যিহোবার দিন সন্নিকট
“হে প্রাচীনগণ, এই কথা শুন; আর হে দেশনিবাসী সকলে, কর্ণপাত কর।”—যোয়েল ১:২.
১, ২. যিহূদার কোন্ অবস্থার কারণে যিহোবা যোয়েলকে তাঁর ক্ষমতাসম্পন্ন ভবিষ্যদ্বাণী বলতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন?
“হায় হায়, কেমন দিন! সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] দিন ত সন্নিকট; উহা সর্ব্বশক্তিমানের নিকট হইতে প্রলয়ের ন্যায় আসিতেছে!” কী এক নাটকীয় ঘোষণা! এটি ছিল তাঁর ভাববাদী যোয়েলের দ্বারা উক্ত তাঁর লোকেদের প্রতি ঈশ্বরের বার্তা।
২ যোয়েল ১:১৫ পদের ওই বাক্যগুলি, সম্ভবত প্রায় সা.কা.পূ. ৮২০ সালে যিহূদায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। সবুজ লতাপাতায় ভরা পাহাড়গুলি তখন দেশটিকে ভূষিত করেছিল। ফলমূল ও শস্যের প্রাচুর্য ছিল। চারণভূমিগুলি ছিল বিস্তীর্ণ ও সবুজ। তথাপি, কোন একটি বিষয়ে অত্যন্ত ভুল ছিল। যিরূশালেম ও যিহূদা দেশে বাল উপাসনা অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছিল। লোকেরা এই মিথ্যা দেবতার সম্মুখে মাতাল হয়ে পানোন্মত্ততায় লিপ্ত ছিল। (২ বংশাবলি ২১:৪-৬, ১১ পদের সাথে তুলনা করুন।) যিহোবা কি এই সমস্ত কিছু চলতে দেওয়াকে অনুমোদন করবেন?
৩. যিহোবা কোন্ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন আর জাতিগণ কিসের জন্য প্রস্তুত হবে?
৩ বাইবেলের যোয়েল পুস্তক এই উত্তর সম্বন্ধে সন্দেহের কোন অবকাশই রাখেনি। যিহোবা ঈশ্বর তাঁর সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর পবিত্র নামকে পবিত্রীকৃত করবেন। যিহোবার মহৎ দিন সন্নিকট ছিল। এরপর ঈশ্বর “যিহোশাফট-তলভূমিতে” সমস্ত জাতির বিচার সম্পাদন করবেন। (যোয়েল ৩:১২) সর্বশক্তিমান যিহোবার সাথে যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত হোক। আমরাও যিহোবার মহৎ দিনের মুখোমুখি। তাই আসুন আমরা আমাদের দিন এবং অতীতের জন্য যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলির প্রতি এক নিবিড় দৃষ্টি দিই।
পতঙ্গদের আক্রমণ
৪. যোয়েলের সতর্কবাণীকৃত ঘটনাটি কত মহৎ হবে?
৪ তাঁর ভাববাদীর মাধ্যমে যিহোবা বলেন: “হে প্রাচীনগণ, এই কথা শুন; আর হে দেশনিবাসী সকলে, কর্ণপাত কর। তোমাদের সময়ে এমন ঘটনা কি হইয়াছে? কিম্বা তোমাদের পিতৃপুরুষদের সময়ে কি এমন হইয়াছে? তোমরা আপন আপন সন্তানগণকে ইহার বৃত্তান্ত বল, এবং তাহারা আপন আপন সন্তানগণকে বলুক, আবার সেই সন্তানেরা ভাবী পুরুষপরম্পরাকে বলুক।” (যোয়েল ১:২, ৩) প্রাচীনগণ ও সমস্ত লোকেরা এমন কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন যা তাদের জীবনকালে অথবা তাদের পিতৃপুরুষদের দিনে ঘটেনি। সেটি এত লক্ষণীয় হবে যে তা তৃতীয় বংশ পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করা হবে! এই উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি কী ছিল? তা দেখার জন্য, আসুন আমরা কল্পনা করি যে আমরা যোয়েলের দিনে ফিরে গিয়েছি।
৫, ৬. (ক) যোয়েল যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলি করেন, সেই আঘাতগুলি বর্ণনা করুন। (খ) সেই আঘাতগুলির উৎস কে ছিলেন?
