কেন ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হবেন?
“তুমিই আমার ঈশ্বর; তোমার আত্মা মঙ্গলময়, আমাকে . . . চালাও।”—গীত. ১৪৩:১০.
১. কীভাবে এক অদৃশ্য শক্তি একজন ব্যক্তিকে পরিচালনা দিতে পারে, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
একটা কম্পাসের উদাহরণ বিবেচনা করুন, যেটা হচ্ছে এক সাধারণ যন্ত্র এবং যেটার শুধু একটা ঘূর্ণায়মান অংশ—উত্তর দিককে নির্দেশ করে এমন একটা চুম্বকীয় কাঁটা—রয়েছে। চৌম্বকত্ব হিসেবে পরিচিত এক অদৃশ্য শক্তির কারণে কম্পাসের কাঁটা পৃথিবীর দুই প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা যে-চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে, সেটার দিকে মুখ করে থাকে। শত শত বছর ধরে, আবিষ্কারক এবং ভ্রমণকারীরা স্থল ও সমুদ্রপথে পরিচালনা লাভের জন্য কম্পাস ব্যবহার করে আসছে।
২, ৩. (ক) কোটি কোটি বছর আগে যিহোবা কোন পরাক্রমী শক্তি ব্যবহার করেছিলেন? (খ) কেন আমাদের এইরকম প্রত্যাশা করা উচিত যে, ঈশ্বরের অদৃশ্য সক্রিয় শক্তি বর্তমানে আমাদের জীবনে পরিচালনা দেবে?
২ এমন আরেকটা অদৃশ্য শক্তি রয়েছে, যেটা আমাদের পরিচালনার জন্য এমনকী আরও বেশি অপরিহার্য। সেটা কী? এমন একটা শক্তি, যেটা সম্বন্ধে বাইবেলের শুরুর পদগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে। কোটি কোটি বছর আগে যিহোবা যা-কিছু সম্পাদন করেছিলেন, সেই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে আদিপুস্তক জানায়: “আদিতে ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি করিলেন।” তা করার সময় তিনি এক পরাক্রমী শক্তি প্রেরণ করেছিলেন কারণ সৃষ্টির বিবরণ আরও বলে: “ঈশ্বরের আত্মা . . . অবস্থিতি [“চলাফেরা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করিতেছিলেন।” (আদি. ১:১, ২) কী কার্যরত ছিল? পবিত্র আত্মা—সৃষ্টির পিছনে অবস্থিত এক প্রবল শক্তি। যিহোবা তাঁর সমস্ত কাজে এই পবিত্র আত্মা ব্যবহার করেছেন বলে আমরা অস্তিত্বে এসেছি আর তাই আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।—ইয়োব ৩৩:৪; গীত. ১০৪:৩০.
৩ সজীব এবং শ্বাসবিশিষ্ট মানুষ হিসেবে আমাদের কি আশা করা উচিত যে, ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি আমাদের জীবনের ওপর আরও অন্য কোনোভাবে প্রভাব ফেলবে? ঈশ্বরের নিজ পুত্র জানতেন যে, আমাদের তা আশা করা উচিত কারণ যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “আত্মা . . . তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাইবেন” বা পরিচালনা দেবেন। (যোহন ১৬:১৩) কীভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, এই আত্মা কী আর কেন আমাদের এর দ্বারা পরিচালিত হতে চাওয়া উচিত?
পবিত্র আত্মার বৈশিষ্ট্য
৪, ৫. (ক) ত্রিত্ববাদীরা পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে ভুলভাবে কী চিন্তা করে থাকে? (খ) পবিত্র আত্মার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
৪ হতে পারে যে, পরিচর্যায় গিয়ে আপনি কথা বলেন এমন কিছু ব্যক্তির পবিত্র আত্মা সম্বন্ধে এক অশাস্ত্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ত্রিত্ববাদীরা ভুলভাবে মনে করে থাকে যে, এটা এক আত্মিক ব্যক্তি, যা পিতা ঈশ্বরের সমরূপ। (১ করি. ৮:৬) কিন্তু, ত্রিত্বের মতবাদ যে অশাস্ত্রীয়, তা সহজেই দেখানো যেতে পারে।
৫ পবিত্র আত্মার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য কী? পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ—প্রাসঙ্গিক বিষয়সহ (ইংরেজি) বাইবেলের আদিপুস্তক ১:২ পদের পাদটীকা বলে: “‘আত্মা’ হিসেবে অনুবাদিত হওয়া ছাড়াও, রুয়াখ্ [ইব্রীয়] শব্দটিকে ‘বায়ু’ হিসেবেও অনুবাদ করা হয়েছে আর আরেক কথায় সেটা এক অদৃশ্য সক্রিয় শক্তিকে নির্দেশ করে।” ঠিক যেমন বায়ু অদৃশ্য কিন্তু শক্তি প্রয়োগ করে, তেমনই অবস্তু ও নৈর্ব্যক্তিক পবিত্র আত্মা অদৃশ্য কিন্তু এর প্রভাব স্পষ্ট প্রতীয়মান। এই আত্মা হল ঈশ্বরের কাছ থেকে উদ্ভূত কর্মশক্তি, যা তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য লোকেদের বা বিভিন্ন বস্তুর ওপর বর্ষণ করা এবং প্রয়োগ করা হয়। এটা বিশ্বাস করা কি কঠিন যে, এইরকম এক অপূর্ব শক্তি পবিত্র উৎস সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছ থেকে উদ্ভূত হয়? একেবারেই না!—পড়ুন, যিশাইয় ৪০:১২, ১৩.
৬. যিহোবার কাছে দায়ূদ কোন উল্লেখযোগ্য অনুরোধ করেছিলেন?
৬ আমাদেরকে জীবনে পরিচালনা দেওয়ার জন্য যিহোবা কি ক্রমাগত তাঁর আত্মা ব্যবহার করতে পারেন? তিনি গীতরচক দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব।” (গীত. ৩২:৮) দায়ূদ কি তা চেয়েছিলেন? হ্যাঁ, কারণ তিনি যিহোবার কাছে সনির্বন্ধভাবে এই অনুরোধ করেছিলেন: “তোমার ইষ্ট সাধন করিতে আমাকে শিক্ষা দেও; কেননা তুমিই আমার ঈশ্বর; তোমার আত্মা মঙ্গলময়, আমাকে . . . চালাও।” (গীত. ১৪৩:১০) ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার জন্য আমাদেরও একই ধরনের আকাঙ্ক্ষা এবং ইচ্ছুক মনোভাব থাকা উচিত। কেন? চারটে কারণ বিবেচনা করুন।
নিজেদেরকে পরিচালনা দেওয়ার জন্য আমরা যোগ্য নই
৭, ৮. (ক) কেন আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে স্বাধীন হয়ে নিজেদেরকে পরিচালনা দিতে সমর্থ নই? (খ) কেন আমরা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থায় নিজেদের পথ নিজেই খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করার মতো দুঃসাহস দেখাই না, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
৭ প্রথমত, আমাদের এই কারণে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হতে চাওয়া উচিত যে, আমরা নিজেদেরকে পরিচালনা দিতে সমর্থ নই। “পরিচালনা দেওয়ার” অর্থ হল, “এমন একটা পথের দিকে নির্দেশ করা অথবা এমন একটা পথ দেখানো, যে-পথ অনুসরণ করতে হবে।” কিন্তু, যিহোবা আমাদেরকে তা করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেননি, বিশেষভাবে আমাদের এই অসিদ্ধ অবস্থায়। তাঁর ভাববাদী যিরমিয় লিখেছিলেন: “প্রভু, আমি জানি, মানুষের গতিপথ তার বশে নয়, যে হেঁটে চলে, নিজের পদক্ষেপ চালিত করাও তার বশে নয়।” (যির. [যেরে.] ১০:২৩, জুবিলী বাইবেল) কেন? যখন নিজেদেরকে নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টা আসে, তখন কেন আমরা দুর্বল, সেই সম্বন্ধে যিরমিয় ঈশ্বরের ব্যাখ্যা শুনেছিলেন। আমাদের ভিতরের ব্যক্তিত্ব কেমন, সেই সম্বন্ধে বলতে গিয়ে যিহোবা বলেছিলেন: “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?”—যির. ১৭:৯; মথি ১৫:১৯.
৮ একজন অনভিজ্ঞ ব্যক্তির জন্য এক দক্ষ নির্দেশক ছাড়াই একা একা যাত্রা শুরু করাটা কি একটা কম্পাস ছাড়া এক অজানা বনের গভীরে ভ্রমণ করার মতোই বোকামির কাজ হবে না? বনের মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কীভাবে টিকে থাকতে হয়, তা না জানায় এবং তার গন্তব্যপথে নিরাপদে পৌঁছানোর পথ খোঁজার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ না থাকায়, তিনি তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন। তাই, একইভাবে যে-ব্যক্তি মনে করেন যে, ঈশ্বরকে সঠিক পথ দেখানোর সুযোগ না দিয়েই তিনি এই দুষ্ট জগতে তার পথে নির্দেশনা দিতে পারবেন, তিনি তার জীবনকে চরম বিপদের মুখে রাখছেন। এই বিধিব্যবস্থায় সফলভাবে চলার একমাত্র যে-সুযোগ আমাদের রয়েছে, তা হল যিহোবার কাছে দায়ূদের মতো একই প্রার্থনাপূর্ণ অনুরোধ করা: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও।” (গীত. ২৫:৪; ২৩:৩) কীভাবে এইরকম পরিচালনা লাভ করা সম্ভব?
৯. সতেরো পৃষ্ঠার ছবি অনুযায়ী, কীভাবে ঈশ্বরের আত্মা আমাদের জন্য এক নির্ভরযোগ্য পরিচালক হিসেবে কাজ করতে পারে?
৯ আমরা যদি নম্র হই এবং যিহোবার ওপর নির্ভর করার জন্য ইচ্ছুক হই, তাহলে তিনি আমাদের পাদবিক্ষেপের জন্য এক নির্ভরযোগ্য পরিচালক হিসেবে পবিত্র আত্মা প্রদান করবেন। কীভাবে এই সক্রিয় শক্তি আমাদেরকে সাহায্য করবে? যিশু তাঁর শিষ্যদের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন: “সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁহাকে পিতা আমার নামে পাঠাইয়া দিবেন, তিনি সকল বিষয়ে তোমাদিগকে শিক্ষা দিবেন, এবং আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা বলিয়াছি, সে সকল স্মরণ করাইয়া দিবেন।” (যোহন ১৪:২৬) আমরা যখন নিয়মিতভাবে এবং প্রার্থনা সহকারে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি, যেটির মধ্যে খ্রিস্টের সমস্ত বাক্যও রয়েছে, তখন পবিত্র আত্মা যিহোবার গভীর প্রজ্ঞার প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে বৃদ্ধি করবে, যেন আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর ইচ্ছা পালন করতে পারি। (১ করি. ২:১০) অধিকন্তু, জীবনের পথে যদি কোনো অপ্রত্যাশিত মোড় আসে, তাহলে সেই আত্মা আমাদেরকে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেবে। এটা আমাদেরকে ইতিমধ্যেই আমরা শিখেছি এমন বাইবেলের নীতিগুলো স্মরণ করিয়ে দেবে এবং আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপে নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেগুলো কীভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা বুঝতে সাহায্য করবে।
যিশু ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন
১০, ১১. পবিত্র আত্মার বিষয়ে ঈশ্বরের একজাত পুত্রের কোন প্রত্যাশা ছিল আর তাঁর কোন অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
১০ দ্বিতীয় যে-কারণে আমাদের পবিত্র আত্মা দ্বারা পরিচালিত হতে চাওয়া উচিত, সেটা হল ঈশ্বর তাঁর নিজ পুত্রকে এর দ্বারা পরিচালনা দিয়েছিলেন। পৃথিবীতে আসার আগে, ঈশ্বরের একজাত পুত্র এই ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে জানতেন: “সদাপ্রভুর আত্মা—প্রজ্ঞার ও বিবেচনার আত্মা, মন্ত্রণার ও পরাক্রমের আত্মা, জ্ঞানের ও সদাপ্রভু-ভয়ের আত্মা—তাঁহাতে অধিষ্ঠান করিবেন; আর তিনি সদাপ্রভু-ভয়ে আমোদিত হইবেন।” (যিশা. ১১:২) একটু কল্পনা করে দেখুন যে, পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু যে-পরিবেশের মধ্যে ছিলেন, সেখানে বাস করার সময় ঈশ্বরের আত্মার সাহায্য লাভ করার ব্যাপারে তিনি কতই না আকাঙ্ক্ষী ছিলেন!
১১ যিহোবার বাক্য সত্য হয়েছিল। যিশু বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর পরই যা ঘটেছিল, সেই সম্বন্ধে সুসমাচারের বিবরণ বলে: “যীশু পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হইয়া যর্দ্দন হইতে ফিরিয়া আসিলেন, এবং চল্লিশ দিন পর্য্যন্ত সেই আত্মার আবেশে প্রান্তর মধ্যে চালিত হইলেন।” (লূক ৪:১) যিশু যখন সেখানে উপবাস, প্রার্থনা এবং ধ্যান করছিলেন, তখন যিহোবা হয়তো তাঁর পুত্রকে সামনে তাঁর জন্য কী রয়েছে, সেই সম্বন্ধে নির্দেশনা এবং জ্ঞানালোক প্রদান করেছিলেন। ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি যিশুর মনে এবং হৃদয়ে কার্যরত ছিল, তাঁর চিন্তাভাবনা এবং সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পরিচালনা দিচ্ছিল। এই কারণে, যিশু জানতেন যে, প্রতিটা পরিস্থিতিতে কী করতে হবে আর তিনি ঠিক তাই করেছিলেন, যা তাঁর পিতা চেয়েছিলেন।
১২. ঈশ্বরের আত্মা যেন আমাদেরকে পরিচালনা দেয়, সেই সম্বন্ধে যাচ্ঞা করা কেন অপরিহার্য?
১২ স্বয়ং নিজের জীবনে ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবের মূল্য সম্বন্ধে জানতেন বলে যিশু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে পবিত্র আত্মার জন্য যাচ্ঞা করার এবং সেটার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার গুরুত্ব গেঁথে দিয়েছিলেন। (পড়ুন, লূক ১১:৯-১৩.) কেন তা আমাদের জন্য এতটা অপরিহার্য? কারণ এটা আমাদের চিন্তাভাবনাকে রূপান্তর করতে পারে, যাতে তা খ্রিস্টের মনের সমরূপ হয়। (রোমীয় ১২:২; ১ করি. ২:১৬) ঈশ্বরের আত্মাকে আমাদের জীবনে পরিচালনা দেওয়ার সুযোগ দিয়ে আমরা খ্রিস্টের মতো চিন্তা করতে এবং তাঁর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি।—১ পিতর ২:২১.
জগতের আত্মা আমাদেরকে বিপথে পরিচালিত করবে
১৩. জগতের আত্মা কী এবং এটা কী উৎপন্ন করে?
১৩ তৃতীয় যে-কারণে আমরা চাই যেন ঈশ্বরের আত্মা আমাদেরকে পরিচালনা দিক, সেটা হল এটা ছাড়া আমরা সেই অপবিত্র আত্মার দ্বারা বিপথে পরিচালিত হতে পারি, যা বর্তমানে অধিকাংশ লোকের জীবনে কার্যরত। জগতের এক নিজস্ব জোরালো, প্ররোচনাকারী শক্তি রয়েছে, যে-শক্তি এমন এক পথ তৈরি করে, যেটা পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে যা উৎপন্ন করতে পারে, সেটার একেবারে বিপরীত। লোকেদের মধ্যে খ্রিস্টের মন গড়ে তোলার পরিবর্তে, জগতের আত্মা তাদের চিন্তাভাবনা এবং কাজগুলোকে এমন করে তোলে, যেগুলো জগতের শাসক শয়তানের সমরূপ। (পড়ুন, ইফিষীয় ২:১-৩; তীত ৩:৩.) একজন ব্যক্তি যখন জগতের আত্মার কাছে নতিস্বীকার করেন এবং মাংসের কাজগুলো করতে শুরু করেন, তখন তা ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে এবং তাকে ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকারী হতে বাধা দেয়।—গালা. ৫:১৯-২১.
১৪, ১৫. কীভাবে আমরা জগতের আত্মাকে প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সফল হতে পারি?
১৪ যিহোবা আমাদেরকে জগতের আত্মার প্রতিরোধ করার জন্য সজ্জিত করেছেন। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “তোমরা প্রভুতে ও তাঁহার শক্তির পরাক্রমে বলবান্ হও . . . যেন সেই কুদিনে প্রতিরোধ করিতে . . . পার।” (ইফি. ৬:১০, ১৩) তাঁর আত্মার মাধ্যমে যিহোবা আমাদেরকে শক্তিশালী করেন, যেন আমরা আমাদেরকে বিপথে পরিচালিত করার বিষয়ে শয়তানের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করতে পারি। (প্রকা. ১২:৯) জগতের আত্মা অনেক শক্তিশালী আর আমরা সেটাকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলতে পারি না। কিন্তু, তাই বলে আমরা যেন সেটার দ্বারা কলুষিত হয়ে না পড়ি। পবিত্র আত্মা আরও বেশি শক্তিশালী এবং এটা আমাদের সাহায্য করবে!
১৫ প্রথম শতাব্দীতে যারা খ্রিস্টধর্ম পরিত্যাগ করেছিল, তাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “তাহারা সোজা পথ ত্যাগ করিয়া বিপথগামী হইয়াছে।” (২ পিতর ২:১৫) আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, আমরা “জগতের আত্মাকে পাই নাই, বরং ঈশ্বর হইতে নির্গত আত্মাকে পাইয়াছি”! (১ করি. ২:১২) এর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার এবং আমাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সঠিক পথে রাখার জন্য যিহোবা যে-ব্যবস্থাগুলো জুগিয়েছেন, সেগুলোর সদ্ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা এই দুষ্ট জগতের শয়তানতুল্য মনোভাবকে প্রতিরোধ করার ব্যাপারে সফল হতে পারি।—গালা. ৫:১৬.
পবিত্র আত্মা উত্তম ফল উৎপন্ন করে
১৬. পবিত্র আত্মা আমাদের মধ্যে কোন ফল উৎপন্ন করতে পারে?
১৬ চতুর্থ যে-কারণে আমরা চাই যেন ঈশ্বরের আত্মা আমাদের মধ্যে কাজ করুক সেটা হল, এটা সেই ব্যক্তিদের জীবনে উত্তম ফল উৎপন্ন করে, যারা এর দ্বারা পরিচালিত হয়। (পড়ুন, গালাতীয় ৫:২২, ২৩.) আমাদের মধ্যে এমন কে রয়েছে, যে আরও বেশি প্রেমময়, আনন্দিত এবং শান্তিপ্রবণ হতে চায় না? আমাদের মধ্যে এমন কে রয়েছে, যে আরও বেশি দীর্ঘসহিষ্ণু, মাধুর্য বা সদয় এবং মঙ্গলভাবাপন্ন হতে চায় না? আমাদের মধ্যে এমন কে রয়েছে, যে আরও বেশি বিশ্বাস, মৃদুতা এবং ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তোলার মাধ্যমে উপকার লাভ করতে চায় না? ঈশ্বরের আত্মা আমাদের মধ্যে এমন উত্তম গুণাবলি উৎপন্ন করতে পারে, যা আমাদেরকে ও সেইসঙ্গে যাদের সঙ্গে আমরা বাস করি এবং সেবা করি, তাদেরকে উপকৃত করে। এই ফল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা এক চলমান প্রক্রিয়া, যেহেতু আমাদের কতটুকু আত্মার ফল প্রয়োজন এবং আমাদের তা কতটা উৎপন্ন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেই সম্বন্ধে কোনো সীমা নেই।
১৭. কীভাবে আমরা আরও বেশি করে আত্মার ফলের একটা দিক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারি?
১৭ এই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আগে থেকে চিন্তা করলে বিজ্ঞতার কাজ করব যে, আমাদের কথা এবং কাজ এই প্রমাণ দেয় যে আমরা পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছি এবং এর ফল উৎপন্ন করছি। (২ করি. ১৩:৫ক; গালা. ৫:২৫) আমরা যদি দেখি যে, আমাদের জন্য আত্মার ফলের কিছু দিক গড়ে তোলা প্রয়োজন, তাহলে আমরা এই ধরনের গুণ উৎপন্ন করার ক্ষেত্রে পবিত্র আত্মাকে আরও বেশি সহযোগিতা করতে পারব। বাইবেল এবং আমাদের খ্রিস্টীয় প্রকাশনাগুলো ব্যবহার করে এই প্রতিটা গুণ অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা তা করতে পারি। এই বিষয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত যে, কীভাবে আমরা আমাদের রোজকার জীবনে আত্মার ফল প্রদর্শন করতে পারি আর এরপর তা দেখানোর জন্য আরও কঠোর প্রচেষ্টা করতে পারি।a আমরা যখন আমাদের নিজেদের ও সেইসঙ্গে আমাদের সহখ্রিস্টানদের জীবনে ঈশ্বরের আত্মার কাজের ফলাফল লক্ষ করি, তখন আমরা স্পষ্টভাবে দেখতে পাই যে, কেন আমাদের অবশ্যই এর দ্বারা পরিচালিত হতে হবে।
আপনি কি ঈশ্বরের আত্মার বশে চলছেন?
১৮. ঈশ্বরের আত্মার প্রতি সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কীভাবে যিশু আমাদের জন্য এক আদর্শ?
১৮ ভৌত নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করার ব্যাপারে ঈশ্বরের “কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ ইজি-টু-রিড ভারসন]” হিসেবে যিশু পৃথিবীর সেই চৌম্বক ক্ষেত্র সম্বন্ধে সমস্ত কিছু জানতেন, যা মানুষ পৃথিবী ভ্রমণ করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। (হিতো. ৮:৩০; যোহন ১:৩) কিন্তু, পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু নিজের পথ পরিচালনা দেওয়ার জন্য কখনো এই শক্তিকে ব্যবহার করেছেন বলে বাইবেলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বাইবেল জানায় যে, একজন মানুষ হিসেবে তিনি তাঁর জীবনে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার পরাক্রান্ত শক্তি সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তিনি এর প্রভাব অনুযায়ী চলতেন আর এটা যখন তাঁকে অনুপ্রাণিত করত, তখন তিনি এর প্রতি বশ্যতা দেখাতেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতেন। (মার্ক ১:১২, ১৩; লূক ৪:১৪) আপনিও কি তা-ই করেন?
১৯. পবিত্র আত্মাকে আমাদের জীবনে পরিচালনাদানকারী শক্তি হিসেবে কাজ করতে দেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
১৯ ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি এখনও ইচ্ছুক মন ও হৃদয়কে চালিত করার এবং পরিচালনা দেওয়ার জন্য কার্যরত। আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য কীভাবে এটাকে আপনার মধ্যে কাজ করতে দিতে পারেন? যিহোবার কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করুন যেন তিনি আপনার ওপর তাঁর আত্মা প্রেরণ করেন এবং এর প্রভাবের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করার জন্য আপনাকে সাহায্য করেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ৩:১৪-১৬.) ঈশ্বরের লিখিত বাক্য বাইবেল, যা পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে, সেটিতে প্রাপ্ত পরামর্শ অনুসন্ধান করার মাধ্যমে আপনার প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করুন। (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) এটা যে-বিজ্ঞ নির্দেশনাগুলো প্রদান করে, সেগুলো মেনে চলুন এবং এরপর পবিত্র আত্মার পরিচালনার প্রতি আন্তরিকভাবে সাড়া দিন। এই দুষ্ট জগতে আপনার জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা দেওয়ার ক্ষমতা যে যিহোবার রয়েছে, সেটার প্রতি বিশ্বাস দেখিয়ে কাজ করুন।
[পাদটীকা]
a প্রতিটা দিক নিয়ে আলোচনা করার জন্য ওয়াচ টাওয়ার পাবলিকেশনস্ ইনডেক্স-এর মধ্যে “ঈশ্বরের আত্মার ফল” নামক বিষয়বস্তু এবং “দিক অনুযায়ী তালিকাবদ্ধ” শিরোনাম দেখুন।
আপনি কি প্রধান বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন?
• কীভাবে পবিত্র আত্মা আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে?
• কোন চারটে কারণে আমাদের ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা পরিচালিত হতে চাওয়া উচিত?
• পবিত্র আত্মার পরিচালনা থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করার জন্য কীভাবে আমরা আমাদের অংশটুকু করতে পারি?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের আত্মা, যিশুর জীবনে এক অনুপ্রেরণাদানকারী শক্তি ছিল
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের আত্মা মন ও হৃদয়কে চালিত করার ও পরিচালনা দেওয়ার জন্য কার্যরত