পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
“পিতার অপরাধ পুত্ত্র বহন করিবে না,” যিহিষ্কেল ১৮:২০ পদে বলা এই কথাগুলোর সঙ্গে যাত্রাপুস্তক ২০:৫ পদের কথাগুলো কি পরস্পরবিরোধী, যেখানে বলা আছে যে, যিহোবা “পিতৃগণের অপরাধের প্রতিফল সন্তানদিগের উপরে” বর্তান?
এই দুটো পদ পরস্পরবিরোধী নয়। একটি উক্তি ব্যক্তিগতভাবে নিকাশ দেওয়ার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে আর অন্যটি একজন ব্যক্তির ভুলের পরিণতিগুলো তার বংশধরদের ওপর যে-প্রভাব ফেলতে পারে, সেটার বাস্তবতাকে স্বীকার করে।
যিহিষ্কেল ১৮ অধ্যায়ের প্রসঙ্গ দেখায় যে, সেখানে ব্যক্তিগতভাবে নিকাশ দেওয়ার বিষয়টার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ৪ পদ বলে, “যে প্রাণী পাপ করে, সেই মরিবে।” সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে কী বলা যায়, যিনি ‘ধার্ম্মিক এবং ন্যায় ও ধর্ম্মাচরণ করেন’? “সে অবশ্য বাঁচিবে।” (যিহি. ১৮:৫, ৯) তাই, নিকাশ দেওয়ার মতো বয়সে পৌঁছানোর পর, প্রত্যেক ব্যক্তি তার “আচার ব্যবহার অনুসারে” বিচারিত হয়।—যিহি. ১৮:৩০.
কোরহ নামে একজন লেবীয়ের ঘটনার দ্বারা এই নীতিটি তুলে ধরা হয়েছে। ইস্রায়েল প্রান্তরে যাত্রা করার সময়ে, কোরহ তার সেবার বিশেষ সুযোগগুলো নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। নিজের জন্য যাজকীয় কাজগুলোকে সুনিশ্চিত করার চেষ্টায় কোরহ এবং আরও কিছু ব্যক্তি, যিহোবার প্রতিনিধি মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। উদ্ধতভাবে এই পদের—এমন এক বিশেষ সুযোগ, যেটার অধিকার তাদের ছিল না, সেটার—জন্য আকাঙ্ক্ষা করার কারণে কোরহ ও তার বিদ্রোহী সঙ্গীদের যিহোবা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। (গণনা. ১৬:৮-১১, ৩১-৩৩) কিন্তু, কোরহের সন্তানরা এই বিদ্রোহে যোগ দেয়নি। ঈশ্বর তাদের বাবার পাপের কারণে তাদের কাছে নিকাশ নেননি। যিহোবার প্রতি তাদের আনুগত্যের ফলে তাদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল।—গণনা. ২৬:১০, ১১.
কিন্তু, যাত্রাপুস্তক ২০:৫ পদে দেওয়া সতর্কবাণী সম্বন্ধে কী বলা যায়, যেটা দশ আজ্ঞার অংশ? আবারও প্রসঙ্গটা বিবেচনা করুন। যিহোবা ইস্রায়েল জাতির কাছে ব্যবস্থা চুক্তি প্রবর্তন করেছিলেন। সেই চুক্তির শর্তগুলো শোনার পর, ইস্রায়েলীয়রা জনসমক্ষে ঘোষণা করেছিল: “সদাপ্রভু যাহা কিছু বলিয়াছেন, আমরা সমস্তই করিব।” (যাত্রা. ১৯:৫-৮) এইভাবে, পুরো জাতি যিহোবার সঙ্গে এক বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। তাই, যাত্রাপুস্তক ২০:৫ পদের কথাগুলো মূলত সমগ্র জাতির প্রতি নির্দেশ করে বলা হয়েছিল।
ইস্রায়েলীয়রা যখন যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিল, তখন সেই জাতি উপকৃত হয়েছিল এবং অনেক আশীর্বাদ উপভোগ করেছিল। (লেবীয়. ২৬:৩-৮) এ ছাড়া, এর বিপরীতটাও সত্য হয়েছিল। ইস্রায়েল জাতি যখন যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং মিথ্যা দেবতাদের অনুগামী হয়েছিল, তখন তিনি তাদের ওপর থেকে তাঁর আশীর্বাদ ও সুরক্ষা তুলে নিয়েছিলেন; সেই জাতি বিপর্যয় ভোগ করেছিল। (বিচার. ২:১১-১৮) এটা ঠিক যে, সেই জাতি প্রতিমাপূজায় রত হওয়া সত্ত্বেও, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিল এবং ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো মেনে চলেছিল। (১ রাজা. ১৯:১৪, ১৮) সেই জাতির পাপের কারণে সম্ভবত বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা কিছুটা কষ্ট ভোগ করেছিল, তবে যিহোবা তাদের প্রতি প্রেমপূর্ণ দয়া দেখিয়েছিলেন।
যিহোবার নীতিগুলোকে লঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে ইস্রায়েল যখন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, অন্যান্য জাতির মাঝে তাঁর নাম উপহাসের এক বিষয় হয়ে উঠেছিল, তখন যিহোবা তাঁর লোকেদের বাবিলের বন্দিত্বে যেতে অনুমতি দেওয়ার দ্বারা তাদেরকে শাস্তি দেবেন বলে স্থির করেছিলেন। অবশ্য, এর অন্তর্ভুক্ত ছিল আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে এবং দলগতভাবে তাঁর লোকেদের শাস্তি দেওয়া। (যির. ৫২:৩-১১, ২৭) বস্তুতপক্ষে, বাইবেল দেখায় যে, সমষ্টিগতভাবে ইস্রায়েলের অপরাধ এতটাই গুরুতর ছিল যে, তৃতীয়, চতুর্থ অথবা সম্ভবত তারও বেশি প্রজন্ম তাদের পূর্বপুরুষদের অপকর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, যেমনটা যাত্রাপুস্তক ২০:৫ পদে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া, ঈশ্বরের বাক্যে সেই বিবরণগুলোও রয়েছে, যেখানে বাবা-মায়ের মন্দ আচরণের দ্বারা প্রত্যেকটা পরিবার প্রভাবিত হয়েছিল। মহাযাজক এলি তার “পাষণ্ড,” দুশ্চরিত্র ছেলেদেরকে যাজক হিসেবে থাকতে দিয়ে যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করেছিলেন। (১ শমূ. ২:১২-১৬, ২২-২৫) যেহেতু এলি যিহোবার চেয়ে তার ছেলেদের প্রতি বেশি সম্মান দেখিয়েছিলেন, তাই ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন যে, এলির কুলকে মহাযাজকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে, যেটা তার প্রপৌত্রের পুত্র অবিয়াথরের সময় থেকে ঘটতে শুরু করেছিল। (১ শমূ. ২:২৯-৩৬; ১ রাজা. ২:২৭) যাত্রাপুস্তক ২০:৫ পদে দেওয়া নীতিটি গেহসির উদাহরণের দ্বারাও তুলে ধরা হয়েছে। অরামীয় সেনাপতি নামানের সুস্থ হওয়া থেকে বস্তুগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য, ইলীশায়ের পরিচারক হিসেবে গেহসি তার পদের অপব্যবহার করেছিলেন। ইলীশায়ের মাধ্যমে যিহোবা এই বলে বিচার ঘোষণা করেছিলেন: “নামানের কুষ্ঠরোগ তোমাতে ও তোমার বংশে চিরকাল লাগিয়া থাকিবে।” (২ রাজা. ৫:২০-২৭) তাই, তার অন্যায় কাজের পরিণতিগুলোর দ্বারা গেহসির বংশধরেরা প্রভাবিত হয়েছিল।
সৃষ্টিকর্তা ও জীবনদাতা হিসেবে, যিহোবার এটা নির্ধারণ করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে যে, কোন শাস্তি ন্যায্য ও উপযুক্ত। উপরোক্ত ঘটনাগুলো দেখায় যে, সন্তান বা বংশধরেরা হয়তো তাদের পূর্বপুরুষদের পাপের মন্দ প্রভাবগুলো অনুভব করতে পারে। কিন্তু, যিহোবা ‘দুঃখীদের ক্রন্দন শ্রবণ করেন’ এবং যে-ব্যক্তিরা আন্তরিকভাবে তাঁর ওপর নির্ভর করে, তারা হয়তো তাঁর অনুগ্রহ ও এমনকী কিছুটা স্বস্তি লাভ করতে পারে।—ইয়োব ৩৪:২৮.
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোরহ ও তার বিদ্রোহী সঙ্গীদের তাদের কৃতকর্মের জন্য নিকাশ দিতে হয়েছিল