যিহোবা—“শান্তির ঈশ্বর”
“শান্তির ঈশ্বর তোমাদের সকলের সঙ্গে থাকুন।”—রোমীয় ১৫:৩৩.
১, ২. আদিপুস্তক ৩২ ও ৩৩ অধ্যায়ে কোন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে আর এর ফলাফল কী হয়েছে?
জায়গাটা হল পনূয়েলের কাছাকাছি, যেটা যর্দন নদীর পূর্ব দিকে যব্বোক নদীর নিকটে অবস্থিত। এষৌ শুনতে পেয়েছেন যে, তার যমজ ভাই যাকোব দেশে ফিরে আসছেন। এমনকী যদিও এষৌ নিজের জ্যেষ্ঠাধিকার তার ভাইয়ের কাছে বিক্রি করার পর ২০ বছর পার হয়ে গিয়েছে, তবুও যাকোব ভয় পান যে, তার ভাই হয়তো এখনও তাকে হত্যা করতে চায়। ৪০০ জন লোক নিয়ে এষৌ তার ভাইয়ের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন, যার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল। তার সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ করা হতে পারে এইরকম মনে করে যাকোব একের পর এক ৫৫০টারও বেশি গৃহপালিত পশু উপহার হিসেবে এষৌর কাছে পাঠাতে থাকেন। পশুর প্রতিটা দলের সঙ্গে থাকা যাকোবের এক একজন দাস এষৌকে বলেন যে, এগুলো তার ভাইয়ের কাছ থেকে উপহার।
২ অবশেষে সেই চূড়ান্ত ক্ষণ আসে! সাহসপূর্বক এষৌর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় যাকোব প্রণিপাত করেন—শুধু এক বার নয় বরং সাত বার। যাকোব তার ভাইয়ের মন গলানোর জন্য ইতিমধ্যেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছেন, যেন এষৌর কাছ থেকে উদ্ধার লাভ করতে পারেন। যিহোবা কি তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন? হ্যাঁ। বাইবেল আমাদের বলে, “এষৌ তাঁহার সঙ্গে দেখা করিতে দৌড়িয়া আসিয়া তাঁহার গলা ধরিয়া আলিঙ্গন ও চুম্বন করিলেন।”—আদি. ৩২:১১-২০; ৩৩:১-৪.
৩. যাকোব ও এষৌর বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৩ যাকোব ও এষৌর বিবরণ দেখায় যে, যখন এমন কোনো সমস্যা দেখা দেয়, যা আমাদের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে আমরা যে-শান্তি উপভোগ করি, সেটাকে হুমকির মুখে ফেলে, তখন আমাদের জোর প্রচেষ্টা করা ও ব্যবহারিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যদিও যাকোব এষৌর সঙ্গে শান্তিস্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু এর কারণ এই ছিল না যে, যাকোব তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অন্যায় করেছেন এবং তিনি দোষস্বীকার করতে বাধ্য ছিলেন। বরং, এষৌই তার জন্মাধিকারকে তুচ্ছ করেছেন এবং সামান্য এক বাটি ডালের বিনিময়ে তা যাকোবের কাছে বিক্রি করেছেন। (আদি. ২৫:৩১-৩৪; ইব্রীয় ১২:১৬) কিন্তু, যাকোব যেভাবে এষৌর দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন, তা তুলে ধরে যে, আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে শান্তিরক্ষার জন্য আমাদেরও কতদূর পর্যন্ত ইচ্ছুক হওয়া উচিত। এটা এও দেখায় যে, সত্য ঈশ্বর শান্তিস্থাপনের জন্য করা আমাদের প্রার্থনাপূর্বক প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন। বাইবেলে অন্যান্য অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেগুলো আমাদেরকে শান্তিস্থাপনকারী হওয়ার জন্য শিক্ষা দেয়।
আমাদের অনুকরণযোগ্য এক সর্বোত্তম উদাহরণ
৪. মানবজাতিকে পাপ ও মৃত্যু থেকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর কী ব্যবস্থা করেছেন?
