মণ্ডলীকে গেঁথে তুলুন
“তোমরা পরস্পরকে আশ্বাস দেও, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুল।”—১ থিষল. ৫:১১.
১. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্য হওয়ার ফলে কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করা যায় কিন্তু তারপরও কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো থাকতে পারে?
খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একজন সদস্য হওয়া সত্যিই বিরাট এক আশীর্বাদ। যিহোবার সঙ্গে আপনার এক উত্তম সম্পর্ক রয়েছে। নির্দেশক হিসেবে তাঁর বাক্যের ওপর আপনার নির্ভরতা, আপনাকে অখ্রিস্টীয় জীবনধারার মন্দ পরিণতিগুলো থেকে রক্ষা করে। আপনার চারপাশে এমন অকৃত্রিম বন্ধুরা রয়েছে, যারা চায় আপনি ভালো বিষয়টা করুন। হ্যাঁ, অনেক আশীর্বাদ রয়েছে। কিন্তু, অধিকাংশ খ্রিস্টান কোনো না কোনো ধরনের সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। তাদের মধ্যে কারো কারো হয়তো ঈশ্বরের বাক্যের গভীর বিষয়গুলো বোঝার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। অন্যেরা অসুস্থ বা বিষণ্ণ অথবা তারা হয়তো তাদের মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর পরিণতি ভোগ করছে। আর আমরা সবাই এক অধার্মিক জগতে বাস করছি।
২. আমাদের ভাইবোনদের দুর্দশার প্রতি আমাদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত এবং কেন?
২ আমাদের মধ্যে কেউই সহখ্রিস্টানদের দুঃখ বা কষ্ট দেখতে চাই না। প্রেরিত পৌল মণ্ডলীকে একটা দেহের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন যে, “এক অঙ্গ দুঃখ পাইলে তাহার সহিত সকল অঙ্গই দুঃখ পায়।” (১ করি. ১২:১২, ২৬) এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমাদের ভাইবোনদের সমর্থন করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা করা উচিত। বেশ কিছু শাস্ত্রীয় উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো তুলে ধরে যে, মণ্ডলীর সদস্যরা কীভাবে অন্যদেরকে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে লড়াই করতে ও সেগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। এখন সেই ঘটনাগুলো বিবেচনা করার সময়, চিন্তা করুন যে আপনি কীভাবে সেখানে বর্ণিত একই উপায়গুলোতে সহযোগিতা করতে পারতেন। কীভাবে আপনি আপনার ভাইবোনদের আধ্যাত্মিকভাবে সহযোগিতা করতে আর এভাবে যিহোবার মণ্ডলীকে গেঁথে তুলতে পারেন?
‘তাহারা তাঁহাকে আপনাদের নিকটে আনিলেন’
৩, ৪, আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা কীভাবে আপল্লোকে সাহায্য করেছিল?
৩ আপল্লো যখন ইফিষে থাকতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি ইতিমধ্যেই একজন উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারক ছিলেন। প্রেরিতদের বিবরণ জানায়, “তিনি . . . আত্মাতে উত্তপ্ত হওয়াতে যীশুর বিষয়ে সূক্ষ্মরূপে কথা বলিতেন ও শিক্ষা দিতেন, কিন্তু কেবল যোহনের বাপ্তিস্ম জ্ঞাত ছিলেন।” আপল্লো “পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তাইজিত হওয়ার বিষয়টা জানতেন না আর খুব সম্ভবত এর মানে ছিল, তিনি হয় যোহন বাপ্তাইজকের শিষ্যদের কাছ থেকে কিংবা সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের আগের যিশুর অনুসারীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য লাভ করেছিলেন। যদিও আপল্লো উদ্যোগী ছিলেন কিন্তু তার জ্ঞানের মধ্যে যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। কীভাবে সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করা তাকে সাহায্য করেছিল?—প্রেরিত ১:৪, ৫; ১৮:২৫; মথি ২৮:১৯.
৪ খ্রিস্টান দম্পতি আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা, সমাজগৃহে আপল্লোকে সাহসের সঙ্গে কথা বলতে শুনেছিল, তাকে তাদের কাছে নিয়ে এসেছিল এবং তাকে আরও শিক্ষা দিয়েছিল। (পড়ুন, প্রেরিত ১৮:২৪-২৬.) এটা ছিল প্রেমপূর্ণ এক কাজ। আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা নিশ্চয়ই কৌশলি ও সাহায্যকারী উপায়ে আপল্লোর সঙ্গে কথা বলেছিল, তাকে এইরকম মনে করতে পরিচালিত করেনি যে, তার সমালোচনা করা হচ্ছে। আসলে বিষয়টা ছিল, তিনি প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর ইতিহাস সম্বন্ধে জানতেন না। আর কোনো সন্দেহ নেই যে, আপল্লোর নতুন সঙ্গীরা তাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানিয়েছিল বলে তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলেন। এই তথ্যগুলোর দ্বারা সুসজ্জিত হয়ে আপল্লো আখায়াতে তার ভাইবোনদের “বিস্তর উপকার” করেছিলেন এবং জোরালো সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।—প্রেরিত ১৮:২৭, ২৮.
৫. হাজার হাজার রাজ্য প্রকাশক কোন প্রেমপূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে থাকে আর এর ফল কী হয়?
৫ আজকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অনেকে সেই ব্যক্তিদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, যারা তাদেরকে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করেছিল। অগণিত ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, লোকেদের সত্য বুঝতে সাহায্য করার জন্য তাদের সঙ্গে কয়েক মাসের চেয়েও বেশি সময় ধরে নিয়মিতভাবে গৃহ বাইবেল অধ্যয়ন করতে হয়। কিন্তু, রাজ্যের প্রকাশকরা সেই ত্যাগস্বীকার করতে ইচ্ছুক কারণ তারা বুঝতে পারে যে, এটা জীবন-মৃত্যুর এক প্রশ্ন। (যোহন ১৭:৩) আর লোকেরা যখন সত্য বুঝতে পারে, এর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করে ও যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য তাদের জীবনকে ব্যবহার করে, তখন তা দেখা কতই না আনন্দদায়ক!
“ভ্রাতৃগণ তাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিত”
৬, ৭. (ক) কেন পৌল তীমথিয়কে ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন? (খ) তীমথিয়কে কোন উন্নতি করতে সাহায্য করা হয়েছিল?
৬ প্রেরিত পৌল ও সীল যখন দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রার সময় লুস্ত্রায় পরিদর্শন করেছিল, তখন তারা তীমথিয় নামে এক অল্পবয়সিকে খুঁজে পেয়েছিল, যার বয়স তখন সম্ভবত কিশোর বয়সের শেষ দিকে কিংবা ২০-এর কোঠার প্রথম দিকে। “লুস্ত্রা ও ইকনীয় নিবাসী ভ্রাতৃগণ তাঁহার পক্ষে সাক্ষ্য দিত।” তীমথিয়ের মা উনীকী ও দিদিমা লোয়ী উৎসর্গীকৃত খ্রিস্টান ছিল কিন্তু তার বাবা একজন অবিশ্বাসী ছিলেন। (২ তীম. ১:৫) কয়েক বছর আগে সেই এলাকায় তার প্রথম পরিদর্শনের সময় পৌল হয়তো এই পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু, এবার তিনি তীমথিয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কারণ তাকে একজন চমৎকার অল্পবয়সি ব্যক্তি বলে মনে হয়েছে। তাই, স্থানীয় প্রাচীনগোষ্ঠীর অনুমোদন সাপেক্ষে তীমথিয় পৌলের মিশনারি কাজের একজন সহযোগী হয়েছিলেন।—পড়ুন, প্রেরিত ১৬:১-৩.
