বংশাবলির দ্বিতীয় খণ্ড
৩৫ যোশিয় জেরুসালেমে যিহোবার জন্য নিস্তারপর্ব পালন করার ব্যবস্থা করলেন আর তারা প্রথম মাসের ১৪তম দিনে নিস্তারপর্বের বলির পশু মারল। ২ তিনি যাজকদের তাদের কাজে নিযুক্ত করলেন আর তাদের উৎসাহিত করলেন, যেন তারা যিহোবার গৃহে তাদের সেবাকাজ করে। ৩ তারপর তিনি লেবীয়দের, যারা পুরো ইজরায়েলে শিক্ষাদানের কাজ করত এবং যিহোবার উদ্দেশে পবিত্র ছিল, তাদের বললেন: “পবিত্র সিন্দুকটাকে সেই গৃহে রাখো, যেটা ইজরায়েলের রাজা দায়ূদের ছেলে শলোমন নির্মাণ করেছিলেন। এখন থেকে তোমাদের আর সিন্দুকটা কাঁধে করে বহন করতে হবে না। এখন তোমরা তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা এবং তাঁর প্রজা ইজরায়েলের সেবা করো। ৪ তোমরা তোমাদের বাবার বংশ অনুযায়ী এবং তোমাদের দল অনুযায়ী সেবার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করো, ঠিক যেমনটা ইজরায়েলের রাজা দায়ূদ এবং তার ছেলে শলোমন লিখেছিলেন। ৫ তোমরা সবাই পবিত্র জায়গায় নিজের নিজের দল অনুযায়ী এমনভাবে দাঁড়াবে, যাতে প্রতিটা পরিবারের সেবা করার জন্য তাদের সঙ্গে লেবীয় পরিবারের একটা করে দল থাকে। ৬ তোমরা নিস্তারপর্বের বলির পশু মারো, নিজেদের পবিত্র করো এবং তোমাদের ভাইদের জন্য প্রস্তুতি নাও, যাতে যিহোবা মোশির মাধ্যমে যে-আজ্ঞা দিয়েছেন, তোমরা সেটা পালন করতে পার।”
৭ যোশিয় সেখানে উপস্থিত সবাইকে পুংমেষশাবক এবং বাচ্চা পাঁঠা দান করলেন, যাতে তারা নিস্তারপর্বের জন্য সেগুলো বলি দিতে পারে। তিনি মোট ৩০,০০০টা মেষ ও ছাগল এবং ৩,০০০টা ষাঁড় দিলেন। রাজা এই সমস্ত পশু নিজের সম্পত্তি থেকে দিলেন। ৮ তার অধ্যক্ষেরাও লোকদের, যাজকদের ও লেবীয়দের পশু দান করলেন, যাতে তারা স্বেচ্ছায় দেওয়া বলি হিসেবে সেগুলো উৎসর্গ করতে পারে। সত্য ঈশ্বরের গৃহের নেতারা অর্থাৎ হিল্কিয়, সখরিয় ও যিহীয়েল যাজকদের নিস্তারপর্বের বলি হিসেবে উৎসর্গ করার জন্য ২,৬০০টা পশু ও সেইসঙ্গে ৩০০টা ষাঁড় দিলেন। ৯ কনানিয় এবং তার ভাই শময়িয় ও নথনেল আর লেবীয়দের অধ্যক্ষেরা অর্থাৎ হশবিয়, যিয়ীয়েল ও যোষাবদ নিস্তারপর্বের বলি হিসেবে উৎসর্গ করার জন্য লেবীয়দের ৫,০০০টা পশু ও সেইসঙ্গে ৫০০টা ষাঁড় দিলেন।
১০ উৎসবের জন্য প্রস্তুতি শেষ হল আর রাজা যেমনটা আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী যাজকেরা নিজের নিজের জায়গায় দাঁড়াল আর লেবীয়েরা নিজের নিজের দল অনুযায়ী দাঁড়াল। ১১ লেবীয়েরা নিস্তারপর্বের বলির পশু মারল আর যাজকেরা তাদের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে বেদির উপর ছিটিয়ে দিল। সেইসময় লেবীয়েরা পশুর চামড়া ছাড়াচ্ছিল। ১২ এরপর, তারা সেই অবশিষ্ট লোকদের দেওয়ার জন্য হোমবলি প্রস্তুত করল, যাদের নিজেদের বাবার বংশ অনুযায়ী দলে ভাগ করা হয়েছিল, যাতে মোশির পুস্তকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেই বলিগুলো যিহোবার উদ্দেশে উৎসর্গ করা যেতে পারে। তারা ষাঁড়গুলো নিয়েও এমনটাই করল। ১৩ তারা রীতি অনুযায়ী নিস্তারপর্বের বলির পশু আগুনে রান্না করল।* তারা পবিত্র বলিগুলো হাঁড়ি, কড়াই ও তাওয়াতে রান্না করল আর সেগুলো তাড়াতাড়ি অবশিষ্ট সমস্ত লোকের কাছে নিয়ে এল। ১৪ তারপর, তারা নিজেদের এবং যাজকদের জন্য প্রস্তুতি নিল কারণ যাজকেরা, যারা হারোণের বংশধর ছিল, তারা অন্ধকার নেমে আসা পর্যন্ত হোমবলি ও চর্বি উৎসর্গ করছিল। লেবীয়েরা নিজেদের জন্য ও সেইসঙ্গে যাজকদের অর্থাৎ যারা হারোণের বংশধর ছিল, তাদের জন্য প্রস্তুতি নিল।
১৫ আর আসফের বংশের গায়কেরা দায়ূদ, আসফ, হেমন এবং রাজার দর্শক যিদূথূনের আজ্ঞা অনুসারে নিজের নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল আর পাহারাদারেরা আলাদা আলাদা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের নিজেদের সেবাকাজ ছেড়ে যেতে হল না কারণ তাদের লেবীয় ভাইয়েরা তাদের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। ১৬ এভাবে সেই দিন যিহোবার জন্য সমস্ত সেবাকাজের প্রস্তুতি নেওয়া হল, যাতে নিস্তারপর্ব পালন করা যেতে পারে এবং যিহোবার বেদির উপর হোমবলি উৎসর্গ করা যেতে পারে, ঠিক যেমনটা রাজা যোশিয় আদেশ দিয়েছিলেন।
১৭ সেখানে উপস্থিত ইজরায়েলীয়েরা সেই সময় নিস্তারপর্ব পালন করল আর তারপর, সাত দিন ধরে খামিরবিহীন* রুটির উৎসব পালন করল। ১৮ ইজরায়েলে যেভাবে নিস্তারপর্ব পালন করা হল, ভাববাদী শমূয়েলের দিন থেকে সেই সময় পর্যন্ত কখনো সেভাবে পালন করা হয়নি। যোশিয়, যাজকেরা, লেবীয়েরা, সেখানে উপস্থিত পুরো যিহূদা ও ইজরায়েলের সমস্ত লোক এবং জেরুসালেমের বাসিন্দারা যেভাবে নিস্তারপর্ব পালন করল, সেভাবে ইজরায়েলের কোনো রাজা পালন করেননি। ১৯ এই নিস্তারপর্ব যোশিয়ের রাজত্বের ১৮তম বছরে পালন করা হল।
২০ এই সমস্ত কিছু হওয়ার এবং যোশিয় মন্দির* প্রস্তুত করার পর মিশরের রাজা নখো যুদ্ধ করার জন্য ইউফ্রেটিস* নদীর কাছে অবস্থিত কর্কমীশে গেলেন আর যোশিয় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলেন। ২১ তখন নখো তার বার্তাবাহকদের মাধ্যমে যোশিয়ের কাছে এই বার্তা পাঠালেন: “হে যিহূদার রাজা, তুমি কেন আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসছ? আমি তোমার বিরুদ্ধে নয় বরং অন্য এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। ঈশ্বর আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছেন। ভালো হবে, যদি তুমি আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না কর কারণ ঈশ্বর আমার সঙ্গে রয়েছেন। তাঁর বিরোধিতা কোরো না। যদি কর, তা হলে তিনি তোমাকে বিনষ্ট করে দেবেন।” ২২ কিন্তু, যোশিয় তার কাছ থেকে ফিরে গেলেন না। তিনি নখোর সেই কথা শুনলেন না, যেটা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছিল। এর পরিবর্তে, তিনি নখোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ছদ্মবেশে মগিদ্দো সমভূমিতে গেলেন।
২৩ তারপর, তিরন্দাজেরা রাজা যোশিয়কে তির ছুড়ে মারল আর রাজা তার দাসদের বললেন: “আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো, আমি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছি।” ২৪ তার দাসেরা তাকে রথ থেকে বের করে তার দ্বিতীয় রথে চাপিয়ে জেরুসালেমে নিয়ে এল। এভাবে যোশিয় মারা গেলেন আর তাকে তার পূর্বপুরুষদের কবরে কবর দেওয়া হল। পুরো যিহূদা ও জেরুসালেম তার জন্য শোক করল। ২৫ যিরমিয় যোশিয়ের জন্য শোকের গান গাইলেন আর সমস্ত গায়ক-গায়িকা আজও তাদের শোকের গানে যোশিয়ের উল্লেখ করে। তারপর, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে, এই শোকের গানগুলো ইজরায়েলে গাওয়া হবে। এই গানগুলোকে শোকের গানের বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২৬ যোশিয়ের জীবনের বাকি কাহিনি এবং তিনি যিহোবার ব্যবস্থা অনুযায়ী অটল প্রেম দেখিয়ে যে-সমস্ত কাজ করেছিলেন ২৭ আর সেইসঙ্গে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি যে-সমস্ত কাজ করেছিলেন, সেই সমস্ত কিছুর বিবরণ ইজরায়েল ও যিহূদার রাজাদের বইয়ে লেখা আছে।