নহিমিয়
৯ সপ্তম মাসের ২৪তম দিনে ইজরায়েলীয়েরা একত্রিত হল এবং শোক করল। তারা চট পরল, নিজেদের মাথায় ধুলো দিল এবং উপবাস করল। ২ তারপর, যারা ইজরায়েলীয় বংশের ছিল, তারা বিদেশিদের কাছ থেকে নিজেদের আলাদা করল। তারা উঠে দাঁড়িয়ে তাদের নিজেদের পাপ এবং তাদের পূর্বপুরুষদের অপরাধ স্বীকার করল। ৩ তারা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল আর যিহোবার ব্যবস্থার পুস্তক তাদের পড়ে শোনানো হল। সকালে তিন ঘণ্টা ধরে তাদের সামনে সেই পুস্তক পড়ে শোনানো হল আর তার পরের তিন ঘণ্টা ধরে তারা তাদের ঈশ্বর যিহোবার সামনে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে নিজেদের পাপ স্বীকার করতে থাকল।
৪ তখন যেশূয়, বানি, কদ্মীয়েল, শবনিয়, বুন্নি, শেরেবিয়, বানি ও কনানী সেই মঞ্চের উপর দাঁড়াল, যেটা লেবীয়দের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। আর তারা উচ্চস্বরে তাদের ঈশ্বর যিহোবাকে ডাকতে লাগল। ৫ লেবীয়দের মধ্যে যেশূয়, কদ্মীয়েল, বানি, হশব্নিয়, শেরেবিয়, হোদিয়, শবনিয় ও পথাহিয় বলল: “এবার ওঠো আর যুগ যুগ ধরে তোমাদের ঈশ্বর যিহোবার প্রশংসা করো। হে ঈশ্বর, তোমার নামের যত প্রশংসা ও গৌরবই করি না কেন, সেটার চেয়েও তোমার নাম মহান। তারপরও তুমি এই লোকদের তোমার মহান নামের প্রশংসা করতে দিয়ো।
৬ “তুমিই যিহোবা, তুমি আকাশ, হ্যাঁ, সবচেয়ে উচ্চ আকাশ এবং সেটার সমস্ত বাহিনী সৃষ্টি করেছ। পৃথিবী এবং সেটার মধ্যে থাকা সমস্ত কিছু আর সমুদ্র এবং সেটার মধ্যে থাকা সমস্ত কিছু তুমি সৃষ্টি করেছ। তুমিই তাদের বাঁচিয়ে রাখ। আকাশের বাহিনী তোমার সামনে মাথা নত করে। ৭ তুমিই সত্য ঈশ্বর যিহোবা। তুমি অব্রামকে তোমার দাস হিসেবে বেছে নিয়েছিলে আর তাকে কল্দীয়দের ঊর নগর থেকে বের করে এনেছিলে আর তার নাম অব্রাহাম রেখেছিলে। ৮ তুমি দেখেছিলে, তিনি তোমার প্রতি হৃদয় থেকে বিশ্বস্ত আর তাই তুমি তার সঙ্গে এই চুক্তি করেছিলে যে, তুমি তাকে এবং তার বংশধরদের কনানীয়, হিত্তীয়, ইমোরীয়, পরিষীয়, যিবূষীয় ও গির্গাশীয়দের দেশ দেবে। তুমি তোমার এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছ কারণ তুমি সত্যময়।
৯ “তুমি মিশরে আমাদের পূর্বপুরুষদের দুঃখকষ্ট দেখেছিলে এবং লোহিত সাগরে* তাদের আর্তনাদ শুনেছিলে। ১০ তখন তুমি ফরৌণ, তার দাসদের এবং তার লোকদের সামনে চিহ্ন এবং অলৌকিক কাজ দেখিয়েছিলে কারণ তুমি জানতে, তারা তোমার লোকদের উপর অত্যাচার করছে। এভাবে তুমি সুনাম অর্জন করেছিলে আর সেই সুনাম আজও রয়েছে। ১১ তুমি সাগর দু-ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলে, যাতে তোমার লোকেরা শুকনো মাটির উপর দিয়ে হেঁটে সাগর পার হতে পারে। কিন্তু, যারা তাদের পিছু ধাওয়া