“মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক”
“যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক।”—রোমীয় ১২:১৮.
১, ২. (ক) যিশু তাঁর অনুসারীদের কোন বিষয়ে সাবধান করেছিলেন? (খ) বিরোধিতার প্রতি আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, সেই বিষয়ে আমরা কোথায় পরামর্শ খুঁজে পেতে পারি?
যিশু তাঁর অনুসারীদের সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, তারা এই জগতের বিভিন্ন জাতির কাছ থেকে বিরোধিতা ভোগ করবে এবং তাঁর মৃত্যুর আগের দিন সন্ধ্যায় তিনি সেটার কারণও ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “তোমরা যদি জগতের হইতে, তবে জগৎ আপনার নিজস্ব ভাল বাসিত; কিন্তু তোমরা ত জগতের নহ, বরং আমি তোমাদিগকে জগতের মধ্য হইতে মনোনীত করিয়াছি, এই জন্য জগৎ তোমাদিগকে দ্বেষ করে।”—যোহন ১৫:১৯.
২ প্রেরিত পৌল যিশুর কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তার যুবক সঙ্গী তীমথিয়ের উদ্দেশে লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে পৌল লিখেছিলেন: “তুমি আমার শিক্ষা, আচার ব্যবহার, সঙ্কল্প, বিশ্বাস, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, প্রেম, ধৈর্য্য, নানাবিধ তাড়না, ও দুঃখভোগের অনুসরণ করিয়াছ।” এরপর পৌল আরও বলেছিলেন: “আর যত লোক ভক্তিভাবে খ্রীষ্ট যীশুতে জীবন ধারণ করিতে ইচ্ছা করে, সেই সকলের প্রতি তাড়না ঘটিবে।” (২ তীম. ৩:১০-১২) রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা তার চিঠির ১২ অধ্যায়ে, পৌল বিজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, বিরোধিতার প্রতি তাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। তার কথাগুলো এই শেষ সময়ে আমাদের নির্দেশনা প্রদান করতে পারে।
“যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর”
৩, ৪. রোমীয় ১২:১৭ পদে দেওয়া পরামর্শ কীভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে (ক) যেখানে পরিবারের সব সদস্য যিহোবাকে উপাসনা করে না? (খ) প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের আচরণে?
৩ রোমীয় ১২:১৭ পদ পড়ুন। পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন, কেউ বিদ্বেষপরায়ণ মনোভাব দেখালে, প্রতিদানে আমাদের শত্রুভাবাপন্ন হওয়া উচিত নয়। তার এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া নির্দিষ্টভাবে সেই পরিবারগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সব সদস্য যিহোবাকে উপাসনা করে না। একজন খ্রিস্টান সাথি, নির্দয় কথা বা কাজের পরিশোধে নির্দয় আচরণ করার প্রলোভনকে প্রতিরোধ করেন। ‘মন্দের পরিশোধে মন্দ করিবার’ ফলে ভালো কিছুই আসে না। এর বিপরীতে, এই ধরনের আচরণ পরিস্থিতিকে কেবল আরও খারাপই করতে পারে।
৪ পৌল আরও ভালো এক উপায়ের সুপারিশ করেন: “সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর।” ঘরে, একজন স্বামী তার স্ত্রীর বিশ্বাস সম্বন্ধে কটু মন্তব্যগুলো করা সত্ত্বেও তার স্ত্রী যদি প্রকৃত দয়া দেখান, তাহলে সেই স্ত্রী রাগে ফেটে পড়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার সম্ভাবনাকে রোধ করতে পারেন। (হিতো. ৩১:১২) কার্লোস, যিনি এখন বেথেল পরিবারের একজন সদস্য, তিনি বর্ণনা করেন যে, কীভাবে তার মা সদয় থাকার ও ভালোমতো ঘরের যত্ন নেওয়ার দ্বারা তার বাবার তীব্র বিরোধিতাকে কাটিয়ে উঠেছিলেন। “মা আমাদের ভাইবোনদেরকে সবসময় বাবার প্রতি সম্মান দেখাতে উৎসাহিত করতেন। মা আমাকে বাবার সঙ্গে বুল (ফ্রান্সের এক খেলা, যা বল দিয়ে খেলা হয়) খেলার জন্য প্রায়ই বলতেন, যদিও এটা আমার পছন্দের খেলা ছিল না। তবে, এতে বাবা খুশি হতেন।” অবশেষে তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেছিলেন এবং বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। ‘সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, তাহাই’ করার জন্য, যিহোবার সাক্ষিরা কোনো জায়গায় যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে, তখন তাদের প্রতিবেশীদের ব্যবহারিক সাহায্য জোগানোর দ্বারা প্রায়ই ভেদাভেদ কাটিয়ে উঠেছে।
“জ্বলন্ত অঙ্গারের” দ্বারা বিরোধিতাকে গলিয়ে ফেলা
৫, ৬. (ক) কোন অর্থে একজন শত্রুর মাথায় ‘জ্বলন্ত অঙ্গার’ রাশি করে রাখা হয়? (খ) স্থানীয় একটি অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন, যেটি দেখায় যে রোমীয় ১২:২০ পদে প্রাপ্ত পরামর্শ প্রয়োগ করা কীভাবে উত্তম ফল উৎপন্ন করতে পারে।
৫ রোমীয় ১২:২০ পদ পড়ুন। এই পদে লিপিবদ্ধ শব্দগুলো বাছাই করার সময় নিঃসন্দেহে পৌলের মনে সেই কথাগুলোই ছিল, যা আমরা হিতোপদেশ ২৫:২১, ২২ পদে পাই আর তা হল: “তোমার শত্রু যদি ক্ষুধিত হয়, তাহাকে অন্ন ভোজন করাও; যদি সে পিপাসিত হয়, তাহাকে জল পান করাও; কেননা তুমি তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গার রাশি করিয়া রাখিবে, আর সদাপ্রভু তোমাকে পুরস্কার দিবেন।” রোমীয় ১২ অধ্যায়ে প্রাপ্ত তার পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে, পৌল এইরকম বোঝাননি যে, একজন বিরোধীর ওপর শাস্তি বা লজ্জা আরোপ করার জন্য দৃষ্টান্তমূলক অঙ্গার বা কয়লার রাশি রাখা হয়েছিল। এর পরিবর্তে, এই প্রবাদ—ও সেইসঙ্গে রোমীয়দের প্রতি পৌলের একইরকম কথাগুলো—আকরিক গলিয়ে ধাতুকে পৃথক করার প্রাচীন পদ্ধতিকে নির্দেশ করে বলে মনে হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইংরেজ পণ্ডিত চার্লস ব্রিজেস বলেছিলেন: “অনমনীয় ধাতুকে শুধু আগুনের ওপর রেখেই নয় কিন্তু এটার ওপর জ্বলন্ত কয়লা রাশি করে রেখে তাতে ওপর ও নীচ থেকে তাপ দিন। কিছু কিছু হৃদয় খুবই কঠিন, এতটাই যে, ধৈর্যের, আত্মত্যাগের, প্রচণ্ড ভালোবাসার শক্তিশালী প্রভাব সত্ত্বেও গলতে চায় না।”
৬ “জ্বলন্ত অঙ্গারের” মতো, সদয় ব্যবহার বিরোধীদের হৃদয়কে উষ্ণ করতে পারে এবং তাদের শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবকে গলিয়ে দিতে পারে। সদয় ব্যবহার লোকেদেরকে যিহোবার লোকেদের প্রতি ও বাইবেলের যে-বার্তা তারা প্রচার করে, সেটার প্রতি আরও অনুকূল মনোভাব দেখাতে প্রভাবিত করতে পারে। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “আর পরজাতীয়দের মধ্যে আপন আপন আচার ব্যবহার উত্তম করিয়া রাখ; তাহা হইলে তাহারা যে বিষয়ে দুষ্কর্ম্মকারী বলিয়া তোমাদের পরীবাদ করে, স্বচক্ষে তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিলে সেই বিষয়ে তত্ত্বাবধানের দিনে ঈশ্বরের গৌরব করিবে।”—১ পিতর ২:১২.
“মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক”
৭. খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের কাছে কোন শান্তি রেখে গিয়েছেন আর এটা আমাদের কী করতে প্রেরণা দেওয়া উচিত?
৭ রোমীয় ১২:১৮ পদ পড়ুন। যিশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে শেষ সন্ধ্যা কাটানোর সময় তাদেরকে বলেছিলেন: “শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি।” (যোহন ১৪:২৭) খ্রিস্ট তাঁর শিষ্যদের কাছে যে-শান্তি রেখে গিয়েছেন, সেটা হচ্ছে মনের প্রশান্তি, যা তারা তখন অনুভব করে, যখন তারা বুঝতে পারে যে, যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর প্রিয় পুত্র তাদেরকে ভালোবাসে ও তাদেরকে অনুমোদন করে। এই মনের শান্তি যেন আমাদেরকে অন্যদের সঙ্গে শান্তিতে বাস করতে প্রেরণা দেয়। প্রকৃত খ্রিস্টানরা শান্তি ভালোবাসে এবং মিলন করে দেয় বা শান্তিস্থাপনকারী।—মথি ৫:৯.
৮. কীভাবে আমরা ঘরে ও আমাদের মণ্ডলীতে শান্তিস্থাপনকারী হতে পারি?
৮ পারিবারিক বৃত্তের মধ্যে শান্তিস্থাপনকারী হওয়ার একটা উপায় হল, পরিস্থিতিকে আরও খারাপ হতে দেওয়ার পরিবর্তে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মতভেদ নিষ্পত্তি করা। (হিতো. ১৫:১৮; ইফি. ৪:২৬) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যেও এটা সত্য। প্রেরিত পিতর শান্তির অনুধাবন করাকে জিহ্বা নিবৃত্ত করার সঙ্গে তুলনা করেন। (১ পিতর ৩:১০, ১১) যাকোবও জিহ্বার সঠিক ব্যবহার সম্বন্ধে দৃঢ় পরামর্শ দেওয়ার পর এবং হিংসা ও প্রতিযোগিতা এড়িয়ে চলার প্রয়োজন সম্বন্ধে বলার পর লিখেছিলেন: “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট। আর যাহারা শান্তি-আচরণ করে, তাহাদের জন্য শান্তিতে ধার্ম্মিকতা-ফলের বীজ বপন করা যায়।”—যাকোব ৩:১৭, ১৮.
৯. “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে” থাকার চেষ্টা করার সময়, আমাদের কী মনে রাখা উচিত?
৯ রোমীয় ১২:১৮ পদে প্রাপ্ত তার বিবৃতিতে পৌল শুধু পারিবারিক বৃত্ত ও মণ্ডলীর মধ্যেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রেও শান্তিপ্রবণ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বলেন। তিনি বলেন যে, আমাদের “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে” থাকা উচিত। এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিবেশী, সহকর্মী, সহপাঠী এবং জনসাধারণ্যে পরিচর্যায় যে-লোকেদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তারা। কিন্তু, প্রেরিত এই কথা বলে তার পরামর্শকে বৈশিষ্ট্যযুক্ত করেন: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে।” এর মানে হল, “মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে” থাকার জন্য যুক্তিযুক্তভাবে আমরা যা-কিছু করতে পারি, তা করা কিন্তু তা ঈশ্বরের ধার্মিক নীতিগুলোর ব্যাপারে আপোশ করে নয়।
প্রতিশোধ নেওয়া যিহোবার কাজ
১০, ১১. কোন অর্থে আমরা “ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া” দিই আর কেন তা উপযুক্ত?
১০ রোমীয় ১২:১৯ পদ পড়ুন। আমাদের কাজের ও বার্তার ‘বিরোধিগণের’ ও সেইসঙ্গে ঘোর বিরোধীদের প্রতি আমরা “সহনশীল” হব এবং তাদের সঙ্গে “মৃদু ভাবে” আচরণ করব। (২ তীম. ২:২৩-২৫) পৌল খ্রিস্টানদেরকে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং ‘ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দিতে’ পরামর্শ দেন। এখানে পৌল কার ক্রোধের কথা উল্লেখ করছেন? তিনি নিশ্চয়ই এইরকমটা বোঝাননি যে, আমাদের নিজের ক্রোধকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। স্পষ্টতই, আমরা ঈশ্বরের ক্রোধের জন্য স্থান ছেড়ে দিই। খ্রিস্টান হিসেবে আমরা জানি যে, প্রতিশোধ নেওয়া আমাদের কাজ নয়। গীতরচক লিখেছিলেন: “ক্রোধ হইতে নিবৃত্ত হও, কোপ ত্যাগ কর, রুষ্ট হইও না, হইলে কেবল দুষ্কার্য্য করিবে।” (গীত. ৩৭:৮) আর শলোমন পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি বলিও না, অপকারের প্রতিফল দিব; সদাপ্রভুর অপেক্ষা কর, তিনি তোমাকে রক্ষা করিবেন।”—হিতো. ২০:২২.
১১ বিরোধীরা যদি আমাদের ক্ষতি করে, তাহলে তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টা যিহোবার ওপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বিজ্ঞতার কাজ, যদি তিনি মনে করেন যে, তা প্রদান করা উপযুক্ত। পৌলের মনে যে যিহোবার ক্রোধের বিষয়টাই ছিল, তা দেখিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন: “লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] বলেন।’” (তুলনা করুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৩৫.) আমরা যদি প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা উদ্ধতভাবে আচরণ করছি, যিহোবা তাঁর অধিকারে যা-কিছু রেখেছেন, তা আমরা নিজেদের ওপর তুলে নিচ্ছি। অধিকন্তু, “আমিই প্রতিফল দিব,” যিহোবার এই প্রতিজ্ঞার ওপর আমরা বিশ্বাসের অভাব দেখাচ্ছি।
১২. কখন যিহোবার ক্রোধ প্রকাশিত হবে এবং কীভাবে?
১২ রোমীয়দের উদ্দেশে লেখা তার চিঠিতে পৌল এর আগে বলেছিলেন: “ঈশ্বরের ক্রোধ স্বর্গ হইতে সেই মনুষ্যদের সমস্ত ভক্তিহীনতা ও অধার্ম্মিকতার উপরে প্রকাশিত হইতেছে, যাহারা অধার্ম্মিকতায় সত্যের প্রতিরোধ করে।” (রোমীয় ১:১৮) যিহোবার ক্রোধ তাঁর পুত্রের মাধ্যমে “মহাক্লেশের” সময় স্বর্গ থেকে প্রকাশিত হবে। (প্রকা. ৭:১৪) সেটা “ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের স্পষ্ট লক্ষণ” হবে, যেমনটা পৌল তার অনুপ্রাণিত চিঠিগুলোর আরেকটিতে এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “বাস্তবিক ঈশ্বরের কাছে ইহা ন্যায্য যে, যাহারা তোমাদিগকে ক্লেশ দেয়, তিনি তাহাদিগকে প্রতিফলরূপে ক্লেশ দিবেন, এবং ক্লেশ পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদিগকে আমাদের সহিত বিশ্রাম দিবেন, [ইহা তখনই হইবে] যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।”—২ থিষল. ১:৫-৮.
উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় করা
১৩, ১৪. (ক) বিরোধিতার মুখোমুখি হলে কেন আমরা অবাক হই না? (খ) যারা আমাদের তাড়না করে, তাদেরকে আমরা কীভাবে আশীর্বাদ করতে পারি?
