পরস্পরকে ক্ষমা করুন
“তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।”—ইফি. ৪:৩২.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
কেন আমাদের ক্ষমা করার জন্য ইচ্ছুক হতে হবে?
কীভাবে যিশু ক্ষমা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন?
পরস্পরকে ক্ষমা করার কারণে আমরা কোন আশীর্বাদগুলো লাভ করি?
১, ২. কেন ক্ষমা করার ব্যাপারে আপনার ইচ্ছুক মনোভাব বিবেচনা করে দেখা উপযুক্ত?
যিহোবার লিখিত বাক্য আমাদের জানতে সাহায্য করে যে, পাপকে তিনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন এবং আমরা যখন পাপ করি, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখান। এ ছাড়া, তাঁর বাক্য ক্ষমা সম্বন্ধেও অনেক কিছু প্রকাশ করে। আগের প্রবন্ধে আমরা দেখেছি যে, কীভাবে দায়ূদ ও মনঃশির মনোভাব যিহোবার কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করতে সাহায্য করেছিল। তাদের অনুশোচনা এবং তারা যা করেছিল, সেটার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত হওয়া তাদেরকে পাপ স্বীকার করতে, তাদের মন্দ কাজগুলো পরিত্যাগ করতে এবং অকৃত্রিম অনুতাপ করতে পরিচালিত করেছিল। এর ফলে, যিহোবা পুনরায় তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
২ আসুন আমরা ক্ষমা করাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরীক্ষা করে দেখি। মনঃশির প্রতি আপনি কেমন মনোভাব দেখাতেন বলে মনে করেন, যদি তার শিকারগ্রস্ত নির্দোষ ব্যক্তিদের মধ্যে আপনার একজন আত্মীয়ও অন্তর্ভুক্ত থাকত? আপনি কি মনঃশিকে ক্ষমা করতে পারতেন? বর্তমানে, এটা এক উপযুক্ত প্রশ্ন কারণ আমরা এক নীতিহীন, দৌরাত্ম্যপূর্ণ এবং স্বার্থপর জগতে বাস করছি। তাহলে, কেন একজন খ্রিস্টানের ক্ষমাশীল মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা উচিত? আর আপনি যদি অপমান ও অবিচার ভোগ করেন, তাহলে কী আপনাকে আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে, যিহোবা আপনার কাছ থেকে যেরকম প্রতিক্রিয়া আশা করেন, তা দেখাতে এবং ক্ষমা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক হতে সাহায্য করতে পারে?
যে-কারণে আমাদের ক্ষমাশীল হতে হবে
৩-৫. (ক) যিশু তাঁর শ্রোতাদেরকে ক্ষমা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে চিন্তা করতে সাহায্য করার জন্য কোন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন? (খ) মথি ১৮:২১-৩৫ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর দৃষ্টান্তের শিক্ষাটা কী?
৩ আমরা যদি পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুবান্ধবের, সহমানবদের এবং যিহোবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই, তাহলে যারা আমাদেরকে অসন্তুষ্ট করে—তারা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্য হোক বা না হোক—তাদেরকে ক্ষমা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক মনোভাব থাকা অপরিহার্য। শাস্ত্র ইঙ্গিত দেয় যে, অন্যেরা আমাদেরকে যত বারই অসন্তুষ্ট করুক না কেন, তাদেরকে ক্ষমা করার ব্যাপারে এক ইচ্ছুক মনোভাব হল, একটা খ্রিস্টীয় চাহিদা। এই চাহিদার যৌক্তিকতা সম্বন্ধে তুলে ধরার জন্য যিশু একজন দাসের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন, যিনি ঋণী ছিলেন।
৪ সেই দাস তার প্রভুর কাছ থেকে যে-ঋণ নিয়েছিলেন, তা একজন মজুরের ৬,০০,০০,০০০ দিনের বেতনের সমরূপ ছিল; তা সত্ত্বেও, তার প্রভু তার ঋণ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এরপর, সেই দাস বাইরে গিয়ে তার একজন সহদাসকে দেখতে পান, যিনি তার কাছ থেকে যে-ঋণ নিয়েছিলেন, তা মাত্র ১০০ দিনের বেতনের সমরূপ ছিল। সেই ঋণী ব্যক্তি ধৈর্য দেখানোর জন্য মিনতি করেছিলেন কিন্তু ওই দাস, যার প্রচুর ঋণ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল, তিনি তার সহদাসকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন। এইরকম মনোভাব দেখে তাদের প্রভু ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। “আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি তোমারও উচিত ছিল না?” তার প্রভু জিজ্ঞেস করেছিলেন। “আর তাহার প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া পীড়নকারীদের নিকটে [ক্ষমা করতে অনিচ্ছুক সেই দাসকে] সমর্পণ করিলেন, যে পর্য্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না করে।”—মথি ১৮:২১-৩৪.
৫ এই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে যিশু কোন শিক্ষাটা তুলে ধরেছিলেন? তিনি উপসংহারে বলেছিলেন: “আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরূপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।” (মথি ১৮:৩৫) যিশুর শিক্ষাটা স্পষ্ট। আমাদের অসিদ্ধ জীবনে আমরা যে-পাপগুলো করেছি, সেগুলো এই প্রমাণ দেয় যে, আমরা পুরোপুরিভাবে যিহোবার মান অনুযায়ী চলতে অসমর্থ। তা সত্ত্বেও, তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করতে এবং রূপকভাবে বললে আমাদের স্লেট পরিষ্কার করতে ইচ্ছুক। তাই, যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে চায় এমন যেকোনো ব্যক্তি তার সহমানবের ভুলত্রুটি ক্ষমা করতে বাধ্য। পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু এই বিষয়টাই তুলে ধরেছিলেন: “তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তোমাদিগকেও ক্ষমা করিবেন। কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ ক্ষমা করিবেন না।”—মথি ৬:১৪, ১৫.
৬. কেন ক্ষমা করা সবসময় সহজ নয়?
৬ ‘এই নীতিবাক্য শুনতে ভালো লাগে,’ আপনি হয়তো বলতে পারেন, ‘কিন্তু বলা যত সহজ, করা তত সহজ নয়।’ এর কারণ হল ব্যক্তিগত অসন্তোষের প্রতি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, সেটার পিছনে প্রায়ই আবেগ কাজ করে। একজন ব্যক্তি হয়তো রেগে যেতে, বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে এমন বোধ করতে, ন্যায়বিচার অথবা এমনকী প্রতিশোধ নিতে চাইতে পারেন। বাস্তবিকপক্ষে, কেউ কেউ এইরকমটা মনে করে যে, তাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছে এমন ব্যক্তিকে তারা কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না। আপনিও যদি একইরকম বোধ করেন, তাহলে কীভাবে আপনি এমন ক্ষমাশীল মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে পারেন, যা যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ?
আপনার আবেগ বিশ্লেষণ করে দেখুন
৭, ৮. আপনি যদি অন্যদের নির্দয় আচরণের কারণে বিরক্ত হয়ে যান, তাহলে কী আপনাকে ক্ষমাশীল মনোভাব সহকারে প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য সাহায্য করতে পারে?
৭ সত্যিকারের অথবা মনগড়া অসন্তোষের প্রতি আবেগের দ্বারা তাড়িত হয়ে যে-প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, তা অনেক জোরালো হতে পারে। একজন যুবকের এই প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে দেখুন, যা ক্রোধের ওপর করা একটা গবেষণায় এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে: “একবার . . . ক্রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর, আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটতে শুরু করি এবং প্রতিজ্ঞা করি যে, আর কখনো ফিরে আসব না। এটা ছিল চমৎকার এক গ্রীষ্মের দিন আর আমি এক অপূর্ব রাস্তা দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত হাঁটতে থাকি, যতক্ষণ পর্যন্ত না ধীরে ধীরে সেই নীরবতা ও সৌন্দর্য আমাকে শান্ত এবং প্রশমিত করে আর কয়েক ঘন্টা পর আমি অনুতপ্ত হয়ে এবং বলতে গেলে প্রায় ঠাণ্ডা হয়ে বাড়ি ফিরে যাই।” এই অভিজ্ঞতা যেমন দেখায় যে, শান্ত হওয়ার জন্য নিজেকে সময় দেওয়া এবং পরিস্থিতি নিয়ে আরও ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করা হয়তো আপনাকে এমন ক্ষমাহীন প্রতিক্রিয়া দেখানো এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য করবে, যেটার জন্য কিনা আপনাকে পরে অনুশোচনা করতে হতে পারে।—গীত. ৪:৪; হিতো. ১৪:২৯; যাকোব ১:১৯, ২০.
৮ কিন্তু, তার পরও যদি নেতিবাচক অনুভূতি থেকে যায়? তাহলে, খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন যে, কেন আপনি বিরক্ত বোধ করছেন। এর কারণ কি এই যে, আপনার সঙ্গে অন্যায্য, হতে পারে অভদ্র আচরণ করা হয়েছে? নাকি আপনি নিজে এইরকমটা মনে করছেন যে, অন্য ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবেই আপনাকে আঘাত দেওয়ার চেষ্টা করেছেন? তিনি যা করেছেন, তা কি আদৌ খারাপ ছিল? আপনার প্রতিক্রিয়ার কারণ নিয়ে বিশ্লেষণ করা এবং বোঝা আপনাকে এটা বিবেচনা করার সুযোগ দেবে যে, কোনটা সবচেয়ে উত্তম এবং শাস্ত্রীয় দিক দিয়ে সঠিক প্রতিক্রিয়া হবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৫:২৮; ১৭:২৭.) এই ধরনের যুক্তি হয়তো আপনাকে আরও বাস্তববাদী হতে এবং ক্ষমা করার জন্য ইচ্ছুক মনোভাব দেখাতে সাহায্য করবে। কঠিন বলে মনে হলেও এইরকম মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি ঈশ্বরের বাক্যকে “[আপনার] হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার” পরীক্ষক হওয়ার এবং যিহোবার ক্ষমাশীল মনোভাব অনুকরণ করার ব্যাপারে আপনাকে পরিচালনা দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন।—ইব্রীয় ৪:১২.
এটাকে কি আপনার ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া উচিত?
৯, ১০. (ক) আপনাকে অসন্তুষ্ট করা হয়েছে বলে মনে হলে আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন? (খ) কীভাবে এক ইতিবাচক এবং ক্ষমাশীল মনোভাব গড়ে তোলা আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করতে পারে?
৯ জীবনের অনেক পরিস্থিতিই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার উদ্রেক করে। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন গাড়ি চালানোর সময় অন্য একটা গাড়ি আরেকটু হলেই আপনার গাড়িকে ধাক্কা দিতে যাচ্ছিল। আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? আপনি হয়তো রাস্তার মধ্যে রেগে যাওয়ার বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে পড়েছেন, যেখানে একজন ব্যক্তি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে অন্য চালককে আক্রমণ করে বসেছে। কিন্তু, একজন খ্রিস্টান হিসেবে নিশ্চিতভাবেই আপনি এমনটা করতে চাইবেন না।
১০ বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করার জন্য একটু সময় করে নেওয়া কত উত্তমই না হবে। কোনো না কোনোভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ার কারণে সেই ঘটনার জন্য আপনিও হয়তো কিছুটা দায়ী। অথবা অন্য চালকের গাড়িতে হয়তো কোনো যান্ত্রিক সমস্যা ছিল। এই দৃশ্যপটের শিক্ষাটা হল, বিবেচক হওয়ার, যুক্তিসংগতভাবে চিন্তা করার ও ক্ষমা করার ব্যাপারে এক ইচ্ছুক মনোভাব দেখানোর মাধ্যমে আমরা ক্রোধ, হতাশা এবং অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতি হ্রাস করতে পারি। “তোমার আত্মাকে সত্বর বিরক্ত হইতে দিও না,” উপদেশক ৭:৯ পদ বলে, “কেননা হীনবুদ্ধি লোকদেরই বক্ষঃ বিরক্তির আশ্রয়।” বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। অনেক ক্ষেত্রে যে-বিষয়টাকে ইচ্ছা করেই ব্যক্তিগতভাবে বিরক্ত বা অসন্তুষ্ট করা হয়েছে বলে মনে করা হয়, সেটা আদৌ সেইরকম নয়; এটা কেবল অসিদ্ধতা অথবা ভুল বোঝাবুঝির কারণেই হয়ে থাকে। যে-আচরণ বা কথাবার্তাকে নির্দয় বলে মনে হয়, তা নিয়ে যুক্তিসংগতভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করুন এবং প্রেমের বশবর্তী হয়ে ক্ষমা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক হোন। আপনি যদি এতে সফল হন, তাহলে আপনি আরও বেশি আনন্দ লাভ করবেন।—পড়ুন, ১ পিতর ৪:৮.
‘তোমাদের শান্তি তোমাদের প্রতি ফিরিয়া আইসুক’
১১. সুসমাচারের প্রতি লোকেরা যে-প্রতিক্রিয়াই দেখাক না কেন, রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আমাদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত?
১১ ক্ষেত্রের পরিচর্যায় কাজ করার সময় কেউ যদি আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তাহলে কীভাবে আপনি ইন্দ্রিয়দমন বজায় রাখতে পারেন? যিশু যখন ৭০ জন প্রচারককে পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন যেন তারা যে যে বাড়িতে যাবে, সেইসমস্ত বাড়ির জন্য শান্তি কামনা করে। “তথায় যদি শান্তির সন্তান থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তাহার উপরে অবস্থিতি করিবে,” যিশু বলেছিলেন, “নতুবা তোমাদের প্রতি ফিরিয়া আসিবে।” (লূক ১০:১, ৫, ৬) লোকেরা যখন আমাদের পরিচর্যার প্রতি অনুকূল সাড়া দেয়, তখন আমরা আনন্দিত হই, কারণ সেই সময়ই তারা হয়তো আমাদের প্রচারিত বার্তা থেকে উপকার লাভ করতে পারবে। কিন্তু, মাঝে মাঝে শান্তিপ্রবণ সাড়া না-ও পাওয়া যেতে পারে। তখন? যিশু বলেছিলেন যে, কোনো বাড়ির প্রতি আমরা যে-শান্তি কামনা করি, তা আমাদের মধ্যে থাকা উচিত। যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক, লোকেরা আমাদের সঙ্গে যেমন আচরণই করুক না কেন, সেই বাড়ি থেকে আমাদের শান্তিপূর্ণ হৃদয়ে বের হয়ে আসা উচিত। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে আমরা যদি বিরক্ত হয়ে সাড়া দিই, তাহলে আমরা আমাদের শান্তি বজায় রাখতে পারব না।
১২. ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২ পদে প্রাপ্ত পৌলের কথা অনুযায়ী আমাদের কীভাবে কাজ করা উচিত?
১২ শুধু খ্রিস্টীয় পরিচর্যার সময়ই নয় বরং সমস্ত পরিস্থিতিতে শান্তি বজায় রাখার প্রচেষ্টা করুন। সাধারণত, অন্যদের ক্ষমা করে দেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছুক মনোভাব দেখানোর অর্থ এই নয় যে, আপনাকে তাদের অন্যায় আচরণ মেনে নিতে হবে অথবা এর ফলে সৃষ্ট অনুভূতিকে গুরুত্বহীন বলে মনে করতে হবে। কিন্তু, ক্ষমা করার অর্থ হল, এইরকম অন্যায়ের কারণে ঘটা যেকোনো বিরক্তি দূর করে দেওয়া এবং আপনার নিজের শান্তি বজায় রাখা। হৃদয়ের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা পোষণ করার এবং তাদের সঙ্গে কতটা খারাপ আচরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে চিন্তা করার মাধ্যমে কেউ কেউ অন্যদের আচরণের কারণে নিজেদের সুখকে নষ্ট হতে দিয়েছে। এইরকম চিন্তা যেন আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করে। মনে রাখবেন যে, আপনি যদি বিরক্তি পুষে রাখেন, তাহলে আপনি আনন্দিত হতে পারবেন না। তাই, ক্ষমাশীল হোন!—পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩১, ৩২.
এমন প্রতিক্রিয়া দেখান, যা যিহোবাকে খুশি করে
১৩. (ক) কীভাবে একজন খ্রিস্টান তার শত্রুর মস্তকের ওপর ‘জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া রাখে’? (খ) উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মৃদুভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর ফল কী হতে পারে?
১৩ কোনো কোনো সময় আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, যে-ব্যক্তি আপনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে, তাকে আপনি খ্রিস্টীয় মানগুলো বোঝানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “‘তোমার শত্রু যদি ক্ষুধিত হয়, তাহাকে ভোজন করাও; যদি সে পিপাসিত হয়, তাহাকে পান করাও; কেননা তাহা করিলে তুমি তাহার মস্তকে জ্বলন্ত অঙ্গারের রাশি করিয়া রাখিবে।’ তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হইও না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয় কর।” (রোমীয় ১২:২০, ২১) উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে আপনার সদয়ভাবের মাধ্যমে আপনি হয়তো এমনকী কঠিন মনোভাবকে নরম করে দিতে এবং লোকেদের মধ্যে থেকে ভালো কিছু বের করে আনতে পারবেন। অসন্তুষ্ট করেছেন এমন ব্যক্তির প্রতি বিবেচনা এবং সহমর্মিতা—এমনকী সমবেদনা—দেখানোর মাধ্যমে আপনি হয়তো তাকে বাইবেলের সত্য সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করতে পারবেন। যা-ই হোক না কেন, মৃদুভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো একজন ব্যক্তিকে আপনার উত্তম আচরণ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়।—১ পিতর ২:১২; ৩:১৬.
১৪. একজন ব্যক্তি আপনার সঙ্গে যত খারাপ আচরণই করুক না কেন, কেন আপনার বিরক্তি পুষে রাখা উচিত নয়?
১৪ কোনো কোনো পরিস্থিতিতে, নির্দিষ্ট কিছু লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা অনুপযুক্ত হবে। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে সেইসমস্ত ব্যক্তিরা, যারা একসময় মণ্ডলীর অংশ ছিল, তবে পরবর্তী সময়ে তারা পাপ করেছে, অনুতপ্ত মনোভাব দেখায়নি এবং সমাজচ্যুত হয়েছে। এইরকম একজন ব্যক্তি যদি আপনাকে আঘাত দিয়ে থাকে, তাহলে অনুতপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তাকে ক্ষমা করা হয়তো খুবই কঠিন বলে মনে হতে পারে, যেহেতু আবেগগত ক্ষত সুস্থ হওয়ার জন্য সময় লাগে। এইরকম পরিস্থিতিতে, আপনি ক্রমাগত যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন, যেন তিনি আপনাকে অনুতপ্ত হয়েছেন এমন অন্যায়কারীর প্রতি ক্ষমা করার মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করার জন্য সাহায্য করেন। সর্বোপরি, অন্যের হৃদয়ে কী আছে, তা আপনি কীভাবে জানবেন? যিহোবা জানেন। তিনি একজন ব্যক্তির গভীরতম প্রবণতা পরীক্ষা করেন এবং অন্যায়কারীর প্রতি ধৈর্য দেখান। (গীত. ৭:৯; হিতো. ১৭:৩) এই কারণে শাস্ত্র বলে: “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না; সকল মনুষ্যের দৃষ্টিতে যাহা উত্তম, ভাবিয়া চিন্তিয়া তাহাই কর। যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও, কারণ লেখা আছে, ‘প্রতিশোধ লওয়া আমারই কর্ম্ম, আমিই প্রতিফল দিব, ইহা প্রভু [ঈশ্বর] বলেন।’” (রোমীয় ১২:১৭-১৯) আপনি কি উপযুক্তভাবেই অন্য কোনো ব্যক্তিকে নিন্দা করতে পারেন? না। (মথি ৭:১, ২) কিন্তু, আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, ঈশ্বর ন্যায়বিচার করেন।
১৫. অসন্তুষ্ট করেছে এমন ব্যক্তিদের সম্বন্ধে কোন বিষয়টা বোঝা যেন তাদের প্রতি আমাদের মনোভাবকে প্রভাবিত করে?
১৫ আপনার যদি মনে হয় যে, আপনি অবিচারের শিকার হয়েছেন ও সেইসঙ্গে দেখেন যে, অনুতপ্ত অন্যায়কারীকে ক্ষমা করা আপনার পক্ষে কঠিন বলে মনে হচ্ছে, তাহলে এই বিষয়টাও উপলব্ধি করা উত্তম হবে যে, যিনি অসন্তুষ্ট করেছেন, তিনি নিজেও কোনোকিছুর শিকার। তিনিও উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত অসিদ্ধতার পরিণতিগুলো ভোগ করে থাকেন। (রোমীয় ৩:২৩) যিহোবা সমস্ত অসিদ্ধ মানবজাতির জন্য সমবেদনা বোধ করেন। তাই, যিনি অসন্তুষ্ট করেছেন, তার জন্য প্রার্থনা করা উপযুক্ত। আমরা যার জন্য প্রার্থনা করছি, তার সঙ্গে রাগ করে থাকা ঠিক হবে না। আর যারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এমনকী তাদের প্রতিও যে আমাদের বিরক্তি পুষে রাখা এড়িয়ে চলা উচিত, তা যিশুর এই কথাগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়: “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও।”—মথি ৫:৪৪.
১৬, ১৭. খ্রিস্টান প্রাচীনরা যখন একজন পাপীকে অনুতপ্ত হিসেবে বিবেচনা করেন, তখন আপনার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত এবং কেন?
১৬ যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে, খ্রিস্টান প্রাচীনদেরকে আস্থা সহকারে মণ্ডলীর মধ্যে যে-অন্যায় কাজগুলো হয়ে থাকে, সেগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও এই ভাইদের ঈশ্বরের মতো পূর্ণ অন্তর্দৃষ্টি নেই, তবে তাদের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বরের বাক্যের নির্দেশনা এবং পবিত্র আত্মার পরিচালনার সঙ্গে মিল রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাই, প্রার্থনায় যিহোবার সাহায্য চাওয়ার পর, এইরকম ক্ষেত্রগুলোতে তারা যে-সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তা তাঁরই দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করবে।—মথি ১৮:১৮.
১৭ এখানেই আনুগত্য দেখানোর বিষয়টা আসে। যাদের অনুতপ্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাদেরকে কি আপনি ক্ষমা করবেন এবং তাদের প্রতি যে আপনার প্রেম রয়েছে, সেই বিষয়টা নিশ্চিত করবেন? (২ করি. ২:৫-৮) এটা হয়তো সহজ না-ও হতে পারে, বিশেষভাবে যদি আপনি সেই অন্যায়ের শিকার হয়ে থাকেন অথবা শিকারগ্রস্ত ব্যক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। কিন্তু, যিহোবা ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীর মধ্যে তিনি যে-উপায়ে বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা করেন, সেগুলোর ওপর নির্ভর করার মাধ্যমে আপনি বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করবেন। আপনি দেখাবেন যে, আপনি আসলেই ক্ষমা করেন।—হিতো. ৩:৫, ৬.
১৮. ক্ষমা করার কারণে আপনি কোন উপকারগুলো লাভ করতে পারেন?
১৮ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ক্ষমা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক হওয়ার উপকার সম্বন্ধে স্বীকার করেন। এটা চেপে রাখা এবং এমনকী ক্ষতিকর আবেগ থেকে স্বস্তি প্রদান করে, যার কারণে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে পড়ে আর এটা উত্তম ও সুখী সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর বিপরীতে, ক্ষমা না করার কারণে খারাপ স্বাস্থ্য, খারাপ সম্পর্ক, চাপ এবং ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি, ক্ষমা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক মনোভাবের কারণে আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-আশীর্বাদ লাভ করে থাকি তা হল, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক।—কল. ৩:১২-১৪.
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশুর দ্বারা ব্যবহৃত এই দৃষ্টান্তের শিক্ষাটা কী?
[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]
ক্ষমা করার ব্যাপারে ইচ্ছুক মনোভাব দেখানো খ্রিস্টীয় এক চাহিদা