৫ শুনুন! যোয়েল এক দূরবর্তী স্থান থেকে গর্জন শুনতে পাচ্ছেন। আকাশমণ্ডল অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে আর অন্ধকার যতই পরিব্যাপ্ত হয় সেই আতঙ্কজনক শব্দ ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারপর ধোঁয়ারূপ মেঘ উদ্ভূত হতে থাকে। এটি কোটি কোটি সংখ্যক পতঙ্গের এক বাহিনী। আর কী এক ধ্বংসই না এরা ঘটায়! এখন যোয়েল ১:৪ পদ বিবেচনা করুন। এই আক্রমণকারী পতঙ্গেরা কেবল পক্ষযুক্ত ভ্রমণশীল পঙ্গপালদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। না, এখানেই শেষ নয়! ক্ষুধার্ত পতঙ্গদের বড় দল, পক্ষহীন পঙ্গপালেরাও আসছে। বায়ু দ্বারা বাহিত হয়ে হঠাৎ পঙ্গপালেরা উপস্থিত হয় এবং সেগুলির শব্দ রথসমূহের শব্দের মত। (যোয়েল ২:৫) অত্যধিক ক্ষুধার্ত থাকার কারণে সেগুলির মধ্যে কোটি কোটি পঙ্গপাল দ্রুতগতিতে এক প্রকৃত পরমদেশকে প্রান্তরে পরিণত করতে পারে।
৬ এছাড়াও মথ এবং প্রজাপতির শূককীট অবস্থা—শুঁয়োপোকারাও আসছে। ক্ষুধার্ত শুঁয়োপোকার বৃহৎ বাহিনী গাছের পাতার প্রত্যেকটি অংশ খেতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত না উদ্ভিদগুলি এর সবুজ অংশ হারায়। আর সেগুলি যা রেখে যায়, তার অধিকাংশই পঙ্গপালেরা খায়। আর পঙ্গপালেরা যা রেখে যায়, দ্রুত-গমনশীল ঘুর্ঘুরিয়া তা সম্পূর্ণরূপে খায়। কিন্তু এই বিষয়টি লক্ষ্য করুন: যোয়েল ২ অধ্যায় ১১ পদে ঈশ্বর পঙ্গপাল বাহিনীকে ‘নিজ সৈন্যসামন্ত’ হিসাবে শনাক্ত করেন। হ্যাঁ, তিনিই ছিলেন পঙ্গপাল দ্বারা আঘাতের উৎস যা দেশটিকে ধ্বংস করবে এবং তীব্র দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। কখন? “যিহোবার দিন” এর ঠিক পূর্বে।
“হে মত্তগণ, জাগিয়া উঠ”!
৭. (ক) যিহূদার ধর্মীয় নেতাদের অবস্থা কেমন ছিল? (খ) আজকে খ্রীষ্টীয় জগতের নেতারা কিভাবে যিহূদার ধর্মীয় নেতাদের অনুরূপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন?
৭ যিহূদার ধর্মীয় নেতাদের এক কলঙ্কিত জনতাকে পৃথক করা হয় যখন এই আদেশটি বলা হয়: “হে মত্তগণ, জাগিয়া উঠ ও রোদন কর; হে মদ্যপায়ী সকলে, মিষ্ট দ্রাক্ষারসের জন্য হাহাকার কর; কেননা তাহা তোমাদের মুখ হইতে অপহৃত হইয়াছে।” (যোয়েল ১:৫) হ্যাঁ, যিহূদার আধ্যাত্মিক মত্তগণকে ‘জাগিয়া উঠতে,’ মিতপায়ী হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মনে করবেন না যে এটি নিছক এক প্রাচীন ইতিহাস। ঠিক এখন, যিহোবার মহৎ দিনের পূর্বে খ্রীষ্টীয় জগতের পাদ্রিরা রূপকভাবে মিষ্ট দ্রাক্ষারসে এত মত্ত যে তারা সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের এই আদেশ সম্বন্ধে সামান্যই সচেতন। কতই না আশ্চর্য তারা হবেন, যখন যিহোবার মহৎ এবং ভয়ানক দিনের মাধ্যমে তাদের আধ্যাত্মিক অচৈতন্য অবস্থা থেকে জাগানো হবে!
