যিহোবার বাক্য জীবন্ত
হগয় ও সখরিয় বইয়ের প্রধান বিষয়গুলো
সময়টা হল সা.কা.পূ. ৫২০ সাল। বাবিলের বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসা যিহুদিদের যিহোবার মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করার পর ষোলো বছর কেটে গিয়েছে। তবুও, তখনও মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি এবং সেই কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যিহোবা তাঁর বাক্য সম্বন্ধে বলার জন্য ভাববাদী হগয়কে আর তার দুমাস পরে ভাববাদী সখরিয়কে নিযুক্ত করেন।
হগয় ও সখরিয় দুজনেরই একটা উদ্দেশ্য ছিল: মন্দির পুনর্নিমাণের কাজ পুনরারম্ভ করার জন্য লোকদেরকে উদ্দীপিত করা। সেই ভাববাদীদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল আর পাঁচ বছর পরে মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছিল। হগয় ও সখরিয় যা ঘোষণা করেছিল, তা তাদের নাম বহনকারী বাইবেলের বইগুলোতে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। হগয় ও সখরিয় বইগুলো যথাক্রমে সা.কা.পূ. ৫২০ সালে এবং সা.কা.পূ. ৫১৮ সালে লেখা শেষ হয়েছিল। ওই ভাববাদীদের মতো, আমাদেরও ঈশ্বরদত্ত এক কাজ রয়েছে, যেটা বর্তমান বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার আগেই সম্পূর্ণ করতে হবে। এটা হল রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ। আসুন আমরা দেখি যে, হগয় ও সখরিয়ের বই থেকে আমরা কোন উৎসাহ পেতে পারি।
“তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর”
(হগয় ১:১-২:২৩)
হগয় ১১২ দিনের মধ্যে, চারটে অনুপ্রেরণাদায়ক বার্তা প্রদান করেন। প্রথমটা হল: “তোমরা আপন আপন পথ আলোচনা কর। পর্ব্বতে উঠিয়া গিয়া কাষ্ঠ আন, এই গৃহ নির্ম্মাণ কর, তাহাতে আমি এই গৃহের প্রতি প্রসন্ন হইব, এবং গৌরবান্বিত হইব, ইহা সদাপ্রভু কহেন।” (হগয় ১:৭, ৮) লোকেরা ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়। দ্বিতীয় বার্তাটিতে এই প্রতিজ্ঞা রয়েছে: “আমি [সদাপ্রভু] এই গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করিব।”—হগয় ২:৭.
তৃতীয় বার্তা অনুসারে, মন্দির পুনর্নিমাণ কাজের প্রতি তাদের অবহেলা ‘এই বংশকে ও তাহাদের হস্তের সমস্ত কর্ম্মকে’ যিহোবার সামনে অশুচি করেছে। কিন্তু, যেদিন থেকে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে যিহোবা তাদেরকে ‘আশীর্ব্বাদ করিবেন।’ চতুর্থ বার্তায় যেমন উল্লেখিত রয়েছে, যিহোবা “জাতিগণের সকল রাজ্যের পরাক্রম নষ্ট” করবেন এবং দেশাধ্যক্ষ সরুব্বাবিলকে “মুদ্রণার্থক অঙ্গুরীয়স্বরূপ” স্থাপন করবেন।—হগয় ২:১৪, ১৯, ২২, ২৩.
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
১:৬—“তোমরা . . . পান করিয়াও আপ্যায়িত [“মত্ত,” বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন] হইতেছ না,” এই অভিব্যক্তিটির অর্থ কী? এই অভিব্যক্তিটি সাধারণভাবে দ্রাক্ষারসের ঘাটতিকে ইঙ্গিত করে। যিহোবার আশীর্বাদের ঘাটতির ফলে, দ্রাক্ষারসের সরবরাহ সীমিত হবে—নিশ্চিতভাবেই মত্ত হওয়ার মতো যথেষ্ট হবে না।
২:৬, ৭, ২১, ২২—কে বা কী কম্পান্বিত করছে এবং এর ফলে কী হচ্ছে? যিহোবা পৃথিবীব্যাপী রাজ্যের বার্তা প্রচার করার দ্বারা “সর্ব্বজাতিকে কম্পান্বিত” করছেন। এ ছাড়া, প্রচার কাজের ফলে যিহোবার গৃহে “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল” আসছে আর এইভাবে তাঁর গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ হচ্ছে। এরপর, “বাহিনীগণের সদাপ্রভু” “আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে এবং সমুদ্র ও শুষ্ক ভূমিকে” কম্পান্বিত করবেন, ফলে বর্তমান সমগ্র মন্দ বিধিব্যবস্থা কম্পান্বিত হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।—ইব্রীয় ১২:২৬, ২৭.
২:৯, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন—কীভাবে “আগেকার ঘরের জাঁকজমকের চেয়ে এখনকার ঘরের জাঁকজমক আরও বেশী” হতে পারে? অন্তত পক্ষে তিনটে উপায়ে: যত বছর মন্দিরটা অস্তিত্বে ছিল, যিনি সেখানে শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য যারা সেখানে একত্রিত হয়েছিল। যদিও শলোমনের জাঁকজমকপূর্ণ বা গৌরবান্বিত মন্দির সা.কা.পূ. ১০২৭ সাল থেকে সা.কা.পূ. ৬০৭ সাল পর্যন্ত ৪২০ বছর ধরে অস্তিত্বে ছিল কিন্তু ‘এখনকার ঘর’ ৫৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল, সা.কা.পূ. ৫১৫ সাল মন্দির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে শুরু করে সা.কা. ৭০ সালে এর ধ্বংসের সময় পর্যন্ত। অধিকন্তু, মশীহ—যিশু খ্রিস্ট—‘এখনকার ঘরে’ শিক্ষা দিয়েছিলেন আর ঈশ্বরকে উপাসনা করার জন্য “আগেকার ঘরের” চেয়ে এটাতে বেশি লোক একত্রিত হয়েছিল।—প্রেরিত ২:১-১১.
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১:২-৪. আমাদের প্রচার কাজের ওপর আসা বিরোধিতা আমাদেরকে, অগ্রাধিকারগুলো পালটে ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করিবার’ থেকে নিজেদের বিষয়গুলোকে প্রথমে চেষ্টা করার দিকে পরিচালিত করা উচিত নয়।—মথি ৬:৩৩.
১:৫, ৭. আমাদের জন্য ‘আপন আপন পথ আলোচনা করা’ এবং আমরা আমাদের জীবনে যা করি, তা ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে যেভাবে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা ভাল।
১:৬, ৯-১১; ২:১৪-১৭. হগয়ের দিনের যিহুদিরা ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিল কিন্তু তারা তাদের পরিশ্রমের ফল ভোগ করছিল না। তারা মন্দিরকে অবহেলা করছিল, তাই ঈশ্বরের আশীর্বাদ তাদের ওপর ছিল না। এটা মনে রেখে আমাদের আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকারে রাখা এবং সমস্ত মন প্রাণ দিয়ে ঈশ্বরকে সেবা করা উচিত যে, আমরা বস্তুগত দিক থেকে ধনী অথবা দরিদ্র যা-ই হই না কেন “সদাপ্রভুর আশীর্ব্বাদই ধনবান করে।”—হিতোপদেশ ১০:২২.
‘বল দ্বারা নয়, কিন্তু আমার আত্মা দ্বারা’
(সখরিয় ১:১–১৪:২১)
সখরিয় যিহুদিদেরকে ‘সদাপ্রভুর প্রতি ফিরিবার’ আহ্বান জানিয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণীর কাজ শুরু করেন। (সখরিয় ১:৩) পরবর্তী আটটা দর্শন মন্দির পুনর্নিমাণ কাজের ওপর যে ঈশ্বরের সমর্থন রয়েছে, তা নিশ্চিত করে। (“সখরিয়ের আটটা রূপক দর্শন” বাক্সটা দেখুন।) “পরাক্রম দ্বারা নয়, বল দ্বারাও নয়, কিন্তু [সদাপ্রভুর] আত্মা দ্বারা” নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হবে। (সখরিয় ৪:৬) পল্লব হিসেবে উল্লেখিত সেই ব্যক্তি “সদাপ্রভুর মন্দির গাঁথিবেন” এবং “আপন সিংহাসনের উপরে উপবিষ্ট যাজক হইবেন।”—সখরিয় ৬:১২, ১৩.
