আমরা চিরকাল যিহোবার নামে চলব!
“আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে চলিব।”—মীখা ৪:৫.
১. মীখা ৩ থেকে ৫ অধ্যায়ের মধ্যে কোন বার্তাগুলো রয়েছে?
যিহোবা তাঁর লোকেদের কিছু বলতে চান আর তাই তিনি তাঁর ভাববাদী হিসেবে মীখাকে ব্যবহার করছেন। অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হল ঈশ্বরের উদ্দেশ্য। তিনি ধর্মভ্রষ্টতার জন্য ইস্রায়েলকে শাস্তি দিতে চলেছেন। কিন্তু আনন্দের বিষয় হল যে, যারা যিহোবার নামে চলে তাদের তিনি আশীর্বাদ করবেন। এই বার্তাগুলো মীখার ভবিষ্যদ্বাণীর ৩ থেকে ৫ অধ্যায়ের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয়।
২, ৩. (ক) ইস্রায়েলের নেতাদের কোন গুণ দেখানো উচিত কিন্তু তারা আসলে কী করছে? (খ) মীখা ৩:২, ৩ পদে যে-রূপক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
২ ঈশ্বরের ভাববাদী ঘোষণা করেন: “শুন দেখি, হে যাকোবের প্রধানবর্গ ও ইস্রায়েল-কুলের অধ্যক্ষগণ, ন্যায়বিচার জ্ঞাত হওয়া কি তোমাদের উচিত নয়?” হ্যাঁ, সেটা জ্ঞাত হওয়াই তাদের উচিত কিন্তু তারা আসলে কী করছে? মীখা বলেন: “তোমরা সৎকর্ম্ম ঘৃণা করিতেছ, ও দুষ্কর্ম্ম ভালবাসিতেছ, লোকদের গাত্র হইতে চর্ম্ম ও অস্থি হইতে মাংস ছাড়াইয়া লইতেছ। এই লোকেরা আমার প্রজাগণের মাংস খাইতেছে; তাহাদের চর্ম্ম খুলিয়া অস্থি ভাঙ্গিয়া ফেলিতেছে; যেমন হাঁড়ীর জন্য খাদ্যদ্রব্য, কিম্বা কটাহের মধ্যে মাংস, তেমনি তাহা কুচি কুচি করিয়া কাটিতেছে।”—মীখা ৩:১-৩.
৩ হ্যাঁ, নেতারা দরিদ্র, অরক্ষিত লোকেদের অত্যাচার করছে! এখানে যে-রূপক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তা সেই লোকেরা সহজেই বুঝতে পারে, যারা মীখার কথা শোনে। একটা বলিকৃত মেষকে যখন সিদ্ধ করে প্রস্তুত করা হয়, তখন প্রথমে এর চামড়া খুলে নেওয়া হয় ও পরে টুকরো টুকরো করা হয়। কখনও কখনও মজ্জা বের করে নেওয়ার জন্য হাড়গুলো ভাঙা হয়। মাংস ও হাড় দুটোই একটা বড় হাঁড়িতে সিদ্ধ করা হয়, যেমনটা মীখা উল্লেখ করেছেন। (যিহিষ্কেল ২৪:৩-৫, ১০) মীখার দিনে লোকেরা তাদের দুষ্ট নেতাদের কাছ থেকে যে-খারাপ ব্যবহার সহ্য করছে, সেটার কতই না এক উপযুক্ত দৃষ্টান্ত!
যিহোবা আশা করেন যেন আমরা ন্যায়পরায়ণ হই
৪. যিহোবা এবং ইস্রায়েলের নেতাদের মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে?
৪ প্রেমময় পালক যিহোবা এবং ইস্রায়েলের নেতাদের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। যেহেতু তারা ন্যায়বিচার অনুশীলন করে না, তাই তারা পালকে রক্ষা করার বিষয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়। এর পরিবর্তে, তারা স্বার্থপরভাবে রূপক মেষদের শোষণ করে, তাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে ও মীখা ৩:১০ পদ অনুযায়ী তাদের ‘রক্তপাত’ ঘটায়। এই পরিস্থিতি থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৫. যিহোবার লোকেদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব নেয়, তাদের কাছ থেকে তিনি কী চান?
৫ ঈশ্বর চান যে, তাঁর লোকেদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব নেয়, তারা যেন ন্যায়বিচার অনুশীলন করে। এটাই আজকে আমরা যিহোবার দাসদের মধ্যে দেখতে পাই। এ ছাড়াও, এটা যিশাইয় ৩২:১ পদের সঙ্গে মিল রাখে, যেখানে আমরা পড়ি: “দেখ, এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ ন্যায়ে শাসন করিবেন।” কিন্তু মীখার দিনে, আমরা কী দেখতে পাই? যারা ‘সৎকর্ম্ম ঘৃণা করে ও দুষ্কর্ম্ম ভালবাসে’ তারা ন্যায়বিচারকে বিকৃত করার জন্য নাছোড়বান্দা।
কাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়?
৬, ৭. মীখা ৩:৪ পদে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে?
৬ মীখার সমসাময়িক দুষ্ট লোকেরা কি যিহোবার অনুগ্রহ আশা করতে পারে? অবশ্যই না! মীখা ৩:৪ পদ বলে: “তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিবে, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে উত্তর দিবেন না; বরং তাহারা যেমন আপনাদের ব্যবহারে দুষ্ক্রিয়া করিয়াছে, তেমনি তিনি সেই সময়ে তাহাদের হইতে আপন মুখ লুকাইবেন।” এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়কে তুলে ধরে।
৭ আমরা যদি পাপ করেই চলি, তা হলে যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন না। আর এটা তখনই সত্য হয়, যদি আমরা দ্বৈত জীবনযাপন করি অর্থাৎ আমাদের অন্যায়কে লুকিয়ে রেখে বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের সেবা করার ভান করি। গীতসংহিতা ২৬:৪ পদ অনুযায়ী, দায়ূদ গেয়েছিলেন: “আমি অলীক লোকদের সঙ্গে বসি নাই, আমি ছদ্মবেশীদের সঙ্গে চলিব না।” যারা ইচ্ছে করে যিহোবার বাক্য অমান্য করে, তাদের প্রার্থনার কোনো উত্তর তিনি দেবেন না!
ঈশ্বরের আত্মার মাধ্যমে শক্তি লাভ
৮. মীখার দিনের মিথ্যা ভাববাদীদের কোন বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল?
৮ ইস্রায়েলের আধ্যাত্মিক নেতাদের মধ্যে খারাপ কাজ কতই না সাধারণ! মিথ্যা ভাববাদীরা ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিকভাবে পথভ্রষ্ট করে। লোভী লোকেরা “শান্তি” বলে চিৎকার করে কিন্তু আসলে এমন যেকারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিরূপণ করে, যে কিনা তাদের মুখে কিছু না দিয়ে থাকে। “এই কারণ,” যিহোবা বলেন, “তোমাদের কাছে রাত্রি উপস্থিত হইবে, তোমরা দর্শন পাইবে না; তোমাদের কাছে অন্ধকার উপস্থিত হইবে, তোমরা মন্ত্র পাঠ করিবে না; এই ভাববাদীদের উপরে সূর্য্য অস্তগত হইবে, ও ইহাদের উপরে দিন কৃষ্ণবর্ণ হইবে। তাহাতে এই দর্শকেরা লজ্জিত ও এই মন্ত্রপাঠকেরা হতাশ হইবে, সকলে আপন আপন ওষ্ঠাধর [“গোঁফ,” NW] ঢাকিবে।”—মীখা ৩:৫-৭ক।
৯, ১০. ‘গোঁফ ঢাকিবার’ অর্থ কী এবং মীখার এইরকম করার কোনো কারণ নেই কেন?
৯ কেন “গোঁফ ঢাকিবে”? এটা এমন কিছু, যা মীখার সমসাময়িক দুষ্ট লোকেরা লজ্জায় পড়লে করে থাকে। আর এই দুষ্ট লোকেদের লজ্জা পাওয়াই উচিত। তাদের বিষয়ে “ঈশ্বর উত্তর দিবেন না।” (মীখা ৩:৭খ) কোনো উদ্ধত দুষ্ট লোকের প্রার্থনায় যিহোবা মনোযোগ দেন না।
১০ কিন্তু মীখার ‘গোঁফ ঢাকিবার’ কোনো কারণ নেই। তিনি লজ্জিত নন। যিহোবা তার প্রার্থনার উত্তর দেন। মীখা ৩:৮ পদ লক্ষ করুন, যেখানে বিশ্বস্ত ভাববাদী বলেন: “আমি সত্যই সদাপ্রভুর আত্মার দত্ত শক্তিতে, এবং ন্যায়বিচারে ও বিক্রমে পরিপূর্ণ।” মীখা কতই না কৃতজ্ঞ যে, তার দীর্ঘ ও বিশ্বস্ত পরিচর্যায়, তিনি সবসময় “সদাপ্রভুর আত্মার দত্ত শক্তিতে . . . পরিপূর্ণ” ছিলেন! এটাই “যাকোবকে তাহার অধর্ম্ম ও ইস্রায়েলকে তাহার পাপ জ্ঞাত করিবার” জন্য তাকে শক্তি দিয়েছে।
১১. কীভাবে মানুষেরা ঈশ্বরের বার্তা ঘোষণা করার জন্য শক্তি পেতে পারে?
