অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪৯
কাজ করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার “সময় আছে”
“এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।”—মার্ক ৬:৩১.
গান সংখ্যা ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!
সারাংশa
১. কাজের প্রতি অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?
আপনার এলাকার বেশিরভাগ লোকের কাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? অনেক দেশে লোকেরা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে আরও বেশি করে পরিশ্রম করছে এবং বেশি সময় ধরে কাজ করছে। যে-লোকেরা অতিরিক্ত কাজ করে, তারা সাধারণত এতটাই ব্যস্ত হয়ে যায় যে, বিশ্রাম নেওয়ার, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর অথবা ঈশ্বর সম্বন্ধে ক্রমাগত জানার জন্য তাদের হাতে আর সময় থাকে না। (উপ. ২:২৩) অন্যদিকে, কোনো কোনো ব্যক্তি কাজই করতে চায় না এবং কাজ না করার জন্য অজুহাত দেখিয়ে থাকে।—হিতো. ২৬:১৩, ১৪.
২-৩. যিহোবা ও যিশু কাজ করার ক্ষেত্রে কোন উদাহরণগুলো স্থাপন করেছেন?
২ কাজের প্রতি জগতের এক ভারসাম্যহীন মনোভাবের বিপরীতে যিহোবা ও যিশুর দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করুন। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, যিহোবা কাজ করতে ভালোবাসেন। যিশু এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন, আমিও করিতেছি।” (যোহন ৫:১৭) ঈশ্বর অগণিত আত্মিক প্রাণী ও নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করার জন্য যে-সমস্ত কাজ করেছেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। এ ছাড়া, ঈশ্বর এই পৃথিবীতে যে-অপূর্ব বিষয়গুলো করেছেন, আমরা সেগুলোও দেখি। গীতরচক উপযুক্ত কারণেই বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার নির্ম্মিত বস্তু কেমন বহুবিধ! তুমি প্রজ্ঞা দ্বারা সে সমস্ত নির্ম্মাণ করিয়াছ; পৃথিবী তোমার সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ।”—গীত. ১০৪:২৪.
৩ যিশু তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন। তিনি তাঁর পিতাকে ‘আকাশমণ্ডল প্রস্তুত করিতে’ সাহায্য করেছিলেন। তিনি যিহোবার কাছে “কার্য্যকারী [‘দক্ষ কর্মী,’ ইজি-টু-রিড ভারশন]” ছিলেন। (হিতো. ৮:২৭-৩১) এর অনেক সময় পরে, যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন উত্তম কাজ করেছিলেন। কাজ করা তাঁর জন্য খাবার খাওয়ার মতো ছিল এবং তাঁর কাজগুলো প্রমাণ করেছিল, ঈশ্বর তাঁকে পাঠিয়েছিলেন।—যোহন ৪:৩৪; ৫:৩৬; ১৪:১০.
৪. বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে আমরা যিহোবা ও যিশুর কাছ থেকে কী শিখতে পারি?
৪ যিহোবা ও যিশু কঠোর পরিশ্রম করার বিষয়ে যে-উদাহরণ স্থাপন করেছেন, সেটার মানে কি এই যে, আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন নেই? একেবারেই না। যিহোবা কখনো ক্লান্ত হন না, তাই কিছু করার পর তাঁর বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাইবেল বলে যে, যিহোবা স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার পর “বিশ্রাম করিয়া আপ্যায়িত হইয়াছিলেন।” (যাত্রা. ৩১:১৭) স্পষ্টতই এর অর্থ হল, যিহোবা সৃষ্টির কাজ বন্ধ করেছিলেন এবং তাঁর সৃষ্ট বিষয়গুলো উপভোগ করার জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। আর যদিও যিশু পৃথিবীতে থাকাকালীন কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, তারপরও তিনি এই বিষয়ে খেয়াল রেখেছিলেন যেন তার কাছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এবং তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ সহকারে খাবার খাওয়ার জন্য সময় থাকে।—মথি ১৪:১৩; লূক ৭:৩৪.
৫. অনেকে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়?
৫ বাইবেল ঈশ্বরের লোকেদের আনন্দের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে উৎসাহিত করে। ঈশ্বরের দাসদের অলস নয় বরং কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। (হিতো. ১৫:১৯) হতে পারে, আপনি আপনার পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য কাজ করেন। আর খ্রিস্টের সমস্ত শিষ্যের দায়িত্ব হল সুসমাচার প্রচার কাজে অংশ নেওয়া। কিন্তু, আপনার পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। আপনি কি কখনো কখনো পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য কাজ করার, পরিচর্যায় অংশ নেওয়ার এবং বিশ্রাম নেওয়ার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখাকে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখেন? কীভাবে আমরা জানতে পারি, আমাদের কতটা কাজ করতে হবে এবং কতটা বিশ্রাম নিতে হবে?
কাজ করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা যায়
৬. কীভাবে মার্ক ৬:৩০-৩৪ পদ দেখায় যে, কাজ করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে যিশুর এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল?
৬ কাজ করার বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রাজা শলোমন এই কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: ‘সমস্ত ব্যাপারের সময় আছে।’ তিনি রোপণ করার, নির্মাণ করার, কাঁদার, হাসার এবং অন্যান্য কাজের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। (উপ. ৩:১-৮) স্পষ্টতই, জীবনের দুটো গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কাজ করা এবং বিশ্রাম নেওয়া। আর এই বিষয়ে যিশুর এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। একবার, প্রেরিতরা প্রচার কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, “তাঁহাদের আহার করিবারও অবকাশ ছিল না।” তারা যখন ফিরে এসেছিলেন, তখন যিশু বলেছিলেন: “তোমরা বিরলে এক নির্জ্জন স্থানে আসিয়া কিছু কাল বিশ্রাম কর।” (পড়ুন, মার্ক ৬:৩০-৩৪.) যিশু ও তাঁর শিষ্যরা যদিও নিজেদের ইচ্ছামতো সবসময় বিশ্রাম নিতে পারেননি, তবে যিশু জানতেন তাদের সবার বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
৭. বিশ্রামবারের আইন সম্বন্ধে শেখা কীভাবে আমাদের সাহায্য করবে?
৭ কখনো কখনো আমাদের সবারই বিশ্রাম নেওয়ার অথবা দৈনন্দিন তালিকা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। ঈশ্বর অতীতে তাঁর লোকেদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা যে-ব্যবস্থা করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা এটা দেখতে পাই। সেই ব্যবস্থা হল প্রতি সপ্তাহে বিশ্রামবার পালন করা। যদিও আমরা মোশির ব্যবস্থার অধীনে নেই, তারপরও বিশ্রামবার সম্বন্ধে ব্যবস্থায় যা বলা হয়েছিল, সেখান থেকে আমরা উপকার লাভ করতে পারি। আমরা যা শিখি, সেটা আমাদের এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারে যে, কাজ করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে আমাদের এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আছে কি না।
বিশ্রামবার—বিশ্রাম নেওয়া এবং উপাসনা করার এক সময়
৮. যাত্রাপুস্তক ৩১:১২-১৫ পদ অনুযায়ী বিশ্রামবার কীসের জন্য ছিল?
৮ ঈশ্বরের বাক্য বলে, ছয় “দিন”b পরে ঈশ্বর পৃথিবীতে সৃষ্টির কাজ করা বন্ধ করেছিলেন। (আদি. ২:২) কিন্তু, যিহোবা কাজ করতে ভালোবাসেন এবং তিনি অন্যান্য উপায়ে “কার্য্য করিতেছেন।” (যোহন ৫:১৭) যিহোবা ছয় “দিন” কাজ করেছিলেন এবং সপ্তম ‘দিনে’ বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি ইস্রায়েলীয়দের প্রতি সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন। ঈশ্বর বলেছিলেন, বিশ্রামবার হল তাঁর ও ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে থাকা একটা চিহ্ন। সেই দিনটা “সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামার্থক পবিত্র বিশ্রামদিন” ছিল। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ৩১:১২-১৫.) কাউকে কাজ করতে দেওয়া হতো না, বাচ্চা, দাস অথবা এমনকী গৃহপালিত পশুদেরও নয়। (যাত্রা. ২০:১০) এটা লোকেদের আধ্যাত্মিক বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল।
৯. যিশুর দিনে বিশ্রামবার সম্বন্ধে কোন ভারসাম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে ছিল?
৯ বিশ্রামবার ঈশ্বরের লোকেদের জন্য ভালো ছিল; কিন্তু বিশ্রামবারের আইনের প্রতি যেভাবে বাধ্যতা দেখানো যায়, সেই বিষয়ে যিশুর দিনের ধর্মীয় নেতারা অত্যন্ত কঠোর নিয়ম তৈরি করেছিল। তারা বলেছিল, বিশ্রামবারে খাবার জন্য গাছ থেকে শস্য সংগ্রহ করা অথবা কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করা অন্যায়। (মার্ক ২:২৩-২৭; ৩:২-৫) এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ঈশ্বরের চিন্তাভাবনাকে প্রতিফলিত করেনি এবং যিশু সেই ব্যক্তিদের এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, যারা তাঁর কথা শুনেছিল।
১০. মথি ১২:৯-১২ পদ থেকে বিশ্রামবারের বিষয়ে যিশুর দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?
১০ যিশু এবং তাঁর যিহুদি অনুসারীরা বিশ্রামবার পালন করতেন কারণ তারা মোশির ব্যবস্থার অধীনে ছিলেন।c কিন্তু, যিশু এমন অনেক কিছু বলেছিলেন এবং করেছিলেন, যেগুলো দেখায় যে, বিশ্রামবারে অন্যদের জন্য সদয় ও সাহায্যকারী বিষয়গুলো করা অন্যায় ছিল না। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন: “বিশ্রামবারে সৎকর্ম্ম করা বিধেয়।” (পড়ুন, মথি ১২:৯-১২.) তিনি বিশ্রামবারে সদয় ও সাহায্যকারী কাজগুলো করাকে অন্যায় হিসেবে দেখেননি। যিশুর কাজগুলো দেখায় যে, কেন ঈশ্বর তাঁর লোকেদের বিশ্রামবারে বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন। যিশু বুঝতে পেরেছিলেন যে, এর পিছনে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে ঈশ্বরের লোকেরা যেহেতু তাদের প্রতিদিনের কাজ থেকে বিশ্রাম নিত, তাই তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের উপাসনার উপর মনোযোগ দিতে পারত। যিশু এমন এক পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন, যেখানে নিশ্চয়ই বিশ্রামবারে ঈশ্বরের উপাসনা করা হতো। আমরা এটা জানি কারণ যিশু সম্বন্ধে আমরা পড়ি, তিনি যখন তাঁর নিজের নগর নাসরতে ছিলেন, তখন “আপন রীতি অনুসারে বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিলেন, ও পাঠ করিতে দাঁড়াইলেন।”—লূক ৪:১৫-১৯.
কাজ করার প্রতি আপনার মনোভাব কেমন?
১১. কাজের বিষয়ে কে যিশুর জন্য উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?
১১ যোষেফ নিশ্চিতভাবেই তার দত্তক পুত্র যিশুকে ছুতোর মিস্ত্রির কাজ শেখানোর সময়ে কাজের বিষয়ে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (মথি ১৩:৫৫, ৫৬) আর যিশু তাঁর পালক পিতা যোষেফকে তাদের বড়ো পরিবারের যত্ন নেওয়ার জন্য দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করতে দেখেছিলেন। আগ্রহজনক বিষয় হল যিশু পরবর্তী সময়ে তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “কার্য্যকারী লোক আপন বেতনের যোগ্য!” (লূক ১০:৭) স্পষ্টতই, যিশু জানতেন যে, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।
১২. কোন শাস্ত্রপদগুলো কঠোর পরিশ্রমের বিষয়ে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে তুলে ধরে?
১২ প্রেরিত পৌলও জানতেন যে, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। তার প্রধান কাজ ছিল যিশু এবং তাঁর শিক্ষা সম্বন্ধে অন্যদের জানানো। কিন্তু, পৌল নিজের খরচ মেটানোর জন্য কাজও করতেন। অন্যদের উপর “ভারস্বরূপ” না হওয়ার জন্য তিনি যে “পরিশ্রম ও আয়াস সহকারে রাত দিন কার্য্য” করতেন, সেই বিষয়ে থিষলনীকীয়রা জানত। (২ থিষল. ৩:৮; প্রেরিত ২০:৩৪, ৩৫) পৌল যখন তার কাজের বিষয়ে লিখেছিলেন, তখন তিনি হয়তো তাঁবু নির্মাণের কাজের বিষয়ে বলছিলেন। তিনি যখন করিন্থে ছিলেন, তখন তিনি আক্বিল্লা ও প্রিষ্কিল্লার সঙ্গে থেকেছিলেন এবং তিনি তাদের সঙ্গে “কর্ম্ম করিতে লাগিলেন, কেননা তাঁহারা তাম্বু নির্ম্মাণ ব্যবসায়ী ছিলেন।” পৌল যখন বলেছিলেন তিনি “রাত দিন” কাজ করেছিলেন, তখন তিনি এটা বোঝাননি যে, তিনি না থেমে একটানা কাজ করেছিলেন। তিনি তার এই কাজ থেকে বিরতি নিয়েছিলেন, যেমন বিশ্রামবারে। সেই দিনে তিনি যিহুদিদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ পেতেন কারণ তারাও বিশ্রামবারে কাজ করত না।—প্রেরিত ১৩:১৪-১৬, ৪২-৪৪; ১৬:১৩; ১৮:১-৪.
১৩. পৌলের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৩ প্রেরিত পৌল এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তাকে নিজের খরচ মেটানোর জন্য কাজ করতে হয়েছিল; তারপরও তিনি নিয়মিতভাবে ‘ঈশ্বরের সুসমাচারের যাজকত্ব [“পবিত্র ভূমিকা অনুশীলন,” জুবিলী বাইবেল] করিবার’ বিষয়ে খেয়াল রেখেছিলেন। (রোমীয় ১৫:১৬; ২ করি. ১১:২৩) তিনি অন্যদেরও একই বিষয় করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাই, আক্বিল্লা ও প্রিষ্কিল্লা “খ্রীষ্ট যীশুতে [তাহার] সহকারী” ছিলেন। (রোমীয় ১২:১১; ১৬:৩) পৌল করিন্থীয়দের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা ‘প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়ে।’ (১ করি. ১৫:৫৮; ২ করি. ৯:৮) যিহোবা এমনকী প্রেরিত পৌলকে এই কথাগুলো লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন: “যদি কেহ কার্য্য করিতে না চায়, তবে সে আহারও না করুক।”—২ থিষল. ৩:১০.
১৪. যিশু যখন যোহন ১৪:১২ পদে লিপিবদ্ধ কথাগুলো বলেছিলেন, তখন তিনি কী বুঝিয়েছিলেন?
১৪ এই শেষ কালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-কাজগুলো আমরা করতে পারি, সেটা হল প্রচার করা এবং শিষ্য তৈরি করা। সত্যি বলতে কী, যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তাঁর শিষ্যরা তাঁর চেয়েও বড়ো বড়ো কাজ করবে! (পড়ুন, যোহন ১৪:১২.) এর অর্থ এই নয় যে, আমরা তাঁর মতো অলৌকিক কাজ করতে পারব। এর পরিবর্তে, যিশুর চেয়ে তাঁর অনুসারীরা আরও বড়ো এলাকায়, আরও বেশি লোকের কাছে এবং আরও বেশি সময় ধরে প্রচার করবে এবং শিক্ষা দেবে।
১৫. কোন প্রশ্নগুলো আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত এবং কেন?
১৫ আপনাকে যদি খরচ মেটানোর জন্য কাজ করতে হয়, তা হলে নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি আমার কর্মক্ষেত্রে একজন কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত? আমি কি নির্ধারিত সময়ে আমার কাজ শেষ করি এবং নিজের সর্বোত্তমটা প্রদান করি?’ আপনি যদি উত্তরে হ্যাঁ বলেন, তা হলে আপনার মালিক সম্ভবত আপনার উপর আস্থা রাখবে। এ ছাড়া, আপনি সেই লোকেদের কাছে রাজ্যের বার্তাকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলবেন, যারা আপনাকে লক্ষ করে। প্রচার করার এবং শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টা যখন আসে, তখন নিজেকে এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন: ‘আমি কি পরিচর্যায় একজন কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত? আমি কি প্রথম সাক্ষাতের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিই? আমি কি আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দ্রুত ফিরে যাই? আর আমি কি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন উপায়ে পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করি?’ আপনি যদি উত্তরে হ্যাঁ বলেন, তা হলে আপনি আপনার কাজে আনন্দ খুঁজে পাবেন।
বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে আপনার মনোভাব কেমন?
১৬. যিশু ও তাঁর প্রেরিতরা বিশ্রাম নেওয়াকে যেভাবে দেখেছিলেন এবং বর্তমানে অনেকে বিশ্রাম নেওয়াকে যেভাবে দেখে থাকে, সেটার মধ্যে কোন পার্থক্য রয়েছে?
১৬ যিশু ও তাঁর প্রেরিতদের যে কখনো কখনো বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তা যিশু জানতেন। কিন্তু, তাঁর সময়ের এবং আমাদের সময়ের অনেক ব্যক্তি যিশুর দৃষ্টান্তে বলা সেই ধনী ব্যক্তির মতো। সেই ব্যক্তি নিজেকে এই কথাগুলো বলেছিলেন: “বিশ্রাম কর, ভোজন পান কর, আমোদ প্রমোদ কর।” (লূক ১২:১৯; ২ তীম. ৩:৪) তিনি ভেবেছিলেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশ্রাম নেওয়া এবং আনন্দ করা। এর বিপরীতে, যিশু ও তাঁর প্রেরিতরা নিজেদের খুশি করার উপর জীবনকে কেন্দ্রীভূত করেননি।
১৭. আমাদের খরচ মেটানোর জন্য কাজ করার পর আমাদের হাতে যে-সময় থাকে, সেটা আমরা কীভাবে ব্যবহার করি?
১৭ বর্তমানে, আমাদের খরচ মেটানোর জন্য কাজ করার পর আমাদের হাতে যে-সময় থাকে, সেটা আমরা কেবল বিশ্রাম নেওয়ার জন্য নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার এবং খ্রিস্টীয় সভায় যোগ দেওয়ার মতো ভালো কাজ করার জন্য ব্যবহার করি। আর এভাবে আমরা যিশুকে অনুকরণ করার চেষ্টা করি। সত্যি বলতে কী, শিষ্য তৈরি করা এবং সভায় যোগ দেওয়াকে আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকি। এই কারণে আমরা যিহোবার উদ্দেশে ক্রমাগত এই কাজগুলো করার জন্য যথাসাধ্য করি। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এমনকী আমরা যখন ছুটিতে থাকি, তখনও আমরা যেখানেই থাকি না কেন, সভায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের নিয়মিত তালিকা অনুসরণ করি এবং যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, তাদের সঙ্গে বাইবেল নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি।—২ তীম. ৪:২.
১৮. আমাদের রাজা খ্রিস্ট যিশু আমাদের কাছ থেকে কী চান?
১৮ আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ যে, আমাদের রাজা খ্রিস্ট যিশু আমাদের কাছ থেকে আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আশা করেন না। এর বিপরীতে, তিনি আমাদের কাজ করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে এক ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করেন! (ইব্রীয় ৪:১৫) তিনি চান যেন আমরা প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিই। এ ছাড়া, তিনি চান যেন আমরা আমাদের শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর এবং শিষ্য তৈরি করার সতেজতাদায়ক কাজে অংশ নেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করি। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব যে, যিশু আমাদের নিষ্ঠুর দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য কী করেছেন।
গান সংখ্যা ৬০ তিনি তোমায় সবল করবেন
a শাস্ত্র আমাদের কাজ করার এবং বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে শেখায়। কাজ করা এবং বিশ্রাম নেওয়াকে আমরা যেভাবে দেখে থাকি, সেই বিষয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করার জন্য এই প্রবন্ধে বিশ্রামবারের উদাহরণ ব্যবহার করা হবে, যেটা ইস্রায়েলীয়দের প্রতি সপ্তাহে পালন করতে হতো।
b এটা যে আসলে আক্ষরিক ছয় দিন নয়, সেই বিষয়ে আরও তথ্যের জন্য jw.org-এ “যিহোবার সাক্ষিরা কি সৃষ্টিবাদে বিশ্বাস করে?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন (আমাদের সম্বন্ধে > যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে প্রায়ই জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন-এর অধীনে দেখুন)।
c বিশ্রামবারের আইনের প্রতি শিষ্যদের এতটাই সম্মান ছিল যে, তারা বিশ্রামবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত যিশুকে কবর দেওয়ার প্রস্তুতি বন্ধ রেখেছিল।—লূক ২৩:৫৫–২৪:১ক.
d ছবি সম্বন্ধে: যোষেফ তার পরিবারকে নিয়ে বিশ্রামবারে সমাজগৃহে যাচ্ছেন।
e ছবি সম্বন্ধে: একজন বাবা, যিনি তার পরিবারের খরচ মেটানোর জন্য কাজ করেন, তিনি কাজের পর ঈশতান্ত্রিক কাজে অংশ নিচ্ছেন আর তা এমনকী পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানোর সময়েও।