করেছিল, তুমি তাদের সেখানেই ডুবিয়ে দিয়েছিলে। যেভাবে উত্তাল সমুদ্রে ফেলা একটা পাথর ডুবে যায়, সেভাবেই তারা গভীর সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছিল। ১২ দিনের বেলায় তুমি মেঘস্তম্ভের দ্বারা তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিলে আর রাতের বেলায় অগ্নিস্তম্ভের দ্বারা তাদের চলার পথ আলোকিত করেছিলে। ১৩ তুমি সীনয় পর্বতে নেমে এসেছিলে আর স্বর্গ থেকে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলে। তুমি তাদের আইন দিয়েছিলে, যেন তারা ন্যায্যভাবে বিচার করতে পারে ও সেইসঙ্গে নির্ভরযোগ্য আইনকানুন, উত্তম নিয়ম এবং আজ্ঞা দিয়েছিলে। ১৪ তুমি তাদের বলেছিলে, যেন তারা তোমার জন্য পবিত্র বিশ্রামবার পালন করে। তুমি তোমার দাস মোশির মাধ্যমে তাদের আজ্ঞা ও নিয়মকানুন দিয়েছিলে। ১৫ তারা যখন ক্ষুধার্ত ছিল, তখন তুমি স্বর্গ থেকে তাদের খাবার দিয়েছিলে। তারা যখন তৃষ্ণার্ত ছিল, তখন তুমি তাদের জন্য শিলা থেকে জল বের করেছিলে। তুমি তাদের যে-দেশ দেওয়ার শপথ করেছিলে, সেই দেশে প্রবেশ করার এবং সেই দেশকে জয় করার আজ্ঞাও তুমি তাদের দিয়েছিলে।
১৬ “কিন্তু, আমাদের পূর্বপুরুষেরা একগুঁয়ে ও অহংকারী হয়ে উঠল এবং তোমার আজ্ঞায় কান দিল না। ১৭ তারা তোমার কথা শুনতে চাইল না। তারা সেই আশ্চর্যজনক কাজগুলো ভুলে গেল, যেগুলো তুমি তাদের সামনে করেছিলে। তারা এতটাই একগুঁয়ে হয়ে উঠল যে, তারা মিশরের দাসত্বে ফিরে যাওয়ার জন্য একজন নেতাকে নিযুক্ত করল। কিন্তু, তুমি এমন একজন ঈশ্বর, যিনি ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত ও সেইসঙ্গে তুমি সমবেদনাময়, করুণাময়, তুমি দ্রুত রেগে যাও না এবং তুমি অটল প্রেমে পরিপূর্ণ। তাই, তুমি তাদের অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দাওনি। ১৮ তারা একটা ধাতব বাছুরের মূর্তি তৈরি করে বলেছিল, ‘ইনিই তোমাদের ঈশ্বর, যিনি মিশর থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন।’ তারা অনেক জঘন্য কাজ করে তোমার অপমান করেছিল। ১৯ এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও তুমি তাদের প্রতি প্রচুর করুণা দেখিয়েছিলে এবং তাদের প্রান্তরে পরিত্যাগ করনি। দিনে যে-মেঘস্তম্ভ তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত, সেটা তাদের কাছ থেকে চলে গেল না আর রাতে যে-অগ্নিস্তম্ভ তাদের চলার পথ আলোকিত করত, সেটাও তাদের কাছ থেকে চলে গেল না। ২০ তুমি তাদের তোমার পবিত্র শক্তি* দিয়েছিলে, যাতে তারা ভেবে-চিন্তে কাজ করতে পারে। তুমি তাদের মান্না দেওয়া বন্ধ করনি। আর তারা যখন তৃষ্ণার্ত ছিল, তখন তুমি তাদের জল খাইয়েছিলে। ২১ প্রান্তরে ৪০ বছর ধরে তুমি তাদের খাবার দিয়েছিলে। তাদের কোনো কিছুরই অভাব হয়নি, তাদের পোশাক পুরোনো হয়ে ছিঁড়ে যায়নি কিংবা তাদের পাও ফুলে যায়নি।
