জীবনের দৌড়ে হাল ছেড়ে দেবেন না!
“আইস . . . ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি।”—ইব্রীয় ১২:১.
১, ২. এই শেষকালে কোন্ উত্তেজনাকর ঘটনাগুলি যিহোবার দাসেদের রোমাঞ্চিত করেছে?
আমরা এক উত্তেজনাকর ও সংকটময় সময়ে বাস করছি। ৮০ বছরেরও আগে, ১৯১৪ সালে, যীশু ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের রাজা হিসাবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ‘প্রভুর দিন’ ও সেই সাথে এই বিধিব্যবস্থার “শেষকাল” শুরু হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১:১০; দানিয়েল ১২:৯) সেই সময় থেকে খ্রীষ্টানদের জন্য জীবনের দৌড়ে তৎপরতা আরও বেশি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। যিহোবার স্বর্গীয় রথ, তাঁর স্বর্গস্থ সংগঠন যা যিহোবার উদ্দেশ্যগুলি পরিপূর্ণ করতে অবিরতভাবে এগিয়ে চলছে তার সাথে সমতালে অগ্রসর হওয়ার জন্য ঈশ্বরের দাসেরা তাদের নিজেদের সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত রেখেছেন।—যিহিষ্কেল ১:৪-২৮; ১ করিন্থীয় ৯:২৪.
২ অনন্ত জীবনের দিকে ‘ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ানোর’ সময় ঈশ্বরের লোকেরা কি আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন? হ্যাঁ, অবশ্যই! তারা যীশুর অবশিষ্ট ভাইদের একত্রিত হতে দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছেন আর তারা এটি উপলব্ধি করে আনন্দিত হন যে ১,৪৪,০০০ এর অবশিষ্টাংশদের চূড়ান্ত মুদ্রাঙ্কন প্রায় শেষ হতে চলেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৩, ৪) এছাড়া, তারা এটি উপলব্ধি করেও উচ্ছ্বসিত হন যে যিহোবার নিযুক্ত রাজা “পৃথিবীর শস্য” ছেদন করার জন্য তাঁর কাস্তা লাগিয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১৫, ১৬) আর কিধরনেরই না শস্যছেদন এটি! (মথি ৯:৩৭) এই পর্যন্ত ৫০ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তিকে একত্রিত করা হয়েছে—“প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক, তাহা গণনা করিতে সমর্থ কেহ ছিল না।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) যেহেতু কোন মানুষ তা গণনা করতে সমর্থ নয়, তাই চূড়ান্তভাবে সেই জনতা কত বৃহৎ হবে তা কেউই বলতে পারে না।
৩. কোন্ বিষয়গুলি সত্ত্বেও আমরা এক আনন্দপূর্ণ মনোভাব গড়ে তোলার জন্য সর্বদা চেষ্টা করব?
৩ এটি সত্য যে, যতই আমরা দৌড়ে দ্রুতগতি হই, শয়তান আমাদের হোঁচট খাওয়াতে বা ধীরগতি করে দিতে চেষ্টা করে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) আর যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও অন্য সমস্ত কষ্টকর পরিস্থিতি যা শেষকালকে চিহ্নিত করে তার মধ্যে দিয়ে দৌড়ানো সহজও নয়। (মথি ২৪:৩-৯; লূক ২১:১১; ২ তীমথিয় ৩:১-৫) তবুও, দৌড়ের শেষ সীমা যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, ততই আমাদের হৃদয় আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। আমরা সেইধরনের মনোভাব প্রতিফলিত করার জন্য কঠোরভাবে প্রচেষ্টা করি যা পৌল তার সময়ের সহখ্রীষ্টানদের রাখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা প্রভুতে সর্ব্বদা আনন্দ কর; পুনরায় বলিব, আনন্দ কর।”—ফিলিপীয় ৪:৪.
৪. ফিলিপীয় খ্রীষ্টানেরা কোন্ ধরনের মনোভাব প্রদর্শন করেছিলেন?