৭ তার বয়স্ক সঙ্গীর কাছ থেকে তীমথিয়ের অনেক কিছু শেখার ছিল। তবে, পরবর্তী সময়ে তিনি এতটা উন্নতি করেছিলেন যে, পৌল আস্থার সঙ্গে তীমথিয়কে বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করতে ও তার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পাঠিয়েছিলেন। তীমথিয় পৌলের সঙ্গে ১৫ বছর বা আরও বেশি সময় মেলামেশা উপভোগ করেছিলেন আর সেই সময়ের মধ্যে এই অনভিজ্ঞ ও খুব সম্ভবত লাজুক স্বভাবের অল্পবয়সি ব্যক্তি একজন চমৎকার অধ্যক্ষ হয়ে ওঠার মতো উন্নতি করেছিলেন।—ফিলি. ২:১৯-২২; ১ তীম. ১:৩.
৮, ৯. অল্পবয়সিদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য মণ্ডলীর সদস্যরা কী করতে পারে? একটা উদাহরণ দিন।
৮ বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অল্পবয়সি অনেক ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যদি আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের উৎসাহ ও যত্ন লাভ করে, তাহলে এই অল্পবয়সিরা যিহোবার লোকেদের মধ্যে আরও বড়ো বড়ো দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আকাঙ্ক্ষী হতে পারে। আপনার মণ্ডলীর চারপাশে একটু তাকিয়ে দেখুন! আপনি কি সেখানে এমন অল্পবয়সিদের দেখতে পান, যারা প্রয়োজনের সময়ে নিজেদের বিলিয়ে দিতে পারে, যেমনটা তীমথিয় দিয়েছিলেন? আপনার সাহায্য ও উৎসাহের মাধ্যমে তারা হয়তো অগ্রগামী, বেথেল পরিবারের সদস্য, মিশনারি অথবা ভ্রমণ অধ্যক্ষ হয়ে উঠতে পারে। তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
৯ মার্টিন নামে একজন ভাই ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বেথেল পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে সেবা করছেন। ৩০ বছর আগে একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষের সঙ্গে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় কাজ করার সময়, সেই অধ্যক্ষ তার প্রতি যে-আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, তিনি তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। সেই অধ্যক্ষ যে অল্প বয়সে বেথেলে সেবা করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে উদ্যমের সঙ্গে বলেছিলেন। তিনি মার্টিনকে একইভাবে যিহোবার সংগঠনে নিজেকে প্রয়োজনের সময়ে বিলিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টা বিবেচনা করতে উৎসাহিত করেছিলেন। মার্টিন মনে করেন যে, সেই স্মরণীয় কথাবার্তা পরবর্তী সময়ে তিনি যে-বাছাইগুলো করেছিলেন, সেগুলোর ভিত্তি ছিল। তাই, কে জানে, ঈশতান্ত্রিক লক্ষ্যগুলো সম্বন্ধে অল্পবয়সি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে আপনি হয়তো তাদের কোনো উপকার করতেও পারেন।
“বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বল”
১০. ইপাফ্রদীত কেমন বোধ করেছিলেন আর কেন?
১০ ইপাফ্রদীত প্রেরিত পৌলের সঙ্গে দেখা করার জন্য ফিলিপী থেকে রোমের উদ্দেশে এক দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর যাত্রা করেছিলেন, যেখানে পৌল তার বিশ্বাসের কারণে কারারুদ্ধ ছিলেন। এই ভ্রমণকারী ফিলিপীয়দের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছিলেন। তিনি শুধুমাত্র প্রেরিত পৌলের জন্য তাদের উপহারই নিয়ে যাননি কিন্তু সেইসঙ্গে ওই কঠিন সময়ে পৌলকে সহযোগিতা করার জন্য যথাসাধ্য করতে তার সঙ্গে সেখানে থাকার পরিকল্পনাও করেছিলেন। তবে, রোমে থাকার সময় ইপাফ্রদীত অসুস্থতায় “মৃতকল্প” হয়ে পড়েছিলেন। তার অভিযানে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মনে করে ইপাফ্রদীত ব্যাকুল বা বিষণ্ণ হয়ে পড়েছিলেন।—ফিলি. ২:২৫-২৭.
১১. (ক) মণ্ডলীর কেউ কেউ যদি বিষণ্ণতায় ভোগে, তাহলে কেন আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয়? (খ) পৌল ইপাফ্রদীতের প্রতি কী করতে সুপারিশ করেছিলেন?
১১ বিভিন্ন চাপের কারণে বর্তমানেও লোকেরা বিষণ্ণতায় ভোগে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র পরিসংখ্যান বলে যে, জনসংখ্যার প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনই তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে হয়তো বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। যিহোবার লোকেরা এটা থেকে মুক্ত নয়। পরিবারের ভরণপোষণ করার সমস্যা, অসুস্থতা, ব্যক্তিগত বিভিন্ন ব্যর্থতার কারণে নিরুৎসাহ অথবা অন্যান্য বিষয় হয়তো হতাশার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। ইপাফ্রদীতকে সাহায্য করার জন্য ফিলিপীয়রা কী করতে পারত? পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা তাঁহাকে প্রভুতে সম্পূর্ণ আনন্দ সহকারে গ্রহণ করিও, এবং এই প্রকার লোকদিগকে সমাদর করিও; কেননা খ্রীষ্টের কার্য্যের নিমিত্তে তিনি মৃত্যুমুখে উপস্থিত হইয়াছিলেন, ফলতঃ আমার সেবায় তোমাদের ত্রুটি পূরণার্থে প্রাণপণ করিয়াছিলেন।”—ফিলি. ২:২৯, ৩০.
১২. কোন বিষয়টা বিষণ্ণদের জন্য সান্ত্বতার এক উৎস হতে পারে?
১২ আমাদেরও সেই ভাইবোনদের উৎসাহিত করা উচিত, যারা নিরুৎসাহিত বা বিষণ্ণ। যিহোবার প্রতি তাদের সেবায় নিঃসন্দেহে কিছু ইতিবাচক বিষয় রয়েছে, যেগুলো সম্বন্ধে আমরা তাদেরকে বলতে পারি। খ্রিস্টান হওয়ার জন্য কিংবা পূর্ণসময়ের পরিচর্যা করার জন্য তারা হয়তো বড়ো বড়ো পরিবর্তন করেছে। আমরা সেই প্রচেষ্টাগুলোকে উপলব্ধি করি আর আমরা তাদের আশ্বাস দিতে পারি যে, যিহোবাও তা-ই করেন। যদিও বার্ধক্য ও অসুস্থতা কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে এক সময় তারা যা করতে পারত, তা করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়, তবুও তারা এযাবৎ যে-সেবা করে এসেছে, সেটার কারণে তারা আমাদের সম্মান লাভের যোগ্য। যা-ই হোক না কেন, তাঁর সমস্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তির প্রতি যিহোবার সুপারিশ হল: “ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা কর [“বিষণ্ণদের প্রতি সান্ত্বনার বাক্য বল,” NW], দুর্ব্বলদিগের সাহায্য কর, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হও।”—১ থিষল. ৫:১৪.
‘তাহাকে ক্ষমা কর ও সান্ত্বনা কর’
১৩, ১৪. (ক) করিন্থীয় মণ্ডলী কোন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল এবং কেন? (খ) সমাজচ্যুত করার ফল কী হয়েছিল?
১৩ প্রথম শতাব্দীতে করিন্থীয় মণ্ডলী এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল, যেখানে একজন ব্যক্তি অনুতাপহীনভাবে ব্যভিচার করে যাচ্ছিলেন। তার আচরণ মণ্ডলীর শুদ্ধতাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল আর এমনকী অবিশ্বাসীরাও এতে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। তাই, পৌল উপযুক্তভাবেই এই ব্যক্তিকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।—১ করি. ৫:১, ৭, ১১-১৩.
১৪ এই শাসনের ফল ভালো হয়েছিল। মণ্ডলীকে এক কলুষিত প্রভাব থেকে সুরক্ষা করা হয়েছিল আর সেই পাপীকে তার চেতনা ফিরে পেতে ও আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করা হয়েছিল। তার অনুতাপের উপযুক্ত কাজগুলোর ভিত্তিতে পৌল সেই মণ্ডলীর প্রতি তার দ্বিতীয় চিঠিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, এই ব্যক্তিকে মণ্ডলীতে পুনর্বহাল করা উচিত। কিন্তু, শুধুমাত্র এটাই চাওয়া হয়নি। পৌল আরও নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, মণ্ডলী “[সেই অনুতপ্ত পাপীকে] ক্ষমা করিলে ও সান্ত্বনা করিলে ভাল হয়, পাছে অতিরিক্ত মনোদুঃখে তাদৃশ ব্যক্তি কবলিত হয়।”—পড়ুন, ২ করিন্থীয় ২:৫-৮.
১৫. মণ্ডলীতে পুনর্বহাল করা হয়েছে এমন অনুতপ্ত অন্যায়কারীদেরকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
১৫ এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখি? কাউকে যখন সমাজচ্যুত করতে হয়, তখন তা আমাদের দুঃখ দেয়। তারা হয়তো ঈশ্বরের নামের ওপর অসম্মান নিয়ে এসেছে এবং মণ্ডলীর সুনামহানি করেছে। তারা হয়তো এমনকী ব্যক্তিগতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে পাপ করেছে। তা সত্ত্বেও, বিষয়টা পরীক্ষা করার জন্য নিযুক্ত প্রাচীনরা যখন যিহোবার নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, একজন অনুতপ্ত পাপীকে মণ্ডলীতে পুনর্বহাল করা উচিত, তখন তা ইঙ্গিত দেয় যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেছেন। (মথি ১৮:১৭-২০) আমাদেরও কি তাঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করা উচিত নয়? বস্তুতপক্ষে, কঠোর ও ক্ষমাহীন হওয়া যিহোবার বিরোধিতা করার সামিল হবে। ঈশ্বরের মণ্ডলীর শান্তি ও একতায় অবদান রাখার এবং যিহোবার অনুমোদন লাভ করার জন্য আমাদের কি সেই পাপীদের প্রতি ‘প্রেম স্থির করা’ উচিত নয়, যারা সত্যিই অনুতপ্ত হয়ে পুনর্বহাল হয়েছে?—মথি ৬:১৪, ১৫; লূক ১৫:৭.
‘তিনি আমার বড় উপকারী’
১৬. কেন পৌল মার্ক সম্বন্ধে হতাশ হয়েছিলেন?
১৬ শাস্ত্রীয় আরেকটা উদাহরণ দেখায় যে, আমাদের সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে নেতিবাচক অনুভূতি পোষণ করে রাখা উচিত নয়, যারা আমাদের হতাশ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, যোহন মার্ক প্রেরিত পৌলকে অত্যন্ত হতাশ করেছিলেন। কীভাবে? পৌল ও বার্ণবা যখন তাদের প্রথম মিশনারি যাত্রা শুরু করেছিল, তখন মার্ক তাদের সহযোগিতা করার জন্য তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাদের যাত্রার এক পর্যায়ে অনুল্লেখিত কোনো কারণে যোহন মার্ক তার সঙ্গীদের ছেড়ে বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তে পৌল এতটাই হতাশ হয়েছিলেন যে, দ্বিতীয় যাত্রার জন্য পরিকল্পনা করার সময়, তাদের সঙ্গে মার্ক আবারও সঙ্গী হবেন কি না, সেই বিষয়ে বার্ণবার সঙ্গে তিনি দ্বিমত পোষণ করেছিলেন। প্রথম যাত্রায় যা ঘটেছে সেটার পরিপ্রেক্ষিতে, পৌল চাননি যে মার্ক তাদের সঙ্গে ভ্রমণ করুক।—পড়ুন, প্রেরিত ১৩:১-৫, ১৩; ১৫:৩৭, ৩৮.
১৭, ১৮. আমরা কীভাবে জানি যে, পৌল ও মার্কের মধ্যে সমস্যাটা মীমাংসা হয়েছিল আর এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৭ স্পষ্টতই, পৌলের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় মার্ক অতিরিক্ত নিরুসাহিত হয়ে পড়েননি কারণ তিনি বার্ণবার সঙ্গে ভিন্ন একটা এলাকায় মিশনারি কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। (প্রেরিত ১৫:৩৯) তিনি যে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছিলেন, তা পৌল কয়েক বছর পর তার সম্বন্ধে যা লিখেছিলেন, তাতে প্রকাশ পায়। পৌল সেই সময়ে রোমে একজন কারাবন্দি ছিলেন এবং তিনি তীমথিয়কে চিঠি লিখে তার কাছে আসতে বলেছিলেন। সেই একই চিঠিতে পৌল বলেছিলেন: “তুমি মার্ককে সঙ্গে করিয়া আইস, কেননা তিনি পরিচর্য্যা বিষয়ে আমার বড় উপকারী।” (২ তীম. ৪:১১) হ্যাঁ, পৌলের দৃষ্টিতে, মার্ক উন্নতি করেছিলেন।
১৮ এই ঘটনা থেকেও শিক্ষা লাভ করা যায়। মার্ক একজন উত্তম মিশনারির গুণাবলি গড়ে তুলেছিলেন। পৌলের দ্বারা প্রথমে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তিনি বিঘ্ন পাননি। তিনি এবং পৌল দুজনেই আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন আর তাদের মধ্যে কোনো শত্রুতা ছিল না। অন্যদিকে, পৌল পরবর্তী সময়ে মার্ককে একজন মূল্যবান সহযোগী হিসেবে স্বীকার করেছিলেন। তাই, ভাইবোনেরা যখন বাধাগুলো কাটিয়ে ওঠে এবং সমস্যাগুলো দূর হয়ে যায়, তখন সঠিক কাজটা হল, আগের বিষয়গুলো ভুলে গিয়ে অন্যদেরকে আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য সাহায্য করে চলা। এভাবে ইতিবাচক হওয়া মণ্ডলীকে গেঁথে তোলে।
মণ্ডলী এবং আপনি
১৯. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সকল সদস্য পরস্পরকে কোন সাহায্য প্রদান করতে পারে?
১৯ এই ‘বিষম সময়ে’ মণ্ডলীর ভাইবোনদের কাছ থেকে আপনার আর আপনার কাছ থেকে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। (২ তীম. ৩:১) খ্রিস্টানরা ব্যক্তিগতভাবে হয়তো সবসময় জানে না যে, তারা যে-পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, সেটার সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য কোন পথ গ্রহণ করতে হবে কিন্তু যিহোবা তা জানেন। আর তিনি অন্যদের সঠিক পথ অনুসরণ করতে সাহায্য করার জন্য মণ্ডলীর বিভিন্ন সদস্যকে ব্যবহার করতে পারেন, যাদের মধ্যে আপনিও রয়েছেন। (যিশা. ৩০:২০, ২১; ৩২:১, ২) তাই, প্রেরিত পৌলের পরামর্শে মনোযোগ দিন! সবসময় “পরস্পরকে আশ্বাস” বা সান্ত্বনা ‘দিন, এবং এক জন অন্যকে গাঁথিয়া তুলুন।’—১ থিষল. ৫:১১.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কেন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অন্যদের গেঁথে তোলা প্রয়োজন?
• আপনি অন্যদেরকে কোন ধরনের বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারেন?
• কেন মণ্ডলীর অন্যদের কাছ থেকে আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন?
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
একজন সহখ্রিস্টান যখন কোনো কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেন, তখন আমরা সমর্থন করতে পারি
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]
বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে অল্পবয়সি অনেক ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে