প্রকৃত শান্তি—কোন্ উৎস থেকে?
“[যিহোবা] পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন।”—গীতসংহিতা ৪৬:৯.
১. যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীতে আমরা শান্তির কোন্ চমৎকার প্রতিজ্ঞা দেখতে পাই?
“শান্তিই ধার্ম্মিকতার কার্য্য হইবে, এবং চিরকালের জন্য সুস্থিরতা ও নিঃশঙ্কতা ধার্ম্মিকতার ফল হইবে। আর আমার প্রজাগণ শান্তির আশ্রমে, নিঃশঙ্কতার আবাসে ও নিশ্চিন্ততার বিশ্রাম-স্থানে বাস করিবে।” (যিশাইয় ৩২:১৭, ১৮) কতই না এক উত্তম প্রতিজ্ঞা! এটি প্রকৃত শান্তির এক প্রতিজ্ঞা, যা ঈশ্বর করেছিলেন।
২, ৩. প্রকৃত শান্তির বর্ণনা দিন।
২ অতএব, প্রকৃত শান্তি কী? এটি কি শুধুমাত্র যুদ্ধের অনুপস্থিতি? অথবা এটি শুধুমাত্র এমন একটি সময়কাল, যখন জাতিগণ পরবর্তী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়? প্রকৃত শান্তি কি শুধুমাত্র একটি স্বপ্ন? এগুলি হচ্ছে কিছু প্রশ্ন যেগুলির নির্ভরযোগ্য উত্তর আমাদের প্রয়োজন। প্রথমতঃ, প্রকৃত শান্তি স্বপ্নের চেয়েও আরও অনেক বেশি কিছু। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত শান্তি, এই জগৎ যা কল্পনা করতে পারে, তার চেয়েও অনেক বেশি বিস্তারিত। (যিশাইয় ৬৪:৪) এটি শুধুমাত্র কয়েক বছর অথবা কয়েক দশকের জন্য শান্তি নয়। এটি চিরকাল স্থায়ী! আর এটি শুধুমাত্র সুযোগপ্রাপ্ত অল্প কয়েক জনের জন্য শান্তি নয়—এটি স্বর্গ এবং পৃথিবী, দূত এবং মানুষ সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি সমস্ত জাতি, উপজাতিগত দল, ভাষাগুলি এবং বর্ণের লোকেদের কাছে প্রসারিত। এটি কোন সীমান্ত, কোন প্রতিবন্ধকতা, কোন ব্যর্থতা মানে না।—গীতসংহিতা ৭২:৭, ৮; যিশাইয় ৪৮:১৮.
৩ প্রকৃত শান্তি মানে প্রতিদিন শান্তি। এর অর্থ হচ্ছে যে আপনি প্রত্যেকটি সকালে উঠবেন যুদ্ধ সম্বন্ধে কোন চিন্তা না নিয়ে, আপনার ভবিষ্যৎ, আপনার সন্তানদের ভবিষ্যৎ, এমনকি আপনার নাতি-নাতনীদের ভবিষ্যতের জন্য কোন উদ্বিগ্নতা ছাড়াই। এর অর্থ সম্পূর্ণরূপে মানসিক শান্তি। (কলসীয় ৩:১৫) এর অর্থ অপরাধ আর নেই, দৌরাত্ম্য আর নেই, বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলি আর নেই, গৃহহীন লোকেরা আর নেই, ক্ষুধায় অথবা শীতে মারা যাচ্ছে এমন লোকেরা আর নেই এবং আর কোন নৈরাশ্য ও হতাশা নেই। অধিকতর উত্তম বিষয় হল যে, ঈশ্বরের শান্তির অর্থ অসুস্থতা, ব্যথা, দুঃখ অথবা মৃত্যুবিহীন এক জগৎ। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) চিরকাল প্রকৃত শান্তি উপভোগ করার কী এক চমৎকার আশাই না আমাদের রয়েছে! এটি কি সেই ধরনের শান্তি এবং সুখ নয় যার জন্য আমরা সকলে আকুল আকাঙ্ক্ষী? এটিই কি সেই ধরনের শান্তি নয় যার জন্য আমাদের প্রার্থনা এবং কাজ করা উচিত?
