যিহোশূয়ের পুস্তক
২ এরপর, নূনের ছেলে যিহোশূয় শিটীম থেকে দু-জন পুরুষকে গুপ্তচর হিসেবে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন: “যাও, তোমরা সেই দেশের, বিশেষ করে যিরীহোর খোঁজখবর নিয়ে এসো।” তখন সেই দু-জন গুপ্তচর বেরিয়ে পড়ল আর তারা রাহব নামে একজন বেশ্যার বাড়িতে গিয়ে উঠল। ২ যিরীহোর রাজাকে কেউ এই খবর দিল: “আজ রাতে দু-জন ইজরায়েলীয় পুরুষ আমাদের দেশের খোঁজখবর নিতে এসেছে।” ৩ এতে যিরীহোর রাজা রাহবের কাছে এই বার্তা পাঠালেন: “যে-লোকেরা তোমার ঘরে এসে উঠেছে, তাদের বের করো কারণ তারা পুরো দেশের খোঁজখবর নিতে এসেছে।”
৪ কিন্তু, রাহব সেই দু-জন গুপ্তচরকে লুকিয়ে রেখেছিল। সে রাজার লোকদের বলল: “দু-জন ব্যক্তি এখানে এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমি জানি না, তারা কোথা থেকে এসেছিল। ৫ আর রাতের বেলা নগরের দরজা বন্ধ হওয়ার একটু আগেই তারা নগর থেকে চলে গিয়েছে। জানি না তারা কোথায় গিয়েছে, কিন্তু তোমরা যদি এক্ষুনি তাদের পিছু ধাওয়া কর, তা হলে তাদের ধরে ফেলতে পারবে।” ৬ (আসলে রাহব গুপ্তচরদের ছাদের উপর ঢিবি করে রাখা তিসি গাছের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল।) ৭ এতে রাজার লোকেরা তাদের পিছু ধাওয়া করার জন্য দৌড়ে জর্ডনের ঘাট পর্যন্ত গেল আর তারা নগর থেকে বের হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে নগরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হল।
৮ সেই দু-জন গুপ্তচর ঘুমিয়ে পড়ার আগেই রাহব ছাদে তাদের কাছে এল। ৯ সে তাদের বলল: “আমি জানি, যিহোবা অবশ্যই তোমাদের এই দেশ দেবেন। আমাদের মনে তোমাদের বিষয়ে ভয় ঢুকে গিয়েছে আর তোমাদের কারণে এখানকার সমস্ত লোকের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। ১০ কারণ আমরা শুনেছি, তোমরা যখন মিশর থেকে বের হয়েছিলে, তখন কীভাবে যিহোবা তোমাদের সামনে লোহিত সাগরের* জল শুকিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা এও শুনেছি, তোমরা জর্ডনের ওপারের* দু-জন ইমোরীয় রাজা সীহোন ও ওগের কী অবস্থা করেছিলে আর কীভাবে তোমরা তাদের পুরোপুরি বিনষ্ট করে দিয়েছিলে। ১১ এই কথা শুনে আমরা ভয় পেয়ে গেলাম। তোমাদের কারণে আমরা সাহস হারিয়ে ফেললাম কারণ আমরা বুঝে গেলাম, তোমাদের ঈশ্বর যিহোবা স্বর্গ ও পৃথিবীর ঈশ্বর। ১২ তাই, এখন যিহোবার নামে আমার কাছে দিব্য করো যে, আমি যেভাবে তোমাদের প্রতি অটল প্রেম দেখিয়েছি, তেমনই তোমরাও আমার পরিবারের প্রতি অটল প্রেম দেখাবে। আমাকে তোমরা এমন কোনো চিহ্ন দাও, যাতে আমি নিশ্চিত হতে পারি যে, তোমরা তোমাদের প্রতিজ্ঞা পূরণ করবে।* ১৩ তোমরা আমার বাবা-মা, ভাই-বোন এবং তাদের পরিবারের সমস্ত লোকের প্রাণ রক্ষা করবে আর তোমরা আমাদের মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করবে।”
১৪ এতে সেই লোকেরা রাহবকে বলল: “আমরা যদি আমাদের প্রতিজ্ঞা পূরণ না করি, তা হলে তোমাদের পরিবর্তে যেন আমরা মারা যাই! তুমি যদি কাউকে না বল যে, আমরা এখানে কেন এসেছিলাম, তা হলে যিহোবা যখন আমাদের এই দেশ দেবেন, তখন আমরা তোমার প্রতি অটল প্রেম দেখাব এবং আমাদের কথা রাখব।” ১৫ এরপর, রাহব একটা দড়ির সাহায্যে জানালা দিয়ে তাদের নীচে নামিয়ে দিল কারণ তার বাড়িটা নগরের প্রাচীরের গায়ে ছিল। আসলে, তার বাড়িটা প্রাচীরের উপরেই অবস্থিত ছিল। ১৬ রাহব তাদের বলল: “তোমরা পার্বত্য এলাকায় চলে যাও আর তিন দিন সেখানেই লুকিয়ে থাকো, যাতে যারা তোমাদের পিছু ধাওয়া করছে, তারা তোমাদের খুঁজে না পায়। তারা যখন নগরে ফিরে আসবে, তখন তোমরা তোমাদের পথ ধরে চলে যেয়ো।”
১৭ গুপ্তচরেরা রাহবকে বলল: “তুমি আমাদের দিয়ে যে-দিব্য করালে, আমরা সেই দিব্য অনুযায়ী কাজ করব, ১৮ যদি তুমি এই কাজ কর: আমরা যখন এই দেশে ফিরে আসব, তখন তুমি এই গাঢ় লাল রঙের দড়িটা এই জানালায় বেঁধে রাখবে, যেটা দিয়ে তুমি আমাদের নীচে নামিয়ে দিয়েছ। আর তুমি তোমার বাবা-মা ও ভাইদের আর সেইসঙ্গে তোমার বাবার বংশের সমস্ত লোককে এই বাড়িতে একত্রিত করবে। ১৯ কেউ যদি তোমার বাড়ির বাইরে যায় এবং মারা পড়ে, তা হলে সে-ই তার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে,* কিন্তু আমরা নির্দোষ থাকব। কিন্তু, কেউ যদি বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও মারা পড়ে, তা হলে আমরা তার মৃত্যুর জন্য দায়ী হব।* ২০ আর হ্যাঁ, তুমি যদি কাউকে বল, আমরা এখানে কেন এসেছিলাম, তা হলে আমরা এই দিব্য থেকে মুক্ত হয়ে যাব।” ২১ রাহব বলল: “তোমরা যেমনটা বললে, তেমনটাই যেন হয়।”
এরপর, সে তাদের বিদায় দিল আর তারা তাদের পথ ধরে চলে গেল। পরে, রাহব জানালায় গাঢ় লাল রঙের দড়িটা বেঁধে দিল। ২২ সেই দু-জন গুপ্তচর রাহবের বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্বত্য এলাকায় চলে গেল আর তিন দিন সেখানেই থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না যারা তাদের পিছু ধাওয়া করছিল, তারা নগরে ফিরে গেল। সেই লোকেরা প্রতিটা রাস্তায় তন্নতন্ন করে তাদের খুঁজল, কিন্তু তাদের খুঁজে পেল না। ২৩ এরপর, সেই দু-জন গুপ্তচর পার্বত্য এলাকা থেকে নেমে এল আর তারা নদী পার হয়ে নূনের ছেলে যিহোশূয়ের কাছে ফিরে এল। তাদের প্রতি যা-কিছু ঘটেছিল, তারা সবই তাকে জানাল। ২৪ তারা যিহোশূয়কে বলল: “যিহোবা সেই দেশ আমাদের হাতে দিয়ে দিয়েছেন। আমাদের কারণে সেই দেশের সমস্ত বাসিন্দার মনোবল ভেঙে গিয়েছে।”