আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করে চলুন!
আমাদের বাপ্তিস্মের দিনটিকে আমরা এক বিশেষ দিন বলে মনে করি ও সেটি মনে রাখি। এই দিনেই আমরা প্রকাশ্যে ঘোষণা করি যে আমরা ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছি।
অনেক ব্যক্তিরা এই লক্ষ্য পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য প্রচুর চেষ্টা করে থাকেন—বহু দিনের মন্দ অভ্যাসগুলি ছাড়া, খারাপ সঙ্গীসাথীদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করা, বদ্ধমূল চিন্তা এবং আচরণগুলিকে পাল্টানো।
যদিও খ্রীষ্টানদের জীবনে বাপ্তিস্ম হল আনন্দময় এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা, তবুও এটি কেবল একটি শুরু। প্রেরিত পৌল যিহূদীয়ায় বাপ্তাইজিত খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “আমরা খ্রীষ্ট-বিষয়ক আদিম কথা পশ্চাৎ ফেলিয়া সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর হই।” (ইব্রীয় ৬:১) হ্যাঁ, সমস্ত খ্রীষ্টানদের ‘ঈশ্বরের পুত্ত্র বিষয়ক বিশ্বাসের ও তত্ত্বজ্ঞানের ঐক্য পর্য্যন্ত, সিদ্ধ পুরুষের অবস্থা পর্য্যন্ত, খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ পর্যন্ত, অগ্রসর হওয়া’ প্রয়োজন। (ইফিষীয় ৪:১৩) পরিপক্ব হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দ্বারাই আমরা প্রকৃতপক্ষে ‘বিশ্বাসে দৃঢ়ীভূত হতে’ পারি।—কলসীয় ২:৭.
গত কয়েক বছর ধরে, লক্ষ লক্ষ নতুন উৎসর্গীকৃত উপাসকেরা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে এসেছেন। সম্ভবত আপনি তাদের মধ্যে একজন। প্রথম শতাব্দীর ভাইদের মত, আপনিও আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শিশু থাকতে চান না। আপনি বৃদ্ধি পেতে চান, আপনি উন্নতি করতে চান! কিন্তু কিভাবে? আর সেই উপায়গুলি কী যার মাধ্যমে আপনি এইধরনের অগ্রগতি করতে পারেন?
ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে অগ্রগতি
পৌল ফিলিপীর খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “আমি এই প্রার্থনা করিয়া থাকি, তোমাদের প্রেম যেন তত্ত্বজ্ঞানে ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্যে উত্তর উত্তর উপচিয়া পড়ে।” (ফিলিপীয় ১:৯) আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে চাইলে আপনার জন্য “তত্ত্বজ্ঞান”-এ বৃদ্ধি পাওয়া খুবই জরুরী। ‘যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্টের সম্বন্ধে জানা’ একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যা বাপ্তিস্মের পর থেমে যাওয়ার মত কিছু নয়।—যোহন ১৭:৩.
আলেক্সান্দ্রা নামে একজন বোন তার বাপ্তিস্মের দশ বছর পর তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যিনি ১৬ বছর বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তিনি সত্যে বড় হয়েছিলেন এবং খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে ও প্রচার কাজে নিয়মিতভাবে যোগ দিয়ে এসেছেন। তিনি লেখেন: “গত কয়েক মাস ধরে আমি বুঝতে পারছি যে কোথাও ভীষণ একটা ভুল হয়েছে। আমি ঠিক করেছিলাম যে নিজেকে কড়া নজরে পরীক্ষা করা দরকার যে সত্য সম্বন্ধে আমি কেমন মনে করি এবং কেন আমি এখনও সত্যে রয়েছি।” তিনি কী দেখেছিলেন? তিনি বলেন: “আমার সত্যে আসার কারণগুলি দেখে আমি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। আমার মনে আছে যে যতই আমি বড় হতে থাকি, সভা এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যার উপর জোর দেওয়া হত। এই করে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং প্রার্থনার অভ্যাস কোন না কোন ভাবে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু আমি যখন আমার অবস্থা বিশ্লেষণ করেছিলাম তখন আমি বুঝতে পারি যে তা হয়নি।”
প্রেরিত পৌল উৎসাহিত করেছিলেন: “আমরা যে পর্য্যন্ত পঁহুছিয়াছি, সেই একই ধারায় চলি।” (ফিলিপীয় ৩:১৬) একটি সূচি আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। কোন সন্দেহ নেই যে আপনার বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে একজন সুযোগ্য শিক্ষকের সঙ্গে আপনার বাইবেল অধ্যয়নের একটি সাপ্তাহিক সূচি ছিল। আপনার উপলব্ধি যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে আপনি প্রত্যেক সপ্তাহের পাঠটি আগে থেকে তৈরি করতে শুরু করেন, উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলি বাইবেল থেকে খুলে দেখতে লাগেন আর এইভাবে আপনি উন্নতি করতে থাকেন। এখন আপনি বাপ্তাইজিত কিন্তু আপনি কি ‘সেই একই ধারায় চলেন’?