২২ “তুমি রাজাদের রাজ্য এবং তাদের লোকদের ইজরায়েলীয়দের অধীন করেছিলে আর তাদের জমিজায়গা ইজরায়েলীয়দের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলে। তাই, তারা হিষ্বোনের রাজা সীহোনের এলাকা এবং বাশনের রাজা ওগের এলাকা নিয়ে নিল। ২৩ তুমি তাদের সন্তানদের আকাশের তারার মতো অসংখ্য করে তুলেছিলে। তুমি তাদের সেই দেশে নিয়ে গিয়েছিলে, যে-দেশের বিষয়ে তুমি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলে, তারা সেই দেশে প্রবেশ করে সেই দেশ জয় করে নেবে। ২৪ তাই, তাদের সন্তানেরা গিয়ে পুরো দেশ দখল করল আর তুমি সেখানে বসবাসরত কনানীয়দের তাদের অধীন করলে। তুমি তাদের রাজাদের এবং তাদের লোকদের ইজরায়েলীয়দের হাতে সমর্পণ করেছিল, যাতে তারা তাদের প্রতি যা ইচ্ছা, তা-ই করে। ২৫ তারা তাদের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নগর জয় করে নিল আর তাদের উর্বর জমি এবং সেই ঘরবাড়ি নিয়ে নিল, যেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের উত্তম বিষয় ছিল। তারা তাদের খোঁড়া কুয়োগুলো, আঙুর ও জলপাইয়ের খেতগুলো এবং অগণিত ফলের গাছ দখল করে নিল। তারা তৃপ্তি করে খাওয়া-দাওয়া করল এবং মোটাসোটা হল। তুমি তাদের কোনো কিছুর অভাব হতে দাওনি। তুমি তাদের জন্য যে-ভালো ভালো কাজ করেছিলে, সেগুলোর কারণে তারা অনেক সুখে ছিল।
২৬ “এত কিছুর পরেও তারা তোমার কথা শুনল না। তারা তোমার বিরুদ্ধে গেল আর তোমার ব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করল।* তোমার ভাববাদীরা তাদের বোঝালেন, যেন তারা তোমার কাছে ফিরে আসে, কিন্তু তারা তোমার ভাববাদীদেরই মেরে ফেলল। তারা জঘন্য কাজ করে তোমার চরম অপমান করল। ২৭ এইজন্য তুমি তাদের শত্রুদের হাতে তুলে দিলে, যারা তাদের কষ্ট দিল। বিপদের সময় তারা যখন তোমার কাছে কাঁদল, তখন তুমি স্বর্গ থেকে তা শুনলে। তুমি তাদের প্রতি অসীম করুণা দেখালে এবং শত্রুদের হাত থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য কয়েক জন উদ্ধারকারীকে পাঠালে।
২৮ “কিন্তু, শত্রুদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ামাত্রই তারা আবারও সেই কাজগুলো করতে লাগল, যেগুলো তোমার দৃষ্টিতে মন্দ। আর তুমি তাদের আবারও শত্রুদের হাতে তুলে দিলে, যারা তাদের অনেক কষ্ট দিল। তখন তারা তোমার কাছে ফিরে এল এবং তোমার কাছে সাহায্য ভিক্ষা করতে লাগল। তুমি স্বর্গ থেকে তাদের প্রতি মনোযোগ দিলে এবং তাদের প্রতি অসীম করুণা দেখালে। এভাবেই তুমি বার বার তাদের উদ্ধার করলে। ২৯ তুমি তাদের বার বার বোঝালে, যেন তারা তোমার কাছে ফিরে আসে এবং তোমার ব্যবস্থা পালন করে। কিন্তু, তারা