৮, ৯. (ক) যোয়েল কিভাবে পঙ্গপালদের ও তাদের আঘাতের প্রভাব সম্বন্ধে বর্ণনা করেন? (খ) আজকে, পঙ্গপালেরা কাদের প্রতিনিধিত্ব করে?
৮ পঙ্গপালের সেই মহা বাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করুন! “আমার দেশের বিরুদ্ধে এক জাতি উঠিয়া আসিয়াছে, সে বলবান ও অসংখ্য; তাহার দন্তরাজি সিংহ-দন্তের ন্যায়, তাহার কশের দন্ত সিংহীর কশের দন্তের ন্যায়। সে আমার দ্রাক্ষালতা ধ্বংস করিয়াছে, আমার ডুমুরবৃক্ষ ত্বক্শূন্য করিয়াছে; সে ছাল খুলিয়া ফেলিয়াছে, তাহা ফেলিয়া দিয়াছে; তাহার শাখা সকল শুক্ল হইয়া পড়িয়াছে। তুমি এমন কন্যার ন্যায় বিলাপ কর, যে যৌবনকালীন কান্তের শোকে চটপরিহিতা।”—যোয়েল ১:৬-৮.
৯ এটি কি কেবল যিহূদা আক্রমণকারী পঙ্গপালের ঝাঁক, পঙ্গপালের “এক জাতি” সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী? না, এর আরও বেশি তাৎপর্য রয়েছে। যোয়েল ১:৬ এবং প্রকাশিত বাক্য ৯:৭ উভয় পদেই পঙ্গপালেরা ঈশ্বরের লোকেদের প্রতিনিধিত্ব করে। আধুনিক দিনের পঙ্গপাল বাহিনী যিহোবার অভিষিক্ত পঙ্গপালের সৈন্যসামন্ত ছাড়া আর কেউ নন, যাদের সাথে এখন যীশুর “অপর মেষ”-দের প্রায় ৫৬,০০,০০০ জন সঙ্গীরা যোগ দিয়েছেন। (যোহন ১০:১৬, NW) যিহোবার উপাসকদের এই বৃহৎ দলের অংশী হতে আপনি কি আনন্দিত নন?
১০. যিহূদার উপর পঙ্গপালের আঘাতের প্রভাব কী?
১০ যোয়েল ১:৯-১২ পদে আমরা পঙ্গপালের আঘাতের কিছু প্রভাব সম্বন্ধে পড়ি। একটির পর একটি ঝাঁক দেশটিকে সম্পূর্ণরূপে জনশূন্য করেছিল। শস্য, দ্রাক্ষারস এবং তেলের অভাবের কারণে অবিশ্বস্ত যাজকেরা তাদের কাজগুলি চালিয়ে যেতে পারেননি। এমনকি ভূমিও শোক করে কারণ পঙ্গপাল এর শস্য বিনষ্ট করেছিল এবং ফলের গাছগুলি ফলহীন হয়ে পড়েছিল। দ্রাক্ষালতা নিশ্চিহ্ন হওয়ায়, বালের দ্রাক্ষারস পানকারীরা যারা আধ্যাত্মিকভাবেও মত্ত ছিল, তাদের জন্য আর দ্রাক্ষারস ছিল না।
“হে যাজকগণ, . . . বিলাপ কর”
১১, ১২. (ক) আজকে কারা ঈশ্বরের যাজক বলে দাবি করেন? (খ) খ্রীষ্টীয় জগতের ধর্মীয় নেতারা কিভাবে আধুনিক দিনের পঙ্গপালের আঘাতের দ্বারা প্রভাবান্বিত হন?
১১ সেই বিপথগামী যাজকদের প্রতি ঈশ্বরের বার্তাটি শুনুন: “হে যাজকগণ, তোমরা বদ্ধকটি হইয়া বিলাপ কর; হে যজ্ঞবেদির পরিচারকগণ, হাহাকার কর।” (যোয়েল ১:১৩) যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম পরিপূর্ণতার সময়ে লেবীয় যাজকেরা যজ্ঞবেদীতে পরিচর্যা করতেন। কিন্তু চূড়ান্ত পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে কী বলা যায়? আজকে, খ্রীষ্টীয় জগতের পাদ্রিরা ঈশ্বরের যজ্ঞবেদীতে পরিচর্যা করার ভান করছেন, তাঁর পরিচর্যাকারী, তাঁর “যাজকগণ” হিসাবে দাবি করছেন। কিন্তু ঈশ্বরের আধুনিক দিনের পঙ্গপালেরা চলমান থাকায় এখন কী ঘটছে?