মানবজাতির ব্যর্থ প্রচেষ্টাগুলি
৪. শান্তির জন্য জাতিগণ কোন্ প্রচেষ্টাগুলি প্রয়োগ করেছে এবং কোন্ ফলাফল সহ?
৪ শতাব্দীগুলি ধরে মানুষ এবং জাতিগণ শান্তি সম্বন্ধে কথা বলেছে, শান্তি নিয়ে বিতর্ক করেছে, শত শত শান্তি চুক্তিগুলিতে স্বাক্ষর করেছে। এর ফল কী হয়েছে? বিগত ৮০ বছরে কখনও ন্যায্যতই একটি মুহূর্তও এমন ছিল না যখন কোন জাতি অথবা দল যুদ্ধে রত ছিল না। স্পষ্টরূপে, শান্তি মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। অতএব প্রশ্ন হচ্ছে, আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য মানুষের সমস্ত প্রচেষ্টাগুলি কেন ব্যর্থ হয়েছে এবং স্থায়ী প্রকৃত শান্তি নিয়ে আসতে কেন মানবজাতি অসমর্থ?
৫. শান্তির জন্য মানবজাতির প্রচেষ্টাগুলি বার বার কেন ব্যর্থ হয়েছে?
৫ সহজ উত্তরটি হল, মানবজাতি প্রকৃত শান্তির সঠিক উৎসের প্রতি ফেরেনি। শয়তান দিয়াবলের প্রভাবের অধীনে মানুষেরা এমন সংগঠনগুলি সৃষ্টি করেছে, যেগুলি তাদের নিজেদের দুর্বলতা এবং অনৈতিকতার শিকার হয়েছে—তাদের লোভ এবং উচ্চাশা, তাদের ক্ষমতা এবং বিখ্যাত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। তারা উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে গিয়েছে এবং সংগঠন ও গবেষণাগার স্থাপন করেছে যা কেবলমাত্র নিপীড়ন এবং ধ্বংসের অধিকতর উপায়গুলিকেই উদ্ভাবন করেছে। মানবজাতি কোন্ উৎসের প্রতি পরিচালিত হয়েছে? তারা কোন্ দিকে তাকিয়েছে?
৬, ৭. (ক) জাতিপুঞ্জ নিজের জন্য কোন্ নথি স্থাপন করেছে? (খ) রাষ্ট্রসংঘের নথি কী?
৬ বিগত ১৯১৯ সালে, জাতিগণ স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিপুঞ্জের উপর তাদের আস্থা স্থাপন করেছিল। ১৯৩৫ সালে মুসোলিনির ইথিওপিয়া আক্রমণ এবং ১৯৩৬ সালে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে, সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৩৯ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার সাথে সাথে জাতিপুঞ্জ বিস্মৃতিতে তলিয়ে গিয়েছিল। তথা-কথিত সেই শান্তি এমনকি ২০ বছরের জন্যও স্থায়ী হয়নি।
৭ রাষ্ট্রসংঘ সম্বন্ধে কী বলা যায়? এটি কি পৃথিবীব্যাপী স্থায়ী শান্তির কোন প্রকৃত আশা প্রদান করেছে? কখনই নয়। ১৯৪৫ সালে এর শুরুর সময় থেকে ১৫০টিরও বেশি যুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংঘাত ঘটেছে! এটি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, যুদ্ধ এবং এর উৎস সম্বন্ধে একজন কানাডার ছাত্র গুইন ডায়ার রাষ্ট্রসংঘকে “একটি অবৈধ হস্তক্ষেপকারী সংগঠন যা শিকারভূমির রক্ষকে পরিণত হয়েছে, সাধুদের এক সম্মিলিত সংগঠনে নয়” এবং “একটি ক্ষমতাহীন বড় বড় কথার প্রতিষ্ঠান হিসাবে” বর্ণনা করেছিলেন।—তুলনা করুন যিরমিয় ৬:১৪; ৮:১৫.
৮. শান্তি সম্বন্ধে তাদের আলোচনা সত্ত্বেও জাতিগণ কী করে চলেছে? (যিশাইয় ৫৯:৮)
৮ শান্তি সম্বন্ধে আলোচনা সত্ত্বেও, জাতিগণ ক্রমাগত অস্ত্র আবিষ্কার এবং উৎপাদন করেই চলেছে। যে দেশগুলি শান্তি সম্মেলনগুলির দায়িত্বভার গ্রহণ করে, প্রায় ক্ষেত্রে তারাই সেই ব্যক্তি যারা অস্ত্র উৎপাদনে নেতৃত্ব দেয়। এই দেশগুলির শক্তিশালী বাণিজ্যিক মুনাফা, ভূমিতে পাতা নারকীয় মাইনগুলিসহ প্রাণঘাতী যুদ্ধোপকরণগুলি উৎপাদনকে উন্নীত করে, যা প্রতি বছর প্রায় ২৬,০০০ বেসামরিক প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের হত্যা অথবা বিকলাঙ্গ করে। লোভ এবং দুর্নীতি হচ্ছে প্ররোচনাদায়ক শক্তি। ঘুষ এবং দৌরাত্ম্যমূলক কার্যকলাপ হচ্ছে আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিছু রাজনীতিবিদ্গণ এই উৎসের মাধ্যমে নিজেদের ধনবান করে।
৯, ১০. জগতের বিশেষজ্ঞগণ যুদ্ধ এবং মানুষের প্রচেষ্টাগুলি সম্বন্ধে কী লক্ষ্য করেছে?
৯ ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে পোলিশ পদার্থবিদ্ এবং শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী যোসেফ রট্ব্ল্যাট জাতিগুলিকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “[একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতা] প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় হল যুদ্ধকে সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত করা।” আপনি কি মনে করেন যে এটি সম্ভবত ঘটবে? ১৯২৮ সাল থেকে শুরু করে, ৬২টি জাতি কেলগ্-ব্রায়েণ্ড চুক্তিকে অনুমোদন করেছিল, মতভেদ নিষ্পত্তির একটি উপায় হিসাবে যুদ্ধকে প্রত্যাহার করেছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধ স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করেছিল যে চুক্তিটি সেই কাগজেরও সমমূল্য ছিল না, যাতে এটি লেখা হয়েছিল।
১০ অনস্বীকার্যরূপে, যুদ্ধ মানবজাতির ইতিহাসের পথে অবিরত এক বিঘ্নজনক পাথর হয়ে এসেছে। গুইন ডায়ার যেমন লিখেছিলেন, “যুদ্ধ হচ্ছে মানব সভ্যতার একটি মুখ্য ভিত্তি এবং এর ইতিহাস নির্দিষ্টভাবে সভ্যতার মতই সমদীর্ঘ।” হ্যাঁ, কার্যতঃ প্রত্যেক সভ্যতা এবং সাম্রাজ্যের তাদের নিজস্ব সম্মানিত সামরিক নেতাবৃন্দ, সংরক্ষিত সৈন্য, প্রসিদ্ধ যুদ্ধগুলি, অতিপবিত্র সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রচুররূপে সঞ্চিত অস্ত্র সম্ভার রয়েছে। যাইহোক, ধ্বংসাত্মক এবং জীবন হানিকর উভয় ক্ষেত্রে, আমাদের শতাব্দী অন্য যে কোন শতাব্দীর চেয়ে যুদ্ধের জন্য বেশি চিহ্নিত।
১১. শান্তির জন্য তাদের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে জগতের নেতারা কোন্ মৌলিক বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছে?
১১ এটি সুস্পষ্ট যে, জগতের নেতারা যিরমিয় ১০:২৩ পদের মৌলিক প্রজ্ঞাকে অবজ্ঞা করেছে: “হে সদাপ্রভু, আমি জানি, মনুষ্যের পথ তাহার বশে নয়, মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” ঈশ্বরের অস্তিত্ব ব্যতিরেকে প্রকৃত শান্তি হতে পারে না। তাহলে, এই সমস্ত কি বোঝায় যে, যুদ্ধ এক সভ্য সমাজের জন্য অপরিহার্য? এর অর্থ কি এই যে শান্তি—প্রকৃত শান্তি—একটি অসম্ভব স্বপ্ন?
