“যাহা মানত করিবে, তাহা পরিশোধ করিও”
“ঈশ্বরের নিকটে মানত করিলে তাহা পরিশোধ করিতে বিলম্ব করিও না।”—উপ. ৫:৪.
১. (ক) যিপ্তহ ও হান্নার মধ্যে কোন কোন মিল ছিল? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) (খ) এই প্রবন্ধে কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে?
যিপ্তহ ছিলেন একজন সাহসী নেতা ও বীর যোদ্ধা। হান্না ছিলেন একজন নম্র মহিলা, যিনি তার স্বামী ও পরিবারের যত্ন নিতেন। তারা দু-জনেই যিহোবার উপাসনা করতেন। তবে, তাদের মধ্যে আরও একটা বিষয়ে মিল ছিল। যিপ্তহ ও হান্না দু-জনেই যিহোবার কাছে একটা অঙ্গীকার করেছিলেন এবং প্রত্যেকেই বিশ্বস্তভাবে সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। তারা বর্তমানে সেই পুরুষ ও নারীদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ, যারা যিহোবার কাছে অঙ্গীকার করে থাকে। এখন আসুন আমরা এই তিনটে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করি: অঙ্গীকার বলতে কী বোঝায়? ঈশ্বরের কাছে অঙ্গীকার করার বিষয়টা কতটা গুরুতর? যিপ্তহ ও হান্নার কাছ থেকে আমরা কোন শিক্ষাগুলো লাভ করতে পারি?
২, ৩. (ক) অঙ্গীকার বলতে কী বোঝায়? (খ) ঈশ্বরের কাছে অঙ্গীকার করা সম্বন্ধে শাস্ত্র কী বলে?
২ বাইবেলে ব্যবহৃত মানত a শব্দটা ঈশ্বরের কাছে করা এক গুরুতর প্রতিজ্ঞাকে বোঝায়। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যক্তি হয়তো যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করতে পারেন, তিনি কোনো কাজ করবেন, কোনো উপহার দেবেন, কোনো সেবায় অংশ নেবেন অথবা নির্দিষ্ট কিছু করা থেকে বিরত থাকবেন। একজন ব্যক্তি স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করে স্বেচ্ছায় মানত বা অঙ্গীকার করে থাকেন। কাউকেই অঙ্গীকার করার জন্য জোর করা হয় না। কিন্তু, একজন ব্যক্তি যখন তা করেন, তখন যিহোবা তার অঙ্গীকারকে এক গুরুতর প্রতিজ্ঞা হিসেবে দেখে থাকেন, যেটাকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। বাইবেল অনুসারে অঙ্গীকার বলতে কোনো উক্তি করাকে বোঝাতে পারে, যেখানে একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট কিছু করার অথবা না করার বিষয়ে শপথ করেন আর তা হতে পারে হাত উঠিয়ে শপথ করার মাধ্যমে। (আদি. ১৪:২২, ২৩; ইব্রীয় ৬:১৬, ১৭) ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের অঙ্গীকারকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত, সেই বিষয়ে বাইবেল কী বলে?
৩ মোশির ব্যবস্থায় আমরা পড়ি, একজন ব্যক্তি যদি যিহোবার কাছে কোনো অঙ্গীকার করেন, তা হলে তিনি যেন ‘আপন বাক্য ব্যর্থ না করেন, আপন মুখ হইতে নির্গত সমস্ত বাক্যানুসারে কার্য্য করেন।’ (গণনা. ৩০:২) পরবর্তী সময়ে শলোমন লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটে মানত করিলে তাহা পরিশোধ করিতে বিলম্ব করিও না, কারণ হীনবুদ্ধি লোকদিগেতে তাঁহার সন্তোষ নাই। যাহা মানত করিবে, তাহা পরিশোধ করিও।” (উপ. ৫:৪) আর যিশু এই কথাগুলো বলার মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের কাছে দিব্য বা অঙ্গীকার করা এক গুরুতর বিষয়: “পূর্ব্বকালীয় লোকদের নিকটে উক্ত হইয়াছিল, ‘তুমি মিথ্যা দিব্য করিও না, কিন্তু প্রভুর [ঈশ্বরের] উদ্দেশে তোমার দিব্য সকল পালন করিও।’”—মথি ৫:৩৩.
৪. (ক) ঈশ্বরের কাছে অঙ্গীকার করার বিষয়টা কতটা গুরুতর? (খ) যিপ্তহ ও হান্না সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে চাই?
