বাবামায়েরা আপনাদের সন্তানদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ হোন
“মনোবিজ্ঞানীরা উত্তমভাবে সন্তান লালনপালন করার চাবি পেতে তাদের দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানকে থামিয়ে দিতে পারে—তার কারণ এই নয় যে, তারা ইতিমধ্যে সেটা পেয়ে গিয়েছে, বরং আসলে এর কোনো অস্তিত্বই নেই।” সন্তান লালনপালন করার বিষয়ে একটা বইয়ের ওপর সমালোচনা করতে গিয়ে টাইম পত্রিকা এভাবেই বলেছিল। বইটি এই বিষয়ে যুক্তি করে যে, সন্তানরা মূলত তাদের বাবামার মূল্যবোধ নয়, বরং তাদের সঙ্গীসাথির মূল্যবোধগুলো গ্রহণ করে থাকে।
এটা অস্বীকার করার কোনো উপায়ই নেই যে, সঙ্গীসাথির চাপকে এক শক্তিশালী প্রভাব বলে গণ্য করা হয়। (হিতোপদেশ ১৩:২০; ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩) কলমলেখক উইলিয়াম ব্রাউন মন্তব্য করেছিলেন: “কিশোর-কিশোরীদের যদি কোনো একজন জাগতিক ঈশ্বর থেকেও থাকেন, তা হল প্রথাগত রীতির অনুসরণ করা। . . . কিশোর-কিশোরীদের জন্য বন্ধুদের থেকে আলাদা হওয়া হল এমন এক পরিণতি, যা মৃত্যুর চেয়েও জঘন্য।” বাবামায়েরা যখন পারিবারিক জীবনকে উষ্ণ ও আনন্দদায়ক করে তুলতে ব্যর্থ হয় অথবা তাদের সন্তানদের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটায় না—যে-দুটোই বর্তমান ব্যস্ত জগতে খুব সাধারণ বিষয়—তখন তারা আসলে তাদের সন্তানদের ওপর সঙ্গীসাথির ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দেয়।
অধিকন্তু, এই “শেষ কালে” পরিবারগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কারণ বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, লোকেরা টাকাপয়সা, আরামআয়েশ ও নিজের স্বার্থ চিন্তায় মগ্ন। তাই, সন্তানদের “পিতামাতার অবাধ্য, অকৃতজ্ঞ, অসাধু, স্নেহরহিত” হতে দেখে আমাদের কি অবাক হওয়া উচিত?—২ তীমথিয় ৩:১-৩.
বাইবেলে ব্যবহৃত ‘স্নেহ’ শব্দটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভালবাসাকে বোঝায়। ভালবাসা হল এক স্বাভাবিক বন্ধন, যা বাবামাদের তাদের সন্তানদের যত্ন নিতে এবং সন্তানদের তাদের বাবামার প্রতি আসক্ত হতে প্রেরণা দেয়। কিন্তু, বাবামাদের মধ্যে যদি স্নেহের অভাব থাকে, তা হলে সন্তানরা অন্যদের কাছে—সাধারণত তাদের সঙ্গীসাথির কাছেই—আবেগগত সমর্থন খুঁজবে আর সম্ভবত তাদের মূল্যবোধ ও মনোভাবগুলো গ্রহণ করে নেবে। কিন্তু, বাবামায়েরা যদি তাদের পারিবারিক জীবন পরিচালনা করার জন্য বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগায়, তা হলে প্রায়ই এই পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে।—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.
পরিবার—এক ঐশিক প্রতিষ্ঠান
আদম ও হবাকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একতাবদ্ধ করার পর ঈশ্বর তাদের এই আদেশ দিয়েছিলেন: ‘তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ কর।’ এরপরই পরিবার—বাবা, মা ও সন্তান—অস্তিত্বে এসেছিল। (আদিপুস্তক ১:২৮; ৫:৩, ৪; ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) সন্তান লালনপালন করার ক্ষেত্রে মানুষকে সাহায্য করার জন্য যিহোবা তাদেরকে সন্তান প্রতিপালনের কিছু সহজাত মৌলিক বৈশিষ্ট্য দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। পশুপাখির বৈসাদৃশ্যে, সহজাত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও মানুষের আরও সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তাই যিহোবা তাদের জন্য লিখিত নির্দেশনা জুগিয়েছেন। এর অন্তর্ভুক্ত হল, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া এবং সন্তানদের উপযুক্ত উপদেশ দেওয়া বা শাসন করা।—হিতোপদেশ ৪:১-৪.