মূল কারণটিকে বোঝা
১২, ১৩. (ক) যুদ্ধের মৌলিক, অদৃশ্য কারণ হিসাবে বাইবেল কী প্রকাশ করে? (খ) জগতের সমস্যাগুলির প্রকৃত সমাধানের উপর থেকে শয়তান কিভাবে মানবজাতির দৃষ্টিকে সরিয়ে নিয়েছে?
১২ ঐ প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে হলে, আমাদের যুদ্ধের কারণগুলি বোঝা প্রয়োজন। বাইবেল স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে বিদ্রোহী দূত শয়তান হচ্ছে আদি “নরঘাতক” ও “মিথ্যাবাদী” এবং “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (যোহন ৮:৪৪; ১ যোহন ৫:১৯) তার পরিকল্পনাগুলিকে আরও বাস্তবায়িত করার জন্য সে কী করেছে? ২ করিন্থীয় ৪:৩, ৪ পদে আমরা পড়ি: “কিন্তু আমাদের সুসমাচার যদি আবৃত থাকে, তবে যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদেরই কাছে আবৃত থাকে। তাহাদের মধ্যে এই যুগের দেব অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে, যেন ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁহার গৌরবের সুসমাচার-দীপ্তি তাহাদের প্রতি উদয় না হয়।” শয়তান জগতের সমস্যার সমাধান হিসাবে মানবজাতির দৃষ্টি ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীভূত করা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সম্ভাব্য সমস্ত কিছু করে। সে লোকেদের বিভেদ সৃষ্টিকারী সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় তথ্যগুলির মাধ্যমে অন্ধ ও পথভ্রষ্ট করে, যাতে করে মনে হয় যে এইগুলি ঈশ্বরের শাসনের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী জাতীয়তাবাদের আলোড়ন হল এর একটি উদাহরণ।
১৩ শয়তান দিয়াবল জাতীয়তাবাদ এবং উপজাতীয়তাবাদ অর্থাৎ একটি জাতি, বর্ণ অথবা উপজাতি অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এই বিশ্বাসকে উন্নীত করে। গভীর-প্রোথিত ঘৃণাগুলি যা শতাব্দী ধরে চেপে রাখা হয়েছিল, সেগুলিকে পুনর্জীবিত করা হয়েছে অধিকতর যুদ্ধ এবং সংঘর্ষগুলিতে ইন্ধন যোগাতে। ইউনেস্কোর প্রধান-পরিচালক ফেডারিকো মেয়র এই প্রবণতার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “এমনকি যেখানে সহনশীলতা বিদ্যমান ছিল সেখানে বিদেশীদের প্রতি ভীতি অধিকতর স্পষ্ট হয়ে উঠছে এবং উগ্র স্বাদেশিকতা অথবা বর্ণবৈষম্যবাদমূলক মন্তব্যগুলি যা মনে করা হত অতীতের বিষয়, তা এখন প্রায়ই অধিক থেকে অধিকতর মাত্রায় শোনা যাচ্ছে।” এর ফল কী হয়েছে? প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ায় জঘন্য নির্দয় গণহত্যা এবং রুয়াণ্ডার উপজাতিগত রক্তস্নান এইরূপ দুটি ঘটনা, যা সংবাদের শিরোনামে পরিণত হয়েছে।
১৪. কিভাবে প্রকাশিত বাক্য ৬:৪ পদ আমাদের দিনে যুদ্ধ এবং এর প্রভাবকে চিত্রিত করে?
১৪ বাইবেল ভাববাণী করেছিল যে এই বিধি ব্যবস্থার শেষে এক লোহিত বর্ণ অশ্ব যা যুদ্ধকে চিত্রিত করে, পৃথিবীব্যাপী দ্রুতবেগে পরিভ্রমণ করবে। প্রকাশিত বাক্য ৬:৪ পদে আমরা পড়ি: “আর একটী অশ্ব বাহির হইল, সেটী লোহিতবর্ণ, এবং যে তাহার উপরে বসিয়া আছে, তাহাকে ক্ষমতা দত্ত হইল, যেন সে পৃথিবী হইতে শান্তি অপহরণ করে, আর যেন মনুষ্যেরা পরস্পরকে বধ করে; এবং একখান বৃহৎ খড়্গ তাহাকে দত্ত হইল।” ১৯১৪ সাল থেকে আমরা এই রূপক অশ্বারোহীকে দেখেছি যে “শান্তি অপহরণ করে,” এবং জাতিগণ ক্রমাগত লড়াই করে চলেছে ও যুদ্ধে রত থেকেছে।
১৫, ১৬. (ক) যুদ্ধ এবং হত্যাকাণ্ডগুলিতে ধর্ম কী ভূমিকা নিয়েছে? (খ) ধর্মগুলি যা করেছে তা যিহোবা কোন্ দৃষ্টিতে দেখেন?
১৫ এই যুদ্ধ এবং হত্যাকাণ্ডগুলিতে যা অবশ্যই উপেক্ষা করা যায় না তা হচ্ছে ধর্মের ভূমিকা। মানবজাতির রক্তাক্ত ইতিহাসের দায়িত্ব অধিক মাত্রায় মিথ্যা ধর্মের ভ্রান্ত পরিচালনার প্রভাবের উপর আরোপ করা যেতে পারে। ক্যাথলিক ঈশ্বরতত্ত্ববিদ হান্স ক্যুং লিখেছিলেন: “এই বিষয়ে কোন বিতর্কই নেই যে, [ধর্মগুলি] সাংঘাতিকভাবে নেতিবাচক, ধ্বংসাত্মক ভূমিকা নিয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত ভীষণভাবে অবদান রেখে চলেছে। অত্যধিক সংগ্রাম, রক্তাক্ত সংঘাত, বাস্তবিকই ‘ধর্মীয় যুদ্ধগুলির’ দায়িত্ব তাদের উপর বর্তায়; . . . আর দুটি বিশ্ব যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।”
১৬ হত্যাকাণ্ড এবং যুদ্ধগুলিতে মিথ্যা ধর্মের ভূমিকাকে যিহোবা ঈশ্বর কোন্ দৃষ্টিতে দেখেন? মিথ্যা ধর্ম সম্বন্ধে ঈশ্বরের অভিযোগ প্রকাশিত বাক্য ১৮:৫ পদে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল, যা উল্লেখ করে: “উহার পাপ আকাশ পর্য্যন্ত সংলগ্ন হইয়াছে এবং ঈশ্বর উহার অপরাধ সকল স্মরণ করিয়াছেন।” জগতের রাজনৈতিক শাসকদের সাথে মিথ্যা ধর্মের সহযোগিতা এমন রক্ত দোষ, এত বেশি স্তূপাকারে পুঞ্জীভূত পাপের কারণস্বরূপ হয়েছে যে যিহোবা সম্ভবত কখনই তা উপেক্ষা করতে পারেন না। প্রকৃত শান্তির পথে এই দুরূহ বাধাকে তিনি শীঘ্রই দূর করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২১.
শান্তির পথ
১৭, ১৮. (ক) অনন্তকাল স্থায়ী শান্তি সম্ভব, তা বিশ্বাস করা কেন শুধুমাত্র একটি অবাস্তব স্বপ্ন নয়? (খ) প্রকৃত শান্তি যে আসবে তা নিশ্চিত করার জন্য যিহোবা ইতিমধ্যেই কী করেছেন?
১৭ যদি মানুষেরা রাষ্ট্রসংঘের মত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রকৃত এবং স্থায়ী শান্তি আনতে না পারে, তবে কোন্ উৎস থেকে প্রকৃত শান্তি আসবে এবং কিভাবে? অনন্তকাল স্থায়ী শান্তি সম্ভব, এটি বিশ্বাস করা কি কেবলমাত্র একটি অবাস্তব স্বপ্ন? না, যদি আমরা শান্তির সঠিক উৎসের প্রতি ফিরি। আর তিনি কে? গীতসংহিতা ৪৬:৯ পদ আমাদের এই বলে উত্তর দেয় যে, যিহোবা “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন; তিনি ধনু ভগ্ন করেন, বড়শা খণ্ড খণ্ড করেন, তিনি রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দেন।” আর যিহোবা ইতিমধ্যেই যুদ্ধ নিবৃত্ত করা এবং প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু করেছেন। কিভাবে? ১৯১৪ সালে খ্রীষ্ট যীশুকে তাঁর রাজ্যের ন্যায্য সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে এবং শান্তির জন্য মানবজাতির ইতিহাসে সর্বকালের বৃহৎ শিক্ষামূলক অভিযান প্রবর্তিত করে। যিশাইয় ৫৪:১৩ পদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলি আমাদের পুনঃনিশ্চিত করে: “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে, আর তোমার সন্তানদের পরম শান্তি হইবে।”
১৮ এই ভবিষ্যদ্বাণীটি কারণ এবং ফলাফলের নীতিকে প্রদর্শন করে—যেটি হচ্ছে, প্রত্যেকটি ফলাফলেরই নিজস্ব কারণ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে যিহোবার শিক্ষা হচ্ছে—কারণটি—যা যুদ্ধপ্রিয় লোকেদের শান্তি-প্রিয় লোকে রূপান্তরিত করে, যাদের ঈশ্বরের সাথে শান্তি রয়েছে। ফলাফলটি হচ্ছে হৃদয়ের পরিবর্তন, যা লোকেদের শান্তি-প্রিয় করে তোলে। এই শিক্ষা যা লোকেদের হৃদয় এবং মন পরিবর্তন করে, এমনকি বর্তমানেও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে, যতই লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিরা “শান্তিরাজ,” যীশু খ্রীষ্টের উদাহরণকে অনুসরণ করছে।—যিশাইয় ৯:৬.
১৯. প্রকৃত শান্তি সম্বন্ধে যীশু কী শিখিয়েছিলেন?
১৯ আর প্রকৃত শান্তি সম্বন্ধে যীশু কী শিখিয়েছিলেন? তিনি শুধুমাত্র জাতিগণের মধ্যে শান্তি সম্বন্ধেই বলেননি, কিন্তু লোকেদের মধ্যে তাদের সম্পর্কের এবং অন্তরস্থ শান্তির কথাও বলেছিলেন, যা এক উত্তম বিবেক থেকে এসে থাকে। যোহন ১৪:২৭ পদে তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে যীশুর এই বাক্যগুলি আমরা পড়ি: “শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি; জগৎ যেরূপ দান করে, আমি সেরূপ দান করি না। তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক, ভীতও না হউক।” কিভাবে যীশুর শান্তি জগতের থেকে ভিন্ন ছিল?
২০. কিসের মাধ্যমে যীশু প্রকৃত শান্তি আনবেন?
২০ প্রথমতঃ, যীশুর শান্তি, তাঁর রাজ্যের বার্তার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিল। তিনি জানতেন, যে যীশু এবং ১৪৪,০০০ জন সহশাসকদের দ্বারা গঠিত ধার্মিক স্বর্গীয় সরকার, যুদ্ধ এবং যুদ্ধ প্ররোচকদের এক শেষ নিয়ে আসবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩) তিনি জানতেন যে এটি শান্তিপূর্ণ পরমদেশীয় পরিস্থিতি নিয়ে আসবে যেটি সম্বন্ধে তিনি সেই দুষ্কর্মকারী যে তাঁর পাশে মারা গিয়েছিল তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যীশু তাকে স্বর্গীয় রাজ্যে একটি স্থান দেওয়ার প্রস্তাব করেননি, কিন্তু তিনি বলেছিলেন: “আজই আমি তোমাকে সত্য বলছি, তুমি পরমদেশে আমার সাথে থাকবে।”—লূক ২৩:৪৩, NW.
২১, ২২. (ক) প্রকৃত শান্তি কোন্ অপূর্ব নিশ্চিত আশাকে অন্তর্ভুক্ত করে? (খ) সেই আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
২১ যীশু এও জানতেন যে, তাঁর রাজ্য সেই সমস্ত শোকার্ত ব্যক্তিদের জন্য সান্ত্বনা নিয়ে আসবে, যারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস অনুশীলন করে। তাঁর শান্তি পুনরুত্থানের অপূর্ব নিশ্চিত আশাকে অন্তর্ভুক্ত করে। যোহন ৫:২৮, ২৯ পদে তাঁর উৎসাহজনক বাক্যগুলি স্মরণ করুন: “ইহাতে আশ্চর্য্য মনে করিও না; কেননা এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং যাহারা সৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা জীবনের পুনরুত্থানের জন্য, ও যাহারা অসৎকার্য্য করিয়াছে, তাহারা বিচারের পুনরুত্থানের জন্য বাহির হইয়া আসিবে।”
২২ আপনি কি সেই সময়ের জন্য প্রতীক্ষা করেন? আপনি কি মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন? আপনি কি তাদের পুনরায় দেখতে আকাঙ্ক্ষী? তাহলে, যীশু যে শান্তি প্রদান করেন তা গ্রহণ করুন। লাসারের বোন মার্থার ন্যায় বিশ্বাস রাখুন, যিনি যীশুকে বলেছিলেন: “আমি জানি, শেষ দিনে পুনরুত্থানে সে উঠিবে।” কিন্তু মার্থাকে দেওয়া যীশুর সেই উল্লাসকর উত্তরটি লক্ষ্য করুন: “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে; আর যে কেহ জীবিত আছে, এবং আমাতে বিশ্বাস করে, সে কখনও মরিবে না; ইহা কি বিশ্বাস কর?”—যোহন ১১:২৪-২৬.
২৩. প্রকৃত শান্তি অর্জন করতে ঈশ্বরের বাক্যের যথার্থ জ্ঞান কেন অত্যাবশ্যক?
২৩ আপনিও বিশ্বাস করতে পারেন এবং সেই প্রতিজ্ঞা থেকে উপকৃত হতে পারেন। কিভাবে? ঈশ্বরের বাক্যের যথার্থ জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে। লক্ষ্য করুন, প্রেরিত পৌল কিভাবে যথার্থ জ্ঞানের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন: “আমরাও, . . . তোমাদের নিমিত্তে প্রার্থনা ও বিনতি করিতে ক্ষান্ত হই নাই, যেন তোমরা সমস্ত আত্মিক জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে তাঁহার ইচ্ছার তত্ত্বজ্ঞানে পূর্ণ হও, আর তদ্দ্বারা প্রভুর যোগ্যরূপে সর্ব্বতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ কর, সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্ ও ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু হও।” (কলসীয় ১:৯, ১০) এই যথার্থ জ্ঞান আপনাকে প্রত্যয়িত করবে যে, যিহোবা ঈশ্বর হচ্ছেন প্রকৃত শান্তির উৎস। এটি আপনাকে আরও বলবে যে এখন আপনাকে কী করতে হবে যাতে করে আপনি গীতরচকের সাথে যোগ দিতে পারেন এটি বলার দ্বারা: “আমি শান্তিতে শয়ন করিব, নিদ্রাও যাইব; কেননা, হে সদাপ্রভু, তুমিই একাকী আমাকে নির্ভয়ে বাস করিতে দিতেছ।”—গীতসংহিতা ৪:৮.
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ শান্তির জন্য মানুষের প্রচেষ্টাগুলি বার বার কেন ব্যর্থ হয়েছে?
◻ যুদ্ধের মূল কারণ কী?
◻ স্থায়ী শান্তি কেন এক অবাস্তব স্বপ্ন নয়?
◻ প্রকৃত শান্তির উৎস কী?
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রকৃত শান্তি একটি স্বপ্ন নয়। এটি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
১৯১৪ সাল থেকে রূপক লোহিত বর্ণ অশ্বের আরোহী পৃথিবী থেকে শান্তি অপহরণ করেছে
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
ধর্ম এবং রাষ্ট্রসংঘ কি শান্তি আনতে পারবে?
[সজন্যে]
UN photo