যিহোবা ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন
“[যিহোবা] ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন।”—যিশাইয় ৪০:২৯.
১. ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে কত অগাধ শক্তি রয়েছে তা ব্যাখ্যা করুন।
যিহোবার শক্তির কোন সীমা নেই। তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সে সমস্ত কিছুর মধ্যে কত অগাধ শক্তিই না আমরা দেখতে পাই! উদাহরণ হিসেবে এক ক্ষুদ্র পরমাণুকে ধরা যাক। এই ক্ষুদ্র পরমাণু হচ্ছে সমস্ত সৃষ্টির মূল। কিন্তু তা আকারে এতই ছোট যে এক ফোঁটা জলে কোটি কোটি পরমাণু থাকে।a সূর্যে ঘটে চলা পারমাণবিক বিক্রিয়ার ফলে শক্তি উৎপন্ন হয় আর সূর্য থেকে আসা শক্তিতে পৃথিবীর জীবজগৎ বেঁচে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর এই জীবজগৎকে বাঁচিয়ে রাখতে কতখানি সৌরশক্তির দরকার? সূর্য যে শক্তি উৎপন্ন করে তার শুধুমাত্র এক ক্ষুদ্র অংশ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায়। গণিতবিদ ফ্রেড হোয়েল তার জ্যোর্তিবিদ্যা (ইংরেজি) নামের বইয়ে লেখেন, “পৃথিবীতে সূর্যের শক্তির যে ক্ষুদ্র অংশ এসে পৌঁছায় তা পৃথিবীর সমস্ত কলকারখানাগুলোতে যে পরিমাণ শক্তি লাগে তার চেয়ে এত অধিক যে তা পরিমাপ করা যায় না।”
২. যিহোবার শক্তির বিষয়ে যিশাইয় ৪০:২৬ পদে কী বলা আছে?
২ আমরা একটা ছোট্ট পরমাণুর কথাই ভাবি বা আমাদের এই বিশাল বিশ্বের দিকেই নজর দিই, আমরা যিহোবার শক্তি দেখে অবাক হয়ে যাই। তাই তিনি যা বলেছিলেন তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। তিনি বলেছিলেন: “ঊর্দ্ধ্বদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ, ঐ সকলের সৃষ্টি কে করিয়াছে? তিনি বাহিনীর ন্যায় সংখ্যানুসারে তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনেন, সকলের নাম ধরিয়া তাহাদিগকে আহ্বান করেন; তাঁহার সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য প্রযুক্ত তাহাদের একটাও অনুপস্থিত থাকে না।” (যিশাইয় ৪০:২৬) সত্যিই যিহোবার ‘প্রবল শক্তি’ আছে ও তিনিই ‘অধিক সামর্থ্য’ রাখেন আর এই শক্তি ও সামর্থ্য দিয়েই তিনি এই নিখিলবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন।
অসাধারণ শক্তির দরকার
৩, ৪. (ক) কোন্ জিনিসগুলো আমাদের ক্লান্ত করে দেয়? (খ) আর তাই কোন্ প্রশ্ন ওঠে?
