ইব্রীয়দের প্রতি চিঠি
১২ আমাদের চারপাশে যেহেতু সাক্ষিদের এক বড়ো দল* রয়েছে, তাই এসো, আমরাও সমস্ত বোঝা এবং এমন পাপ ফেলে দিই, যা সহজেই আমাদের জন্য বাধা তৈরি করে। আর এসো, আমাদের সামনে যে-দৌড় প্রতিযোগিতা রয়েছে, সেখানে আমরা ধৈর্য ধরে দৌড়াই ২ এবং যিনি আমাদের বিশ্বাসের মুখ্য প্রতিনিধি* এবং আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস বজায় রাখতে সাহায্য করেন, সেই যিশুর প্রতি মনোযোগ স্থির রাখি। তাঁর সামনে যে-আনন্দ রাখা হয়েছিল, সেটার জন্য তিনি যাতনাদণ্ডে* মৃত্যু সহ্য করেছিলেন এবং অপমান তুচ্ছ করেছিলেন। আর তিনি ঈশ্বরের সিংহাসনের ডান দিকে বসেছেন। ৩ তাই, তাঁর কথা ভালোভাবে বিবেচনা করো, যিনি সেই লোকদের নিন্দা সহ্য করেছিলেন, যারা নিন্দা করার মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদের দোষী করেছিল, যেন তোমরা ক্লান্ত হয়ে না পড় এবং হাল ছেড়ে না দাও।
৪ পাপের বিরুদ্ধে তোমাদের এখনও এমনভাবে লড়াই করতে হয়নি যে, তোমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। ৫ আর ঈশ্বর তাঁর সন্তান হিসেবে তোমাদের যে-পরামর্শ দিয়েছেন, তা তোমরা পুরোপুরিভাবে ভুলে গিয়েছ। তিনি বলেছেন: “হে আমার সন্তান, যিহোবার* শাসন তুচ্ছ কোরো না, কিংবা তিনি তিরস্কার করলে হাল ছেড়ে দিয়ো না; ৬ কারণ যিহোবা* যাদের ভালোবাসেন, তাদেরই শাসন করেন আর যে-কাউকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন, তাকে শাস্তি দেন।”*
৭ তোমরা যে-কষ্ট সহ্য করছ, সেটাকে শাসন* হিসেবে মেনে নাও। ঈশ্বর তোমাদের সঙ্গে তাঁর সন্তান হিসেবে আচরণ করেন। কারণ এমন সন্তান কেই-বা আছে, যাকে তার পিতা শাসন করেন না? ৮ কিন্তু, তোমাদের সকলকে যদি শাসন করা না হয়ে থাকে, তা হলে তোমরা তো অবৈধ সন্তান, প্রকৃত সন্তান নও। ৯ এ ছাড়া, আমাদের মানবপিতারা আমাদের শাসন করতেন আর আমরা তাদের সম্মান করতাম। তা হলে, সেই পিতার প্রতি কি আমাদের আরও বেশি বশীভূত হওয়া উচিত নয়, যিনি তাঁর পবিত্র শক্তি দ্বারা আমাদের জীবনে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন, যাতে আমরা বেঁচে থাকি? ১০ কারণ আমাদের পিতারা তাদের দৃষ্টিতে যা ভালো বলে মনে হতো, সেই অনুযায়ী শাসন করতেন আর তা অল্প সময়ের জন্য, কিন্তু আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের উপকারের জন্য শাসন করে থাকেন, যাতে আমরা পবিত্র হই, যেমন তিনি পবিত্র। ১১ এটা ঠিক, যখন শাসন করা হয়, তখন কোনো শাসনকেই আনন্দের বিষয় বলে মনে হয় না, বরং দুঃখের* বিষয় বলেই মনে হয়; কিন্তু যারা শাসনের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়েছে, তারা পরে সঠিকভাবে জীবনযাপন করে এবং শান্তি উপভোগ করে।
১২ তাই, শিথিল হাত এবং দুর্বল হাঁটু সবল করো ১৩ আর সঠিক পথে সবসময় সোজাভাবে চলো, যাতে দুর্বল অংশের অবস্থা আরও খারাপ না হয়, বরং তা সুস্থ হয়ে ওঠে। ১৪ সকল লোকের সঙ্গে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করো এবং পবিত্র জীবনযাপন* করো, কারণ এই ধরনের জীবনযাপন ছাড়া কেউই প্রভুকে দেখতে পারবে না। ১৫ সতর্ক থেকো, যেন কেউ ঈশ্বরের মহাদয়া লাভ করতে ব্যর্থ না হয়; যেন তোমাদের মধ্যে বিষাক্ত মূল উৎপন্ন হয়ে সমস্যা তৈরি না করে এবং সেই মূলের দ্বারা অনেকে কলুষিত হয়ে না পড়ে; ১৬ আর সর্তক থেকো, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন যৌন অনৈতিক কাজ* না করে, কিংবা পবিত্র বিষয়গুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখাতে ব্যর্থ না হয়, যেমনটা এষৌ হয়েছিল। সে তো এক বারের খাবারের বিনিময়ে নিজের জ্যেষ্ঠাধিকার বিক্রি করে দিয়েছিল। ১৭ তোমরা তো জান, পরে সে যখন সেই আশীর্বাদ লাভ করতে চেয়েছিল, তখন তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল; যদিও সে কেঁদে কেঁদে সিদ্ধান্ত* পরিবর্তন করানোর জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।*
১৮ তোমরা স্পর্শ করা যায় এবং আগুনে জ্বলছে এমন কোনো পর্বত, কোনো কালো মেঘ, গাঢ় অন্ধকার অথবা ঝড়ের কাছে উপস্থিত হওনি। ১৯ কিংবা তোমরা কোনো তূরীধ্বনি এবং সেই কণ্ঠস্বর শোননি, যে-কণ্ঠস্বর শুনে লোকেরা অনুরোধ করেছিল, যেন তাদের সঙ্গে আর কথা বলা না হয়। ২০ কারণ তারা এই আজ্ঞা শুনে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল: “এমনকী কোনো পশুও যদি পর্বত স্পর্শ করে, তবে সেই পশুকেও পাথর ছুড়ে হত্যা করা হবে।” ২১ সেই দৃশ্য এতটাই ভয়ংকর ছিল যে, মোশি পর্যন্ত বলেছিলেন: “আমি ভয়ে কাঁপছি।” ২২ কিন্তু, তোমরা এইসমস্ত বিষয়ের কাছে উপস্থিত হয়েছ, যেমন, স্বর্গীয় সিয়োন পর্বত, জীবন্ত ঈশ্বরের নগর অর্থাৎ স্বর্গীয় জেরুসালেম, অযুত অযুত* স্বর্গদূতের ২৩ সমাবেশ, স্বর্গে যাদের নাম লেখা হয়েছে, সেই প্রথমজাত ব্যক্তিদের মণ্ডলী, সকলের বিচারক ঈশ্বর, পবিত্র শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করে এবং পূর্ণতা লাভ করেছে এমন ধার্মিক ব্যক্তি, ২৪ নতুন চুক্তির মধ্যস্থতাকারী যিশু এবং ছিটিয়ে দেওয়া সেই রক্ত, যে-রক্ত হেবলের রক্তের চেয়ে আরও উত্তম কথা বলে।
২৫ সাবধান! যিনি কথা বলছেন, তাঁর কথায় তোমরা মনোযোগ দিতে প্রত্যাখ্যান কোরো না। কারণ যিনি পৃথিবীতে ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া সাবধানবাণী প্রদান করেন, তার কথায় যারা মনোযোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারা যদি রেহাই পেয়ে না থাকে, তা হলে যিনি স্বর্গ থেকে কথা বলেন, তাঁর কথায় যদি আমরা মনোযোগ না দিই, তা হলে আমরা যে কিছুতেই রেহাই পাব না, সেটা কতই-না নিশ্চিত! ২৬ সেই সময় তাঁর কণ্ঠস্বরে পৃথিবী কেঁপে উঠেছিল, কিন্তু এখন তিনি এই প্রতিজ্ঞা করেছেন: “আরও একবার আমি কেবল পৃথিবীকেই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে আকাশমণ্ডলও কাঁপিয়ে তুলব।” ২৭ “আরও একবার” কথাগুলো দেখায় যে, ঈশ্বর সেই বিষয়গুলো দূর করে দেবেন, যেগুলো কেঁপে ওঠে। এগুলো সেই সমস্ত বিষয়, যেগুলো ঈশ্বর সৃষ্টি করেননি। এইরকম করা হবে, যাতে সেই বিষয়গুলো স্থির থাকে, যেগুলো কেঁপে ওঠে না। ২৮ অতএব, আমরা যেহেতু এমন রাজ্য পেতে যাচ্ছি, যা কেঁপে ওঠে না, তাই এসো, সেই মহাদয়া লাভ করে চলি, যেটার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধা সহকারে তাঁকে গ্রহণযোগ্য উপায়ে পবিত্র সেবা প্রদান করতে পারি। ২৯ কারণ আমাদের ঈশ্বর গ্রাসকারী আগুনের মতো।