ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্ধ্বে ওঠা
পাঁচ বছর নাৎসী কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থাকার পর এক ব্যক্তির কিধরনের অনুভূতি হতে পারে? নিরুৎসাহজনক? বিদ্বেষপূর্ণ? প্রতিহিংসাপরায়ণ?
যদিও হয়ত এটি অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, এক ব্যক্তি এইরকম লিখেছিলেন: “যা আমি কখনও আশা করতে পারিনি, আমার জীবন তার চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিল।” কেন তিনি এইরকম অনুভব করতে পেরেছিলেন? তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “আমি পরাৎপরের পক্ষের নিচে সুরক্ষা খুঁজে পেয়েছিলাম আর আমি ভাববাদী যিশাইয়ের সেই বাক্যগুলির পরিপূর্ণতা অভিজ্ঞতা করেছিলাম যখন তিনি বলেছিলেন: ‘যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊদ্ধের্ব উঠিবে; তাহারা . . . গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।’”—যিশাইয় ৪০:৩১.
এই খ্রীষ্টীয় ব্যক্তির, যার উপর কল্পনাতীত ভয়ঙ্কর পদ্ধতিতে প্রচণ্ড প্রহার করা হয়েছিল, তার এমন এক মনোভাব ছিল যা রূপকভাবে সুউচ্চে উড়তে পেরেছিল, এক মনোভাব যাকে নাৎসী নিষ্ঠুরতা জয় করতে পারেনি। দায়ূদের মত তিনি ঈশ্বরের “পক্ষের” ছায়ায় সুরক্ষা খুঁজে পেয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৫৭:১) তার আধ্যাত্মিক শক্তিকে এক ঈগলের সাথে তুলনা করে, যে আকাশে উচ্চ থেকে উচ্চে উড়তে পারে এই খ্রীষ্টীয় ব্যক্তি যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা ব্যবহৃত এক উপমা উপস্থিত করেছিলেন।
আপনি কি কখনও সমস্যার দ্বারা নিজেকে ভারাক্রান্ত মনে করেছেন? নিঃসন্দেহে আপনিও পরাৎপরের পক্ষের নিচে ‘ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊদ্ধের্ব ওঠার’ জন্য সুরক্ষা খুঁজে পেতে চাইবেন। এটি কিভাবে সম্ভব তা বোঝার জন্য ঈগল সম্বন্ধে কিছু বিষয় জানা সাহায্যকারী, যা রূপকভাবে বারংবার শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।
ঈগলের পতাকার নিচে
এর শক্তি ও সমুন্নত ওড়ার ক্ষমতার কারণে প্রাচীনকালে লোকেরা ঈগলকে সম্ভবত সমস্ত পক্ষীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানজনক দৃষ্টিতে দেখত। অনেক প্রাচীন সৈনিকেরা, যাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল বাবিলন, পারস্য এবং রোম ঈগলের পতাকার নিচে গমন করত। মহান কোরসের সৈন্যবাহিনী ছিল এগুলির মধ্যে একটি। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে পারস্যের এই রাজা হবে একটি শিকারী পাখির মত, যে পূর্ব দিক থেকে এসে বাবিলনীয় সাম্রাজ্যকে গ্রাস করবে। (যিশাইয় ৪৫:১; ৪৬:১১) এই ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখিত হওয়ার দুই শত বছর পরে কোরসের সৈন্যবাহিনী যাদের যুদ্ধ পতাকা ছিল ঈগল, বাবিলন শহরের উপর আকস্মিক ক্ষিপ্র আক্রমণ করেছিল, ঠিক যেমন এক ঈগল তার শিকারের উপর তীরবেগে ঝাপিয়ে পড়ে।
আরও সম্প্রতিকালে, শার্লেমেন ও নেপলিয়নের মত সৈনিকেরা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মত দেশগুলিও তাদের প্রতীকস্বরূপ ঈগলকে নির্বাচন করেছে। ইস্রায়েলীয়দের আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল ঈগল অথবা অন্য কোন প্রাণীর প্রতীককে শ্রদ্ধা না জানাতে। (যাত্রাপুস্তক ২০:৪, ৫) তবুও, বাইবেল লেখকেরা তাদের সংবাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যার জন্য পরোক্ষভাবে ঈগলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে উল্লেখ করেছেন। তাই ঈগল, যে পক্ষীটি সম্বন্ধে শাস্ত্রে বারংবার উল্লেখ করা হয়েছে তা, প্রজ্ঞা, ঐশিক সুরক্ষা এবং ক্ষিপ্রতা এইপ্রকার বিষয়গুলির প্রতীকস্বরূপ ব্যবহৃত হয়।