৪ শান্তিস্থাপন করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলেন যিহোবা—যিনি “শান্তির ঈশ্বর।” (রোমীয় ১৫:৩৩) আমরা যাতে তাঁর সঙ্গে এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হই, সেইজন্য যিহোবা কতদূর পর্যন্ত গিয়েছেন, তা একটু চিন্তা করে দেখুন। আদম ও হবার পাপী বংশধর হিসেবে আমরা “পাপের বেতন” লাভের যোগ্য। (রোমীয় ৬:২৩) তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর অসীম প্রেমের বশবর্তী হয়ে, তাঁর প্রিয় পুত্রকে এক সিদ্ধ মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করার জন্য স্বর্গ থেকে পাঠানোর মাধ্যমে আমাদের পরিত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন। আর তাঁর পুত্র স্বেচ্ছায় তাঁর বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের শত্রুদের দ্বারা হত হওয়ার জন্য সমর্পণ করেছিলেন। (যোহন ১০:১৭, ১৮) সত্য ঈশ্বর তাঁর প্রিয় পুত্রকে পুনরুত্থিত করেছিলেন, যিনি পরে তাঁর পাতিত রক্তের মূল্য পিতার কাছে উপস্থাপন করেছিলেন, যা অনুতপ্ত পাপীদের অনন্তমৃত্যু থেকে রক্ষা করার জন্য মুক্তির মূল্য হয়ে উঠেছিল।—পড়ুন, ইব্রীয় ৯:১৪, ২৪.
৫, ৬. যিশুর পাতিত রক্ত কীভাবে ঈশ্বর ও পাপী মানবজাতির মধ্যে বিচ্ছিন্ন সম্পর্ককে প্রভাবিত করে?
৫ ঈশ্বরের পুত্রের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ব্যবস্থা কীভাবে ঈশ্বর ও পাপী মানবজাতির মধ্যে বিচ্ছিন্ন সম্পর্ককে প্রভাবিত করে? যিশাইয় ৫৩:৫ পদ বলে, “আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল, এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল।” ঈশ্বরের শত্রু বলে গণ্য হওয়ার পরিবর্তে বাধ্য মানুষরা এখন তাঁর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক উপভোগ করতে পারে। “আমরা [যিশুর] রক্ত দ্বারা মুক্তি, অর্থাৎ অপরাধ সকলের মোচন পাইয়াছি।”—ইফি. ১:৭.
৬ বাইবেল বলে: “[ঈশ্বরের] এই হিতসঙ্কল্প হইল, যেন সমস্ত পূর্ণতা [খ্রিস্টেই] বাস করে।” এর কারণ হল, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতায় খ্রিস্ট হলেন মুখ্য ব্যক্তি। আর যিহোবার উদ্দেশ্য কী? সেটা হল যিশু খ্রিস্টের পাতিত “রক্ত দ্বারা সন্ধি করিয়া” বা শান্তিস্থাপন করে ‘সকলই সম্মিলিত করা।’ ঈশ্বর যে-‘সকল’ বিষয়কে তাঁর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে নিয়ে আসেন, সেগুলো হল “স্বর্গস্থিত” এবং “মর্ত্ত্যস্থিত” বিষয়। সেগুলো কী?—পড়ুন, কলসীয় ১:১৯, ২০.
৭. “স্বর্গস্থিত” ও “মর্ত্ত্যস্থিত” বিষয় কী, যাদেরকে ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কে নিয়ে আসা হয়েছে?
৭ মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থার কারণে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অর্থাৎ যারা ঈশ্বরের পুত্র হিসেবে ‘ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছে,’ তাদের “ঈশ্বরের উদ্দেশে সন্ধি লাভ [“শান্তি ভোগ,” পাদটীকা]” করা সম্ভবপর হয়েছে। (পড়ুন, রোমীয় ৫:১.) তাদেরকে “স্বর্গস্থিত” বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে কারণ তাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে এবং তারা “পৃথিবীর উপরে রাজত্ব করিবে” ও ঈশ্বরের যাজক হিসেবে সেবা করবে। (প্রকা. ৫:১০) অন্যদিকে, “মর্ত্ত্যস্থিত” বিষয় বলতে অনুতপ্ত মানুষদের বোঝায়, যারা শেষপর্যন্ত পৃথিবীতে অনন্তজীবন লাভ করবে।—গীত. ৩৭:২৯.
