শীঘ্রই—এক উত্তম জীবন!
চিন্তা করে দেখুন একজন আবহাওয়া পূর্বাভাস বক্তার কথা যার ভবিষ্যদ্বাণী প্রায় সর্বদাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। যদি সন্ধ্যার খবরে তিনি বলেন যে আগামী কাল বৃষ্টি হবে, তাহলে নিশ্চয়ই পরের দিন সকালে আপনি বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় ছাতা নিতে ইতস্তত বোধ করবেন না। তার পূর্বের রেকর্ড আপনাকে সাহায্য করেছে তার উপর আস্থা রাখতে। তিনি যা বলবেন আপনি সেই অনুসারে কাজ করবেন।
এখন, পার্থিব পরমদেশে এক উত্তম জীবন সম্বন্ধে যিহোবার যে প্রতিজ্ঞা তা কতখানি নির্ভরযোগ্য? তাঁর বিগত রেকর্ডগুলি কী ইঙ্গিত করে? বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা যিহোবার সত্যতা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। তিনি এক অভ্রান্ত সঠিকতা ও সত্যতার ঈশ্বর। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪; যিশাইয় ৫৫:১১) যিহোবা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলি এতই নির্ভরযোগ্য যে এক এক সময়ে তিনি ভবিষ্যতের প্রতিজ্ঞাত ঘটনাগুলিকে এমনভাবে প্রকাশ করে থাকেন, যেন সেগুলি ইতিমধ্যেই ঘটে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, নতুন জগতে মৃত্যু ও শোক আর থাকবে না এই বিষয়ের উপর তাঁর যে প্রতিজ্ঞা, সেই সম্বন্ধে আমরা পড়ি: “[প্রতিজ্ঞাত আশীর্বাদগুলি] হইয়াছে।” আরেক কথায় বলতে গেলে, “এগুলি বাস্তব!”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৫, ৬, NW, পাদটীকা।
হ্যাঁ, যিহোবার বিগত প্রতিজ্ঞাগুলির পরিপূর্ণতা আমাদের সাহায্য করে এই বিষয় আস্থা রাখতে যে মানবজাতির জন্য এক উত্তম জীবন সম্বন্ধীয় তাঁর প্রতিজ্ঞা, সেটিও পূর্ণতা লাভ করবে। কিন্তু কখন এই উত্তম জীবন আসবে?
এক উত্তম জীবন—কখন?
এক অতি উত্তম জীবন খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে! আমরা এই বিষয় নিশ্চিত থাকতে পারি কারণ বাইবেল বলে যে পরমদেশ এক উত্তম জীবন নিয়ে আসার ঠিক আগেই পৃথিবীতে অনেক মন্দ বিষয় ঘটবে। সেই মন্দ বিষয়গুলি এখনই ঘটছে।
উদাহরণস্বরূপ, যীশু খ্রীষ্ট মহাযুদ্ধ ঘটবে বলে ভাববাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “জাতির বিপক্ষে জাতি ও রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে।” (মথি ২৪:৭) এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫ সালের বছরগুলির মধ্যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটে আর এছাড়াও আরও অনেক যুদ্ধ হয় যেখানে জাতিগণ একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। “এই সময়ে [২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে] যুদ্ধে মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাৎসরিক হারে উনবিংশ শতাব্দীতে যত মৃত্যু ঘটেছিল তার তুলনায় দ্বিগুণ এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর তুলনায় সাত গুণ বেশি।”—ওয়ার্ল্ড মিলিটারী অ্যান্ড সোস্যাল এক্সপেনডিচার্স ১৯৯৩.
পরমদেশে এক উত্তম জীবন যে সন্নিকট তার আরেকটি প্রমাণ হল রোগের প্রসারতা। যীশু ভাববাণী করেছিলেন যে ‘স্থানে স্থানে মহামারী’ হবে। (লূক ২১:১১) এই ভবিষ্যদ্বাণী কি পরিপূর্ণতা লাভ করেছে? হ্যাঁ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্প্যানিস ফ্লু দুই কোটিরও বেশি লোকের জীবন নিয়েছিল। সেই সময় থেকে আরম্ভ করে ক্যানসার, হৃদরোগ, ম্যালেরিয়া, এইডস ও অন্যান্য রোগগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। উন্নতিশীল দেশগুলিতে, দূষিত জলের থেকে আসা রোগগুলি (যার অন্তর্ভুক্ত হল ডাইরিয়া, ও পেটে কৃমি রোগ) প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিচ্ছে।
যীশু এও বলেছিলেন: “দুর্ভিক্ষ. . .হইবে।” (মথি ২৪:৭) আগের প্রবন্ধটিতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে জগতের দরিদ্র মানুষদের যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য থাকে না। এটিও প্রমাণের আরেকটি দিক যা দেখায় যে পরমদেশে অতি উত্তম জীবন খুব শীঘ্রই আসবে।
“মহৎ মহৎ ভূমিকম্প . . . হইবে,” যীশু বলেছিলেন। (লূক ২১:১১) এটিও আমাদের দিনে পরিপূর্ণতা পেয়েছে। ১৯১৪ সালের পর থেকে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পগুলি সহস্রাধিক জীবন নষ্ট করেছে।
এছাড়া বাইবেল বলে যে মানুষের পরিবর্তনের দ্বারাও ‘শেষকাল’ চিহ্নিত হবে। তারা “আত্মপ্রিয়” ও “অর্থপ্রিয়” হবে আর সন্তানেরা “পিতামাতার অবাধ্য” হবে। সাধারণভাবে লোকেরা “ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয়” হবে। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) আপনি কি স্বীকার করবেন না যে অনেকেই এইধরনের প্রবণতা দেখিয়ে থাকে?
যত বেশি লোক আজ মন্দ কাজ করছে, ততই অরাজকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি আগে থেকে বলা হয়েছিল। মথি ২৪:১২ পদ অনুসারে যীশু “অধর্ম্মের বৃদ্ধি” সম্বন্ধে বলেছিলেন। সম্ভবত আপনি স্বীকার করবেন যে বিগত বছরগুলির তুলনায় অপরাধ এখন আরও বেড়ে গেছে। সর্বস্থানে লোকেরা ডাকাতি, রাহাজানি অথবা কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে ভীত।
যুদ্ধ, সুদূর-প্রসারী ব্যাধি, খাদ্যাভাব, ভূমিকম্প, অপরাধের বৃদ্ধি এবং মানব সম্পর্কের অবনতি—এই সমস্ত কিছুই আজ প্রতীয়মান, ঠিক যেমন বাইবেল ভাববাণী করেছিল। ‘কিন্তু সমগ্র মানব ইতিহাসে এগুলি কি সবসময়ই ঘটে আসছে না?’ আপনি হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন। ‘আমাদের দিনের সাথে পার্থক্য কোথায়?’
আজকে যা ঘটছে তার পিছনে এক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিক রয়েছে। বাইবেল এটা বলে না যে একটি মাত্র ঘটনা, যেমন খাদ্যাভাব, সেটাই প্রমাণ করবে যে আমরা শেষকালের সময়ে বাস করছি এবং এক উত্তম জীবন সন্নিকট। শেষকাল সম্বন্ধীয় বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি ঈশ্বরহীন এক বংশের উপর পরিপূর্ণতা লাভ করবে।—মথি ২৪:৩৪-৩৯; লূক ১৭:২৬, ২৭.
এছাড়াও, এটি খুবই আশ্চর্যজনক যে যীশুর দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর কয়েকটি অংশ—বিশেষকরে খাদ্যাভাব ও ব্যাপকপ্রসারী রোগ—এগুলি আজকের দিনে বাস্তবিকই ঘটছে। কেন? কারণ বৈজ্ঞানিক সম্পাদন এতটা উন্নত পর্যায় কখনও পৌঁছায়নি। চিকিৎসাগত জ্ঞান এবং আরোগ্য পদ্ধতি কখনও এত উন্নত বা ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করেনি। কেবলমাত্র ঈশ্বরই তাঁর বাক্য বাইবেলে বলতে পারেন যে এই সময়টিতে রোগ ও দুর্ভিক্ষ ভালোর দিকে যাবে না, বরঞ্চ আরও খারাপ রূপ ধারণ করবে।
যেহেতু শেষ সময় বা “শেষকালে”-র বিষয় বাইবেলের সমস্ত ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হচ্ছে, অতএব আমরা কোন্ উপসংহারে আসতে পারি? তা হল এক উত্তম জীবন সন্নিকট! কিন্তু কী করে এটি আসবে?
এক উত্তম জীবন—কিভাবে?
আপনি কি মনে করেন যে মানুষ পরমদেশ নিয়ে আসতে পারবে? সমগ্র ইতিহাস থেকে শুরু করে আজ অবধি নানান ধরনের মনুষ্য সরকার এসেছে। লোকেদের চাহিদা মেটানোর জন্য কয়েকটি সরকার প্রচুর চেষ্টাও করেছে। তবুও, বহু সমস্যা খারাপের দিকে এগিয়ে চলেছে। ধনী এবং দরিদ্র উভয় দেশগুলিতে, সরকারগুলিকে নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, অনুন্নত বসতি, দরিদ্রতা, অপরাধ, বেকারত্ব এবং যুদ্ধের সাথে লড়াই করতে হয়।
এমনকি সরকারগুলি যদি কিছু সমস্যার সমাধানও করতে পারে, তবুও তারা ভগ্ন স্বাস্থ্য থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি অথবা বার্ধক্য ও মৃত্যুর পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারবে না। এটি পরিষ্কার যে, মানুষেরা কখনও এই পৃথিবীতে পরমদেশ নিয়ে আসতে পারবে না।
বাইবেল প্রজ্ঞার সাথে বলে: “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই।” তাহলে, কার উপর আমরা বিশ্বাস রাখব? বাইবেল উত্তর দেয়: “ধন্য সেই, যাহার সহায় যাকোবের ঈশ্বর, যাহার আশাভূমি সদাপ্রভু, তাহার ঈশ্বর।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৩, ৫) আমরা যদি যিহোবা ঈশ্বরের উপর আশা রাখি, তাহলে আমরা কখনও আশাহত হব না।
অবশ্যই যিনি প্রজ্ঞা ও শক্তির সাহায্যে পৃথিবী, সূর্য ও তারার সৃষ্টি করতে পারেন তাঁর পক্ষে এই পৃথিবীকে পরমদেশ করে তোলাও সম্ভব। তিনি মানুষকে উত্তম জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিতে পারেন। যা কিছু যিহোবা ঈশ্বর করবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন তা তিনি করতে পারেন ও তা করবেনও। তাঁর বাক্য জানায়: “ঈশ্বরের কোন বাক্য শক্তিহীন হইবে না।” (লূক ১:৩৭) কিন্তু কিভাবে ঈশ্বর এক উত্তম জীবন নিয়ে আসবেন?
তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে যিহোবা মানবজাতির জন্য এক অতি উত্তম জীবন আনবেন। আর ঈশ্বরের এই রাজ্যটি কী? ঈশ্বরের মনোনীত শাসক, যীশু খ্রীষ্ট সমেত এটি হল এক বাস্তব সরকার। ঈশ্বরের রাজ্য স্বর্গে অবস্থিত, কিন্তু এটি শীঘ্রই পরমদেশ পৃথিবীর বসবাসকারীদের জন্য আনবে এক অপূর্ব আশীর্বাদ ও অধিকতর উত্তম জীবন।—যিশাইয় ৯:৬, ৭.
বাইবেলে মথি ৬:৯-১৩ পদে উল্লেখিত যীশুর দেওয়া আদর্শ প্রার্থনার সাথে আপনি হয়ত ইতিমধ্যেই পরিচিত। ঈশ্বরের কাছে করা এই প্রার্থনার একটি অংশ বলে: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” সেই প্রার্থনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, ঈশ্বরের রাজ্য পৃথিবীর ক্ষেত্রে যিহোবা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সাধন করতে ‘আসবে।’ আর এটি হল তাঁর উদ্দেশ্য যে পৃথিবী যাতে পরমদেশ হতে পারে।
শেষ একটি প্রশ্ন ওঠে: আগত পরমদেশে এক উত্তম জীবন উপভোগ করার জন্য আপনার কী করা আবশ্যক?
আপনার কী করার প্রয়োজন
সকলে যারা তাঁর ইচ্ছা পালন করে যিহোবা তাদের জন্য পরমদেশে এক উত্তম জীবনের প্রত্যাশা প্রেমের সাথে তুলে ধরেছেন। বাইবেল আমাদের জানায়: “ধার্ম্মিকেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৯) কিন্তু কোন্ বিষয়টি একজন ব্যক্তিকে ঈশ্বরের চোখে ধার্মিক গণিত করে তুলতে পারে?
যিহোবাকে খুশি করার জন্য আমাদের প্রয়োজন তিনি আমাদের কাছ থেকে যা চান তার সম্বন্ধে আরও বেশি শেখা। যদি আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধীয় জ্ঞান নিই এবং তা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি, তাহলে আমরা অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারব। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময় যীশু বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।”—যোহন ১৭:৩.
যে বইটি যিহোবা ঈশ্বর ও যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে আমাদের বলে, সেটি হল ঈশ্বরের বাক্য, বাইবেল। এটি যিহোবার দেওয়া এক অন্যতম মূল্যবান উপহার। সন্তানদের উদ্দেশ্যে লেখা প্রেমময় পিতার একটি চিঠির মতই হল বাইবেল। এটি মানবজাতির জন্য এক উত্তম জীবন সম্বন্ধীয় ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার কথা জানায় এবং দেখায় যে কিভাবে আমরা তা পেতে পারি। বাইবেল আমাদের এও জানায় যে ঈশ্বর অতীতে কী করেছেন এবং ভবিষ্যতে কী করবেন। এছাড়া বর্তমানে আমরা কিভাবে সফলতার সাথে আমাদের সমস্যাগুলির মোকাবিলা করতে পারি এবিষয়েও এটি আমাদের বাস্তবধর্মী উপদেশ দেয়। অবশ্য, ঈশ্বরের বাক্য আমাদের শিক্ষা দেয় যে এই বিক্ষুব্ধ জগতেও কিভাবে আমরা কিছুটা আনন্দ পেতে পারি।—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.
যিহোবার সাক্ষীরা আনন্দের সাথে বিনামূল্যে আপনার জন্য গৃহ বাইবেল অধ্যয়নের ব্যবস্থা করবেন। শিখুন, যে কিভাবে আপনি এখনই এক সুখী জীবন এবং অদূর ভবিষ্যতে এক অতি উত্তম জীবন যাপন করতে পারেন।
[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি ইঙ্গিত করে যে এক উত্তম জীবন সন্নিকট
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের রাজ্য মানবজাতির জন্য এক উত্তম জীবন নিয়ে আসবে