ঈগলের চক্ষু
ঈগলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি সর্বদা প্রবাদতুল্য। যদিও স্বর্ণ ঈগলের ওজন বিরলভাবে পাঁচ কিলোগ্রামের বেশি হয়, কিন্তু এর চোখ প্রকৃতপক্ষে মানুষের চোখের চেয়ে বড় হয়ে থাকে আর এর দৃষ্টিশক্তি আরও অনেক বেশি তীক্ষ্ণ। যিহোবা স্বয়ং ইয়োবের কাছে ঈগলের তার খাদ্য অন্বেষণের ক্ষমতার বিষয়ে বর্ণনা করেছেন এই বলে: “তাহার চক্ষু দূর হইতে তাহা নিরীক্ষণ করে।” (ইয়োব ৩৯:২৭, ২৯) অ্যালিস পারমিলী তার বাইবেলের সমস্ত পক্ষী (ইংরাজি) নামক বইতে উল্লেখ করেন যে “একটি ঈগল পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে হ্রদে একটি মৃত মাছের ভাসার চিহ্ন দেখে আর সঠিক জায়গায় তীর্যকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একজন মানুষ যা পারত তার চেয়ে ঈগল যে কেবলমাত্র একটি ছোট বস্তুকে অনেক বেশি দূরত্ব থেকে দেখতে পায় তাই নয়, কিন্তু পাখিটি তার তিন-মাইল ঝাঁপ দেওয়া কালীন মাছটির প্রতি দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত রাখে।”
এর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির কারণে ঈগল প্রজ্ঞার উপযুক্ত প্রতীক, যা যিহোবার প্রধান গুণাবলিগুলির একটি। (তুলনা করুন যিহিষ্কেল ১:১০; প্রকাশিত বাক্য ৪:৭.) এটি কেন? প্রজ্ঞা আমাদের গৃহীত যে কোন কাজের পরিণতি পূর্ব থেকে দেখতে পাওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে। (হিতোপদেশ ২২:৩) ঈগলের, বহু দূর থেকে দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা থাকায়, অনেক দূর থেকে এটি বিপদকে শনাক্ত করতে পারে ও পূর্বেই সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে, ঠিক যীশুর দৃষ্টান্তে বুদ্ধিমান ব্যক্তির মত, যিনি এক ঝড়ের সম্ভাবনা পূর্বেই আশঙ্কা করেছিলেন ও পাষাণের উপর তার গৃহ নির্মাণ করেছিলেন। (মথি ৭:২৪, ২৫) আগ্রহজনকভাবে, স্পেনিশ ভাষায় একজনকে ঈগল বলে বর্ণনা করার অর্থ এই যে তার অন্তর্দৃষ্টি অথবা বিচক্ষণতা আছে।
যদি আপনার কখনও কাছ থেকে একটি ঈগলকে দেখার সুযোগ হয়, লক্ষ্য করুন কিভাবে এটি তার চোখকে ব্যবহার করে। এটি আপনার দিকে সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি দেবে না; বরং মনে হয় এটি আপনার চেহারার বিশদ পরীক্ষা করবে। অনুরূপভাবে, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি তার প্রবণতা অথবা অনুভূতির উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সতর্কতার সাথে একটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করে। (হিতোপদেশ ২৮:২৬) যখন ঈগলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি এটিকে ঐশিক গুণ প্রজ্ঞার উপযুক্ত প্রতীকে পরিণত করে, তখন এর মহৎ ওড়ার ক্ষমতাও রূপকভাবে বাইবেল লেখকদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে।
“ঈগল পক্ষীর পথ আকাশে”
“ঈগল পক্ষীর পথ আকাশে” কথাটি এর গতি এবং কোন নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ না করে ও কোন পদচিহ্ন না রেখে যেভাবে অনায়াসে এটি উড়তে পারে এই উভয় বিষয়ের প্রতিই লক্ষ্য করায়। (হিতোপদেশ ৩০:১৯) ঈগলের ক্ষিপ্রতা সম্বন্ধে বিলাপ ৪:১৯ পদে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে বাবিলনীয় সৈনেরা এইভাবে বর্ণিত হয়েছে: “আমাদের তাড়নাকারিগণ আকাশের ঈগল পক্ষী অপেক্ষা বেগগামী ছিল; তাহারা পর্ব্বতের উপরে আমাদের পশ্চাতে পশ্চাতে দৌড়িত।” কিছু রিপোর্ট অনুসারে এই তথ্য পাওয়া যায় যে যখন একটি ঈগল শিকার করার জন্য উপরে ঘূর্ণিয়মান অবস্থায় উড়তে থাকে, এটি কোনাকুনিভাবে তার পাখাকে স্থাপন করে এবং অত্যধিক দ্রুত গতিতে ঝাঁপ দেয়, যে সময়ে এটি প্রায় ঘন্টায় ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ অর্জন করতে পারে। তাই, কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, শাস্ত্র ঈগলকে গতির সমার্থক হিসাবে ব্যবহার করে, বিশেষ করে সামরিক বাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে।—২ শমূয়েল ১:২৩; যিরমিয় ৪:১৩; ৪৯:২২.
অপরদিকে, যিশাইয়, ঈগলের অনায়াস উড্ডয়ন সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। “যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊদ্ধের্ব উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।” (যিশাইয় ৪০:৩১) ঈগলের এই প্রাণবন্ত উড্ডয়নের রহস্য কী? উপরে ওঠার জন্য স্বল্প প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়, যেহেতু ঈগল থার্মল বা তপ্ত হাওয়ার গতিকে ব্যবহার করে। থার্মল থাকে অদৃশ্য, কিন্তু ঈগল ঠিক সেগুলিকে খুঁজে নিতে পারে। একবার একটি থার্মলকে শনাক্ত করার পর, ঈগল তার পাখা ও লেজকে সেই তপ্ত হাওয়ার মধ্যে ছড়িয়ে দেয় যা ঈগলটিকে উঁচু থেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যায়। পর্যাপ্ত উচ্চতায় উড়ে যাওয়ার পর, এটি পরবর্তী থার্মলের দিকে ভেসে যায় যেখানে এই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এইভাবে শক্তির স্বল্পতম ব্যয়েই ঈগল ঘন্টার পর ঘন্টা উচ্চে অবস্থান করতে পারে।
ইস্রায়েলে, বিশেষভাবে গ্রস্তউপত্যকায়, যেটি লোহিত সমুদ্রের উপকূলে ইজিয়ন-গিবার থেকে উত্তরে ডান পর্যন্ত প্রসারিত সেখানে ঈগল এক পরিচিত দৃশ্য। বিশেষ করে বসন্ত ও শরৎকালে অসংখ্য ঈগল দেখা যায় যখন তারা প্রচরণ করে। কোন কোন বছরে প্রায় ১,০০,০০০টি ঈগল গণনা করা হয়েছে। যখন সকালবেলার সূর্য হাওয়াকে উষ্ণ করে শত শত শিকারী পাখিকে উড়তে দেখা যায় উচ্চ দুরারোহ পাহাড়ের উপর যা গ্রস্তউপত্যকার প্রান্ত।
কিভাবে যিহোবার শক্তি, যাতে আমরা আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারি তার জন্য, আধ্যাত্মিকভাবে ও আবেগগত দিক থেকে উন্নত করে, ঈগলের অনায়াস উড্ডয়ন তার এক অভূতপূর্ব ব্যাখ্যা। ঠিক যেমন একটি ঈগল তার নিজের শক্তি ব্যবহার করে ওইধরনের উচ্চতায় উড়তে পারে না, তেমনি আমরাও মোকাবিলা করতে পারব না যদি আমরা আমাদের নিজেদের ক্ষমতার উপর নির্ভর করি। “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি,” প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন। (ফিলিপীয় ৪:১৩) এক ঈগলের মত যে অনবরত অদৃশ্য থার্মলগুলি খুঁজে নেয়, আমরাও আমাদের ঐকান্তিক প্রার্থনার দ্বারা যিহোবার অদৃশ্য সক্রিয় শক্তির জন্য ‘যাচ্ঞা করিতে’ পারি।—লূক ১১:৯, ১৩.
প্রচরণশীল ঈগল প্রায়ই অন্যান্য শিকারী পাখিদের লক্ষ্য করে থার্মলগুলি খুঁজে পায়। প্রকৃতিবিদ্ ডি. আর. মেকেনটাস রিপোর্ট করেছিলেন যে একসময় ২৫০টি ঈগল ও শকুনকে উপরে একই থার্মলে ঘূর্ণিয়মান অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। অনুরূপভাবে, আজকের দিনে অন্যান্য ধার্মিক সেবকদের বিশ্বস্ত উদাহরণ অনুকরণ করে খ্রীষ্টানেরা যিহোবার শক্তির উপর নির্ভর করতে শিখতে পারে।—তুলনা করুন ১ করিন্থীয় ১১:১.
ঈগলের পক্ষের ছায়ায়
ঈগলের জীবনে সবচেয়ে বিপদজনক সময়কাল হল যখন সে উড়তে শেখে। বেশ কিছু ঈগল এই প্রচেষ্টায় মারাও যায়। সদ্যজাত ইস্রায়েল জাতিও বিপদের মধ্যে ছিল যখন তারা মিশর ছেড়ে যাত্রা করেছিল। সেইকারণে ইস্রায়েলীয়দের প্রতি যিহোবার এই বাক্যগুলি খুবই উপযুক্ত ছিল: “আমি মিস্রীয়দের প্রতি যাহা করিয়াছি, এবং যেমন ঈগল পক্ষী পক্ষ দ্বারা, তেমনি তোমাদিগকে বহিয়া আপনার নিকটে আনিয়াছি, তাহা তোমরা দেখিয়াছ।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:৪) রিপোর্ট জানায় ঈগল কিছু সময় তাদের শাবকদের তাদের পিঠে করে বহন করে যেন শাবকেরা তাদের প্রথম ওড়ার প্রচেষ্টার সময় পড়ে গিয়ে মারা না যায়। জি. আর. ড্রাইভার, প্যালেষ্টাইন এক্সপ্লোরেশন কোয়াটারলি-তে এইপ্রকার রিপোর্টের উপর মন্তব্য করে বলেছিলেন: “[বাইবেলের] উপমা কেবলমাত্র এক কল্পনাকর ধারণা নয়, কিন্তু এটি প্রকৃত তথ্য ভিত্তিক।”
অন্যভাবেও ঈগলেরা আদর্শ বাবামা। তারা কেবলমাত্র তাদের শাবকদের নিয়মিত খাদ্যই প্রদান করে না, কিন্তু মা পাখি যত্নসহকারে মাংস টুকরো টুকরো করে দেয় আর পুরুষ ঈগল তা বাসায় নিয়ে আসে যেন বাচ্চা ঈগল সেগুলি গিলতে পারে। যেহেতু তাদের বাসা সাধারণত উচুঁ পাহাড়ে অথবা লম্বা গাছের উপর হয়ে থাকে, তাই বাচ্চা পাখিরা খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে অনাবৃত অবস্থায় থাকে। (ইয়োব ৩৯:২৭, ২৮) তীব্র তাপদগ্ধ সূর্য যা বাইবেলের দেশগুলিতে স্বাভাবিক ছিল, বাচ্চা পাখিগুলির মৃত্যুর কারণ হতে পারত যা তাদের বাবামায়ের যত্নের কারণে হয় না। বড় ঈগলেরা তাদের কোমল বাচ্চাগুলিকে ছায়া দেওয়ার জন্য কখনও কখনও একটানা ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের পাখা ছড়িয়ে রাখে।
তাই এটি খুবই উপযুক্ত যে ঈগলের পক্ষ শাস্ত্রে ঐশিক সুরক্ষার প্রতীকস্বরূপ ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৯-১২ পদ বর্ণনা করে কিভাবে যিহোবা প্রান্তরে ভ্রমণ করার সময় ইস্রায়েলীয়দের সুরক্ষা যুগিয়েছিলেন: “কেননা সদাপ্রভুর প্রজাই তাহার দায়াংশ; যাকোবই তাঁহার রিক্থ অধিকার। তিনি তাহাকে পাইলেন প্রান্তর-দেশে, পশুগর্জ্জনময় ঘোর মরুভূমিতে; তিনি তাহাকে বেষ্টন করিলেন, তাহার তত্ত্ব লইলেন, নয়ন-তারার ন্যায় তাহাকে রক্ষা করিলেন। ঈগল যেমন আপন বাসা জাগাইয়া তুলে, আপন শাবকগণের উপর পাখা দোলায়, পক্ষ বিস্তার করিয়া তাহাদিগকে তুলে, পালখের উপরে তাহাদিগকে বহন করে; তদ্রূপ সদাপ্রভু একাকী তাহাকে লইয়া গেলেন।” যিহোবা আমাদেরও সমরূপ সুরক্ষা প্রদান করবেন যদি আমরা তাঁর উপর নির্ভর করি।
মুক্তি পাওয়ার পথ
কিছু সময় যখন আমরা সমস্যার সম্মুখীন হই, আমরা হয়ত আমাদের সমস্ত অসুবিধা থেকে অব্যাহতি পেতে সেগুলি থেকে দূরে পালাতে চাই। এটি ছিল ঠিক যেমন দায়ূদ অনুভব করেছিলেন। (তুলনা করুন গীতসংহিতা ৫৫:৬, ৭.) কিন্তু যদিও যিহোবা এই বিধিব্যবস্থায় আমরা যে পরীক্ষা ও কষ্টভোগের সম্মুখীন হই সেক্ষেত্রে সাহায্য করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন, তিনি আমাদের সম্পূর্ণ মুক্তি প্রদান করবেন না। বাইবেলের নিশ্চয়তা আমাদের আছে: “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই; আর ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।”—১ করিন্থীয় ১০:১৩.
“পথও” অথবা “মুক্তির পথ” (কিং জেমস সংস্করণ) যিহোবার উপর নির্ভর করতে শেখাকে অন্তর্ভুক্ত করে। ম্যাক্স লেবস্টার, যার মন্তব্য এই প্রবন্ধের প্রথমেই উদ্ধৃতি করা হয়েছে তিনি এটি আবিষ্কার করেছিলেন। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থাকাকালীন তিনি যিহোবাকে জেনেছিলেন এবং তাঁর উপর নির্ভর করেছিলেন। ম্যাক্স যেমন আবিষ্কার করেছিলেন, যিহোবা তাঁর বাক্যের, তাঁর আত্মার ও তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের শক্তিশালী করেন। এমনকি ক্যাম্পগুলিতে থাকাকালীন সময়েও সাক্ষীরা তাদের সহবিশ্বাসীদের খুঁজে নিয়েছিল এবং শাস্ত্রীয় চিন্তাধারা ও বাইবেল সাহিত্যাদি যা কিছু প্রাপ্তিসাধ্য ছিল তা ভাগ করে নেওয়ার দ্বারা তাদের আধ্যাত্মিক সাহায্য প্রদান করেছিল। আর যেমন বিশ্বস্ত রক্ষাপ্রাপ্তেরা বারংবার সাক্ষ্য দিয়েছে, যিহোবা তাদের শক্তিশালী করেছিলেন। “আমি ক্রমাগতভাবে যিহোবার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম,” ম্যাক্স ব্যাখ্যা করেন, “আর তাঁর আত্মা আমাকে সংরক্ষিত করেছিল।”
যে কোন পরীক্ষার সম্মুখীনই আমরা হই না কেন, অনুরূপভাবে আমরা যিহোবার পবিত্র আত্মার উপর নির্ভর করতে পারি যা আমরা চাইলে প্রদান করা হয়। (মথি ৭:৭-১১) “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে আমরা আমাদের সমস্যাদি দ্বারা নিমগ্ন হওয়ার চাইতে বরং উড়তে পারব। আমরা ক্রমাগতভাবে যিহোবার পথে চলতে পারব এবং আমরা ক্লান্ত হব না। আমরা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊর্ধ্বে উঠিব।—২ করিন্থীয় ৪:৭; যিশাইয় ৪০:৩১.
[১০ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
এটি কেবলমাত্র এক সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিয়ে আপনাকে দেখে না
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Foto: Cortesía de GREFA
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
Foto: Cortesía de Zoo de Madrid