বংশাবলির প্রথম খণ্ড
১১ কিছুসময় পর, সমস্ত ইজরায়েলীয় হিব্রোণে দায়ূদের কাছে একত্রিত হল আর তাকে বলল: “দেখুন! আপনার সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে।* ২ আগে শৌল যখন রাজা ছিলেন, তখন আপনিই ইজরায়েলকে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতেন। আপনার ঈশ্বর যিহোবা আপনাকে বলেছিলেন: ‘তুমি একজন মেষপালকের মতো আমার প্রজা ইজরায়েলের যত্ন নেবে এবং আমার প্রজা ইজরায়েলের উপর নেতা হবে।’” ৩ এভাবে ইজরায়েলের সমস্ত প্রাচীন হিব্রোণে রাজার কাছে এলেন আর দায়ূদ হিব্রোণে যিহোবার সামনে তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করলেন। তারপর, তারা শমূয়েলের মাধ্যমে বলা যিহোবার কথা অনুসারে দায়ূদকে ইজরায়েলের উপর রাজা হিসেবে অভিষেক করলেন।
৪ পরে, দায়ূদ এবং সমস্ত ইজরায়েলীয় জেরুসালেমের অর্থাৎ যিবূষের উদ্দেশে রওনা হলেন, যেখানে যিবূষীয়েরা বাস করত। ৫ যিবূষের বাসিন্দারা দায়ূদকে নিয়ে ঠাট্টা করে বলল: “তুমি আমাদের এলাকায় কখনো ঢুকতে পারবে না!” কিন্তু, দায়ূদ সিয়োনের মজবুত প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নগর দখল করে নিলেন, যেটা আজ দায়ূদ-নগর নামে পরিচিত। ৬ দায়ূদ বললেন: “যে-কেউ প্রথমে যিবূষীয়দের উপর আক্রমণ করবে, সে-ই প্রধান ও অধ্যক্ষ হবে।” সরূয়ার ছেলে যোয়াব প্রথমে গেলেন আর তিনি প্রধান হলেন। ৭ সিয়োনের দুর্গ দখল করে নেওয়ার পর দায়ূদ সেখানে থাকতে লাগলেন। তাই, তারা সেই জায়গার নাম রাখল দায়ূদ-নগর। ৮ তিনি নগরটা নির্মাণ করতে লাগলেন। তিনি টিলার* উপর এবং সেটার চারিদিকে অন্যান্য জায়গায় অনেক কিছু নির্মাণ করতে লাগলেন আর যোয়াব নগরের অন্যান্য জায়গা পুনর্নির্মাণ করলেন। ৯ এভাবে দায়ূদ দিন দিন আরও মহান হতে থাকলেন আর স্বর্গীয় বাহিনীর শাসক যিহোবা তার সঙ্গে ছিলেন।
১০ এরা দায়ূদের বীরযোদ্ধাদের প্রধান, যারা সমস্ত ইজরায়েলীয়ের সঙ্গে তাকে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করেছিলেন এবং ইজরায়েলের ব্যাপারে করা যিহোবার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী তাকে রাজা করেছিলেন। ১১ এটা দায়ূদের বীরযোদ্ধাদের তালিকা: একজন হক্মোনীয়ের ছেলে যাশবিয়াম, যিনি সেই তিন জনের মধ্যে প্রধান ছিলেন। একবার তিনি তার বর্শা দিয়ে ৩০০ জনেরও বেশি শত্রুকে মেরে ফেলেছিলেন। ১২ পরের বীরযোদ্ধা ছিলেন ইলিয়াসর, যিনি অহোহীয় দোদোর ছেলে। তিনি সেই তিন জন বীরযোদ্ধার মধ্যে একজন ছিলেন। ১৩ তিনি দায়ূদের সঙ্গে পস্-দম্মীমে ছিলেন, যেখানে পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। সেখানে যবের একটা খেত ছিল। লোকেরা পলেষ্টীয়দের দেখে পালিয়ে গেল। ১৪ কিন্তু, ইলিয়াসর খেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সেটা রক্ষা করলেন আর পলেষ্টীয়দের হত্যা করতে থাকলেন। তাই, যিহোবা ইজরায়েলীয়দের এক বিরাট জয়* এনে দিলেন।
১৫ দায়ূদের সেনাবাহিনীর ৩০ জন প্রধানের মধ্য থেকে তিন জন পুরুষ শৈলে অর্থাৎ অদুল্লমের গুহায় গেলেন, যেখানে দায়ূদ ছিলেন। সেই সময় পলেষ্টীয় সেনাবাহিনী রফায়ীম উপত্যকায়* শিবির স্থাপন করে ছিল। ১৬ দায়ূদ একটা সুরক্ষিত জায়গায় ছিলেন আর পলেষ্টীয়দের একটা সৈন্যদল বেথলেহেমে ছিল। ১৭ তখন দায়ূদ বললেন: “হায়! বেথলেহেম নগরের দরজার কাছে যে-কুয়োটা রয়েছে, আমি যদি সেই কুয়োর জল খেতে পারতাম!” ১৮ এতে সেই তিন জন পলেষ্টীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে তাদের শিবিরে ঢুকলেন আর বেথলেহেম নগরের দরজার কাছে যে-কুয়োটা ছিল, সেটার জল তুলে দায়ূদের কাছে নিয়ে এলেন। কিন্তু, দায়ূদ সেই জল খেতে চাইলেন না। তিনি যিহোবার সামনে সেটা ঢেলে দিলেন। ১৯ তিনি বললেন: “আমি এই জল খাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারি না! এমনটা করা আমার ঈশ্বরের দৃষ্টিতে একেবারে অন্যায় হবে। কীভাবে আমি এই লোকদের রক্ত খেতে পারি, যারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল? তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই জল এনেছে।” এইজন্য দায়ূদ সেই জল খেতে চাইলেন না। তার তিন জন বীরযোদ্ধা এই কাজগুলো করেছিলেন।
২০ অবীশয়, যিনি যোয়াবের ভাই ছিলেন, তিনি আরও তিন জন যোদ্ধার মধ্যে প্রধান হলেন। তিনি তার বর্শা দিয়ে ৩০০ জনেরও বেশি শত্রুকে হত্যা করেছিলেন। তিনিও সেই তিন জন যোদ্ধার মতোই বিখ্যাত ছিলেন। ২১ যদিও তিনি সেই তিন জন যোদ্ধার মধ্যে দু-জনের চেয়ে আরও বেশি দক্ষ ছিলেন এবং তাদের প্রধান ছিলেন, তবুও তিনি সেই প্রথম তিন জন বীরযোদ্ধার সমান ছিলেন না।
২২ যিহোয়াদার ছেলে বনায়ও একজন সাহসী সৈন্য* ছিলেন। তিনি কব্সেলে অনেক বীরত্বের কাজ করেছিলেন। তিনি মোয়াবের বাসিন্দা অরীয়েলের দু-জন ছেলেকে হত্যা করেছিলেন আর একদিন যখন তুষারপাত হচ্ছিল, তখন তিনি একটা গর্তে নেমে একটা সিংহকে মেরে ফেলেছিলেন। ২৩ তিনি একজন মিশরীয় ব্যক্তিকেও হত্যা করেছিলেন, যে অস্বাভাবিক লম্বা-চওড়া ছিল। সে পাঁচ হাত* লম্বা ছিল। সেই মিশরীয়ের হাতে তাঁতের মোটা কাঠের মতো একটা বর্শা ছিল কিন্তু বনায়ের হাতে কেবল একটা দণ্ড ছিল। বনায় সেই মিশরীয়ের বর্শা ছিনিয়ে নিয়ে সেটা দিয়েই তাকে হত্যা করেছিলেন। ২৪ যিহোয়াদার ছেলে বনায় এই কাজগুলো করেছিলেন। তিনি সেই তিন জন বীরযোদ্ধার মতো বিখ্যাত ছিলেন। ২৫ যদিও তিনি সেই তিরিশ জন যোদ্ধার চেয়ে বেশি দক্ষ ছিলেন, তবুও তিনি সেই তিন জন বীরযোদ্ধার সমান ছিলেন না। কিন্তু, দায়ূদ বনায়কেই তার দেহরক্ষীদের উপর নিযুক্ত করেছিলেন।
২৬ সেনাবাহিনীর বীরযোদ্ধারা ছিল যোয়াবের ভাই অসাহেল, বেথলেহেমের বাসিন্দা দোদোর ছেলে ইল্হানন, ২৭ হরোরীয় শম্মোৎ, পলোনীয় হেলস, ২৮ তকোয়ীয় ইক্কেশের ছেলে ঈরা, অনাথোতীয় অবীয়েষর, ২৯ হূশাতীয় সিব্বখয়, অহোহীয় ঈলয়, ৩০ নটোফাতীয় মহরয়, নটোফাতীয় বানার ছেলে হেলদ, ৩১ বিন্যামীন বংশের গিবিয়ার বাসিন্দা রীবয়ের ছেলে ইথয়, পিরিয়াথোনীয় বনায়, ৩২ গাশের উপত্যকার* বাসিন্দা হূরয়, অর্বতীয় অবীয়েল, ৩৩ বাহরূমীয় অস্মাবৎ, শাল্বোনীয় ইলিয়হবা, ৩৪ গিষোণীয় হাষেমের ছেলেরা, হরারীয় শাগির ছেলে যোনাথন, ৩৫ হরারীয় সাখরের ছেলে অহীয়াম, ঊরের ছেলে ইলীফাল, ৩৬ মখেরাতীয় হেফর, পলোনীয় অহিয়, ৩৭ কর্মিলীয় হিষ্রয়, ইষ্বয়ের ছেলে নারয়, ৩৮ নাথনের ভাই যোয়েল, হগ্রির ছেলে মিভর, ৩৯ অম্মোনীয় সেলক, বেরোতীয় নহরয়, যে সরূয়ার ছেলে যোয়াবের অস্ত্রবহনকারী সৈন্য ছিল, ৪০ যিত্রীয় ঈরা, যিত্রীয় গারেব, ৪১ হিত্তীয় ঊরিয়, অহলয়ের ছেলে সাবদ, ৪২ রূবেণীয় শীষার ছেলে অদীনা, যিনি রূবেণীয়দের এবং তার সঙ্গে থাকা ৩০ জন লোকের একজন প্রধান ছিলেন, ৪৩ মাখার ছেলে হানন, মিত্নীয় যোশাফট, ৪৪ অষ্টরোতীয় উষিয়, অরোয়েরীয় হোথমের ছেলে শাম ও যিয়ীয়েল, ৪৫ শিম্রির ছেলে যিদীয়েল এবং তার ভাই তীষীয় যোহা, ৪৬ মহবীয় ইলীয়েল, ইল্নামের ছেলে যিরীবয় ও যোশবিয়, মোয়াবীয় যিৎমা, ৪৭ ইলীয়েল, ওবেদ ও মসোবায়ীয় যাসীয়েল।