১৩ রোমীয় ১২:১৪, ২১ পদ পড়ুন। যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্যগুলো পরিপূর্ণ করবেন, এই বিষয়ে পুরোপুরি আস্থা রেখে আমরা নিঃসন্দেহে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা, তিনি আমাদেরকে যে-কাজ করতে দিয়েছেন—‘রাজ্যের সুসমাচার’ সম্বন্ধে “সমুদয় জগতে” প্রচার করা—সেই বিষয়ের ওপর কেন্দ্রীভূত করতে পারি। (মথি ২৪:১৪) আমরা জানি যে, এই খ্রিস্টীয় কাজ আমাদের শত্রুদের ক্রোধকে উসকে দেবে কারণ যিশু আমাদের সাবধান করেছিলেন: “আমার নাম প্রযুক্ত সমুদয় জাতি তোমাদিগকে দ্বেষ করিবে।” (মথি ২৪:৯) তাই, বিরোধিতার মুখোমুখি হলে আমরা অবাক বা নিরুৎসাহিত হই না। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “প্রিয়েরা, তোমাদের পরীক্ষার্থে যে আগুন তোমাদের মধ্যে জ্বলিতেছে, ইহা বিজাতীয় ঘটনা বলিয়া আশ্চর্য্য জ্ঞান করিও না; বরং যে পরিমাণে খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী হইতেছ, সেই পরিমাণে আনন্দ কর, যেন তাঁহার প্রতাপের প্রকাশকালে উল্লাস সহকারে আনন্দ করিতে পার।”—১ পিতর ৪:১২, ১৩.
১৪ আমাদের তাড়নাকারীদের প্রতি শত্রুতাপূর্ণ অনুভূতি রাখার পরিবর্তে আমরা তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি, এটা জানি যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো অজ্ঞানতাপ্রযুক্ত এইরকম করছে। (২ করি. ৪:৪) আমরা পৌলের এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার প্রচেষ্টা করি: “যাহারা তাড়না করে, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ কর, আশীর্ব্বাদ কর, শাপ দিও না।” (রোমীয় ১২:১৪) বিরোধীদের আশীর্বাদ করার একটা উপায় হল তাদের জন্য প্রার্থনা করা। যিশু তাঁর পর্বতেদত্ত উপদেশে বলেছিলেন: “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও; যাহারা তোমাদিগকে দ্বেষ করে, তাহাদের মঙ্গল করিও; যাহারা তোমাদিগকে শাপ দেয়, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিও; যাহারা তোমাদিগকে নিন্দা করে, তাহাদের নিমিত্ত প্রার্থনা করিও।” (লূক ৬:২৭, ২৮) প্রেরিত পৌল তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন যে, একজন তাড়নাকারী খ্রিস্টের একজন বিশ্বস্ত শিষ্য ও যিহোবার একজন উদ্যোগী দাস হয়ে উঠতে পারেন। (গালা. ১:১৩-১৬, ২৩) আরেকটি চিঠিতে পৌল বলেছিলেন: “নিন্দিত হইতে হইতে আশীর্ব্বাদ করিতেছি, তাড়িত হইতে হইতে সহ্য করিতেছি, অপবাদিত হইতে হইতে বিনয় করিতেছি।”—১ করি. ৪:১২, ১৩.
১৫. উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় করার সর্বোত্তম উপায় কী?
১৫ তাই, একজন সত্য খ্রিস্টান রোমীয় ১২ অধ্যায়ের শেষ পদের এই কথাগুলোতে মনোযোগ দেন: “তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।” সমস্ত মন্দতার উৎস হচ্ছে শয়তান দিয়াবল। (যোহন ৮:৪৪; ১ যোহন ৫:১৯) প্রেরিত যোহনকে দেওয়া দর্শনে, যিশু প্রকাশ করেছিলেন যে তাঁর অভিষিক্ত ভাইয়েরা “মেষশাবকের রক্ত প্রযুক্ত, এবং আপন আপন সাক্ষ্যের বাক্য প্রযুক্ত, . . . [শয়তানকে] জয় করিয়াছে।” (প্রকা. ১২:১১) এটা দেখায় যে, শয়তানকে এবং বর্তমান বিধিব্যবস্থার ওপর সে যে-মন্দ প্রভাব বিস্তার করছে, সেটাকে জয় করার সর্বোত্তম উপায় হল, আমাদের সাক্ষ্যদানের কাজ অর্থাৎ রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার দ্বারা উত্তম বিষয় করা।
প্রত্যাশায় আনন্দ করা
১৬, ১৭. রোমীয় ১২ অধ্যায় আমাদেরকে কী শিখিয়েছে (ক) আমাদের জীবনকে যেভাবে ব্যবহার করা উচিত, সেই বিষয়ে? (খ) মণ্ডলীতে আমাদের কীভাবে আচরণ করা উচিত, সেই বিষয়ে? (গ) আমাদের বিশ্বাসের বিরোধিতা করে, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা উচিত, সেই বিষয়ে?
১৬ রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে পৌলের চিঠির ১২ অধ্যায় সম্বন্ধে আমাদের সংক্ষিপ্ত বিবেচনা আমাদেরকে অনেক বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আমরা শিখেছি যে, যিহোবার উৎসর্গীকৃত দাস হিসেবে ত্যাগস্বীকার করার জন্য আমাদের ইচ্ছুক হওয়া উচিত। ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমরা স্বেচ্ছায় এই বলি উৎসর্গ বা ত্যাগস্বীকার করি কারণ আমাদের যুক্তি করার ক্ষমতা আমাদেরকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছে যে, এটা হল ঈশ্বরের ইচ্ছা। আমরা আত্মায় উত্তপ্ত হই এবং উদ্যোগের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন বরকে ব্যবহার করি। আমরা সম্পূর্ণ নম্রতা ও বিনয় সহকারে সেবা করি, আমাদের খ্রিস্টীয় একতাকে রক্ষা করার জন্য যথাসাধ্য করি। আমরা অতিথিসেবা করি এবং প্রকৃত সহানুভূতি দেখাই।
১৭ এ ছাড়া, রোমীয় ১২ অধ্যায় আমাদেরকে এই বিষয়ের ওপর প্রচুর পরামর্শ দেয় যে, বিরোধিতার প্রতি আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত। প্রতিদানে আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নয়। সদয় ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের বিরোধিতাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা উচিত। বাইবেলের নীতিগুলোকে লঙ্ঘন না করে যতদূর সম্ভব আমাদের সকল মনুষ্যের সঙ্গে শান্তিতে বাস করার চেষ্টা করা উচিত। এটা পারিবারিক বৃত্তে, মণ্ডলীতে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে, কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে এবং আমাদের জনসাধারণ্যের পরিচর্যায় প্রযোজ্য। এমনকী যখন আমরা নিষ্ঠুর শত্রুতার মুখোমুখি হই, আমরা উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় করার জন্য আমাদের সর্বোত্তমটুকু করি, এই কথা স্মরণে রাখি যে, প্রতিশোধ নেওয়া যিহোবার কাজ।
১৮. রোমীয় ১২:১২ পদে কোন তিনটে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?
১৮ রোমীয় ১২:১২ পদ পড়ুন। এইসমস্ত বিজ্ঞ, ব্যবহারিক পরামর্শ ছাড়াও পৌল এখানে আরও তিনটে বিষয়ে পরামর্শ দেন। যেহেতু আমরা যিহোবার সাহায্য ছাড়া কখনো এই বিষয়গুলো করতে পারতাম না, তাই প্রেরিত আমাদেরকে ‘প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিতে’ উপদেশ দেন। এটা আমাদেরকে ‘ক্লেশে ধৈর্য্যশীল হইবার’ বিষয়ে তার আরেকটা পরামর্শ মেনে চলতে সমর্থ করবে। শেষে, আমাদের মনকে সেই ভবিষ্যতের ওপর স্থির রাখতে হবে, যেটা যিহোবা আমাদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছেন আর আমাদের অনন্তজীবনের “প্রত্যাশায় আনন্দ” করতে হবে, তা সেটা স্বর্গে বা পৃথিবীতে, যেখানেই হোক না কেন।
পুনরালোচনা
• বিরোধিতার প্রতি আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত?
• কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের শান্তিস্থাপনকারী হওয়ার চেষ্টা করা উচিত এবং কীভাবে?
• কেন আমাদের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়?
[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমাদের প্রতিবেশীদের ব্যবহারিক সহযোগিতা প্রদান করা ভেদাভেদ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি মণ্ডলীর মধ্যে শান্তিস্থাপনকারী হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন?