অধ্যয়ন প্রবন্ধ ২৭
যিহোবার মতো ধৈর্য ধরুন
“তোমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরার দ্বারা তোমাদের জীবন রক্ষা করবে।”—লূক ২১:১৯.
গান ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা
সারাংশa
১-২. কোন বিষয়টা আমাদের হাল ছেড়ে না দিতে সাহায্য করে? (যিশাইয় ৬৫:১৬, ১৭)
দু-হাজার সতেরো সালের আঞ্চলিক সম্মেলনের বিষয় ছিল, “হাল ছেড়ে দেবেন না!” সেই সম্মেলনে আমাদের উৎসাহিত করা হয়েছিল, আমরা যেন ধৈর্য সহকারে নিজেদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করে চলি। সেই সময় থেকে চার বছর পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু এখনও আমরা শয়তানের জগতে বিভিন্ন সমস্যা সহ্য করছি।
২ আপনি কি সম্প্রতি কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন? আপনি কি আপনার পরিবার অথবা বন্ধুদের মধ্যে কাউকে মৃত্যুতে হারিয়েছেন? আপনার কি কোনো কঠিন রোগ ধরা পড়েছে? আপনি কি বার্ধক্যের কারণে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন? আপনি কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, হিংসা কিংবা অত্যাচারের শিকার হয়েছেন? আপনি কি কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন? যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, খুব শীঘ্রই তিনি এই সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবেন এবং সেগুলো আর কখনোই আমাদের মনে পড়বে না। আমরা সেই দিন দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছি।—পড়ুন, যিশাইয় ৬৫:১৬, ১৭.
৩. কেন আজকে ধৈর্য ধরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
৩ এই জগতে বেঁচে থাকা সহজ নয়। ভবিষ্যতে আমাদের সমস্যাগুলো আরও বেড়ে যাবে। (মথি ২৪:২১) তাই, আমাদের আরও বেশি ধৈর্য ধরতে হবে। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরার দ্বারা তোমাদের জীবন রক্ষা করবে।” (লূক ২১:১৯) ধৈর্য সহকারে নিজেদের সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমরা অন্যদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।
৪. কেন যিহোবা হলেন ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ?
৪ ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ হলেন যিহোবা। কিন্তু, আমরা চিন্তা করতে পারি, যিহোবার তো ধৈর্য ধরার প্রয়োজন নেই! একটু ভেবে দেখুন, যিহোবা চাইলে যেকোনো সময় এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন। কিন্তু, তিনি তা করছেন না। কারণ যিহোবা একটা দিন নির্ধারণ করে রেখেছেন, যখন তিনি শয়তানের জগৎকে ধ্বংস করে দেবেন। (রোমীয় ৯:২২) সেই দিন না আসা পর্যন্ত তিনি ধৈর্য ধরে রয়েছেন। এখন আসুন, আমরা সেই ন-টা বিষয়ের উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো যিহোবা ধৈর্য ধরে সহ্য করছেন।
যিহোবা কোন বিষয়গুলো ধৈর্য ধরে সহ্য করছেন?
৫. (ক) কীভাবে যিহোবার নামের উপর নিন্দা নিয়ে আসা হয়েছে? (খ) এটা জেনে আপনার কেমন লাগে?
৫ তাঁর নামের উপর আসা নিন্দা। যিহোবা তাঁর নামকে খুব ভালোবাসেন আর তিনি চান যেন সবাই সেই নামের সম্মান করে। (যিশা. ৪২:৮) প্রায় ৬,০০০ বছর ধরে এই নামের উপর নিন্দা নিয়ে আসা হচ্ছে। (গীত. ৭৪:১০, ১৮, ২৩) এর শুরু এদন উদ্যানে হয়েছিল। দিয়াবল অর্থাৎ ‘অপবাদক’ যিহোবার উপর এই অভিযোগ নিয়ে এসেছিল যে, তিনি আদম ও হবাকে সেই সমস্ত বিষয় থেকে বঞ্চিত করেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে তারা আনন্দে থাকতে পারতেন। সেই সময় থেকে যিহোবার উপর এই অভিযোগ নিয়ে আসা হচ্ছে যে, তিনি মানবজাতিকে সমস্ত ভালো বিষয় থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। যিশু এই বিষয়ে চিন্তিত ছিলেন যে, তাঁর পিতার নামের উপর নিন্দা নিয়ে আসা হচ্ছে। তাই, তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, তোমার নাম পবিত্র হোক।”—মথি ৬:৯.
৬. যিহোবা তাঁর শাসন করার অধিকারের বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য কেন এতটা সময় দিলেন?
৬ তাঁর শাসন করার অধিকারের বিরোধিতা। একমাত্র যিহোবারই স্বর্গ ও পৃথিবীর উপর শাসন করার অধিকার রয়েছে আর তাঁর শাসন করার পদ্ধতি হল সবচেয়ে উত্তম। (প্রকা. ৪:১১) কিন্তু, দিয়াবল স্বর্গদূতদের ও মানবজাতিকে যিহোবার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করতে প্ররোচিত করেছিল আর বলেছিল, আমাদের উপর শাসন করার কোনো অধিকার যিহোবার নেই। শাসন করার অধিকারের বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য সময় লাগত। এইজন্য, যিহোবা মানবজাতিকে শাসন করতে দিয়েছেন, যাতে তারা নিজেদের চোখে দেখতে পায় যে, যিহোবার শাসন ছাড়া তারা কখনো সফল হতে পারবে না। (যির. ১০:২৩) যিহোবার ধৈর্য ধরার ফলে এটা চিরকালের জন্য প্রমাণিত হয়ে যাবে, স্বর্গ ও পৃথিবীতে শাসন করার অধিকার একমাত্র তাঁরই রয়েছে। আর তাঁর শাসনই পৃথিবীতে প্রকৃত শান্তি ও সুরক্ষা নিয়ে আসতে পারে।
৭. (ক) কারা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে? (খ) যিহোবা বিদ্রোহীদের কী করবেন?
৭ তাঁর কিছু সন্তানের করা বিদ্রোহ। যিহোবা স্বর্গদূত ও মানুষকে সিদ্ধ অবস্থায় সৃষ্টি করেছিলেন। পরে, শয়তান অর্থাৎ ‘বিপক্ষ’ যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সে আদম ও হবাকেও যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করে। কিছু স্বর্গদূত ও মানুষ শয়তানের দলে যোগ দেয়। (যিহূদা ৬) পরে কিছু ইজরায়েলীয়, যারা যিহোবার নিজের লোক ছিল, তারা মিথ্যা উপাসনা করতে শুরু করে। (যিশা. ৬৩:৮, ১০) যিহোবার সঙ্গে কত বড়ো বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়! তা সত্ত্বেও, যিহোবা ধৈর্য ধরে ছিলেন আর আজও ধৈর্য ধরে রয়েছেন। তিনি সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন, যখন তিনি বিদ্রোহীদের চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেবেন। এরপর, যিহোবা ও তাঁর সমস্ত বিশ্বস্ত দাস আনন্দ করবেন; আর কোনো খারাপ বিষয় সহ্য করতে হবে না।
৮-৯. (ক) যিহোবার উপর কোন অভিযোগগুলো নিয়ে আসা হয়েছে? (খ) সেই অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য আপনি কী করতে পারেন?
৮ শয়তানের আনা মিথ্যা অভিযোগ। শয়তান ইয়োবের উপর অভিযোগ নিয়ে এসেছিল যে, ইয়োব স্বার্থপর কারণগুলোর জন্যই যিহোবার উপাসনা করেন। এই একই অভিযোগ সে যিহোবার বাকি উপাসকদের উপরও নিয়ে আসছে। (ইয়োব ১:৮-১১; ২:৩-৫; প্রকা. ১২:১০) কিন্তু, আমরা যদি যিহোবাকে ভালোবাসি, তা হলে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা ধৈর্য ধরব আর যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব। এভাবে, আমরা শয়তানকে মিথ্যা প্রমাণ করতে পারব। ধৈর্য ধরার মাধ্যমে আমরা আশীর্বাদ লাভ করতে পারব, ঠিক যেমনটা ইয়োব লাভ করেছিলেন।—যাকোব ৫:১১.
৯ শয়তান ধর্মীয় গুরুদের ব্যবহার করে এই মিথ্যা কথা বলে যে, ঈশ্বর খুবই নিষ্ঠুর আর মানবজাতির দুঃখকষ্টের জন্য তিনিই দায়ী। যখন ছোটো ছেলে-মেয়েরা মারা যায়, তখন তারা বলে থাকে, ঈশ্বর তাদের স্বর্গে নিয়ে গিয়েছেন কারণ স্বর্গে তাঁর আরও স্বর্গদূতের প্রয়োজন। এটা কত বড়ো এক মিথ্যা কথা! ঈশ্বর কখনোই এমনটা করতে পারেন না। তিনি আমাদের খুব ভালোবাসেন। তাই, আমরা যখন অসুস্থ হই কিংবা আমাদের কোনো প্রিয়জন মারা যায়, তখন আমরা সেটার জন্য যিহোবাকে দোষ দিই না। আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে, একদিন তিনি সমস্ত কিছু ঠিক করে দেবেন আর এই বিষয়টা আমরা সবাইকে জানিয়ে থাকি। আমরা যখন এমনটা করি, তখন যিহোবা শয়তানের টিটকারির উত্তর দেন।—হিতো. ২৭:১১.
১০. গীতসংহিতা ২২:২৩, ২৪ পদ থেকে যিহোবা সম্বন্ধে কী জানা যায়?
১০ তাঁর প্রিয় উপাসকদের কষ্টভোগ। যিহোবা হলেন একজন সমবেদনাময় ঈশ্বর। তাঁর উপাসকেরা যখন অত্যাচারের শিকার হয়, অসুস্থ হয়ে পড়ে কিংবা নিজেদের অসিদ্ধতার কারণে কষ্ট ভোগ করে, তখন যিহোবাও অনেক কষ্ট পান। (পড়ুন, গীতসংহিতা ২২:২৩, ২৪.) যিহোবা আমাদের কষ্ট বোঝেন, তিনি সেগুলো দূর করতে চান আর একদিন তিনি এমনটাই করবেন। (তুলনা করুন, যাত্রাপুস্তক ৩:৭, ৮; যিশাইয় ৬৩:৯.) খুব শীঘ্রই “তিনি [আমাদের] চোখের সমস্ত জল মুছে দেবেন এবং মৃত্যু আর থাকবে না; শোক বা আর্তনাদ বা ব্যথা আর থাকবে না।”—প্রকা. ২১:৪.
১১. যিহোবা তাঁর বন্ধুদের কোন বিষয়গুলো স্মরণ করেন?
১১ তাঁর বন্ধুদের মৃত্যুতে হারানোর কষ্ট। যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত উপাসক মারা গিয়েছে। তিনি তাদের আবারও দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন। (ইয়োব ১৪:১৫) একটু চিন্তা করুন, তাঁর বন্ধু অব্রাহামকে দেখার জন্য যিহোবা কতই-না উৎসুক হয়ে আছেন! (যাকোব ২:২৩) তিনি মোশির অভাব বোধ করেন, যার সঙ্গে তিনি “সম্মুখাসম্মুখি” বা সামনাসামনি কথা বলতেন। (যাত্রা. ৩৩:১১) তিনি দায়ূদ ও অন্যান্য গীতরচককে স্মরণ করেন, যারা তাঁর প্রশংসায় গান রচনা করতেন। (গীত. ১০৪:৩৩) যদিও সেই উপাসকেরা অনেক দিন আগে মারা গিয়েছেন, কিন্তু যিহোবা তাদের ভুলে যাননি। (যিশা. ৪৯:১৫) তিনি তাদের প্রতিটা বিষয় মনে রেখেছেন। “তারা সকলে তাঁর দৃষ্টিতে জীবিত।” (লূক ২০:৩৮) যখন নতুন জগতে যিহোবার এই বন্ধুরা ফিরে আসবে, তখন যিহোবা অনেক আনন্দিত হবেন। কারণ তারা আবারও তাঁর উপাসনা করবে এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে। আমরা যদি মৃত্যুতে কোনো প্রিয়জনকে হারিয়ে থাকি, তা হলে যিহোবার এই কথাগুলো আমাদের অনেক সান্ত্বনা জোগাতে পারে।
১২. কখন যিহোবা সবচেয়ে বেশি দুঃখ পান?
১২ দুষ্ট লোকদের অত্যাচার। যখন এদন উদ্যানে বিদ্রোহ শুরু হয়, তখন যিহোবা জানতেন যে, পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। আজ আমরা যেদিকেই তাকাই না কেন, সেদিকেই মন্দতা, অবিচার ও দৌরাত্ম্য ছেয়ে রয়েছে। যিহোবা এই সমস্ত কিছু ঘৃণা করেন। তিনি সেই লোকদের জন্য চিন্তা করেন, যারা অসহায় ও দুর্বল, যেমন বিধবা ও অনাথ। আর যখন তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়, তখন তা দেখে তিনি খুব দুঃখ পান। (সখ. ৭:৯, ১০) যিহোবা সেইসময় আরও দুঃখ পান, যখন তাঁর বিশ্বস্ত উপাসকদের উপর অত্যাচার করা হয় এবং জেলে বন্দি করা হয়। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ভালোবাসেন, যারা দুষ্ট লোকদের অত্যাচার সহ্য করে চলেছে।
১৩. (ক) আজ লোকেরা কোন ধরনের জঘন্য কাজ করে চলেছে? (খ) খুব শীঘ্রই যিহোবা কী করবেন?
১৩ মানবজাতির জঘন্য অনৈতিক কাজ। যিহোবা মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু, শয়তান তাদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করাচ্ছে। নোহের দিনে এমনটাই ঘটেছিল। যিহোবা “দেখিলেন, পৃথিবীতে মনুষ্যের দুষ্টতা বড়।” তিনি “পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্ম্মাণ প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন, ও মনঃপীড়া পাইলেন।” (আদি. ৬:৫, ৬, ১১) সেই সময় থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। আজ, বিপরীত লিঙ্গের ও সমলিঙ্গের ব্যক্তিরা সব ধরনের জঘন্য যৌন অনৈতিক কাজ করে চলেছে। (ইফি. ৪:১৮, ১৯) আর যখন কোনো খ্রিস্টান এই ধরনের কাজ করে, তখন শয়তান খুব খুশি হয়। যিহোবা এই জঘন্য কাজগুলো বেশি দিন সহ্য করবেন না। তিনি খুব শীঘ্রই সেই লোকদের ধ্বংস করে দেবেন, যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করে চলেছে।
১৪. মানুষের কারণে পৃথিবীর কী অবস্থা হয়েছে?
১৪ পৃথিবীর ধ্বংস। যিহোবা এই পৃথিবীর যত্ন নেওয়ার কাজ মানুষকে দিয়েছিলেন। কিন্তু, মানুষ একে অন্যের উপর “অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব” করার ফলে দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, এটা পৃথিবী ও পশুপাখির উপর অনেক ক্ষতি নিয়ে এসেছে। (উপ. ৮:৯; আদি. ১:২৮) কিছু বৈজ্ঞানিক মনে করে, মানুষ যদি নিজেদের আচরণ পরিবর্তন না করে, তা হলে কিছু বছরের মধ্যে ১০ লক্ষ প্রজাতির পশুপাখি লুপ্ত হয়ে যাবে। সেই জন্যই লোকেরা আজ প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে অনেক চিন্তিত। কিন্তু, আনন্দের বিষয় হল যিহোবা খুব শীঘ্রই, “যারা পৃথিবীকে ধ্বংস করছে, তাদের ধ্বংস” করবেন আর এই পৃথিবীকে আবারও পরমদেশে পরিণত করবেন।—প্রকা. ১১:১৮; যিশা. ৩৫:১.
যিহোবার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৫-১৬. যিহোবার প্রেম থেকে আমরা কী শিখতে পারি? একটা উদাহরণ দিন।
১৫ চিন্তা করে দেখুন, এত বছর ধরে যিহোবা কত কিছু সহ্য করে আসছেন! (“যিহোবা কোন বিষয়গুলো ধৈর্য ধরে সহ্য করছেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) তিনি চাইলে যেকোনো সময়ে শয়তানের জগৎকে ধ্বংস করে দিতে পারেন, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরে রয়েছেন। তাঁর ধৈর্য ধরার ফলে আমরা সবাই অনেক উপকৃত হয়েছি। এই বিষয়টা বোঝার জন্য একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। এক দম্পতিকে বলা হয়, তাদের সন্তান গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে জন্মাবে আর বেশি দিন বাঁচবে না। তারপরও, এই দম্পতি সন্তানকে পৃথিবীতে আনার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও তাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাকে বড়ো করে তোলার ক্ষেত্রে তাদের যথাসাধ্য করেন কারণ তারা তাকে অনেক ভালোবাসেন।
১৬ আদম ও হবার সমস্ত অসিদ্ধ সন্তান সেই অসুস্থ সন্তানের মতো। তা সত্ত্বেও, যিহোবা তাদের ভালোবাসেন এবং তাদের জন্য চিন্তা করেন। (১ যোহন ৪:১৯) যিহোবা সেই উদাহরণে বলা বাবা-মায়ের মতো নন, যারা নিজেদের সন্তানের কষ্ট দূর করতে পারেন না। যিহোবা তাঁর সন্তানদের কষ্ট অবশ্যই দূর করতে পারেন আর তিনি তা করার জন্য একটা দিন নির্ধারণ করে রেখেছেন। (মথি ২৪:৩৬) যিহোবার প্রেম থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমাদের ততদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধরে সহ্য করতে হবে, যতদিন না যিহোবা সমস্ত দুঃখকষ্ট শেষ করছেন।
১৭. (ক) ইব্রীয় ১২:২, ৩ পদে যিশু সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে? (খ) এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৭ ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে যিহোবা সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। যিহোবার মতো যিশুও ধৈর্য ধরেছিলেন। তিনি যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন লোকদের নিন্দা ও অপমান সহ্য করেছিলেন আর আমাদের জন্য যাতনাদণ্ডে মারা গিয়েছিলেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ১২:২, ৩.) যিহোবা যেভাবে ধৈর্য ধরছেন, সেটা দেখে যিশু সমস্ত কিছু সহ্য করার শক্তি পেয়েছিলেন। আজকে আমরাও তা থেকে শক্তি পেতে পারি।
১৮. দ্বিতীয় পিতর ৩:৯ পদ অনুযায়ী যিহোবার ধৈর্য ধরার ফলে কী সম্ভব হয়েছে?
১৮ দ্বিতীয় পিতর ৩:৯ পদ পড়ুন। যিহোবা জানেন, এই দুষ্ট জগৎকে কখন ধ্বংস করতে হবে। তিনি ধৈর্য ধরে রয়েছেন বলে আজ এক বিরাট জনতা তাঁর উপাসনা করতে পারছে। তারা আনন্দিত যে, যিহোবা এই জগৎকে ধ্বংস করার জন্য তাড়াহুড়ো করেননি। তাই, তারা এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে পেরেছে, তাঁর সম্বন্ধে শিখতে পেরেছে এবং তাঁর দাস হয়ে উঠতে পেরেছে। যিহোবা যখন এই দুষ্ট জগৎকে ধ্বংস করবেন, তখন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, যারা ধৈর্য ধরেছিল, তারা রক্ষা পাবে আর এটা প্রমাণ হয়ে যাবে যে, যিহোবার ধৈর্য ধরার সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক ছিল।
১৯. (ক) আমরা কী করার জন্য শক্তি পাই? (খ) আমরা পুরস্কার হিসেবে কী পাব?
১৯ শয়তান এই পৃথিবীতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি করেছে আর সে যিহোবাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। তা সত্ত্বেও, সে যিহোবার আনন্দকে কেড়ে নিতে পারেনি। (১ তীম. ১:১১) আমরা যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হই, তখন আমাদেরও যিহোবার মতো আনন্দ সহকারে তা সহ্য করতে হবে। আমরা সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছি, যখন যিহোবা তাঁর নাম পবিত্র করবেন, তাঁর শাসন করার পদ্ধতি যে সঠিক, তা প্রমাণ করবেন, সমস্ত দুঃখকষ্ট ও সমস্যা চিরকালের জন্য শেষ করে দেবেন। আমরা যখন এটা মনে রাখি যে, যিহোবা সমস্ত কিছু ধৈর্য ধরে সহ্য করছেন, তখন আমরাও সমস্ত কিছু ধৈর্য ধরে সহ্য করার শক্তি পাই। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমাদের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টা সত্য বলে প্রমাণিত হবে: “সুখী সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে, কারণ সে যখন ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করবে, তখন সে জীবনমুকুট পাবে। এই জীবনমুকুট যিহোবা সেই ব্যক্তিদেরই দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন, যারা তাঁকে সবসময় ভালোবাসে।”—যাকোব ১:১২.
গান ৫৫ অবশেষে—অনন্ত এই জীবন!
a আমরা সবাই বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের ধৈর্য সহকারে তা সহ্য করতে হবে। আমাদের মতো যিহোবাও বিভিন্ন বিষয় সহ্য করছেন। এই প্রবন্ধে আমরা এইরকম ন-টা বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করব। এ ছাড়া, আমরা এও দেখব যে, যিহোবার ধৈর্য ধরার ফলে কোন উপকার লাভ করা গিয়েছে আর তাঁর কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।