রাজাবলির প্রথম খণ্ড
৮ তখন শলোমন ইজরায়েলের সমস্ত প্রাচীনকে অর্থাৎ সমস্ত বংশের প্রধানদের এবং ইজরায়েলের সমস্ত বাবার বংশের প্রধান ব্যক্তিদের জেরুসালেমে ডেকে পাঠালেন, যাতে তারা দায়ূদ-নগর অর্থাৎ সিয়োন থেকে যিহোবার চুক্তির সিন্দুক নিয়ে আসে। তখন তারা সবাই জেরুসালেমে রাজা শলোমনের কাছে এল। ২ ইজরায়েলের সমস্ত পুরুষ এথানীম* মাসে অর্থাৎ সপ্তম মাসে উৎসবের* সময় রাজা শলোমনের সামনে একত্রিত হল। ৩ ইজরায়েলের সমস্ত প্রাচীন যখন এল, তখন যাজকেরা সিন্দুকটা ওঠাল। ৪ যাজক ও লেবীয়েরা যিহোবার সিন্দুক, সাক্ষাৎ করার তাঁবু এবং সেটার মধ্যে রাখা সমস্ত পবিত্র বাসনপত্র নিয়ে এল। ৫ রাজা শলোমন এবং ইজরায়েলের সেই পুরো মণ্ডলী সিন্দুকের সামনে একত্রিত হলেন, যাদের রাজা ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এত মেষ, গরু ও ষাঁড়ের বলি উৎসর্গ করা হল যে, সেগুলো গুনে শেষ করা গেল না।
৬ তারপর, যাজকেরা যিহোবার চুক্তির সিন্দুক সেটার নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে এল। তারা গৃহের সবচেয়ে ভিতরের ঘরে অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানে সেটা নিয়ে এল আর করূবদের ডানার নীচে সেটাকে রাখল।
৭ এভাবে করূবদের ডানাগুলো সেই জায়গার উপর মেলা ছিল, যেখানে সিন্দুকটা রাখা হল আর করূবেরা সিন্দুক এবং সেটার দণ্ডগুলোর উপর ছায়া করে রইল। ৮ সিন্দুকের দণ্ডগুলো এত লম্বা ছিল যে, সেগুলোর প্রান্তগুলো পবিত্র স্থান থেকে দেখা যেত, যেটা সবচেয়ে ভিতরের ঘরের সামনে ছিল। কিন্তু, দণ্ডগুলোর প্রান্ত বাইরে থেকে দেখা যেত না। আজ পর্যন্ত সেগুলো সেখানেই রাখা আছে। ৯ সিন্দুকের মধ্যে পাথরের সেই দুটো ফলক ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যেগুলো মোশি সেটার মধ্যে রেখেছিলেন। ইজরায়েলীয়েরা মিশর থেকে বের হয়ে আসার সময় যিহোবা যখন তাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করেছিলেন, তখন হোরেবে মোশি সিন্দুকের মধ্যে এই ফলকগুলো রেখেছিলেন।
১০ যাজকেরা যখন পবিত্র স্থান থেকে বের হয়ে এল, তখন যিহোবার গৃহ মেঘে ভরে গেল। ১১ মেঘের কারণে যাজকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে সেবা করতে পারল না কারণ যিহোবার গৃহ যিহোবার মহিমায় ভরে গিয়েছিল। ১২ সেই সময় শলোমন বললেন: “যিহোবা বলেছিলেন, তিনি গাঢ় অন্ধকারে বাস করবেন। ১৩ আমি তোমার জন্য একটা চমৎকার গৃহ, একটা দৃঢ় গৃহ নির্মাণ করতে পেরেছি, যাতে তুমি এখানে চিরকাল বাস কর।”
১৪ তারপর, রাজা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ইজরায়েলের পুরো মণ্ডলীর দিকে ঘুরলেন আর তাদের আশীর্বাদ করতে লাগলেন। ১৫ তিনি বললেন: “ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা হোক। তিনি নিজের মুখে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আজ নিজের হস্তে সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন। তিনি আমার বাবা দায়ূদকে বলেছিলেন, ১৬ ‘যে-দিন আমি আমার প্রজা ইজরায়েলকে মিশর থেকে বের করে এনেছিলাম, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি ইজরায়েলের কোনো বংশের এলাকার মধ্য থেকে এমন কোনো নগর বেছে নিইনি, যেখানে আমার নামের গৌরব করার জন্য গৃহ নির্মাণ করা যায়। কিন্তু, আমি দায়ূদকে আমার প্রজা ইজরায়েলের উপর রাজত্ব করার জন্য বেছে নিয়েছি।’ ১৭ আমার বাবা দায়ূদের মনের ইচ্ছা ছিল, তিনি ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবার নামের গৌরব করার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ করবেন। ১৮ কিন্তু, যিহোবা আমার বাবা দায়ূদকে বললেন, ‘এটা ভালো যে, তোমার মনের ইচ্ছা রয়েছে, যেন তুমি আমার নামের গৌরব করার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ কর। ১৯ কিন্তু, তুমি আমার জন্য গৃহ নির্মাণ করবে না বরং তোমার নিজের ছেলে, তোমার মাধ্যমে যার জন্ম হবে, সে-ই আমার নামের গৌরব করার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ করবে।’ ২০ যিহোবা তাঁর এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছেন কারণ আমি আমার বাবা দায়ূদের পরে রাজা হয়েছি এবং ইজরায়েলের সিংহাসনে বসেছি, ঠিক যেমনটা যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন। আর আমি ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবার নামের গৌরব করার জন্য গৃহও নির্মাণ করেছি। ২১ এই গৃহে আমি সেই সিন্দুকের জন্য জায়গা প্রস্তুত করেছি, যেটার মধ্যে চুক্তির ফলকগুলো রয়েছে। যিহোবা সেই সময় আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এই চুক্তি করেছিলেন, যখন তিনি তাদের মিশর থেকে বের করে আনছিলেন।”
২২ তারপর, শলোমন ইজরায়েলের পুরো মণ্ডলীর সামনে, যিহোবার বেদির সামনে দাঁড়ালেন আর আকাশের দিকে হাত তুলে এই প্রার্থনা করলেন: ২৩ “হে ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবা, উপরে আকাশে বা নীচে পৃথিবীতে তোমার মতো আর কোনো ঈশ্বর নেই। তুমি সবসময় তোমার চুক্তি পূর্ণ করে থাক আর তোমার সেই দাসদের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়ে থাক, যারা তোমার সামনে সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে সঠিক পথে চলে। ২৪ তুমি তোমার সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছ, যেটা তুমি তোমার দাস এবং আমার বাবা দায়ূদের কাছে করেছিলে। তুমি নিজের মুখে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলে আর আজ নিজের হস্তে সেটা পূর্ণও করেছ। ২৫ এখন হে ইজরায়েলের ঈশ্বর যিহোবা, তুমি তোমার এই প্রতিজ্ঞাও পূর্ণ কোরো, যেটা তুমি তোমার দাস এবং আমার বাবা দায়ূদের কাছে করেছিলে: ‘তোমার ছেলেরা যদি তোমার মতোই আমার সামনে সঠিক পথে চলতে থাকে আর এভাবে তাদের আচরণের প্রতি মনোযোগ দেয়, তা হলে আমার সামনে ইজরায়েলের সিংহাসনে বসার জন্য তোমার বংশে কখনো লোকের অভাব হবে না।’ ২৬ হে ইজরায়েলের ঈশ্বর, দয়া করে তুমি তোমার সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ কোরো, যেটা তুমি তোমার দাস এবং আমার বাবা দায়ূদের কাছে করেছিলে।
২৭ “কিন্তু, ঈশ্বর কি সত্যিই পৃথিবীতে বাস করবেন? দেখো! আকাশ, হ্যাঁ, বিশাল আকাশও তোমাকে ধারণ করতে পারে না। তাহলে, আমার নির্মিত এই গৃহ কী? কিছুই না! ২৮ হে আমার ঈশ্বর যিহোবা, আজ তোমার এই দাস তোমার সামনে যে-প্রার্থনা করছে, সেটার প্রতি মনোযোগ দাও, অনুগ্রহ চেয়ে করা তার এই বিনতি শোনো। তুমি সাহায্য চেয়ে করা তার বিনতিতে কান দাও এবং তার প্রার্থনা শোনো। ২৯ তুমি এই গৃহের বিষয়ে বলেছিলে, ‘আমার নাম এটার সঙ্গে জুড়ে থাকবে।’ তাই, তোমার দৃষ্টি যেন দিন-রাত এই গৃহের উপর থাকে আর তোমার দাস যখন এই গৃহের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করবে, তখন তুমি সেটা শুনো। ৩০ যখন তোমার এই দাস এবং তোমার প্রজা ইজরায়েলের লোকেরা এই জায়গার দিকে মুখ করে তোমার কাছে অনুগ্রহ চেয়ে বিনতি করবে, তখন তুমি সেটা শুনো, তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে সেটা শুনো। তুমি তাদের অনুরোধ শুনো এবং তাদের পাপ ক্ষমা কোরো।
৩১ “যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্য কোনো ব্যক্তি এই অভিযোগ করে যে, সে তার প্রতি অন্যায় করেছে এবং তাকে দিয়ে শপথ করানো হয়* এবং সেই ব্যক্তি শপথের কারণে এই গৃহে তোমার বেদির সামনে আসে, ৩২ তা হলে তুমি স্বর্গ থেকে তা শুনে পদক্ষেপ নিয়ো। তুমি তোমার দাসদের বিচার কোরো আর তাদের মধ্যে যে মন্দ, তাকে দোষী* বলে ঘোষণা কোরো এবং তাকে তার কাজের জন্য শাস্তি দিয়ো আর যে ধার্মিক, তাকে নির্দোষ* বলে ঘোষণা কোরো এবং তার ধার্মিক কাজ অনুযায়ী তাকে পুরস্কার দিয়ো।
৩৩ “তোমার প্রজা ইজরায়েল যদি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে চলার কারণে যুদ্ধে শত্রুদের কাছে পরাজিত হয় আর পরে তোমার কাছে ফিরে আসে, তোমার নামের গৌরব করে আর এই গৃহে এসে তোমার কাছে প্রার্থনা করে এবং অনুগ্রহের জন্য কাকুতিমিনতি করে, ৩৪ তা হলে তুমি স্বর্গ থেকে তা শুনো এবং তোমার প্রজা ইজরায়েলের পাপ ক্ষমা কোরো। তুমি তাদের এই দেশে ফিরিয়ে এনো, যেটা তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলে।
৩৫ “তারা পাপ করে চলার কারণে যদি আকাশের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং বৃষ্টি না পড়ে এবং তুমি তাদের শাসন কর* আর সেইজন্য তারা এই জায়গার দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে, তোমার নামের গৌরব করে এবং পাপের পথ ত্যাগ করে ফিরে আসে, ৩৬ তা হলে তুমি স্বর্গ থেকে তা শুনো এবং তোমার দাসদের, তোমার প্রজা ইজরায়েলের পাপ ক্ষমা কোরো। কারণ তুমি তাদের সঠিক পথের বিষয়ে শেখাবে, যে-পথে তাদের চলা উচিত আর তোমার এই দেশের উপর বৃষ্টি আনবে, যেটা তুমি তোমার লোকদের উত্তরাধিকার হিসেবে দিয়েছিলে।
৩৭ “যদি দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হয়, প্রচণ্ড গরম বাতাস ও রোগের দ্বারা ফসল ধ্বংস হয়ে যায়, ক্ষুধার্ত পঙ্গপালের ঝাঁক আক্রমণ করে বা কোনো শত্রু এসে দেশের কোনো নগর অবরোধ করে কিংবা দেশে কোনো রোগ ছড়িয়ে পড়ে কিংবা অন্য কোনো রকমের বিপদ আসে ৩৮ আর তখন কোনো ব্যক্তি বা তোমার প্রজা ইজরায়েলের সমস্ত লোক এই গৃহের দিকে হাত বাড়িয়ে তোমার কাছে অনুগ্রহ চেয়ে বিনতি করে (কারণ প্রত্যেকেই নিজের মনের কষ্ট জানে), ৩৯ তা হলে তুমি তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তা শুনো, তাদের ক্ষমা কোরো এবং পদক্ষেপ নিয়ো। তুমি তাদের মধ্যে প্রত্যেককে তাদের কাজ অনুযায়ী পুরস্কার দিয়ো কারণ তুমি প্রত্যেকের হৃদয় জান (একমাত্র তুমিই একেবারে সঠিকভাবে জান যে, প্রত্যেক মানুষের হৃদয় কেমন), ৪০ যাতে তারা যতদিন এই দেশে থাকবে, যেটা তুমি আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলে, ততদিন তোমাকে ভয় করে।
৪১ “যদি কোনো বিদেশি, যে তোমার প্রজা ইজরায়েলের লোক নয়, তোমার নামের* বিষয়ে শুনে দূরদেশ থেকে আসে ৪২ (কারণ বিদেশিরা তোমার মহৎ নামের বিষয়ে এবং তুমি তোমার শক্তিশালী হস্ত বিস্তার করে যে-বড়ো বড়ো কাজ করেছ, সেই বিষয়ে শুনবে) এবং এই গৃহের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে, ৪৩ তা হলে তুমি তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তা শুনো এবং তার সমস্ত অনুরোধ পূর্ণ কোরো, যাতে পৃথিবীর সমস্ত দেশের লোক তোমার নামের বিষয়ে জানতে পারে এবং তোমাকে ভয় করে, ঠিক যেভাবে তোমার প্রজা ইজরায়েল তোমাকে ভয় করে আর তারা জানতে পারে যে, আমার নির্মিত এই গৃহের সঙ্গে তোমার নাম জুড়ে রয়েছে।
৪৪ “তুমি যখন তোমার লোকদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাঠাবে, তখন তারা যদি তোমার বেছে নেওয়া নগরের দিকে এবং আমি তোমার নামের গৌরব করার জন্য এই যে-গৃহ নির্মাণ করেছি, সেটার দিক মুখ করে যিহোবা তোমার কাছে প্রার্থনা করে, ৪৫ তা হলে তুমি স্বর্গ থেকে তাদের প্রার্থনা এবং অনুগ্রহ চেয়ে করা তাদের বিনতি শুনো এবং তাদের হয়ে পদক্ষেপ নিয়ো।
৪৬ “তারা যদি তোমার বিরুদ্ধে পাপ করে (কারণ এমন কোনো মানুষ নেই, যে পাপ করে না) আর তুমি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে শত্রুদের হাতে তাদের তুলে দাও এবং শত্রুরা তাদের বন্দি করে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়, তা সেটা কাছের কোনো দেশ হোক কিংবা দূরের ৪৭ আর তাদের যে-দেশে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেখানে যাওয়ার পর তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে আর যারা তাদের বন্দি করে নিয়ে গিয়েছে, তাদের দেশে থাকার সময় তোমার কাছে ফিরে আসে এবং তোমার কাছে অনুগ্রহ চেয়ে কাকুতিমিনতি করে বলে, ‘আমরা পাপ করেছি, আমরা ভুল করেছি, মন্দ কাজ করেছি’ ৪৮ এবং তারা শত্রুদের দেশে থাকার সময় সমস্ত হৃদয় এবং সমস্ত প্রাণের সঙ্গে তোমার কাছে ফিরে আসে এবং তাদের এই দেশের দিকে মুখ করে তোমার কাছে প্রার্থনা করে, যেটা তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলে এবং তোমার বেছে নেওয়া নগরের দিকে এবং আমি তোমার নামের গৌরব করার জন্য এই যে-গৃহ নির্মাণ করেছি, এটার দিকে মুখ করে প্রার্থনা করে, ৪৯ তা হলে তুমি তোমার বাসস্থান স্বর্গ থেকে তাদের প্রার্থনা এবং অনুগ্রহ চেয়ে করা তাদের বিনতি শুনো এবং তাদের হয়ে পদক্ষেপ নিয়ো। ৫০ তোমার লোকেরা তোমার বিরুদ্ধে যে-সমস্ত পাপ ও অপরাধ করেছে, সেগুলো ক্ষমা করে দিয়ো। তুমি তাদের শত্রুদের তাদের প্রতি দয়া দেখানোর জন্য অনুপ্রাণিত কোরো আর তা হলে শত্রুরা তাদের প্রতি দয়া দেখাবে ৫১ (কারণ তারা তোমার নিজের লোক এবং তোমার নিজের উত্তরাধিকার, যাদের তুমি মিশর থেকে, লোহা গলানোর অগ্নিকুণ্ড থেকে বের করে এনেছিলে)। ৫২ তোমার এই দাস এবং তোমার প্রজা ইজরায়েল যখনই তোমার কাছে অনুগ্রহ চেয়ে বিনতি করবে, তখনই তুমি তা শুনো। তারা যখনই তোমাকে ডাকবে, তখনই তুমি* তা শুনো। ৫৩ কারণ হে নিখিলবিশ্বের প্রভু যিহোবা, তুমি তাদের পৃথিবীর সমস্ত লোকের থেকে আলাদা করেছ আর তাদের তোমার উত্তরাধিকার করে তুলেছ, ঠিক যেমনটা তুমি আমাদের পূর্বপুরুষদের মিশর থেকে বের করে আনার সময় তোমার দাস মোশির মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলে।”