৪ এটা স্পষ্ট যে, যিহোবার কাছে করা যেকোনো প্রতিজ্ঞাকে আমাদের অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। অঙ্গীকার সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। দায়ূদ বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন, যখন তিনি এই প্রশ্ন করেছিলেন: “কে সদাপ্রভুর পর্ব্বতে উঠিবে? কে তাঁহার পবিত্র স্থানে দণ্ডায়মান হইবে?” এরপর উত্তরে তিনি বলেছিলেন, যিহোবা এমন যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রহণ করবেন, “যে . . . ছলভাবে শপথ করে নাই।” (গীত. ২৪:৩, ৪) যিপ্তহ ও হান্না আলাদা আলাদাভাবে কোন অঙ্গীকার করেছিলেন? তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করা কি তাদের জন্য সহজ ছিল?
তারা ঈশ্বরের কাছে করা তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করেছিলেন
৫. যিপ্তহ কোন অঙ্গীকার করেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?
৫ যিপ্তহ সেইসময় যিহোবার কাছে একটা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যখন তিনি অম্মোনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন। সেই জাতি ঈশ্বরের লোকেদের শত্রু ছিল। (বিচার. ১০:৭-৯) যিপ্তহ যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন এবং এই অঙ্গীকার করেছিলেন: “তুমি যদি অম্মোন-সন্তানগণকে নিশ্চয় আমার হস্তে সমর্পণ কর, তবে অম্মোন-সন্তানগণের নিকট হইতে যখন আমি কুশলে ফিরিয়া আসিব, তখন যে কিছু আমার গৃহের কবাট হইতে নির্গত হইয়া আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিবে, তাহা নিশ্চয় সদাপ্রভুরই হইবে।” ঈশ্বর যিপ্তহের প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং তাকে যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেছিলেন। যিপ্তহ যখন বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, তখন প্রথমে তার মেয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হয়ে এসেছিলেন, যাকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন। তার মেয়েই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ‘সদাপ্রভুরই হইবেন।’ (বিচার. ১১:৩০-৩৪) তার মেয়ের জন্য এর অর্থ কী ছিল?
৬. (ক) ঈশ্বরের কাছে করা যিপ্তহের অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করা কি যিপ্তহ ও তার মেয়ের জন্য সহজ ছিল? (খ) দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:২১, ২৩ এবং গীতসংহিতা ১৫:৪ পদ থেকে অঙ্গীকার সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?
৬ যিপ্তহের মেয়ের জন্য তার বাবার অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করার অর্থ ছিল আবাসে গিয়ে পূর্ণসময়ের জন্য যিহোবার সেবা করা। যিপ্তহ কি কোনো কিছু চিন্তা না করেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? না। যিপ্তহ সম্ভবত জানতেন, তার মেয়েই প্রথমে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হয়ে আসবেন। তা সত্ত্বেও, বাবা ও মেয়ের জন্য এই পরিস্থিতি আবেগগতভাবে অনেক কঠিন ছিল—তাদের দু-জনের জন্যই এক বিরাট ত্যাগস্বীকার ছিল। যিপ্তহ যখন তার মেয়েকে দেখতে পেয়েছিলেন, তখন তিনি খুবই ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন। তার মেয়ে ‘আপন কুমারীত্ব বিষয়ে বিলাপ করিয়াছিলেন।’ কেন? কারণ যিপ্তহের কোনো ছেলে ছিল না এবং তার একমাত্র মেয়ে কখনো বিয়ে করতে ও সেইসঙ্গে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন না। যিপ্তহের পরিবারের নাম সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু, যিপ্তহ ও তার মেয়ে উভয়েই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, এর সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতির চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু জড়িত রয়েছে। যিপ্তহ বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর কাছে মুখ খুলিয়াছি, আর অন্যথা করিতে পারিব না।” তার মেয়ে বলেছিলেন: “তোমার মুখ দিয়া যে কথা বাহির হইয়াছে, তদনুসারে আমার প্রতি কর।” (বিচার. ১১:৩৫-৩৯) যিপ্তহ ও তার মেয়ে দু-জনেই অনুগত ব্যক্তি ছিলেন আর তাই ঈশ্বরের কাছে করা অঙ্গীকার ভেঙে ফেলার কথা তারা চিন্তাও করেননি, যদিও সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করা তাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:২১, ২৩; গীতসংহিতা ১৫:৪.
৭. (ক) হান্না কোন অঙ্গীকার করেছিলেন ও কেন এবং এর ফল কী হয়েছিল? (খ) শমূয়েলের জন্য হান্নার অঙ্গীকারের অর্থ কী ছিল? (পাদটীকা দেখুন।)
৭ হান্নাও তার জীবনের এক চাপপূর্ণ সময়ে যিহোবার কাছে একটা অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি সন্তানধারণে অক্ষম ছিলেন আর তাই প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে ছিলেন। এই অক্ষমতার কারণে তাকে ক্রমাগত টিটকারি সহ্য করতে হয়েছিল। (১ শমূ. ১:৪-৭, ১০, ১৬) তিনি যিহোবার কাছে তার অনুভূতির কথা খুলে বলেছিলেন এবং এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “হে বাহিনীগণের সদাপ্রভু, যদি তুমি তোমার এই দাসীর দুঃখের প্রতি দৃষ্টিপাত কর, আমাকে স্মরণ কর, ও আপন দাসীকে ভুলিয়া না গিয়া আপন দাসীকে পুত্ত্রসন্তান দেও, তবে আমি চিরদিনের জন্য তাহাকে সদাপ্রভুর উদ্দেশে নিবেদন করিব; তাহার মস্তকে ক্ষুর উঠিবে না।”b (১ শমূ. ১:১১) যিহোবা হান্নার প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং পরের বছর হান্না এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, যার নাম রাখা হয়েছিল শমূয়েল। হান্না কত আনন্দিতই-না হয়েছিলেন! কিন্তু, তিনি ঈশ্বরের কাছে করা তার অঙ্গীকারের কথা ভুলে যাননি। পুত্রসন্তান জন্মানোর পর তিনি বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুর কাছে ইহাকে যাচ্ঞা করিয়া লইয়াছি।”—১ শমূ. ১:২০.
৮. (ক) হান্নার জন্য তার অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করা কি সহজ ছিল? (খ) গীতসংহিতার ৬১ গীত কীভাবে আপনাকে হান্নার উত্তম উদাহরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়?
৮ শমূয়েলের বয়স যখন প্রায় তিন বছর, তখন হান্না যিহোবার কাছে করা তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। তিনি শমূয়েলকে শীলোতে অবস্থিত আবাসে মহাযাজক এলির কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: “আমি এই বালকের জন্য প্রার্থনা করিয়াছিলাম; আর সদাপ্রভুর কাছে যাহা চাহিয়াছিলাম, তাহা তিনি আমাকে দিয়াছেন। এই জন্য আমিও ইহাকে সদাপ্রভুকে দিলাম; এ চিরজীবনের জন্য সদাপ্রভুকে দত্ত।” (১ শমূ. ১:২৪-২৮) সেই সময়ের পর থেকে শমূয়েল আবাসে থাকতে শুরু করেছিলেন। বাইবেল বলে, “বালক শমূয়েল সদাপ্রভুর সাক্ষাতে বাড়িয়া উঠিতে লাগিলেন।” (১ শমূ. ২:২১) তার অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করা হান্নার জন্য সহজ ছিল না। কারণ এর অর্থ ছিল, হান্না তার পুত্রের সঙ্গে প্রতিদিন সময় কাটাতে পারবেন না, যাকে তিনি খুবই ভালোবাসতেন। তিনি শমূয়েলকে নিজের চোখের সামনে বড়ো হয়ে উঠতে দেখতে পারবেন না। কিন্তু, হান্না যিহোবার কাছে করা তার অঙ্গীকারকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরের কাছে করা তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কাজ করার জন্য এমন বিষয়গুলো ত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন, যেগুলো তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।—১ শমূ. ২:১, ২; পড়ুন, গীতসংহিতা ৬১:১, ৫, ৮.
৯. আমরা এখন কী নিয়ে আলোচনা করব?
৯ এখন আমরা বুঝতে পারছি, যিহোবার কাছে অঙ্গীকার করার বিষয়টা কতটা গুরুতর। এবার আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করি: বর্তমানে আমরা কোন ধরনের অঙ্গীকার করতে পারি? সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করার জন্য আমাদের কতটা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?
উৎসর্গীকরণের অঙ্গীকার
১০. একজন খ্রিস্টান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন অঙ্গীকার করতে পারেন আর এর সঙ্গে কী জড়িত?
১০ একজন খ্রিস্টান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-অঙ্গীকার করতে পারেন, সেটা হল যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করা। ব্যক্তিগত প্রার্থনায় একজন ব্যক্তি এই প্রতিজ্ঞা করেন, যা-ই ঘটুক না কেন, তিনি চিরকাল ধরে ঈশ্বরের সেবায় তার জীবন ব্যবহার করবেন। যিশু বলেছিলেন, আমরা নিজেদের “অস্বীকার” করি অর্থাৎ এই প্রতিজ্ঞা করি যে, আমরা নিজেদের নয় বরং যিহোবার ইচ্ছাকে প্রথমে রাখব। (মথি ১৬:২৪) সেই দিন থেকে ‘আমরা প্রভু’ যিহোবারই। (রোমীয় ১৪:৮) আমরা আমাদের উৎসর্গীকরণকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকি। আমরা সেই গীতরচকের মতো অনুভব করি, যিনি বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভু হইতে যে সকল মঙ্গল পাইয়াছি, তাহার পরিবর্ত্তে তাঁহাকে কি ফিরাইয়া দিব? আমি সদাপ্রভুর কাছে আমার মানত সকল পূর্ণ করিব; তাঁহার সমস্ত প্রজার সাক্ষাতেই করিব।” —গীত. ১১৬:১২, ১৪.
১১. আপনার বাপ্তিস্মের দিনে আপনি কী প্রকাশ করেছিলেন?
১১ আপনি কি যিহোবার কাছে আপনার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং সেই উৎসর্গীকরণের প্রতীক হিসেবে জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছেন? যদি তা-ই হয়, তা হলে সেটা খুবই উত্তম! আপনার কি মনে আছে, বাপ্তিস্মের বক্তৃতা দেওয়ার সময় বক্তা আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, আপনি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন কি না এবং এই বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন কি না যে, “আপনার উৎসর্গীকরণ ও বাপ্তিস্ম . . . আপনাকে যিহোবার সাক্ষিদের একজন হিসেবে শনাক্ত করে?” উত্তরে আপনি যখন হ্যাঁ বলেছিলেন, তখন উপস্থিত সকলে জানতে পেরেছিল, আপনি আপনার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং যিহোবার একজন নিযুক্ত পরিচারক হিসেবে বাপ্তিস্ম নেওয়ার যোগ্য হয়েছেন। সেইসময় আপনি নিশ্চয়ই যিহোবাকে অনেক আনন্দিত করেছিলেন!
১২. (ক) নিজেদেরকে আমাদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত? (খ) পিতর আমাদের কোন গুণগুলো বৃদ্ধি করার জন্য উৎসাহিত করেছেন?
১২ আপনি যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন আপনি যিহোবার কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, আপনি আপনার জীবন তাঁর সেবায় ব্যবহার করবেন এবং তাঁর মান অনুযায়ী চলার জন্য যথাসাধ্য করবেন। কিন্তু, বাপ্তিস্ম কেবল এক শুরু। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সকলকে ক্রমাগত নিজেদের পরীক্ষা করতে হবে। আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর থেকে যিহোবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কতটা ঘনিষ্ঠ হয়েছে? আমি কি এখনও আমার সম্পূর্ণ হৃদয় দিয়ে প্রভু যিহোবার সেবা করছি? (কল. ৩:২৩) আমি কি সবসময় প্রার্থনা করি? আমি কি প্রতিদিন বাইবেল পড়ি? আমি কি নিয়মিতভাবে মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিই? আমি কি যখনই সম্ভব প্রচারে অংশ নিই? নাকি আমি এই ক্ষেত্রগুলোতে কিছুটা উদ্যম হারিয়ে ফেলেছি?’ প্রেরিত পিতর ব্যাখ্যা করেছিলেন, আমরা যদি ক্রমাগত বিশ্বাস, জ্ঞান, ধৈর্য ও ঈশ্বরীয় ভক্তি বৃদ্ধি করে চলি, তা হলে আমরা আমাদের সেবায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার বিপদ এড়িয়ে চলতে পারব।—পড়ুন, ২ পিতর ১:৫-৮.
১৩. একজন উৎসর্গীকৃত ও বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানকে কী বুঝতে হবে?
১৩ আমরা যিহোবার সেবা করার বিষয়ে একবার অঙ্গীকার করার পর, তা আর ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। একজন ব্যক্তি যদি যিহোবাকে সেবা করতে গিয়ে অথবা খ্রিস্টান হিসেবে জীবনযাপন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তা হলে তিনি পরবর্তী সময়ে এমনটা বলতে পারেন না যে, তিনি আসলে কখনোই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেননি এবং তার বাপ্তিস্ম বৈধ ছিল না।c যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করার পর একজন ব্যক্তি যদি গুরুতর পাপ করেন, তা হলে তিনি যিহোবা ও মণ্ডলীর কাছে নিকাশ দিতে বাধ্য। (রোমীয় ১৪:১২) আমরা কখনোই সেই ব্যক্তিদের মতো হতে চাই না, যাদেরকে যিশু বলেছিলেন: “তুমি আপন প্রথম প্রেম পরিত্যাগ করিয়াছ।” এর পরিবর্তে, আমরা চাই যেন তিনি আমাদের সম্বন্ধে এইরকম কথা বলেন: “আমি জানি তোমার কর্ম্ম সকল ও তোমার প্রেম ও বিশ্বাস ও পরিচর্য্যা ও ধৈর্য্য, আর তোমার প্রথম কর্ম্ম অপেক্ষা প্রচুরতর শেষ কর্ম্ম আমি জানি।” (প্রকা. ২:৪, ১৯) আমরা উদ্যোগের সঙ্গে আমাদের উৎসর্গীকরণ অনুযায়ী জীবনযাপন করার মাধ্যমে যিহোবাকে আনন্দিত করতে চাই।
বিয়ের অঙ্গীকার
১৪. একজন ব্যক্তি দ্বিতীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার করতে পারেন এবং কেন এই অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ?
১৪ একজন ব্যক্তি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ যে-অঙ্গীকার করতে পারেন, সেটা হল বিয়ের অঙ্গীকার। বিয়ে হল এক পবিত্র বন্ধন। যিহোবা বিয়ের অঙ্গীকারকে খুবই গুরুতর এক বিষয় হিসেবে দেখে থাকেন। একজন বর ও কনে যখন বিয়ের অঙ্গীকার করেন, তখন তারা যিহোবা ও সেইসঙ্গে সেখানে উপস্থিত সকলের সামনে একটা প্রতিজ্ঞা করেন। তারা সাধারণত এই প্রতিজ্ঞা করেন যে, যতদিন পর্যন্ত তারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন, ঈশ্বরের বিবাহ ব্যবস্থা অনুসারে একে অন্যকে ভালোবাসবেন, একে অন্যের যত্ন নেবেন এবং একে অন্যকে সম্মান করবেন। যদিও অন্যেরা হয়তো ঠিক একই শব্দ ব্যবহার করে না কিন্তু এরপরও তারা ঈশ্বরের সামনে একটা অঙ্গীকার করে। এই অঙ্গীকার করার মাধ্যমে তারা স্বামী-স্ত্রী হয়ে ওঠে। বিয়ে হল চিরজীবনের এক বন্ধন। (আদি. ২:২৪; ১ করি. ৭:৩৯) যিশু বলেছিলেন: “ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়া দিয়াছেন, মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক।” তাই, যে-দুই জন বিয়ে করতে চলেছেন, তাদের এইরকম চিন্তা করা উচিত নয় যে, তাদের বিয়ে যদি সফল না হয়, তা হলে তারা যেকোনো সময়ে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন।—মার্ক ১০:৯.
১৫. কেন খ্রিস্টানরা বিয়েকে কখনোই জগতের মতো করে দেখবে না?
১৫ অবশ্য, কোনো মানুষই যেমন সিদ্ধ নয়, তেমনই কোনো বিয়েও নিখুঁত নয়। এই কারণে বাইবেল আমাদের বলে, প্রত্যেক বিবাহিত ব্যক্তির জীবনেই কখনো কখনো “ক্লেশ ঘটিবে।” (১ করি. ৭:২৮) বর্তমান জগতে অনেকে বিয়েকে হালকাভাবে দেখে থাকে। তারা মনে করে, বিয়ে যদি সফল না হয়, তা হলে তারা যেকোনো সময়েই তাদের বিয়ে ভেঙে ফেলতে পারে। কিন্তু, খ্রিস্টান পুরুষ ও নারীরা বিয়েকে এভাবে দেখে না। তারা এই বিষয়টা উপলব্ধি করে যে, তারা ঈশ্বরের সামনে বিয়ের অঙ্গীকার করেছে। তারা যদি সেই অঙ্গীকার ভেঙে ফেলে, তা হলে সেটা ঈশ্বরের কাছে মিথ্যা বলার মতো আর ঈশ্বর মিথ্যাবাদীদের ঘৃণা করেন। (লেবীয়. ১৯:১২; হিতো. ৬:১৬-১৯) বিবাহিত খ্রিস্টানদের প্রেরিত পৌলের এই কথাগুলো মনে রাখা উচিত: “তুমি কি স্ত্রীর সঙ্গে সম্বদ্ধ? মুক্ত হইতে চেষ্টা করিও না।” (১ করি. ৭:২৭) পৌল এই কথাগুলো বলতে পেরেছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যিহোবা বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ বিবাহবিচ্ছেদও ঘৃণা করেন।—মালাখি ২:১৩-১৬.
১৬. বিবাহবিচ্ছেদ ও পৃথক থাকার বিষয়ে বাইবেল কী বলে?
১৬ যিশু শিক্ষা দিয়েছিলেন, একমাত্র যে-শাস্ত্রীয় কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করা যায়, তা হল একজন সাথি যদি ব্যভিচার করেন এবং নির্দোষ সাথি তাকে ক্ষমা না করেন। (মথি ১৯:৯; ইব্রীয় ১৩:৪) কিন্তু, বিবাহসাথির কাছ থেকে চলে যাওয়া বা পৃথক থাকা সম্বন্ধে কী বলা যায়? বাইবেল এই বিষয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ৭:১০, ১১.) বিবাহসাথির কাছ থেকে পৃথক থাকার কোনো শাস্ত্রীয় কারণ নেই। তবে, কখনো কখনো এমন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে, যখন একজন খ্রিস্টান মনে করেন যে, তার সাথির কাছ থেকে পৃথক থাকা অত্যন্ত জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেউ কেউ হয়তো এই উপসংহারে পৌঁছাতে পারে যে, নির্যাতন করে অথবা ধর্মভ্রষ্ট মনোভাব দেখায় এমন কোনো সাথির সঙ্গে তারা যদি একত্রে বাস করে, তা হলে তাদের জীবন অথবা যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে।d
১৭. এক খ্রিস্টান দম্পতি তাদের বিয়েকে চিরস্থায়ী করার জন্য কী করতে পারেন?
১৭ কোনো দম্পতি যদি তাদের বৈবাহিক সমস্যা সম্বন্ধে পরামর্শ চাওয়ার জন্য মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছে যান, তা হলে প্রাচীনরা হয়তো সেই দম্পতিকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, তারা প্রকৃত ভালোবাসা কী? (ইংরেজি) শিরোনামের ভিডিওটা দেখেছেন কি না অথবা আপনার পরিবার সুখী হতে পারে শিরোনামের ব্রোশারটা অধ্যয়ন করেছেন কি না। এই ভিডিও ও ব্রোশারের মধ্যে বাইবেলের এমন নীতিগুলো তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো একটা বিয়েকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সাহায্য করতে পারে। এক দম্পতি বলেন: “আমরা যখন থেকে এই ব্রোশারটা নিয়ে অধ্যয়ন করা শুরু করেছি, তখন থেকে আমাদের বিবাহিত জীবন আরও সুখের হয়েছে।” ২২ বছর ধরে বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করার পর একজন বোনের মনে হয়েছিল যে, তার বিয়ে ভেঙে যাবে। এরপর, তিনি প্রকৃত ভালোবাসা কী? শিরোনামের ভিডিওটা দেখেন। তিনি বলেন: “যদিও আমরা দু-জনেই বাপ্তাইজিত ছিলাম, কিন্তু আমাদের আবেগ, অনুভূতি পুরোপুরি আলাদা ছিল। এই ভিডিওটা একেবারে সঠিক সময়ে প্রকাশ করা হয়েছে! দম্পতি হিসেবে এখন আমরা আগের চেয়ে আরও উন্নতি করছি।” স্পষ্টতই, একজন স্বামী ও স্ত্রী যদি তাদের বিবাহিত জীবনে যিহোবার নীতি কাজে লাগান, তা হলে পরস্পরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও মধুর ও আরও শক্তিশালী হবে।
বিশেষ পূর্ণসময়ের দাসদের অঙ্গীকার
১৮, ১৯. (ক) অনেক খ্রিস্টান বাবা-মা কী করেছে? (খ) যারা বিশেষ পূর্ণসময়ের সেবায় রত আছে, তাদের সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে?
১৮ আগে আমরা যিপ্তহ ও হান্নার অঙ্গীকারের বিষয়ে আলোচনা করেছি। তাদের সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করার জন্য যিপ্তহের মেয়ে এবং হান্নার ছেলে, উভয়েই তাদের জীবনকে বিশেষ উপায়ে যিহোবার সেবা করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে, অনেক খ্রিস্টান বাবা-মা তাদের সন্তানদের পূর্ণসময়ের পরিচর্যা শুরু করার এবং ঈশ্বরের সেবা করাকে তাদের জীবনের মূল বিষয় করে তোলার জন্য উৎসাহিত করেছে। আর আমরা সকলেই এই অল্পবয়সিদের উৎসাহিত করতে পারি, যেন তারা তাদের সেবা চালিয়ে যায়।—বিচার. ১১:৪০; গীত. ১১০:৩.
১৯ বর্তমানে, যিহোবার সাক্ষিদের বিশেষ পূর্ণসময়ের দাসদের বিশ্বব্যাপী সংগঠন-এ প্রায় ৬৭,০০০ দাস রয়েছে। কেউ কেউ বেথেলে সেবা করে অথবা নির্মাণ কিংবা সীমার কাজ করে থাকে। আবার অন্যেরা ক্ষেত্রের পরিচর্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন স্কুলের নির্দেশক, বিশেষ অগ্রগামী, মিশনারি, সম্মেলন হল রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন এমন দাস অথবা বাইবেল স্কুলের জন্য ব্যবহৃত বিল্ডিংগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন এমন দাস হিসেবে সেবা করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। তারা প্রত্যেকেই “বাধ্যতা ও দারিদ্র্যের অঙ্গীকার” করেছে। এই অঙ্গীকারের মধ্যে তারা প্রতিজ্ঞা করেছে, যিহোবার সেবায় তাদের যে-কার্যভারই দেওয়া হোক না কেন, তারা সেটা সর্বোত্তম উপায়ে সম্পন্ন করবে, এক সাদাসিধে জীবনযাপন করবে এবং অনুমতি ছাড়া চাকরি করবে না। এই ব্যক্তিদের নয় বরং তাদের কার্যভারকে বিশেষ হিসেবে দেখা হয়। তারা যতদিন বিশেষ পূর্ণসময়ের সেবায় রত থাকবে, ততদিন নম্রভাবে এই অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।
২০. ঈশ্বরের কাছে করা আমাদের অঙ্গীকারগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত এবং কেন?
২০ এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে অঙ্গীকার নিয়ে আলোচনা করেছি, যেগুলো আমরা ঈশ্বরের কাছে করতে পারি। এগুলোর মধ্যে আপনি হয়তো একটা, দুটো কিংবা তিনটে অঙ্গীকারই করেছেন। আমরা জানি যে, আমাদের অঙ্গীকারগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে আর সেই অনুযায়ী কাজ করার জন্য যথাসাধ্য করতে হবে। (হিতো. ২০:২৫) আমরা যদি যিহোবার কাছে করা অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ না করি, তা হলে সেটার পরিণতি খুবই গুরুতর হতে পারে। (উপ. ৫:৬) তাই, আসুন আমরা সেই গীতরচকের মতো হই, যিনি যিহোবাকে বলেছিলেন: “আমি চিরকাল তোমার নামের প্রশংসা গাহিব, দিন দিন আপন মানত পূর্ণ করিব।”—গীত. ৬১:৮.
a বাংলা বাইবেলে মানত শব্দটার সমার্থশব্দ হিসেবে দিব্য ও ব্রত শব্দগুলোও ব্যবহার করা হয়েছে।
b হান্না যিহোবার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার যদি এক পুত্রসন্তান হয়, তা হলে সেই সন্তান সারাজীবন নাসরীয় হিসেবে থাকবেন। এর অর্থ ছিল, তার পুত্র যিহোবার সেবার জন্য উৎসর্গীকৃত হবেন ও পৃথক থাকবেন।—গণনা. ৬:২, ৫, ৮.
c একজন ব্যক্তি বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়ে ওঠার আগে প্রাচীনরা যেহেতু সেই ব্যক্তির সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন, তাই একজন ব্যক্তির বাপ্তিস্ম বৈধ না হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
d “ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা কর” বইয়ের পরিশিষ্টে দেওয়া “বিবাহবিচ্ছেদ ও পৃথক থাকার বিষয়ে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।