পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল
যিহোবার করুণা তাঁর ন্যায়বিচারকে সহনীয় করে, কথাটা বলা কি ঠিক?
এইরকম কথা যদিও ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু তা এড়িয়ে চলাই ভাল কারণ তা না হলে মনে হয় যে, যিহোবার করুণা তাঁর ন্যায়বিচারকে নমনীয় বা সংযত করে, যেন ন্যায়বিচারের কঠোর প্রকৃতির চেয়ে তাঁর করুণাই উৎকৃষ্ট। কিন্তু এটা ঠিক নয়।
যে-ইব্রীয় শব্দকে “ন্যায়বিচার” বলে অনুবাদ করা হয়েছে তার মানে “বিচার”-ও বোঝাতে পারে। ন্যায়বিচার ও ধার্মিকতা একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। কিন্তু, ন্যায়বিচার শব্দটা সাধারণত আইনগত বিষয়ে প্রয়োগ করা হয়। ধার্মিকতা বলতে সাধারণত তা বোঝায় না। এটা ঠিক যে, যিহোবার ন্যায়বিচারের সঙ্গে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া জড়িত কিন্তু সেইসঙ্গে এতে যোগ্য ব্যক্তিদের জন্য পরিত্রাণের ব্যবস্থা করাও জড়িত। (আদিপুস্তক ১৮:২০-৩২; যিশাইয় ৫৬:১; মালাখি ৪:২) তাই, যিহোবার ন্যায়বিচারকে কখনও কঠোর হিসেবে বা এটা কিছুটা নমনীয় হওয়া দরকার এমনটা মনে করা উচিত নয়।
“করুণা”-র জন্য যে-ইব্রীয় শব্দ ব্যবহৃত হয়, তা বিচার করার সময় কিছুটা সংযত হওয়াকেও বোঝাতে পারে। এ ছাড়াও, এটা সক্রিয় সমবেদনাকে বোঝাতে পারে এবং দুঃখী লোকেদের জন্য স্বস্তি এনে দিতে পারে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৮; লূক ১০:২৯-৩৭.
ন্যায়বিচার ও করুণা দুটো গুণই যিহোবা ঈশ্বরের রয়েছে। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭; দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪; গীতসংহিতা ১৪৫:৯) তাঁর ন্যায়বিচার ও করুণা দুটোই সিদ্ধ এবং এগুলো একসঙ্গে কাজ করে। (গীতসংহিতা ১১৬:৫; হোশেয় ২:১৯) দুটো গুণই নিখুঁতভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে ও একটা অন্যটার পরিপূরক। তাই, আমরা যদি বলি যে যিহোবার করুণা তাঁর ন্যায়বিচারকে সহনীয় করেছে, তা হলে আমাদেরকে এও বলতে হবে যে, তাঁর ন্যায়বিচার তাঁর করুণাকে সহনীয় করে।
যিশাইয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সদাপ্রভু তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিবার আকাঙ্ক্ষায় অপেক্ষা করিবেন, আর সেই জন্য তোমাদের প্রতি করুণা করিবার আকাঙ্ক্ষায় ঊদ্ধের্ব থাকিবেন; কেননা সদাপ্রভু ন্যায়বিচারের ঈশ্বর।” (যিশাইয় ৩০:১৮) যিশাইয় এখানে দেখান যে, যিহোবার ন্যায়বিচার তাঁকে করুণা দেখাতে প্রেরণা দেয় কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাঁর করুণা তাঁর ন্যায়বিচারকে নমনীয় বা সংযত করে। যিহোবা করুণা দেখান কারণ তিনি ন্যায়বান ও সেইসঙ্গে প্রেমময়।
এটা ঠিক যে, বাইবেল লেখক যাকোব লিখেছিলেন: “দয়াই [“করুণাই,” NW] বিচারজয়ী হইয়া শ্লাঘা করে।” (যাকোব ২:১৩খ) কিন্তু, যাকোব যিহোবার সম্বন্ধে নয় বরং সেই খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে বলছেন, যারা দুঃখী ও গরিব লোকেদেরকে করুণা দেখান। (যাকোব ১:২৭; ২:১-৯) এইরকম করুণাময় ব্যক্তিদেরকে বিচার করার সময়, যিহোবা তাদের আচরণ মনে রাখেন এবং করুণা দেখিয়ে তাঁর পুত্রের বলিদানের ভিত্তিতে ক্ষমা করেন। এভাবে তারা প্রতিকূল বিচারের যোগ্য হলেও তাদের করুণাপূর্ণ আচরণ তাদেরকে জয়ী করে।—হিতোপদেশ ১৪:২১; মথি ৫:৭; ৬:১২; ৭:২.
তাই, যিহোবার করুণার জন্য তাঁর ন্যায়বিচার সহনীয় হয় কথাটা এই অর্থে বলা সঠিক নয় কারণ তা হলে মনে হয়, যেন তাঁর ন্যায়বিচার করুণার দ্বারা কিছুটা নমনীয় হওয়া দরকার। যিহোবার মধ্যে এই দুটো গুণই নিখুঁতভাবে রয়েছে। এগুলো একটা অন্যটার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখে এবং যিহোবার অন্যান্য গুণ যেমন, প্রেম ও প্রজ্ঞার দ্বারা ভারসাম্যপূর্ণ হয়।