১২ যখন খ্রীষ্টীয় জগতের “যাজকগণ” যিহোবার লোকেদের কার্যরত দেখেন এবং ঐশিক বিচার সম্বন্ধীয় সতর্কবাণী শোনেন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বক্ষে আঘাত করেন এবং রাজ্যের বার্তার ধ্বংসাত্মক প্রভাবের দরুণ ক্রোধান্বিত হন। আর তাদের পাল যখন তাদের কাছ থেকে চলে যায় তখন তারা হাহাকার করেন। তাদের রিক্ত চারণভূমি নিয়ে তারা চটপরিহিত হয়ে রাত্রি যাপন করুক ও তাদের আয়ের ক্ষতির জন্য শোক করুক। শীঘ্রই তারা তাদের কাজগুলিও হারাবেন! বাস্তবিকপক্ষে ঈশ্বর তাদের সারারাত ধরে শোক করতে বলেন কারণ তাদের শেষ সন্নিকট।
১৩. সমগ্র খ্রীষ্টীয় জগৎ কি যিহোবার সতর্কবাণীর প্রতি অনুকূলভাবে সাড়া দেবেন?
১৩ যোয়েল ১:১৪ পদ অনুসারে, তাদের একমাত্র আশা অনুতপ্ত হওয়া ও “সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন” করার মধ্যেই নিহিত। আমরা কি আশা করতে পারি যে খ্রীষ্টীয় জগতের সমগ্র পাদ্রিশ্রেণী যিহোবার প্রতি ফিরে আসবেন? অবশ্যই না! তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিবিশেষেরা হয়ত যিহোবার সতর্কবাণীর প্রতি সাড়া দিতে পারেন। কিন্তু একটি শ্রেণী হিসাবে এই ধর্মীয় নেতা ও তাদের গির্জার সদস্যদের আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষুধার্ত অবস্থা চলতে থাকবে। ভাববাদী আমোষ ভাববাণী করেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু কহেন, দেখ, এমন দিন আসিতেছে, যে দিনে আমি এই দেশে দুর্ভিক্ষ প্রেরণ করিব; তাহা অন্নের দুর্ভিক্ষ কিম্বা জলের পিপাসা নয়, কিন্তু সদাপ্রভুর বাক্য শ্রবণের।” (আমোষ ৮:১১) অন্যদিকে, উন্নতমানের আধ্যাত্মিক ভোজের জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ যা ঈশ্বর প্রেমের সাথে “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” এর মাধ্যমে আমাদের যুগিয়ে থাকেন!—মথি ২৪:৪৫-৪৭.
১৪. পঙ্গপালের আঘাত কোন্ বিষয়ের অগ্রদূত?
১৪ পঙ্গপালের আঘাত কোন একটি বিষয়ের অগ্রদূত ছিল এবং এখনও আছে। কোন্ বিষয়ের? যোয়েল স্পষ্টভাবে আমাদের তা জানান এটি বলার দ্বারা: “হায় হায়, কেমন দিন! যিহোবার দিন ত সন্নিকট; উহা সর্ব্বশক্তিমানের নিকট হইতে প্রলয়ের ন্যায় আসিতেছে।” (যোয়েল ১:১৫) বিশ্বব্যাপী ঈশ্বরের পঙ্গপাল বাহিনীর আক্রমণগুলি আজকে পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত করে যে যিহোবার মহৎ ও ভয়ানক দিন সন্নিকট। নিশ্চিতভাবে, সকল সৎহৃদয় ব্যক্তি সেই বিশেষ বিচারের দিনের জন্য প্রতীক্ষা করে আছেন, যখন দুষ্টদের বিরুদ্ধে ঐশিক বিচার সম্পাদিত হবে এবং সার্বজনীন সার্বভৌম হিসাবে যিহোবা জয়ী হবেন।
১৫. দেশটির জনশূন্য অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যারা ঐশিক সতর্কবাণীর প্রতি মনোযোগ দেন তারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান?
১৫ যোয়েল ১:১৬-২০ পদ যেমন দেখায় যে প্রাচীন যিহূদায় খাদ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। একইভাবে আনন্দও বিলুপ্ত হয়েছিল। গোলাঘরগুলি শূন্য অবস্থায় পড়েছিল এবং শস্যাগারগুলি উৎপাটিত হয়েছিল। চারণভূমির অভাব হয়েছিল কারণ পঙ্গপালেরা শস্যভূমি শূন্য করেছিল, বৃষপাল ব্যাকুল হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল এবং মেষপাল প্রাণ হারিয়েছিল। কী এক বিপর্যয়! এই অবস্থার মধ্যে যোয়েলের কী হয়েছিল? ১৯ পদ অনুসারে তিনি বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু আমি তোমাকেই ডাকিতেছি।” আজকেও, অনেকে ঐশিক সতর্কবাণীর প্রতি মনোযোগ দেন এবং বিশ্বাসে যিহোবা ঈশ্বরের কাছে ক্রন্দন করেন।
“যিহোবার দিন আসিতেছে”
১৬. কেন “দেশনিবাসী সকলেই” কম্পিত হবেন?
১৬ ঈশ্বরের এই আদেশটি শুনুন: “তোমরা সিয়োনে তূরী বাজাও, আমার পবিত্র পর্ব্বতে সিংহনাদ কর, দেশনিবাসী সকলেই কম্পিত হউক।” (যোয়েল ২:১) এরূপ প্রতিক্রিয়া কেন? ভবিষ্যদ্বাণীটি উত্তর দেয়: “কেননা সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] দিন আসিতেছে, হাঁ, সেই দিন সন্নিকট। সে তিমির ও অন্ধকারের দিন, মেঘের ও ঘোর অন্ধকারের দিন, পর্ব্বতগণের উপরে অরুণের ন্যায় তাহা ব্যাপ্ত হইতেছে।” (যোয়েল ২:১, ২) যিহোবার মহৎ দিনের সাথে প্রকৃত তৎপরতার মনোভাব যুক্ত রয়েছে।
১৭. যিহূদা দেশ ও সেখানকার লোকেরা কিভাবে পঙ্গপালের আঘাতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল?
১৭ অদম্য পঙ্গপালেরা যখন এক প্রকৃত এদন উদ্যানকে পরিত্যক্ত ভূমিতে পরিণত করেছিল, তখন ভাববাদীর সেই দর্শনের প্রভাব সম্বন্ধে কল্পনা করুন। পঙ্গপাল বাহিনী সম্বন্ধে বর্ণনাটি শুনুন: “তাহাদের আকার অশ্বগণের আকৃতির ন্যায়, এবং তাহারা অশ্বারোহীদের ন্যায় ধাবমান হয়। তাহাদের লম্ফের শব্দ পর্ব্বতশৃঙ্গের উপরে রথসমূহের শব্দের ন্যায়, নাড়া দগ্ধকারী অগ্নিশিখার শব্দের ন্যায়; তাহারা যুদ্ধার্থে শ্রেণীবদ্ধ বলবতী জাতির তুল্য। তাহাদের সম্মুখে জাতিগণ যন্ত্রণাগ্রস্ত, সকলেরই মুখ কালিমাযুক্ত হয়।” (যোয়েল ২:৪-৬) যোয়েলের দিনে পঙ্গপালের আঘাতের সময়ে বাল উপাসকদের তীব্র যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তাদের মুখমণ্ডলে উদ্বিগ্নতার ছাপ দেখা গিয়েছিল।
১৮, ১৯. আজকে ঈশ্বরের লোকেদের কার্যকলাপ কিভাবে পঙ্গপালের আঘাতের মত?
১৮ কিছুই এই সুশৃঙ্খল, অক্লান্ত পঙ্গপালদের থামাতে পারেনি। তারা “বীরগণের ন্যায়” দৌড়েছিল আর এমনকি প্রাচীরগুলিতে আরোহণ করেছিল। ‘তাহাদের মধ্যে কেহ শূলাগ্রের উপরে পড়িলেও ভগ্নপঙ্ক্তি হয় না।’ (যোয়েল ২:৭, ৮) ঈশ্বরের বর্তমান দিনের রূপক পঙ্গপাল বাহিনীর কী এক প্রাণবন্ত ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চিত্র! আজকেও, যিহোবার পঙ্গপাল বাহিনী সরাসরি সম্মুখে এগিয়ে যাচ্ছে। বিরোধিতার কোন ‘প্রাচীর’ তাদের নিবৃত্ত করতে পারে না। তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের আনুগত্যের সাথে আপোশ করে না বরং মৃত্যুর মুখোমুখি হতে ইচ্ছুক যেমন হাজার হাজার সাক্ষীরা হয়েছিলেন, যারা জার্মানির নাৎসি শাসনকালে হিটলারের জয়ধ্বনি করতে প্রত্যাখ্যান করায় ‘শূলাগ্রের উপরে পড়েছিলেন।’
১৯ ঈশ্বরের আধুনিক পঙ্গপাল বাহিনী খ্রীষ্টীয় জগতের ‘নগরে’ এক ব্যাপক সাক্ষ্য দিয়েছেন। (যোয়েল ২:৯) তারা জগতের সর্বত্র তা করেছেন। যিহোবার বার্তা ঘোষণা করার সময় তারা এখনও সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করছেন, কোটি কোটি লোকেদের গৃহে প্রবেশ করে, রাস্তায় লোকেদের কাছে গিয়ে, ফোনে তাদের সাথে কথা বলে এবং যে কোন উপায়েই হোক তাদের সাথে যোগাযোগ করে। বাস্তবিকই তারা কোটি কোটি বাইবেল প্রকাশনা বিতরণ করেছেন এবং তাদের বিরতিহীন পরিচর্যায় আরও অনেক বিতরণ করবেন—জনসাধারণ্যে এবং গৃহ থেকে গৃহে উভয় স্থানেই।—প্রেরিত ২০:২০, ২১.
২০. আধুনিক দিনের পঙ্গপালদের কে সমর্থন করছেন এবং কোন্ ফল সহ?
২০ যোয়েল ২:১০ পদ দেখায় যে পঙ্গপালের এক বৃহৎ ঝাঁক মেঘের মত যা সূর্য, চাঁদ এবং তারকাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করতে পারে। (যিশাইয় ৬০:৮ পদের সাথে তুলনা করুন।) এই সৈন্য বাহিনীর পিছনে কে আছেন সেই সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে? পঙ্গপালদের গর্জন ছাড়িয়ে আমরা যোয়েল ২:১১ পদের এই বাক্যগুলি শুনতে পাই: “সদাপ্রভু নিজ সৈন্যসামন্তের অগ্রে আপন রব শুনাইতেছেন; কেননা তাঁহার শিবির অতি মহৎ; কেননা তাঁহার বাক্যসাধক বলবান, কেননা সদাপ্রভুর দিন মহৎ ও অতি ভয়ানক; আর কে তাহা সহ্য করিতে পারে?” হ্যাঁ, যিহোবা ঈশ্বর তাঁর পঙ্গপালরূপ সৈন্যবাহিনী এখন—তাঁর মহৎ দিনের পূর্বে পাঠাচ্ছেন।
“যিহোবা . . . দীর্ঘসূত্রী নহেন”
২১. যখন ‘যিহোবার দিন চোরের ন্যায় আসিবে’ তখন ফল কী হবে?
২১ যোয়েলের মত প্রেরিত পিতর যিহোবার মহৎ দিন সম্বন্ধে বলেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” “NW”] দিন চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমণ্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে।” (২ পিতর ৩:১০) শয়তান দিয়াবলের প্রভাবাধীনে ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন মানবজাতি অর্থাৎ “পৃথিবীর”-র উপর দুষ্ট সরকারসুলভ “আকাশমণ্ডল” শাসন করছে। (ইফিষীয় ৬:১২; ১ যোহন ৫:১৯) এই রূপক আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী যিহোবার মহৎ দিনে ঐশিক ক্রোধের প্রচণ্ডতা থেকে রক্ষা পাবে না। পরিবর্তে সেগুলি “তাঁহার প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের ও নূতন পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে” এমন অবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।—২ পিতর ৩:১৩.
২২, ২৩. (ক) যিহোবার করুণাপূর্ণ দীর্ঘসহিষ্ণুতা প্রদর্শনের প্রতি আমাদের কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান উচিত? (খ) যিহোবার দিনের নিকটবর্তিতার প্রতি আমাদের কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান উচিত?
২২ বর্তমান দিনে বিশ্বাসের সমস্ত বিক্ষেপ এবং পরীক্ষাগুলির কারণে আমরা আমাদের সময়ের তৎপরতাকে বুঝতে ব্যর্থ হতে পারি। কিন্তু রূপক পঙ্গপালেরা ক্রমশ যতই সম্মুখে এগিয়ে চলছে, ততই অনেক লোকেরা রাজ্যের বার্তার প্রতি সাড়া দিচ্ছেন। যেহেতু ঈশ্বর এর জন্য সময় দিয়েছেন, আমরা অবশ্যই তাঁর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে দীর্ঘসূত্রিতার সাথে মিলিয়ে ফেলব না। “প্রভু [“যিহোবা,” “NW”] নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।”—২ পিতর ৩:৯.
২৩ যিহোবার মহৎ দিনের প্রতীক্ষা করার সময়ে আসুন আমরা ২ পিতর ৩:১১, ১২ পদে লিপিবদ্ধ পিতরের বাক্যগুলি হৃদয়ে গ্রহণ করি: “এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই, যে দিনের হেতু আকাশমণ্ডল জ্বলিয়া বিলীন হইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া গলিয়া যাইবে।” এই আচরণ ও কাজগুলি নিশ্চিতভাবে শেষ আসার পূর্বে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে আমাদের দৃঢ় এবং অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ করার দ্বারা যিহোবার পঙ্গপালদের সাথে সমতালে চলাকে অন্তর্ভুক্ত করে।—মার্ক ১৩:১০.
২৪, ২৫. (ক) যিহোবার পঙ্গপালরূপ বাহিনীর সাথে কাজের অংশী হওয়ার সুযোগের প্রতি আপনি কিভাবে সাড়া প্রদান করেন? (খ) কোন্ অর্থপূর্ণ প্রশ্ন যোয়েল উত্থাপন করেছিলেন?
২৪ ঈশ্বরের পঙ্গপাল বাহিনী যিহোবার মহৎ ও ভয়ানক দিন না আসা পর্যন্ত এদের কাজ থামাবে না। এই বিরামহীন পঙ্গপাল বাহিনীর প্রকৃত অস্তিত্ব, যিহোবার মহৎ দিন যে সন্নিকট তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। আপনি কি যিহোবার মহৎ ও ভয়ানক দিনের পূর্বে চূড়ান্ত আক্রমণে ঈশ্বরের অভিষিক্ত পঙ্গপাল এবং তাদের সঙ্গীদের মধ্যে সেবা করতে পরমানন্দিত নন?
২৫ যিহোবার দিন কতই না মহৎ হবে! আশ্চর্যের বিষয় নয় যে এই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়: “কে তাহা সহ্য করিতে পারে?” (যোয়েল ২:১১) এই প্রশ্নটি এবং অন্যান্য আরও অনেক প্রশ্ন পরবর্তী প্রবন্ধ দুটিতে বিবেচনা করা হবে।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
◻ কেন যিহোবা যিহূদার উপর পতঙ্গের আঘাত সম্বন্ধে সতর্কবাণী দিয়েছিলেন?
◻ যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীর আধুনিক দিনের পরিপূর্ণতায় যিহোবার পঙ্গপালেরা কারা?
◻ পঙ্গপালের আঘাতের প্রতি খ্রীষ্টীয় জগতের নেতারা কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান এবং তাদের কেউ কেউ কিভাবে এর পরিণতি থেকে রক্ষা পান?
◻ বিংশ শতাব্দীতে পঙ্গপালের আঘাত কতটা ব্যাপক হয়েছে এবং কোন্ সময় পর্যন্ত এটি চলবে?
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
পতঙ্গের আঘাত এমনকি অধিকতর মন্দ বিষয়ের অগ্রদূত ছিল
[সজন্যে]
নিষ্ফলা বৃক্ষ: FAO photo/G. Singh
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আধুনিক দিনের পঙ্গপালের আঘাতের পিছনে যিহোবা ঈশ্বর আছেন
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
পঙ্গপাল: FAO photo/G. Tortoli; পঙ্গপালের ঝাঁক: FAO photo/Desert Locust Survey