৪ নিঃসন্দেহে, যাদের উদ্দেশ্যে পৌল ওই বাক্যগুলি বলেছিলেন সেই খ্রীষ্টানেরা তাদের বিশ্বাসে আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন কারণ পৌল তাদের বলেছিলেন: “অবিরতভাবে প্রভুতে আনন্দ কর।” (ফিলিপীয় ৩:১, NW) ফিলিপীয়েরা এক উদার, প্রেমপূর্ণ মণ্ডলীস্বরূপ ছিলেন যারা উদ্যোগ ও উৎসাহের সাথে সেবা করেছিলেন। (ফিলিপীয় ১:৩-৫; ৪:১০, ১৪-২০) কিন্তু সমস্ত প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের এই মনোভাব ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, কিছু যিহূদী খ্রীষ্টান উদ্বিগ্নের কারণস্বরূপ হয়ে উঠেছিলেন যাদের উদ্দেশ্যে পৌল ইব্রীয় পুস্তকটি লিখেছিলেন।
‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ কর’
৫. (ক) ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের কোন্ ধরনের মনোভাব ছিল যখন প্রথম খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল? (খ) সা.কা. ৬০ সালের কিছু ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের মনোভাব সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।
৫ বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীটি স্বাভাবিক যিহূদী ও ধর্মান্তরিতদের নিয়ে গঠিত এবং সা.কা. ৩৩ সালে যিরূশালেমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিধরনের মনোভাব এটির ছিল? এমনকি তাড়নার সম্মুখেও এর উৎসাহ ও আনন্দ সম্বন্ধে জানার জন্য কেবলমাত্র প্রেরিত পুস্তকের প্রথম কয়েকটি অধ্যায় পড়াই একজনের জন্য যথেষ্ট। (প্রেরিত ২:৪৪-৪৭; ৪:৩২-৩৪; ৫:৪১; ৬:৭) কিন্তু, দশকগুলি অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে, অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল আর অনেক যিহূদী খ্রীষ্টানেরা জীবনের দৌড়ে স্পষ্টতই ধীরগতি হয়ে পড়েছিলেন। প্রায় সা.কা. ৬০ সালে বিদ্যমান তাদের অবস্থা সম্বন্ধে একটি তথ্যমূলক গ্রন্থ এইভাবে বলে: “নিস্তেজ ও পরিশ্রান্ত, অপূর্ণ প্রত্যাশা, আশাসিদ্ধির বিলম্বতা, অপরিণামদর্শিতা ও সর্ববিষয়ে সন্দেহপ্রবণ এক অবস্থা। তারা খ্রীষ্টান ছিলেন কিন্তু তাদের আহ্বানের মহিমা সম্বন্ধে তাদের খুব অল্পই উপলব্ধি ছিল।” কিভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা এইধরনের এক অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন? ইব্রীয়দের প্রতি (প্রায় সা.কা. ৬১ সালে লিখিত) পৌলের পত্রের কিছু অংশের বিবেচনা আমাদের এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করে। এইধরনের এক বিবেচনা আজকে আমাদের প্রত্যেককে অনুরূপ দুর্বল আধ্যাত্মিক অবস্থায় নিমজ্জিত হওয়াকে এড়িয়ে চলতে সাহায্য করবে।
৬. মোশির ব্যবস্থার অধীনে এবং যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করা উপাসনার মধ্যে কিছু পার্থক্য কী?
৬ ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা যিহূদীবাদ, এমন একটি পদ্ধতি যা মোশির মাধ্যমে যিহোবার দেওয়া ব্যবস্থা পালন করার দাবি করত, তার থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। সেই ব্যবস্থা আপাতরূপে অনেক যিহূদী খ্রীষ্টানদের ক্রমাগতভাবে আকৃষ্ট করে এসেছিল, সম্ভবত এই কারণে যে এটি বহু শতাব্দী ধরে যিহোবার সমীপবর্তী হওয়ার একমাত্র পথ ছিল আর যাজকত্ব, নিয়মিত বলি উৎসর্গ এবং যিরূশালেমে এক বিশ্ব বিখ্যাত মন্দিরসহ এটি একটি হৃদয়গ্রাহী উপাসনা পদ্ধতি ছিল। খ্রীষ্টতত্ত্ব এর থেকে ভিন্ন। এটি সেই প্রকার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির দাবি করে, যেমন মোশির ছিল যিনি “[ভবিষ্যৎ] পুরস্কারদানের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন” ও “যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (ইব্রীয় ১১:২৬, ২৭) স্পষ্টতই অনেক যিহূদী খ্রীষ্টানদের এইধরনের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব ছিল। উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে দৌড়ানোর পরিবর্তে তারা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিলেন।
৭. যে ব্যবস্থা থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি তা কিভাবে জীবনের দৌড়ে আমরা যেভাবে দৌড়াই তাকে প্রভাবিত করতে পারে?