৩ ঈশ্বরের শক্তির কোন সীমা নেই কিন্তু আমরা মানুষরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আমরা যেখানেই যাই না কেন, ক্লান্ত লোকেদের দেখতে পাই। লোকেরা ক্লান্তভাবে ঘুম থেকে ওঠে, ক্লান্তি নিয়েই কাজে বা স্কুলে যায়, ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে আসে আর শুধু ক্লান্ত হয়েই নয় একেবারে পরিশ্রান্ত হয়ে বিছানায় যায়। অনেকে মনে করে যে ক্লান্তি দূর করার ও একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাদের কোথাও যাওয়া দরকার। আমরা যিহোবার দাসেরাও ক্লান্ত হই কারণ যিহোবাকে সেবা করার জন্য আমাদের অনেক কাজ করার দরকার হয়। (মার্ক ৬:৩০, ৩১; লূক ১৩:২৪; ১ তীমথিয় ৪:৮) এছাড়া আরও অন্যান্য অনেক কারণে আমাদের শক্তি শেষ হয়ে যায়।
৪ আমরা খ্রীষ্টান বলে জগতের লোকেরা যে ঝামেলাগুলো পোহায় তা আমাদের ওপর আসে না, এমন নয়। (ইয়োব ১৪:১) রোগ, টাকাপয়সার অভাব ও রোজকার অন্য অসুবিধাগুলো হয়তো আমাদের মন ভেঙে দিতে পারে। এগুলো ছাড়াও আমাদের ধার্মিকভাবে জীবনযাপন করার জন্য তাড়না ভোগ করতে হতে পারে। (২ তীমথিয় ৩:১২; ১ পিতর ৩:১৪) রোজকার জীবনে জগৎ থেকে আসা চাপ, আমাদের প্রচার কাজের ওপর আসা বিরোধিতা এই সবকিছুর জন্য আমরা কখনও কখনও এত ক্লান্ত হয়ে পড়ি যে, আমরা যিহোবার সেবায় ধিমিয়ে পড়ি। এছাড়া যিহোবার পথ থেকে আমাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শয়তান দিয়াবল সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন প্রশ্ন ওঠে যে কীভাবে আমরা সেই আধ্যাত্মিক শক্তি পাব, যা আমাদেরকে ক্লান্ত হয়ে যিহোবার সেবা ছেড়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখবে?
৫. খ্রীষ্টীয় পরিচর্যা করে চলার জন্য কেন আমাদের নিজেদের শক্তির চেয়ে আরও বেশি শক্তির দরকার?
৫ আধ্যাত্মিক শক্তির জন্য আমাদের যিহোবার ওপর পুরোপুরি ভরসা করা দরকার। কারণ তিনি হচ্ছেন সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে আমরা অসিদ্ধ মানুষ হওয়ায় আমাদের শক্তিতে প্রচার কাজ করতে পারি না। তা করতে আমাদের নিজেদের শক্তির চেয়ে আরও বেশি শক্তির দরকার। তিনি লিখেছিলেন: “এই ধন মৃন্ময় পাত্রে করিয়া আমরা ধারণ করিতেছি, যেন পরাক্রমের উৎকর্ষ [“অসাধারণ শক্তি,” NW] ঈশ্বরের হয়, আমাদের হইতে নয়।” (২ করিন্থীয় ৪:৭) এই পৃথিবীতে যারা বেঁচে থাকবে তাদের সেই সঙ্গীদের সমর্থন পেয়ে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা ‘সম্মিলনের পরিচর্য্যা’ করে চলেছেন। (২ করিন্থীয় ৫:১৮; যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) আমরা অসিদ্ধ মানুষেরা তাড়নার মুখেও ঈশ্বরের কাজ করছি কিন্তু আমরা শুধু নিজেদের শক্তিতে তা করতে পারি না। যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার শক্তি দিয়ে আমাদের সাহায্য করেন আর তাই আমাদের দুর্বলতা দেখায় যে তিনি কত শক্তিশালী। আর এই কথা শুনে আমরা কতই না স্বস্তি পাই যে, “সদাপ্রভু ধার্ম্মিকদিগকে ধরিয়া রাখেন।”—গীতসংহিতা ৩৭:১৭.
‘যিহোবা আমাদের বল’
৬. বাইবেল আমাদের কীভাবে নিশ্চিত করে বলে যে যিহোবা আমাদের শক্তি দেন?
