অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৪
বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে শিখুন
“বুদ্ধিমানেরাই বুঝিবে।”—দানি. ১২:১০.
গান ৯৮ শাস্ত্র—ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত
সারাংশa
১. কী জানলে আপনার বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করতে ভালো লাগবে?
“আমার বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করতে খুব ভালো লাগে।” বেন নামে একজন ভাই এই কথা বলেছিল। আপনারও কি বেনের মতো ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করতে ভালো লাগে? না কি আপনার এটাকে খুব কঠিন বলে মনে হয়? কিছু লোক ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করাকে খুবই বোরিং বলে মনে করে। কিন্তু আপনি যখন জানবেন, কেন যিহোবা তাঁর বাক্যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো লিখিয়েছেন, তখন আপনার হয়তো অধ্যয়ন করতে ভালো লাগবে।
২. এই প্রবন্ধে আমরা কী জানতে পারব?
২ এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমাদের বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত আর কীভাবে আমরা তা করতে পারি। এরপর, আমরা দানিয়েলের বইয়ে লেখা দুটো ভবিষ্যদ্বাণীর উপর মনোযোগ দেব আর জানতে পারব, সেগুলো বোঝার মাধ্যমে আজ আমাদের কোন উপকার হতে পারে।
কেন বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করবেন?
৩. বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বোঝার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
৩ আমরা যদি বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বুঝতে চাই, তা হলে আমাদের কারো সাহায্য নিতে হবে। একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। ধরুন, আপনি এমন একটা জায়গায় ঘুরতে গিয়েছেন, যেখানকার বিষয়ে আপনি খুব-একটা জানেন না। কিন্তু, আপনার একজন বন্ধু আপনার সঙ্গে এসেছেন। আপনার বন্ধু সেই জায়গার বিষয়ে খুব ভালোভাবে জানেন। তিনি জানেন, আপনি ঠিক কোন জায়গায় রয়েছেন এবং কোন রাস্তা কোথায় নিয়ে যাবে। আপনি কতই-না খুশি হবেন যে, আপনার বন্ধু আপনার সঙ্গে এসেছেন! যিহোবাও সেই বন্ধুর মতো। তিনি জানেন, আমরা কোন সময়ে বাস করছি আর আমরা যে-রাস্তায় চলছি, সেটা কোথায় নিয়ে যাবে অর্থাৎ আমাদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। তাই, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী বোঝার জন্য আমাদের নম্র হয়ে যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে।—দানি. ২:২৮; ২ পিতর ১:১৯, ২০.
৪. কেন যিহোবা তাঁর বাক্যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো লিখিয়েছেন? (যিরমিয় ২৯:১১) (ছবিও দেখুন।)
৪ সমস্ত বাবা-মা চায়, তাদের সন্তানেরা যেন আনন্দে থাকে এবং তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হয়। যিহোবাও তাঁর সমস্ত সন্তানের জন্য ঠিক এটাই চান। (পড়ুন, যিরমিয় ২৯:১১.) বাবা-মায়েরা এটা জানে না যে, পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তানদের জীবন কেমন হবে। কিন্তু, যিহোবা জানেন। তিনি সঠিকভাবে বলতে পারেন, ভবিষ্যতে কী হবে। তাই, তিনি তাঁর বাক্যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো লিখিয়েছেন, যেগুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা আগে থেকে জানতে পারি, পরবর্তী সময়ে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। (যিশা. ৪৬:১০) এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবার কাছ থেকে পাওয়া প্রেমময় উপহারের মতো! কিন্তু, আমরা কেন নিশ্চিত থাকতে পারি, বাইবেলে যা লেখা আছে, সেগুলো সত্যিই পরিপূর্ণ হবে?
৫. অল্পবয়সি ভাই-বোনেরা ম্যাক্সের অভিজ্ঞতা থেকে কী শিখতে পারে?
৫ স্কুলে প্রায়ই আমাদের সন্তানদের এমন লোকদের মুখোমুখি হতে হয়, যারা বাইবেলের উপর বিশ্বাস করে না কিংবা যাদের এটা যায়-আসে না যে, বাইবেলে কী লেখা রয়েছে। তারা যে-কথাগুলো বলে কিংবা যে-কাজগুলো করে, সেগুলো হয়তো একজন সন্তানের মনে সন্দেহের বীজ বুনে দিতে পারে। ম্যাক্স নামে একজন ভাইয়ের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। তিনি বলেন: “আমি যখন স্কুলে পড়াশোনা করতাম, তখন আমার সন্দেহ হতে শুরু হয় যে, বাবা-মা আমাকে যে-ধর্মের বিষয়ে শেখাচ্ছেন, তা সত্য কি না আর বাইবেল সত্যিই ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে কি না।” সেইসময় তার বাবা-মা কী করেছিলেন? ম্যাক্স বলেন: “তারা আমার এই কথা শুনে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তারপরও আমার উপর রেগে যাননি।” ম্যাক্সের বাবা-মা বাইবেল থেকে তার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিলেন এবং ম্যাক্সও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন: “আমি বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করি আর সেখান থেকে যা-কিছু শিখেছিলাম, সেগুলো নিয়ে মণ্ডলীর অন্যান্য অল্পবয়সিদের সঙ্গেও কথা বলি।” এতে কোন উপকার এসেছিল? ম্যাক্স বলেন: “এরপর আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম, বাইবেল ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছে।”
৬. আপনার মনে যদি সন্দেহ আসে, তা হলে আপনার কী করা উচিত আর কেন?
৬ ম্যাক্সের মতো আপনারও যদি সন্দেহ হয় যে, বাইবেলে লেখা কথাগুলো সত্য কি না, তা হলে খারাপ বোধ করবেন না। তবে, বিষয়টাকে হালকাভাবেও নেবেন না। সন্দেহ হল মরচের মতো। যদি মরচে তোলা না হয়, তা হলে সেটা ধীরে ধীরে আপনার কোনো মূল্যবান জিনিসকে নষ্ট করে দিতে পারে। একইভাবে, আপনি যদি আপনার মন থেকে সন্দেহ বের করে না দেন, তা হলে আপনার বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘বাইবেলে ভবিষ্যতের বিষয়ে যা লেখা রয়েছে, আমি কি সেগুলো পুরোপুরি বিশ্বাস করি?’ আপনার মনে যদি একটুও সন্দেহ থাকে, তা হলে বাইবেলে লেখা সেই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করুন, যেগুলো পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন?
কীভাবে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করবেন?
৭. ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে দানিয়েল কোন উত্তম উদাহরণ রেখেছেন? (দানিয়েল ১২:১০) (ছবিও দেখুন।)
৭ ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করার ক্ষেত্রে দানিয়েল এক উত্তম উদাহরণ রেখেছেন। তিনি সঠিক মনোভাব নিয়ে অর্থাৎ সত্য জানার জন্য ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন। দানিয়েল নম্রও ছিলেন। দানিয়েল জানতেন, তিনি যদি যিহোবার নিকটবর্তী থাকেন এবং তাঁর উচ্চ নৈতিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করেন, তা হলে যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বোঝার ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করবেন। (দানি. ২:২৭, ২৮; পড়ুন, দানিয়েল ১২:১০.) তাই, তিনি সবসময় যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য চাইতেন এবং তাঁর উপর নির্ভর করতেন। (দানি. ২:১৮) এ ছাড়া, দানিয়েল ভালোভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন। তার কাছে শাস্ত্রের যে-অংশ ছিল, তা তিনি পড়েছিলেন এবং তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। (যির. ২৫:১১, ১২; দানি. ৯:২) আপনি তার কাছ থেকে কী শিখতে পারেন?
৮. (ক) কেন কিছু লোক বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করে? (খ) কিন্তু, আমাদের কোন মনোভাব নিয়ে সেগুলো অধ্যয়ন করা উচিত?
৮ চিন্তা করুন, আপনি কোন মনোভাব নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। আপনি কি এই কারণে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করেন, যেন আপনি বাইবেলের সত্যগুলো জানতে পারেন? যদি এমনটা হয়, তা হলে যিহোবা আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন। (যোহন ৪:২৩, ২৪; ১৪:১৬, ১৭) তবে, কিছু লোক অন্য কোনো কারণে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করে। তারা বাইবেলে দেওয়া মান অনুযায়ী নয় বরং নিজেদের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করতে চায়। তাই, তারা হয়তো এমন কিছু খোঁজার জন্য অধ্যয়ন করে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে পারবে যে, বাইবেল ঈশ্বরের কাছ থেকে আসেনি। কিন্তু, আমাদের সেই লোকদের মতো হওয়া উচিত নয় বরং সঠিক মনোভাব নিয়ে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর অধ্যয়ন করা উচিত। এ ছাড়া, ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বোঝার জন্য আরেকটা বিষয় থাকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৯. বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বোঝার জন্য কোন গুণ থাকা গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা করুন।
৯ নম্র হোন। যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি নম্র লোকদের সাহায্য করবেন। (যাকোব ৪:৬) তাই, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বোঝার জন্য আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। এ ছাড়া, আমাদের এটা স্বীকার করা উচিত যে, আমরা একা একা এগুলোর মানে বুঝতে পারব না, আমাদের বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের সাহায্য নিতে হবে। আজ যিহোবা এই দাসের মাধ্যমে আমাদের সঠিক সময়ে খাবার দিচ্ছেন। (লূক ১২:৪২) যিহোবা বিশৃঙ্খলার ঈশ্বর নন। তাই এটাই যুক্তিযুক্ত যে, তিনি শুধুমাত্র একটা মাধ্যম দিয়ে তাঁর বাক্যে লেখা সত্যগুলো বোঝাবেন, বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে নয়।—১ করি. ১৪:৩৩; ইফি. ৪:৪-৬.
১০. আপনি বোন এস্টারের কাছ থেকে কী শিখেছেন?
১০ ভালোভাবে অধ্যয়ন করুন। চিন্তা করুন, আপনি কোন ভবিষ্যদ্বাণীকে বেশ আগ্রহজনক বলে মনে করেন। তারপর, সবচেয়ে প্রথমে সেটা নিয়ে গবেষণা করুন। এস্টার নামে একজন বোন ঠিক এমনটাই করেছিল। তার মশীহের আসার বিষয়ে করা ভবিষ্যদ্বাণীর প্রতি আগ্রহ ছিল। সে বলে, “আমার বয়স যখন ১৫ বছর ছিল, তখন আমি এই বিষয়ে প্রমাণ খুঁজতে শুরু করি যে, এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো যিশুর পৃথিবীতে আসার অনেক আগে লেখা হয়েছিল।” সে ডেড সি স্ক্রোলের বিষয়ে পড়েছিল, যেটার মাধ্যমে তার সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছিল। বোন বলে, “সেগুলোর মধ্যে কিছু স্ক্রোল যিশুর পৃথিবীতে আসার অনেক আগে লেখা হয়েছিল। তাই, স্বাভাবিকভাবেই সেগুলোতে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীগুলোও ঈশ্বরই লিখিয়েছিলেন।” বোন এও বলে, “আমার কিছু বিষয় বোঝার জন্য অনেক বার সেগুলো পড়তে হয়েছিল।” তবে, সে খুব খুশি যে, তার পরিশ্রম ব্যর্থ হয়নি। বাইবেলের অনেক ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে ভালোভাবে অধ্যয়ন করার পর বোন বলে: “এখন আমি স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছি, বাইবেলে লেখা কথাগুলো একেবারে সত্য!”
১১. আমরা যদি নিজেদের এই নিশ্চয়তাকে বৃদ্ধি করি যে, বাইবেলে লেখা কথাগুলো সত্য, তা হলে এতে আমাদের কোন উপকার হবে?
১১ আমরা যখন বুঝতে পারি, ঈশ্বরের বাক্যে লেখা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হয়েছে, তখন যিহোবার উপর আমাদের আস্থা আরও দৃঢ় হয়ে যায় আর আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে, তিনিই আমাদের সঠিক পথ দেখাচ্ছেন। এ ছাড়া, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো থেকে আমরা এক উত্তম ভবিষ্যতের বিষয়ে আশা লাভ করতে পারি। তাই, আমরা যখন সেগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন আমরা সমস্যার মধ্যেও আনন্দে থাকতে পারি। তাই আসুন, দানিয়েলের মাধ্যমে লেখা এমন দুটো ভবিষ্যদ্বাণীর উপর মনোযোগ দিই, যেগুলো আজ পরিপূর্ণ হচ্ছে। সেগুলো ভালোভাবে বোঝার মাধ্যমে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব।
কেন লোহা এবং মাটির পায়ের বিষয়ে জানা গুরুত্বপূর্ণ?
১২. ‘মৃত্তিকা ও লৌহ মিশ্রিত’ পা কাকে চিত্রিত করে? (দানিয়েল ২:৪১-৪৩)
১২ দানিয়েল ২:৪১-৪৩ পদ পড়ুন। একবার দানিয়েল রাজা নবূখদ্নিৎসরের একটা স্বপ্নের অর্থ বলেছিলেন, যেখানে রাজা একটা বড়ো মূর্তি দেখেছিলেন। সেই মূর্তির পা ‘মৃত্তিকা ও লৌহ মিশ্রিত’ ছিল। যখন আমরা এই ভবিষ্যদ্বাণীকে দানিয়েল ও প্রকাশিত বাক্য বইয়ে লেখা অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে তুলনা করি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে, মূর্তির পা অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে চিত্রিত করে, যেটা বর্তমানে এই পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার। এই বিশ্বশক্তির বিষয়ে দানিয়েল বলেছিলেন, এই ‘রাজ্য একাংশ দৃঢ় ও একাংশ ভঙ্গুর হইবে।’ কেন এটা ভঙ্গুর বা দুর্বল হবে? কারণ সাধারণ মানুষ, যাদের মাটি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, তারা এটার লোহার মতো শক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাই, এই বিশ্বশক্তি যা করতে চায়, তা করতে পারে না।b
১৩. এই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলো সম্বন্ধে শিখতে পারি?
১৩ মূর্তির বিষয়ে দানিয়েল যা বলেছিলেন, বিশেষ করে সেটার পায়ের বিষয়ে যা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সত্য সম্বন্ধে শিখি। প্রথমত, অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি বিভিন্ন উপায়ে দেখিয়েছে যে, সেটা খুবই দৃঢ় বা শক্তিশালী। যেমন, ব্রিটেন ও আমেরিকা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক বড়ো ভূমিকা পালন করেছিল এবং দু-বার তাদের পক্ষ জয়ী হয়েছিল। তবে, এই বিশ্বশক্তি দুর্বলও হয়ে গিয়েছে আর পরবর্তী সময়ে আরও দুর্বল হয়ে যাবে। কেন? কারণ এর নাগরিকেরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। দ্বিতীয়ত, এই বিশ্বশক্তি শেষ বিশ্বশক্তি হবে। এরপর, ঈশ্বরের রাজ্য মানুষের সমস্ত সরকারকে চিরকালের জন্য ধ্বংস করে দেবে। যদিও অন্যান্য জাতি অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তবে এরা কখনোই সেটার জায়গা নিতে পারবে না। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ একটা পাথর, যেটা ঈশ্বরের রাজ্যকে চিত্রিত করে, সেটা মূর্তির পায়ে আঘাত করবে এবং সেটাকে ভেঙে চুরমার করে দেবে অর্থাৎ অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তিকে ধ্বংস করে দেবে।—দানি. ২:৩৪, ৩৫, ৪৪, ৪৫.
১৪. লোহা ও মাটির পায়ের বিষয়ে করা ভবিষ্যদ্বাণীর অর্থ বোঝার ফলে আমরা কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব?
১৪ আপনি কি বিশ্বাস করেন, দানিয়েল লোহা ও মাটির পায়ের বিষয়ে যে-ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেটা সত্য? যদি করে থাকেন, তা হলে এটা আপনার জীবনযাপন করার ধরন থেকে বোঝা যাবে। আপনি এই জগতে টাকাপয়সা এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের পিছনে দৌড়ানোর চেষ্টা করবেন না কারণ আপনি জানেন, খুব শীঘ্রই এই জগৎ চিরকালের জন্য শেষ হয়ে যাবে। (লূক ১২:১৬-২১; ১ যোহন ২:১৫-১৭) এই ভবিষ্যদ্বাণী বোঝার ফলে আপনি এও বুঝতে পারবেন, আজ প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। (মথি ৬:৩৩; ২৮:১৮-২০) তাই, এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করার পর আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘আমার সিদ্ধান্ত থেকে কী বোঝা যায়? আমি কি বিশ্বাস করি, ঈশ্বরের রাজ্য খুব শীঘ্রই মানুষের সমস্ত সরকারকে শেষ করে দেবে?’
কেন “উত্তর দেশের রাজা” এবং ‘দক্ষিণ দেশের রাজার’ বিষয়ে জানা গুরুত্বপূর্ণ?
১৫. বর্তমানে “উত্তর দেশের রাজা” এবং “দক্ষিণ দেশের রাজা” কারা? (দানিয়েল ১১:৪০)
১৫ দানিয়েল ১১:৪০ পদ পড়ুন। দানিয়েল ১১ অধ্যায়ে দু-জন রাজা অর্থাৎ সরকারের বিষয়ে বলা হয়েছে, যারা পুরো জগতের উপর শাসন করার জন্য একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে বাইবেলে লেখা অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণীর তুলনা করলে আমরা বুঝতে পারি, “উত্তর দেশের রাজা” হল রাশিয়া এবং এর সহযোগীরা আর “দক্ষিণ দেশের রাজা” হল অ্যাংলো-আমেরিকা বিশ্বশক্তি।c
১৬. ঈশ্বরের যে-লোকেরা ‘উত্তর দেশের রাজার’ এলাকায় থাকে, তাদের কোন সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে?
১৬ ঈশ্বরের যে-লোকেরা ‘উত্তর দেশের রাজার’ এলাকায় থাকে, তাদের উপর এই রাজা সরাসরি তাড়না নিয়ে আসছে। যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার কারণে সেখানে কিছু সাক্ষিকে মারধর করা হয় এবং কাউকে কাউকে জেলেও বন্দি করে রাখা হয়। তবে, ‘উত্তর দেশের রাজার’ এই নিষ্ঠুর আচরণের কারণে আমাদের ভাই-বোনেরা ভয় পেয়ে যায়নি বরং তাদের বিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে। কেন? কারণ তারা জানে, ঈশ্বরের লোকদের উপর যে-তাড়না নিয়ে আসা হচ্ছে, সেটার মাধ্যমে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে।d (দানি. ১১:৪১) এই বিষয়গুলো জানার ফলে আমাদের আশা আরও দৃঢ় হতে পারে এবং অনুগত থাকার ব্যাপারে আমাদের সংকল্প মজবুত হতে পারে।
১৭. ঈশ্বরের যে-লোকেরা ‘দক্ষিণ দেশের রাজার’ এলাকায় থাকে, তারা কোন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে?
১৭ অতীতে ‘দক্ষিণ দেশের রাজাও’ যিহোবার লোকদের উপরে সরাসরি তাড়না নিয়ে এসেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নিরপেক্ষ থাকার কারণে অনেক খ্রিস্টানকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। আর এই কারণেই সাক্ষিদের কিছু সন্তানকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘দক্ষিণ দেশের রাজার’ এলাকায় থাকা যিহোবার সাক্ষিদের আনুগত্য অন্যভাবে পরীক্ষিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, নির্বাচনের সময়ে যখন রাজনৈতিক পার্টিগুলো তাদের প্রচার অভিযান চালায়, তখন কোনো খ্রিস্টান হয়তো কোনো রাজনৈতিক পার্টি বা প্রার্থীকে অন্যদের চেয়ে ভালো বলে মনে করতে পারে। সেই খ্রিস্টান হয়তো কাউকে ভোট দেন না, কিন্তু তিনি মনে মনেই চিন্তা করেন, ওই পার্টি জিতে গেলে খুব ভালো হবে। তাই, পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষ থাকার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা মনে মনেও কারো পক্ষ না নিই!—যোহন ১৫:১৮, ১৯; ১৮:৩৬.
১৮. “উত্তর দেশের রাজা” এবং ‘দক্ষিণ দেশের রাজার’ মধ্যে শত্রুতা দেখে আমরা কীভাবে প্রভাবিত হই? (ছবিও দেখুন।)
১৮ অনেক লোক এটা বিশ্বাস করে না, বাইবেলে লেখা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। তাই তারা যখন দেখে, “দক্ষিণ দেশের রাজা” কীভাবে ‘উত্তর দেশের রাজাকে ঢুসাচ্ছে,’ তখন তারা হয়তো এই ভেবে খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে যে, কী জানি কী হবে! (দানি. ১১:৪০) দুই রাজার কাছে এত পরিমাণে পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যে, যদি তারা সেগুলো ব্যবহার করে, তা হলে এই পৃথিবীতে একটা প্রাণীও বেঁচে থাকবে না। কিন্তু আমরা জানি, যিহোবা কখনোই এমনটা হতে দেবেন না। (যিশা. ৪৫:১৮) তাই, “উত্তর দেশের রাজা” এবং ‘দক্ষিণ দেশের রাজার’ মধ্যে শত্রুতা দেখে আমরা ঘাবড়ে যাই না। এর ফলে, আমরা আরও নিশ্চিত হয়ে যাই, এই দুষ্ট জগতের শেষ খুবই কাছে।
ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করে চলুন
১৯. বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সম্বন্ধে আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখা উচিত?
১৯ আমরা এটা জানি না, বাইবেলের কিছু ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পরিপূর্ণ হবে। ভাববাদী দানিয়েলও তার লেখা সমস্ত কথার অর্থ জানতেন না। (দানি. ১২:৮, ৯) তবে, আমরা যদি কোনো ভবিষ্যদ্বাণীর অর্থ পুরোপুরিভাবে বুঝতে না পারি, তা হলে এর মানে এই নয় যে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী কখনো পরিপূর্ণ হবে না। আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের জন্য যেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা যিহোবা একেবারে সঠিক সময়ে আমাদের জানাবেন, ঠিক যেমনটা তিনি অতীতে করেছিলেন।—আমোষ ৩:৭.
২০. (ক) খুব শীঘ্রই আমরা বাইবেলের কোন রোমাঞ্চকর ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখব? (খ) আমাদের কী করে চলা উচিত?
২০ জগতের সরকারগুলো “শান্তি ও নিরাপত্তা” ঘোষণা করবে। (১ থিষল. ৫:৩) এরপর, সরকারগুলো মিথ্যা ধর্মগুলোর উপর আক্রমণ করবে এবং সেগুলোকে ধ্বংস করে দেবে। (প্রকা. ১৭:১৬, ১৭) তারপর, সেই সরকারগুলো ঈশ্বরের লোকদের উপর আক্রমণ করবে। (যিহি. ৩৮:১৮, ১৯) তখন আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। (প্রকা. ১৬:১৪, ১৬) আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি, এই ঘটনাগুলো খুব শীঘ্রই ঘটবে। এই ঘটনাগুলোর বিষয়ে ঈশ্বর যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলে যা লিখিয়েছেন, সেগুলোর জন্য আমরা কি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ নই? তাই আসুন, যতক্ষণ পর্যন্ত না এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে, আমরা যেন এগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করে চলি আর অন্যদেরও তা করতে সাহায্য করি।
গান ৯৫ উজ্জ্বল ধীরে ধীরে হয় আলো
a জগতের অবস্থা দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হোক না কেন, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে। যখন আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করি, তখন আমাদের এই নিশ্চয়তা আরও বেড়ে যায়। এই প্রবন্ধে আমরা জানতে পারব, কেন আমাদের বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত। এরপর, আমরা দানিয়েলের মাধ্যমে লেখা দুটো ভবিষ্যদ্বাণীর উপর মনোযোগ দেব আর দেখব, সেগুলোর অর্থ বোঝার ফলে আমাদের কোন উপকার হতে পারে।
b ২০১২ সালের ১৫ জুন প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “‘যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে,’ তা যিহোবা প্রকাশ করেন” শিরোনামের প্রবন্ধের ৭-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন।
c ২০২০ সালের মে মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “বর্তমানে ‘উত্তর দেশের রাজা’ কে?” শিরোনামের প্রবন্ধের ৩-৪ অনুচ্ছেদ দেখুন।
d ২০২০ সালের মে মাসের প্রহরীদুর্গ পত্রিকায় দেওয়া “বর্তমানে ‘উত্তর দেশের রাজা’ কে?” শিরোনামের প্রবন্ধের ৭-৯ অনুচ্ছেদ দেখুন।