৭ আজকেও কি এইরকম একই অবস্থা বিদ্যমান? প্রকৃতপক্ষে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে একইরকম নয়। তবুও, খ্রীষ্টানেরা এমন একটি বিধিব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসেন, যা খুবই গর্ব করে থাকে। জগৎ আকর্ষণীয় সুযোগগুলি প্রদান করে কিন্তু একই সময়ে, এটি লোকেদের কাছ থেকে অত্যধিক দাবি করে থাকে। এছাড়াও, আমরা অনেকেই এমন দেশগুলিতে বাস করি যেখানে সন্দেহপ্রবণ মনোভাব এক সাধারণ বিষয় আর লোকেদের মধ্যে এক স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি এইধরনের এক পদ্ধতি দ্বারা নিজেদের প্রভাবিত হতে দিই, তবে ‘আমাদের হৃদয়ের চক্ষু’ সহজেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যেতে পারে। (ইফিষীয় ১:১৮) আমরা কোথায় যাচ্ছি তা যদি পরিষ্কারভাবে নির্ণয় করতে না পারি, তাহলে জীবনের দৌড়ে আমরা কি করে উপযুক্তভাবে দৌড়াব?
৮. কিছু বিষয়গুলি কী যেখানে খ্রীষ্টতত্ত্ব ব্যবস্থার অধীনস্থ উপাসনার চেয়ে শ্রেষ্ঠ?
৮ যিহূদী খ্রীষ্টানদের উদ্দীপিত করার জন্য, পৌল মোশির ব্যবস্থার চেয়ে খ্রীষ্টীয় ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। এটি সত্য যে, যখন মাংসিক ইস্রায়েল জাতি ব্যবস্থার অধীনে যিহোবার লোক ছিল, তখন যিহোবা অনুপ্রাণিত ভাববাদীদের মাধ্যমে তাদের সাথে কথা বলেছিলেন। কিন্তু, পৌল বলেন, আজকে তিনি “পুত্ত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন। তিনি ইঁহাকেই সর্ব্বাধিকারী দায়াদ করিয়াছেন, এবং ইঁহারই দ্বারা যুগকলাপের রচনাও করিয়াছেন।” (ইব্রীয় ১:২) এছাড়াও, যীশু দায়ূদের বংশের সমস্ত রাজা, তাঁর “সখাগণ” থেকে মহান। তিনি এমনকি দূতেদের থেকেও উচ্চতর।—ইব্রীয় ১:৫, ৬, ৯.
৯. পৌলের দিনের যিহূদী খ্রীষ্টানদের মত, কেন আমাদের যিহোবা যা বলেন তার প্রতি “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা” প্রয়োজন?
৯ অতএব, পৌল যিহূদী খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই।” (ইব্রীয় ২:১) যদিও খ্রীষ্ট সম্বন্ধে জানা এক চমৎকার আশীর্বাদ, তবুও আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন ছিল। তাদের চতুর্দিকের যিহূদী জগতের প্রভাবকে প্রতিরোধ করার জন্য তাদের ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি গভীর মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। আমাদেরও, এই জগতের যে অবিরত অপপ্রচারের সম্মুখীন আমরা হচ্ছি তার পরিপ্রেক্ষিতে যিহোবা যা বলেন তার প্রতি “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা” প্রয়োজন। এর অর্থ উত্তম অধ্যয়নের অভ্যাস গড়ে তোলা ও একটি উত্তম বাইবেল পাঠের তালিকা বজায় রাখা। পরবর্তী সময়ে ইব্রীয়দের প্রতি তার পত্রে পৌল যেমন বলেন, এটি সভাগুলিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকা ও আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে অন্যদের কাছে ঘোষণা করাকেও বোঝায়। (ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) এইধরনের কর্মতৎপরতা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে সচেতন থাকতে সাহায্য করবে যাতে আমরা আমাদের গৌরবময় আশা থেকে দৃষ্টি হারিয়ে না ফেলি। আমরা যদি যিহোবার অভিপ্রায়গুলি দ্বারা আমাদের মন পূর্ণ করি, তবে এই জগৎ আমাদের প্রতি যা করতে পারে তার কোন কিছুর দ্বারাই আমরা আচ্ছন্ন হব না বা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ব না।—গীতসংহিতা ১:১-৩; হিতোপদেশ ৩:১-৬.
