“যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে”
আত্মত্যাগ যিহোবার আশীর্বাদ নিয়ে আসে
একজন ব্যক্তি ক্যামেরুনের গহিন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যান। অন্যদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য তিনি বিপদের মুখোমুখি হয়েও ঘন্টার পর ঘন্টা জলে প্লাবিত রাস্তা ও কাদার মধ্যে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যান। এক বিচ্ছিন্ন দলকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য জিম্বাবোয়েতে দুজন ব্যক্তি প্রবল স্রোতপূর্ণ নদীর মধ্যে দিয়ে ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে যায়, তাদের কাপড়চোপড় ও জুতো মাথার ওপর বহন করে, যাতে সেগুলো না ভেজে। আরেক জায়গায়, একজন মহিলা একজন নার্সের কাছে গিয়ে তাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে ওঠেন, যে-নার্স শুধু ভোরবেলাতেই এক ঘন্টা সময় দিতে পারেন।
যে-লোকেরা এই ধরনের প্রচেষ্টা করছে, তাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মিল রয়েছে? তারা যিহোবার সাক্ষিদের পূর্ণসময়ের পরিচারক, যারা বাইবেলের সত্য শিক্ষা দেওয়ার কাজে রত রয়েছে। তাদের অন্তর্ভুক্ত নিয়মিত ও বিশেষ অগ্রগামী, মিশনারি, ভ্রমণ অধ্যক্ষ এবং সারা পৃথিবীতে বেথেল হোমগুলোতে থাকা হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী। আর আত্মত্যাগই হচ্ছে তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য।a
সঠিক প্রেরণা
যিহোবার সাক্ষিরা তীমথিয়কে বলা প্রেরিত পৌলের এই পরামর্শে মনোযোগ দিচ্ছে: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।” (২ তীমথিয় ২:১৫) কিন্তু, কী এই লক্ষ লক্ষ সাক্ষিকে পূর্ণসময়ের পরিচারক হিসেবে সেবা করতে প্রেরণা দেয়?
পূর্ণসময়ের দাসদের যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে, কেন তারা যিহোবার সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে, তখন তারা উত্তরে ঈশ্বরের প্রতি এবং সহমানবদের প্রতি প্রেমের বিষয়টা উল্লেখ করে থাকে। (মথি ২২:৩৭-৩৯) এটা একেবারে উপযুক্ত, কারণ প্রেরণার পিছনে যদি প্রেম না থাকে, তা হলে যেকোনো প্রচেষ্টাই বৃথা হবে।—১ করিন্থীয় ১৩:১-৩.
আত্মত্যাগমূলক সেবা
সমস্ত উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান যিশুর এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে: “কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক, আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদ্গামী হউক।” (মথি ১৬:২৪) নিজেকে অস্বীকার করার মানে হচ্ছে, স্বেচ্ছায় যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টের অধিকারে আসা এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার জন্য বশ্যতা স্বীকার করা। অনেককে তা পূর্ণসময়ের পরিচর্যায় আত্মত্যাগমূলক সেবা প্রদান করতে পরিচালিত করেছে।
অনেক সাক্ষি যিহোবার প্রতি তাদের সেবাকে বাড়ানোর জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা করে থাকে। ব্রাজিলের সাও পাওলোতে ৫৬ বছর বয়স্কা একজন নিয়মিত অগ্রগামী জুলিয়ার কথা বিবেচনা করুন। “একজন চাইনিজ ভাই আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আমি চাইনিজ ভাষা শিখতে আগ্রহী কি না,” তিনি মনে করে বলেন। “বয়সের কারণে আমি একটা নতুন ভাষা শেখার কথা চিন্তাই করিনি। কিন্তু কিছুদিন পর, আমি সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা গ্রহণ করেছিলাম। আজকে আমি চাইনিজ ভাষায় শাস্ত্রীয় ভূমিকা উপস্থাপন করতে পারি।”
পেরুতে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিস রিপোর্ট করে: “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত নিয়মিত অগ্রগামী, কখনো কাজ করা হয়নি এমন এলাকাগুলোতে গিয়ে এক সাহসী ও আত্মত্যাগমূলক মনোভাব দেখিয়েছে। তারা দূরবর্তী সেই শহরগুলোতে চলে গিয়েছে, যেখানে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নেই এবং চাকরি পাওয়া দুষ্কর। এই ভাইবোনেরা তাদের কার্যভার চালিয়ে যাওয়ার জন্য যা কিছুই করার প্রয়োজন হোক না কেন, তা করে থাকে। তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে, পরিচর্যায় তাদের কাজ অনেক জায়গায় উত্তম ফলাফল নিয়ে আসে। ভ্রমণ অধ্যক্ষরা রিপোর্ট করে যে, এই আত্মত্যাগী নিয়মিত অগ্রগামীদের সাহায্যে নতুন নতুন দল গড়ে উঠেছে।”
কিছু খ্রিস্টান, সহবিশ্বাসীদের সাহায্য করার জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়েছে। (রোমীয় ৬:৩, ৪) আফ্রিকার এক যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের একজন সীমা অধ্যক্ষ রিপোর্ট করেন: “বিদ্রোহীদের দ্বারা দখলকৃত ও সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর মাঝামাঝিতে শেষ ব্যারিকেডে পৌঁছানোর আগে, চার জন বিদ্রোহী কমান্ডার ও তাদের দেহরক্ষীরা আমার স্ত্রী ও আমাকে ঘিরে ফেলে ও আমাদের পরিচয় জানতে চায়। আমাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার সময় তারা দেখেছিল যে, আমরা সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে এসেছি, তাই তারা সন্দেহ করতে শুরু করে। আমাকে একজন গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এইজন্য তারা আমাকে একটা গর্তে ফেলে দেবে বলে ঠিক করে। আমরা আসলে কে তা আমি ব্যাখ্যা করি আর শেষ পর্যন্ত তারা আমাদের চলে যেতে দেয়।” এই আত্মত্যাগী দম্পতি তাদের পরিদর্শন করতে পেরেছিল বলে মণ্ডলীগুলো কত কৃতজ্ঞই না হয়েছিল!
বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, এই ধরনের পূর্ণসময়ের পরিচারকদের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পাচ্ছে। (যিশাইয় ৬:৮) এই পরিশ্রমী কর্মীরা যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে তাদের বিশেষ সুযোগকে মূল্যবান হিসেবে গণ্য করে থাকে। একই আত্মত্যাগের মনোভাব নিয়ে, এখন আরও লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি যিহোবার প্রশংসা করছে। ফলে, তিনি তাদেরকে প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেন। (হিতোপদেশ ১০:২২) ক্রমাগতভাবে আশীর্বাদ ও সমর্থন লাভের বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে এই পরিশ্রমী কর্মীরা গীতরচকের অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে, যিনি গেয়েছিলেন: “যিহোবার কাছ থেকে আমার সাহায্য আসে।”—গীতসংহিতা ১২১:২, NW.
[পাদটীকা]
a যিহোবার সাক্ষিদের ২০০৫ সালের ক্যালেন্ডার (ইংরেজি) নভেম্বর/ডিসেম্বর দেখুন।
[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“তোমার বিক্রম-দিনে তোমার প্রজাগণ স্বেচ্ছায় দত্ত উপহার হইবে।”—গীতসংহিতা ১১০:৩
[৮ পৃষ্ঠার বাক্স]
যিহোবা তাঁর একনিষ্ঠ দাসদের মূল্যবান বলে গণ্য করেন
“সুস্থির হও, নিশ্চল হও, প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়, কেননা তোমরা জান যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়।”—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.
“ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.