“প্রবুদ্ধ থাক”
“সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; . . . প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক।”—১ পিতর ৪:৭.
১. যিশুর শিক্ষার মূলভাব কী ছিল?
যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর শিক্ষার মূলভাব ছিল ঈশ্বরের রাজ্য। সেই রাজ্যের মাধ্যমে যিহোবা তাঁর সর্বজনীন সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদন এবং তাঁর নাম পবিত্রীকৃত করবেন। তাই, যিশু তাঁর শিষ্যদেরকে ঈশ্বরের কাছে এই প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৪:১৭; ৬:৯, ১০) সেই রাজ্য সরকার খুব শীঘ্র শয়তানের জগতের শেষ নিয়ে আসতে যাচ্ছে এবং এরপর সারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার বিষয়টা তত্ত্বাবধান করবে। দানিয়েল যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ঈশ্বরের রাজ্য “ঐ সকল [বর্তমান দিনের] রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানি. ২:৪৪.
২. (ক) কীভাবে যিশুর অনুসারীরা জানতে পেরেছিল যে, তিনি রাজ্য ক্ষমতায় উপস্থিত ছিলেন? (খ) চিহ্ন আর কী ইঙ্গিত করবে?
২ যেহেতু ঈশ্বরের রাজ্য আসাটা যিশুর অনুসারীদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, তাই তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল: “আপনার আগমনের এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:৩) রাজ্য ক্ষমতায় খ্রিস্টের আগমন বা উপস্থিতি পৃথিবীর লোকেদের চোখে অদৃশ্য হওয়ার কারণে এক দৃশ্যত চিহ্ন দেওয়া হবে। সেই চিহ্ন শাস্ত্রে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত। সুতরাং, সেই সময়ে জীবিত যিশুর অনুসারীরা বুঝতে পেরেছিল যে, তিনি স্বর্গে শাসন করা শুরু করেছেন। এ ছাড়া, এটা বাইবেলে সেই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কাল’ হিসেবে পরিচিত সময়ের সূচনাকে চিহ্নিত করবে, যা এখন পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব করছে।—২ তীম. ৩:১-৫, ১৩; মথি ২৪:৭-১৪.
শেষকালে প্রবুদ্ধ থাকুন
৩. কেন খ্রিস্টানদের প্রবুদ্ধ থাকতে হবে?
৩ প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; অতএব সংযমশীল হও, এবং প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক।” (১ পিতর ৪:৭) যিশুর অনুসারীদের প্রবুদ্ধ থাকতে হবে, জগতের সেই ঘটনাগুলোর প্রতি সতর্ক থাকতে হবে, যেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি রাজ্য ক্ষমতায় উপস্থিত আছেন। আর বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ যতই এগিয়ে আসছে, ততই তাদের প্রবুদ্ধ মনোভাব রাখা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমরা জাগিয়া থাকিও, কেননা [শয়তানের জগতের ওপর বিচার নিয়ে আসার জন্য] গৃহের কর্ত্তা কখন আসিবেন, . . . তোমরা তাহা জান না।”—মার্ক ১৩:৩৫, ৩৬.
৪. যে-লোকেরা শয়তানের জগতের অংশ, তাদের সঙ্গে যিহোবার দাসদের মনোভাবের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরুন। (বাক্সও অন্তর্ভুক্ত করুন।)
৪ সাধারণ লোকেরা শয়তানের শাসনাধীনে রয়েছে আর জগতের ঘটনাগুলোর অর্থের ব্যাপারে তারা সতর্ক নয়। তারা রাজ্য ক্ষমতায় খ্রিস্টের উপস্থিতি বুঝতে পারে না। কিন্তু, খ্রিস্টের প্রকৃত অনুসারীরা প্রবুদ্ধ থেকেছে এবং বিগত শতাব্দীতে যা ঘটেছে, সেটার প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছে। ১৯২৫ সাল থেকে, যিহোবার সাক্ষিরা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং এর পরবর্তী ঘটনাগুলো নিশ্চিত প্রমাণ দেয় যে, স্বর্গীয় রাজ্য ক্ষমতায় খ্রিস্টের উপস্থিতি ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছে। এভাবে, শয়তানের নিয়ন্ত্রণাধীন এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষকাল শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেক সতর্ক লোক, যদিও এর অর্থ জানে না, কিন্তু তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের এবং এর পরের সময়ের মধ্যে নাটকীয় পার্থক্য বুঝতে পারে।—“অশান্ত যুগের শুরু” নামক বাক্যটা দেখুন।
৫. কেন আমাদের ক্রমাগত সতর্ক থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
৫ এখন প্রায় এক-শো বছর ধরে সারা পৃথিবীতে ঘটে চলা ভয়ংকর ঘটনাগুলো প্রমাণ দেয় যে, আমরা শেষকালে বাস করছি। যিহোবা খুব শীঘ্র যিশুকে শয়তানের জগতের বিরুদ্ধে শক্তিশালী দূতবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার আদেশ দেবেন। (প্রকা. ১৯:১১-২১) সত্য খ্রিস্টানদের বলা হয়েছে যেন তারা সতর্ক থাকে। এই বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে প্রতীক্ষা করার সময় আমাদের ক্রমাগত সতর্ক থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। (মথি ২৪:৪২) আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং খ্রিস্টের নির্দেশাধীনে আমাদের সারা পৃথিবীতে নির্দিষ্ট একটা কাজ সম্পাদন করতে হবে।
পৃথিবীব্যাপী এক কাজ
৬, ৭. শেষকালে কীভাবে রাজ্যের প্রচার কাজ অগ্রগতি লাভ করছে?
৬ যিহোবার দাসদের যে-কাজ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে যৌগিক চিহ্নের অংশ হিসেবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে, আমরা এই বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষকালে রয়েছি। যিশু বিশ্বব্যাপী এই কাজ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যখন তিনি এক এক করে বিভিন্ন বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যেগুলো শেষ সময়ে ঘটবে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে এই অর্থপূর্ণ বিবৃতিও রয়েছে: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.
৭ যিশুর ভবিষ্যদ্বাণীর বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করুন। ১৯১৪ সালে যখন শেষকাল শুরু হয়েছিল, তখন যে-সংখ্যক লোকেরা সুসমাচার ঘোষণা করছিল, তাদের সংখ্যা খুবই কম ছিল। এখন সেই সংখ্যা বেড়ে বিপুল হয়েছে। সারা পৃথিবীতে ৭০,০০,০০০-রও বেশি যিহোবার সাক্ষি প্রচার করছে, যারা ১,০০,০০০-রও বেশি মণ্ডলীতে সংগঠিত। ২০০৮ সালে অতিরিক্ত ১,০০,০০,০০০ লোক খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ দিবসে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে একত্রিত হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় এই উপস্থিতির সংখ্যা এক তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি ছিল।
৮. কেন বিরোধিতা আমাদের প্রচার কাজকে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারেনি?
৮ এই বিধিব্যবস্থার শেষ আসার আগে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কী এক পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্যই না দেওয়া হচ্ছে! আর এটা এই বাস্তবতা সত্ত্বেও যে, শয়তান “এই যুগের দেব।” (২ করি. ৪:৪) এই জগতের সমস্ত রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং বাণিজ্যিক শক্তিগুলো ও সেইসঙ্গে এর অপপ্রচার মাধ্যমগুলো তার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। তাহলে, সাক্ষ্য দেওয়ার কাজের বিস্ময়কর সফলতার পিছনে কারণ কী? এই কাজে যিহোবার সমর্থন রয়েছে। তাই, রাজ্যের প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য শয়তানের প্রচেষ্টাগুলো সত্ত্বেও এই কাজ চমৎকারভাবে এগিয়ে চলছে।
৯. কেন আমাদের আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধিকে এক অলৌকিক কাজ বলে অভিহিত করা যেতে পারে?
৯ রাজ্যের প্রচার কাজের সাফল্য এবং যিহোবার লোকেদের বৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধিকে এক অলৌকিক কাজ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। ঈশ্বরের সমর্থন ছাড়া প্রচার কাজ করা সম্ভবপর হতো না, যে-সমর্থনের অন্তর্ভুক্ত তাঁর লোকেদের নির্দেশনা ও সুরক্ষা জোগানো। (পড়ুন, মথি ১৯:২৬.) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, সেবা করতে ইচ্ছুক এমন প্রবুদ্ধ লোকেদের হৃদয়ে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা কাজ করার মাধ্যমে এই প্রচার কাজ এক সফল উপসংহারে গিয়ে পৌঁছাবে “আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” সেই সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে।
‘মহাক্লেশ’
১০. কীভাবে যিশু আসন্ন মহাক্লেশ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন?
১০ এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ সেই সময়ে আসবে, যেটাকে ‘মহাক্লেশ’ বলা হয়। (প্রকা. ৭:১৪) বাইবেল আমাদের বলে না যে, সেটা কতটা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হবে কিন্তু যিশু বলেছিলেন: “তৎকালে এরূপ ‘মহাক্লেশ উপস্থিত হইবে, যেরূপ জগতের আরম্ভ অবধি এ পর্য্যন্ত কখনও হয় নাই, কখনও হইবেও না’।” (মথি ২৪:২১) ইতিমধ্যেই এই জগৎ যে-ক্লেশ ভোগ করেছে, যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আনুমানিক ৫ থেকে ৬ কোটি লোক তাদের জীবন হারিয়েছে, সেই সম্বন্ধে আমরা যখন বিবেচনা করি, তখন আসন্ন মহাক্লেশ সত্যিই অনেক চরম হবে। এটা আরমাগিদোনের যুদ্ধে এর চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে। সেই সময়ই যিহোবা শয়তানের পার্থিব বিধিব্যবস্থার সমস্ত চিহ্ন ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য তাঁর দণ্ডদানকারী বাহিনীকে অনুমতি দেবেন।—প্রকা. ১৬:১৪, ১৬.
১১, ১২. কোন ঘটনা মহাক্লেশের সূচনার সংকেত দেয়?
১১ মহাক্লেশের প্রথম ধাপ কখন শুরু হবে, সেই বিষয়ে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী কোনো তারিখ সম্বন্ধে জানায় না, তবে এটি আমাদের বলে যে, কোন অসাধারণ ঘটনা এর শুরু সম্বন্ধে সংকেত দেবে। সেই ঘটনা হল, রাজনৈতিক ক্ষমতাগুলোর দ্বারা সমস্ত মিথ্যা ধর্মের ধ্বংস। প্রকাশিত বাক্য ১৭ এবং ১৮ অধ্যায়ে প্রাপ্ত বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলোতে মিথ্যা ধর্মকে একটা বেশ্যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যার পৃথিবীর রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬ পদ দেখায় যে, সেই সময় শীঘ্র আসবে, যখন এই রাজনৈতিক দলগুলো “সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করিবে, এবং তাহাকে অনাথা ও নগ্না করিবে, তাহার মাংস ভক্ষণ করিবে, এবং তাহাকে আগুনে পোড়াইয়া দিবে।”
১২ তা ঘটার সময় যখন আসবে, তখন ঈশ্বর “তাহাদের [রাজনৈতিক শাসকদের] হৃদয়ে এই প্রবৃত্তি” দিবেন “যেন তাহারা” সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে শেষ করে দেওয়ার বিষয়ে “তাঁহারই মানস পূর্ণ করে।” (প্রকা. ১৭:১৭) তাই, বলা যেতে পারে যে, এই ধ্বংস ঈশ্বরের কাছ থেকে আসবে। এটা হল কপটতাপূর্ণ ধর্মের বিরুদ্ধে তাঁর বিচার, যে-ধর্ম দীর্ঘসময় ধরে ঈশ্বরের ইচ্ছার বিপরীত মতবাদগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছে এবং তাঁর দাসদের তাড়না করেছে। সাধারণ জগৎ মিথ্যা ধর্মের এই আসন্ন ধ্বংস আশা করে না। কিন্তু, যিহোবার বিশ্বস্ত দাসেরা আশা করে। আর এই শেষকালজুড়ে তারা লোকেদেরকে এই সম্বন্ধে বলে আসছে।
১৩. কী ইঙ্গিত দেয় যে, মিথ্যা ধর্মের শেষ সত্বর ঘটবে?
