পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
কেউ কেউ দাবি করেছে যে, পৌলের জাহাজডুবি সিসিলি দ্বীপের দক্ষিণে মিলিতা দ্বীপে নয় কিন্তু অন্য কোনো দ্বীপে হয়েছিল। কোথায় তার জাহাজডুবি হয়েছিল?
এই প্রশ্নটা সাম্প্রতিক একটা প্রস্তাব সম্বন্ধে উল্লেখ করে যে, প্রেরিত পৌলের জাহাজডুবি মিলিতা দ্বীপে নয় কিন্তু পশ্চিম গ্রিসের উপকূলবর্তী আয়োনিয়ান সাগরের কোর্ফুরের নিকটবর্তী সেফালোনিয়া (বা কেফাল্লিনিয়া) দ্বীপে হয়েছিল। অনুপ্রাণিত বিবরণ আমাদের বলে যে, পৌল কৈসরিয়া থেকে রোমীয় শতপতি যুলিয়ের প্রহরায় যাত্রা শুরু করেছিলেন, সঙ্গে আরও অন্যান্য সৈন্য এবং পৌলের সঙ্গীরাও ছিল। মানচিত্রে যেমন দেখানো হয়েছে, তারা জাহাজে চড়ে সীদোন ও মুরায় গিয়েছিল। পরে জাহাজ পরিবর্তন করে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে আগত একটা বড় শস্যবাহী জাহাজে চড়ে তারা পশ্চিমাঞ্চলে ক্লীদের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। তারা গ্রিস ও রোমের প্রান্তে প্রবাহিত ঈজিয়ান সাগরের ওপারে নির্ধারিত পথে থাকতে পারেনি। শক্তিশালী দমকা হাওয়া তাদেরকে দক্ষিণে ক্রীতী দ্বীপের দিকে এবং এর উপকূলগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছিল। সেখানে তারা সুন্দর পোতাশ্রয় নামে এক বন্দরে থেমেছিল। “ক্রীতী হইতে” জাহাজ ছাড়ায়, ‘উরাকুলো নামে অতি প্রচণ্ড এক বায়ুর’ কারণে জাহাজটা ‘ঝড়ের মধ্যে পড়িয়াছিল।’ ১৪ রাত ধরে শস্যবাহী এই ভারী জাহাজ ‘সমুদ্রে ইতস্ততঃ চালিত হইয়াছিল।’ অবশেষে মোট ২৭৬ জন ব্যক্তিসহ একটা দ্বীপে জাহাজডুবি হয়েছিল, পবিত্র শাস্ত্রের গ্রিক পাঠ্যাংশে এই দ্বীপের নাম বলে মিলিট।—প্রেরিত ২৭:১–২৮:১.
বছরের পর বছর ধরে, এই মিলিট দ্বীপের পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন ধারণা করা হয়েছে। কেউ কেউ ভেবেছিল যে, এটা ছিল মিলিট ইলিরিকা দ্বীপ, যা বর্তমানে মিলিয়েট নামে পরিচিত, যেটা ক্রোয়েশিয়ার উপকূলে এড্রিয়ার্টিক সমুদ্রে অবস্থিত। কিন্তু এটা অসম্ভব বলে মনে হয় কারণ মিলিয়েটের উত্তরাঞ্চল পৌলের যাত্রার পরবর্তী সেই ধাপগুলোর সঙ্গে মেলানো কঠিন হয় যথা সুরাকূষ, সিসিলি এবং এরপরে ইতালির পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকা।—প্রেরিত ২৮:১১-১৩.
বেশির ভাগ বাইবেল অনুবাদক এই উপসংহারে এসেছে যে, মিলিট মূলত মিলিট আফ্রিক্যানাস দ্বীপকে নির্দেশ করে, যা এখন মিলিতা বা মাল্টা নামে পরিচিত। পৌলকে বহনকারী জাহাজ শেষ যে-বিরতি-বন্দরে যায়, সেটা ছিল ক্রীতী দ্বীপের সুন্দর পোতাশ্রয়। এরপর অতি প্রচণ্ড এক বায়ু সেই জাহাজকে পশ্চিমে কৌদার দিকে চালিত করেছিল। সেই বায়ু জাহাজকে অনেকদিন ধরে চালিত করেছিল। তাই এটা পুরোপুরি যুক্তিসংগত যে, বায়ু চালিত জাহাজ আরও পশ্চিমে সরে যাবে এবং মিলিতায় গিয়েই পৌঁছাবে।
সচরাচর বিদ্যমান বাতাস এবং “গতিপথ ও ভেসে যাওয়ার হার” এর বিষয় বিবেচনা করে কেনিবার এবং হাউসন তাদের লেখা সাধু পৌলের জীবনী ও পত্রগুলো (ইংরেজি) বইয়ে উল্লেখ করে: “ক্লাউদা [বা কৌদা] এবং মিলিতার মধ্যবর্তী দূরত্ব ৭৭০ কিলোমিটারেরও কম। এই আকস্মিক ঘটনা এত উল্লেখযোগ্য এবং এটা বিশ্বাস করা একেবারেই অসম্ভব যে, নাবিকরা চৌদ্দতম রাতে মিলিতা ছাড়া অন্য কোনো জায়গার [নিকটবর্তী] হতে পারত। আর সেই সম্ভাবনা খুবই জোরালো।”
যদিও বিকল্প জায়গায় যাওয়ার বিষয়ে হয়তো প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে কিন্তু এখানে দেওয়া মানচিত্রে দেখানো মিলিতা দ্বীপে এক জাহাজডুবি, বাইবেলের বিবরণের সঙ্গে মিল রাখে।
[৩১ পৃষ্ঠার মানচিত্র/চিত্র]
(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)
যিরূশালেম
কৈসরিয়া
সীদোন
গ্রিস
ক্রীতী
মুরা
কৌদা
মিলিতা
সিসিলি
সুরাকূষ
রোম
মিলিয়েট
ক্লীদ
সেফালোনিয়া