যদি না চলে থাকেন তাহলে আপনার অগ্রাধিকারগুলিকে আবারও পরীক্ষা করে দেখা দরকার যেন আপনি ‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার, তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিতে পারেন।’ (ফিলিপীয় ১:১০) আমাদের ব্যস্ত জীবনে, ব্যক্তিগতভাবে বাইবেল পড়া এবং অধ্যয়ন করার জন্য সময় করে নিতে হলে আত্মসংযমের প্রয়োজন। কিন্তু এর ফলে যে উপকারগুলি পাওয়া যায় তার কাছে এই প্রচেষ্টা কিছুই নয়। আলেক্সান্দ্রিয়ার অভিজ্ঞতাটি আবার বিবেচনা করুন। “আমি অবশ্যই বলব যে গত ২০ বছর অথবা আরও বেশি সময় ধরে আমি শুধু নামমাত্র সভায় এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় গিয়ে সত্যে আছি,” তিনি স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, “কিন্তু আজ আমাকে এই উপসংহারে আসতে হয় যে যদিও এই বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে শুধু সেটুকুই আমাকে রক্ষা করতে পারে না। আর আমি তা বুঝতে শুরু করেছিলাম কারণ আমার ব্যক্তিগত অধ্যয়নের অভ্যাস বলতে গেলে একেবারে ছিলই না আর আমি খেয়াল হল তো প্রার্থনা করতাম না হলে নয় আর আমার প্রার্থনা ছিল উপর উপর। এখন আমি বুঝতে পারি যে আমার চিন্তাধারাকে পরিবর্তন করা এবং এক অর্থপূর্ণ অধ্যয়ন শুরু করা দরকার যাতে করে আমি যিহোবাকে জানতে এবং তাকে ভালবাসতে পারি আর তাঁর পুত্র আমাদের যা দিয়েছেন তা উপলব্ধি করি।”
ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়নের একটি উত্তম সূচি তৈরি করার জন্য আপনার যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনার মণ্ডলীর প্রাচীনেরা এবং অন্যান্য পরিপক্ব খ্রীষ্টানেরা আপনাকে সহযোগিতা করতে আনন্দিত হবেন। এছাড়াও, ১৯৯৫ সালের ১লা মে; ১৯৯৩ সালের ১৫ই আগস্ট (ইংরাজি) এবং ১৯৮৬ সালের ১৫ই মে (ইংরাজি); প্রহরীদুর্গ এর প্রবন্ধগুলিতে অনেক সাহায্যকারী পরামর্শ রয়েছে।
ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা
আরেকটি ক্ষেত্র যেখানে অগ্রগতি করতে আপনার কঠোর প্রচেষ্টা করা উচিত, তা হল ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত এই বিষয়টি খুবই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়তে পারে। অ্যান্থনীর কথা বিবেচনা করুন যিনি অল্প বয়সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। “আমাদের পরিবারে আমিই প্রথম বাপ্তাইজিত সন্তান ছিলাম,” তিনি জানান। “আমার বাপ্তিস্মের পর মা আমাকে আদর করে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আমি আগে কখনও তাকে এতখানি খুশি হতে দেখিনি। সকলেই খুব খুশি হয়েছিলেন আর আমি নিজেকে খুব দৃঢ় বলে মনে করেছিলাম।” কিন্তু ছবির আরেকটি দিকও ছিল। “সেই সময়ে মণ্ডলীতে আমার বয়সী আর কোন বাপ্তাইজিত সাক্ষী ছিল না,” অ্যান্থনী বলেন। “তাই আমি নিজের জন্য খুবই গর্বিত ছিলাম। আমি সভাগুলিতে মন্তব্য করতে এবং বক্তৃতা দিতেও গর্ব বোধ করতাম। যিহোবার প্রশংসা আনার চাইতে, লোকেদের প্রশংসা পাওয়া ও লোকেরা ভাল বলবে এটিই আমার কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। যিহোবার সঙ্গে প্রকৃতই আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।”
অ্যান্থনীর মত, কেউ কেউ হয়ত যিহোবাকে সুখী করার জন্য নয় কিন্তু অন্যদের সুখী করার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু এমনকি তাদের কাছ থেকেও ঈশ্বর চান যে তারা যেন তাঁকে সেবা করার যে প্রতিজ্ঞা করেছেন তা পূর্ণ করেন। (উপদেশক ৫:৪ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) যদিও ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্বন্ধ ছাড়া তা করা প্রায়ই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যান্থনী স্মরণ করেন: “বাপ্তিস্মের সময়ে আমার যে তীব্র আনন্দ ছিল তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আমার বাপ্তিস্মের পর এক বছরের মধ্যেই আমি গুরুতর অন্যায় কাজ করি এবং মণ্ডলীর প্রাচীনেরা আমাকে সংশোধন করেন। বার বার অন্যায় করায় আমাকে সমাজচ্যুত করা হয়। যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়ার ছয় বছর পর, খুনের দায়ে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও আমি জেলে যাই।”
যিহোবার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলা
আপনার পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সমস্ত খ্রীষ্টানেরাই বাইবেলের এই আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারেন: “ঈশ্বরের নিকটবর্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:৮) কোন সন্দেহ নেই যে আপনি যখন প্রথম বাইবেল অধ্যয়ন করেছিলেন তখন ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। আপনি শিখেছেন যে ঈশ্বর ব্যক্তিত্বহীন মূর্তি নন যেমন খ্রীষ্টীয়জগতের লোকেরা জানেন কিন্তু তিনি একজন ব্যক্তি যাঁর নাম যিহোবা। আপনি আরও শিখেছেন যে তাঁর গুণাবলি উত্তম, তিনি হলেন “স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্।”—যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬.
কিন্তু, ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য আপনার উৎসর্গীকরণের যোগ্যরূপে জীবনযাপন করতে হলে, আপনাকে তাঁর আরও কাছে আসতে হবে! কিভাবে? গীতরচক প্রার্থনা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও।” (গীতসংহিতা ২৫:৪) বাইবেল এবং সোসাইটির প্রকাশনাদির ব্যক্তিগত অধ্যয়ন আপনাকে যিহোবার সঙ্গে আরও ভালভাবে পরিচিত হতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিতভাবে হৃদয় থেকে প্রার্থনা করাও গুরুত্বপূর্ণ। “তাঁহারই সম্মুখে তোমাদের মনের কথা ভাঙ্গিয়া বল,” গীতরচক জানিয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৬২:৮) আপনি যতই দেখতে পাবেন যে আপনি আপনার প্রার্থনার উত্তর পাচ্ছেন, ততই আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার প্রতি ঈশ্বরের ব্যক্তিগত আগ্রহ রয়েছে। এটিই আপনাকে তাঁকে কাছের একজন বলে মনে করতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও পরীক্ষা এবং সমস্যাগুলি ঈশ্বরের কাছে আসার আরেকটি সুযোগ করে দেয়। আপনি হয়ত বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিশ্বাসের পরীক্ষার সম্মুখীন হন, যেমন অসুস্থতা, বিদ্যালয় এবং কর্মক্ষেত্রে চাপ অথবা অর্থনৈতিক সংকট। এমনকি পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করা, সভায় উপস্থিত হওয়া অথবা আপনার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার সাধারণ ঐশিক তালিকা মেনে চলাও হয়ত আপনার কাছে কঠিন হতে পারে। এইধরনের সমস্যাগুলি একাই মোকাবিলা করতে যাবেন না! ঈশ্বরের পরিচালনা এবং নির্দেশনার জন্য সাহায্য চেয়ে, তাঁর কাছে মিনতি করুন। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) তাঁর পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করুন! (লূক ১১:১৩) আপনি যতই ঈশ্বরের প্রেমময় সহযোগিতা পাবেন, ততই আপনি তাঁর কাছের একজন হয়ে উঠবেন। গীতরচক দায়ূদ যেমন লিখেছিলেন, “আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার শরণাপন্ন।”—গীতসংহিতা ৩৪:৮.
অ্যান্থনীর কী হয়? “আমি সেই সময়ের কথা ভাবতে শুরু করি যখন যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য আমি আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলি রেখেছিলাম।” তিনি স্মরণ করেন। “এটি মনে করা বেদনাদায়ক ছিল। কিন্তু সমস্ত ব্যথা এবং হতাশার মধ্যেও আমি যিহোবার প্রেমকে মনে রেখেছিলাম। যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে আমার একটু সময় লেগেছিল বটে কিন্তু আমি হার মানিনি, আমি প্রার্থনা করেছিলাম আর আমি হৃদয় খুলে তাঁর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিলাম। আমি বাইবেল পড়া শুরু করেছিলাম আর অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কতকিছু আমি ভুলে গেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে যিহোবার সম্বন্ধে সত্যিই আমি কত কম জানি।” যদিও অ্যান্থনীর জেলে থাকার মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি, স্থানীয় মণ্ডলীর সাক্ষীদের কাছ থেকে তিনি সাহায্য পান আর এখন আধ্যাত্মিক আরোগ্যের পথে রয়েছেন। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে অ্যান্থনী বলেন “যিহোবা এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ কারণ আমি পুরাতন ব্যক্তিত্ব পরিত্যাগ করতে পেরেছি আর আমি প্রতিদিন নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছি। যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
আপনার পরিচর্যায় আধ্যাত্মিক অগ্রগতি
যীশু খ্রীষ্ট তাঁর অনুগামীদের “রাজ্যের . . . সুসমাচারের” প্রচারক হতে আদেশ দিয়েছিলেন। (মথি ২৪:১৪) আপনি হয়ত সবেমাত্র সুসমাচার প্রচার শুরু করেছেন আর তাই পরিচর্যায় আপনার অভিজ্ঞতা হয়ত সীমিত। তাহলে কিভাবে আপনি ‘আপনার পরিচর্যা সম্পন্ন’ করার জন্য অগ্রগতি করতে পারেন?—২ তীমথিয় ৪:৫.
ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা হল একটি উপায়। প্রচার কাজকে “ধন,” অর্থাৎ একটি সুযোগ হিসাবে মনে করতে শিখুন। (২ করিন্থীয় ৪:৭) এটি আমাদের যিহোবার প্রতি প্রেম, নিষ্ঠা এবং সততা প্রকাশ করার সুযোগ দেয়। এটি আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি চিন্তা দেখানোর সুযোগ করে দেয়। এই কাজে নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে দিয়ে দেওয়া আপনাকে প্রকৃতই সুখী করতে পারে।—প্রেরিত ২০:৩৫.
প্রচার কাজ সম্পর্কে যীশুর নিজের এক ইতিবাচক মনোভাব ছিল। বাইবেলের সত্য অন্যদের জানানো তাঁর কাছে “খাদ্য”-এর মত ছিল। (যোহন ৪:৩৪) তাই অন্যদের সাহায্য করার পিছনে তাঁর যে উদ্দেশ্য ছিল তা তাঁর এই কথাগুলি দ্বারাই সবচেয়ে ভালভাবে সারাংশ করা যায়, “আমার ইচ্ছা।” (মথি ৮:৩) লোকেদের জন্য যীশুর করুণা ছিল, বিশেষভাবে তাদের জন্য যারা শয়তানের জগতের দ্বারা “ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন।” (মথি ৯:৩৫, ৩৬) একইভাবে আপনারও কি তাদের সাহায্য করতে “ইচ্ছা” করে যারা আধ্যাত্মিকভাবে অন্ধকারে রয়েছেন এবং যাদের ঈশ্বরের বাক্যের জ্ঞানালোকের প্রয়োজন? আপনি তাহলে যীশুর এই আদেশের প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য বাধ্যতা অনুভব করবেন: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর।” (মথি ২৮:১৯) প্রকৃতপক্ষে, আপনার স্বাস্থ্য এবং পরিস্থিতি যতখানি আপনাকে করতে দেয় আপনি তা যথাসম্ভব পূর্ণরূপে করতে চাইবেন।
অগ্রগতি করার আরেকটি চাবি হল পরিচর্যায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করা—সম্ভব হলে প্রতি সপ্তাহে। এটা করলে সেই সংকোচ বা ভয় কমে যায় যা কখনও কখনও প্রচারে বের হলে মনে এসে থাকে। নিয়মিতভাবে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় যাওয়া আপনাকে অন্যান্য উপায়েও সাহায্য করবে। এটি সত্যের জন্য আপনার উপলব্ধি বৃদ্ধি করতে, যিহোবা এবং প্রতিবেশীর প্রতি আপনার প্রেম বজায় রাখতে এবং রাজ্যের আশাকে ধরে রাখতে আপনাকে সাহায্য করবে।
কিন্তু আপনার বর্তমান পরিস্থিতির কারণে যদি আপনি প্রচার কাজে বেশি করে অংশ নিতে না পারেন তাহলে কী? যদি সত্যিই কিছু পরিবর্তন করা একেবারেই সম্ভব না হয়, দুঃখ করার কিছু নেই কারণ আপনি যতটুকুই করতে পারেন ঈশ্বর তাতেই সন্তুষ্ট, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আপনার হৃদয় থেকে তা করছেন। (মথি ১৩:২৩) সম্ভবত অন্যান্য উপায়ে, যেমন আপনার প্রচারের দক্ষতা বৃদ্ধি করে আপনি অগ্রগতি করতে পারেন। মণ্ডলীতে, ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয় এবং পরিচর্যা সভা এই বিষয়ে প্রচুর উত্তম প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। স্বভাবতই, আমরা যতই পরিচর্যায় উপযুক্ত হব, ততই আমরা এটিকে উপভোগ করব আর এর ফলাফলগুলি দেখতে পাব।
সুতরাং এটি স্পষ্ট যে একজন ব্যক্তি যেদিন বাপ্তিস্ম নেন সেইদিন তার আধ্যাত্মিক অগ্রগতি অবশ্যই থেমে যাবে না। প্রেরিত পৌল স্বর্গে অমর জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিষয়ে তার প্রত্যাশার কথা লিখেছিলেন: “ভ্রাতৃগণ, আমি যে তাহা ধরিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না; কিন্তু একটী কাজ করি, পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতে দৌড়িতে আমি খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের কৃত ঊর্দ্ধ্বদিক্স্থ আহ্বানের পণ পাইবার জন্য যত্ন করিতেছি। অতএব আইস, আমরা যত লোক সিদ্ধ, সকলে এই বিষয় ভাবি; আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের অন্যবিধ ভাব থাকে, তবে ঈশ্বর তোমাদের কাছে তাহাও প্রকাশ করিবেন।”—ফিলিপীয় ৩:১৩-১৫.
হ্যাঁ, প্রত্যেক খ্রীষ্টান, তাদের আশা অমর স্বর্গীয় জীবন বা পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্ত জীবন যাই হোক না কেন, তাদের অবশ্যই ‘সম্মুখের চেষ্টায় একাগ্র’ অর্থাৎ জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রাণপণ করতে হবে। আপনার বাপ্তিস্ম একটি উত্তম আরম্ভ ছিল কিন্তু এটি একটি সূচনা মাত্র। আধ্যাত্মিক অগ্রগতি করতে অবিরত কঠোর প্রচেষ্টা করে চলুন। সভাগুলি এবং ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে, “বুদ্ধিতে পরিপক্ব হও।” (১ করিন্থীয় ১৪:২০) “বুঝিতে সমর্থ হও যে,” সত্যের “সেই প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা কি।” (ইফিষীয় ৩:১৮) যে অগ্রগতি আপনি করেছেন তা শুধু এখন আনন্দ এবং সুখ বজায় রাখতেই সাহায্য করবে না বরং ঈশ্বরের নতুন জগতে নিরাপদ স্থান লাভ করতেও আপনাকে সাহায্য করবে আর আপনি তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যের শাসনাধীনে অনন্তকাল অগ্রগতি করতে পারবেন।
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
ব্যক্তিগত অধ্যয়নের সময় করে নেওয়ার জন্য নিয়মানুবর্তিতার প্রয়োজন
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইতিবাচক মনোভাব পরিচর্যায় আনন্দ খুঁজে পেতে আমাদের সাহায্য করতে পারে