অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৪
গান ১০৬ প্রেম দেখাতে শেখা
পাপ করেছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি প্রাচীনেরা কীভাবে প্রেম ও করুণা দেখাতে পারে?
“ঈশ্বর সদয় বলে তোমাকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করতে চান।”—রোমীয় ২:৪.
আমরা কী শিখব?
কীভাবে প্রাচীনেরা মণ্ডলীতে সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে, যারা গুরুতর পাপ করেছে?
১. কোনো ব্যক্তি যখন গুরুতর পাপ করেন, তখন কী হতে পারে?
আগের প্রবন্ধে আমরা দেখেছি, করিন্থীয় মণ্ডলীতে যখন একজন ব্যক্তি গুরুতর পাপ করেছিলেন, তখন প্রেরিত পৌল মণ্ডলীকে কী করতে বলেছিলেন। সেই ব্যক্তি অনুতপ্ত হননি আর তাই তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এই প্রবন্ধের মূল শাস্ত্রপদে যেমন বলা হয়েছে, এমন একজন ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করা যেতে পারে, যিনি গুরুতর পাপ করেছেন। (রোমীয় ২:৪) প্রাচীনেরা কীভাবে এইরকম ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে?
২-৩. আমরা যখন জানতে পারি, আমাদের কোনো ভাই বা বোন গুরুতর পাপ করেছেন, তখন আমাদের কী করা উচিত এবং কেন?
২ কোনো ব্যক্তিকে সাহায্য করার আগে প্রাচীনদের জানতে হবে, তিনি কী করেছেন। আমরা যখন জানতে পারি, আমাদের কোনো ভাই বা বোন এমন কোনো গুরুতর পাপ করেছেন, যেটার কারণে তাকে মণ্ডলী থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে, তখন আমাদের কী করা উচিত? প্রথমে, আমরা সেই ব্যক্তিকে উৎসাহিত করতে পারি, যেন তিনি প্রাচীনদের কাছে গিয়ে সাহায্য চান।—যিশা. ১:১৮; প্রেরিত ২০:২৮; ১ পিতর ৫:২.
৩ কিন্তু, সেই ব্যক্তি যদি প্রাচীনদের কাছে যেতে না চান, তা হলে আমরা কী করতে পারি? তখন আমাদের প্রাচীনদের কাছে গিয়ে বিষয়টা জানাতে হবে, যাতে সেই ব্যক্তি প্রয়োজনীয় সাহায্য লাভ করতে পারেন। আসলে, তা করার মাধ্যমে আমরা সেই ভাই বা বোনের প্রতি প্রেম দেখাই কারণ আমরা তাকে হারাতে চাই না। সেই ব্যক্তি যদি পাপ করেই চলেন, তা হলে তিনি যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও নষ্ট করে ফেলবেন। এ ছাড়াও, তিনি হয়তো মণ্ডলীর সুনাম নষ্ট করতে পারেন। যেহেতু আমরা যিহোবা এবং সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসি, তাই আমরা নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে সাহসের সঙ্গে প্রাচীনদের এই বিষয়টা জানাতে পারি।—গীত. ২৭:১৪.
গুরুতর পাপ করেছে এমন ব্যক্তিদের প্রাচীনেরা কীভাবে সাহায্য করে থাকে?
৪. যিনি গুরুতর পাপ করেছেন, তার সঙ্গে কথা বলার সময় প্রাচীনদের লক্ষ্য কী হবে?
৪ মণ্ডলীতে কেউ যখন গুরুতর পাপ করেন, তখন প্রাচীনগোষ্ঠী তিন জন যোগ্য প্রাচীনকে নিযুক্ত করে, যাতে তারা একটা কমিটিa হিসেবে কাজ করতে পারে। এই ভাইদের বিনয়ী ও নম্র হতে হবে। তারা যখন সেই ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করবে, তখন তাদের এটা মনে রাখতে হবে যে, তারা তাকে পরিবর্তন হওয়ার জন্য জোর করতে পারে না। (দ্বিতীয়. ৩০:১৯) প্রাচীনদের এও মনে রাখতে হবে, সমস্ত পাপী রাজা দায়ূদের মতো অনুতপ্ত হবে না। (২ শমূ. ১২:১৩) কেউ কেউ হয়তো জেনে-শুনে যিহোবার পরামর্শে সাড়া দেবে না। (আদি. ৪:৬-৮) যেটাই হোক-না-কেন, প্রাচীনদের লক্ষ্য হল, সেই ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করা। প্রাচীনেরা যখন সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবে, তখন তারা বাইবেলের কোন নীতিগুলো মনে রাখবে?
৫. প্রাচীনদের সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় কী মনে রাখতে হবে, যিনি পাপ করেছেন? (২ তীমথিয় ২:২৪-২৬) (ছবিও দেখুন।)
৫ প্রাচীনেরা সেই ব্যক্তিকে মূল্যবান মেষ হিসেবে দেখে, যিনি পাপ করেছেন। (লূক ১৫:৪, ৬) তাই, তারা যখন সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবে, তখন তারা রূঢ় মনোভাব দেখাবে না অথবা নির্দয় আচরণ করবে না; কিংবা তারা এইরকম মনে করবে না যে, তাদের কেবল তাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে হবে এবং আসল বিষয়টা কী, তা জানতে হবে। এর পরিবর্তে, তারা ২ তীমথিয় ২:২৪-২৬ পদে বলা গুণাবলি দেখাবে। (পড়ুন।) প্রাচীনেরা মৃদু, কোমল ও সদয় মনোভাব দেখাবে, কারণ তারা তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করার জন্য তাকে সাহায্য করতে চায়।
৬. প্রাচীনেরা সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার আগে কীভাবে নিজেদের হৃদয় প্রস্তুত করবে, যিনি পাপ করেছেন? (রোমীয় ২:৪)
৬ কথা বলার আগে প্রাচীনেরা নিজেদের হৃদয় প্রস্তুত করে। যিনি পাপ করেছেন, তার সঙ্গে আচরণ করার সময় প্রাচীনেরা যিহোবাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। তারা পৌলের এই কথাগুলো মনে রাখে: “ঈশ্বর সদয় বলে তোমাকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করতে চান।” (পড়ুন, রোমীয় ২:৪.) প্রাচীনদের মনে রাখতে হবে, তারা খ্রিস্টের নির্দেশনার অধীনে থেকে মেষপালক হিসেবে কাজ করছে। (যিশা. ১১:৩, ৪; মথি ১৮:১৮-২০) সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার আগে প্রাচীনদের কমিটি তাদের লক্ষ্য নিয়ে প্রার্থনা সহকারে চিন্তা করবে। আর এই লক্ষ্য হল, পাপী ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করা। তারা শাস্ত্র থেকে এবং আমাদের প্রকাশনা থেকে গবেষণা করবে আর বোঝার ক্ষমতা চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করবে। তারা এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করবে যে, সেই ব্যক্তি সম্বন্ধে তাদের কী জানতে হবে, যাতে তারা বুঝতে পারে, তার চিন্তা, মনোভাব ও কাজের পিছনে কোন কারণ রয়েছে।—হিতো. ২০:৫.
৭-৮. প্রাচীনেরা সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় কীভাবে যিহোবার ধৈর্যকে অনুকরণ করতে পারে, যিনি পাপ করেছেন?