১১ ঈশ্বরের প্রতিকূল বিচারের বার্তা ঘোষণা করার জন্য মনুষ্য শক্তির চেয়ে মীখার আরও বেশি কিছুর দরকার ছিল। যিহোবার আত্মা বা ক্ষমতাশালী সক্রিয় শক্তি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের প্রচারের দায়িত্ব একমাত্র তখনই পূর্ণ হতে পারে, যদি যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাদের শক্তি দেন। আমরা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে চলি, তা হলে প্রচারের চেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হবে। সেই ক্ষেত্রে এই কাজ করার জন্য শক্তি চেয়ে আমাদের প্রার্থনার উত্তর ঈশ্বর দিতে পারেন না। আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার বিচারের বার্তা কোনোভাবেই ঘোষণা করতে পারি না, যদি না ‘সদাপ্রভুর আত্মা’ আমাদের ওপরে থাকে। যে-প্রার্থনাগুলো ঈশ্বর শোনেন সেগুলো এবং পবিত্র আত্মার সাহায্যের মাধ্যমে, আমরা মীখার মতো সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বলতে পারি।
১২. কেন যিশুর প্রাথমিক শিষ্যরা ‘সম্পূর্ণ সাহসের সহিত ঈশ্বরের বাক্য বলিতে’ পেরেছিল?
১২ আপনি হয়তো প্রেরিত ৪:২৩-৩১ পদের বিবরণের কথা মনে করতে পারেন। কল্পনা করুন যে, আপনি যিশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের মধ্যে একজন। গোঁড়া তাড়নাকারীরা খ্রিস্টের অনুসারীদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই অনুগত ব্যক্তিরা তাদের সার্বভৌম প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে, এই মিনতি জানিয়ে: “হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], উহাদের ভয়প্রদর্শনের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; এবং তোমার এই দাসদিগকে সম্পূর্ণ সাহসের সহিত তোমার বাক্য বলিবার ক্ষমতা দেও।” ফল কী হয়? তারা যখন বিনতি করছিল, তখন যে-স্থানে তারা সমবেত হয়েছিল, সেই স্থান কেঁপে ওঠে, এবং তারা সকলেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয় ও সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বলে। অতএব, আমরাও যেন আমাদের পরিচর্যা সম্পাদন করার সময় প্রার্থনা সহকারে যিহোবার দিকে তাকাই এবং পবিত্র আত্মার মাধ্যমে দেওয়া তাঁর সাহায্যের ওপর নির্ভর করি।
১৩. যিরূশালেম এবং শমরিয়ার কী হবে এবং কেন?
১৩ এখন আবারও মীখার দিনের কথা চিন্তা করুন। মীখা ৩:৯-১২ পদ অনুযায়ী, রক্তপাতের দোষে দোষী নেতারা ঘুস নিয়ে বিচার করে, যাজকরা বেতন নিয়ে শিক্ষা দেয় আর মিথ্যা ভাববাদীরা টাকার বিনিময়ে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জানায়। তাই যিহূদার রাজধানী, যিরূশালেম “কাঁথড়ার ঢিবী হইয়া যাইবে” বলে ঈশ্বর যে-রায় দেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! যেহেতু মিথ্যা উপাসনা ও নৈতিক অবক্ষয় ইস্রায়েলেও প্রচণ্ডভাবে বেড়ে চলেছে, তাই মীখা সতর্ক করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছেন যে, ঈশ্বর শমরিয়াকে “কাঁথড়ার ঢিবী” করবেন। (মীখা ১:৬) বস্তুতপক্ষে, এই ভাববাদী সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে অশূরীয়দের হাতে শমরিয়ার ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ধ্বংস দেখার জন্য জীবিত আছেন। (২ রাজাবলি ১৭:৫, ৬; ২৫:১-২১) এটা স্পষ্ট যে, যিরূশালেম এবং শমরিয়ার বিরুদ্ধে এই জোরালো বার্তাগুলো একমাত্র যিহোবার শক্তিতে বলা হয়েছে।
১৪. মীখা ৩:১২ পদে লিপিবদ্ধ ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল এবং সেটা কীভাবে আমাদেরকে প্রভাবিত করা উচিত?
১৪ যিহূদা কোনোভাবেই যিহোবার প্রতিকূল বিচার থেকে রেহাই পেতে পারে না। মীখা ৩:১২ পদে লেখা ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতায়, সিয়োন “ক্ষেত্রের ন্যায় কর্ষিত হইবে।” আমাদের একবিংশ শতাব্দীর দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা জানি যে, এই বিষয়গুলো বাবিলীয়রা সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যখন যিহূদা ও যিরূশালেমকে ধ্বংস করেছিল, তখন ঘটেছিল। এটা মীখা ভবিষ্যদ্বাণী করার অনেক বছর পরে ঘটেছিল কিন্তু তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে, তা আসতে চলেছে। আমাদেরও একইরকমভাবে আস্থা রাখা উচিত যে, বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত ‘ঈশ্বরের সেই দিনে’ শেষ হবে।—২ পিতর ৩:১১, ১২.
যিহোবা নিষ্পত্তি করেন
১৫. আপনার নিজের ভাষায় কীভাবে আপনি মীখা ৪:১-৪ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলো বর্ণনা করবেন?
১৫ অতীতের দিকে তাকিয়ে আমরা দেখি যে, মীখা এরপর আশার এক রোমাঞ্চকর বার্তা প্রকাশ করেন। মীখা ৪:১-৪ পদে আমরা কতই না উৎসাহজনক বার্তা পাই! এর কিছু অংশে মীখা বলেন: “শেষকালে এইরূপ ঘটিবে; সদাপ্রভুর গৃহের পর্ব্বত পর্ব্বতগণের মস্তকরূপে স্থাপিত হইবে, উপপর্ব্বতগণ হইতে উচ্চীকৃত হইবে; তাহাতে জাতিগণ তাহার দিকে স্রোতের ন্যায় প্রবাহিত হইবে। . . . আর তিনি অনেক জাতির মধ্যে বিচার করিবেন, এবং দূরস্থ বলবান জাতিদের সম্বন্ধে নিষ্পত্তি করিবেন; আর তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্ত্যা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না। কিন্তু প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না; কেননা বাহিনীগণের সদাপ্রভুর মুখ ইহা বলিয়াছে।”
১৬, ১৭. মীখা ৪:১-৪ পদের কথাগুলো কীভাবে আজকে পরিপূর্ণ হচ্ছে?
১৬ এখানে উল্লেখিত ‘অনেক জাতি’ এবং ‘বলবান জাতি’ কারা? তারা এই জগতের জাতি এবং সরকারগুলো নয়। এর পরিবর্তে, ভবিষ্যদ্বাণী সেই সমস্ত ব্যক্তিদের বেলায় খাটে, যারা যিহোবার সত্য উপাসনার পর্বতে পবিত্র উপাসনা করতে একত্রিত হওয়ার জন্য সমস্ত জাতি থেকে বের হয়ে এসেছে।
১৭ মীখার ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিল রেখে, শীঘ্রই সারা পৃথিবীতে পূর্ণরূপে যিহোবার শুদ্ধ উপাসনা করা হবে। এখন, যে-লোকেরা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW],” তারা যিহোবার পথগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা পাচ্ছে। (প্রেরিত ১৩:৪৮) যে-বিশ্বাসীরা রাজ্যকে সমর্থন করে, তাদের জন্য যিহোবা আধ্যাত্মিকভাবে বিচার করেন ও নিষ্পত্তি করেন। তারা ‘বিস্তর লোকের’ অংশ হিসেবে ‘মহাক্লেশ’ থেকে রক্ষা পাবে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৪) তাদের খড়্গ ভেঙে লাঙ্গলের ফাল তৈরি করায়, এমনকি আজকে তারা তাদের সহ যিহোবার সাক্ষি এবং অন্যদের সঙ্গে শান্তিতে বাস করে। তাদের মধ্যে থাকা কত আনন্দদায়ক!
