শমূয়েলের দ্বিতীয় পুস্তক
২২ যে-দিন যিহোবা দায়ূদকে তার সমস্ত শত্রু এবং শৌলের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন, সেই দিন দায়ূদ যিহোবার জন্য এই গান গাইলেন। ২ দায়ূদ বললেন:
“যিহোবা আমার শৈল, আমার দৃঢ় দুর্গ। তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা।
৩ আমার ঈশ্বর আমার শৈল, যাঁর কাছে আমি আশ্রয় নিই।
তিনি আমার ঢাল, আমার শক্তিশালী রক্ষাকর্তা,* আমার উঁচু দুর্গ।
তিনি আমার জন্য এমন এক জায়গা, যেখানে আমি পালিয়ে যেতে পারি, তিনি আমার রক্ষাকর্তা।
তুমিই আমাকে দৌরাত্ম্য থেকে রক্ষা কর।
৪ আমি যখনই যিহোবাকে ডাকব, যিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য,
তখনই আমাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করা হবে।
৫ মৃত্যুর ঢেউ আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলল,
অপদার্থ লোকেরা হঠাৎ করে আসা বন্যার মতো আমাকে আতঙ্কিত করে তুলল।
৬ কবরের* দড়িগুলো আমাকে বেঁধে ফেলল,
আমার সামনে মৃত্যুর ফাঁদ পাতা হল।
৭ বিপদের সময় আমি যিহোবাকে ডাকলাম,
আমার ঈশ্বরকে আমি ডাকতে থাকলাম।
তখন তিনি তাঁর মন্দির থেকে আমার আওয়াজ শুনলেন,
সাহায্যের জন্য করা আমার আর্তনাদ তাঁর কর্ণে পৌঁছোল।
৮ পৃথিবী কাঁপতে লাগল, প্রচণ্ড দুলতে লাগল,
আকাশের ভিত্তি নড়ে উঠল,
সেটা ভয়ংকরভাবে কেঁপে উঠল কারণ তিনি খুব রেগে গেলেন।
৯ তাঁর নাসিকা থেকে ধোঁয়া উঠল,
তাঁর মুখ থেকে গ্রাসকারী আগুন বের হল,
তাঁর কাছ থেকে জ্বলন্ত কয়লা বের হতে লাগল।
১০ তিনি নেমে আসার সময়ে আকাশ নুইয়ে দিলেন,
তাঁর পায়ের নীচে ঘন অন্ধকার ছিল।
১১ তিনি একটা করূবের উপর চড়ে উড়তে উড়তে নেমে এলেন।
তাঁকে একজন স্বর্গদূতের* ডানার উপর দেখা গেল।
১২ তারপর, তিনি ঘন কালো মেঘকে,
সেটার অন্ধকারকে নিজের তাঁবু করলেন।
১৩ তাঁর সামনের তেজ থেকে জ্বলন্ত কয়লা বের হয়ে আসছিল।
১৪ তারপর, যিহোবা স্বর্গ থেকে মেঘ গর্জন করালেন,
সর্বমহান ঈশ্বর তাঁর জোরালো আওয়াজ শোনালেন।
১৫ তিনি তির ছুড়ে তাদের ছিন্নভিন্ন করে দিলেন,
বিদ্যুৎ চমকিয়ে তাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করলেন।
১৬ যখন যিহোবা ধমক দিলেন এবং তাঁর নাসিকা থেকে জোরে নিঃশ্বাস বের হল,
তখন সমুদ্রতল দেখা গেল,
এমনকী পৃথিবীর ভিত্তিও দেখা গেল।
১৭ তিনি উপর থেকে হস্ত বিস্তার করে আমাকে ধরলেন,
গভীর জল থেকে আমাকে টেনে তুললেন।
১৮ তিনি আমাকে শক্তিশালী শত্রুর হাত থেকে উদ্ধার করলেন,
সেই লোকদের হাত থেকে, যারা আমাকে ঘৃণা করত, যারা আমার চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল।
১৯ তারা আমার বিপদের দিনে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল,
কিন্তু যিহোবা আমাকে ধরে রাখলেন।
২০ তিনি আমাকে বের করে এক সুরক্ষিত* জায়গায় নিয়ে এলেন,
তিনি আমাকে শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করলেন কারণ তিনি আমার উপর সন্তুষ্ট ছিলেন।
২১ যিহোবা আমার ধার্মিক কাজ অনুযায়ী আমাকে পুরস্কার দেন,
আমি নির্দোষ বলে* আমাকে পুরস্কার দেন।
২২ কারণ আমি চিরকাল যিহোবার পথে চলেছি,
আমি আমার ঈশ্বরকে ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে মন্দ কাজ করিনি।
২৩ তাঁর সমস্ত বিচার সংক্রান্ত রায় আমার সামনে রয়েছে,
আমি কখনো তাঁর নিয়ম থেকে দূরে সরে যাব না।
