মার্ক লিখিত সুসমাচার
১ ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের বিষয়ে সুসমাচারের আরম্ভ: ২ ভাববাদী যিশাইয়ের বইয়ে যেমনটা লেখা আছে: “(দেখো! আমি তোমার আগে আমার বার্তাবাহককে পাঠাচ্ছি আর সে তোমার জন্য পথ প্রস্তুত করবে।)* ৩ প্রান্তরে একজন উচ্চস্বরে ঘোষণা করছে: ‘যিহোবার* পথ প্রস্তুত করো! তাঁর পথ পরিষ্কার করো।’” ৪ সেই কথা অনুসারে যোহন বাপ্তাইজক প্রান্তরে এসে লোকদের কাছে প্রচার করতে লাগলেন, যেন তারা অনুতাপের প্রতীক হিসেবে বাপ্তিস্ম নেয়, যা তাদের পাপের ক্ষমা লাভ করতে সাহায্য করবে। ৫ আর যিহূদিয়ার সমস্ত অঞ্চলের লোক এবং জেরুসালেমের সমস্ত লোক তার কাছে যেতে শুরু করল এবং খোলাখুলিভাবে নিজেদের পাপ স্বীকার করে তার কাছে জর্ডন নদীতে বাপ্তিস্ম নিতে* লাগল। ৬ যোহন উটের লোমের কাপড় এবং চামড়ার কোমরবন্ধনী* পরতেন এবং পঙ্গপাল ও বনমধু খেতেন। ৭ আর তিনি এই কথা প্রচার করতেন: “আমার পরে একজন ব্যক্তি আসছেন, যিনি আমার চেয়ে শক্তিমান, আমি হেঁট হয়ে তাঁর জুতোর ফিতে খোলারও যোগ্য নই। ৮ আমি তোমাদের জলে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি কিন্তু তিনি তোমাদের পবিত্র শক্তিতে বাপ্তিস্ম দেবেন।”
৯ সেই সময়ে, যিশু গালীলের নাসরৎ থেকে আসলেন এবং যোহনের কাছে জর্ডন নদীতে বাপ্তিস্ম নিলেন। ১০ আর জল থেকে ওঠার সঙ্গেসঙ্গে যিশু দেখলেন, আকাশ দু-ভাগ হয়ে গিয়েছে এবং পবিত্র শক্তি কপোতের* আকারে তাঁর উপর নেমে আসছে। ১১ তখন স্বর্গ থেকে একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল: “তুমিই আমার প্রিয় পুত্র; তোমার উপর আমি খুব সন্তুষ্ট।”
১২ আর এর ঠিক পরেই পবিত্র শক্তি তাঁকে প্রান্তরে যাওয়ার জন্য পরিচালিত করল। ১৩ তাই, তিনি ৪০ দিন প্রান্তরে থাকলেন এবং সেখানে শয়তান তাঁকে প্রলোভন দেখিয়ে পরীক্ষা করার চেষ্টা করল। সেখানে অনেক বন্যপ্রাণী ছিল আর স্বর্গদূতেরা তাঁর সেবা করতেন।
১৪ যোহন কারাগারে বন্দি হওয়ার পর, যিশু গালীলে যান এবং সেখানে ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করেন ১৫ এবং বলেন: “নিরূপিত সময় উপস্থিত হয়েছে এবং ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গিয়েছে। অনুতপ্ত হও এবং সুসমাচারে বিশ্বাস করো।”
১৬ একদিন যিশু গালীল সাগরের* তীর দিয়ে হাঁটার সময়, শিমোন এবং তার ভাই আন্দ্রিয়কে সাগরে জাল ফেলতে দেখেন। তারা জেলে ছিলেন। ১৭ তাদের দেখে যিশু বললেন: “আমার সঙ্গে এসো। তোমরা যেমন মাছ ধরে থাক, তেমনই আমি তোমাদের মানুষ ধরতে শেখাব।” ১৮ আর তারা সঙ্গেসঙ্গে তাদের জাল ফেলে রেখে তাঁকে অনুসরণ করলেন। ১৯ সেখান থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর তিনি দেখতে পান, সিবদিয়ের ছেলে যাকোব এবং তার ভাই যোহন তাদের নৌকায় বসে জাল সারাচ্ছেন। ২০ তাদের দেখামাত্র তিনি তাদের ডাকলেন। আর তারা তাদের বাবা সিবদিয়কে অন্য কর্মীদের সঙ্গে নৌকায় রেখে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে গেলেন। ২১ আর যিশু এবং তাঁর শিষ্যেরা কফরনাহূমে গেলেন।
পরে বিশ্রামবারে* যিশু সমাজগৃহে* গিয়ে শিক্ষা দিতে শুরু করলেন। ২২ আর লোকেরা তাঁর শিক্ষাদানের পদ্ধতি দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তিনি অধ্যাপকদের* মতো নয়, বরং ঈশ্বরের কাছ থেকে যেভাবে শিক্ষা লাভ করেছিলেন, সেই অনুযায়ী শিক্ষা দিচ্ছিলেন। ২৩ সেই সময়ে সমাজগৃহে এমন একজন ব্যক্তি ছিল, যাকে মন্দ স্বর্গদূতে পেয়েছিল। সে চিৎকার করে এই কথা বলল: ২৪ “হে নাসরতীয় যিশু, আপনি আমাদের কাছ থেকে কী চান? আপনি কি আমাদের ধ্বংস করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে, আপনি ঈশ্বরের সেই পবিত্র ব্যক্তি!” ২৫ কিন্তু, যিশু তাকে ধমক দিয়ে বললেন: “চুপ করো, তার মধ্য থেকে বের হয়ে যাও!” ২৬ তখন মন্দ স্বর্গদূত লোকটাকে মুচড়ে ধরল এবং প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে তার মধ্য থেকে বেরিয়ে গেল। ২৭ এই ঘটনা দেখে লোকেরা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল: “এ কী? এটা তো নতুন শিক্ষা! এমনকী মন্দ স্বর্গদূতদের বের করে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে আর মন্দ স্বর্গদূতেরা তাঁর আজ্ঞা মানে।” ২৮ এতে গালীল প্রদেশের সমস্ত জায়গায় তাঁর কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল।
২৯ পরে যিশু এবং তাঁর শিষ্যেরা সমাজগৃহ থেকে বের হয়ে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়িতে গেলেন আর যাকোব ও যোহনও তাদের সঙ্গে ছিলেন। ৩০ সেই সময়, শিমোনের শাশুড়ির জ্বর হয়েছিল এবং তিনি বিছানায় শুয়ে ছিলেন। আর যিশু আসামাত্রই তারা তাঁকে তার কথা জানালেন। ৩১ তখন যিশু তার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে তাকে উঠালেন। এতে তার জ্বর ছেড়ে গেল এবং তিনি উঠে তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
৩২ পরে সন্ধ্যা বেলা, সূর্যাস্তের পর লোকেরা সমস্ত অসুস্থ ব্যক্তিকে এবং মন্দ স্বর্গদূতে পাওয়া লোকদের তাঁর কাছে আনতে শুরু করল; ৩৩ আর নগরের সমস্ত লোক সেই বাড়ির দরজার কাছে জড়ো হল। ৩৪ যিশু বিভিন্ন ধরনের অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করলেন এবং অনেক মন্দ স্বর্গদূত ছাড়ালেন কিন্তু মন্দ স্বর্গদূতদের তিনি কথা বলতে দিলেন না, কারণ তারা জানত যে, তিনি খ্রিস্ট।*
৩৫ পরের দিন খুব ভোরে, অন্ধকার থাকতেই তিনি উঠে বাইরে গেলেন এবং একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে প্রার্থনা করতে শুরু করলেন। ৩৬ কিন্তু, শিমোন এবং তার সঙ্গীরা তাঁকে সমস্ত জায়গায় খুঁজতে লাগলেন ৩৭ আর খুঁজে পাওয়ার পর তাঁকে বললেন: “সকলে আপনাকে খুঁজছে।” ৩৮ কিন্তু, তিনি তাদের বললেন: “চলো, আমরা কাছাকাছি গ্রামগুলোতে যাই, যেন আমি সেখানেও প্রচার করতে পারি, কারণ আমি এইজন্যই এসেছি।” ৩৯ আর তিনি গালীলের সমস্ত জায়গায় গিয়ে তাদের সমাজগৃহগুলোতে প্রচার করতে লাগলেন এবং মন্দ স্বর্গদূত ছাড়াতে লাগলেন।
৪০ পরে একজন কুষ্ঠ রোগী তাঁর কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বিনতি করে বলল: “আপনি চাইলেই আমাকে শুচি করতে পারেন।” ৪১ তখন তিনি তার প্রতি গভীর সমবেদনা বোধ করলেন এবং হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করে বললেন: “আমি তা-ই চাই! তুমি শুচি হও।” ৪২ আর সঙ্গেসঙ্গে তার কুষ্ঠ রোগ ভালো হয়ে গেল এবং সে শুচি হল। ৪৩ তিনি তখনই তাকে বিদায় দিলেন এবং বিদায় দেওয়ার আগে দৃঢ়ভাবে আদেশ দিয়ে বললেন: ৪৪ “দেখো, কাউকে কিছু বোলো না, বরং যাজকের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও আর শুচি হওয়ার জন্য মোশির ব্যবস্থায় যে-উৎসর্গের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া আছে, সেই অনুযায়ী উৎসর্গ করো, যেন তা তাদের কাছে সাক্ষ্যস্বরূপ হয়।” ৪৫ কিন্তু, সেখান থেকে যাওয়ার পরেই সে এই বিষয়ে কথা বলতে লাগল এবং সমস্ত জায়গায় এই খবর ছড়িয়ে দিতে লাগল। এর ফলে যিশু প্রকাশ্যে কোনো নগরে যেতে পারলেন না, বরং তিনি নগরের বাইরে নির্জন জায়গায় থাকলেন। তবুও লোকেরা সব জায়গা থেকে তাঁর কাছে আসতে লাগল।