জুন
বৃহস্পতিবার, ১ জুন
একজন দরিদ্র বিধবা এসে সেই দান বাক্সে খুবই কম মূল্যের দুটো ক্ষুদ্র মুদ্রা রাখল।—মার্ক ১২:৪২.
সেই বিধবার জীবন খুবই কষ্টের ছিল। আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কেনার জন্য তার কাছে যথেষ্ট টাকাপয়সা ছিল না। যিশু সেই বিধবাকে লক্ষ করেন। তিনি চুপচাপ এসে দান বাক্সে দুটো ক্ষুদ্র মুদ্রা ফেলেন। সেই মুদ্রা ফেলার কোনো শব্দ শোনা যাইনি। কিন্তু, যিশু জানতেন, সেই বিধবা দান বাক্সে দুটো লেপ্টা ফেলেছেন, যেটার মূল্য সেই সময় খুবই কম ছিল। সত্যি বলতে কী, এতটাই কম ছিল যে, তা দিয়ে খাবারের জন্য সস্তায় একটি চড়ুই পাখিও কেনা যেত না। যিশু সেই দরিদ্র বিধবার প্রতি খুবই খুশি হন। তিনি তাঁর শিষ্যদের ডেকে বলেন: “সকলের চেয়ে এই দরিদ্র বিধবা বেশি রেখেছে। কারণ সকলে [বিশেষভাবে ধনী ব্যক্তিরা] তাদের অতিরিক্ত ধন থেকে কিছুটা রেখেছে কিন্তু এই বিধবা অভাব থাকা সত্ত্বেও তার সর্বস্ব রাখল।” (মার্ক ১২:৪৩, ৪৪) দান দেওয়ার মাধ্যমে সেই দরিদ্র বিধবা দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার উপর তার সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আর তিনি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা তার যত্ন নেবেন।—গীত. ২৬:৩. প্রহরীদুর্গ ২১.০৪ ৬ অনু. ১৭-১৮
শুক্রবার, ২ জুন
দেখো! তোমরা তোমাদের শিক্ষা দিয়ে জেরুসালেম পূর্ণ করেছ।—প্রেরিত ৫:২৮.
যিশু খ্রিস্ট যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তিনি প্রচার কাজে রত ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন, লোকেরা একদিন না একদিন তাঁর কথা অবশ্যই শুনবে। তিনি চাইতেন যেন তাঁর অনুসারীরাও প্রচার কাজে রত থাকে। (যোহন ৪:৩৫, ৩৬) যিশুর সঙ্গে থাকার সময়ে তাঁর শিষ্যেরা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ করতেন। (লূক ১০:১, ৫-১১, ১৭) কিন্তু, পরবর্তী সময়ে যখন যিশুকে গ্রেপ্তার এবং হত্যা করা হয়, তখন শিষ্যদের উদ্যোগ কমে যায়। (যোহন ১৬:৩২) পুনরুত্থিত হওয়ার পর, যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন। যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর, তাঁর শিষ্যেরা খুবই উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ করেছিলেন। এর ফলে, তাদের শত্রুরা আজকের শাস্ত্রপদের কথাগুলো বলেছিল। প্রথম শতাব্দীতে, প্রচার কাজ যিশুর নির্দেশনার অধীনে হয়েছিল আর যিহোবা এই কাজে আশীর্বাদ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশত্তমীর দিনে প্রায় ৩,০০০ জন ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। (প্রেরিত ২:৪১) আর এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। (প্রেরিত ৬:৭) যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, শেষকালে আরও বেশি লোক সুসমাচারের প্রতি সাড়া দেবে।—যোহন ১৪:১২; প্রেরিত ১:৮. প্রহরীদুর্গ ২১.০৫ ১৪ অনু. ১-২
শনিবার, ৩ জুন
সুখী সেই ব্যক্তি, যে আমার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ করে না।—মথি ১১:৬.
আপনার কি সেই মুহূর্তের কথা মনে আছে, যখন আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আপনি সত্য খুঁজে পেয়েছেন? আপনার মনে হয়েছিল, অন্যেরা যদি এই সত্য সম্বন্ধে শেখে, তা হলে তাদের জীবন ভালো হয়ে যাবে আর তারা অনন্তজীবনের আশাও লাভ করতে পারবে। (গীত. ১১৯:১০৫) তাই, আপনি উদ্যোগের সঙ্গে আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনকে এই সত্য সম্বন্ধে বলতে শুরু করেন। কিন্তু, আপনি হয়তো যেভাবে চিন্তা করেছিলেন, সেইরকম কিছুই হয়নি। তারা আপনার কথা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে। লোকেরা যখন আমাদের বার্তা শুনতে প্রত্যাখ্যান করে, তখন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়। যিশুর দিনে বেশিরভাগ লোক তাঁকে বড়ো বড়ো অলৌকিক কাজ করতে দেখেছিল। আর এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছিল যে, ঈশ্বর তাঁকে সাহায্য করছেন। তা সত্ত্বেও, তারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, যিহুদি নেতারা এই বিষয়টা অস্বীকার করতে পারেনি, লাসারকে যিশুই পুনরুত্থিত করেছিলেন। কিন্তু, তারা এটা মানতে চায়নি, যিশুই মশীহ ছিলেন। তারা এমনকী যিশু ও লাসার উভয়কে হত্যা করতে চেয়েছিল।—যোহন ১১:৪৭, ৪৮, ৫৩; ১২:৯-১১. প্রহরীদুর্গ ২১.০৫ ২ অনু. ১-২
রবিবার, ৪ জুন
সভায় একত্রে মিলিত হওয়া বাদ [দিয়ো না], . . . বরং একে অন্যকে উৎসাহিত [করো।]—ইব্রীয় ১০:২৫.
নিয়মিত সভায় যোগ দিন। এর ফলে, আপনি উৎসাহিত হবেন এবং মণ্ডলীর ভাই-বোনদের আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন। মণ্ডলীর এমন ভাই-বোনদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন, যাদের কাছ থেকে আপনি ভালো বিষয়গুলো শিখতে পারবেন, তা তাদের বয়স অথবা সংস্কৃতি আপনার চেয়ে আলাদা হোক না কেন। বাইবেল আমাদের জানায়, “প্রাচীনদের নিকটে” প্রজ্ঞা আছে। (ইয়োব ১২:১২) বয়স্ক ভাই-বোনেরাও অল্পবয়সিদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। দায়ূদ ও যোনাথনের মধ্যে বয়সের অনেক পার্থক্য ছিল। তা সত্ত্বেও, তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। (১ শমূ. ১৮:১) তাদের জীবনে বিভিন্ন সমস্যা এসেছিল, কিন্তু তারা যিহোবার সেবা করে চলার জন্য একে অপরকে সাহায্য করেছিলেন। (১ শমূ. ২৩:১৬-১৮) বোন ইরিনা, যিনি সত্যে একা রয়েছেন, বলেন: “মণ্ডলীর অনেকেই আমাদের বাবা-মা ও ভাই-বোনের মতো হয়ে উঠতে পারে। তাদের মাধ্যমে যিহোবা আমাদের যেকোনো অভাব পূরণ করতে পারেন।” মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা আপনাকে সাহায্য করতে এবং আপনাকে উৎসাহিত করতে চায়। কিন্তু, তারা তখনই তা করতে পারবে, যখন আপনি আপনার দুশ্চিন্তার বিষয়ে তাদের কাছে খুলে বলবেন। প্রহরীদুর্গ ২১.০৬ ১০-১১ অনু. ৯-১১
সোমবার, ৫ জুন
আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের সঙ্গে একই আচরণ করবেন, যদি তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের ভাইকে হৃদয় থেকে ক্ষমা না কর।—মথি ১৮:৩৫.
যিশু তাঁর শিষ্যদের প্রথমে এটা বোঝান, তারা যেন অন্যদের আঘাত না দেয়। এরপর, তিনি একটা দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। একজন দাস রাজার কাছ থেকে অনেক ঋণ নেয়। যখন সে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি, তখন রাজা তার সমস্ত ঋণ ক্ষমা করে দেন। কিন্তু, সেই দাস তার একজন সহদাসকে ক্ষমা করেনি, যে তার কাছ থেকে সামান্য ঋণ নিয়েছিল। রাজা যখন সেই দাসের নিষ্ঠুর আচরণ সম্বন্ধে জানতে পারেন, তখন তিনি সেই দাসকে কারাগারে বন্দি করেন। সেই দাস তার সহদাসের প্রতি করুণা দেখায়নি। এটা যেমন তাকে ক্ষতি করেছিল, তেমনি অন্যদের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলেছিল। কীভাবে? প্রথমত, সে তার সহদাসকে “ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত . . . কারাগারে বন্দি করে রাখল।” দ্বিতীয়ত, “এই ঘটনা দেখে অন্য সহদাসেরা অত্যন্ত দুঃখিত হল।” (মথি ১৮:৩০, ৩১) আমাদের কাজের কারণেও অন্যেরা আঘাত পেতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা যখন কাউকে ক্ষমা করি না, তার প্রতি প্রেম দেখাই না এবং তাকে এড়িয়ে চলি বা দেখেও না দেখার ভান করি, তখন তার খুব খারাপ লাগে। আর সেইসঙ্গে যখন মণ্ডলীর অন্য ভাই-বোনেরা এই বিষয়গুলো দেখে, তখন তাদেরও খারাপ লাগে। প্রহরীদুর্গ ২১.০৬ ২২ অনু. ১১-১২
মঙ্গলবার, ৬ জুন
যারা পৃথিবীকে ধ্বংস করছে, [তিনি] তাদের ধ্বংস [করবেন।]—প্রকা. ১১:১৮.
যিহোবা মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, শয়তান তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করাচ্ছে। নোহের দিনে এমনটাই ঘটেছিল। যিহোবা “দেখিলেন, পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড়।” তিনি “পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্ম্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন, ও মনঃপীড়া পাইলেন।” (আদি. ৬:৫, ৬, ১১) সেই সময় থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। আজ, বিপরীত লিঙ্গের ও সমলিঙ্গের ব্যক্তিরা সব ধরনের জঘন্য যৌন অনৈতিক কাজ করে চলেছে। (ইফি. ৪:১৮, ১৯) আর যখন কোনো খ্রিস্টান এই ধরনের কাজ করে, তখন শয়তান খুব খুশি হয়। যিহোবা এই পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার কাজ মানুষকে দিয়েছিলেন। কিন্তু, শয়তানের শাসনের অধীনে থাকায় মানুষ একে অন্যের উপর “অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব” করার ফলে দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, এটা পৃথিবী ও পশুপাখির উপর অনেক ক্ষতি নিয়ে এসেছে। (উপ. ৮:৯; আদি. ১:২৮) এটা খুবই খারাপ পরিণতি নিয়ে এসেছে। কিছু বৈজ্ঞানিক মনে করে, মানুষ যদি নিজেদের আচরণ পরিবর্তন না করে, তা হলে কিছু বছরের মধ্যে ১০ লক্ষ প্রজাতির পশুপাখি লুপ্ত হয়ে যাবে। প্রহরীদুর্গ ২১.০৭ ১২ অনু. ১৩-১৪
বুধবার, ৭ জুন
[সদাপ্রভু] প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন।—যিশা. ৫৫:৭.
ক্ষমা লাভ করার পরও ঈশ্বরের কিছু দাসের অতীতের ভুলগুলোর কারণে বিবেক দংশন করে চলে। তারা মনে করে, যিহোবা কখনো তাদের ক্ষমা করবেন না। আপনারও যদি এইরকমটা মনে হয়, তা হলে মনে রাখবেন যে, যিহোবা সত্যিই আপনার প্রতি অটল প্রেম দেখান আর এই প্রেমই তাঁকে আপনাকে ক্ষমা করতে পরিচালিত করে। আর আমরা আনন্দিত যে,আমরা এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে যিহোবার উপাসনা করতে পারি। কেন? কারণ “যিশুর রক্ত সমস্ত পাপ থেকে আমাদের শুচি করে।” (১ যোহন ১:৭) অসিদ্ধ হওয়ার কারণে আমরা হয়তো বার বার ভুল করে ফেলি আর এর ফলে, আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। এইরকম ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা যদি অনুতপ্ত হই, তা হলে যিহোবা আমাদের ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। গীতরচক দায়ূদ উল্লেখ করেছিলেন, অটল প্রেমের জন্য যিহোবা আমাদের কত দূর পর্যন্ত ক্ষমা করতে পারেন। তিনি বলেছিলেন: “পৃথিবীর উপরে আকাশমণ্ডল যত উচ্চ, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের উপরে তাঁহার দয়া তত মহৎ। পশ্চিম দিক্ হইতে পূর্ব্ব দিক্ যেমন দূরবর্ত্তী, তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনি দূরবর্ত্তী করিয়াছেন।”—গীত. ১০৩:১১, ১২. প্রহরীদুর্গ ২১.১১ ৫ অনু. ১২-১৩
বৃহস্পতিবার, ৮ জুন
তাঁহার সন্তানগণ উঠিয়া তাঁহাকে ধন্য বলে; তাঁহার স্বামীও বলেন, আর তাঁহার . . . প্রশংসা করেন।—হিতো. ৩১:২৮.
একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে সমাদর করা উচিত। (১ পিতর ৩:৭) এর অর্থ হল, তিনি তাকে সম্মান করবেন এবং তার কাছ থেকে অতিরিক্ত আশা করবেন না। তিনি অন্য মহিলাদের সঙ্গে তার স্ত্রীর তুলনা করবেন না। যদি এমনটা করেন, তা হলে তার স্ত্রীর কেমন লাগবে? রোসা নামে একজন বোনের উদাহরণ লক্ষ করুন। বোনের স্বামী সত্যে ছিলেন না আর তিনি প্রায়ই অন্য মহিলাদের সঙ্গে বোনের তুলনা করতেন। তার কথাগুলো বোনের মনে তিরের মতো গেঁথে যেত আর বোন নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করতেন। রোসা বলেন: “আমি বার বার নিজেকে মনে করাতাম, যিহোবা আমাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন।” একজন খ্রিস্টান স্বামী তার স্ত্রীকে সমাদর করবেন কারণ তিনি জানেন, এভাবে তার স্ত্রীর ও যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো থাকবে। একজন স্বামীর আরেকটা উপায়ে তার স্ত্রীকে সমাদর করা উচিত। তিনি তাকে আশ্বস্ত করবেন যে, তিনি তাকে অনেক ভালোবাসেন। এ ছাড়া, তিনি অন্যদের সামনে তার প্রশংসা করবেন। প্রহরীদুর্গ ২১.০৭ ২২ অনু. ৭-৮
শুক্রবার, ৯ জুন
আমি . . . অপেক্ষা করিব।—মীখা ৭:৭.
ধরুন, আপনি কারো জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, কিন্তু সে এখনও পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি। হতে পারে, তখন আপনি হতাশ হয়ে পড়েন অথবা তার জন্য চিন্তা করতে থাকেন। কিন্তু, আপনি যদি জানতে পারেন, কোনো উপযুক্ত কারণে তার দেরি হচ্ছে, তা হলে আপনি হয়তো ধৈর্য ধরবেন এবং তার অপেক্ষা করবেন। যাকোব ৫:৭ পদ থেকে আমরা জানতে পারি, কেন আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এই পদে লেখা রয়েছে: “একজন কৃষক ভূমির মূল্যবান ফসলের জন্য অপেক্ষা করে আর শুরুর বৃষ্টি এবং শেষের বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে।” এই পদ থেকে আমরা শিখি, যেকোনো কাজ করার সময় আমরা যখন ধৈর্য ধরব আর তাড়াহুড়ো করব না, তখন সেটার ফলাফল ভালো হবে। হিতোপদেশ ৪:১৮ পদে লেখা রয়েছে: “ধার্ম্মিকদের পথ প্রভাতীয় জ্যোতির ন্যায়, যাহা মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত উত্তরোত্তর দেদীপ্যমান হয়।” এই পদ থেকে বোঝা যায়, যিহোবা তাঁর লোকদের কাছে নিজের ইচ্ছা সম্বন্ধে ধীরে ধীরে প্রকাশ করেন। এই পদে দেওয়া নীতি থেকে আমরা এও বুঝতে পারি, খ্রিস্টানেরা নিজেদের জীবনে ধীরে ধীরে পরিবর্তনগুলো করে আর যিহোবার নিকটবর্তী হয়। প্রহরীদুর্গ ২১.০৮ ৮ অনু. ১, ৩-৪
শনিবার, ১০ জুন
এই আমি, আমাকে পাঠাও।—যিশা. ৬:৮.
এই জগৎ খুব শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু, এর আগে আমাদের কাছে অনেক কাজ রয়েছে। (মথি ২৪:১৪; লূক ১০:২; ১ পিতর ৫:২) আমরা সবাই মনপ্রাণ দিয়ে সেই কাজগুলোতে অংশ নিতে চাই। তাই, অনেকে আলাদা আলাদা লক্ষ্য স্থাপন করেছে। যেমন, অগ্রগামী হিসেবে সেবা করা, বেথেলে সেবা করা কিংবা নির্মাণ প্রকল্পে অংশ নেওয়া। অনেক ভাই পরিচারক দাস কিংবা প্রাচীন হওয়ার জন্য পরিশ্রম করছেন। (১ তীম. ৩:১, ৮) যিহোবা যখন দেখেন, তাঁর লোকেরা তাঁর সেবা করার জন্য কত কিছু করতে চায়, তখন তাঁর হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে! (গীত. ১১০:৩) কিন্তু, আপনি যদি এই বিষয়ে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন যে, আপনি এখনও পর্যন্ত কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি, তা হলে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। তাঁর কাছে নিজের মনের কথা খুলে বলুন। (গীত. ৩৭:৫-৭) আপনি মণ্ডলীর পরিপক্ব ভাইদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তারা আপনাকে পরামর্শ দিতে পারেন, যাতে আপনি ঈশ্বরের সেবা আরও ভালোভাবে করতে পারেন। তাই, তাদের পরামর্শ কাজে লাগান। আপনি যদি তা করেন, তা হলে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। প্রহরীদুর্গ ২১.০৮ ২০ অনু. ১; ২১ অনু. ৪
রবিবার, ১১ জুন
সদাপ্রভু . . . আপন সাধুগণকে [অনুগত ব্যক্তিদের, NW] পরিত্যাগ করেন না।—গীত. ৩৭:২৮.
ভাববাদিনী হান্নার বয়স ৮৪ বছর ছিল আর তিনি একজন বিধবা ছিলেন। তা সত্ত্বেও, “তিনি কখনো মন্দিরে আসা বাদ দিতেন না।” তার এই বিশ্বস্ততার জন্য যিহোবা তাকে পুরস্কার দিয়েছিলেন। তিনি শিশু যিশুকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। (লূক ২:৩৬-৩৮) বর্তমানেও, এমন অনেক বয়স্ক ভাই-বোন রয়েছে, যারা কমবয়সিদের জন্য উত্তম উদাহরণ। তারা যখন আমাদের বলে যে, যিহোবার সংগঠনে তারা কী কী করেছে আর কোন কোন আশীর্বাদ লাভ করেছে, তখন তাদের কথা আমাদের মন দিয়ে শোনা উচিত। এভাবে আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব। আমাদের বয়স্ক ভাই-বোনেরা যিহোবার কাছে অনেক মূল্যবান এবং তাঁর সংগঠনেও তাদের অনেক মূল্য রয়েছে। এই ভাই-বোনেরা দেখেছে, কীভাবে যিহোবা তাঁর সংগঠনের বিভিন্ন কাজে আশীর্বাদ দিয়েছেন এবং তাদেরও আশীর্বাদ দিয়েছেন। তারা নিজেদের ভুল থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছে। এই ভাই-বোনেরা আমাদের কাছে ‘প্রজ্ঞার উৎসের’ মতো। (হিতো. ১৮:৪) তাই, আমরা যদি সময় বের করে তাদের জানার চেষ্টা করি, তা হলে আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হবে। প্রহরীদুর্গ ২১.০৯ ৩ অনু. ৪; ৪ অনু.৭-৮; ৫ অনু. ১১, ১৩
সোমবার, ১২ জুন
যে ছোট, সে সহস্র হইয়া উঠিবে, যে ক্ষুদ্র, সে বলবান্ জাতি হইয়া উঠিবে।—যিশা. ৬০:২২.
যিশাইয়ের কথা অনুযায়ী “জাতিগণের দুগ্ধ” যিহোবার লোকদের দেওয়া হচ্ছে। (যিশা. ৬০:৫, ১৬) তারা সত্যে আসার পর তাদের আলাদা আলাদা দক্ষতা কাজে লাগিয়ে দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে ২৪০-টারও বেশি জায়গায় ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করা এবং ১,০০০-রেরও বেশি ভাষায় সাহিত্যাদি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে। সমস্ত জাতিকে কাঁপিয়ে তোলার কারণে বর্তমানে সমস্ত লোককে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত হল, তারা কি ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করবে, না কি এই জগতের সরকারগুলোকে সমর্থন করবে। যিহোবার লোকেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে, তারা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করবে। তাই, যদিও তারা নিজেদের দেশের নিয়মকানুনের বাধ্য থাকে, তবে তারা জগতের রাজনীতিতে কোনোভাবেই অংশ নেয় না। (রোমীয় ১৩:১-৭) তারা জানে, ঈশ্বরের রাজ্যই লোকদের সমস্ত সমস্যার সমাধান নিয়ে আসবে আর সেই রাজ্য এই জগতের অংশ নয়।—যোহন ১৮:৩৬, ৩৭. প্রহরীদুর্গ ২১.০৯ ১৭ অনু. ১৩-১৪
মঙ্গলবার, ১৩ জুন
তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল।—গীত. ৬২:৮.
আপনার পরিবারের একজন সদস্য যখন যিহোবার সেবা করা বন্ধ করে দেন, তখন প্রতিদিন বাইবেল পড়া, তা নিয়ে ধ্যান করা আর প্রতিটা সভায় উপস্থিত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে, আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে। বোন জোয়ানার উদাহরণ লক্ষ করুন, যার বাবা ও বোন সত্য ছেড়ে চলে গিয়েছিল। বোন জোয়ানা বলেন: “আমি যখন বাইবেল থেকে অবীগল, ইষ্টের, ইয়োব, যোষেফ, যিশু ও অন্যান্য ব্যক্তি সম্বন্ধে পড়ি, তখন আমি শান্তভাব বজায় রাখতে পারি। আমি ভালো বিষয়ের উপর মনোযোগ দিতে পারি।” যিহোবাকে নিজের মনের কথা খুলে বলুন। আপনি যতই হতাশ হোন না কেন, যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা বন্ধ করবেন না। তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন যেন তিনি পরিস্থিতিকে সেভাবে দেখতে আপনাকে সাহায্য করেন, যেভাবে তিনি দেখে থাকেন। আপনি তাঁকে এও বলতে পারেন, তিনি যেন আপনাকে “বুদ্ধি” দেন এবং আপনার “গন্তব্য পথ” দেখান। (গীত. ৩২:৬-৮) প্রার্থনায় মনের কথা খুলে বললে আপনার আবারও সেই বেদনাদায়ক বিষয়গুলো মনে পড়ে যেতে পারে ঠিকই, কিন্তু আস্থা রাখুন যে, যিহোবা আপনার কষ্ট বোঝেন। তিনি চান যেন আপনি আপনার মনের অবস্থা তাঁকে বলেন।—যাত্রা. ৩৪:৬; গীত. ৬২:৭. প্রহরীদুর্গ ২১.০৯ ২৮ অনু. ৯-১০
বুধবার, ১৪ জুন
ইনি আমার প্রিয় পুত্র, তাঁর উপর আমি খুব সন্তুষ্ট। তোমরা তাঁর কথা শোনো।—মথি ১৭:৫.
বত্রিশ খ্রিস্টাব্দে নিস্তারপর্বের পর, প্রেরিত পিতর, যাকোব ও যোহন যিশুর সঙ্গে একটা উঁচু পর্বতের উপরে ছিলেন। আর সেখানে তারা একটা দর্শন দেখেছিলেন। সেই দর্শনে তাদের সামনে যিশুর রূপ বদলে গিয়েছিল। “তাঁর মুখ সূর্যের মতো দীপ্তিময় হয়ে উঠল এবং তাঁর কাপড় আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।” (মথি ১৭:১-৪) দর্শনের শেষের দিকে প্রেরিতেরা ঈশ্বরকে এই কথা বলতে শুনেছিলেন: “ইনি আমার প্রিয় পুত্র, তাঁর উপর আমি খুব সন্তুষ্ট। তোমরা তাঁর কথা শোনো।” এই তিন জন প্রেরিত যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, সেটা থেকে জানা যায় যে, তারা যিশুর কথা শুনেছিলেন। আমাদেরও তাদের মতো যিশুর কথা শোনা উচিত। আমরা যিহোবার কাছে কতই-না কৃতজ্ঞ যে, তিনি ‘মণ্ডলীর মস্তক’ অর্থাৎ যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে আমাদের পরামর্শ দেন। (ইফি. ৫:২৩) তাই আসুন, আমরা প্রেরিত পিতর, যাকোব ও যোহনের মতো ক্রমাগত যিশুর ‘কথা শুনি।’ আমরা যদি তা করি, তা হলে আমরা শুধু বর্তমানে নয়, কিন্তু ভবিষ্যতেও চিরকালের জন্য সুখী হব। প্রহরীদুর্গ ২১.১২ ২২ অনু. ১; ২৭ অনু. ১৯
বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন
আমি তোমাকে বিচারানুরূপ শাস্তি দিব।—যির. ৩০:১১.
করিন্থ শহরে একজন খ্রিস্টান তার সৎ মায়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রাখেন। প্রেরিত পৌল প্রাচীনদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তারা যেন সেই ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করেন। সেই খ্রিস্টানের জঘন্য কাজের ফলে মণ্ডলীর অন্যান্য ব্যক্তির উপর খারাপ প্রভাব পড়ছিল। কিছু ভাই-বোনের এটা মনেই হচ্ছিল না যে, সেই ব্যক্তি কোনো গুরুতর পাপ করেছেন। (১ করি. ৫:১, ২, ১৩) কিছুসময় পর, প্রেরিত পৌল জানতে পারেন, সেই ব্যক্তি নিজের ভুলের জন্য প্রকৃত অনুতপ্ত হয়েছেন। পৌল প্রাচীনদের পরামর্শ দেন: “তোমরা . . . তাকে সদয়ভাবে ক্ষমা করো এবং সান্ত্বনা দাও।” কেন তিনি এমনটা করতে বলেছিলেন? পৌল বলেন: “যাতে সে অতিরিক্ত দুঃখিত হয়ে হাল ছেড়ে না দেয়।” পৌল চাননি, সেই ব্যক্তি নিজেকে দোষী বলে মনে করে এতটা ভেঙে পড়েন যে, তিনি ক্ষমা লাভ করার আশাই ছেড়ে দেন। (২ করি. ২:৫-৮, ১১) প্রাচীনেরা যিহোবার মতো অন্যদের প্রতি করুণা দেখান। যখন প্রয়োজন দেখা দেয়, তখন তারা অন্যায়কারী ব্যক্তির প্রতি কড়া হন। কিন্তু, যখন সম্ভব হয়, তখন প্রাচীনেরা তার প্রতি করুণা দেখান। প্রাচীনেরা যদি অন্যায়কারী ব্যক্তিকে একেবারেই শাসন না করেন, তা হলে তারা তার প্রতি করুণা দেখাচ্ছেন না। এর পরিবর্তে, তারা তাকে আরও ভুল কাজ করার জন্য প্রশ্রয় দিচ্ছেন। প্রহরীদুর্গ ২১.১০ ১০-১১ অনু. ১২-১৫
শুক্রবার, ১৬ জুন
প্রতিশোধ নেওয়া চলবে না, কিম্বা কারও বিরুদ্ধে মনের মধ্যে হিংসার ভাব পুষে রাখা চলবে না।—লেবীয়. ১৯:১৮, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।
ধরুন, সবজি কাটার সময় আপনার আঙুল সামান্য কেটে গিয়েছে আর এর ফলে আপনার আঙুল ব্যথা করছে। কিন্তু, দু-এক দিনের মধ্যেই আপনি ভুলে যাবেন যে, আপনার আঙুল কেটে গিয়েছিল। একইভাবে, আপনার কোনো বন্ধু হয়তো এমন কিছু বলে বা করে, যেটার ফলে আপনি দুঃখ পান। তবে, বিষয়টা হয়তো বেশি বড়ো নয়, তাই আপনি তাকে ক্ষমা করে দেন। এবার ধরুন, আপনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। আপনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছেন আর ডাক্তার আপনার ক্ষতস্থান বেঁধে দিয়েছেন। আপনি যদি বার বার সেই ক্ষতস্থান স্পর্শ করেন, তা হলে সেই ক্ষত আরও বেড়ে যেতে পারে। ঠিক একইভাবে, কেউ হয়তো আপনাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। এইরকম ক্ষেত্রে আপনি যদি বার বার সেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন, তা হলে এতে আপনারই ক্ষতি হবে। তাই ভালো হবে, যেন আপনি আজকের শাস্ত্রপদে দেওয়া পরামর্শ মেনে চলেন। প্রহরীদুর্গ ২১.১২ ১২ অনু. ১৫
শনিবার, ১৭ জুন
তুমি কেন তোমার ভাইয়ের বিচার কর?—রোমীয় ১৪:১০.
ধরুন, একজন প্রাচীনের মনে হয়েছে যে, কোনো ভাই কিংবা বোনের পোশাক-আশাক অথবা সাজগোজের ধরন ঠিক নয়। এইরকম ক্ষেত্রে সেই প্রাচীন নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘সেই ভাই কিংবা বোন কি বাইবেলের কোনো নীতির বিরুদ্ধে কাজ করেছেন?’ তিনি এই বিষয়ে খেয়াল রাখবেন, তিনি যেন নিজের ইচ্ছামতো কোনো পরামর্শ না দেন। তাই, তিনি অন্য কোনো প্রাচীন অথবা পরিপক্ব ভাই কিংবা বোনকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তারা একসঙ্গে পৌলের দেওয়া পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করতে পারে। (১ তীম. ২:৯, ১০) পৌল খ্রিস্টানদের জন্য কোনো নিয়ম স্থির করেননি যে, তাদের কোন ধরনের পোশাক পরা উচিত এবং কোন ধরনের পোশাক পরা উচিত নয়। তিনি জানতেন, ভাই-বোনেরা বাইবেলের নীতি মেনে চলে নিজেদের পছন্দের পোশাক-আশাক পরতে পারে। তিনি শুধু এতটুকুই বলেছিলেন, তারা যেন চিন্তাভাবনা করে পোশাক-আশাক বাছাই করে আর খেয়াল রাখে, যাতে এটার মাধ্যমে যিহোবার বদনাম না হয়। প্রাচীনদের নির্ধারণ করতে হবে, কোনো ভাই কিংবা বোনকে পোশাক-আশাক এবং সাজগোজের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে, কোনো বিষয়ে দু-জন ভাই আলাদা আলাদা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এবং দু-জনের সিদ্ধান্তই সঠিক হতে পারে। তাই, ভাই-বোনদের উপর আমাদের নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আমরা তাদের এটা বলে দেব না যে, তাদের কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। প্রহরীদুর্গ ২২.০২ ১৬ অনু. ৯-১০
রবিবার, ১৮ জুন
একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম ও করুণা দেখিয়ে আচরণ করো। —সখ. ৭:৯, NW.
একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম দেখানোর অনেক কারণ আমাদের কাছে রয়েছে। কিছু কারণ হিতোপদেশ বইয়ে লেখা রয়েছে। এগুলো হল: “দয়া ও সত্য তোমাকে ত্যাগ না করুক; . . . তাহা করিলে অনুগ্রহ ও সুবুদ্ধি পাইবে, ঈশ্বরের ও মনুষ্যের দৃষ্টিতে পাইবে।” “দয়ালু আপন প্রাণের উপকার করে।” “যে ধার্ম্মিকতার ও দয়ার অনুগামী হয়, সে জীবন, . . . পায়।” (হিতো. ৩:৩, ৪; ১১:১৭; ২১:২১) এই শাস্ত্রপদগুলোতে তিনটে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেন আমাদের অটল প্রেম দেখানো উচিত। প্রথমত, এটা দেখানোর ফলে আমরা যিহোবার দৃষ্টিতে মূল্যবান হয়ে উঠি। দ্বিতীয়ত, এটা থেকে আমরা নিজেরা উপকৃত হই। যেমন, আমরা ভালো বন্ধু তৈরি করতে পারি। তৃতীয়ত, ভবিষ্যতে আমরা বিভিন্ন আশীর্বাদ পাব এবং অনন্তজীবন লাভ করব। তাই আসুন, আমরা যিহোবার এই কথা সবসময় মেনে চলি: “একে অন্যের প্রতি অটল প্রেম ও করুণা দেখিয়ে আচরণ করো।” প্রহরীদুর্গ ২১.১১ ৮ অনু. ১-২
সোমবার, ১৯ জুন
আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় করুন।—লূক ১৭:৫.
কোনো পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার পর আমরা যদি বুঝতে পারি, আমাদের বিশ্বাস যথেষ্ট শক্তিশালী নয়, তা হলে আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের যিহোবার কাছে হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনা করা উচিত, বিশেষভাবে যখন আমরা কোনো বড়ো সমস্যার মধ্যে থাকি। এ ছাড়া, আমাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত, যিহোবা আমাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের মাধ্যমে যত্ন নেবেন। আমরা যখন যিহোবার সাহায্যে বর্তমানে পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করব, তখন আমাদের এই আস্থা বৃদ্ধি পাবে যে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য তিনি আমাদের সাহায্য করবেন। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, কোন চারটে ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস শক্তিশালী করতে হবে। তিনি জানতেন, এমনটা করলে তারা যিহোবার সাহায্য ভবিষ্যতে বিভিন্ন পরীক্ষার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। (যোহন ১৪:১; ১৬:৩৩) এ ছাড়া, যিশুর এই বিষয়ে আস্থা ছিল যে, দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে এক বিরাট জনতা মহাক্লেশ থেকে রক্ষা পাবে। (প্রকা. ৭:৯, ১৪) আপনি যদি বর্তমানে আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেন, তা হলে আপনি সেই বিরাট জনতার মধ্যে থাকবেন।—ইব্রীয় ১০:৩৯. প্রহরীদুর্গ ২১.১১ ২৫ অনু. ১৮-১৯
মঙ্গলবার, ২০ জুন
সদাপ্রভুর দূত, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন।—গীত. ৩৪:৭.
আমরা এইরকমটা আশা করি না, যিহোবা অলৌকিকভাবে আমাদের রক্ষা করবেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, আমরা যদি আজ মারাও যাই, তা হলে ভবিষ্যতে যিহোবা আমাদের অনন্তজীবন দেবেন। খুব শীঘ্রই মাগোগ দেশীয় গোগ অর্থাৎ সমস্ত জাতির জোট আমাদের উপর আক্রমণ করবে আর সেইসময় আমাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। আমাদের যিহোবার উপর আস্থা রাখতে হবে যে, তিনি আমাদের রক্ষা করতে পারেন আর তিনি নিশ্চয়ই তা করবেন। সেই জাতিগুলোর মনে হবে, আমরা এমন মেষের মতো, যাদের রক্ষা করার কেউ নেই। (যিহি. ৩৮:১০-১২) আমাদের কাছে না হাতিয়ার থাকবে, না আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারব। তাই, তাদের মনে হবে, খুব সহজেই তারা আমাদের শেষ করে দিতে পারবে। কিন্তু, তারা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানবে না, যেটা আমরা জানি। আর তা হল, আমাদের রক্ষা করার জন্য স্বর্গদূতেরা আমাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করে রয়েছেন। কেন তারা এই বিষয়টা জানবে না? কারণ তারা ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করে না। তাই, স্বর্গদূতেরা যখন আমাদের রক্ষা করতে আসবেন, তখন তারা অবাক হয়ে যাবে।—প্রকা. ১৯:১১, ১৪, ১৫. প্রহরীদুর্গ ২২.০১ ৫-৬ অনু. ১২-১৩
বুধবার, ২১ জুন
সমগ্র ভ্রাতৃসমাজের প্রতি প্রেম দেখাও।—১ পিতর ২:১৭.
যিহোবা আমাদের সমস্ত ভাই-বোনকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন, তাই আমাদেরও তাদের মূল্যবান হিসেবে দেখতে হবে। আমাদের ভাই-বোনদের আঘাত দেওয়া উচিত নয়। আমাদের কারণে যদি কেউ আঘাত পায়, তা হলে আমরা এইরকম চিন্তা করব না, ‘সামান্য একটা বিষয়কে এত বড়ো করে দেখার কী আছে? ওর বিষয়টা ভুলে যাওয়া উচিত আর ক্ষমা করে দেওয়া উচিত!’ এটা ভুলে যাবেন না যে, লোকেরা অনেক কারণে আঘাত পেতে পারে। কোনো কোনো ব্যক্তি যেভাবে বড়ো হয়ে উঠেছে, সেটার কারণে নিজেকে অন্যদের চেয়ে গুরুত্বহীন বলে মনে করতে পারে। আবার কিছু ব্যক্তি সত্যে নতুন আর অন্যদের ক্ষমা করার বিষয় শিখছে। কারণ যা-ই হোক না কেন, আমাদের মিটমাট করার জন্য প্রচেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি একটুতেই রেগে যাই, তা হলে এটা ভালো বিষয় নয়। আমাদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। এমনটা করার মাধ্যমেই আমরা আনন্দে থাকতে পারব আর ভাই-বোনদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো থাকবে। প্রহরীদুর্গ ২১.০৬ ২১ অনু. ৭
বৃহস্পতিবার, ২২ জুন
সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে, যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে।—গীত. ১৪৫:১৮.
যিশু আপনার কষ্ট বোঝেন। যিশু একজন প্রেমময় বন্ধুর মতো আমাদের সান্ত্বনা দিতে এবং সাহস জোগাতে পারেন। কেন? কারণ তিনি সেইসমস্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন, যে-পরিস্থিতিগুলোর মধ্য দিয়ে আজ আমরা যাচ্ছি। তাই, তিনি আমাদের কষ্ট ভালোভাবে বোঝেন। তিনি জানেন, আমরা যখন খুব অসহায় হয়ে পড়ি, তখন আমাদের কেমন লাগে। তিনি আমাদের দুর্বলতাগুলোও জানেন। এ ছাড়া, তিনি এই বিষয়টা খেয়াল রাখেন, “আমাদের যখন সাহায্যের প্রয়োজন হয়,” তখনই আমরা যেন সাহায্য পাই। (ইব্রীয় ৪:১৫, ১৬) যিশু যেমন গেৎশিমানী বাগানে স্বর্গদূতের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন, ঠিক তেমনই আমাদেরও যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া যেকোনো সাহায্য গ্রহণ করা উচিত। যিহোবা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের সাহায্য করেন। যেমন, প্রাচীন কিংবা মণ্ডলীর কোনো ভাই-বোনের মাধ্যমে অথবা কোনো প্রকাশনা, ভিডিও এবং বক্তৃতার মাধ্যমে। (লূক ২২:৩৯-৪৪) যিহোবা আপনাকে শান্তি দেবেন। কঠিন সময়ে আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন আমরা “ঈশ্বরের সেই শান্তি” লাভ করি, “যে-শান্তির কথা মানুষ চিন্তাও করতে পারে না।”—ফিলি. ৪:৬, ৭. প্রহরীদুর্গ ২২.০১ ১৮-১৯ অনু. ১৭-১৯
শুক্রবার, ২৩ জুন
প্রেরিতেরা . . . যে-সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেগুলো তাদের জানালেন।—প্রেরিত ১৬:৪.
যিহোবার কাজ করার পদ্ধতি সবসময় সঠিক। তবে, যিহোবা তাঁর সংগঠনে যে-ভাইদের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন, তাদের উপর আস্থা রাখা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে পারে। আমরা চিন্তা করতে পারি, ‘তারা কি সত্যিই যিহোবার নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন, না কি নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করেন?’ আমরা যদি সেই ভাইদের উপর আস্থা না রাখি, তা হলে কীভাবে আমরা বলতে পারি যে, যিহোবার উপর আমাদের আস্থা রয়েছে? বর্তমানে, যিহোবা তাঁর সংগঠনে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে’ নিযুক্ত করেছেন। (মথি ২৪:৪৫) প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠীর মতো এই দাস ঈশ্বরের সমস্ত লোকের দেখাশোনা করে এবং প্রাচীনদের নির্দেশনা দেয়। প্রাচীনেরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী মণ্ডলীতে কাজ করে থাকেন। তাই, আমরা যখন প্রাচীন এবং সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলি, তখন আমরা দেখাই যে, যিহোবার কাজ করার পদ্ধতির উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। প্রহরীদুর্গ ২২.০২ ৪ অনু. ৭-৮
শনিবার, ২৪ জুন
এসো, আমরা উত্তম কাজ করার ব্যাপারে হাল ছেড়ে না দিই।—গালা. ৬:৯.
আমরা একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার এক বিশেষ সুযোগ লাভ করেছি। যখনই আমরা এমন কোনো ব্যক্তিকে শিষ্য হওয়ার জন্য সাহায্য করি, যার “অনন্তজীবন লাভ করার জন্য সঠিক মনোভাব” রয়েছে, তখন আমরা খুব আনন্দিত হই, ঠিক যেমনটা যিশু হয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৩:৪৮) যিশুর শিষ্যেরা যখন তাঁকে বলেছিলেন, প্রচার কাজে তারা কত ভালো ফলাফল লাভ করেছে, তখন তিনি “পবিত্র শক্তিতে উল্লসিত” হয়েছিলেন। (লূক ১০:১, ১৭, ২১) প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে বলেছিলেন: “তোমার নিজের বিষয়ে এবং তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান থাকো। . . . তা করার মাধ্যমে তুমি নিজেকে এবং যারা তোমার শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দেয়, তাদের রক্ষা করবে।” (১ তীম. ৪:১৬) আমাদের পরিচর্যাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় কারণ লোকদের জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। আমরা ঈশ্বরের রাজ্যের প্রজা, তাই ‘নিজেদের বিষয়ে সাবধান’ থাকা উচিত। আমাদের সবসময় এমন কাজ করা উচিত যেন সেটা যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে। আর এমনভাবে জীবনযাপন করা উচিত, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, আমরা যা প্রচার করি, সেটা বিশ্বাসও করি। (ফিলি. ১:২৭) আমাদের ‘নিজেদের শিক্ষার বিষয়েও সাবধান’ থাকা উচিত। কীভাবে? প্রচারে যাওয়ার আগে আমাদের ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত এবং প্রার্থনা করার মাধ্যমে যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া উচিত। প্রহরীদুর্গ ২১.১০ ২৪ অনু. ১-২
রবিবার, ২৫ জুন
নতুন ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো পরিধান করো।—কল. ৩:১০.
যে-ব্যক্তি “নতুন ব্যক্তিত্বকে” কাপড়ের মতো পরেন, তিনি যিহোবার মতো চিন্তা করেন এবং তাঁর মতো কাজ করেন। তিনি নিজের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং কাজের মাধ্যমে পবিত্র শক্তির ফলের দিকগুলো দেখিয়ে থাকেন। যেমন, তিনি যিহোবা এবং তাঁর লোকদের প্রতি ভালোবাসা দেখান। (মথি ২২:৩৬-৩৯) সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তিনি আনন্দিত থাকেন। (যাকোব ১:২-৪) তিনি সবার সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য প্রচেষ্টা করেন। (মথি ৫:৯) তিনি ধৈর্য ধরেন এবং অন্যদের প্রতি দয়া দেখান। (কল. ৩:১২, ১৩) তিনি লোকদের জন্য ভালো কাজ করেন। (লূক ৬:৩৫) তার কাজ দেখে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, যিহোবার উপর তার দৃঢ়বিশ্বাস রয়েছে। (যাকোব ২:১৮) যখন অন্যেরা তাকে উত্তেজিত করে, তখনও তিনি কোমলভাবে আচরণ করেন আর যখন কেউ মন্দ কাজ করার জন্য তাকে বলে, তখন তিনি আত্মসংযম বজায় রাখেন। (১ করি. ৯:২৫, ২৭; তীত ৩:২) নতুন ব্যক্তিত্বকে কাপড়ের মতো পরার জন্য আমাদের মধ্যে সেই সমস্ত গুণ গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে, যেগুলো গালাতীয় ৫:২২, ২৩ পদ আর সেইসঙ্গে বাইবেলের অন্যান্য পদে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রহরীদুর্গ ২২.০৩ ৮-৯ অনু. ৩-৪
সোমবার, ২৬ জুন
আমার অনুকারী হও।—১ করি. ১১:১.
প্রাচীনেরা কেবল ঘরে ঘরে সাক্ষ্য দিয়ে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে প্রতিটা সুযোগে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থেকে প্রেরিত পৌলকে অনুকরণ করতে পারেন। (ইফি. ৬:১৪, ১৫) পৌলের মতো প্রাচীনেরাও প্রচার করার সময় অন্যদের ও সেইসঙ্গে পরিচারক দাসদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। (১ পিতর ৫:১,২) তবে, মণ্ডলীর প্রাচীনেরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন না যে, তাদের কাছে প্রচার করার জন্য সময়ই না থাকে। (মথি ২৮:১৯, ২০) ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কখনো কখনো তাদের কোনো কোনো কার্যভার গ্রহণ করার বিষয়ে না বলতে হবে। প্রার্থনাপূর্বক চিন্তা করার পর তারা হয়তো বুঝতে পারবেন যে, এখন তারা সেই কার্যভার পালন করতে পারবেন না কারণ তাদের করার মতো আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো রয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হল পারিবারিক উপাসনা করা, প্রচার কাজে পুরোপুরিভাবে অংশ নেওয়া অথবা সন্তানদের প্রচার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া। তারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, সমস্ত বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষা যিহোবা ভালোভাবে বোঝেন। প্রহরীদুর্গ ২২.০৩ ২৭ অনু. ৪, ৭; ২৮ অনু. ৮
মঙ্গলবার, ২৭ জুন
যারা শরীর হত্যা করে কিন্তু জীবন হত্যা করতে পারে না, তাদের ভয় কোরো না।—মথি ১০:২৮.
মনে করে দেখুন, আপনি যখন সত্য সম্বন্ধে শিখছিলেন, তখন আপনি হয়তো এই ভেবে ভয় পেতেন, আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন বিরোধিতা করবে। কিংবা আপনার পক্ষে ঘরে ঘরে প্রচার করা কখনোই সম্ভব নয়। আপনাকে এইরকম অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, তাই আপনি আপনার ছাত্রের অনুভূতি বুঝতে পারেন। যিশুও তাঁর অনুসারীদের অনুভূতি বুঝতে পারতেন। তা সত্ত্বেও, তিনি তাদের উৎসাহিত করেছিলেন যেন তারা ভয়ের কারণে যিহোবার উপাসনা করা বন্ধ করে না দেয়। (মথি ১০:১৬, ১৭, ২৭) আপনার ছাত্রকে প্রচার করতে শেখান। যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তখন তারা হয়তো ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। শিষ্যদের ভয় দূর করার জন্য যিশু স্পষ্টভাবে তাদের বলেছিলেন, কাদের কাছে প্রচার করতে হবে এবং কী বলতে হবে। (মথি ১০:৫-৭) কীভাবে আপনি যিশুকে অনুকরণ করতে পারেন? আপনি ছাত্রকে বলতে পারেন, তিনি যেন এমন লোকদের সম্বন্ধে চিন্তা করেন, যাদের কাছে তিনি প্রচার করতে পারবেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি কি এমন কোনো ব্যক্তিকে জানেন, যিনি বাইবেল থেকে সত্য সম্বন্ধে জেনে খুশি হবেন? আপনি আপনার ছাত্রের সঙ্গে প্রস্তুতি নিন এবং তাকে সাহায্য করুন, তিনি কীভাবে অন্যদের খুবই সহজ উপায়ে সত্য সম্বন্ধে জানাতে পারেন। প্রহরীদুর্গ ২১.০৬ ৬ অনু. ১৫-১৬
বুধবার, ২৮ জুন
আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে।—হগয় ২:৭.
দু-হাজার পনেরো সালে নেপালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। সেই ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পাওয়া একজন ব্যক্তি বলেন: “কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনেক দোকান ও পুরোনো বিল্ডিং ভেঙে পড়ে যায়।” আরেকজন ব্যক্তি বলেন: “চারিদিকে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অনেক লোক বলে, ভূমিকম্প তো কয়েক মিনিটের জন্য হয়েছিল, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, এটা যেন শেষই হচ্ছে না।” তবে, বর্তমানে পুরো পৃথিবী এক অন্য ধরনের কম্পন অনুভব করছে। যিহোবা অনেক বছর ধরে সমস্ত জাতিকে কাঁপিয়ে তুলছেন। এই বিষয়ে ভাববাদী হগয় লিখেছিলেন: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আর একবার, অল্পকালের মধ্যে, আমি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে এবং সমুদ্র ও শুষ্ক ভূমিকে কম্পান্বিত করিব।” (হগয় ২:৬) হগয় কোনো আক্ষরিক ভূমিকম্পের বিষয় উল্লেখ করেননি কারণ ভূমিকম্প শুধুমাত্র বিপর্যয় নিয়ে আসে। এর পরিবর্তে, যখন তিনি বলেছিলেন, সমস্ত জাতিকে কাঁপিয়ে তোলা হবে, তখন সেটা ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে। যিহোবা বলেছিলেন: “আমি সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত করিব; এবং সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল আসিবে; আর আমি এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব।” প্রহরীদুর্গ ২১.০৯ ১৪ অনু.১-৩
বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন
তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার সময়ে আমার সঙ্গে সঙ্গে রয়েছ।—লূক ২২:২৮.
কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য আমরা প্রায়ই তার সঙ্গে কথা বলি এবং মনের কথাও জানিয়ে থাকি। যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব ঠিক একইরকম। আপনি যখন আপনার সমস্ত চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং মনের কথা তাঁর কাছে খুলে বলেন, তখন তা থেকে বোঝা যায় যে, আপনার তাঁর উপর আস্থা রয়েছে আর আপনি নিশ্চিত, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। (গীত. ৯৪:১৭-১৯; ১ যোহন ৫:১৪, ১৫) অনুগত বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। এই বন্ধুরা হল যিহোবার দেওয়া একটা দান। (যাকোব ১:১৭) যিহোবা মণ্ডলীতে এমন ভাই-বোনদের দিয়েছেন, যারা আমাদের “সর্ব্বসময়ে প্রেম করে।” (হিতো. ১৭:১৭) এটা থেকে বোঝা যায়, যিহোবা আমাদের জন্য কত চিন্তা করেন। কলসীয়দের প্রতি চিঠি লেখার সময়ে, প্রেরিত পৌল কিছু খ্রিস্টানের বিষয় উল্লেখ করেছিলেন, যারা তাকে “অনেক সান্ত্বনা প্রদান” করেছিল। (কল. ৪:১০, ১১) যিশুরও বন্ধুদের প্রয়োজন ছিল। আর যখন শিষ্যেরা এবং স্বর্গদূতেরা তাঁকে সমর্থন জুগিয়েছিল, তখন তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। (লূক ২২:৪৩) কোনো বন্ধুকে নিজের অনুভূতি ও সমস্যার বিষয়ে বলার অর্থ এই নয়, আপনার বিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়েছে বরং এটা আপনার বিশ্বাসকে রক্ষা করতে পারে। প্রহরীদুর্গ ২১.০৪ ২৪ অনু.১৪-১৬
শুক্রবার, ৩০ জুন
প্রেম কোনো পরিস্থিতিতে হাল ছেড়ে দেয় না, সমস্ত কিছু বিশ্বাস করে, সবসময় প্রত্যাশা রাখে, সমস্ত কিছু সহ্য করে।—১ করি. ১৩:৭.
কোনো ভাই কিংবা বোনের আচরণ যদি আমাদের কষ্ট দিয়ে থাকে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? আমাদের শান্তি বজায় রাখার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা করা উচিত। আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে নিজের মনের কথা খুলে বলা উচিত। আমাদের সেই ভাই কিংবা বোনের জন্যও প্রার্থনা করা উচিত। আর যিহোবার কাছ থেকে এই বিষয়ে সাহায্য চাওয়া উচিত যে, যিহোবা তার মধ্যে যে-ভালো গুণগুলো লক্ষ করেন, আমরাও যেন তার সেই গুণগুলো দেখতে পারি। (লূক ৬:২৮) আমরা যদি তার ভুলগুলো ক্ষমা করতে না পারি, তা হলে তার সঙ্গে আমাদের কথা বলা উচিত। আমাদের এইরকম চিন্তা করা উচিত নয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের আঘাত দিয়েছেন। (মথি ৫:২৩, ২৪) আমাদের তার কথা শুনতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু, তিনি যদি মিটমাট করতে না চান, তা হলে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং “সবসময় একে অন্যকে সহ্য” করতে হবে। (কল. ৩:১৩) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমাদের তার উপর রেগে থাকা উচিত নয়। যদি রেগে থাকি, তা হলে যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মনে রাখবেন, অন্যদের কারণে আমাদের বিশ্বাস যেন দুর্বল হয়ে না পড়ে। এভাবে, আমরা প্রমাণ করতে পারব, আমরা সমস্ত কিছুর চেয়ে যিহোবাকে বেশি ভালোবাসি।—গীত. ১১৯:১৬৫. প্রহরীদুর্গ ২১.০৬ ২৩ অনু. ১৫