বিচারকর্তৃগণের বিবরণ
৯ পরে, যিরুব্বালের ছেলে অবীমেলক শিখিমে তার মামাদের কাছে এল। সে তাদের এবং তার দাদুর পরিবারের সবাইকে বলল: ২ “শিখিমের নেতাদের* কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করো, ‘তোমাদের জন্য কোনটা ভালো হবে, তোমাদের উপর যিরুব্বালের ৭০ জন ছেলে রাজত্ব করবে, না কি কেবল এক জন রাজত্ব করবে? মনে রেখো, তোমাদের সঙ্গে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে।’”*
৩ অবীমেলক তার মামাদের যে-সমস্ত কথা বলল, তারা সেই সমস্ত কথা শিখিমের নেতাদের বলল। শিখিমের নেতারা অবীমেলককে অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিল* কারণ তারা বলল: “উনি তো আমাদের নিজের ভাই।” ৪ এরপর, তারা বাল্বরীতের মন্দির থেকে তাকে ৭০ শেকল* রুপো দিল। অবীমেলক সেটা দিয়ে কয়েক জন বেকার ও বদমাশ লোককে রাখল। ৫ তারপর, সে তাদের সঙ্গে অফ্রায় তার বাবার বাড়িতে গেল আর সে তার ভাইদের অর্থাৎ যিরুব্বালের ৭০ জন ছেলেকে একটা পাথরের উপরেই হত্যা করল। কিন্তু, যিরুব্বালের সবচেয়ে ছোটো ছেলে যোথম বেঁচে গেল কারণ সে লুকিয়ে গিয়েছিল।
৬ এরপর, শিখিমের সমস্ত নেতা এবং বৈৎ-মিল্লোর সমস্ত লোক শিখিমের বড়ো গাছের কাছে স্তম্ভের পাশে একত্রিত হল এবং অবীমেলককে রাজা করল।
৭ যোথম এই খবর পাওয়ামাত্রই গরিষীম পর্বতের চূড়ায় উঠল আর চিৎকার করে লোকদের বলতে লাগল: “হে শিখিমের নেতারা, তোমরা আমার কথা শোনো, তা হলে ঈশ্বরও তোমাদের কথা শুনবেন।
৮ “একদিন গাছেরা চিন্তা করল, তারা নিজেদের জন্য একজন রাজা বেছে নেবে। তাই, তারা জলপাই গাছকে বলল, ‘তুমি আমাদের উপর রাজত্ব করো।’ ৯ কিন্তু, জলপাই গাছ তাদের বলল, ‘আমার কাজ তো তেল উৎপন্ন করা, যেটা দিয়ে ঈশ্বর ও মানুষের গৌরব করা হয়। কেন আমি আমার কাজ ছেড়ে অন্য গাছগুলোর উপর রাজত্ব করব?’* ১০ এরপর, গাছেরা ডুমুর গাছকে বলল, ‘এসো, আমাদের উপর রাজত্ব করো।’ ১১ কিন্তু, ডুমুর গাছ তাদের বলল, ‘কেন আমি আমার ভালো ভালো এবং মিষ্টি মিষ্টি ফল ছেড়ে তোমাদের উপর রাজত্ব করব?’* ১২ এরপর, গাছেরা আঙুর গাছকে বলল, ‘এসো, আমাদের উপর রাজত্ব করো।’ ১৩ আঙুর গাছ তাদের বলল, ‘আমার ফল থেকে নতুন দ্রাক্ষারস* উৎপন্ন হয়, যেটা ঈশ্বর ও মানুষকে আনন্দিত করে। কেন আমি আমার এই কাজ ছেড়ে তোমাদের উপর রাজত্ব করব?’* ১৪ শেষে, সমস্ত গাছ কাঁটাঝোপকে বলল, ‘এসো, আমাদের উপর রাজত্ব করো।’ ১৫ তখন কাঁটাঝোপ সেই গাছগুলোকে বলল, ‘তোমরা যদি সত্যিই আমাকে তোমাদের রাজা হিসেবে অভিষেক করতে চাও, তা হলে এসো, আমার ছায়ায় আশ্রয় নাও। কিন্তু, তোমরা যদি আমাকে রাজা না কর, তা হলে আমার মধ্য থেকে এমন আগুন বের হবে, যেটা লেবাননের দেবদারু গাছগুলোকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে।’
১৬ “এখন বলো, তোমরা কি সত্যিই মন থেকে অবীমেলককে রাজা করেছ? তোমরা কি এটা ঠিক করেছ? তোমরা কি যিরুব্বাল এবং তার পরিবারের প্রতি মঙ্গলজনক কাজ করেছ আর তার সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করেছ? ১৭ আমার বাবা তোমাদের মিদিয়নীয়দের হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। ১৮ কিন্তু, প্রতিদানে তোমরা এ কী করলে? তোমরা আমার বাবার পরিবারের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে আর তার ৭০ জন ছেলেকে একটা পাথরের উপরেই হত্যা করলে। তারপর, তোমরা তার দাসীর ছেলে অবীমেলককে শিখিমের নেতাদের উপর রাজা করলে, শুধুমাত্র এইজন্য যে, সে তোমাদের ভাই। ১৯ তোমরা যিরুব্বাল এবং তার পরিবারের প্রতি যা করেছ, সেটা যদি সত্যিই মন থেকে করে থাক এবং সেটা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তা হলে তোমরা অবীমেলককে নিয়ে আনন্দে থাকবে আর সেও তোমাদের নিয়ে আনন্দে থাকবে। ২০ কিন্তু, তোমরা যদি মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করে থাক, তা হলে সে যেন শিখিম ও বৈৎ-মিল্লোর নেতাদের আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় আর শিখিম ও বৈৎ-মিল্লোর নেতারাও যেন অবীমেলককে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।”
২১ তারপর, যোথম সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বের নামক একটা জায়গায় চলে গেল আর তার ভাই অবীমেলকের ভয়ে সেখানেই থাকল।
২২ অবীমেলক তিন বছর ধরে ইজরায়েলের উপর নিজের ইচ্ছামতো রাজত্ব করল। ২৩ তারপর, ঈশ্বর তার এবং শিখিমের নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ গড়ে উঠতে দিলেন আর তারা অবীমেলকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে লাগল। ২৪ এটা এইজন্য ঘটল, যাতে যিরুব্বালের ৭০ জন ছেলের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হয় আর তাদের রক্তপাতের দোষ অবীমেলকের উপর আসে, যে তাদের হত্যা করেছিল আর শিখিমের সেই নেতাদের উপরও আসে, যারা অবীমেলককে তাদের হত্যা করতে সাহায্য করেছিল। ২৫ শিখিমের নেতারা পর্বতে কয়েক জন লোককে পাঠাল, যাতে তারা অবীমেলকের জন্য ওত পেতে বসে থাকে। সেই পথে যারা যাওয়া-আসা করত, এই লোকেরা তাদের জিনিসপত্র লুট করে নিত। অবীমেলককে এই বিষয়ে জানানো হল।