১৩ মিথ্যা ধর্মের ধ্বংস হতে দেখা লোকেদের জন্য প্রচণ্ড আঘাতজনক হবে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে, এমনকী “পৃথিবীর” কিছু “রাজা” সেই ধ্বংসের বিষয়ে ঘোষণা করবে: “হায়! হায়! . . . কারণ এক ঘন্টার মধ্যেই তোমার বিচার উপস্থিত!” (প্রকা. ১৮:৯, ১০, ১৬, ১৯) বাইবেল যে ‘এক ঘন্টা’ শব্দগুলো ব্যবহার করে, তা দেখায় যে, এই ঘটনা তুলনালকভাবে সত্বর ঘটবে।
১৪. যিহোবার শত্রুরা যখন অবশেষে তাঁর দাসদের আক্রমণ করবে, তখন ঈশ্বর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন?
১৪ আমরা বুঝতে পারি যে, মিথ্যা ধর্ম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কিছু সময় পর, যিহোবার সেই দাসদের ওপর আক্রমণ করা হবে, যারা তাঁর বিচারের বার্তা সম্বন্ধে ঘোষণা করে আসছে। (যিহি. ৩৮:১৪-১৬) যখন সেই আক্রমণ শুরু হবে, তখন আক্রমণকারীদের যিহোবার সম্মুখীন হতে হবে, যিনি তাঁর বিশ্বস্ত লোকেদের রক্ষা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। যিহোবা ঘোষণা করেন: “আমি নিজ অন্তর্জ্বালায় ও রোষানলে বলিয়াছি, . . . তাহাতে তাহারা জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভু।” (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৮:১৮-২৩.) ঈশ্বর তাঁর বাক্যে বলেন: “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে [তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের] স্পর্শ করে, সে [আমার] চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” (সখ. ২:৮) তাই, তাঁর শত্রুরা যখন তাঁর দাসদের ওপর বিশ্বব্যাপী আক্রমণ শুরু করবে, তখন যিহোবা প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। তিনি পদক্ষেপ নেবেন, যা মহাক্লেশের শেষ ধাপ অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্যায় আরমাগিদোনের দিকে পরিচালিত করবে। খ্রিস্টের আদেশাধীনে শক্তিশালী দূতবাহিনী শয়তানের জগতের বিরুদ্ধে বিচার নিয়ে আসবে।
আমাদের যেভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত
১৫. এই বিধিব্যবস্থার শেষ যে সন্নিকট, তা জানার ফলে আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত?
১৫ এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ যে দ্রুত এগিয়ে আসছে, তা জানার ফলে আমাদের কীভাবে প্রভাবিত হওয়া উচিত? প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “এইরূপে যখন এই সমস্তই বিলীন হইবে, তখন পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত!” (২ পিতর ৩:১১) এই কথাগুলো এই বিষয়টা নিশ্চিত করার ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজনের ওপর জোর দেয় যে, আমাদের আচরণ ঈশ্বরের চাহিদাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং আমাদের জীবনে ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেমকে প্রতিফলিত করে। এই ধরনের কাজগুলোর অন্তর্ভুক্ত হল, শেষ আসার আগে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করা। পিতর আরও লিখেছিলেন: “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; . . . প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক।” (১ পিতর ৪:৭) ক্রমাগতভাবে প্রার্থনায় তাঁর কাছে আসার এবং পবিত্র আত্মা ও বিশ্বব্যাপী তাঁর মণ্ডলীর দ্বারা আমাদেরকে নির্দেশনা দিতে বলার মাধ্যমে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হই এবং তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখাই।
১৬. কেন আমাদের ঈশ্বরের পরামর্শের সঙ্গে নিবিড়ভাবে লেগে থাকতে হবে?
১৬ এই বিপদজনক সময়ে আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের এই পরামর্শের সঙ্গে নিবিড়ভাবে লেগে থাকতে হবে: “তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের ন্যায় চল। সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ।” (ইফি. ৫:১৫, ১৬) ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন দুষ্টতা আরও বেশি ব্যাপক। লোকেদেরকে যিহোবার ইচ্ছা পালন করা থেকে বিরত করতে অথবা তাদেরকে কেবল বিক্ষিপ্ত করতে শয়তান অনেক পরিকল্পনা করেছে। ঈশ্বরের দাস হিসেবে আমরা তা জানি এবং কোনোকিছুকেই আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্যকে হ্রাস করে দেওয়ার সুযোগ দিতে চাই না। এ ছাড়া, আমরা জানি যে, শীঘ্র কী ঘটতে যাচ্ছে আর আমরা যিহোবা ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর ওপর আস্থা রাখি।—পড়ুন, ১ যোহন ২:১৫-১৭.
১৭. যখন পুনরুত্থান ঘটবে, তখন আরমাগিদোন থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে, তা বর্ণনা করুন।
১৭ ঈশ্বর যে মৃত ব্যক্তিদেরকে জীবনে ফিরিয়ে আনবেন, সেই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হবে কারণ “ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) সেই প্রতিজ্ঞা কতটা জোরালো, তা লক্ষ করুন: “পুনরুত্থান হইবে”! এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই কারণ যিহোবা নিজে তা বলেছেন! যিশাইয় ২৬:১৯ পদ প্রতিজ্ঞা করে: “তোমার মৃতেরা জীবিত হইবে, . . . হে ধূলি-নিবাসীরা, তোমরা জাগ্রত হও, আনন্দ গান কর।” ঈশ্বরের প্রাচীন লোকেদের নিজ দেশে পুনর্থাপনের মাধ্যমে এই কথাগুলোর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হয়েছিল আর তা আমাদেরকে নতুন জগতে আসন্ন আক্ষরিক পরিপূর্ণতার বিষয়ে আস্থা প্রদান করে। পুনরুত্থিত ব্যক্তিরা যখন তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হবে, তখন তা কত আনন্দেরই না হবে! হ্যাঁ, শয়তানের জগতের শেষ সন্নিকট আর ঈশ্বরের নতুন জগৎ একেবারে কাছেই। আমাদের জন্য প্রবুদ্ধ থাকা কতই না গুরুত্বপূর্ণ!
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• যিশুর শিক্ষার মূলভাব কী ছিল?
• এখন রাজ্যের প্রচার কাজ কতটা ব্যাপক?
• কেন প্রবুদ্ধ থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
• প্রেরিত ২৪:১৫ পদের প্রতিজ্ঞার মধ্যে আপনি উৎসাহজনক কী পান?
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
অশান্ত যুগের শুরু
অশান্ত যুগ: এক নতুন জগতে অভিযান (ইংরেজি) হল, আ্যলেন গ্রিনস্প্যানের দ্বারা লিখিত ২০০৭ সালের একটি বইয়ের নাম। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভড্ বোর্ড-এর সভাপতি ছিলেন, যেটি সেই জাতির সামগ্রিক কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার তত্ত্বাবধান করে। গ্রিনস্প্যান ১৯১৪ সালের আগের এবং এর পরের জগৎ পরিস্থিতির মধ্যে লক্ষণীয় বৈসাদৃশ্য সম্বন্ধে তুলে ধরেন।
“সমস্ত সমসাময়িক বিবরণ অনুযায়ী, ১৯১৪ সালের আগের জগৎ ভদ্রতা এবং সভ্যতার উচ্চ শিখরের দিকে অপরিবর্তনীয়ভাবে ধাবিত হচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল; মানবসমাজ নিখুঁত হয়ে উঠবে বলে মনে হয়েছিল। ঊনবিংশ শতাব্দী জঘন্য দাস ব্যাবসার শেষ নিয়ে এসেছিল। অমানুষিক দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছিল বলে মনে হয়েছিল। . . . ঊনবিংশ শতাব্দীজুড়ে বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনের ধাপ অগ্রগতি লাভ করেছিল, রেললাইন, টেলিফোন, বৈদ্যুতিক আলো, চলচ্চিত্র, মোটরগাড়ি এবং গৃহস্থালি সুযোগ-সুবিধা হল উল্লেখ করার মতো অনেক বিষয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান, উন্নত পুষ্টি এবং বিশুদ্ধ জলের ব্যাপক বিতরণ জীবনের প্রত্যাশাকে উন্নীত করেছিল। . . . সকলে মনে করেছিল যে, এই উন্নতি ক্রমাগত চলবে।”
কিন্তু . . . দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আক্ষরিকভাবে যতটা ধ্বংসাত্মক ছিল তার চেয়ে বরং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ভদ্রতা ও সভ্যতার জন্য আরও বেশি মারাত্মক ছিল: প্রথম দ্বন্দ্ব এক ধারণাকে শেষ করে দিয়েছিল। আমি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের বছরগুলোর চিন্তাভাবনা মুছে ফেলতে পারি না, যখন মানবজাতির ভবিষ্যৎকে ভারমুক্ত ও সীমাহীন বলে মনে হয়েছিল। আজকে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ১০০ বছর আগের চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে আরও সঙ্গতিপূর্ণ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আগের যুগকে যেভাবে পরিবর্তিত করেছিল, সেভাবে সন্ত্রাস, বিশ্ব উষ্ণায়ন অথবা সাধারণ লোকেদের বৃদ্ধিরত ক্ষমতা কি জীবন-অগ্রগতিমূলক বিশ্বায়নের বর্তমান যুগকে পরিবর্তন করবে? কেউই এর উত্তর সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারে না।”
গ্রিনস্প্যান তার ছাত্রজীবনের অর্থনীতির অধ্যাপক বেঞ্জামিন এম. এন্ডারসনের (১৮৮৬-১৯৪৯) একটা উক্তি স্মরণ করে বলেছিলেন: “যাদের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের জগৎ সম্বন্ধে প্রাপ্তবয়স্কের স্মৃতি ও প্রাপ্তবয়স্কের বোধগম্যতা রয়েছে, তারা অতীতের জন্য অনেক আকুতি নিয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। তখন এক নিরাপত্তাবোধ ছিল, যা এরপর আর কখনোই বিদ্যমান থাকেনি।”—অর্থনীতি এবং গণমঙ্গল।
২০০৬ সালে প্রকাশিত জি, জে. মেয়ারের দ্বারা রচিত এক অসম্পূর্ণ জগৎ (ইংরেজি) বইয়ের মধ্যে একই উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে। আমরা পড়ি: “ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো সম্বন্ধে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, সেগুলো ‘সমস্তকিছু পরিবর্তিত’ করে দিয়েছে। মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) বেলায় এটা আরও একবার সত্য। যুদ্ধ সত্যিই সমস্তকিছু পরিবর্তন করে দিয়েছে: কেবল সীমানা নয়, কেবল সরকারগুলো ও জাতিগুলোর ভাগ্য নয় বরং লোকেরা জগৎকে ও নিজেদেরকে এর আগে যেভাবে দেখত, সেটাও। এটা সময়ের মধ্যে এক ধরনের গহ্বরের সৃষ্টি করেছে, যা যুদ্ধের আগের জগৎকে সেই সমস্তকিছু থেকে স্থায়ীভাবে সংযোগহীন করে দিয়েছে, যেগুলো আগে ছিল।”
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আরমাগিদোনের সময় যিহোবা শক্তিশালী দূতবাহিনী পাঠাবেন