৭ প্রাচীনেরা যিহোবার ধৈর্যকে অনুকরণ করে। অতীতে যিহোবা পাপী ব্যক্তিদের কীভাবে সাহায্য করেছেন, তা প্রাচীনেরা মনে রাখে। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা ধৈর্য ধরে কয়িনের সঙ্গে যুক্তি করেছিলেন, তাকে পাপের পরিণতি সম্বন্ধে সাবধান করেছিলেন এবং এই প্রত্যাশা দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি বাধ্য হন, তা হলে তিনি আবার যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করবেন। (আদি. ৪:৬, ৭) যিহোবা ভাববাদী নাথনকে ব্যবহার করে দায়ূদকে পরামর্শ দিয়েছিলেন আর নাথন একটা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে দায়ূদকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করেছিলেন। (২ শমূ. ১২:১-৭) যিহোবা অবাধ্য ইজরায়েল জাতির কাছে “প্রতিদিন” অর্থাৎ বার বার ভাববাদীদের “প্রেরণ” করেছিলেন। (যির. ৭:২৪, ২৫) যিহোবা এমনটা মনে করে অপেক্ষা করেননি যে, তারা অনুতপ্ত হবে আর এরপর তিনি তাদের সাহায্য করবেন। এর পরিবর্তে, তারা পাপ করে চলার সময়ই তিনি তাদের অনুতপ্ত হওয়ার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন।
৮ যিনি গুরুতর পাপ করেছেন, তাকে সাহায্য করার জন্য প্রাচীনেরা যিহোবার উদাহরণ অনুকরণ করে। ২ তীমথিয় ৪:২ পদে যেমন বলা হয়েছে, তারা “সম্পূর্ণ ধৈর্য সহকারে” তার সঙ্গে আচরণ করে। তাই, একজন পাপীকে সঠিক কাজ করতে সাহায্য করার জন্য একজন প্রাচীনকে সবসময় শান্ত থাকতে এবং ধৈর্য দেখাতে হবে। তিনি যদি রেগে যান অথবা বিরক্ত হন, তা হলে সেই ব্যক্তি হয়তো তার পরামর্শ শুনতে চাইবেন না এবং অনুতপ্ত হবেন না।
৯-১০. প্রাচীনেরা কীভাবে সেই ব্যক্তিকে যুক্তি করার জন্য সাহায্য করতে পারে, যিনি পাপ করেছেন?
৯ প্রাচীনেরা সেই পরিস্থিতিগুলো বোঝার চেষ্টা করে, যেগুলোর কারণে সেই ব্যক্তি পাপ করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, সেই ব্যক্তি কি তার ব্যক্তিগত অধ্যয়ন অথবা প্রচার কাজকে অবহেলা করেছেন বলে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছেন? তিনি কি যিহোবার কাছে নিয়মিতভাবে প্রার্থনা করা বন্ধ করে দিয়েছেন অথবা তিনি কি উপর উপর প্রার্থনা করেন? তিনি কি মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করা বন্ধ করে দিয়েছেন? তিনি কাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন? তিনি কোন ধরনের আমোদপ্রমোদ বাছাই করেছেন? এগুলো কীভাবে তার চিন্তাভাবনা ও আকাঙ্ক্ষার উপর প্রভাব ফেলেছে? তিনি কি এটা বুঝতে পেরেছেন, তার সিদ্ধান্ত এবং কাজগুলো দেখে তার পিতা যিহোবার কেমন লেগেছে?
১০ প্রাচীনেরা সেই ব্যক্তিকে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারে, যেগুলো তাকে চিন্তা করতে সাহায্য করবে যে, কেন যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে গিয়েছে এবং কী কারণে তিনি পাপ করেছেন। তা করার সময় তারা সদয় মনোভাব দেখাবে আর তারা তাকে এমন ব্যক্তিগত প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে না, যেগুলো তাদের জানার দরকার নেই। (হিতো. ২০:৫) এ ছাড়া, সেই ব্যক্তিকে যুক্তি করার এবং তার কাজগুলো যে ভুল, তা বুঝতে সাহায্য করার জন্য তারা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতে পারে, যেমনটা ভাববাদী নাথন দায়ূদের বেলায় করেছিলেন। হতে পারে, প্রথম বার তার সঙ্গে কথা বলার সময়ই তিনি তার কাজের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে শুরু করবেন। এমনকী সেইসময় তিনি অনুতপ্তও হতে পারেন।
১১. কীভাবে যিশু পাপী ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন?
১১ প্রাচীনেরা যিশুকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। তার্ষের শৌলের সঙ্গে কথা বলার সময় পুনরুত্থিত যিশু প্রজ্ঞার সঙ্গে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “শৌল, শৌল, তুমি কেন আমাকে তাড়না করছ?” এই প্রশ্ন করার মাধ্যমে যিশু পৌলকে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন যে, তিনি যা করছিলেন, তা ভুল। (প্রেরিত ৯:৩-৬) আর ‘ঈষেবলের মতো সেই মহিলার’ বিষয়ে যিশু বলেছিলেন, “আমি তাকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সময় দিয়েছিলাম।”—প্রকা. ২:২০, ২১.
১২-১৩. প্রাচীনেরা কীভাবে সেই ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হওয়ার জন্য সময় দিতে পারে, যিনি পাপ করেছেন? (ছবিও দেখুন।)
১২ যেহেতু প্রাচীনেরা যিশুকে অনুকরণ করে, তাই তারা দ্রুত এই সিদ্ধান্তে আসে না যে, একজন পাপী ব্যক্তি অনুতপ্ত হবেন না। যদিও কেউ কেউ প্রথম বার কথা বলার সময়ই অনুতপ্ত হয়, আবার অন্যদের জন্য হয়তো সময় লাগতে পারে। তাই, প্রাচীনেরা হয়তো সেই ব্যক্তির সঙ্গে কয়েক বার কথা বলার ব্যবস্থা করতে পারে। হতে পারে, প্রথম বার কথা বলার পর তাকে যা বলা হয়েছে, সেই বিষয় নিয়ে তিনি গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা শুরু করতে পারেন, তিনি হয়তো নম্রতা দেখাতে পারেন এবং যিহোবার কাছে তার পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করতে পারেন। (গীত. ৩২:৫; ৩৮:১৮) প্রাচীনেরা যখন আবার সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবে, তখন তিনি হয়তো প্রথম বার যে-মনোভাব দেখিয়েছিলেন, সেটার চেয়ে ভিন্ন মনোভাব দেখাতে পারেন।
১৩ পাপী ব্যক্তিকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করার জন্য প্রাচীনেরা সমবেদনা ও দয়া দেখায়। তারা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে যেন তিনি তাদের প্রচেষ্টার উপর আশীর্বাদ করেন। আর সেইসঙ্গে তারা এই প্রত্যাশা রাখে যে, সেই ব্যক্তি চেতনা ফিরে পাবেন এবং অনুতপ্ত হবেন।—২ তীম. ২:২৫, ২৬.
১৪. একজন পাপী যদি অনুতপ্ত হন, তা হলে কে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য এবং কেন?
১৪ একজন পাপী যখন অনুতপ্ত হন, তখন এটা সত্যিই অনেক আনন্দের বিষয়! (লূক ১৫:৭, ১০) তিনি যদি অনুতপ্ত হন, তা হলে কে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য? প্রাচীনেরা? পাপীদের বিষয়ে পৌল কী বলেছিলেন, তা লক্ষ করুন: “ঈশ্বর হয়তো তাদের অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ দেবেন।” (২ তীম. ২:২৫) তাই, যিহোবাই একজন খ্রিস্টানকে তার চিন্তাভাবনা ও মনোভাব পরিবর্তন করতে সাহায্য করেন, কোনো মানুষ নয়। একজন ব্যক্তি অনুতপ্ত হওয়ার পর যে-ভালো ফল হয়, সেই সম্বন্ধে পৌল উল্লেখ করেছিলেন। সেই ব্যক্তি সত্যের আরও সঠিক জ্ঞান লাভ করেন, চেতনা ফিরে পান এবং শয়তানের ফাঁদগুলো থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।—২ তীম. ২:২৬.
১৫. প্রাচীনেরা কীভাবে একজন অনুতপ্ত পাপীকে ক্রমাগত সাহায্য করে?
১৫ একজন ব্যক্তি যখন অনুতপ্ত হন, তখন প্রাচীনদের কমিটি তাকে ক্রমাগত সাহায্য করার জন্য পালকীয় সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে, যাতে তিনি শয়তানের ফাঁদগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে এবং যা সঠিক, তা করতে পারেন। (ইব্রীয় ১২:১২, ১৩) অবশ্য, সেই ব্যক্তি যে-পাপ করেছেন, সেই বিষয়ে প্রাচীনেরা অন্য কাউকে জানায় না। কিন্তু, মণ্ডলীকে হয়তো কী জানাতে হবে?
“সকলের সামনে তাদের তিরস্কার করো”
১৬. প্রথম তীমথিয় ৫:২০ পদ অনুযায়ী পৌল “সকলের” বলতে কাদের বুঝিয়েছেন?
১৬ প্রথম তীমথিয় ৫:২০ পদ পড়ুন। “যারা পাপ করে চলে,” তাদের ব্যাপারে কী করতে হবে, সেই বিষয়ে পৌল তার সহপ্রাচীন তীমথিয়কে জানিয়েছিলেন। পৌল কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? তিনি “সকলের” বলতে যে সবসময় পুরো মণ্ডলীকে বুঝিয়েছেন, এমন নয়। এর পরিবর্তে, তিনি হয়তো সেই কয়েক জন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন, যারা ইতিমধ্যেই সেই পাপ সম্বন্ধে জানে। এদের মধ্যে হতে পারে সেই ব্যক্তিরা, যারা নিজের চোখে বিষয়টা দেখেছেন অথবা সেই ব্যক্তিরা, যাদের কাছে তিনি নিজে তার পাপের বিষয়ে বলেছেন। প্রাচীনেরা ভেবেচিন্তে কেবল এই ব্যক্তিদেরই জানাবে যে, তারা বিষয়টা সমাধান করেছে এবং পাপী ব্যক্তিকে সংশোধন করা হয়েছে।
১৭. মণ্ডলীর অনেকে যদি কোনো গুরুতর পাপ সম্বন্ধে ইতিমধ্যে জেনে থাকে অথবা হতে পারে পরে জানতে পারবে, তা হলে মণ্ডলীতে কী ঘোষণা করা হবে এবং কেন?
১৭ কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, মণ্ডলীর অনেকে হয়তো সেই পাপ সম্বন্ধে ইতিমধ্যে জানে অথবা পরে হয়তো তা জানতে পারবে। এইরকম ক্ষেত্রে “সকলের” বলতে পুরো মণ্ডলীকে বোঝায়। তাই, একজন প্রাচীন মণ্ডলীতে এই ঘোষণা করবেন যে, সেই ভাই বা বোনকে তিরস্কার করা হয়েছে। কেন? পৌল এর উত্তর দিয়েছেন: “যেন অন্য সকলে ভয় পায়” এবং গুরুতর পাপ না করে।
১৮. অপ্রাপ্তবয়স্ক বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানেরা যদি গুরুতর পাপ করে, তা হলে প্রাচীনেরা কী করবে? (ছবিও দেখুন।)
১৮ অপ্রাপ্তবয়স্ক বাপ্তাইজিত খ্রিস্টানদের বিষয়ে কী বলা যায়, যাদের বয়স ১৮ বছরের নীচে? তারা যদি কোনো গুরুতর পাপ করে, তা হলে? সেই ক্ষেত্রে প্রাচীনগোষ্ঠী দু-জন প্রাচীনকে নিযুক্ত করবে, যারা সেই অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির খ্রিস্টান বাবা-মাকেb নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবে। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানকে অনুতপ্ত হতে সাহায্য করার জন্য ইতিমধ্যে কী কী করেছে, তা প্রাচীনেরা জানার চেষ্টা করবে। সেই সন্তান যদি ভালো মনোভাব দেখায় এবং বাবা-মায়ের সাহায্যে সে যদি তার চিন্তাভাবনা ও আচরণ পরিবর্তন করার চেষ্টা করে থাকে, তা হলে সেই দু-জন প্রাচীন হয়তো সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, বাবা-মা-ই সন্তানকে সাহায্য করতে পারবে আর তাই প্রাচীনদের কমিটি গঠন করার প্রয়োজন নেই। আসলে, ঈশ্বর বাবা-মাকেই এই দায়িত্ব দিয়েছেন যেন তারা তাদের সন্তানকে প্রেমের সঙ্গে সংশোধন করে। (দ্বিতীয়. ৬:৬, ৭; হিতো. ৬:২০; ২২:৬; ইফি. ৬:২-৪) পরে, সেই প্রাচীনেরা মাঝে মাঝে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলবে এবং এই বিষয়টা নিশ্চিত করবে যে, তাদের সন্তান প্রয়োজনীয় সাহায্য পাচ্ছে কি না। কিন্তু, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক বাপ্তাইজিত খ্রিস্টান যদি অনুতপ্ত না হয় এবং পাপ করেই চলে, তা হলে? সেই ক্ষেত্রে প্রাচীনদের কমিটি তার খ্রিস্টান বাবা-মাকে নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলবে।
“যিহোবা অত্যন্ত স্নেহময় ও করুণাময়”
১৯. প্রাচীনেরা কীভাবে সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করার সময় যিহোবাকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে, যিনি পাপ করেছেন?
১৯ যে-প্রাচীনেরা কমিটিতে থাকে, তাদের দায়িত্ব হল মণ্ডলীকে শুচি রাখা। যিহোবা তাদের কাছ থেকে এটাই চান। (১ করি. ৫:৭) তবে, প্রাচীনেরা এও চায় যেন সেই ব্যক্তি অনুতপ্ত হন, যিনি পাপ করেছেন। তাই, তারা এই আশা রাখে যে, সেই পাপী ব্যক্তি পরিবর্তন হবেন। কেন? কারণ তারা যিহোবাকে অনুকরণ করতে চায়, যিনি “অত্যন্ত স্নেহময় ও করুণাময়।” (যাকোব ৫:১১) লক্ষ করুন, বয়স্ক প্রেরিত যোহন কীভাবে এইরকম মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “হে আমার প্রিয় সন্তানেরা, আমি তোমাদের এইসমস্ত কথা লিখছি, যেন তোমরা কোনো পাপ না কর। আর কেউ যদি পাপ করেও ফেলে, তা হলে পিতার সঙ্গে আমাদের একজন সাহায্যকারী আছেন। তিনি সেই যিশু খ্রিস্ট, যিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যা সঠিক, তা-ই করেন।”—১ যোহন ২:১.
২০. আমরা এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোর শেষ প্রবন্ধে কী নিয়ে আলোচনা করব?
২০ তবে, দুঃখজনক বিষয় হল কখনো কখনো একজন খ্রিস্টান অনুতপ্ত হতে চান না। যদি এমনটা হয়, তা হলে তাকে অবশ্যই মণ্ডলী থেকে বের করে দিতে হবে। এই ধরনের গুরুতর বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রাচীনেরা কী করে থাকে? আমরা এই ধারাবাহিক প্রবন্ধগুলোর শেষ প্রবন্ধে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব।
গান ১০৩ প্রাচীনেরা—যিহোবার কাছ থেকে এক দান
a আগে এই দলগুলোকে ‘বিচার সংক্রান্ত কমিটি’ বলা হত। কিন্তু, তাদের কাজ যেহেতু কেবল বিচার করাই নয়, তাই এখন থেকে আর এই অভিব্যক্তি ব্যবহার করা হবে না। এর পরিবর্তে, এখন থেকে এই দলকে ‘প্রাচীনদের কমিটি’ বলা হবে।
b বাবা-মায়ের দায়িত্ব সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে, তা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সেই বৈধ অভিভাবক অথবা অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যারা বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে।