আমাদের মাঝেই কি দূতেরা আছে?
মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে যায়। গভীর চিন্তায় মগ্ন আর চারপাশের প্রতি নজর না রেখেই ম্যারিলিন রেল লাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি একটা বিকট শব্দ শুনতে পান। তিনি মুখ তুলে তাকান আর দেখতে পান ট্রেনটি যে লাইন ধরে আসছিল ঠিক সেখানেই তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন! ম্যারিলিন নিশ্চল হয়ে পড়েন, ভয়ে নিথর হয়ে যান। ট্রেনটি এত কাছে এসে পড়েছিল যে তিনি চালকের নীল চোখ দুটি ও তার শঙ্কিত মুখটি পর্যন্ত দেখতে পান। এরপর যা ঘটেছিল তা কখনও ম্যারিলিন ভুলতে পারেননি। “একটা দৈত্য যেন আমাকে পাশ থেকে ঠেলে দেয়,” তিনি বলেন। “এক ঝটকায় রেল লাইন থেকে সরে গিয়ে আমি ঠিক তার পাশে পোড়া কয়লার স্তূপের ওপর পড়ি।” একটু আঘাত পাওয়া অবস্থাতেই, ম্যারিলিন উঠে দাঁড়ান সেই ব্যক্তিটিকে ধন্যবাদ দিতে যে তাকে রক্ষা করেছিল—কিন্তু কাউকে দেখা গেল না! তিনি কী ভেবেছিলেন? “আমার শুভাকাঙ্ক্ষী দূতই আমার জীবন বাঁচিয়েছে,” ম্যারিলিন বলেন। “এছাড়া আর অন্য কে হতে পারে?”
এক সন্দেহপ্রবণ জগৎ হঠাৎ করে যেন দূতেদের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, এই স্বর্গীয় প্রাণীরাই টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, সিনেমা ও ব্রডওয়ে নাটকের বিষয় হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় পুস্তকের যে জনপ্রিয়তার তালিকা তার শীর্ষে রয়েছে দূতেদের সম্বন্ধীয় বইগুলি। এছাড়াও রয়েছে দূতেদের সমিতি, শিক্ষালয় ও মুদ্রিত পত্র সমূহ। কর্মশালাগুলি খোলা হয়েছে আপনাকে সাহায্য করার জন্য—যেমন একটি প্রবন্ধ মন্তব্য করে—যাতে করে “আপনি ‘দূতেদের সমর্থন’ পেতে পারেন।”
এই দূত সংক্রান্ত আন্দোলনের সুযোগকে নিজেদের সুবিধার্থে কাজে লাগিয়ে স্বার্থবাদী ব্যবসায়ীরা অবাধে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলি বিক্রি করার চেষ্টা করে চলেছে। “যে কোন দ্রব্যের ওপর দূতের ছাপ থাকলেই তা অত্যন্ত লাভজনক হয়ে ওঠে,” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক দোকানের সহমালিক এই মন্তব্য করেন। বিস্তর বইগুলি ছাড়াও, তিনি তার তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন, “দূতেদের মূর্তি, পিনস্, পুতুল, টি-শার্ট, পোস্টার্স ও শুভেচ্ছা কার্ড”—যেগুলির বিক্রির সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে, যা একজন সাংবাদিক বলেন এটা হল এক “স্বর্গীয় মুনাফা।”
কিন্তু এটা কেবলমাত্র একটা খামখেয়ালিপনা নয়, একজন দূত প্রচারক জোরের সাথে মন্তব্য করেন। তাদের এই দাবির সত্যতা প্রমাণ করার জন্য তারা একের পর এক প্রামাণিক সাক্ষ্য পেশ করে চলেন—অর্থাৎ দূতেদের মুখোমুখি হওয়া সম্বন্ধীয় কিছু “সত্য ঘটনা।” কিছু ব্যক্তি বলেন যে তারা দূতেদের মানুষের আকৃতিতে দেখতে পেয়েছিলেন। আবার অন্যেরা একধরনের আলো দেখেছিলেন, কণ্ঠস্বর শুনেছিলেন, উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন অথবা একধরনের প্রবণতা উপলব্ধি করেছিলেন যা তারা বিশ্বাস করেন যে দূত সম্বন্ধীয়। ম্যারিলিনের মতো অনেকে বলে থাকেন যে দূত তাদের জীবন রক্ষা করেছিল।
তাহলে কী ঘটছে? “আমার মনে হয় আধ্যাত্মিকতার পুনরুদয় ঘটছে,” জোয়ান ওয়েস্টার অ্যান্ডারসন, যিনি “অতিপ্রাকৃত” বিষয়ের মুখোমুখি হওয়া সম্বন্ধে দুটি বই লেখেন, তিনি এই মন্তব্যটি করেন। অল্মা দানিয়েল, যিনি আরেকটি বই লিখতে সাহায্য করেছিলেন, তিনি এই বিষয়টিকে আরও চরম পর্যায়ে নিয়ে যান। তিনি বলেন যে দূতেরা “এখন এক আদেশের অধীনে রয়েছে যাতে করে তারা নিজেদের প্রকাশ করতে ও আরও বেশি লোকেদের কাছে পৌঁছাতে পারে। বস্তুতপক্ষে আমরা যে তাদের এত দেখতে পাচ্ছি তার কারণ হল যে তারা এটাই চায়। এটাই তারা করছে।”
সত্যই কি তাই? না কি বর্তমানে দূতেদের প্রতি এই আগ্রহের পিছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে? এটা জানার জন্য আমাদের অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বাইবেলের মধ্যে দূতেদের সম্বন্ধে সত্যটি রয়েছে, যা আমরা এখন দেখবো।
[২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Pages 3 and 4: The New Testament: A Pictorial Archive from Nineteenth-Century Sources, by Don Rice/Dover Publications, Inc.