২৪ আমি তাঁর চোখে নির্দোষ হয়ে থাকব,
আমি সবসময় নিজেকে মন্দতা থেকে দূরে রাখব।
২৫ যিহোবা যেন আমাকে আমার ধার্মিক কাজ অনুযায়ী পুরস্কার দেন,
আমি তাঁর সামনে নির্দোষ হয়ে রয়েছি বলে আমাকে পুরস্কার দেন।
২৬ অনুগত ব্যক্তির প্রতি তুমি আনুগত্য দেখাও,
নির্দোষ ব্যক্তির সঙ্গে তুমি ন্যায্য আচরণ কর।
২৭ আন্তরিক ব্যক্তির সঙ্গে তুমি আন্তরিকতার সঙ্গে আচরণ কর,
কিন্তু কুটিল ব্যক্তির সঙ্গে তুমি বিচক্ষণতার সঙ্গে* আচরণ কর।
২৮ তুমি নম্র লোকদের রক্ষা কর,
কিন্তু উদ্ধত লোকদের থেকে চোখ সরিয়ে নাও এবং তাদের নীচে নামাও।
২৯ হে যিহোবা, তুমি আমার প্রদীপ,
যিহোবাই আমার চারপাশের অন্ধকারকে আলোতে পরিণত করেন।
৩০ তোমার সাহায্যে আমি লুটকারী দলের সঙ্গে লড়াই করতে পারি,
ঈশ্বরের শক্তিতে আমি লাফিয়ে প্রাচীর পার হতে পারি।
৩১ সত্য ঈশ্বরের কাজ নিখুঁত,
যিহোবার কথা পুরোপুরিভাবে শুচি।
যারা তাঁর কাছে আশ্রয় নেয়, তিনি তাদের ঢাল।
৩২ যিহোবা ছাড়া আর কোন ঈশ্বর রয়েছে?
আমাদের ঈশ্বর ছাড়া আর কোন শৈল রয়েছে?
৩৩ সত্য ঈশ্বর আমার দৃঢ় দুর্গ,
তিনি আমার পথের বাধা দূর করবেন।
৩৪ তিনি আমার পা হরিণের পায়ের মতো করেন,
আমাকে উঁচু উঁচু জায়গায় দাঁড় করান।
৩৫ তিনি আমার হাত যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত করেন,
আমার হাত তামার ধনুক বাঁকাতে পারে।
৩৬ তুমি আমাকে তোমার পরিত্রাণের ঢাল দাও,
তোমার নম্রতা আমাকে মহান করে তোলে।
৩৭ তুমি আমার চলার পথ চওড়া কর,
আমার পা পিছলে যাবে না।
৩৮ আমি আমার শত্রুদের পিছু ধাওয়া করব এবং তাদের বিনষ্ট করব,
আমি তাদের নিশ্চিহ্ন না করে ফিরে আসব না।
৩৯ আমি তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেব, তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দেব, যাতে তারা উঠতে না পারে,
তারা আমার পায়ে পড়বে।
৪০ তুমি আমাকে যুদ্ধের জন্য শক্তি দেবে,
আমার শত্রুদের আমার সামনে ফেলে দেবে।
৪১ তুমি আমার শত্রুদের আমার সামনে থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করবে,
যারা আমাকে ঘৃণা করে, তাদের আমি শেষ করে* দেব।
৪২ তারা সাহায্যের জন্য ডাকে, কিন্তু তাদের রক্ষা করার মতো কেউ নেই।
তারা যিহোবাকেও ডাকে, কিন্তু তিনি তাদের উত্তর দেন না।
৪৩ আমি তাদের গুঁড়ো করে মাটির ধুলো বানিয়ে দেব,
আমি তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দেব এবং তাদের মাড়িয়ে রাস্তার কাদার মতো করে দেব।
৪৪ লোকেরা যখন আমার দোষ খুঁজবে, তখন তুমি আমাকে উদ্ধার করবে।
তুমি আমাকে সুরক্ষা জোগাবে, যাতে আমি বিভিন্ন জাতির প্রধান হতে পারি।
যে-লোকদের আমি চিনি না, তারা আমার সেবা করবে।
৪৫ বিদেশিরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমার সামনে আসবে,
তারা আমার বিষয়ে যা শোনে, সেটার কারণে আমার আজ্ঞা পালন করবে।*
৪৬ বিদেশিরা সাহস হারিয়ে ফেলবে,*
তারা তাদের দুর্গগুলো থেকে কাঁপতে কাঁপতে বের হয়ে আসবে।
৪৭ যিহোবা জীবিত ঈশ্বর! আমার শৈলের প্রশংসা হোক!
ঈশ্বর, যিনি আমার পরিত্রাণের শৈল, তাঁর গৌরব হোক।
৪৮ সত্য ঈশ্বর আমার হয়ে প্রতিশোধ নেন,
তিনি বিভিন্ন জাতির লোককে আমার অধীনে নিয়ে আসেন।
৪৯ তিনি আমাকে আমার শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করেন।
তুমি আমাকে আমার আক্রমণকারীদের চেয়ে উচ্চে তুলে ধর,
তুমি আমাকে দৌরাত্ম্যকারীর হাত থেকে রক্ষা কর।