যিহোবার নামে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ
১৮. ‘আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবার’ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
১৮ আমাদের দিনে, ভয় পৃথিবীকে এক অশুভ মেঘের মতো ঢেকে রাখা সত্ত্বেও, অনেকে যিহোবার পথগুলো সম্বন্ধে শিখছে বলে আমরা রোমাঞ্চিত। আমরা এখন সেই সময়ের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে আছি, যা খুবই কাছে, যখন ঈশ্বরকে ভালবাসে এমন সমস্ত লোক শুধু যুদ্ধ শেখা থেকেই বিরত হবে না বরং সেইসঙ্গে তাদের নিজেদের দ্রাক্ষালতা ও ডুমুর গাছের তলে বসবে। ডুমুর গাছগুলোকে সাধারণত দ্রাক্ষাক্ষেত্রেই লাগানো হয়। (লূক ১৩:৬) নিজের দ্রাক্ষালতা ও ডুমুর গাছের নিচে বসা শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধশালী ও নিরাপদ অবস্থাকে চিত্রিত করে। এমনকি এখনও, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আমাদের মনের শান্তি ও আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা দান করে। রাজ্যের অধীনে যখন এইরকম পরিস্থিতি বিরাজ করবে, তখন আমাদের কোনো ভয় থাকবে না আর আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকব।
১৯. যিহোবার নামে চলার মানে কী?
১৯ ঐশিক অনুগ্রহ এবং আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য, আমাদের যিহোবার নামে চলতে হবে। এটা মীখা ৪:৫ পদে জোরালোভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ভাববাদী ঘোষণা করেন: “জাতিমাত্র প্রত্যেকে আপন আপন দেবের নামে চলে; আর আমরা যুগে যুগে চিরকাল আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলিব।” যিহোবার নামে চলার অর্থ শুধু এই বলা নয় যে, তিনি আমাদের ঈশ্বর। এর জন্য শুধু খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়া ও রাজ্য প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু প্রয়োজন, যদিও এই কাজগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি যিহোবার নামে চলি, তা হলে আমরা তাঁর প্রতি উৎসর্গীকৃত এবং তাঁর প্রতি সর্বান্তঃকরণ প্রেমের কারণে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। (মথি ২২:৩৭) আর তাঁর সত্য উপাসক হিসেবে, নিশ্চিতভাবে আমরা চিরকাল আমাদের ঈশ্বর যিহোবার নামে চলতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
২০. মীখা ৪:৬-১৩ পদে কী ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল?
২০ এখন দয়া করে মীখা ৪:৬-১৩ পদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলো বিবেচনা করুন। ‘সিয়োন-কন্যাকে’ “বাবিল পর্য্যন্ত” বন্দিত্বে যেতে হবে। সা.কা.পূ. সপ্তম শতাব্দীতে যিরূশালেমের অধিবাসীদের প্রতি ঠিক তা-ই ঘটেছিল। তা সত্ত্বেও, মীখার ভবিষ্যদ্বাণী ইঙ্গিত করে যে, এক অবশিষ্টাংশ যিহূদায় ফিরে আসবে এবং সিয়োনের পুনর্স্থাপনকালে যিহোবা দেখবেন যে, তার শত্রুরা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে।
২১, ২২. মীখা ৫:২ পদ কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?
২১ মীখা ৫ অধ্যায়ে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির কথা ভবিষ্যদ্বাণী করা আছে। উদাহরণ হিসেবে, মীখা ৫:২-৪ পদে কী বলা হয়েছে, তা লক্ষ করুন। মীখা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, ঈশ্বরের নিযুক্ত একজন শাসক—‘প্রাক্কাল হইতে যাঁহার উৎপত্তি’—বৈৎলেহম থেকে আসবেন। তিনি “সদাপ্রভুর শক্তিতে” একজন পালক হিসেবে শাসন করবেন। সেইসঙ্গে এই শাসক মহান হবেন আর তা শুধু ইস্রায়েলে নয় কিন্তু “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত।” তাঁর পরিচয় সম্বন্ধে এই জগতের অনেকেই হয়তো বিভ্রান্তিতে রয়েছে কিন্তু আমাদের কাছে এটা অস্পষ্ট নয়।
২২ বৈৎলেহমে যত লোক জন্মেছিল, তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে ছিলেন? আর কেই বা “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত মহান্” হবেন? মশীহ, যিশু খ্রিস্ট ছাড়া আর কেউ নন! মহান হেরোদ যখন প্রধান যাজক ও অধ্যাপকদের জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, মশীহ কোথায় জন্মাবেন, তখন তারা উত্তর দিয়েছিল: “যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে।” তারা এমনকি মীখা ৫:২ পদের কথাগুলোও উদ্ধৃতি করেছিল। (মথি ২:৩-৬) সাধারণ কিছু লোকও এটা জানত কারণ যোহন ৭:৪২ পদ তাদের এই কথা উদ্ধৃত করে: “শাস্ত্রে কি বলে নাই, খ্রীষ্ট দায়ূদের বংশ হইতে, এবং দায়ূদ যেখানে ছিলেন, সেই বৈৎলেহম গ্রাম হইতে আসিবেন?”
