পাঠক-পাঠিকাদের থেকে প্রশ্নসকল
শাস্ত্র ‘যাশের গ্রন্থ’ এবং ‘সদাপ্রভুর যুদ্ধপুস্তক’ সম্বন্ধে উল্লেখ করে। (যিহো. ১০:১৩; গণনা. ২১:১৪) বাইবেলের প্রামাণিক অংশে ওই দুটি বই পাওয়া যায় না। তাহলে, এই অনুপ্রাণিত লেখাগুলো কি হারিয়ে গিয়েছে?
এই উপসংহারে আসার কোনো কারণ নেই যে, ওই দুটি বই অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা হয়েছিল আর পরে হারিয়ে গিয়েছিল। অনুপ্রাণিত বাইবেল লেখকরা অন্যান্য কয়েকটি লেখা সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিল। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রকৃতপক্ষেই বাইবেলের অংশ ছিল, যেগুলোকে আধুনিক পাঠকদের কাছে অপরিচিত নামের দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১ বংশাবলি ২৯:২৯ পদ ‘শমূয়েল দর্শকের পুস্তক,’ ‘নাথন ভাববাদীর পুস্তক’ এবং ‘গাদ দর্শকের পুস্তক’ সম্বন্ধে উল্লেখ করে। ওই তিনটি বই একসঙ্গে সেই বইগুলোকে নির্দেশ করতে পারে, যেগুলোকে আমরা ১ ও ২ শমূয়েল অথবা সম্ভবত বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ বলে জানি।
অন্যদিকে, কিছু রেফারেন্সে হয়তো সেই বইগুলোর উল্লেখ থাকতে পারে, যেগুলোর বাইবেলের বইয়ের অনুরূপ নাম রয়েছে, কিন্তু সেগুলো প্রকৃতপক্ষে বাইবেলের অংশ নয়। উদাহরণস্বরূপ, আমরা হয়তো চারটি প্রাচীন বই সম্বন্ধে বলতে পারি: ‘যিহূদা-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তক,’ ‘যিহূদার ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস-পুস্তক,’ ‘ইস্রায়েল-রাজগণের ইতিহাস-পুস্তক’ এবং ‘ইস্রায়েলের ও যিহূদার রাজগণের ইতিহাসপুস্তক।’ যদিও সেই নামগুলো হয়তো বাইবেলের বিভিন্ন বইয়ের নামগুলোর মতো একইরকম শোনায়, যেগুলোকে আমরা ১ রাজাবলি ও ২ রাজাবলি হিসেবে জানি, কিন্তু সেই চারটি পুস্তক অনুপ্রাণিত নয় কিংবা বাইবেলের প্রামাণিক অংশেও সেগুলোর স্থান নেই। (১ রাজা. ১৪:২৯; ২ বংশা. ১৬:১১; ২০:৩৪; ২৭:৭) এগুলো সম্ভবত শুধুমাত্র সেই সময়কালে প্রাপ্তিসাধ্য ঐতিহাসিক লেখা ছিল, যে-সময়ে ভাববাদী যিরমিয় ও ইষ্রা আমরা বাইবেলে যে-বিবরণগুলো পাই, সেগুলো লিখেছিল।
হ্যাঁ, কিছু বাইবেল লেখক সেই সময়ে বিদ্যমান কিন্তু অনুপ্রাণিত নয় এমন বিভিন্ন ইতিহাস ও প্রমাণপত্র সম্বন্ধে লিখেছিলেন অথবা পরীক্ষা করেছিলেন। ইষ্টের ১০:২ পদ ‘মাদিয়া ও পারস্যের রাজগণের ইতিহাসপুস্তক’ সম্বন্ধে উল্লেখ করে। একইভাবে, লূক তার সুসমাচারের বিবরণ প্রস্তুত করার সময় ‘প্রথম হইতে সকল বিষয় সবিশেষ অনুসন্ধান করিয়াছিলেন।’ তিনি সম্ভবত বুঝিয়েছিলেন যে, যিশুর বংশবৃত্তান্তের তালিকা সংগ্রহ করার সময় তিনি তার প্রাপ্তিসাধ্য লিখিত উৎসগুলো পরীক্ষা করেছিলেন, যে-বংশবৃত্তান্ত সম্বন্ধে আমরা তার সুসমাচারের বিবরণ থেকে পড়তে পারি। (লূক ১:৩; ৩:২৩-৩৮) যদিও লূক যে-নথিগুলো পরীক্ষা করেছিলেন, সেগুলো অনুপ্রাণিত ছিল না, তবে তিনি যে-সুসমাচার লিখেছিলেন, সেটি নিশ্চিতভাবেই অনুপ্রাণিত ছিল। আর এই সুসমাচার আমাদের জন্য এখনও মূল্যবান।
আর প্রশ্নে উল্লেখিত দুটি বই—‘যাশের গ্রন্থ’ এবং ‘সদাপ্রভুর যুদ্ধপুস্তক’—সেই সময়ে বিদ্যমান এমন প্রমাণপত্র বলে মনে হয়, যেগুলো অনুপ্রাণিত নয়। এই কারণে, যিহোবা সেগুলো সংরক্ষণ করে রাখার বিষয়ে লক্ষ রাখেননি। ওই দুটি বই সম্বন্ধে বাইবেলে উল্লেখ করা, পণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে এই উপসংহারে আসতে পরিচালিত করে যে, সেই বই দুটিতে ইস্রায়েল ও তার শত্রুদের মধ্যেকার যুদ্ধগুলো সম্বন্ধে বিভিন্ন কবিতা ও গান সংগৃহীত ছিল। (২ শমূ. ১:১৭-২৭) একটি বাইবেল এনসাইক্লোপিডিয়া বলে যে, ওই বইগুলোর বিষয়বস্তু হয়তো “প্রাচীন ইস্রায়েলের পেশাদার গায়ক-গায়িকাদের মুখে মুখে প্রচলিত গানে সুপরিচিত ছিল, যারা ইস্রায়েলের মহাকাব্য ও গীতিকবিতার ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণ করে রেখেছিল।” এমনকী ঈশ্বর মাঝে মাঝে ভাববাদী অথবা দর্শক হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, এমন কিছু ব্যক্তির বিবরণকেও যিহোবা অনুপ্রাণিত করেননি কিংবা সেগুলোকে সেই শাস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করেননি, যা আমাদের দিনে “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী।”—২ তীম. ৩:১৬; ২ বংশা. ৯:২৯; ১২:১৫; ১৩:২২.
বাইবেলে উল্লেখিত নির্দিষ্ট কিছু বই এবং সেগুলো যে ব্যবহারোপযোগী উৎস ছিল, এই বিষয়টা যেন আমাদের এই উপসংহারে পৌঁছাতে পরিচালিত না করে যে, এগুলো অনুপ্রাণিত। কিন্তু, যিহোবা ঈশ্বর ‘আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের’ অন্তর্ভুক্ত সমস্ত লেখা সংরক্ষণ করেছেন আর এগুলো “চিরকাল থাকিবে।” (যিশা. ৪০:৮) হ্যাঁ, বাইবেলের ৬৬টি বইয়ে যিহোবা যা-কিছু অন্তর্ভুক্ত করা বেছে নিয়েছেন, ঠিক সেগুলোই “পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন।—২ তীম. ৩:১৬, ১৭.