৬ আমাদের পিতা যিনি স্বর্গে থাকেন তাঁর ‘প্রবল শক্তি’ আছে আর তিনি আমাদের শক্তি দেন। আসলে বাইবেল আমাদের নিশ্চিত করে বলে: “[যিহোবা] ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন, ও শক্তিহীন লোকের বল বৃদ্ধি করেন। তরুণেরা ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়, যুবকেরা স্খলিত, স্খলিত হয়; কিন্তু যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊদ্ধের্ব উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।” (যিশাইয় ৪০:২৯-৩১) যেহেতু আজকে দিনের পর দিন চাপ বেড়েই চলেছে, তাই আমরা হয়তো কখনও কখনও নিজেদের এক ক্লান্ত দৌড়বিদের মতো মনে করতে পারি যার পা যেন আর চলতে চায় না। কিন্তু জীবনের দৌড়ে আমরা প্রায় শেষ সীমার একেবারে কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি আর আমাদের এখন হাল ছেড়ে দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। (২ বংশাবলি ২৯:১১) আমাদের বিপক্ষ শয়তান দিয়াবল “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়” ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে আমাদের থামিয়ে দিতে চায়। (১ পিতর ৫:৮) কিন্তু আমরা মনে রাখি যে ‘সদাপ্রভু আমাদের বল ও আমাদের ঢাল।’ আর তিনি ‘ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেওয়ার’ জন্য অনেক ব্যবস্থা করেছেন।—গীতসংহিতা ২৮:৭.
৭, ৮. যিহোবা দায়ূদ, হবক্কূক ও পৌলকে যে শক্তি দিয়েছিলেন তার কী প্রমাণ আছে?
৭ যিহোবা দায়ূদকে অত্যন্ত বাধার মধ্যেও বেঁচে থাকার শক্তি দিয়েছিলেন। তাই পুরো বিশ্বাস ও ভরসা নিয়ে দায়ূদ লিখতে পেরেছিলেন: “ঈশ্বরের দ্বারা আমরা বীরের কর্ম্ম করিব; তিনিই আমাদের বিপক্ষদিগকে মর্দ্দন করিবেন।” (গীতসংহিতা ৬০:১২) যিহোবা হবক্কূককেও শক্তি দিয়েছিলেন যাতে তিনি তাঁর ভাববাণী বলার কাজ করতে পারেন। হবক্কূক তার বইয়ের ৩ অধ্যায়ের ১৯ পদে বলেন: “প্রভু সদাপ্রভুই [“যিহোবা,” NW]আমার বল, তিনি আমার চরণ হরিণীর চরণ সদৃশ করেন, তিনি আমার উচ্চস্থলী সকল দিয়া আমাকে গমন করাইবেন।” এছাড়া পৌলের জীবনের ঘটনা থেকেও আমরা এই একই বিষয় দেখতে পাই। তিনি লিখেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে [ঈশ্বরে] আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলিপীয় ৪:১৩.
৮ দায়ূদ, হবক্কূক ও পৌলের মতো আমাদের বিশ্বাস করা উচিত যে, যিহোবা আমাদের শক্তি দেন ও আমাদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাঁর আছে। সার্বভৌম প্রভু যিহোবা আমাদের “বল” দেন এই কথা মনে রেখে আসুন এখন আমরা যিহোবা আমাদের জন্য যে ব্যবস্থাগুলো করেছেন তার থেকে আধ্যাত্মিক শক্তি পাওয়ার কিছু উপায় দেখি।
আমাদের শক্তি জোগানোর জন্য আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা
৯. বাইবেলের বইপত্রিকাগুলো কীভাবে আমাদের শক্তি দেয় ও পুষ্টি জোগায়?
৯ খুব মন দিয়ে বাইবেল ও বাইবেলের বইপত্রিকাগুলো অধ্যয়ন করা আমাদের শক্তি দিতে পারে ও পুষ্টি জোগাতে পারে। গীতরচক গেয়েছিলেন: “ধন্য সেই ব্যক্তি, যে . . . সদাপ্রভুর ব্যবস্থায় আমোদ করে, তাঁহার ব্যবস্থা দিবারাত্র ধ্যান করে। সে জলস্রোতের তীরে রোপিত বৃক্ষের সদৃশ হইবে, যাহা যথাসময়ে ফল দেয়, যাহার পত্র ম্লান হয় না; আর সে যাহা কিছু করে, তাহাতেই কৃতকার্য্য হয়।” (গীতসংহিতা ১:১-৩) ঠিক যেমন শরীরে শক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের খাবার খেতে হয় তেমনই আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী থাকার জন্য আমাদের ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল ও বাইবেলের বইপত্রিকাগুলো থেকে আধ্যাত্মিক খাবার খাওয়া উচিত, যা যিহোবা আমাদের দিচ্ছেন। তাই মন দিয়ে অধ্যয়ন ও বিষয়গুলো চিন্তা করা খুবই জরুরি।
১০. অধ্যয়ন ও চিন্তা করার জন্য আমরা কখন সময় করে নিতে পারি?