অহংকারী হয়ে উঠল এবং কোনোভাবেই তোমার আজ্ঞা মানতে চাইল না। তারা তোমার সেই নিয়মগুলো লঙ্ঘন করল, যেগুলো পালন করে একজন ব্যক্তি বেঁচে থাকে। তারা তোমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং একগুঁয়ে মনোভাব দেখাল। তারা তোমার কোনো কথাই শুনল না। ৩০ কিন্তু, তুমি বহু বছর ধরে ধৈর্য ধরলে এবং তোমার ভাববাদীদের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করলে, যেন তারা বার বার তাদের সতর্ক করেন। কিন্তু, তারা তাদের কথায় কান দিল না। শেষে, তুমি তাদের আশেপাশের জাতির হাতে তুলে দিলে। ৩১ কিন্তু, তোমার করুণা এতটাই মহৎ যে, তুমি তাদের ধ্বংস করলে না কিংবা তাদের পরিত্যাগও করলে না কারণ তুমি সমবেদনাময় ও করুণাময় ঈশ্বর।
৩২ “হে মহান ও শক্তিশালী ও বিস্ময়কর ঈশ্বর, তুমি তোমার চুক্তি পূরণ করে থাক এবং অটল প্রেম দেখিয়ে থাক। তোমার কাছে আমরা এই বিনতি করি, যেন তুমি আমাদের দুঃখকষ্টের প্রতি মনোযোগ দাও এবং সেগুলোকে হালকাভাবে না দেখ। অশূরের রাজাদের সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমরা, আমাদের রাজারা, অধ্যক্ষেরা, যাজকেরা, ভাববাদীরা এবং আমাদের পূর্বপুরুষেরা, সকলে অনেক দুঃখ ভোগ করেছি। ৩৩ কিন্তু, আমাদের প্রতি যা ঘটেছে, আমরা সেটারই যোগ্য ছিলাম। তুমি আমাদের প্রতি কোনো অন্যায় করনি। তুমি সবসময়ই বিশ্বস্ত থেকেছ, মন্দ কাজ তো আমরা করেছি। ৩৪ আমাদের রাজারা, অধ্যক্ষেরা, যাজকেরা এবং পূর্বপুরুষেরা তোমার ব্যবস্থা পালন করেননি। শুধু তা-ই নয়, তুমি তাদের যে-আজ্ঞাগুলো দিয়েছিলে এবং তাদের সতর্ক করার জন্য বার বার যে-নির্দেশনা দিয়েছিলে, তারা সেগুলোর প্রতিও মনোযোগ দেননি। ৩৫ তারা এমনকী তখনও তোমার সেবা করেনি, যখন দেশে তারা রাজত্ব করত এবং তুমি তাদের যে-বিশাল ও উর্বর দেশ দিয়েছিলে, সেই দেশে তারা বাস করত এবং তুমি তাদের জন্য যে-ভালো ভালো কাজ করেছ, সেগুলো উপভোগ করত। তখনও তারা মন্দ কাজ করতে থাকল। ৩৬ তাই দেখো, আজ আমরা সেই দেশেই দাস হয়ে রয়েছি, যে-দেশ তুমি আমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলে, যাতে তারা এখানকার উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য খেতে পারে এবং উত্তম উত্তম বিষয়গুলো উপভোগ করতে পারে। ৩৭ আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে যে-খাদ্যদ্রব্য উৎপন্ন হয়, আমাদের পাপের কারণে সেগুলো সেই রাজারা খাচ্ছে, যাদের অধীনে তুমি আমাদের রেখেছ। তারা আমাদের উপর এবং আমাদের পশুপালের উপর ইচ্ছামতো কর্তৃত্ব করে। আমরা অনেক দুঃখে রয়েছি।
৩৮ “এই সমস্ত কারণে আজ আমরা তোমার সঙ্গে এক লিখিত চুক্তি করছি, যেটার উপর আমাদের অধ্যক্ষেরা, লেবীয়েরা এবং যাজকেরা তাদের সিলমোহর দিয়ে সেটাকে নিশ্চিত করবে।”