খণ্ড ১৫
নির্বাসনে থাকাকালীন একজন ভাববাদী ভবিষ্যতের বিষয়ে পূর্বাভাস পান
দানিয়েল ঈশ্বরের রাজ্যের এবং মশীহের আসার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। বাবিলের পতন হয়
একজন অসাধারণ নীতিনিষ্ঠ তরুণ দানিয়েলকে, যিরূশালেম ধ্বংসের আগে বাবিলে নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি এবং অন্য কিছু যিহুদি—পরাজিত যিহূদা রাজ্যের নির্বাসিত ব্যক্তিরা—তাদের বন্দিকর্তাদের কাছ থেকে বেশ কিছুটা স্বাধীনতা লাভ করেছিল। বাবিলে তার দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করার সময় দানিয়েল ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন, এমনকী সিংহের গর্তে মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং কিছু দর্শন লাভ করেছিলেন, যেগুলো তাকে সুদূর ভবিষ্যৎ দেখার সুযোগ করে দিয়েছিল। দানিয়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মশীহ ও তাঁর শাসনের ওপর কেন্দ্রীভূত।
দানিয়েল জানতে পারেন যে, কখন মশীহের আগমন ঘটবে। দানিয়েলকে বলা হয়েছিল যে, কখন ঈশ্বরের লোকেরা ‘অভিষিক্ত ব্যক্তি [‘মশীহ,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন], নায়কের’ আগমনের বিষয়ে আশা করতে পারে—যিরূশালেমের প্রাচীর পুনর্স্থাপন ও পুনর্নির্মাণের আজ্ঞা লাভ করার ৬৯ সপ্তাহের বছর পর। একটা সাধারণ সপ্তাহ সাত দিন নিয়ে গঠিত; এক সপ্তাহের বছর, সাত বছর নিয়ে গঠিত। সেই আজ্ঞা দানিয়েলের সময়ের অনেক পরে অর্থাৎ সা.কা.পূ. ৪৫৫ সালে জারি করা হয়েছিল। সেই সময় থেকে শুরু করে ৬৯ “সপ্তাহ” ৪৮৩ বছর ধরে চলেছিল এবং সা.কা. ২৯ সালে শেষ হয়েছিল। এই প্রকাশনার পরবর্তী অংশে আমরা দেখব যে, সেই বছর কী ঘটেছিল। এ ছাড়া, দানিয়েল আগেই দেখতে পেয়েছিলেন যে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য মশীহ “উচ্ছিন্ন” হবেন বা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।—দানিয়েল ৯:২৪-২৬.
মশীহ স্বর্গে রাজা হবেন। স্বর্গের একটা অসাধারণ দর্শনে, দানিয়েল মশীহকে স্বয়ং যিহোবার সিংহাসনের সামনে উপস্থিত হতে দেখেছিলেন, যাঁকে “মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যিহোবা তাঁকে “কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব” প্রদান করেছিলেন। সেই রাজ্য অনন্তকাল স্থায়ী হবে। দানিয়েল মশীহ রাজ্য সম্বন্ধে আরেকটা রোমাঞ্চকর তথ্য জানতে পেরেছিলেন—সেই রাজা তাঁর কর্তৃত্বকে অন্যদের সঙ্গে অর্থাৎ ‘পরাৎপরের পবিত্র প্রজাগণ’ হিসেবে উল্লেখিত একদল ব্যক্তির সঙ্গে ভাগ করে নেবেন।—দানিয়েল ৭:১৩, ১৪, ২৭.
বাজ্য এই জগতের সরকারগুলোকে ধ্বংস করে দেবে। ঈশ্বর দানিয়েলকে একটা স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন, যে-স্বপ্নটা বাবিলের রাজা নবূখদ্নিৎসরকে হতবুদ্ধি করে দিয়েছিল। রাজা একটা বিশাল প্রতিমা দেখেছিলেন, যেটার মস্তক সোনা, বক্ষ ও বাহু রুপো, উদর ও উরু পিতল, জঙ্ঘা বা পা লোহা এবং চরণ বা পায়ের পাতা লোহা ও মাটির মিশ্রণ দিয়ে গঠিত ছিল। পর্বত থেকে খনিত এক প্রস্তর ভঙ্গুর পায়ের পাতায় আঘাত করেছিল এবং প্রতিমাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছিল। দানিয়েল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, প্রতিমার বিভিন্ন অংশ দীর্ঘসময় ধরে পর্যায়ক্রমে আসা বিশ্বশক্তিগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে, যেগুলো সোনার মস্তক দ্বারা চিত্রিত বাবিল থেকে শুরু হয়েছিল। দানিয়েল আগেই দেখতে পেয়েছিলেন যে, এই দুষ্ট জগতের চূড়ান্ত শাসনকারী শক্তিগুলোর সময়ে ঈশ্বরের রাজ্য পদক্ষেপ নেবে। এটা এই জগতের সমস্ত সরকারকে চূর্ণ করবে। এরপর এটা অনন্তকাল শাসন করবে।—দানিয়েল ২ অধ্যায়।
অনেক বছর বেঁচে থাকায়, দানিয়েল বাবিলের পতন দেখতে পেয়েছিলেন। রাজা কোরস সেই নগরকে পরাজিত করেছিলেন, ঠিক যেমনটা ভাববাদীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। এর কিছু দিন পরেই, যিহুদিরা অবশেষে তাদের নির্বাসন থেকে মুক্ত হয়েছিল—একেবারে সঠিক সময়ে অর্থাৎ তাদের মাতৃভূমির ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ৭০ বছরের জনশূন্য অবস্থা শেষ হওয়ার পর। বিশ্বস্ত দেশাধ্যক্ষ, যাজকবর্গ ও ভাববাদীদের নির্দেশনায় যিহুদিরা অবশেষে যিরূশালেম পুনর্নির্মাণ এবং যিহোবার মন্দির পুনর্স্থাপন করেছিল। কিন্তু, ৪৮৩ বছর শেষ হওয়ার পর কী ঘটেছিল?
—দানিয়েল বইয়ের ওপর ভিত্তি করে।