১০ ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ নিয়ে চিন্তা বা ধ্যান করা আমাদের জন্য ভাল ফল নিয়ে আসে। (১ করিন্থীয় ২:১০) কিন্তু চিন্তা করার জন্য আমরা কখন সময় করে নিতে পারি? অব্রাহামের পুত্র ইস্হাক “সন্ধ্যাকালে ধ্যান করিতে ক্ষেত্রে গিয়াছিলেন।” (আদিপুস্তক ২৪:৬৩-৬৭) গীতরচক দায়ূদ ‘প্রহরে প্রহরে ঈশ্বরের বিষয়ে ধ্যান করতেন।’ (গীতসংহিতা ৬৩:৬) আমরা সকাল বেলায়, সন্ধ্যে বেলায়, রাতের বেলায়, আসলে যে কোন সময় বাইবেল পড়তে ও বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে পারি। অধ্যয়ন ও তা নিয়ে চিন্তা করার পর আরেক যে ব্যবস্থা যিহোবা দিয়েছেন আমরা তা কাজে লাগাতে পারি আর তা হল প্রার্থনা।
১১. কেন আমাদের রোজ প্রার্থনা করা দরকার?
১১ রোজ ঈশ্বরের সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করা আমাদের শক্তি জোগায়। তাই আসুন আমরা ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকি।’ (রোমীয় ১২:১২) কখনও কখনও কোন পরীক্ষার সামনা করার সময় আমাদের হয়তো ঠিক সেই জন্যই বুদ্ধি বা শক্তি চাইতে হতে পারে। (যাকোব ১:৫-৮) আমরা যখন প্রার্থনার উত্তর পাই ও দেখি যে কীভাবে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করেন, তাঁর কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের শক্তি দেন তখন আসুন আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই ও তাঁর প্রশংসা করি। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) আমরা যদি প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আমাদের হৃদয় খুলে দিই, তিনি কখনও আমাদের ছেড়ে দেবেন না। দায়ূদ গেয়েছিলেন, “দেখ, ঈশ্বর আমার সাহায্যকারী।”—গীতসংহিতা ৫৪:৪.
১২. কেন আমাদের ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার জন্য প্রার্থনা করা উচিত?
১২ আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা বা কার্যকারী শক্তি দিয়ে আমাদের শক্তি জোগান। পৌল লিখেছিলেন: “সেই পিতার কাছে আমি জানু পাতিতেছি, যেন তিনি আপনার প্রতাপধন অনুসারে তোমাদিগকে এই বর দেন, যাহাতে তোমরা তাঁহার আত্মা দ্বারা আন্তরিক মনুষ্যের সম্বন্ধে শক্তিতে সবলীকৃত হও।” (ইফিষীয় ৩:১৪-১৬) আমাদের তাঁর পবিত্র আত্মা চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত। মনে এই বিশ্বাস রেখে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত যে তিনি আমাদের তা দেবেন। যীশু যুক্তি দেখিয়েছিলেন: একজন বাবা যে তার ছেলেমেয়েকে ভালবাসে, ছেলেমেয়েরা যদি বাবার কাছে মাছ চায়, তাহলে বাবা কি মাছের বদলে সাপ দেবে? নিশ্চয়ই না। তাই তিনি বলেছিলেন: “অতএব তোমরা [পাপী ও তাই কিছুটা] মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (লূক ১১:১১-১৩) তাই আসুন আমরা মনে অটল বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করি। মনে রাখি যে, যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের পবিত্র আত্মা দিয়ে ‘শক্তিশালী’ করতে পারেন।
মণ্ডলী আমাদের শক্তি জোগায়
১৩. খ্রীষ্টীয় সভাগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
১৩ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সভাগুলোর মধ্যে দিয়ে যিহোবা আমাদের শক্তি জোগান। যীশু বলেছিলেন: “যেখানে দুই কি তিন জন আমার নামে একত্র হয়, সেইখানে আমি তাহাদের মধ্যে আছি।” (মথি ১৮:২০) যীশু যখন এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই সময়ে তিনি সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছিলেন যে বিষয়গুলোতে তাদের মন দেওয়া দরকার যারা মণ্ডলীতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। (মথি ১৮:১৫-১৯) কিন্তু তাঁর এই কথাগুলো সব সভা, সম্মেলন ও অধিবেশনগুলোর জন্য খাটে, যেখানে প্রার্থনা শুরু ও শেষ হয় তাঁর নামে। (যোহন ১৪:১৪) তাই এই সভাগুলোতে আসা আমাদের জন্য এক বিরাট সুযোগ তা সে সভা ছোট হোক বা হাজার হাজার লোকেরাই সেখানে আসুক। আমাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করার জন্য এই যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, আসুন আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ হই আর একে অন্যকে প্রেম ও ভাল কাজে উৎসাহিত করি।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
১৪. মণ্ডলীর প্রাচীনেরা যে আমাদের অনেকভাবে সাহায্য করেন তাতে আমাদের কী লাভ হয়?
১৪ প্রাচীনরা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হওয়ার জন্য সাহায্য করেন ও উৎসাহ দেন। (১ পিতর ৫:২, ৩) পৌল যে মণ্ডলীগুলোতে গিয়েছিলেন সেখানে তিনি তাদের সাহায্য করেছিলেন ও উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। আজকে ভ্রমণ অধ্যক্ষেরা এই একই কাজ করেন। আসলে পৌল সবসময় তার ভাইবোনদের সঙ্গে থাকতে চাইতেন যাতে তারা একে অন্যকে সাহায্য ও উৎসাহিত করতে পারেন। (প্রেরিত ১৪:১৯-২২; রোমীয় ১:১১, ১২) তাই আসুন আমরা যেন সবসময় আমাদের মণ্ডলীর প্রাচীন ও অধ্যক্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞ হই কারণ আমাদেরকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী রাখার জন্য তারা আমাদের অনেকভাবে সাহায্য করেন।
১৫. আমাদের মণ্ডলীর ভাইবোনেরা কীভাবে আমাদের শক্তি যোগাতে পারেন
১৫ আমাদের ভাইবোনেরা যাদের নিয়ে মণ্ডলী গড়ে ওঠে তারাও আমাদের ‘সান্ত্বনা [“শক্তি,” NW]’ জোগাতে পারেন। (কলসীয় ৪:১০, ১১) “বন্ধু” হয়ে আমাদের দুঃখের সময়ে তারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। (হিতোপদেশ ১৭:১৭) উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ১৯৪৫ সালে নাৎসি স্যাকসেনহাউসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে যখন যিহোবার সাক্ষিদের ছাড়া হয়েছিল সেই সময় মৃত্যু যাত্রায় ২২০ জন ভাইকে ২০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়েছিল। তারা দল বেঁধে চলেছিলেন। তাদের মধ্যে শক্তিশালী ভাইরা দুর্বল ভাইদের ঠেলা গাড়িতে চড়িয়ে টেনে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফল কী হয়েছিল? যে মৃত্যু যাত্রায় ১০,০০০ লোক মারা গিয়েছিল তাদের মধ্যে একজনও যিহোবার সাক্ষি ভাই ছিলেন না। এই ঘটনাগুলোর কথা ওয়াচ টাওয়ার সোসাইটির যিহোবার সাক্ষিবৃন্দের বর্ষ পুস্তক (ইংরেজি) ও যিহোবার সাক্ষিবৃন্দ—ঈশ্বরের রাজ্যের ঘোষণাকারী (ইংরেজি) নামের বইগুলোতে লেখা আছে। এই ঘটনাগুলো দেখায় যে যিহোবা তাঁর লোকেদের শক্তি দেন যাতে তারা হাল ছেড়ে না দেন।—গালাতীয় ৬:৯.b
প্রচারে যাওয়া আমাদের শক্তি দেয়
১৬. প্রতিদিন রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে আমরা কীভাবে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হই?
১৬ প্রতিদিন রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেও আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হই। এই কাজ আমাদেরকে ঈশ্বরের রাজ্যের দিকে তাকাতে এবং অনন্ত জীবন ও তা যে আশীর্বাদগুলো নিয়ে আসবে তার আশায় থাকতে সাহায্য করে। (যিহূদা ২০, ২১) প্রচারে গিয়ে আমরা যখন লোকেদের বাইবেলে যে প্রতিজ্ঞাগুলো করা আছে তা দেখাই, তখন তা আমাদের নিজেদের আশাকে বাড়ায় আর আমাদের মনে ভাববাদী মীখার মতো ইচ্ছা জাগায় যিনি বলেছিলেন: “আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামে চলিব।”—মীখা ৪:৫.
১৭. বাইবেল অধ্যয়ন করার সময় কোন্ বিষয়গুলো মনে রাখার কথা বলা হয়েছে?
১৭ অন্যদের সত্য শেখানোর সময় আমরা যত বেশি বাইবেল থেকে কথা বলি যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তত বেশি গভীর হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে যখন জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে নিয়ে যায় বই নিয়ে বাইবেল অধ্যয়ন করা হয়, তখন সেখানে দেওয়া পদগুলোর বেশির ভাগই পড়া ও আলোচনা করা উচিত। এতে আমাদের ছাত্ররা বাইবেল থেকে বিষয়টা দেখতে পায় আর আমাদের নিজেদেরও বাইবেলের জ্ঞান বাড়ে। যদি কোন ছাত্র বাইবেলের কোন একটা বিষয় বা দৃষ্টান্ত সহজে বুঝতে না পারে, তাহলে জ্ঞান বইয়ের একটা অধ্যায় শেষ করতে দু তিন দিন সময় নেওয়া যেতে পারে। আর অন্যদের যিহোবার কাছে আসতে সাহায্য করতে আমরা নিজেরা ভাল করে তৈরি হওয়ার জন্য একটু বেশি খাটাখাটনি করতে কতই না খুশি হই!
১৮. কীভাবে জ্ঞান বই নিয়ে অধ্যয়ন করানো হচ্ছে তা বলুন।
১৮ প্রত্যেক বছর জ্ঞান বই নিয়ে লোকেদের সঙ্গে অধ্যয়ন করানো হচ্ছে। এই বই থেকে অধ্যয়ন করে হাজার হাজার লোকেরা সত্য শিখছেন ও বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার সাক্ষি হচ্ছেন। আর এদের মধ্যে এমন অনেক লোকেরা অধ্যয়ন করছেন যারা খ্রীষ্টান নয় কিন্তু অন্য অন্য ধর্মের লোক। যেমন শ্রীলংকায় একজন হিন্দু ব্যক্তি ছোটবেলায় একজন সাক্ষি বোনকে পরমদেশ নিয়ে কথা বলতে শুনেছিলেন। কয়েক বছর পরে সেই ব্যক্তি ওই বোনের কাছে যান আর দেরি না করে বোনের স্বামী তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করেন। সেই ব্যক্তি রোজ অধ্যয়ন করতে আসতেন আর তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জ্ঞান বই শেষ হয়ে যায়। তিনি সব সভাতে আসতে শুরু করেন, তার আগের ধর্মের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন আর একজন প্রকাশক হন। যখন তিনি বাপ্তিস্ম নেন সেই সময় তিনি তার চেনাজানা এক লোকের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করছিলেন।
১৯. রাজ্যকে জীবনে প্রথম জায়গা দিয়ে আমরা কোন্ বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি?
১৯ রাজ্যকে জীবনে প্রথমে জায়গা দেওয়া আমাদেরকে আনন্দ দেয় আর তাতে আমরা শক্তি পাই। (মথি ৬:৩৩) যদিও আমাদের নানারকম পরীক্ষা সহ্য করতে হয়, আমরা খুশি মনে ও জোর কদমে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করে চলি। (তীত ২:১৪) আমাদের মধ্যে অনেকেই পূর্ণ-সময়ের প্রচার কাজ করছেন। আর কিছুজন যেখানে রাজ্যের প্রচারকদের খুব বেশি দরকার সেখানে গিয়ে প্রচার করছেন। আমরা যদি এইভাবে বা অন্য কোন উপায়ে রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেবা করি, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের কাজ ও তাঁর নামের জন্য আমরা যে প্রেম দেখিয়েছি তা তিনি ভুলে যাবেন না।—ইব্রীয় ৬:১০-১২.
যিহোবার শক্তিতে কাজ করে চলুন
২০. আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে শক্তি পাওয়ার জন্য আমরা যিহোবার দিকে তাকাই?
২০ আসুন আমরা আমাদের সব কাজেকর্মে দেখাই যে আমরা যিহোবার ওপর আশা রাখি আর শক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর দিকে তাকাই। আর তা আমরা দেখাতে পারি ‘বিশ্বস্ত দাসেদের’ দিয়ে তিনি যে আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো করেছেন তা মেনে চলে। (মথি ২৪:৪৫) নিজে ও মণ্ডলীতে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল ও বাইবেলের বইপত্রিকাগুলো পড়া, অন্তর থেকে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা, সত্যে উন্নতি করার জন্য প্রাচীনদের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য, আমাদের বিশ্বস্ত ভাইবোনদের ভাল উদাহরণ আর নিয়মিত প্রচারে যাওয়া হচ্ছে সেই ব্যবস্থাগুলো, যা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর করে ও তাঁকে পবিত্রভাবে সেবা করার শক্তি জুগিয়ে চলে।
২১. প্রেরিত পিতর ও পৌল কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে আমাদের ঈশ্বরের দেওয়া শক্তির দরকার আছে?
২১ আমরা দুর্বল হলেও যিহোবা আমাদের তাঁর ইচ্ছা পালন করার জন্য শক্তি দেন, যদি আমরা তাঁর ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখি। আমাদের যে যিহোবার এই সাহায্যের দরকার আছে তা বুঝে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “যদি কেহ . . . পরিচর্য্যা করে, সে ঈশ্বর-দত্ত শক্তি অনুসারে করুক।” (১ পিতর ৪:১১) আর পৌল যে ঈশ্বরের দেওয়া শক্তির ওপর ভরসা রাখতেন তা ফুটে ওঠে যখন তিনি বলেন: “খ্রীষ্টের নিমিত্ত নানা দুর্ব্বলতা, অপমান, অনাটন, তাড়না, সঙ্কট ঘটিলে আমি প্রীত হই, কেননা যখন আমি দুর্ব্বল, তখনই বলবান্।” (২ করিন্থীয় ১২:১০) আসুন আমরাও এই একইরকম বিশ্বাস দেখাই ও সার্বভৌম প্রভু যিহোবা ঈশ্বরের মহিমা করি, যিনি ক্লান্ত ব্যক্তিকে শক্তি দেন।—যিশাইয় ১২:২.
[পাদটীকাগুলো]
a যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যা গণনার হিসেব মতো এই সংখ্যা হচ্ছে ১ এর পরে ২০টা শূন্য।
b ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল আ্যন্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• যিহোবার লোকেদের অসাধারণ শক্তির দরকার কেন?
• যিহোবা যে তাঁর দাসদের শক্তি দেন তা বাইবেলের কোথা থেকে জানা যায়?
• আমাদের শক্তি জোগানোর জন্য যিহোবা কোন্ আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো করেছেন?
• আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে আমরা শক্তি পাওয়ার জন্য যিহোবার দিকে তাকাই?
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যখন অন্যদের বাইবেল শেখাই তখন যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়