২৬ তারপর, এবদের ছেলে গাল তার ভাইদের সঙ্গে শিখিমে এল আর শিখিমের নেতারা আশা করল যে, সে তাদের সাহায্য করবে। ২৭ তারা আঙুরের খেতে গিয়ে আঙুর সংগ্রহ করল, সেগুলো পিষে রস বের করল আর আনন্দোৎসব করল। তারা তাদের দেবতার মন্দিরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করল আর অবীমেলককে অভিশাপ দিল। ২৮ এবদের ছেলে গাল বলল: “অবীমেলক ও শিখিম* কে যে, আমরা তাদের অধীনে থাকব? অবীমেলক যিরুব্বালের ছেলে তো কী হয়েছে? সবূল তার সেনাপতি তো কী হয়েছে? অবীমেলকের অধীনে থাকার চেয়ে শিখিমের বাবা হমোরের বংশধরদের সেবা করা ভালো। ২৯ এখানকার বাসিন্দারা যদি আমার হুকুম মেনে চলে, তা হলে আমি অবীমেলকের গদি উলটে দেব।” তারপর, গাল অবীমেলককে টিটকারি দিয়ে বলল: “তোমার সৈন্যসামন্ত যত ইচ্ছা বাড়াও আর আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসো।”
৩০ এবদের ছেলে গালের কথা যখন শিখিমের অধ্যক্ষ সবূলের কানে গেল, তখন সবূল প্রচণ্ড রেগে গেল। ৩১ সে গোপনে* তার বার্তাবাহকদের হাতে অবীমেলকের কাছে এই খবর পাঠাল: “দেখুন! শিখিমে এবদের ছেলে গাল এবং তার ভাইয়েরা এসেছে আর তারা নগরের লোকদের আপনার বিরুদ্ধে উসকাচ্ছে। ৩২ তাই, আপনি রাতের বেলায় আপনার লোকদের সঙ্গে আসুন আর নগরের বাইরে ওত পেতে বসে থাকুন। ৩৩ পরে, সকাল বেলায় সূর্য ওঠার সঙ্গেসঙ্গে নগরের উপর আক্রমণ করুন। গাল এবং তার লোকেরা যখন আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে, তখন যেকোনোভাবেই হোক, তাদের পরাজিত করুন।”
৩৪ তাই, রাতের বেলায় অবীমেলক এবং তার লোকেরা শিখিমে গেল আর চারটে দলে ভাগ হয়ে নগরের বাইরে ওত পেতে বসে রইল। ৩৫ পরের দিন যখন এবদের ছেলে গাল নগরের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াল, তখন ওত পেতে বসে থাকা অবীমেলক এবং তার লোকেরা উঠে নগরের দিকে এগোতে শুরু করল। ৩৬ গাল যখন সেই লোকদের দেখল, তখন সে সবূলকে বলল: “দেখে মনে হচ্ছে, লোকেরা পর্বত থেকে নেমে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।” কিন্তু, সবূল তাকে বলল: “না না, তুমি পর্বতের ছায়াকে মানুষ বলে ভাবছ।”
৩৭ কিছুক্ষণ পর গাল বলল: “দেখো! লোকেরা তো সত্যিই পার্বত্য এলাকার মাঝখান থেকে নীচে নেমে আসছে আর একদল লোক তো মোননীমের বড়ো গাছের রাস্তা ধরে আসছে।” ৩৮ সবূল বলল: “তুমি কী বলেছিলে, ‘অবীমেলক কে যে, আমরা তার অধীনে থাকব?’ খুব তো বড়ো বড়ো কথা বলেছিলে। এখন কী হল? এরা কি সেই লোকেরাই নয়, যাদের তুমি হেয় করেছিলে? এখন যাও, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো।”
৩৯ তাই, গাল শিখিমের নেতাদের আগে আগে গেল আর অবীমেলকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করল। ৪০ অবীমেলক এমনভাবে গালের পিছু ধাওয়া করল যে, সে তার সামনে থেকে পালিয়ে গেল। আর নগরের দরজা পর্যন্ত অনেক লোককে মেরে ফেলা হল।
৪১ পরে, অবীমেলক অরূমায়েই রইল। সবূল শিখিম থেকে গাল এবং তার ভাইদের তাড়িয়ে দিল। ৪২ পরের দিন অবীমেলককে জানানো হল যে, লোকেরা নগর থেকে বাইরে যাচ্ছে। ৪৩ তখন সে তার লোকদের তিনটে দলে ভাগ করল আর নগরের বাইরে ওত পেতে বসে রইল। সে যখন দেখল, লোকেরা নগর থেকে বের হয়ে আসছে, তখন সে তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের মেরে ফেলল। ৪৪ তখন অবীমেলক এবং তার সঙ্গে থাকা লোকেরা এগিয়ে গিয়ে নগরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল আর দুটো দল সেই লোকদের আক্রমণ করল, যারা নগরের বাইরে ছিল আর তারা তাদের মেরে ফেলল। ৪৫ অবীমেলক সারাদিন ধরে সেই নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সেটা দখল করে নিল আর সেখানকার বাসিন্দাদের মেরে ফেলল। সে পুরো নগরটা মাটিতে মিশিয়ে দিল আর সেটার উপর লবণ ছড়িয়ে দিল।
৪৬ যখন শিখিমের দুর্গের সমস্ত নেতা এই বিষয়ে জানতে পারল, তখন তারা সঙ্গেসঙ্গে এল্-বরীতের মন্দিরের ভিতরের ঘরে* গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। ৪৭ যেই-না অবীমেলক জানতে পারল, শিখিমের দুর্গের সমস্ত নেতা মন্দিরের ভিতরে একত্রিত হয়েছে, ৪৮ অমনি সে তার সমস্ত লোককে নিয়ে সল্মোন পর্বতে গেল। সে কুড়ুল দিয়ে গাছের একটা ডাল কাটল আর সেটা কাঁধে তুলে নিয়ে যেতে লাগল। সে তার লোকদের বলল: “তোমরা আমাকে যেমনটা করতে দেখলে, তাড়াতাড়ি তোমরাও তেমনটাই করো!” ৪৯ তখন সমস্ত লোক একটা করে ডাল কাটল আর অবীমেলকের পিছন পিছন গেল। তারা সেই ডালগুলো মন্দিরের সেই ঘরের চারিদিকে রাখল আর সেগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিল। শিখিমের দুর্গের সমস্ত লোক, প্রায় ১,০০০ জন পুরুষ ও মহিলা আগুনে পুড়ে মারা গেল।
৫০ পরে, অবীমেলক তেবেস নগরে গেল আর সেটার উপর আক্রমণ করার জন্য শিবির স্থাপন করল আর সেটা দখল করে নিল। ৫১ নগরের ঠিক মাঝখানে একটা দৃঢ় দুর্গ ছিল। তাই, নগরের সমস্ত পুরুষ ও মহিলা এবং সমস্ত নেতা সেখানে পালিয়ে গেল। তারা দুর্গের ভিতরে ঢুকে ভিতর থেকে সেটার দরজা বন্ধ করে দিল আর উপরে ছাদের দিকে গেল। ৫২ অবীমেলক সেখানে পৌঁছে দুর্গ আক্রমণ করল। সে যখন দুর্গে আগুন লাগানোর জন্য সেটার দরজার কাছে এল, ৫৩ তখন দুর্গ থেকে একজন মহিলা জাঁতার উপরের পাথর অবীমেলকের মাথার উপর ফেলল আর অবীমেলকের মাথার খুলি ফেটে গেল। ৫৪ অবীমেলক সঙ্গেসঙ্গে তার অস্ত্র বহনকারী দাসকে বলল: “তোমার তলোয়ার বের করে আমাকে মেরে ফেলো, যাতে লোকেরা এমনটা না বলে, ‘একজন মহিলা তাকে মেরে ফেলেছে।’” তখন সেই দাস তাকে তলোয়ার দিয়ে বিদ্ধ করল আর সে মারা গেল।
৫৫ ইজরায়েলীয়েরা যখন দেখল, অবীমেলক মারা গিয়েছে, তখন তারা সবাই নিজের নিজের ঘরে ফিরে গেল। ৫৬ অবীমেলক তার ৭০ জন ভাইকে মেরে তার বাবার বিরুদ্ধে যে-মন্দ কাজ করেছিল, এভাবে ঈশ্বর সেটার প্রতিফল তাকে দিলেন। ৫৭ ঈশ্বর শিখিমের পুরুষদেরও তাদের মন্দ কাজের প্রতিফল দিলেন। এভাবে, যিরুব্বালের ছেলে যোথমের দেওয়া অভিশাপ ফলে গেল।