৫৪ শলোমন যিহোবার কাছে যে-প্রার্থনা এবং অনুগ্রহ চেয়ে বিনতি করছিলেন, তা শেষ করার পরেই তিনি যিহোবার বেদির সামনে থেকে উঠলেন, যেখানে তিনি হাঁটু গেড়ে এবং স্বর্গের দিকে হাত বাড়িয়ে প্রার্থনা করছিলেন। ৫৫ তারপর, তিনি উঠে দাঁড়ালেন আর উচ্চস্বরে ইজরায়েলের পুরো মণ্ডলীকে এই বলে আশীর্বাদ করলেন: ৫৬ “যিহোবার প্রশংসা হোক, যিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে তাঁর প্রজা ইজরায়েলকে বিশ্রামের স্থান দিয়েছেন। তিনি তাঁর দাস মোশির মাধ্যমে যে-সমস্ত ভালো বিষয় দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই সমস্ত প্রতিজ্ঞাই পূর্ণ হয়েছে। এমন কোনো প্রতিজ্ঞা নেই, যেটা পূর্ণ করা হয়নি। ৫৭ আমাদের ঈশ্বর যিহোবা যেন আমাদের সঙ্গে থাকেন, ঠিক যেভাবে তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি যেন আমাদের কখনো ছেড়ে না দেন, কখনো ত্যাগ না করেন। ৫৮ তিনি যেন আমাদের হৃদয়কে তাঁর দিকে আকর্ষণ করেন, যাতে আমরা তাঁর সমস্ত পথে চলি এবং তাঁর আজ্ঞা, আইনকানুন এবং বিচার সংক্রান্ত রায় পালন করি, যেগুলো তিনি আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলেন। ৫৯ আমি এখন পর্যন্ত যিহোবার কাছে অনুগ্রহ চেয়ে যত বিনতি করেছি, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা যেন সেগুলো দিন-রাত মনে রাখেন, যাতে তিনি প্রতিদিনের প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁর এই দাসের এবং তাঁর প্রজা ইজরায়েলের হয়ে পদক্ষেপ নেন, ৬০ যেন পৃথিবীর সমস্ত দেশের লোক জানতে পারে যে, যিহোবাই সত্য ঈশ্বর, তিনি ছাড়া আর কোনো ঈশ্বর নেই! ৬১ তাই, আজ যেমন তোমরা সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে আমাদের ঈশ্বর যিহোবাকে সেবা করছ, তেমনই তোমরা যেন সবসময় তা কর এবং তাঁর আইনকানুন ও আজ্ঞাগুলো পালন কর।”
৬২ তারপর, রাজা এবং পুরো ইজরায়েল যিহোবার সামনে প্রচুর পরিমাণে বলি উৎসর্গ করলেন। ৬৩ শলোমন যিহোবার জন্য মঙ্গলার্থক বলি হিসেবে ২২,০০০টা ষাঁড় এবং ১,২০,০০০টা মেষ উৎসর্গ করলেন। এভাবে রাজা এবং পুরো ইজরায়েল যিহোবার গৃহের উদ্বোধন করলেন। ৬৪ সেই দিন রাজা যিহোবার গৃহের সামনে থাকা প্রাঙ্গণের মাঝখানের অংশটা পবিত্র করলেন কারণ সেখানে তাকে হোমবলি, শস্য নৈবেদ্য* এবং মঙ্গলার্থক বলির চর্বি উৎসর্গ করতে হত। তিনি সেই সমস্ত বলি সেখানে উৎসর্গ করলেন কারণ যিহোবার সামনে তামার যে-বেদিটা ছিল, সেটা এত পরিমাণে হোমবলি, শস্য নৈবেদ্য এবং মঙ্গলার্থক বলির চর্বি উৎসর্গ করার জন্য যথেষ্ট বড়ো ছিল না। ৬৫ এই উপলক্ষ্যে শলোমন ইজরায়েলীয়দের এক বড়ো দলের সঙ্গে মিলে আমাদের ঈশ্বর যিহোবার সামনে উৎসব পালন করলেন। এই দলের মধ্যে লিবো-হমাৎ* থেকে শুরু করে মিশর উপত্যকা* পর্যন্ত এলাকার সমস্ত লোক উপস্থিত ছিল। শলোমন তাদের সবার সঙ্গে মিলে সাত দিন ধরে উৎসব পালন করলেন। এরপর, তিনি আরও সাত দিন উৎসব পালন করলেন। মোট ১৪ দিন ধরে উৎসব চলল। ৬৬ পরের* দিন রাজা লোকদের বিদায় জানালেন আর তারা রাজাকে আশীর্বাদ করল। যিহোবা তাঁর দাস দায়ূদ এবং তাঁর প্রজা ইজরায়েলের জন্য যে-সমস্ত ভালো কাজ করেছিলেন, সেগুলোর জন্য তাদের হৃদয় আনন্দে ভরে গেল আর তারা সবাই আনন্দ করতে করতে নিজেদের বাড়ি ফিরে গেল।