সুখের সন্ধানে
কয়েক বছর আগে ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে লোকেদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: “সুখী হওয়ার জন্য কীসের প্রয়োজন?” যাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ লোক বলেছিল যে, এর জন্য সুস্বাস্থ্যের প্রয়োজন; ৭৯ শতাংশ লোক পরিতৃপ্তিদায়ক বিবাহ অথবা বন্ধনের বিষয়ে উল্লেখ করেছিল; ৬২ শতাংশ লোক বাবামা হওয়ার পুরস্কারের বিষয়ে বলেছিল; আর ৫১ শতাংশ লোক মনে করেছিল যে, সুখী হওয়ার জন্য এক সফল কেরিয়ারের প্রয়োজন। আর এমনকি যদিও বেশির ভাগ লোককে সাধারণ জ্ঞান দেওয়া হয় যে, টাকাপয়সা সুখী হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে না, তবুও যাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ লোক বিশ্বাস করে যে, টাকাপয়সা সুখ এনে দিতে পারে। কিন্তু, বাস্তব ঘটনাগুলো কী দেখায়?
প্রথমে, টাকাপয়সা এবং সুখের মধ্যে তথাকথিত সম্পর্কটা দেখুন। যুক্তরাষ্ট্রের একশো জন ধনী ব্যক্তির ওপর করা একটা সমীক্ষা দেখিয়েছিল যে, তারা সাধারণ লোকেদের চেয়ে বেশি সুখী নয়। এ ছাড়া, মানসিক-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, যদিও গত তিন দশকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে তাদের বস্তুগত ধনসম্পদ প্রায় দ্বিগুণ করেছে, তবুও তারা আগের চেয়ে একটুও বেশি সুখী নয়। বস্তুত, একটা রিপোর্ট মন্তব্য করে: “সেই একই সময়ে হতাশার হার অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের হার দ্বিগুণ হয়েছে।” প্রায় ৫০টা বিভিন্ন দেশে, টাকাপয়সা এবং সুখের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছে এমন গবেষকরা এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, টাকাপয়সা সুখ কিনতে পারে না।
এরপর সুস্বাস্থ্য, পরিতৃপ্তিদায়ক বিবাহ এবং সফল কেরিয়ারের মতো বিষয়গুলো সুখের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? আসলে, সুখী হওয়ার জন্য যদি এই বিষয়গুলোরই প্রয়োজন হয়, তা হলে সুস্বাস্থ্য নেই এমন লক্ষ লক্ষ লোক এবং পরিতৃপ্তিদায়ক বিবাহ উপভোগ করে না এমন সকলের সম্বন্ধে কী বলা যায়? ছেলেমেয়ে নেই এমন বিবাহিত দম্পতি এবং সফল কেরিয়ার নেই এমন সকল নারী-পুরুষ সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়? এই সমস্ত ব্যক্তির জন্য এক অসুখী জীবন কি অনিবার্য? আর বর্তমানে যারা উত্তম স্বাস্থ্য এবং এক পরিতৃপ্তিদায়ক বিবাহ উপভোগ করছে, তাদের পরিস্থিতি যদি পরিবর্তিত হয়, তা হলে তাদের তথাকথিত সুখ কি শেষ হয়ে যাবে?
আমরা কি সঠিক জায়গায় সন্ধান করছি?
প্রত্যেকেই সুখী হতে চায়। এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় নয় কারণ মানুষের সৃষ্টিকর্তাকে ‘পরম ধন্য [“সুখী,” NW] ঈশ্বর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে আর মানুষকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করা হয়েছে। (১ তীমথিয় ১:১১; আদিপুস্তক ১:২৬, ২৭) তাই, মানুষের জন্য সুখের সন্ধান করা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, অনেকে দেখেছে যে, সুখ ধরে রাখা এক মুঠো বালি ধরে রাখার মতোই—উভয়ই সহজে পিছলে যায়।
কিন্তু, এটা কি হতে পারে যে, কেউ কেউ সুখ খুঁজে পাওয়ার জন্য অত্যাধিক প্রচেষ্টা করে চলছে? সমাজ দার্শনিক এরিক হফার তা-ই মনে করেন। তিনি মন্তব্য করেন: “সুখের সন্ধান করাই হল অসুখী হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটা।” এটা তখনই সত্যি হয়, যদি আমরা ভুল জায়গাগুলোতে সুখ খোঁজার চেষ্টা করি। সেই ক্ষেত্রে, নিশ্চিতভাবে আমরা হতাশ এবং ব্যর্থ হব। ধনী হওয়ার চেষ্টা করা; খ্যাতি অথবা স্বীকৃতির জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করা; রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক লক্ষ্যগুলোর পিছনে ছোটা; অথবা কেবল আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপন করা এবং তাৎক্ষণিক বাসনা চরিতার্থ করা, এই সমস্তকিছুই আমাদের জন্য সুখ নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, কেউ কেউ একজন গ্রন্থকার দ্বারা ব্যক্ত এই স্ববিরোধী অথচ সত্য দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলে, যিনি বলেছিলেন: “আমরা যদি সুখী হওয়ার চেষ্টা করা বন্ধ করি, একমাত্র তা হলেই আমরা বেশ ভাল এক সময় কাটাতে পারব”!
লক্ষ করার মতো বিষয় হল যে, এই প্রবন্ধের শুরুতেই যে-জনমতের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেটা এও দেখায় যে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪ জন মনে করে, অন্যদের জন্য ভাল ভাল কাজ এবং সাহায্য করার মাধ্যমে সুখ আসে। আর প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন এই বিষয়টার ওপর জোর দিয়েছিল যে, বিশ্বাস এবং ধর্মীয় দৃঢ়প্রত্যয় সুখী হওয়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্পষ্টতই, আমাদের খুব ভাল করে বিবেচনা করা প্রয়োজন যে, সত্যিকারের সুখী হওয়ার জন্য কীসের প্রয়োজন। পরের প্রবন্ধ তা করতে আমাদের সাহায্য করবে।
[৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
অনেকে মনে করে যে, টাকাপয়সা, এক পরিতৃপ্তিদায়ক পারিবারিক জীবন অথবা এক সফল কেরিয়ার হল সুখের চাবিকাঠি। আপনি কি তা-ই মনে করেন?