বৈথেলের লোকেরা যিরূশালেম ধ্বংসের বিষয় স্মরণ করে উপবাস উদ্যাপন সংক্রান্ত বিষয় জানার জন্য এক প্রতিনিধি দলকে পাঠায়। যিহোবা সখরিয়কে বলেন যে, যিরূশালেমের ওপর আসা বিপর্যয়ের স্মরণে অনুষ্ঠিত চারটে উপবাসের সময়, শোক পরিবর্তিত হয়ে “আনন্দ, আমোদ এবং মঙ্গলোৎসব হইয়া” উঠবে। (সখরিয় ৭:২; ৮:১৯) পরবর্তী দুটি ভারবাণীর অন্তর্ভুক্ত হল, বিভিন্ন জাতি ও মিথ্যা ভাববাদীদের বিরুদ্ধে বিচার, মশীহ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণী এবং ঈশ্বরের লোকেদের পুনর্স্থাপন সম্বন্ধীয় একটা বার্তা।—সখরিয় ৯:১; ১২:১.
শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর:
২:১—কেন একজন পুরুষ যিরূশালেমকে পরিমাণরজ্জু দ্বারা মাপছিলেন? স্পষ্টতই, এই কাজটি নগরের সুরক্ষার জন্য এর চারপাশে একটা প্রাচীর নির্মাণ করাকে নির্দেশ করেছিল। স্বর্গদূত সেই পুরুষকে জানান যে, যিরূশালেম প্রসারিত হবে এবং যিহোবার সুরক্ষার হাত সেই নগরের ওপর থাকবে।—সখরিয় ২:৩-৫.
৬:১১-১৩—মহাযাজক যিহোশূয়কে মুকুট পরানো কি তাকে একজন রাজা ও যাজক করেছিল? না, যিহোশূয় দায়ূদের রাজবংশের ব্যক্তি ছিলেন না। তবে, তাকে মুকুট পরানো ভবিষ্যদ্বাণীমূলকভাবে মশীহের মতো করে তুলেছিল। (ইব্রীয় ৬:২০) “পল্লব” সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীটা স্বর্গীয় রাজা ও যাজক যিশু খ্রিস্টতে পরিপূর্ণ হয়েছে। (যিরমিয় ২৩:৫) যিহোশূয় পুনর্নিমিত মন্দিরে যেমন মহাযাজক হিসেবে ফিরে আসা যিহুদিদের সেবা করেছিলেন তেমনই যিহোবার আত্মিক মন্দিরে সত্য উপাসনার জন্য যিশু হলেন মহাযাজক।
৮:১-২৩—এই পদগুলোতে উল্লেখিত দশটা ভারবাণী কখন পরিপূর্ণ হয়? প্রত্যেকটা ভারবাণী এই অভিব্যক্তি দিয়ে শুরু হয়, “বাহিনীগণের সদাপ্রভু এই কথা কহেন” এবং এগুলো ঈশ্বরের লোকেদের জন্য করা তাঁর শান্তির প্রতিজ্ঞা। এই ভারবাণীগুলোর কয়েকটা সা.কা.পূ. ষষ্ঠ শতাব্দীতে পরিপূর্ণ হয়েছিল কিন্তু সেগুলোর প্রত্যেকটাই হয় সা.কা. ১৯১৯ সাল থেকে পরিপূর্ণ হয়েছে অথবা বর্তমানে পরিপূর্ণ হচ্ছে।a
৮:৩—কেন যিরূশালেমকে “সত্যপুরী” বলা হয়েছে? সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার আগে এটা এক ‘অত্যাচার-কারিণী নগরী’ ছিল, যেখানে কলুষিত ভাববাদী, যাজক এবং অবিশ্বস্ত লোকেরা বাস করত। (সফনিয় ৩:১; যিরমিয় ৬:১৩; ৭:২৯-৩৪) কিন্তু, এখন যেহেতু মন্দির পুনর্নিমিত হয়েছিল ও লোকেরা যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল, তাই সেখানে বিশুদ্ধ উপাসনার সত্যগুলো বলা হতো এবং সেই কারণে যিরূশালেমকে “সত্যপুরী” বলা হয়েছিল।
১১:৭-১৪—সখরিয়ের “প্রসন্নতা” ও “ঐক্যবন্ধন” নামক পাঁচনিকে খণ্ড খণ্ড করার তাৎপর্য কী? সখরিয়কে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যাকে “বধ্য মেষপালকে”—তাদের নেতাদের দ্বারা শোষিত মেষতুল্য ব্যক্তিদেরকে—“চরাইতে” পাঠানো হয়েছে। মেষপালক হিসেবে তার ভূমিকাতে, সখরিয় যিশু খ্রিস্টের বিষয় পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, যাঁকে ঈশ্বরের চুক্তিবদ্ধ লোকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তারা তাঁকে অস্বীকার করেছিল। “প্রসন্নতা” খণ্ড খণ্ড করা চিত্রিত করেছিল যে, ঈশ্বর যিহুদিদের দ্বারা ব্যবস্থা চুক্তিকে শেষ করবেন এবং তাদের সঙ্গে প্রসন্নভাবে আচরণ করা বন্ধ করবেন। “ঐক্যবন্ধন” খণ্ড খণ্ড করা যিহূদা ও ইস্রায়েলের মধ্যে ঈশতান্ত্রিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নষ্ট করাকে বুঝিয়েছে।
১২:১১—‘মগিদ্দোন সমস্থলিতে হদদ্-রিম্মোণের বিলাপ’ কী? “মগিদ্দোন সমস্থলিতে” মিশরের ফরৌণ নখোর সঙ্গে একটা যুদ্ধে রাজা যোশিয় নিহত হয়েছিলেন আর বছরের পর বছর ধরে তার মৃত্যুর জন্য ‘বিলাপ-গীত’ লিখে শোক করা হয়েছিল। (২ বংশাবলি ৩৫:২৫) তাই, ‘হদদ্-রিম্মোণের বিলাপ’ সম্ভবত যোশিয়র মৃত্যুর জন্য করা শোককে বোঝাতে পারে।
আমাদের জন্য শিক্ষা:
১:২-৬; ৭:১১-১৪. যিহোবা সেই ব্যক্তিদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তাদের প্রতি ফিরে আসেন, যারা অনুতপ্ত হয়ে সংশোধন গ্রহণ করে এবং পূর্ণহৃদয়ে তাঁকে উপাসনা করার দ্বারা তাঁর দিকে ফিরে আসে। অন্যদিকে, সেই লোকেদের চাওয়া সাহায্যের অনুরোধে সাড়া দেন না, যারা তাঁর বার্তার প্রতি ‘কর্ণপাত করিতে অসম্মত হইয়া ঘাড় ফিরায়, এবং যেন শুনিতে না পায়, সেই জন্য আপন আপন কর্ণ ভারী করে।’
৪:৬, ৭. প্রতিবন্ধকতাগুলোর কোনোটাই এত বড় বলে প্রমামিত হয়নি যে, যিহোবার আত্মা মন্দির পুনর্নিমাণ কাজ সফলভাবে সমাপ্ত করার জন্য সেগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারবে না। ঈশ্বরকে সেবা করার সময় যেকোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখিই আমরা হই না কেন, যিহোবার প্রতি বিশ্বাস করে চলার দ্বারা তা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে।—মথি ১৭:২০.
৪:১০. যিহোবার তত্ত্বাবধানের অধীনে, সরুব্বাবিল ও তার লোকেরা ঈশ্বরের উচ্চ মানগুলো অনুযায়ী মন্দির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেছিল। যিহোবার প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা অসিদ্ধ মানুষদের জন্য ততটা কঠিন নয়।
৭:৮-১০; ৮:১৬-১৭. যিহোবার অনুমোদন পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার করে চলতে হবে, সদয় বা প্রেমপূর্ণ দয়া, করুণা প্রদর্শন করতে হবে এবং পরস্পরের সঙ্গে সত্য কথা বলতে হবে।
৮:৯-১৩. যিহোবা আমাদের ওপর যে-কাজের ভার অর্পণ করেছেন, তা করার জন্য যখন ‘আমাদের হস্ত সবল হয়,’ তখন তিনি আমাদেরকে আশীর্বাদ করেন। এই আশীর্বাদগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল শান্তি, নিরাপত্তা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি।
১২:৬. যিহোবার লোকেদের মধ্যে যারা তত্ত্বাবধান করার মতো অবস্থানে রয়েছে, তাদের “প্রজ্বলিত ডামসের [“মশালের,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ] ন্যায়”—উল্লেখযোগ্যভাবে উদ্যোগী—হওয়া উচিত।
১৩:৩. সত্য ঈশ্বর এবং তাঁর সংগঠনের প্রতি আমাদের আনুগত্য যেকোনো মানুষের প্রতি আমাদের আনুগত্যের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত, তা আমরা সেই ব্যক্তির যত ঘনিষ্ঠই হই না কেন।
১৩:৮, ৯. যিহোবা যাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, সেই ধর্মভ্রষ্টরা এক বিরাট সংখ্যক লোক ছিল, যারা ওই দেশের দুই অংশকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। শুধুমাত্র তৃতীয় অংশ অগ্নির মধ্যে দিয়ে পরিশোধিত হয়েছিল। আমাদের দিনে খ্রিস্টীয়জগৎ, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করে, তাদেরকে যিহোবা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শুধুমাত্র এক অল্প সংখ্যক লোক, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা ‘সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে ডাকিয়াছে’ এবং পরিশোধন প্রক্রিয়ায় নিজেদের বশীভূত করেছে। তারা ও তাদের সহবিশ্বাসীরা কেবলমাত্র নামধারী যিহোবার সাক্ষির চেয়েও আরও বেশি কিছু বলে প্রমাণিত হয়েছে।
উদ্যোগী কাজের জন্য পরিচালিত হওয়া
হগয় ও সখরিয় যা ঘোষণা করেছিলেন, তা আজ আমাদের কীভাবে প্রভাবিত করে? মন্দির পুনর্নিমাণ কাজের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বার্তা যেভাবে যিহুদিদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তা নিয়ে যখন আমরা গভীরভাবে চিন্তা করি, তখন আমরা কি রাজ্য প্রচার এবং শিষ্য তৈরির কাজে উদ্যোগ সহকারে অংশ নিতে পরিচালিত হই না?
সখরিয় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মশীহ “গর্দ্দভে উপবিষ্ট” হয়ে আসবেন, ‘ত্রিশ রৌপ্য মুদ্রার’ বিনিময়ে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে, তাঁকে আঘাত করা হবে এবং “পালের মেষেরা ছড়াইয়া পড়িবে।” (সখরিয় ৯:৯; ১১:১২; ১৩:৭) সখরিয়ের করা মশীহ সম্বন্ধীয় ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর পরিপূর্ণতা সম্বন্ধে ধ্যান করা আমাদের বিশ্বাসের ওপর কতই না গভীর এক প্রভাব ফেলে! (মথি ২১:১-৯; ২৬:৩১, ৫৬; ২৭:৩-১০) যিহোবার বাক্যের এবং আমাদের পরিত্রাণের জন্য করা তাঁর ব্যবস্থাগুলোর ওপর আমাদের আস্থা শক্তিশালী হয়।—ইব্রীয় ৪:১২.
[পাদটীকা]
a ১৯৯৬ সালের ১লা জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ৯-২২ পৃষ্ঠা দেখুন।
[১১ পৃষ্ঠার বাক্স]
সখরিয়ের আটটা রূপক দর্শন
১:৮-১৭: মন্দির নির্মাণ শেষ হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং দেখায় যে, যিরূশালেম ও যিহূদার অন্যান্য নগর আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে।
১:১৮-২১: ‘চারি শৃঙ্গ যাহারা যিহূদাকে ছিন্নভিন্ন করিয়াছে,’ তারা হল যিহোবার উপাসনায় বাধা প্রদানকারী সমস্ত সরকার, তাদের শেষ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করে।
২:১-১৩: ইঙ্গিত দেয় যে, যিরূশালেম প্রসারিত হবে এবং যিহোবা তার “চারিদিকে অগ্নিময় প্রাচীরস্বরূপ”—এক সুরক্ষা—হবেন।
৩:১-১০: দেখায় যে, মন্দিরের কাজে বিরোধিতা আনায় শয়তান জড়িত ছিল এবং মহাযাজক যিহোশূয় উদ্ধার পেয়েছিলেন ও পাপ থেকে শুদ্ধ হয়েছিলেন।
৪:১-১৪: আশ্বাস প্রদান করে যে, পর্বততুল্য বাধাগুলো সমান করা হবে এবং দেশাধ্যক্ষ সরুব্বাবিল মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করবেন।
৫:১-৪: অপরাধীদের প্রতি অভিশাপ ঘোষণা করে।
৫:৫-১১: মন্দতার শেষ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে।
৬:১-৮: দূতদের তত্ত্বাবধান ও সুরক্ষা প্রদান করা সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করে।
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
হগয় ও সখরিয়ের বার্তাগুলোর উদ্দেশ্য কী ছিল?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
তত্ত্বাবধান করার মতো অবস্থানে থাকা ব্যক্তিরা কীভাবে “প্রজ্বলিত মশালের ন্যায়”?