অধ্যায় পাঁচ
আপনার সন্তানকে শিশুকাল থেকেই প্রশিক্ষণ দিন
১, ২. সন্তানদের মানুষ করে তোলার ব্যাপারে সাহায্য পাওয়ার জন্য বাবা-মাদের কার ওপর নির্ভর করা উচিত?
“সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার,” প্রায় ৩,০০০ বছর আগে একজন উপলব্ধিপরায়ণ বাবা বিস্ময়ে বলে উঠেছিলেন। (গীতসংহিতা ১২৭:৩) সত্যিই, বাবা-মা হওয়ার আনন্দ ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এক মূল্যবান পুরস্কার, যা অধিকাংশ বিবাহিত লোকই লাভ করতে পারে। কিন্তু, যাদের সন্তান রয়েছে, তারা শীঘ্রই বুঝতে পারে যে বাবা-মা হওয়া আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বও নিয়ে আসে।
২ বিশেষভাবে আজকে সন্তান মানুষ করা এক দুরূহ কাজ। তা সত্ত্বেও, অনেকে তা সফলতার সঙ্গে করেছে আর অনুপ্রাণিত হয়ে গীতরচক এই বলে সেই উপায়টার কথা নির্দেশ করেন: “যদি সদাপ্রভু গৃহ নির্ম্মাণ না করেন, তবে নির্ম্মাতারা বৃথাই পরিশ্রম করে।” (গীতসংহিতা ১২৭:১) আপনি যত নিবিড়ভাবে যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করবেন, তত বেশি উত্তম বাবা অথবা মা হতে পারবেন। বাইবেল বলে: “তুমি সমস্ত চিত্তে সদাপ্রভুতে বিশ্বাস কর; তোমার নিজ বিবেচনায় নির্ভর করিও না।” (হিতোপদেশ ৩:৫) সন্তান মানুষ করে তোলার ব্যাপারে ২০ বছরের প্রকল্প শুরু করার সময় আপনি কি যিহোবার পরামর্শ শুনতে ইচ্ছুক?
বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেওয়া
৩. সন্তানদের মানুষ করে তোলার ব্যাপারে বাবাদের কোন ভূমিকা রয়েছে?
৩ সারা পৃথিবীর অনেক পরিবারে পুরুষরা সন্তান প্রশিক্ষণ দেওয়াকে মূলত নারীদের কাজ বলে মনে করে। এটা ঠিক যে, ঈশ্বরের বাক্য প্রধান অন্নসংস্থানকারী হিসেবে বাবার ভূমিকাকে নির্দেশ করে। কিন্তু, এটি এও বলে যে, বাড়িতেও তার বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে। বাইবেল বলে: “বাহিরে তোমার কার্য্যের আয়োজন কর, ক্ষেত্রে আপনার জন্য তাহা সম্পন্ন কর, পরে তোমার ঘর বাঁধ।” (হিতোপদেশ ২৪:২৭) ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সন্তানকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে বাবা ও মা হল পরস্পরের সহযোগী।—হিতোপদেশ ১:৮, ৯.
৪. কেন আমাদের ছেলে সন্তানকে মেয়ে সন্তানের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখা উচিত নয়?
৪ আপনার সন্তানদের আপনি কীভাবে দেখেন? বিভিন্ন রিপোর্ট বলে যে, এশিয়ায় “বেশিরভাগ সময়ই কন্যা সন্তানদের সাদরে গ্রহণ করা হয় না।” মেয়েদের প্রতি বিরূপ ধারণা এখনও ল্যাটিন আমেরিকাতে, এমনকি “অধিক শিক্ষিত পরিবারগুলোর” মধ্যেও বিদ্যমান বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু, সত্য বিষয়টা হল, মেয়েরা দ্বিতীয় শ্রেণীর সন্তান নয়। প্রাচীনকালের একজন উল্লেখযোগ্য বাবা যাকোব তার সমস্ত সন্তান সম্বন্ধে, যাদের মধ্যে সেই সময়ে জন্মানো মেয়েরাও ছিল, এভাবে বর্ণনা করেছিলেন, “ঈশ্বর অনুগ্রহ করিয়া [আমাকে] এই সকল সন্তান দিয়াছেন।” (আদিপুস্তক ৩৩:১-৫; ৩৭:৩৫) একইভাবে, যিশু তাঁর কাছে আনীত সমস্ত “শিশু” (ছেলে ও মেয়েকে) আশীর্বাদ করেছিলেন। (মথি ১৯:১৩-১৫) আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করেছিলেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৪.
৫. পরিবারের আকারের বিষয়ে এক দম্পতির সিদ্ধান্ত কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করার দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত?
৫ কিছু সমাজে নারীরা যত জন সম্ভব সন্তান জন্ম দেবে বলে আশা করা হয়। উপযুক্তভাবেই, কোনো বিবাহিত দম্পতির কতজন সন্তান থাকবে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু, বাবা-মায়ের যদি অধিক সন্তানকে খাদ্য, বস্ত্র ও শিক্ষা দেওয়ার সংগতি না থাকে, তাহলে? নিশ্চিতভাবেই, পরিবারের আকার সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দম্পতির তা বিবেচনা করা উচিত। কিছু দম্পতি, যারা তাদের সমস্ত সন্তানের ভরণপোষণ করতে পারে না, তারা কয়েক জন সন্তানকে মানুষ করার দায়িত্ব আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে থাকে। এই রীতি কি কাঙ্ক্ষিত? আসলে না। আর এটা সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের যে-দায়িত্ব রয়েছে, তা থেকে তাদেরকে মুক্তি দেয় না। বাইবেল বলে: “কেহ যদি আপনার সম্পর্কীয় লোকদের বিশেষতঃ নিজ পরিজনগণের জন্য চিন্তা না করে, তাহা হইলে সে বিশ্বাস অস্বীকার করিয়াছে, এবং অবিশ্বাসী অপেক্ষা অধম হইয়াছে।” (১ তীমথিয় ৫:৮) দায়িত্ববান দম্পতিরা তাদের “পরিজনগণের” আকার সম্বন্ধে পরিকল্পনা করার চেষ্টা করে, যাতে তারা ‘আপনার সম্পর্কীয় লোকদের জন্য চিন্তা করিতে’ পারে। তা করার জন্য তারা কি জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে? এটাও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আর বিবাহিত দম্পতিরা যদি এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তাহলে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বাছাইও তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। “প্রত্যেক জন নিজ নিজ ভার বহন করিবে।” (গালাতীয় ৬:৫) কিন্তু, যে-জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সঙ্গে কোনো ধরনের গর্ভপাত জড়িত, তা বাইবেলের নীতির বিপরীত। যিহোবা ঈশ্বর হলেন “জীবনের উনুই।” (গীতসংহিতা ৩৬:৯) তাই, একটা জীবন গর্ভে ধারণকৃত হওয়ার পর, সেটাকে যদি ধ্বংস করে দেওয়া হয়, তাহলে তা যিহোবার প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করবে আর তা হত্যার সমরূপ।—যাত্রাপুস্তক ২১:২২, ২৩, NW; গীতসংহিতা ১৩৯:১৬; যিরমিয় ১:৫.
আপনার সন্তানের চাহিদাগুলো পূরণ করা
৬. কখন একটা সন্তানের প্রশিক্ষণ শুরু হওয়া উচিত?
৬ হিতোপদেশ ২২:৬ পদ বলে: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও।” সন্তানদের শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ দেওয়া বাবা-মায়ের আরেকটা বিরাট দায়িত্ব। তাহলে, কখন সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করা উচিত? একেবারে ছোটো থাকতেই। প্রেরিত পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, তীমথিয়কে “শিশুকাল অবধি” প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। (২ তীমথিয় ৩:১৫) এখানে যে-গ্রিক শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা একটা ছোটো বাচ্চা অথবা এমনকি এক অজাত শিশুকেও নির্দেশ করতে পারে। (লূক ১:৪১, ৪৪; প্রেরিত ৭:১৮-২০) তাই, তীমথিয় সেই সময় থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন, যখন তিনি বেশ ছোটো ছিলেন—আর তা উপযুক্ত। শিশুকালই হল একটা সন্তানের প্রশিক্ষণ শুরু করার আদর্শ সময়। এমনকি একটা ছোটো বাচ্চারও জ্ঞানলিপ্সা রয়েছে।
৭. (ক) কেন বাবা-মা উভয়েরই একটা শিশুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) যিহোবা ও তাঁর একজাত পুত্রের মধ্যে কোন সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল?
৭ “আমি যখন প্রথম আমার সন্তানকে দেখেছিলাম,” একজন মা বলেন, “তখনই আমি তাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম।” অধিকাংশ মায়ের ক্ষেত্রে তা-ই হয়। মা ও শিশুর মধ্যে সেই অপূর্ববন্ধন বৃদ্ধি পেতে থাকে, যখন তারা জন্মের পর একসঙ্গে সময় কাটায়। স্তন্যদান সেই অন্তরঙ্গতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। (তুলনা করুন, ১ থিষলনীকীয় ২:৭.) একজন মায়ের শিশুকে আদর করা এবং তার সঙ্গে কথা বলা শিশুর আবেগগত চাহিদা পূরণ করার জন্য খুবই জরুরি। (তুলনা করুন, যিশাইয় ৬৬:১২.) কিন্তু, বাবার সম্বন্ধে কী বলা যায়? তারও নতুন সন্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠবন্ধন গড়ে তোলা উচিত। যিহোবা স্বয়ং এর এক উদাহরণ। হিতোপদেশ বইয়ে, আমরা যিহোবার সঙ্গে তাঁর সেই একজাত পুত্রের সম্পর্ক সম্বন্ধে শিখি, যিনি এই কথা বলছেন বলে তুলে ধরা হয়েছে: “সদাপ্রভু নিজ পথের আরম্ভে আমাকে প্রাপ্ত হইয়াছিলেন, . . . আমি দিন দিন আনন্দময় ছিলাম, তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম।” (হিতোপদেশ ৮:২২, ৩০; যোহন ১:১৪) একইভাবে, একজন উত্তম বাবা সন্তানের জীবনের ঠিক শুরু থেকেই তার সঙ্গে এক আন্তরিক ও প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। “প্রচুর স্নেহ দেখান,” একজন বাবা বলেছিলেন। “স্নেহের অভিব্যক্তি কখনোই একটা সন্তানের ক্ষতি করে না।”
৮. যত শীঘ্রই সম্ভব শিশুদেরকে কোন মানসিক উদ্দীপনা বাবা-মাদের দেওয়া উচিত?
৮ কিন্তু, শিশুদের আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন। জন্মের মুহূর্ত থেকেই তাদের মস্তিষ্ক তথ্য গ্রহণ করতে ও সংগ্রহ করতে তৈরি থাকে আর বাবা-মায়েরা হল এর এক প্রধান উৎস। একটা উদাহরণ হিসেবে ভাষার কথাই ধরুন। গবেষকরা বলে যে, সন্তানরা কতটা ভালভাবে কথা বলতে ও পড়তে পারে, “তা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের প্রাথমিক ভাববিনিময় কেমন, সেটার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হয়।” একেবারে শিশুকাল থেকেই আপনার সন্তানের সামনে কথা বলুন ও পড়ুন। শীঘ্রই সে আপনাকে অনুকরণ করতে চাইবে আর আপনি শীঘ্রই তাকে পড়তে শিক্ষা দিতে পারবেন। সম্ভবত, স্কুলে যাওয়ার আগেই সে পড়তে সমর্থ হবে। এটা বিশেষভাবে খুবই উপকারী যদি আপনি এমন একটা দেশে বাস করেন, যেখানে শিক্ষকদের সংখ্যা কম এবং ক্লাসরুমগুলোতে অনেক ছাত্রছাত্রী থাকে।
৯. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী, যা বাবা-মাদের মনে রাখতে হবে?
৯ খ্রিস্টান বাবা-মাদের প্রধান চিন্তার বিষয় হল, সন্তানের আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ করা। (দেখুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩.) কোন লক্ষ্য নিয়ে? তাদের সন্তানকে খ্রিস্টতুল্য এক ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে, বস্তুতপক্ষে “নূতন মনুষ্যকে” বা ব্যক্তিত্ব পরিধান করতে সাহায্য করে। (ইফিষীয় ৪:২৪) তা করতে বাবা-মাদের উপযুক্ত নির্মাণসামগ্রী ও উপযুক্ত নির্মাণপদ্ধতিগুলো বিবেচনা করতে হবে।
আপনার সন্তানকে সত্য সম্বন্ধে যত্নপূর্বক শিক্ষা দিন
১০. সন্তানদের কোন গুণাবলি গড়ে তুলতে হবে?
১০ একটা দালানের গুণগত মান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঠামো তৈরি করার সময় কোন ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে, খ্রিস্টীয় ব্যক্তিত্বের সর্বোত্তম উপাদানগুলো হল “স্বর্ণ, রৌপ্য, বহুমূল্য প্রস্তর।” (১ করিন্থীয় ৩:১০-১২) এগুলো এই ধরনের গুণকে চিত্রিত করে যেমন, বিশ্বাস, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, আনুগত্য, সম্মান এবং যিহোবা ও তাঁর আইনগুলোর জন্য প্রেমময় উপলব্ধি। (গীতসংহিতা ১৯:৭-১১; হিতোপদেশ ২:১-৬; ৩:১৩, ১৪) কীভাবে বাবা-মায়েরা একেবারে ছোটোবেলা থেকে তাদের সন্তানদের এই ধরনের গুণাবলি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? দীর্ঘদিন আগে লেখা হয়েছে এমন একটা কার্যপ্রণালী অনুসরণ করে।
১১. কীভাবে ইস্রায়েলীয় বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ঈশ্বরীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল?
১১ ইস্রায়েল জাতি প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার কিছু আগে যিহোবা ইস্রায়েলীয় বাবা-মাকে বলেছিলেন: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) হ্যাঁ, বাবা-মাদের উদাহরণযোগ্য, সঙ্গী, ভাববিনিময়কারী এবং শিক্ষক হতে হবে।
১২. কেন বাবা-মাদের উত্তম উদাহরণ হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
১২ উদাহরণযোগ্য হোন। প্রথমত, যিহোবা বলেছিলেন: “এই যে সকল কথা . . . তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক।” এরপর, তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে।” তাই, ঈশ্বরীয় গুণাবলি প্রথমে বাবা-মায়ের হৃদয়ে থাকতে হবে। বাবা অথবা মাকে সত্য ভালবাসতে ও সেই অনুযায়ী চলতে হবে। একমাত্র তাহলেই তিনি সন্তানের হৃদয়ে পৌঁছাতে পারবেন। (হিতোপদেশ ২০:৭) কেন? কারণ সন্তানরা যা শোনে, তার চেয়ে বরং যা দেখে, সেটার দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়।—লূক ৬:৪০; ১ করি. ১০:৩৪.
১৩. সন্তানদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে কীভাবে খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারে?
১৩ সঙ্গী হোন। যিহোবা ইস্রায়েলের বাবা-মাদেরকে বলেছিলেন: ‘গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে আপন আপন সন্তানদের সঙ্গে কথোপকথন করিও।’ এটা করার জন্য সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো প্রয়োজন, তা বাবা-মায়েরা যত ব্যস্তই থাকুক না কেন। যিশু স্পষ্টতই অনুভব করেছিলেন যে, সন্তানরা তাঁর সময় পাওয়ার যোগ্য ছিল। তাঁর পরিচর্যার শেষ দিনগুলোতে “লোকেরা কতকগুলি শিশুকে তাঁহার নিকটে আনিল, যেন তিনি তাহাদিগকে স্পর্শ করেন।” যিশুর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? “তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের . . . আশীর্ব্বাদ করিলেন।” (মার্ক ১০:১৩, ১৬) কল্পনা করুন যে, যিশুর জীবনের চূড়ান্ত সময় দ্রুত ঘনিয়ে আসছিল। তা সত্ত্বেও, তিনি এই শিশুদের তাঁর সময় ও মনোযোগ দিয়েছিলেন। কী চমৎকার এক শিক্ষা!
১৪. কেন সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো বাবা-মাদের জন্য উপকারী?
১৪ ভাববিনিময়কারী হোন। আপনার সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো আপনাকে তার সঙ্গে ভাববিনিময় করতে সাহায্য করবে। আপনি যত বেশি ভাববিনিময় করবেন, তত ভালভাবে বুঝতে পারবেন যে, তার ব্যক্তিত্ব কীভাবে গড়ে উঠছে। তবে মনে রাখবেন যে, ভাববিনিময় করা শুধুমাত্র কথা বলার চেয়ে আরও বেশি কিছু। “আমাকে শোনার দক্ষতা গড়ে তুলতে হয়েছিল,” ব্রাজিলের একজন মা বলেন, “হৃদয় দিয়ে শুনতে হয়েছিল।” তার ধৈর্য ফল উৎপন্ন করেছিল, যখন তার ছেলে তার অনুভূতিগুলো মায়ের কাছে প্রকাশ করতে শুরু করেছিল।
১৫. বিনোদনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা মনে রাখতে হবে?
১৫ সন্তানদের “হাস্য করিবার কাল; . . . ও নৃত্য করিবার কাল” অর্থাৎ বিনোদনের জন্য সময়ের প্রয়োজন আছে। (উপদেশক ৩:১, ৪; সখরিয় ৮:৫) বিনোদন অনেক ফলপ্রসূ হয়, যখন বাবা-মা এবং সন্তানরা তা একসঙ্গে উপভোগ করে। এটা খুবই দুঃখজনক বাস্তবতা যে, অনেক বাড়িতে বিনোদন মানে টেলিভিশন দেখা। যদিও টেলিভিশনের কিছু অনুষ্ঠান আনন্দদায়ক হতে পারে কিন্তু অনেক অনুষ্ঠান উত্তম মূল্যবোধগুলোকে নষ্ট করে দেয় এবং টেলিভিশন দেখা একটা পরিবারের মধ্যে ভাববিনিময়ে বাধা দিয়ে থাকে। তাই, আপনার সন্তানদের সঙ্গে সৃজনশীল কিছু করুন না কেন? গান করুন, খেলাধুলা করুন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা করুন, উপভোগ্য স্থানগুলো পরিদর্শন করুন। এই ধরনের কাজ ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রদান করে।
১৬. বাবা-মাদের যিহোবা সম্বন্ধে সন্তানদেরকে কী শিক্ষা দেওয়া উচিত আর কীভাবে তাদের তা দেওয়া উচিত?
১৬ শিক্ষক হোন। “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে [এই সকল কথা] যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে,” যিহোবা বলেছিলেন। প্রসঙ্গ আপনাকে বলে যে, কী এবং কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে। প্রথমে, “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫) এরপর, ‘এই সকল কথা যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে।’ যিহোবা ও তাঁর আইনগুলোর প্রতি পূর্ণহৃদয়ের প্রেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে নির্দেশনা প্রদান করুন। (তুলনা করুন, ইব্রীয় ৮:১০.) “যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে” শব্দগুলোর অর্থ পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া। তাই, বস্তুতপক্ষে যিহোবা আপনাকে বলেন যে, আপনার সন্তানদেরকে ঈশ্বরীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করার প্রধান উপায় হল, তাঁর সম্বন্ধে নিয়মিতভাবে কথা বলা। এর অন্তর্ভুক্ত তাদের সঙ্গে নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করা।
১৭. সন্তানদের মধ্যে বাবা-মাদের হয়তো কী গড়ে তুলতে হবে? কেন?
১৭ অধিকাংশ বাবা-মা জানে যে, একটা সন্তানের হৃদয়ে তথ্য প্রদান করা সহজ নয়। প্রেরিত পিতর সহখ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “নবজাত শিশুদের ন্যায় সেই পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা কর।” (১ পিতর ২:১, ২) “লালসা কর” অভিব্যক্তিটি দেখায় যে, অনেকেই স্বাভাবিকভাবে আধ্যাত্মিক খাদ্যের জন্য ক্ষুধার্ত নয়। বাবা-মাকে হয়তো সন্তানদের মধ্যে সেই লালসা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে নিতে হবে।
১৮. যিশুর শিক্ষাদানের কিছু পদ্ধতি কী, যেগুলো অনুকরণ করার জন্য বাবা-মাদের উৎসাহিত করা হয়?
১৮ যিশু দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার মাধ্যমে হৃদয়ে পৌঁছাতেন। (মার্ক ১৩:৩৪; লূক ১০:২৯-৩৭) শিক্ষাদানের এই পদ্ধতি বিশেষভাবে সন্তানদের ক্ষেত্রে কার্যকারী। রঙিন, আগ্রহজনক বিভিন্ন গল্প, হয়তো আমার বাইবেলের গল্পের বই প্রকাশনায় প্রাপ্ত গল্পগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে বাইবেলের নীতিগুলো শিক্ষা দিন।a সন্তানদের জড়িত করুন। বাইবেলের ঘটনাগুলোর ছবি এঁকে ও অভিনয় করে তাদের সৃজনশীলতা ব্যবহার করতে দিন। এ ছাড়া, যিশু প্রশ্নও ব্যবহার করতেন। (মথি ১৭:২৪-২৭) আপনার পারিবারিক অধ্যয়নের সময় তাঁর এই পদ্ধতি ব্যবহার করুন। ঈশ্বরের কোনো আইন সম্বন্ধে কেবল বলার পরিবর্তে এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন যেমন, কেন যিহোবা আমাদের এই আইন দিয়েছেন? আমরা যদি তা পালন করি, তাহলে কী হবে? আমরা যদি তা পালন না করি, তাহলে কী হবে? এই ধরনের প্রশ্ন একটা সন্তানকে যুক্তি করতে এবং এটা দেখতে সাহায্য করবে যে, ঈশ্বরের আইনগুলো ব্যবহারিক ও উত্তম।—দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৩.
১৯. সন্তানদের সঙ্গে আচরণের সময় বাবা-মায়েরা যদি বাইবেলের নীতিগুলো অনুসরণ করে, তাহলে সন্তানরা কোন বিরাট উপকারগুলো লাভ করবে?
১৯ উদাহরণযোগ্য, সঙ্গী, ভাববিনিময়কারী ও শিক্ষক হওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানকে একেবারে ছোটোবেলা থেকেই যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারেন। এই সম্পর্ক আপনার সন্তানকে একজন খ্রিস্টান হিসেবে সুখী হতে উৎসাহিত করবে। সে তার বিশ্বাস অনুযায়ী জীবনযাপন করার প্রচেষ্টা করবে এমনকি তখনও, যখন সে সমবয়সিদের চাপে ও প্রলোভনে পড়ে। সবসময় তাকে এই মূল্যবান সম্পর্ককে উপলব্ধি করতে সাহায্য করুন।—হিতোপদেশ ২৭:১১.
শাসন করার অত্যাবশ্যকতা
২০. শাসন কী আর কীভাবে তা প্রয়োগ করা উচিত?
২০ শাসন হল এমন প্রশিক্ষণ, যা মন ও হৃদয়কে সংশোধন করে। সন্তানদের অবিরত তা প্রয়োজন। পৌল বাবাদের পরামর্শ দেন যেন তারা “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে [আপন আপন সন্তানদিগকে] মানুষ করিয়া” তোলে। (ইফিষীয় ৬:৪) বাবা-মাদের উচিত প্রেমের সঙ্গে শাসন করা, যেমনটা যিহোবা করেন। (ইব্রীয় ১২:৪-১১) প্রেমের ওপর ভিত্তি করা শাসন যুক্তি সহকারে প্রদান করা যেতে পারে। তাই, আমাদেরকে “শাসনে অবধান” করতে বলা হয়েছে। (হিতোপদেশ ৮:৩৩) কীভাবে শাসন প্রদান করা যেতে পারে?
২১. সন্তানদের শাসন করার সময় বাবা-মাদের কোন নীতিমালা মনে রাখা উচিত?
২১ কিছু বাবা-মা মনে করে যে, তাদের সন্তানদের শাসন করার অন্তর্ভুক্ত কেবল তাদের সঙ্গে হুমকির স্বরে কথা বলা, তাদেরকে বকাঝকা করা অথবা এমনকি তাদেরকে অপমান করা। কিন্তু, সেই একই বিষয়ে পৌল সাবধান করেছিলেন: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না।” (ইফিষীয় ৬:৪) সমস্ত খ্রিস্টানকে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন তারা ‘সকলের প্রতি কোমল হয়, মৃদু ভাবে বিরোধিগণকে শাসন করে।’ (২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫) খ্রিস্টান বাবা-মায়েরা, যদিও দৃঢ়তার প্রয়োজন রয়েছে বলে স্বীকার করে, তবুও তাদের সন্তানদের শাসন করার সময় তারা এই কথাগুলো মনে রাখে। তাই, মাঝে মাঝে কেবল যুক্তি করাই যথেষ্ট নয় বরং কোনো ধরনের শাস্তিরও প্রয়োজন হতে পারে।—হিতোপদেশ ২২:১৫.
২২. একটা সন্তানকে যদি শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাকে কী বোঝার জন্য সাহায্য করতে হবে?
২২ ভিন্ন ভিন্ন সন্তানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন শাসনের প্রয়োজন। কারো কারো ‘বাক্য দ্বারা শাসন হয় না।’ তাদের জন্য মাঝে মাঝে তাদের অবাধ্যতার কারণে শাস্তি দেওয়া জীবনরক্ষাকারী হতে পারে। (হিতোপদেশ ১৭:১০; ২৩:১৩, ১৪; ২৯:১৯) তবে, একটা সন্তানকে বুঝতে হবে যে, কেন তাকে শাসন করা হচ্ছে। “দণ্ড ও অনুযোগ প্রজ্ঞা দেয়।” (হিতোপদেশ ২৯:১৫; ইয়োব ৬:২৪) অধিকন্তু, শাস্তির সীমা রয়েছে। “আমি বিচারানুরূপ শাস্তি দিব,” যিহোবা তাঁর লোকেদের বলেছিলেন। (যিরমিয় ৪৬:২৮খ) বাইবেল কোনোভাবেই রাগান্বিত হয়ে কশাঘাত অথবা চরম মারধর করাকে সমর্থন করে না, যা একটা সন্তানকে আঘাত দিতে ও এমনকি ক্ষতি করতে পারে।—হিতোপদেশ ১৬:৩২.
২৩. একটা সন্তানকে যখন তার বাবা-মা শাস্তি দেয়, তখন তার কোন বিষয়টা বোঝা উচিত?
২৩ যিহোবা যখন তাঁর লোকেদের সতর্ক করেছিলেন যে, তিনি তাদের শাসন করবেন, তখন তিনি তাদেরকে প্রথমে বলেছিলেন: “তুমি ভয় করিও না, কেননা আমি তোমার সহবর্ত্তী।” (যিরমিয় ৪৬:২৮ক) একইভাবে বাবা-মায়ের শাসন, তা উপযুক্ত যে-ধরনেরই হোক না কেন, কখনো সন্তানের মনে এইরকম অনুভূতি দেওয়া উচিত নয় যে, সে পরিত্যক্ত। (কলসীয় ৩:২১) বরং, সন্তানের উপলব্ধি করতে হবে যে, শাসন করা হচ্ছে কারণ বাবা-মা ‘তাহার সহবর্ত্তী,’ তার পক্ষে আছে।
আপনার সন্তানকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন
২৪, ২৫. একটা জঘন্য হুমকি কী, যা থেকে বর্তমানে সন্তানদের সুরক্ষা প্রয়োজন?
২৪ অনেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাদের ছেলেবেলাকে আনন্দের এক সময় হিসেবে স্মরণ করে। তারা নিরাপত্তার এক আন্তরিক অনুভূতি, সমস্ত পরিস্থিতিতে তাদের বাবা-মা তাদের দেখবে এমন এক নিশ্চয়তা সম্বন্ধে স্মরণ করে। বাবা-মায়েরা চায় তাদের সন্তানরা এমনটা অনুভব করুক, কিন্তু আজকের এই অধঃপতিত জগতে সন্তানদের নিরাপদ রাখা আগে যেমন ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে।
২৫ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে-জঘন্য হুমকি দেখা দিয়েছে, তা হল ছোটো ছেলে-মেয়েদের যৌন নিপীড়ন করা। মালয়েশিয়াতে দশ বছরের মধ্যে শিশু নিপীড়নের রিপোর্ট চতুর্গুণ হয়েছে। প্রতি বছর জার্মানিতে প্রায় ৩,০০,০০০ শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয় আর অন্যদিকে দক্ষিণ আমেরিকার একটা দেশে, একটা রিপোর্ট অনুযায়ী আনুমানিক বার্ষিক সংখ্যা হল ৯০,০০,০০০! দুঃখজনক যে, এই ছেলে-মেয়েদের বেশিরভাগই তাদের নিজের বাড়ির সেই লোকেদের দ্বারা নিপীড়িত হয়েছে, যাদের তারা জানে ও যাদের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু, সন্তানদের জন্য বাবা-মাদের এক শক্তিশালী সুরক্ষা হওয়া উচিত। কীভাবে বাবা-মায়েরা সুরক্ষাকারী হতে পারে?
২৬. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে সন্তানদের সুরক্ষিত রাখা যায় আর কীভাবে জ্ঞান একটা সন্তানকে রক্ষা করতে পারে?
২৬ যেহেতু অভিজ্ঞতা দেখায় যে সন্তানরা, যারা যৌনতা সম্বন্ধে খুব কমই জানে, তারা বিশেষভাবে নিপীড়নকারীদের শিকার হয়ে থাকে, তাই একটা প্রধান প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হল সন্তানকে শিক্ষা দেওয়া, এমনকি তখনই যখন সে খুব ছোটো থাকে। জ্ঞান “দুষ্টের পথ হইতে, সেই সকল লোক হইতে, যাহারা কুটিল বাক্য বলে,” সুরক্ষা জোগাতে পারে। (হিতোপদেশ ২:১০-১২) কোন জ্ঞান? নৈতিকভাবে কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল, সেই বিষয়ে বাইবেলের নীতিমালা সম্বন্ধীয় জ্ঞান। এ ছাড়া, এই বিষয়েও জ্ঞান যে, কিছু প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি খারাপ কাজ করে আর যখন লোকেরা অনুপযুক্ত কিছু করতে বলে, তখন ছোটোদের তার বাধ্য হওয়া উচিত নয়। (তুলনা করুন, দানিয়েল ১:৪, ৮; ৩:১৬-১৮.) এই ধরনের শিক্ষা কেবল একবার দিয়েই ক্ষান্ত হবেন না। অধিকাংশ ছোটো ছেলে-মেয়েকে বার বার শিক্ষাটা স্মরণ করিয়ে দিতে হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সেটা ভালভাবে মনে রাখতে পারে। সন্তানরা যখন কিছুটা বড় হয়, তখন বাবা তার মেয়ের গোপনীয়তার অধিকারকে প্রেমের সঙ্গে সম্মান করবেন আর মা তার ছেলের ব্যাপারে—এভাবে যা উপযুক্ত, সেই বিষয়ে সন্তানের বোধশক্তিকে দৃঢ় করা হয়। আর অবশ্যই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উত্তম একটা সুরক্ষা হল, বাবা-মা হিসেবে আপনাদের নিবিড় তত্ত্বাবধান।
ঐশিক নির্দেশনা খুঁজুন
২৭, ২৮. বাবা-মায়েরা যখন একটা সন্তান মানুষ করার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়, তখন কে তাদের সাহায্যের সর্বোত্তম উৎস?
২৭ এটা ঠিক যে, একটা সন্তানকে ছোটোবেলা থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হল এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কিন্তু বিশ্বাসী বাবা-মাদের একা একা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করতে হয় না। অতীতে বিচারকদের দিনে মানোহ নামে এক ব্যক্তি যখন জানতে পেরেছিলেন যে তিনি বাবা হতে চলেছেন, তখন তিনি তার সন্তানকে মানুষ করে তোলার জন্য যিহোবার কাছে নির্দেশনা চেয়েছিলেন। যিহোবা তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন।—বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৩:৮, ১২, ২৪.
২৮ একইভাবে, আজকে বিশ্বাসী বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের মানুষ করে তোলার সময় তারাও প্রার্থনায় যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারে। বাবা-মা হওয়া এক কঠিন কাজ কিন্তু এর পুরস্কার অনেক। হাওয়াইয়ের এক খ্রিস্টান দম্পতি বলে: “কিশোর বয়সের কঠিন বছরগুলো আসার আগে, আপনার সন্তানকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনার হাতে ১২ বছর রয়েছে। কিন্তু, আপনি যদি বাইবেলের নীতিমালা প্রয়োগ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, তাহলে তারা যখন যিহোবাকে হৃদয় থেকে সেবা করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তা আনন্দের ও শান্তির সময় হয়।” (হিতোপদেশ ২৩:১৫, ১৬) আপনার সন্তান যখন সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন আপনিও বিস্ময়ে বলতে পরিচালিত হবেন: “সন্তানেরা সদাপ্রভুদত্ত অধিকার।”
a যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।