লোকেদের জন্য প্রকৃত সতেজতা
২৩. মীখা ৫:৭ পদের পরিপূর্ণতায় এখন কী ঘটে চলছে?
২৩ মীখা ৫:৫-১৫ পদ অশূরীয় আক্রমণ সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যা শুধু ক্ষণস্থায়ীভাবে সফল হবে এবং জানায় যে, ঈশ্বর অবাধ্য জাতিগুলোর ওপর প্রতিশোধ নেবেন। মীখা ৫:৭ পদ অনুতপ্ত যিহুদি অবশিষ্টাংশদের তাদের নিজেদের দেশে পুনর্স্থাপন করার বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করে কিন্তু এই কথাগুলো আমাদের দিনের জন্যও প্রযোজ্য। মীখা ঘোষণা করেন: “অনেক জাতির মধ্যে যাকোবের অবশিষ্টাংশ সদাপ্রভুর নিকট হইতে আগত শিশিরের ন্যায়, তৃণের উপরে পতিত বৃষ্টির ন্যায় হইবে।” এই চমৎকার প্রতীককে এটা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল যে, আত্মিক যাকোব বা ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশ, লোকেদের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে এক আশীর্বাদস্বরূপ হবে। যিশুর “আরও মেষ,” যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তারা অন্যদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতেজ করার জন্য সাহায্য করতে আধুনিক দিনের “ঈশ্বরের ‘ইস্রায়েলের’” অবশিষ্টাংশের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেবা করে আনন্দিত। (যোহন ১০:১৬; গালাতীয় ৬:১৬; সফনিয় ৩:৯) এই সম্বন্ধে, চিন্তা করার মতো আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে, অন্যদের জন্য প্রকৃত সতেজতা নিয়ে আসার সুযোগকে আমাদের সকলের উপলব্ধি করা উচিত।
২৪. মীখা ৩ থেকে ৫ অধ্যায়ের মধ্যে কোন বিষয়গুলো আপনার ওপর ছাপ ফেলেছে?
২৪ মীখার ভবিষ্যদ্বাণীর ৩ থেকে ৫ অধ্যায়ের মধ্যে আপনি কী শিখেছেন? হয়তো এই ধরনের কিছু বিষয়: (১) ঈশ্বর চান যে, যারা তাঁর লোকেদের মধ্যে নেতৃত্ব দেয়, তারা যাতে ন্যায়বিচার অনুশীলন করে। (২) আমরা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করেই চলি, তা হলে যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন না। (৩) আমাদের প্রচার কাজের দায়িত্ব একমাত্র তখনই পরিপূর্ণ হবে, যদি ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাদের শক্তি দেন। (৪) ঐশিক অনুগ্রহ উপভোগ করার জন্য, আমাদের যিহোবার নামে চলতে হবে। (৫) রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে, লোকেদের জন্য প্রকৃত সতেজতা নিয়ে আসার সুযোগকে আমাদের উপলব্ধি করা উচিত। অন্য বিষয়গুলোও হয়তো আপনার মধ্যে ছাপ ফেলেছে। বাইবেলের এই ভবিষ্যদ্বাণীর বই থেকে আমরা আর কী শিখতে পারি? পরের প্রবন্ধ আমাদেরকে বিশ্বাস শক্তিশালী করার মতো মীখার ভবিষ্যদ্বাণীর বাকি দুটো অধ্যায় থেকে ব্যবহারিক শিক্ষা লাভ করতে সাহায্য করবে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• যারা ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে নেতৃত্ব নেয়, তাদের কাছ থেকে তিনি কী চান?
• যিহোবার প্রতি আমাদের সেবায় কেন প্রার্থনা এবং পবিত্র আত্মা গুরুত্বপূর্ণ?
• কীভাবে লোকেরা ‘যিহোবার নামে চলে’?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
রান্না করার একটা হাঁড়ির সঙ্গে যুক্ত মীখার দৃষ্টান্তটি কি আপনি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
মীখার মতো, আমরা সাহসের সঙ্গে আমাদের পরিচর্যা করে চলছি