
৪ “তোমার ঈশ্বর যিহোবা সেই জাতিগুলোকে তোমার সামনে থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর তোমরা যেন মনে মনে এই কথা না বল, ‘আমরা ধার্মিক লোক বলে যিহোবা আমাদের এই দেশে নিয়ে এসেছেন যেন আমরা এটা দখল করতে পারি।’ আসলে, যিহোবা সেই জাতিগুলোকে তোমার সামনে থেকে এইজন্য তাড়িয়ে দিচ্ছেন যে, তারা খুবই মন্দ। ৫ তুমি যে তাদের দেশ দখল করতে চলেছ, এর কারণ এই নয় যে, তুমি খুব ধার্মিক বা তোমার মন খুব সরল। তোমার ঈশ্বর যিহোবা তাদের তোমার সামনে থেকে এইজন্য তাড়িয়ে দিচ্ছেন যে, তারা খুবই মন্দ আর যিহোবা তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে, অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবের কাছে দিব্য করে যে-কথা দিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন। ৬ তাই জেনে রাখো, তুমি ধার্মিক বলে যে তোমার ঈশ্বর যিহোবা তোমাকে এই উত্তম দেশের অধিকারী করে তুলছেন, তা নয়। আসলে, তোমরা তো প্রচণ্ড একগুঁয়ে।
৭ “এই বিষয়টা সবসময় মনে রেখো এবং কখনো ভুলে যেয়ো না যে, তুমি প্রান্তরে তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে কীভাবে রাগিয়ে তুলেছিলে। যে-দিন তুমি মিশর ছেড়েছিলে, সেই দিন থেকে আজ এই জায়গায় পৌঁছানো পর্যন্ত তোমরা না জানি কত বার যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছ। ৮ এমনকী হোরেবেও তোমরা যিহোবাকে রাগিয়ে তুলেছিলে, যেটার কারণে যিহোবা এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি তোমাদের ধ্বংস করতে যাচ্ছিলেন। ৯ সেই সময় আমি পাথরের ফলকগুলো অর্থাৎ যিহোবা তোমাদের সঙ্গে যে-চুক্তি করেছিলেন, সেই চুক্তির ফলকগুলো নেওয়ার জন্য পর্বতের উপরে গিয়েছিলাম। ৪০ দিন এবং ৪০ রাত পর্যন্ত আমি পর্বতেই ছিলাম। ততদিন আমি খাবার কিংবা জল, কিছুই খাইনি। ১০ তারপর যিহোবা আমাকে পাথরের সেই দুটো ফলক দিলেন। সেই ফলকগুলোতে যিহোবা নিজের আঙুল দিয়ে সেই সমস্ত আজ্ঞা লিখেছিলেন, যেগুলো পর্বতে আগুনের মধ্য থেকে কথা বলার সময় তিনি তোমাদের পুরো মণ্ডলীকে দিয়েছিলেন। ১১ ৪০ দিন এবং ৪০ রাতের শেষে যিহোবা আমাকে চুক্তির সেই দুটো ফলক দিলেন। ১২ এরপর যিহোবা আমাকে বললেন, ‘ওঠো, তাড়াতাড়ি নীচে যাও কারণ তোমার লোকেরা, যাদের তুমি মিশর থেকে বের করে এনেছ, তারা মন্দ কাজ করেছে। কত তাড়াতাড়ি তারা সেই পথ ত্যাগ করেছে, যে-পথে চলার বিষয়ে আমি তাদের আজ্ঞা দিয়েছিলাম। তারা উপাসনার জন্য এক ধাতব মূর্তি* তৈরি করেছে।’ ১৩ পরে যিহোবা আমাকে বললেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, এই লোকেরা কতটা একগুঁয়ে! ১৪ তাই, এখন তুমি আমাকে বাধা দিয়ো না, আমি এদের বিনষ্ট করেই ছাড়ব আর পৃথিবী* থেকে এদের নাম মুছে দেব। আর আমি তোমার মাধ্যমে এদের চেয়ে আরও শক্তিশালী ও বড়ো এক জাতি গড়ে তুলব।’
১৫ “তখন আমি চুক্তির দুটো ফলক হাতে নিয়ে পর্বত থেকে নীচে নেমে এলাম। পর্বতটা আগুনে জ্বলছিল। ১৬ তোমাদের কাছে এসে আমি দেখলাম, তোমরা ধাতু দিয়ে একটা বাছুরের মূর্তি তৈরি করেছ।* তোমরা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার বিরুদ্ধে কত বড়ো এক পাপ করেছিলে! কত তাড়াতাড়ি তোমরা সেই পথ ত্যাগ করেছিলে, যে-পথে চলার আজ্ঞা যিহোবা তোমাদের দিয়েছিলেন। ১৭ তখন আমি তোমাদের চোখের সামনে সেই দুটো ফলক আছড়ে ফেললাম আর সেগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। ১৮ তারপর, আমি আগের মতোই যিহোবার সামনে উবুড় হয়ে মাটিতে মাথা ঠেকালাম আর ৪০ দিন এবং ৪০ রাত ধরে তা করলাম। আমি খাবার কিংবা জল, কিছুই খেলাম না কারণ তোমরা যিহোবার দৃষ্টিতে যা মন্দ, তা করে পাপ করেছিলে আর তাঁকে রাগিয়ে তুলেছিলে। ১৯ যিহোবার রাগ দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কারণ তিনি তোমাদের উপর এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি তোমাদের সবাইকে বিনষ্ট করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, যিহোবা এ-বারও আমার অনুরোধ শুনলেন।
২০ “যিহোবা হারোণের উপর এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে, তিনি তাকে প্রায় মেরে ফেলতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু, তখন আমি তার জন্যও বিনতি করলাম। ২১ পরে, আমি তোমাদের সেই পাপকে, তোমরা যে-বাছুর তৈরি করেছিলে, সেটাকে আগুনে পুড়িয়ে দিলাম। আমি সেটাকে এমনভাবে গুঁড়িয়ে দিলাম যে, সেটা মিহি ধুলোর মতো হয়ে গেল আর আমি সেই ধুলো পর্বত থেকে নেমে আসা জলের স্রোতে ফেলে দিলাম।
২২ “এরপর, তোমরা তবেরা, মঃসা ও কিব্রোৎ-হত্তাবায়ও যিহোবাকে রাগিয়ে তুলেছিলে। ২৩ পরে, যিহোবা যখন কাদেশ-বর্ণেয়তে তোমাদের এই আদেশ দিলেন, ‘যাও, আমি যে-দেশ তোমাদের অবশ্যই দেব, সেটা দখল করে নাও!’ তখন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার কথা শুনলে না এবং আবারও তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে। তোমরা তাঁর উপর বিশ্বাস করলে না আর তাঁর আজ্ঞা মানলে না। ২৪ আমি যখন থেকে তোমাদের চিনি, তখন থেকেই তোমরা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছ।
২৫ “যিহোবা যখন বললেন যে, তিনি তোমাদের সবাইকে বিনষ্ট করে দেবেন, তখন আমি ৪০ দিন এবং ৪০ রাত যিহোবার সামনে উবুড় হয়ে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে ২৬ যিহোবার কাছে এই অনুরোধ করতে থাকলাম, ‘হে নিখিলবিশ্বের প্রভু যিহোবা, তুমি তোমার লোকদের বিনষ্ট কোরো না। এরা তোমারই সম্পদ,* যাদের তুমি তোমার ক্ষমতা* এবং তোমার শক্তিশালী হস্ত ব্যবহার করে মিশর থেকে বের করে এনেছিলে। ২৭ তোমার দাস অব্রাহাম, ইস্হাক ও যাকোবকে স্মরণ করো। এই লোকদের একগুঁয়েমি, মন্দতা ও পাপের প্রতি মনোযোগ দিয়ো না। ২৮ তা করলে, তুমি যে-দেশ থেকে আমাদের বের করে এনেছিলে, সেখানকার লোকেরা বলবে: “যিহোবা যে-দেশের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি তাদের সেই দেশে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি তো তাদের ঘৃণা করতেন, তাই তিনি তাদের প্রান্তরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলেছেন।” ২৯ এরা তোমারই লোক, তোমার নিজের সম্পদ,* যাদের তুমি তোমার হস্ত বিস্তার করে এবং নিজের মহাশক্তি ব্যবহার করে বের করে এনেছ।’