বিশেষভাবে বাবাদের উদ্দেশে ঈশ্বর বলেছিলেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭; হিতোপদেশ ১:৮, ৯) লক্ষ করুন যে, প্রথমে বাবামাকে ঈশ্বরের নিয়মকানুন হৃদয়ে গ্রহণ করতে হতো। কেন তা গুরুত্বপূর্ণ ছিল? কারণ কেবল মুখে মুখে বলা শিক্ষা নয় বরং হৃদয় থেকে দেওয়া শিক্ষাই সত্যিকার অর্থে অন্যদের প্রেরণা দেয়। একমাত্র নিজেদের হৃদয় থেকে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমেই বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের হৃদয়ে সেগুলো পৌঁছে দিতে পারবে। এই বাবামায়েরা সেই সন্তানদের জন্যও উত্তম উদাহরণ হবে, যারা সহজেই কপট আচরণ ধরতে পারে।—রোমীয় ২:২১.
খ্রিস্টান বাবামাদের বলা হয়েছে তারা যেন তাদের সন্তানদের শিশুকাল থেকে ‘প্রভুর শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তোলে।’ (ইফিষীয় ৬:৪; ২ তীমথিয় ৩:১৫) শিশুকাল থেকে? হ্যাঁ! “আমরা বাবামায়েরা মাঝে মাঝে সন্তানদেরকে তাদের প্রাপ্য কৃতিত্ব দিই না,” একজন মা লিখেছিলেন। “আমরা তাদের যোগ্যতাগুলোকে ছোট করে দেখি। তাদের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের বাবামাদের অবশ্যই সেটার সদ্ব্যবহার করতে হবে।” হ্যাঁ, সন্তানরা শিখতে ভালবাসে আর তারা যখন ঈশ্বর ভয়শীল বাবামার কাছ থেকে শিক্ষা পায়, তখন তারা ভালবাসতেও শেখে। এই ধরনের সন্তানরা তাদের জন্য স্থাপিত বাধানিষেধের মধ্যে থেকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বোধ করবে। তাই, সফল বাবামায়েরা প্রেমময় বন্ধু, উত্তম ভাববিনিময়কারী এবং ধৈর্যশীল অথচ দৃঢ় শিক্ষক হতে প্রচেষ্টা করে আর এর দ্বারা এক গঠনমূলক পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে তাদের সন্তানরা উন্নতিলাভ করে।a
আপনাদের সন্তানদের রক্ষা করুন
জার্মানির একজন উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষক বাবামাদের উদ্দেশে এক চিঠিতে লিখেছিলেন: “প্রিয় বাবামায়েরা, আমরা আপনাদেরকে সন্তানদের লালনপালন করার ভার আরও বেশি করে নিতে এবং তাদেরকে টেলিভিশন অথবা সঙ্গীসাথির কাছে সমর্পণ না করতে উৎসাহিত করছি, কারণ তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের [দায়িত্ব] প্রকৃতপক্ষে আপনাদেরই।”
সন্তানকে টেলিভিশন অথবা সঙ্গীসাথির কাছে সমর্পণ করা হল, মূলত জগতের আত্মাকে সন্তান লালনপালন করার ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া। (ইফিষীয় ২:১, ২) ঈশ্বরের আত্মার পুরোপুরি বৈসাদৃশ্যে এই জগতের আত্মা এক দমকা হাওয়ার মতো, যা “পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক” চিন্তাভাবনার বীজ বহন করে এবং তাদের হৃদয় ও মনে অবাধে অনভিজ্ঞতা ও মূর্খতা গেঁথে দেয়। (যাকোব ৩:১৫) এই আগাছাতুল্য উপদ্রব শেষ পর্যন্ত হৃদয়কে কলুষিত করে। হৃদয়ে যা বপন করা হয় সেটার প্রভাব সম্বন্ধে যিশু এই বলে দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন: “ভাল মানুষ আপন হৃদয়ের ভাল ভাণ্ডার হইতে ভালই বাহির করে; এবং মন্দ মানুষ মন্দ ভাণ্ডার হইতে মন্দই বাহির করে; যেহেতুক হৃদয়ের উপচয় হইতে তাহার মুখ কথা কহে।” (লূক ৬:৪৫) তাই, বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয়: “সমস্ত রক্ষণীয় অপেক্ষা তোমার হৃদয় রক্ষা কর কেননা তাহা হইতে জীবনের উদ্গম হয়।”—হিতোপদেশ ৪:২৩.
অবশ্য, বাচ্চারা বাচ্চাদের মতোই আচরণ করবে আর কারো কারো একগুঁয়ে এমনকি স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার প্রবণতা রয়েছে। (আদিপুস্তক ৮:২১) বাবামায়েরা কী করতে পারে? “বালকের হৃদয়ে অজ্ঞানতা বাঁধা থাকে, কিন্তু শাসন-দণ্ড তাহা তাড়াইয়া দিবে,” বাইবেল বলে। (হিতোপদেশ ২২:১৫) কেউ কেউ এটাকে কঠোর আচরণ বলে মনে করে থাকে, যা সেকেলে। এটা ঠিক যে, বাইবেল যেকোনো ধরনের দৌরাত্ম্য ও গালিগালাজকে নিন্দা করে থাকে। যদিও মাঝে মাঝে ‘দণ্ড’ শব্দটি আক্ষরিকভাবে শাস্তি দেওয়াকে বোঝায় কিন্তু তা আসলে বাবামার কর্তৃত্বকে প্রতিনিধিত্ব করে, যা সন্তানদের অনন্তকালীন মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করে দৃঢ়ভাবে অথচ প্রেমের সঙ্গে ও উপযুক্তভাবে প্রয়োগ করা হয়।—ইব্রীয় ১২:৭-১১.
আপনাদের সন্তানদের সঙ্গে বিনোদন উপভোগ করুন
এটা সত্য যে, সন্তানদের উপযুক্ত বিকাশের জন্য তাদের খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রয়োজন। বিজ্ঞ বাবামায়েরা যখনই সম্ভব তাদের সন্তানদের সঙ্গে বিনোদন উপভোগ করার মাধ্যমে বাবামা ও সন্তানের মধ্যে বন্ধনকে দৃঢ় করার সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করে থাকে। তা করার মাধ্যমে বাবামায়েরা যে কেবল সন্তানদের উপযুক্ত বিনোদন বাছাই করার ক্ষেত্রেই নির্দেশনা দিতে পারে তা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও দেখাতে পারে যে, তাদের সন্তানদের সাহচর্যকে তারা কতখানি মূল্য দেয়।
একজন সাক্ষি বাবা বলেন, তিনি কাজ থেকে ঘরে ফিরে প্রায়ই তার ছেলের সঙ্গে বল খেলতেন। একজন মা স্মরণ করেন, দাবা বা এই ধরনের খেলাগুলো তার সন্তানদের প্রিয় খেলা ছিল। একজন প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে স্মরণ করে, তার পরিবার একসঙ্গে সাইকেল চালানো উপভোগ করত। এই সন্তানরা সকলেই এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছে কিন্তু বাবামা ও যিহোবার জন্য তাদের ভালবাসা এখনও পর্যন্ত দৃঢ় রয়েছে আর তা ক্রমাগত দৃঢ়তর হচ্ছে।
সত্যিই, যে-বাবামায়েরা তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে দেখায় যে, তারা সন্তানদের ভালবাসে ও তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চায়, তারা তাদের ওপর এমন এক গভীর ছাপ ফেলে, যা সারাজীবন স্থায়ী হয়। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াচটাওয়ার বাইবেল স্কুল অভ্ গিলিয়েড এর একটি ক্লাসের অনেক গ্র্যাজুয়েট বলেছিল যে, তাদের বাবামার উদাহরণ ও উৎসাহ তাদের মধ্যে পূর্ণসময়ের পরিচর্যা অনুধাবন করার আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিল। সন্তানদের জন্য কত চমৎকার এক উত্তরাধিকার আর বাবামাদের জন্য কত আশীর্বাদ! এটা ঠিক যে, সব সন্তানই বড় হয়ে পূর্ণসময় পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার মতো অবস্থানে থাকে না কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, সব সন্তানই ঈশ্বর ভয়শীল বাবামার কাছ থেকে উপকার পাবে এবং তাদের সম্মান করবে, যে-বাবামায়েরা তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আদর্শ হয়ে ওঠে।—হিতোপদেশ ২২:৬; ইফিষীয় ৬:২, ৩.
একক বাবামায়েরা সফল হতে পারে
বর্তমানে অনেক সন্তান এমন পরিবারে বড় হয়, যেখানে একক বাবা অথবা মা রয়েছেন। যদিও তা সন্তান মানুষ করাকে আরও কঠিন করে তোলে কিন্তু সফলতা অর্জন করা যেতে পারে। একক বাবামায়েরা বাইবেলে বর্ণিত উদাহরণ, প্রথম শতাব্দীর একজন যিহুদি খ্রিস্টান নারী উনীকীর কাছ থেকে উৎসাহ লাভ করতে পারে। একজন অবিশ্বাসীর সঙ্গে বিবাহিত থাকায় উনীকী সম্ভবত তার স্বামীর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক কাজে কোনো ধরনের সমর্থন পাননি। তা সত্ত্বেও, তীমথিয়কে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে উনীকী উদাহরণযোগ্য ছিলেন। শিশুকাল থেকে তীমথিয়ের ওপর তার এবং সেইসঙ্গে তীমথিয়ের দিদিমা লোয়ীর উত্তম প্রভাব, সম্ভবত তীমথিয়ের কয়েক জন সঙ্গীর কাছ থেকে আসা যেকোনো নেতিবাচক প্রভাবের চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণিত হয়েছিল।—প্রেরিত ১৬:১, ২; ২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৫.
বর্তমানে অনেক অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে যারা একজন অবিশ্বাসী কিংবা একক বাবা অথবা মা রয়েছেন এমন পরিবারে বড় হয়েছে, তারাও তীমথিয়ের মতো একইরকম চমৎকার গুণাবলি প্রদর্শন করে। উদাহরণস্বরূপ, রাইয়েন নামে একজন পূর্ণসময়ের পরিচারক যার বয়স এখন ২২ বছর, সে তার বড় ভাই ও বোনের সঙ্গে এই ধরনের এক পরিবারে বড় হয়েছে। তাদের বাবা মদে আসক্ত ছিলেন আর রাইয়েনের বয়স যখন চার বছর, তখন তিনি পরিবার ছেড়ে চলে যান। “আমাদের পরিবার যেন ক্রমাগত যিহোবাকে সেবা করে চলে, সেই বিষয়ে মা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন,” রাইয়েন স্মরণ করে বলে, “আর তিনি সর্বান্তঃকরণে সেই সংকল্পের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন।”
“উদাহরণস্বরূপ, মা খেয়াল রাখতেন যেন আমরা ছেলেমেয়েরা ভাল সঙ্গীসাথির সঙ্গে মেলামেশা উপভোগ করি,” রাইয়েন বলে। “তিনি কখনোই আমাদের সেই ধরনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করতে দেননি, যাদেরকে বাইবেল কুসংসর্গ বলে বর্ণনা করে, তা সেটা মণ্ডলীর বাইরে বা ভিতরে যেখানেই হোক না কেন। এ ছাড়া, তিনি পড়াশোনা সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গেঁথে দিয়েছিলেন।” যদিও কাজের কারণে রাইয়েনের মা প্রায়ই ব্যস্ত ও ক্লান্ত থাকতেন কিন্তু তিনি তার সন্তানদের প্রতি প্রেমময় আগ্রহ দেখানো থেকে বিরত হননি। “তিনি সবসময় আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে এবং কথা বলতে চাইতেন,” রাইয়েন বলে। “তিনি একজন ধৈর্যশীল অথচ দৃঢ় শিক্ষিকা ছিলেন, আমরা যাতে এক নিয়মিত পারিবারিক অধ্যয়ন করতে পারি সেই বিষয়টা নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য করতেন। বাইবেলের নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে তার অভিধানে ‘আপোশ’ শব্দটি ছিল না।”
ছেলেবেলার কথা চিন্তা করে রাইয়েন উপলব্ধি করে যে তার এবং তার বড় ভাইবোনের জীবনে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারকারী মানুষটি হলেন তার মা, যিনি প্রকৃতই ঈশ্বরকে এবং তার সন্তানদেরকে ভালবাসেন। তাই, খ্রিস্টান বাবামায়েরা—বিবাহিত অথবা বিধবা হোন, বিশ্বাসী সাথি থাকুক বা না-ই থাকুক—আপনাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করার সময়ে নিরুৎসাহিতা বা সাময়িক বাধাবিপত্তির কাছে নতি স্বীকার করবেন না। কখনো কখনো অপব্যয়ী পুত্রের মতো কোনো কোনো অল্পবয়স্ক সন্তান হয়তো সত্য থেকে সরে যেতে পারে। কিন্তু, যখন তারা দেখে যে এই জগৎ প্রকৃতপক্ষে কতটা অসার এবং উদাসীন, তখন তারা হয়তো ফিরে আসতে পারে। হ্যাঁ, যে “ধার্মিক নিজ সততায় চলে, তার চলে যাওয়ার পরে তার সন্তানেরা সুখে থাকবে।”—হিতোপদেশ (প্রবচনমালা) ২০:৭, বাংলা জুবিলী বাইবেল; ২৩:২৪, ২৫; লূক ১৫:১১-২৪.
[পাদটীকা]
a এই নির্দিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত পারিবারিক সুখের রহস্য (ইংরেজি) বইয়ের ৫৫-৯ পৃষ্ঠা দেখুন।
[১১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]
যিশুর বাবামা ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত
যিহোবা যখন তাঁর পুত্রকে একজন মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন, তখন তিনি যিশুর বাবামাকে সতর্কতার সঙ্গে মনোনীত করেছিলেন। আগ্রহের বিষয় যে, তিনি অতি সাধারণ, আধ্যাত্মিকমনা এক দম্পতিকে মনোনীত করেছিলেন, যারা যিশুকে প্রশ্রয় দিয়ে গড়ে তোলেনি, বরং তাঁকে ঈশ্বরের বাক্য এবং কঠোর পরিশ্রম ও দায়িত্ববোধের মূল্য সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়েছিল। (হিতোপদেশ ২৯:২১; বিলাপ ৩:২৭) যোষেফ, যিশুকে সূত্রধরের কাজ শিখিয়েছিলেন আর নিঃসন্দেহে যোষেফ ও মরিয়ম তাদের প্রথম সন্তানকে, কমপক্ষে আরও ছয় জন সন্তানের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করার জন্য বলেছিল।—মার্ক ৬:৩.
আপনি নিশ্চয়ই কল্পনা করতে পারেন যে, নিস্তারপর্বের সময়ে যিশুর পরিবার যিরূশালেমে তাদের বার্ষিক ভ্রমণের—আধুনিক পরিবহণ ব্যবস্থা ছাড়া যাওয়া-আসাসহ ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক যাত্রার—জন্য তৈরি হতে একত্রে কাজ করছে। নয় জন অথবা তার চেয়েও বেশি সংখ্যক সদস্যের একটা পরিবারকে এই ধরনের এক দীর্ঘ যাত্রার জন্য অবশ্যই সুসংগঠিত হতে হতো। (লূক ২:৩৯, ৪১) কোনো সন্দেহ নেই যে, বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও যোষেফ ও মরিয়ম এই উপলক্ষগুলোকে মূল্য দিত, সম্ভবত তাদের সন্তানদের বাইবেলের অতীত ঘটনাগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই সুযোগগুলোর সদ্ব্যবহার করত।
যিশু ঘরেও তাঁর বাবামার ‘বশীভূত ছিলেন,’ সবসময় “ঈশ্বরের ও মনুষ্যের নিকটে অনুগ্রহে বৃদ্ধি পাইতে থাকিলেন।” (লূক ২:৫১, ৫২) হ্যাঁ, যোষেফ ও মরিয়ম যিহোবার নির্ভরতার যোগ্য প্রমাণিত হয়েছিল। বর্তমানে বাবামাদের জন্য তারা কতই না উত্তম এক উদাহরণ!—গীতসংহিতা ১২৭:৩.