“তোমরা . . . পরস্পর চেতনা দেও”
১০. (ক) যিনি যিহোবার বাক্যের প্রতি অধিক আগ্রহের সাথে মনোযোগ না করেন তার প্রতি কী ঘটতে পারে? (খ) কিভাবে আমরা “পরস্পর চেতনা” দিতে পারি?
১০ আমরা যদি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলির প্রতি গভীর মনোযোগ না দিই, তাহলে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলি হয়ত অবাস্তব বলে মনে হতে পারে। এটি এমনকি প্রথম শতাব্দীতেও ঘটেছিল যখন মণ্ডলীগুলি সম্পূর্ণরূপে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের দ্বারা গঠিত ছিল আর কিছুজন প্রেরিত তখনও জীবিত ছিলেন। পৌল ইব্রীয়দের সতর্ক করেছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, দেখিও, [“সতর্ক হও,” “NW”] পাছে অবিশ্বাসের এমন মন্দ হৃদয় তোমাদের কাহারও মধ্যে থাকে যে, তোমরা জীবন্ত ঈশ্বর হইতে সরিয়া পড়। বরং তোমরা দিন দিন পরস্পর চেতনা দেও, যাবৎ ‘অদ্য’ নামে আখ্যাত সময় থাকে, যেন তোমাদের মধ্যে কেহ পাপের প্রতারণায় কঠিনীভূত না হয়।” (ইব্রীয় ৩:১২, ১৩) পৌলের “সতর্ক হও” অভিব্যক্তিটি সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। বিপদ ভীতি প্রদর্শন করে! বিশ্বাসের অভাব—‘পাপ’—হয়ত আমাদের হৃদয়ে বিকাশ লাভ করতে পারে আর আমরা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার পরিবর্তে তাঁর থেকে দূরে সরে যেতে পারি। (যাকোব ৪:৮) পৌল আমাদের “তোমরা . . . পরস্পর চেতনা দেও” কথাটি স্মরণ করিয়ে দেন। ভ্রাতৃ সংসর্গের উষ্ণতা আমাদের প্রয়োজন। “যে পৃথক্ হয় সে নিজ অভীষ্ট চেষ্টা করে, এবং সমস্ত বুদ্ধিকৌশলের বিরুদ্ধে উচ্চণ্ড হয়।” (হিতোপদেশ ১৮:১) এইধরনের সংসর্গের চাহিদা আজকে খ্রীষ্টানদের মণ্ডলীর সভা, অধিবেশন ও সম্মেলনগুলিতে নিয়মিত উপস্থিত হতে পরিচালিত করে।
১১, ১২. কেন আমাদের কেবল মৌলিক খ্রীষ্টীয় মতবাদগুলি জেনেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়?
১১ পরবর্তী সময়ে তার পত্রে, পৌল এই অতিরিক্ত অমূল্য পরামর্শটি দেন: “এত কালের মধ্যে শিক্ষক হওয়া তোমাদের উচিত ছিল, কিন্তু কেহ যে তোমাদিগকে ঈশ্বরীয় বচনকলাপের আদিম কথার অক্ষরমালা শিক্ষা দেয়, ইহা তোমাদের পক্ষে পুনর্ব্বার আবশ্যক হইয়াছে; এবং তোমরা এমন লোক হইয়া পড়িয়াছ, যাহাদের দুগ্ধে প্রয়োজন, কঠিন খাদ্যে নয়। . . . কঠিন খাদ্য সেই সিদ্ধবয়স্কদেরই জন্য, যাহাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল অভ্যাস প্রযুক্ত সদসৎ বিষয়ের বিচারণে পটু হইয়াছে।” (ইব্রীয় ৫:১২-১৪) স্পষ্টতই, কিছু যিহূদী খ্রীষ্টান বোধগম্যতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তারা ব্যবস্থা ও ত্বক্ছেদ সম্বন্ধীয় বৃদ্ধিরত দীপ্তি গ্রহণ করতে ধীরগতি হয়ে পড়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:২৭-২৯; গালাতীয় ২:১১-১৪; ৬:১২, ১৩) কেউ কেউ তখনও হয়ত সাপ্তাহিক বিশ্রামবার ও আনুষ্ঠানিক বাৎসরিক প্রায়শ্চিত্তের দিনের মত পরম্পরাগত অভ্যাসগুলিকে শ্রদ্ধা করতেন।—কলসীয় ২:১৬, ১৭; ইব্রীয় ৯:১-১৪.
১২ সুতরাং, পৌল বলেন: “আইস, আমরা খ্রীষ্ট-বিষয়ক আদিম কথা পশ্চাৎ ফেলিয়া সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর হই।” (ইব্রীয় ৬:১) একজন ম্যারাথন দৌড়বিদ্ যিনি তার খাদ্যতালিকার প্রতি গভীর মনোযোগ দেন তিনি দীর্ঘ, কঠোর দৌড়ে টিকে থাকতে পারেন। একইভাবে, একজন খ্রীষ্টান যিনি আধ্যাত্মিক পুষ্টির প্রতি গভীর মনোযোগ দেন—নিজেকে মৌলিক, ‘আদিম কথার’ মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন না—তিনি আরও কার্যকারীভাবে ধাবনক্ষেত্রে থাকতে ও তা সম্পূর্ণ করতে সমর্থ হবেন। (২ তীমথিয় ৪:৭ পদের সাথে তুলনা করুন।) এর অর্থ সত্যের “প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা”-র প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করা আর এইভাবে পরিপক্বতার দিকে অগ্রসর হওয়া।—ইফিষীয় ৩:১৮.
“ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে”
১৩. কিভাবে ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা অতীতে তাদের বিশ্বাস প্রদর্শন করেছিলেন?
১৩ সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর ঠিক পরেই, যিহূদী খ্রীষ্টানেরা তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও অটল ছিলেন। (প্রেরিত ৮:১) হয়ত পৌলের মনে এই বিষয়টি ছিল যখন তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা . . . পূর্ব্বকার সেই সময় স্মরণ কর, যখন তোমরা দীপ্তিপ্রাপ্ত হইয়া নানা দুঃখভোগরূপ ভারী সংগ্রাম সহ্য করিয়াছিলে।” (ইব্রীয় ১০:৩২) এইধরনের বিশ্বস্ততাপূর্ণ ধৈর্য, ঈশ্বরের প্রতি তাদের প্রেম প্রদর্শন করেছিল এবং তাঁর সম্মুখে কথা বলার জন্য তাদের সাহসী করেছিল। (১ যোহন ৪:১৭) পৌল তাদের উপদেশ দিয়েছিলেন যে যেন তারা বিশ্বাসের অভাবের কারণে তা ত্যাগ না করেন। তিনি তাদের পরামর্শ দেন: “ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়া প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হও। কারণ ‘আর অতি অল্প কাল বাকী অছে, যিনি আসিতেছেন, তিনি আসিবেন, বিলম্ব করিবেন না।’”—ইব্রীয় ১০:৩৫-৩৭.
১৪. যিহোবার সেবায় এমনকি অনেক বছর অতিবাহিত করার পরেও কোন্ তথ্যগুলি আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে?
১৪ আজকে আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের মধ্যে অধিকাংশই উদ্যোগী ছিলাম যখন আমরা প্রথম খ্রীষ্টীয় সত্য শিখেছিলাম। আমাদের কি এখনও সেই উদ্যোগ আছে? অথবা আমরা কি ‘আমাদের প্রথম প্রেম ত্যাগ করিয়াছি’? (প্রকাশিত বাক্য ২:৪) আমরা কি শীতল হয়ে গিয়েছি, হয়ত কিছুটা বিভ্রান্ত বা হর্মাগিদোনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি? তাহলে, থামুন আর বিবেচনা করুন। আগের তুলনায় সত্য এখন কম চমৎকার নয়। যীশু এখনও আমাদের স্বর্গীয় রাজা। আমরা এখনও পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবনের আশা রাখি ও এখনও যিহোবার সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে। আর কখনও ভুলে যাবেন না: “যিনি আসিতেছেন, তিনি আসিবেন, বিলম্ব করিবেন না।”
১৫. যীশুর মত কিভাবে কিছু খ্রীষ্টানেরা তিক্ত তাড়নায় ধৈর্য ধরেছিলেন?
১৫ অতএব, ইব্রীয় ১২:১, ২ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের বাক্যগুলি খুবই উপযুক্ত: “আইস, আমরাও সমস্ত বোঝা ও সহজ বাধাজনক পাপ [বিশ্বাসের অভাব] ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়ি; বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি; তিনিই আপনার সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত ক্রুশ সহ্য করিলেন, অপমান তুচ্ছ করিলেন, এবং ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইয়াছেন।” এই শেষকালে ঈশ্বরের দাসেরা অনেক ক্ষেত্রেই ধৈর্য ধরেছেন। যীশুর মত, যিনি যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন, আমাদের কিছু ভাই ও বোনেরা নির্মম তাড়না যেমন: বন্দী শিবির, অত্যাচার, ধর্ষণ এমনকি মৃত্যুতেও বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরেছেন। (১ পিতর ২:২১) আমাদের হৃদয় কি প্রেমে প্রসারিত হয় না যখন আমরা তাদের আনুগত্যতা বিবেচনা করি?
১৬, ১৭. (ক) তাদের বিশ্বাসের কোন্ প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলির সাথে অধিকাংশ খ্রীষ্টানদের লড়াই করতে হয়? (খ) কোন্ বিষয়গুলি স্মরণ করা আমদের জীবনের দৌড়ে, দৌড় অব্যাহত রাখতে সাহায্য করবে?
১৬ যাইহোক, অধিকাংশের প্রতি পৌলের পরের বাক্যগুলি প্রযোজ্য: “তোমরা পাপের সহিত যুদ্ধ করিতে করিতে এখনও রক্তব্যয় পর্য্যন্ত প্রতিরোধ কর নাই।” (ইব্রীয় ১২:৪) তৎসত্ত্বেও, এই ব্যবস্থায় সত্যের পথ আমাদের কারও জন্যই সহজ নয়। উপহাস সহ্য করে বা পাপ করার জন্য যে চাপ আসে তা প্রতিরোধ করে, কেউ কেউ চাকুরি ক্ষেত্রে বা বিদ্যালয়ে “পাপীগণের . . . প্রতিবাদ” দ্বারা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন। (ইব্রীয় ১২:৩) তীব্র প্রলোভন কিছু জনের ঈশ্বরের উচ্চ মানগুলি বজায় রাখার দৃঢ়সংকল্প নষ্ট করে দিয়েছে। (ইব্রীয় ১৩:৪, ৫) ধর্মভ্রষ্টেরা অল্প কিছু জনের আধ্যাত্মিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করেছে যারা তাদের বিষাক্ত অপপ্রচারে মনোযোগ দিয়েছেন। (ইব্রীয় ১৩:৯) ব্যক্তিত্বের সমস্যাগুলি অন্যান্যদের আনন্দকে কেড়ে নিয়েছে। আমোদপ্রমোদ ও অবসর বিনোদনের প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব কিছু খ্রীষ্টানদের দুর্বল করে দিয়েছে। আর অধিকাংশই এই বিধিব্যবস্থায় জীবনধারণের সমস্যাগুলির দ্বারা চাপ অনুভব করেন।
১৭ এটি সত্য যে, এই পরিস্থিতিগুলির কোনটিই ‘রক্তব্যয়ের মত প্রতিরোধ’ গড়ে তোলে না। আর কয়েকটি হয়ত আমাদের নেওয়া ভুল সিদ্ধান্তগুলির জন্যই হয়ে থাকে। কিন্তু এই সমস্তই আমাদের বিশ্বাসের প্রতি এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্থাপন করে। সেই কারণে আমাদের যীশুর ধৈর্যের মহৎ উদাহরণের প্রতি দৃষ্টি রাখা উচিত। আমরা যেন কখনই ভুলে না যাই যে আমাদের আশা কতটা চমৎকার। আমরা যেন কখনই আমাদের প্রত্যয় না হারাই যে যিহোবা “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) তাহলেই, জীবনের দৌড়ে, দৌড় অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক শক্তি আমাদের থাকবে।
আমরা ধৈর্য ধরতে পারি
১৮, ১৯. কোন্ ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি ইঙ্গিত করে যে যিরূশালেমে ইব্রীয় খ্রীষ্টানেরা পৌলের অনুপ্রাণিত পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন?
১৮ পৌলের পত্রের প্রতি যিহূদী খ্রীষ্টানেরা কিভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? ইব্রীয়দের প্রতি পত্রটি লেখার প্রায় ছয় বছর পরে যিহূদা যুদ্ধে রত হয়েছিল। সা.কা. ৬৬ সালে, রোমীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেম ঘেরাও করেছিল যা যীশুর বাক্যগুলি পরিপূর্ণ করে: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্ঠিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট।” (লূক ২১:২০) কিন্তু খ্রীষ্টানেরা যারা তখন যিরূশালেমে থাকবে তাদের উপকারের জন্য যীশু বলেছিলেন: “তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক।” (লূক ২১:২১) অতএব, রোমের সাথে যুদ্ধ এক পরীক্ষার সৃষ্টি করেছিল: যিহূদী খ্রীষ্টানেরা কি যিরূশালেম পরিত্যাগ করবেন যেটি যিহূদী উপাসনার কেন্দ্রস্থল ও প্রতাপান্বিত মন্দিরের স্থান ছিল?
১৯ হঠাৎ ও অজ্ঞাত কারণে, রোমীয়রা ফিরে গিয়েছিল। সম্ভবত, ধার্মিক যিহূদীরা এটিকে ঈশ্বর যে তাদের পবিত্র নগর রক্ষা করেছেন তার একটি প্রমাণ হিসাবে দেখেছিলেন। খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? ইতিহাস আমাদের জানায় যে তারা পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর, সা.কা. ৭০ সালে রোমীয়রা ফিরে এসেছিল আর আতঙ্কজনক জীবনহানী ঘটিয়ে যিরূশালেমকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিল। যোয়েলের দ্বারা ভাববাণীকৃত ‘সদাপ্রভুর দিন’ যিরূশালেমের উপর এসেছিল। কিন্তু বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা সেখানে ছিলেন না। তারা ‘রক্ষা পেয়েছিলেন।’—যোয়েল ২:৩০-৩২; প্রেরিত ২:১৬-২১.
২০. মহৎ “সদাপ্রভুর দিন” যে নিকটে তা জেনে আমাদের কোন্ পথে পরিচালিত হওয়া উচিত?
২০ আজকে, আমরা জানি যে অপর একটি মহৎ “সদাপ্রভুর দিন” শীঘ্রই এই সম্পূর্ণ বিধিব্যবস্থাকে আঘাত করবে। (যোয়েল ৩:১২-১৪) সেই দিন কখন আসবে তা আমরা জানি না। কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয় যে এটি আসবেই! যিহোবা বলেন যে তা বিলম্ব করবে না। (হবক্কূক ২:৩; ২ পিতর ৩:৯, ১০) অতএব, আসুন আমরা “যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ” করি। বিশ্বাসের অভাব, “সহজ বাধাজনক পাপ” পরিহার করুন। এটি যতখানি সময়ই নিক না কেন ধৈর্য ধরতে দৃঢ়সংকল্প হোন। মনে রাখুন যে, যিহোবার রথতুল্য স্বর্গীয় সংগঠন এগিয়ে চলেছে। এটি এর উদ্দেশ্য সম্পন্ন করবে। তাই আমরা যেন ক্রমাগত দৌড়াতে থাকি আর জীবনের দৌড়ে হাল ছেড়ে না দিই!
আপনি কি স্মরণ করতে পারেন?
◻ ফিলিপীয়দের উদ্দেশ্যে পৌলের কোন্ পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দেওয়া আমাদের জীবনের দৌড়ে ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে?
◻ এই জগতের প্রবণতা যা আমাদের বিক্ষিপ্ত করে তা প্রতিরোধ করতে কী আমাদের সাহায্য করবে?
◻ দৌড়ে ধৈর্য ধরার জন্য কিভাবে আমরা একে অপরকে সাহায্য করতে পারি?
◻ কিছু বিষয় কী যা একজন খ্রীষ্টানকে ধীরগতি করে দিতে পারে?
◻ কিভাবে যীশুর উদাহরণ আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করতে পারে?
[৮, ৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
দৌড়বিদ্দের মত, খ্রীষ্টানেরাও কোন কিছুর দ্বারাই নিজেদের বিক্ষিপ্ত হতে দেন না
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
কোন কিছুই যিহোবার মহান স্বর্গীয় রথকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্পাদন করা থেকে বিরত করতে পারে না