৮. মানবজাতি যেন তাঁর সঙ্গে শান্তি উপভোগ করতে পারে, তা সম্ভবপর করার জন্য যিহোবা কতদূর পর্যন্ত গিয়েছেন, সেটা নিয়ে চিন্তার করার ফলে আপনি কীভাবে প্রভাবিত হন?
৮ যিহোবার ব্যবস্থার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পৌল ইফিষের অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের উদ্দেশে এই কথা লিখেছিলেন: “ঈশ্বর, দয়াধনে ধনবান্ বলিয়া . . . এমন কি, অপরাধে মৃত আমাদিগকে, খ্রীষ্টের সহিত জীবিত করিলেন—অনুগ্রহেই তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ।” (ইফি. ২:৪, ৫) আমাদের স্বর্গীয় কিংবা পার্থিব, যে-আশাই থাকুক না কেন, আমরা ঈশ্বরের কাছে তাঁর দয়া বা করুণা এবং অনুগ্রহ বা অযাচিত দয়ার কারণে ঋণী। আমাদের হৃদয় কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়, যখন আমরা এই বিষয়টা বিবেচনা করি যে, মানবজাতি যেন তাঁর সঙ্গে শান্তি উপভোগ করতে পারে, তা সম্ভবপর করার জন্য যিহোবা কতদূর পর্যন্ত গিয়েছেন। আমরা যখন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, যেগুলো আমাদের মণ্ডলীর শান্তিপূর্ণ একতাকে হুমকির মুখে ফেলে, তখন ঈশ্বরের উদাহরণ নিয়ে উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করা কি আমাদেরকে শান্তিস্থাপনকারী হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে না?
অব্রাহাম ও ইস্হাকের আচরণ থেকে শেখা
৯, ১০. যখন তাদের পশুপালকদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল, তখন অব্রাহাম লোটের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে নিজেকে কীভাবে একজন শান্তিস্থাপনকারী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন?
৯ কুলপতি অব্রাহাম সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “‘অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল,’ আর তিনি ‘ঈশ্বরের বন্ধু’ এই নাম পাইলেন।” (যাকোব ২:২৩) অব্রাহামের শান্তিপ্রিয় আচরণের মধ্যে তার বিশ্বাস স্পষ্ট প্রতীয়মান ছিল। উদাহরণস্বরূপ, যখন অব্রাহামের পশুপাল বৃদ্ধি পেয়েছিল, তখন অব্রাহামের ও তার ভাইপো লোটের পশুপালকদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। (আদি. ১২:৫; ১৩:৭) সর্বোত্তম সমাধানটা ছিল অব্রাহাম ও লোট যেন পৃথক হয়ে যায়। অব্রাহাম কীভাবে এই নাজুক পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করবেন? তার ভাইপোর কী করা উচিত, তা বলার জন্য নিজের বয়স ও ঈশ্বরের সামনে তার অবস্থানকে ব্যবহার করার পরিবর্তে, অব্রাহাম নিজেকে প্রকৃত শান্তিস্থাপনকারী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন।
১০ “বিনয় করি, তোমাতে ও আমাতে এবং তোমার পশুপালকগণে ও আমার পশুপালকগণে বিবাদ না হউক,” অব্রাহাম তার ভাইপোকে বলেছিলেন, “কেননা আমরা পরস্পর জ্ঞাতি।” কুলপতি আরও বলেছিলেন: “তোমার সম্মুখে কি সমস্ত দেশ নাই? বিনয় করি, আমা হইতে পৃথক্ হও; হয়, তুমি বামে যাও, আমি দক্ষিণে যাই; নয়, তুমি দক্ষিণে যাও, আমি বামে যাই।” যদিও লোট সবচেয়ে উর্বর ভূমি বেছে নিয়েছিলেন, কিন্তু অব্রাহাম তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ পুষে রাখেননি। (আদি. ১৩:৮-১১) পরে লোট যখন আক্রমণকারী শত্রুদের দ্বারা বন্দি হয়েছিলেন, তখন অব্রাহাম তার ভাইপোকে উদ্ধার করার জন্য ইতস্তত করেননি।—আদি. ১৪:১৪-১৬.
১১. অব্রাহাম কীভাবে তার পলেষ্টীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তির অনুধাবন করেছিলেন?
১১ এ ছাড়া, অব্রাহাম কীভাবে কনান দেশে তার পলেষ্টীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তির অনুধাবন করেছিলেন, সেই বিষয়ে একটু চিন্তা করুন। পলেষ্টীয়রা বের-শেবায় অব্রাহামের দাসদের খনন করা একটা কূপ “সবলে অধিকার করিয়াছিল।” যে-ব্যক্তি চার জন রাজাকে পরাস্ত করে নিজের ভাইপোকে উদ্ধার করেছিলেন, তিনি এই কাজের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারতেন? লড়াই করার ও তার কূপ পুনরধিকার করার পরিবর্তে অব্রাহাম বরং এই ব্যাপারে নীরব থাকার ও কোনো কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, পলেষ্টীয় রাজা শান্তিচুক্তি করার জন্য অব্রাহামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। পলেষ্টীয় রাজা তার বংশধরদের প্রতি দয়া করার ব্যাপারে অব্রাহামকে দিব্য করানোর পরই, অব্রাহাম তার দখল হয়ে যাওয়া কূপের বিষয়টা আলোচনায় এনেছিলেন। বিষয়টা শুনে রাজা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন আর এরপর অব্রাহামকে সেই কূপ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আর অব্রাহাম সেই দেশে একজন প্রবাসী হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করেছিলেন।—আদি. ২১:২২-৩১, ৩৪.
১২, ১৩. (ক) ইস্হাক কীভাবে তার বাবার উদাহরণ অনুসরণ করেছিলেন? (খ) যিহোবা ইস্হাকের শান্তিপ্রিয় আচরণকে কীভাবে আশীর্বাদ করেছিলেন?
১২ অব্রাহামের ছেলে ইস্হাক তার বাবার শান্তিপ্রিয় আচরণ অনুসরণ করেছিলেন। পলেষ্টীয়দের সঙ্গে ইস্হাক যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তার মধ্য দিয়ে এই বিষয়টা স্পষ্ট হয়। দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ায় ইস্হাক তার পরিবার নিয়ে দক্ষিণ দেশের শুষ্ক অঞ্চল বের-লহয়্-রোয়ী থেকে উত্তরে আরও উর্বর এলাকা পলেষ্টিয়ার গরারে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে যিহোবা ইস্হাককে প্রচুর শস্য দিয়েছিলেন এবং তার পশুপালের বৃদ্ধি করেছিলেন। এর ফলে পলেষ্টীয়রা তাকে ঈর্ষা করতে শুরু করেছিল। ইস্হাক যাতে তার বাবার মতো সমৃদ্ধি লাভ করতে না পারে, সেইজন্য পলেষ্টীয়রা সেই অঞ্চলের অব্রাহামের দাসদের খনন করা কূপ ভরাট করে ফেলেছিল। অবশেষে, পলেষ্টীয় রাজা ইস্হাককে ‘তাহাদের নিকট হইতে প্রস্থান’ করতে বলেছিলেন। শান্তিপরায়ণ ব্যক্তি ইস্হাক সেই নির্দেশের বাধ্য হয়েছিলেন।—আদি. ২৪:৬২; ২৬:১, ১২-১৭.
১৩ ইস্হাক আরও দূরে তাঁবুতে বাস করতে শুরু করেছিলেন আর এরপর তার মেষপালকরা আরেকটা কূপ খনন করেছিল। তখন পলেষ্টীয় মেষপালকরা সেই জল তাদের বলে দাবি করেছিল। তার বাবা অব্রাহামের মতো ইস্হাকও সামান্য একটা কূপ নিয়ে লড়াই করেননি। এর পরিবর্তে, ইস্হাক তার লোকেদের দিয়ে আরেকটা কূপ খনন করেছিলেন। পলেষ্টীয়রা সেটাও তাদের বলে দাবি করেছিল। শান্তিরক্ষা করার জন্য ইস্হাক তার বিশাল দল নিয়ে সেখান থেকে চলে গিয়ে আরেকটা জায়গায় তাঁবুতে বাস করতে শুরু করেছিলেন। সেখানে তার দাসেরা একটা কূপ খনন করেছিল, যেটাকে ইস্হাক রহোবোৎ নাম দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, তিনি আরও উর্বর অঞ্চল বের্-শেবাতে চলে গিয়েছিলেন, যেখানে যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন: “ভয় করিও না, কেননা আমি আপন দাস অব্রাহামের অনুরোধে তোমার সহবর্ত্তী, আমি তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব ও তোমার বংশ বৃদ্ধি করিব।”—আদি. ২৬:১৭-২৫.
১৪. যখন পলেষ্টীয় রাজা তার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন ইস্হাক কীভাবে নিজেকে একজন শান্তিস্থাপনকারী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন?
১৪ ইস্হাকের দাসেরা যে-সমস্ত কূপ খনন করেছিল, সেগুলো ব্যবহার করার অধিকারের জন্য লড়াই করার ক্ষমতা নিশ্চিতভাবেই ইস্হাকের ছিল। এমনকী পলেষ্টীয় রাজা ও তার কর্মচারীরাও বের্-শেবায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিল এবং এই বলে তার সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে চেষ্টা করেছিল: “আমরা স্পষ্টই দেখিলাম, সদাপ্রভু আপনার সহবর্ত্তী।” কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, শান্তিরক্ষার জন্য ইস্হাক আরও এক বার লড়াই না করে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। এবারও, ইস্হাক নিজেকে একজন শান্তিস্থাপনকারী হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক বিবরণ বলে: “ইস্হাক [তার অতিথিদের] নিমিত্তে ভোজ প্রস্তুত করিলে তাঁহারা ভোজন পান করিলেন। পরে তাঁহারা প্রত্যূষে উঠিয়া পরস্পর দিব্য করিলেন; তখন ইস্হাক তাঁহাদিগকে বিদায় করিলে তাঁহারা শান্তিতে . . . প্রস্থান করিলেন।”—আদি. ২৬:২৬-৩১.
যাকোবের সবচেয়ে প্রিয় পুত্রের কাছ থেকে শেখা
১৫. কেন যোষেফের ভাইয়েরা তার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলতে পারত না?
১৫ ইস্হাকের ছেলে যাকোব একজন শান্তিপ্রবণ ব্যক্তি ছিলেন। (আদি. ২৫:২৭) ওপরে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, যাকোব তার ভাই এষৌর সঙ্গে শান্তিস্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। নিঃসন্দেহে, যাকোব তার বাবা ইস্হাকের শান্তিপ্রবণ মনোভাবের উদাহরণ থেকে উপকৃত হয়েছিলেন। যাকোবের ছেলেদের বিষয়ে কী বলা যায়? যাকোব তার ১২ জন ছেলের মধ্যে যোষেফকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। যোষেফ বাধ্য, অন্যদের প্রতি সম্মান দেখাতে ইচ্ছুক একজন ছেলে ছিলেন আর তিনি তার বাবার আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা করতেন। (আদি. ৩৭:২, ১৪) কিন্তু, যোষেফের দাদারা তার প্রতি এতটাই ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছিল যে, তারা তার সঙ্গে প্রণয়ভাবে বা শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলতে পারত না। তারা নির্দয়ভাবে যোষেফকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল এবং তাদের বাবাকে মিথ্যা বলে তাকে এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে, কোনো হিংস্র পশু যোষেফকে হত্যা করেছে।—আদি. ৩৭:৪, ২৮, ৩১-৩৩.
১৬, ১৭. কীভাবে যোষেফ তার সহোদরদের কাছে নিজেকে একজন শান্তিপ্রিয় ভাই হিসেবে প্রমাণ করেছিলেন?
১৬ কিন্তু, যিহোবা যোষেফের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে, যোষেফ মিশরের প্রধানমন্ত্রী—ফরৌণের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ব্যক্তি—হয়েছিলেন। একটা চরম দুর্ভিক্ষের কারণে যখন যোষেফের ভাইয়েরা মিশরে এসেছিল, তখন তারা মিশরীয় কর্মকর্তাদের পোশাকে সজ্জিত যোষেফকে এমনকী চিনতেও পারেনি। (আদি. ৪২:৫-৭) তার প্রতি এবং তাদের বাবার প্রতি তার ভাইয়েরা যে-নির্দয়তা দেখিয়েছিল, সেটার প্রতিশোধ নেওয়ার কী এক মোক্ষম সুযোগই না যোষেফ পেয়েছিলেন! কিন্তু, প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে যোষেফ বরং তাদের সঙ্গে শান্তিস্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। যখন এটা স্পষ্ট হয়েছিল যে, তার ভাইয়েরা অনুতপ্ত হয়েছে, তখন তিনি এই বলে তাদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন: “তোমরা আমাকে এই স্থানে বিক্রয় করিয়াছ বলিয়া এখন দুঃখিত কি বিরক্ত হইও না; কেননা প্রাণ রক্ষা করিবার জন্যই ঈশ্বর তোমাদের অগ্রে আমাকে পাঠাইয়াছেন।” এরপর, যোষেফ অন্য সকল ভাইকেও চুম্বন করেছিলেন ও তাদের গলা ধরে রোদন করেছিলেন।—আদি. ৪৫:১, ৫, ১৫.
১৭ তাদের বাবা যাকোবের মৃত্যুর পর, যোষেফের ভাইয়েরা মনে করেছিল যে, যোষেফ হয়তো তাদের ওপর প্রতিশোধ নেবেন। তারা যখন তাদের ভয়ের বিষয়ে যোষেফের কাছে প্রকাশ করেছিল, তখন যোষেফ ‘রোদন করিয়াছিলেন’ ও এই উত্তর দিয়েছিলেন: “ভীত হইও না, আমিই তোমাদিগকে ও তোমাদের বালক বালিকাগণকে প্রতিপালন করিব।” শান্তিপ্রিয় যোষেফ “তাঁহাদিগকে সান্ত্বনা করিলেন, ও চিত্ততোষক কথা কহিলেন।”—আদি. ৫০:১৫-২১.
“আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল”
১৮, ১৯. (ক) এই প্রবন্ধে আলোচিত শান্তিস্থাপনকারীদের উদাহরণ থেকে আপনি কীভাবে উপকৃত হয়েছেন? (খ) পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কোন বিষয়ে আলোচনা করব?
১৮ “পূর্ব্বকালে যাহা যাহা লিখিত হইয়াছিল, সে সকল আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল,” পৌল লিখেছিলেন, “যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) শুধুমাত্র যিহোবার সর্বোত্তম উদাহরণই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব ও যোষেফ সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় বিবরণ নিয়ে বিবেচনা করার ফলে আমরা কীভাবে উপকৃত হয়েছি?
১৯ যিহোবা পাপী মানবজাতির সঙ্গে তাঁর বিচ্ছিন্ন সম্পর্ককে জোড়া দেওয়ার জন্য যা করেছেন, সেটা নিয়ে উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করা কি আমাদেরকে অন্যদের সঙ্গে শান্তিস্থাপন করার জন্য যথাসাধ্য করতে অনুপ্রাণিত করে না? অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব ও যোষেফের উদাহরণ দেখায় যে, বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ওপর উত্তম প্রভাব ফেলতে পারে। অধিকন্তু, এই উদাহরণগুলো এও দেখায় যে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় আশীর্বাদ করেন, যারা শান্তিস্থাপন করার চেষ্টা করে। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, পৌল যিহোবাকে “শান্তির ঈশ্বর” বলে উল্লেখ করেছিলেন! (পড়ুন, রোমীয় ১৫:৩৩; ১৬:২০.) পরবর্তী প্রবন্ধে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে যে, কেন পৌল শান্তির অনুধাবন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছিলেন এবং কীভাবে আমরা শান্তিস্থাপনকারী হতে পারি।
আপনি কী শিখেছেন?
• এষৌর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় যাকোব কীভাবে শান্তির চেষ্টা করেছিলেন?
• মানবজাতিকে তাঁর সঙ্গে শান্তিস্থাপন করতে সক্ষম করার জন্য যিহোবা যা করেছেন, সেটার দ্বারা আপনি কীভাবে প্রভাবিত হয়েছেন?
• শান্তিস্থাপনকারী হিসেবে অব্রাহাম, ইস্হাক, যাকোব ও যোষেফের উদাহরণ থেকে আপনি কী শিখেছেন?
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
এষৌর সঙ্গে শান্তিস্থাপন করতে যাওয়ায় সময় যাকোব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন?